আমাদের সেই পুকুর আর কড়ই গাছের গল্প

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ২৩/০৮/২০১০ - ৪:০৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মহামন্য ধুগো দা'র সেই জ্বীনের গল্প পড়ে মনে হলো আমাদের পুকুরের আর কড়ই গাছের তেনাদের আর পরীদের নিয়ে কিছু লেখা দরকার। ছোটবেলা থেকেই এই পুকুর আর কড়ই গাছ আমাকে খুব টানতো। মনে হতো যেন রহস্যে ঘেরা, দেখলেই গা ছমছম করা একটা অনুভুতি কাজ করতো। বাবার চাকরীর সুবাদে আমার শৈশব কেটেছে বিভিন্ন মফস্বল শহরে। বাবা যখন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় বদলি হতেন সরকারী কোয়ার্টার না পাওয়া পর্যন্ত আমরা হয় কিছুদিন দাদার বাড়ি আর কিছুদিন নানার বাড়িতে থাকতাম। সময় ছিল তখন, এখনো মনে পড়ে সেই সোনালী লাগামছাড়া দিন গুলো। দুই বাড়িতেই পুকুর ছিল এবং সেসব ঘিরে ছিল অনেক কাহিনী, তেনাদের গল্প। আজ বলবো দাদার পুকুর আর তার প্রিয় কড়ই গাছের গল্প। সবাই রেডি তো?

কড়ই গাছটির ব্য়স কতো কে্উ জানতো না। আমার দাদার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলতেন তার বাবার জন্মের আগে থেকেই নাকি গাছটি এখানে ছিল। গাছটি আমার কাছে ছিল একদম আকাশ সমান। এত বড় কড়ই আর মোটা কড়্ই গাছ আমি আর দেখিনি। আর পুকুর টা? সেটার বয়স নিয়েও অনেকের অনেক কথা। কেউ বলেন, প্রায় ১০০ বছরের পুরনো, কেউ বলেন আরে না, যেবার সবথেকে বড় বান আইছিল তখন নাকি আমাদের কোনো এক পুর্বপুরুষ সেটা লাগান। তবে কবে সেটা কেউ ঠিক জানেনা। তবে এই পুকুর ঘিরে ভৌতিক কাহিনীর শুরু আমার দাদার দাদার এক ভাইকে নিয়ে। তিনি ছিলেন এলাকার সবচেয়ে সুন্দর যুবাপুরুষ। জনশ্রুতি আছে, একবার বর্ষাকালে বিলে মাছ মারতে গিয়েছিলেন (স্থানীয় ভাষায় বলে "আল্লোড়া" -আলো জ্বালিয়ে মাছ মারা, খুব জনপ্রিয় আমাদের এলাকায়, আমরা ছোটবেলায় দেখেছি বাবা আর চাচারা সবাই মিলে মাছ ধরতে গিয়েছেন, সারারাত ধরে দাদী আর চাচীরা দুয়া দুরুদ পড়তেন। আর সকাল বেলা আমরা ঘুম থেকে উঠে দেখতাম উঠান ভর্তি মাছ আর মাছ। একবার একটা বোয়াল দেখেছিলাম ৫ফুট মতো লম্বা। আর অনেক বড় বড় গজার মাছ, যেগুলো তেনারা মনে করে কেউ খেত না)। তো, সেই সুন্দর মানুষটা মাছ মারতে গিয়ে দলছুট হয়ে যান এবং কেউ তাকে খুঁজে পায়নি সকালবেলা। অনেক খুঁজেও যখন পাওয়া গেল না, সবাই ধরেই নিল তিনি আর নাই। এক বিকেলবেলা কোনো একজন নিদ্রাহীন বুড়ো তাকে দেখলেন কড়ই গাছের নিচে একদল অতি সুন্দরী নারীদের সাথে। নারীরা সবাই তাকে ঘিরে নৃত্য করছিলেন। আর সেই যুবাপুরুষ হীরের মতো চকচক করছিলেন এবং হঠাত করে সবাই মিলে তাকালেন বুড়ো লোকটার দিকে। সেই চাওনিতে এমন কিছু ছিল বুড়ো লোকটা সেন্স হারালেন সাথে সাথে। এরপর থেকেই লোকজন রাতে ঔ পথ দিয়ে যাওয়ার সময় সুললিত সংগীত আর পরীদের গান শুনতে পেতেন। একদিন সেই সুন্দর পুরুষটিকে পাওয়া গেল কড়্ই গাছের শাখায়, উদভ্রান্ত, কি যেন খুঁজছেন। সবাই মিলে যখন তাকে নামিয়ে আনলো, তখন তার গা থেকে পাওয়া গেল অতি সুন্দর আতরের গন্ধ। লোকটি এরপর বেশিদিন বাঁচেন নি, যত দিন ছিলেন তাকিয়ে থাকতেন সেই গাছের দিকে। আমি ছোটবেলায় দেখেছি জোসনা রাতে সবাই এড়িয়ে চলে পুকুর পাড় আর কড়ই গাছ, কেউ কেউ শুনতে পেত গান আর নুপুরের শব্দ।

