একেই বোধ হয় বলে গোড়ায় গলদ। বাংলা ভাষার প্রথম পাঠই স্বরবর্ণ। অথচ বর্ণমালাতেই ভুল! কারণ আমাদের স্বরবর্ণের তালিকাটিই এখন পর্যন্ত যথেষ্ট অসামঞ্জস্যপূর্ণ! তাহলে আমাদের শিশুরা কী শিখছে? একটা উদাহরণ দিলেই কিছুটা পরিষ্কার হবে আশা করি। 'অ্যা' একটি মৌলিক স্বরধ্বনি অথচ স্বরবর্ণের তালিকায় আজও তার স্থান হয়নি! এদিকে 'ঐ' এবং 'ঔ' যৌগিক স্বরধ্বনি হওয়া সত্ত্বেও বর্ণমালায় এখনও স্বরবর্ণ হিসেবে রয়ে গেছে। যদিও লিপিতে এদের পরিবর্তন হয়েছে। যেমন, আগে আমরা লিখেছি—খৈ, দৈ, হৈচৈ। এখন লিখি—খই, দই, হইচই। আগে লিখেছি—বৌ, মৌ। এখন প্রায় লেখি বউ, মউ। এ তো গেল বর্ণমালা সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি।
অন্যদিকে বানান সংস্কারের বিষয়টিও খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাংলা একাডেমী ইতিমধ্যে এই প্রয়োজনীয় কাজটি প্রায় সাফল্যজনকভাবে করতে পেরেছে, যদিও সর্বস্তরে এর গ্রহণযোগ্যতা এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি। সরকারি উদ্যোগকে এ জন্য দায়ী করা যায়, তবে বাংলা একাডেমী নিজেও কম দায়ী নয়। প্রথমত, বাংলা একাডেমী প্রণীত 'প্রমিত বানানরীতি'র কিছু কিছু নিয়ম প্রশ্নসাপেক্ষ রয়ে গেছে। দ্বিতীয়ত, বাংলা একাডেমীরই বিভিন্ন অভিধান, বিশেষত বহুল ব্যবহৃত ও জনপ্রিয় দুটি অভিধান 'ব্যবহারিক বাংলা অভিধান' এবং 'বানান-অভিধান'-এর বানানের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে।
এবার আসি মূল আলোচনায়। আমাদের বর্ণমালায় দুটি স্বরবর্ণ আছে, যার উচ্চারণ কিছুটা দীর্ঘ। যথা, ঈ এবং ঊ। যথারীতি এদের-কার চিহ্নও আছে। যথা, ঈ-কার (ী) এবং ঊ-কার (ূ)। অপ্রিয় হলেও সত্য এই যে, আমাদের বানান-বিভ্রান্তির পেছনে এই দুটি স্বরবর্ণ এবং এদের-কার চিহ্নের অবদান অনেকখানি। সাধারণত বাংলায় স্বরের দীর্ঘ উচ্চারণ নেই, অথচ আমরা অনেক ক্ষেত্রেই অপ্রয়োজনে এই দুটি স্বরবর্ণ এবং এদের-কার চিহ্নের জোয়াল টেনে চলেছি। আবার ব্যাকরণগত কারণে যেসব জায়গায় প্রয়োজন আছে সেখানে বর্জন করছি। বিভ্রান্তি না কমার এটি একটি বড় কারণ। প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা এটা কেন করছি? অজ্ঞতায়? না, সদিচ্ছার অভাব আছে আমাদের মধ্যে?
কিছুদিন আগে একজন সহ-ব্লগারের সাথে বানান নিয়ে বিতর্কের এক পর্যায়ে নিচের মন্তব্যটি পাই। প্রাসঙ্গিক হওয়ায় হুবহু কোট করলাম।
ই ঈ উচ্চারণের ব্যপারে আপনার মতের সাথে ভিন্নতা আছে আমার। ইঁদুর উচ্চারণ করতে যতটুকু ই উচ্চারণ করি, ঈদ উচ্চারণ করতে অবশ্যই তারচেয়ে দীর্ঘ উচ্চারণ করা লাগে আমাদের। মানলাম ঈদ বাংলা শব্দ নয়, কিন্তু কার্যত নিজেদের শব্দের চেয়ে কমও নয়। একইভাবে ধুর আর দূর - উচ্চারণ ভিন্নতা স্পষ্ট। আইপিএ ভাওয়েল অ্যালফেবেটেও দেখলাম হ্রস্ব এবং দীর্ঘ দুটো স্বর আছে। ইরেজিতে ee, ea, ey, ei, ie এভাবে পাশাপাশি দুটো vowel ব্যবহার করা যায়, তাদের বাড়তি alphabet দরকার হয়না স্বর দীর্ঘ করার জন্য; অন্য রোমান ভাষাগুলোয় বিভিন্ন রকমের অ্যাক্সেন্ট মার্ক আছে; আরবীতেও 'ইয়া' 'ওয়া' 'মাদ-চিহ্ন' আছে স্বরকে দীর্ঘ করার জন্য। হিন্দিতে দীর্ঘস্বর বাদ দেয়ার কথা উঠেছে কিনা জানিনা। থাই ভাষায় দেখেছি প্রতিটি স্বরবর্ণের পাঁচটি করে অ্যাক্সেন্ট আছে হ্রস্ব, দীর্ঘ, চাপা, তীক্ষ বিভিন্ন রকম উচ্চারণের জন্য। এই ব্যবস্থাগুলো শুধুই তাদের নিজ নিজ ভাষার উচ্চারণে সহায়তা করে তাই নয়, বিদেশি শব্দ উচ্চারণেও কাজে লাগে। বাংলায় যেহেতু দুটো স্বরবর্ণ পাশাপাশি ব্যবহারের বিধান নেই, বা আরবীর মতো 'মাদ' নেই, থাইয়ের মতো অ্যাক্সেন্ট নেই; দীর্ঘ স্বরবর্ণ আমাদের অবশ্যই দরকার আছে।
আমি তাৎক্ষণিক একটা উত্তর দেই। কিন্তু পরে বিষয়টা আমাকে ভাবিয়ে তোলে। একটু তলিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেই। খুঁজতে খুঁজতে উইকিপিডিয়ায় একটি নিবন্ধ পাই vowel length শিরোনামে। সেখান থেকে যে তথ্য পাই তার সারমর্ম এই রকম—স্বরধ্বনির দৈর্ঘ্য বাংলায় তেমন বৈচিত্র্যপূর্ণ নয, প্রায় সবই এক রকম। উপমহাদেশের অন্যান্য অনেক ভাষার মতো বাংলায় হ্রস্ব এবং দীর্ঘ স্বরের মধ্যে চোখে পড়ার মতো কোনো পার্থক্য দেখা যায় না। রূপমূল বা শব্দের ক্ষুদ্রতম অংশ উচ্চারণ করার সময় স্বরধ্বনির দৈর্ঘ্য কখনো কখনো আলাদা হতে পারে, যদিও বানান একই হয়ে থাকে। যেমন, উন্মুক্ত একাক্ষরিক শব্দে (মাত্র একটি সিলেবল দিয়ে তৈরি শব্দ, যার শেষ হয় প্রধান স্বরধ্বনিটি দিয়ে) কিছুটা দীর্ঘ স্বরধ্বনি রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, চাটা ভালো হয়েছে। শুধু চা শব্দটার স্বরধ্বনি একটু দীর্ঘ। কিন্তু চায়ের পরে পদাশ্রিত নির্দেশক টা বসলে তখন হ্রস্ব হয়ে যাচ্ছে। আবার চায়ের সাথে যদি টা (নাস্তা) আসে তাহলে চা এবং টা দুটোর উচ্চারণই দীর্ঘ হবে।