পরের গল্পটার কাহিনী আমাদের এক পুর্বপুরুষের ছোট বউকে নিয়ে। তার ছিল তিনটি বউ, তার মধ্যে ছোট টি ছিলেন পরমা সুন্দরী। তো, তার প্রেমে পড়ে যায় কড়ই গাছের এক তিনি, অনেক ক্ষমতাধর এক জ্বিন ছিলেন নাকি তিনি। যাই হোক, ছোট বউ একদিন পুকুরে গোসল করতে গেলে তাকে দেখা দেন তিনি এবং প্রেম নিবেদন করেন। ছোট বউ ভয়ে শেষ। সোজা আন্গুলে যখন ঘি উঠেনি তখন তিনি হঠাত করে ভর করেন ছোট বউয়ের শরীরে। তাকে আছড়ে ফেলে দেন, তুলে ফেলেন কড়ই গাছের ডগায় আরো অনেক কিছু। কোনো কিছুতেই যখন কাজ হয়নি, তখন ঘরের চালায় ঢিল মারেন। তেনার জ্বালায় এলাকা বাসির ঘুম হারাম। ডাকা হয় মওলানা, ভুত তারানি লোকজন। কিছুতেই কিছু হয়নি। শেষ পর্যন্ত ছোট বউকে এক রাতের আধারে পুকুরে চুবিয়ে মারেন। তার পর থেকে মাঝে মাঝে ছোট বউকে দেখা যেত ভর পুকুর থেকে উঠে এসে কিনারে বসে কাঁদছেন।

কি, বোর করছি নাতো আপনাদের? একটু না হয় করলাম, আজ আমাদের তেনাদের কথা লেখার মুড এসেছে। যাই হোক, আমাদের সেই পুকুরে প্রতি বছর কেউ না কেউ মরবেই। তাও ঠিক একটা জায়গাতে, আমার বাবার ধারনা, ওখানে চোরাবালি আছে। কিন্তু বাকি সবার তীব্র প্রতিবাদ, এটা তেনাদের কাজ আর এটা বিশ্বাস না করখে তেনারা নাখোশ হবেন এবং বংশ নির্বংশ করে দেবেন। এমনটি নাকি হয়েছে আমার দাদার এক চাচাতো ভাইয়ের। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ আমলে এলাকার একমাত্র মেট্রিক পাশ করা লোক, তাও সাইন্সে। বাড়িতে বসে নাকি তিনি গবেষনা করতেন, মরিচ কিভাবে রক্ত পানি করে দেয় তা দেখাতেন (কেমনে আমার মাথায় ঢুকে না, আমার দাদার দাবি তিনি স্বচক্ষে দেখেছেন, আমি জার্নাল ঘেটেও কিছু পায়নি)। দলবেধে লোকজন তাকে দেখতে আসতো। তিনি বলে বসলেন, পুকুরে তেনারা বলে কিছু নেই এবং তিনি তা প্রমাণ করে ছাড়বেন। তিনি যোগাযোগ করেছিলেন ময়মনসিংহের সরকারী ইন্জিনিয়ারদের সাথে। তারা আসবেন, সেখানে থেকে মাটি তুলে নিয়ে যাবেন। আরো কি কি যেন। কেউ ঠিকমতো বলতে পারেনা। তার ঘোষনার তিনদিনের মাথায় তার বড় ছেলেকে পাওয়া যায় পুকুরে ভাসছেন, মৃত। তার পরদিন মেঝছেলে কে পাওয়া যায় কড়্ই গাছের নিচে। ছোটটাও মারা যায় পুকুর পার থেকে পড়ে গিয়ে। এরপর তিনি পাগল হয়ে যান। কেউ আর এটাকে নিয়ে ঘাটাতে আসেনি এরপর।

আরো অনেক কাহিনী আছে, আপনাদের ভালো লাগলে আবার লিখবো। হাসি

akashneela07092002@yahoo.com


মন্তব্য

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

মাত্র গাছ নিয়া একটা গল্প লিখতে বসছিলাম। বাদ দিলাম মন খারাপ

কিসু কিসু ঘটনা 'কুসংস্কার' হয়া যায়। হের পর আমরা ম্যাজিক রিয়ালিসম হয়া যাই।

আপ্নে ঘটনারে ঘটনাই রাখসেন দেইখা ভালো লাগসে।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

অতিথি লেখক এর ছবি

প্লিজ লিখেন, আপনারটা তো অন্যরকম হতে পারে। ভালো লেখা পড়া থেকে ডিপ্রাইভড হতে চাইনা।:)

আকাশনীলা

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

চলুক......ভূতের গল্প ভালই লাগে।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। হাসি

আকাশনীলা

ধুসর গোধূলি এর ছবি

আপনি জ্বীনে ধরার গল্প করলেন? আরে আমার প্রিয় মতি মামাকেও তো জ্বীনে ধরেছিলো। বড়ই টেনশনে পড়ে গিয়েছিলাম আমরা। মন খারাপ

এইসব সাইন্স টাইন্সে কিছু হয় না। তেনারা কড়ই গাছে ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন।



বিএসএফ—
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার মতি মামার জ্বীন বড়ই কামিল ছিলেন, বুঝতে পারলাম। বাকী তেনাদের কথাও লিখতে থাকেন, ধুগো দা। হাসি

আকাশনীলা

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখা পড়ে ভালো লাগলো।।। সবার মাঝেই মনে হয় তেনাদের বিষয়ক আগ্রহ থাকে।।। অনুভব করলাম।।আরো লিখেন।।।

নালিনী

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।