এখন কথা হলো বাংলা বানানে এই দীর্ঘ বা হ্রস্ব উচ্চারণটি কীভাবে নির্দেশ করা হবে? আমাদের তো আর দীর্ঘ আ-কার বা হ্রস্ব আ-কার নেই! তাহলে? কিছু উদ্ধৃতি দেই, তাহলে দীর্ঘ স্বর বা হ্রস্ব স্বরের প্রকৃত চিত্রটা আরও পরিষ্কার হবে—
সাধারণত বাংলায় স্বরের দীর্ঘ উচ্চারণ নেই। তবু কোনো কোনো স্থলে স্বরের উচ্চারণ কিছু পরিমাণে বা সম্পূর্ণ পরিমাণে দীর্ঘ হয়ে থাকে। হসন্ত বর্ণের পূর্ববর্তী স্বরবর্ণের নিকে কান দিলে সেটা ধরা পড়ে, যেমন ‘জল’। এখানে জ’এ যে অকার আছে তার দীর্ঘতা প্রমাণ হয় ‘জলা’ শব্দের জ’এর সঙ্গে তুলনা করে দেখলে। ‘হাত’ আর ‘হাতা’য় প্রথমটির হা দীর্ঘ, দ্বিতীয়টির হ্রস্ব। ‘পিঠ’ আর ‘পিঠে’, ‘ভুত’ আর ‘ভুতো’, ‘ঘোল’ আর ‘ঘোলা’— তুলনা করে দেখলে কথাটা স্পষ্ট হবে। সংস্কৃতে দীর্ঘস্বরের দীর্ঘতা সর্বত্রই, বাংলায় স্থানবিশেষে। কথায় ঝোঁক দেবার সময় বাংলা স্বরের উচ্চারণ সব জায়গাতেই দীর্ঘ হয়, যেমন : ভা—রি তো পণ্ডিত, কে—বা কার খোঁজ রাখে, আ—জই যাব, হল—ই বা, অবা—ক করলে, হাজা—রো লোক, কী— যে বকো, এক ধা—র থেকে লাগা—ও মার। যুক্তবর্ণের পূর্বে সংস্কৃতে স্বর দীর্ঘ হয়। বাংলায় তা হয় না।–রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
বাংলা উচ্চারণে কোনো ওকার দীর্ঘ কোনো ওকার হ্রস্ব; হসন্ত শব্দের পূর্ববর্তী ওকার দীর্ঘ এবং স্বরান্ত শব্দের পূর্ববর্তী ওকার হ্রস্ব। ‘ঘোর’ এবং ‘ঘোড়া’ শব্দের উচ্চারণ-পার্থক্য লক্ষ্য করিলেই ইহা ধরা পড়িবে। —রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
নিয়মে আছে; সংস্কৃত শব্দের (তৎসম বললে ভালো মানাতো) প্রাকৃত অথবা বাংলারূপে ঈ-কার স্থলে ই-কার ব্যবহার করতে হবে। যেমন; পাখি, বাড়ি, হাতি, ইত্যাদি।
এই নিয়মে একটা কথা পরিষ্কার হয়েছে। তা হচ্ছে : সংস্কৃত শব্দ বাংলায় আসার পথেই ব্রাত্য বাংলাভাষীর মুখে মুখে তার কুলীন দীর্ঘস্বর হারিয়েছে। তো কথাটা মেনে নিলেই হয় যে, বাংলায় দীর্ঘ স্বর নেই। কথাটা অবশ্য বাংলায় এম.এ. পড়ার সময় শিখিয়েছেন শ্রদ্ধেয় শিক্ষকেরা। পরে সবাই ভুলে যায়। আমরা তো পরীক্ষায় পাস করার জন্য সাধারণত পড়ি। শেখা বা জীবনে ব্যবহারের জন্য নয়।—বেগম জাহান আরা [ভাষা বিজ্ঞান বিভাগ, ঢা.বি-এর সেমিনারে পঠিত, ২৩.০২.১০]
তাহলে দেখা যাচ্ছে বাংলায় এমন কিছু দীর্ঘ স্বর আছে যার জন্য কোনো আলাদা স্বরবর্ণ বা চিহ্ন নেই! আবার আমরা লিখতে গিয়ে এমন অনেক জায়গায় দীর্ঘ স্বরবর্ণ বা দীর্ঘ-কার বসিয়ে যাচ্ছি যেখানে আদৌ উচ্চারণে দীর্ঘ স্বর নেই। এখন সরলীকরণ করতে চাইলে প্রশ্ন উঠতে পারে শুধুমাত্র দীর্ঘ-ই হ্রস্ব-ই বা দীর্ঘ-উ হ্রস্ব-উ স্বরধ্বনির জন্য কেন আলাদা বর্ণের, যথা ঈ, ঊ বা চিহ্নের, যথা ী, ূ প্রয়োজন হবে? ঈ বা ঊ এবং এদের-কার চিহ্ন একেবারেই বাদ দেয়া যায় না কি?
না—ঈ, ঊ বা ী, ূ—এগুলোকে একেবারেই বাদ দেয়া যাচ্ছে না আপাতত। কারণ কিছু তৎসম শব্দে ব্যাকরণগত বাধ্যবাধকতার কারণে এগুলোকে অবিকৃত রেখে দেয়া হয়েছে। [বিস্তারিত দেখুন প্রথম পর্বে] কিন্তু স্বরধ্বনির বিষয়টি এর সাথে জড়িত নয়। ভালো থাকুন সবাই, আর লিখতে থাকুন প্রাণ খুলে। আপনার পাশেই থাকবে বানানায়তন।
***
কুটুমবাড়ি
মন্তব্য
একটা প্রশ্ন করি।
ইংরেজি ভাষার লোকেরা বিইউটি বাট আর পিইউটি পুট নিয়ে দিব্বি করে কেটে খাচ্ছে। সুড কুডের মতো বহু শব্দ আছে যেখানে সবগুলো অক্ষর উচ্চারণ হয় না। ফ্রেঞ্চ ভাষা এইদিক দিয়ে আরো ভয়াবহ। তো প্রশ্নটা হলো আমাদের বাঙ্গালিদের বানান নিয়ে এতো ঝগড়াঝাটি কেন? এটা ওটা বাদ দিয়ে দীর্ঘ ঈ/কার, হ্রস্ব ইকার, ন/ণ, স/শ/ষ ইত্যাদি "ঝামেলা" মিটিয়ে ফেলারো ফতোয়া পাই মাঝে মাঝে। এগুলো না করলে হয় না?
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
কুটুমবাড়ি
হাসিব ভাই, একটু সংযোজন। আপনি লিখেছেন
‘…কালে কালে বানানের বিশৃঙ্খলা যেন বেড়ে গেছে। কতকগুলি শব্দের ক্ষেত্রে দেখা যায় নানাজনে নানারকম বানান লিখছেন। বাংলার মতো উন্নত ভাষার পক্ষে এটি গৌরবের কথা নয়।’[সূত্র : বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান]
এখন আমি একটা প্রশ্ন করি। আপনি কি ইংরেজি বা ফ্রেঞ্চ ভাষায় নানাজনকে নানারকম বানানে লিখতে দেখেছেন? পারবেন এ রকম কোনো রেফারেন্স বা সূত্র দিতে? চিরকৃতজ্ঞ থাকব।
কুটুমবাড়ি
আমি তো ভাই সরলীকরণ করতে করতে এমন অবস্থা হয়েছে যে সবতাতেই হ্রস্ব-ইকার দেই। যেখানে বেশি বেমানান মনে হয় সেখানে দীর্ঘ-ঈকার দিয়ে টেস্ট করে মানিয়েছে কিনা ! হা হা হা !
বড় সমস্যায় পড়ে গেছি ! দীর্ঘ-ঈকার ব্যবহার করতে ভালো লাগে না, অথচ কোথাও কোথাও না-দিয়েও পারি না !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
বস, এই সিরিজের প্রথম পর্বটাই ই-কার বনাম ঈ-কার নিয়ে লেখা। সময় পেলে একটু পড়বেন, হয়তো সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
কুটুমবাড়ি
রশ্শি দিরঘি নিয়া লেখা পড়লে আমার মনে হয়, বাংলা ভাষা নিয়া আমাদের কমপ্লেক্সের শেষ নাই। সেই ধরণের লিখাগুলা বানান বাদ্দিয়া ভাষাসংস্কারে মনযোগী হয়। মনে হয় সেইসব লেখকের ভাষাটারে বৈজ্ঞানিক করার বাসনা পাইছে ... আমার প্রবলেম
আপনার চিন্তার জায়গাটা আশা করি ভিন্ন। পরিশ্রমী লেখার জন্য ধন্যবাদ জানবেন।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
ধন্যবাদ, অনিন্দ্য ভাই। অবশ্যই ভিন্ন। বানান নিয়ে কিছু কনফিউশনে ভোগে পাঠকরা। আমি নিজেও ভুগি। সে জন্য অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজি। উত্তর পেলে আরও অনেকের সাথে শেয়ার করতে চাই। ভাবি যে হয়তো তাঁরা উপকৃত হবেন। আবার নিজের কোথাও ভুল হচ্ছে কি না সেটাও যাচাই করা যায়। নতুন লেখক হিসেবে ঘাটতি থেকে যেতে পারে। আশা করি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞতা।
কুটুমবাড়ি
নিজের বানানের কিছু ঘাটতি খোলাসা হবে।
ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন।
__________♣♣♣_________
না-দেখা দৃশ্যের ভেতর সবই সুন্দর!
__________♣♣♣_________
না-দেখা দৃশ্যের ভেতর সবই সুন্দর!
ধন্যবাদ। আমার পোস্টে আপনাকে পেয়ে ভালো লাগল খুব। আপনার কবিতা পড়ি, কিন্তু ভয়ে মন্তব্য করা হয় না। আমি আবার কবিতা তেমন বুঝি না, বেশির ভাগই অ্যান্টেনার অনেক ওপর দিয়া যায়।
কুটুমবাড়ি
পৃথিবীর প্রতিটি ভাষাতে এরকম গোড়ায় গলদ এবং বর্ণমালায় ভুল পাওয়া যাবে। গোড়াটা যদি মগডালে বসে বানানো যেত কিংবা বর্ণমালা তৈরির পর যদি ভাষার বিকাশ ঘটতো তাহলে আপনার অনেক প্রশ্ন উঠতোই না। আমাদের বর্ণমালার অনেক বর্ণই (অর্থাৎ ধ্বনি) পৃথিবীর অনেক ভাষাতে একদমই নেই ( যেমন হ, প, শ ধ্বনি) আবার একইভাবে বাংলাতেও অনেক ভাষার একাধিক ধ্বনিরূপ ( যেমন আলজিহ্বা বা গলনালীয় ধ্বনি যা আরবি বা জর্মনে আছে) নেই। এগুলোকে ভাষার দুর্বলতা, গলদ বলতে চাইলে বলতে পারেন। তার সমাধান, পৃথিবীর সবভাষার সংমিশ্রণে ভিন্ন একটি ভাষা সৃষ্টি করা; যাকে কলিম খান বলেছেন পরমভাষা। তবে সুখের কথা হল, আইপিএ-তে যে ধ্বনিগুলোর তালিকা আছে তার প্রায় সবগুলোই বাংলায় আছে। এত অপূর্ণতা, সীমাবদ্ধতা আর ধারকর্জ নিয়ে এসব ভাষা দুনিয়া দাপিয়ে বেড়াচ্ছে আর আপনার কিনা বাংলার ব্যপারেই যত খুঁত চোখে পড়ল ?
--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে লিখি কথা
আমি তো বেকার পেয়েছি লেখার স্বাধীনতা
--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।
এই খুঁতগুলোর কথা আমি বলিনি তো, বিশেষজ্ঞরাই বলছেন। এখন আমি যদি বলি আমাদের বর্ণমালা এবং বানান ঠিক আছে। কোনো সংস্কারের দরকার নাই। তাহলে সেটা আত্মঘাতী হয়ে যাবে না? আমি বাঙালি, আমার যত মাথাব্যথা বাংলা নিয়ে। তবে আমি প্রাইডটা রেখে প্রেজুডিসটা বর্জনের পক্ষে। ভালো থাকবেন।
কুটুমবাড়ি
নতুন মন্তব্য করুন