গল্পটা শুনেছিলাম বেশ কিছুদিন আগেই, এক লোকের মানিব্যাগ চুরি গেল, দেখা গেল যে অন্যান্য কাগজপাতির কপি বের করলেও ক্রেডিট কার্ডের জন্য আর এপ্ল্যাই করেনা। কদিন পরে তার বউ ধরল, হ্যাঁগো! সব করছ, আর টাকাপয়সার এই জরুরী জিনিষটাই ব্যাঙ্কে রিপোর্ট করলেনা? ভদ্রলোক বিরস কন্ঠে বললেন গতমাসে দেখলাম তুমি প্রতিমাসে গড়পড়তা যা খরচ কর, তার চেয়ে চোর বাবাজী কমই খরচ করেছে। তাই যদ্দিন ঐ বেচারা কম খরচে চালাতে পারে তদ্দিন কার্ড অর কাছেই থাকুক। এই হল আজকালকার প্লাস্টিকের পয়সার সমস্যা। এক কার্ডেই পকেট পুরো ফাঁকা করে দেয়া যায় আর ঐ এক কার্ডেই পৃথিবীর যেকোন যায়গায় গিয়ে দিব্যি বিকিকিনি করা যায়।অনলাইনের জমানা আসার পরে তো এই প্লাস্টিক মানি’র বৈশ্বয়িক প্রয়োগ আরো বহুগুণে বেড়ে গেছে। ঢাকায় বসে ই-বে’তে ফোনের মেমোরী কার্ড অর্ডার করলেন, যেটা চায়না থেকে একেবারে আপনার বাড়িতে পৌঁছে গেল। আমাদের কাহিনী এতোদিন পর্যন্ত মোটামুটি এইখানেই শেষ ছিল।
আমাদের জন্য অনলাইনে কেনাকাটা এক নিষিদ্ধ প্রাচীরের ওপারের জিনিষ, যেখানে বাংলার অধিবাসীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। তথ্য পাচার হয়ে যাবে, টাকা হুন্ডী হয়ে চলে যাবে, চোর ডাকাতের উপকার হবে, হ্যান ত্যান ম্যালা ফ্যাকড়া লাগিয়ে বাংলাদেশে অনলাইনে কেনাবাচার সুযোগটি এতোদিন বন্ধ ছিল।বিদেশ থেকে দশ কোটি টাকা পাঠান, কোন সমস্যা নাই, কোটিপতি ব্যাবসায়ী আপনি হলিডে করতে ইউরোপ যাচ্ছেন, তখন ব্যাগভর্তি ৫০০ ইউরোর নোট নিয়ে যান এয়ারপোর্টে সালাম করে যেতে দেবে, কিন্তু আপনার নিজের টাকা দিয়ে অনলাইনে কয়েক হাজার টাকার কেনাকাটা করবেন, তো আপনি মেগা ক্রিমিনাল হয়ে গেলেন। আপনাকে ঠেকানোর জন্য জনদরদী সরকার সর্বশক্তি খরচ করবে। সাম্প্রতিক সময়ে এই চিত্রের সামান্য পরিবর্তন হয়েছে, যার কিছুটা আভাষ দেবার জন্যই এই লেখার অবতারণা।
ই-কমার্সের অংশঃ
গেলবছর নভেম্বর মাসে মনে হয় বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে অনলাইনে ট্র্যাঞ্জাকশন করার সুযোগ করে দেবার জন্য নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই থেকে একটু আশায় ছিলাম যে কবে এই বন্ধ দুয়ার খুলবে। কিছুদিন পরে ডাচ বাংলা ব্যাঙ্ক তাদের প্রথম অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে গ্রাহকদের ব্যাবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। এই বিষয়ে সবচেয়ে তথ্যবহুল লেখা পেলাম প্রজন্ম ফোরামের সমন্ময়ক হাংরি কোডারের ব্লগে। খোঁজখবর নিয়ে দেখলাম যে আরেকটি প্রতিষ্ঠান ব্যাঙ্ক আর ওয়েবের মাঝামাঝি সমন্ময়কারী হিসেবে কাজ করে। তাদের সাথে যোগাযোগ করে কিছুদিন আগে বইমেলা ডট কমে ‘বাংলাদেশী’, ‘ডিজিটাল’, ‘যুগান্তকারী’ ই-কমার্স যোগ করলাম।
এখন তাত্বিকভাবে বাংলাদেশের ভেতর থেকেই অনলাইনে কেনাকাটা করা যাবে দেশী কার্ডের মাধ্যমে। তবে দুরাশার কথা হল, পদ্ধতিটি এখন পর্যন্ত সীমিত সংখ্যক বিদেশী কার্ডের সাথে কাজ করছে (আমার লন্ডনী কার্ড নিল, কিন্তু আমার এক বড়ভাইয়ের আমেরিকান কার্ড নেয়নি) আর দেশী কার্ডের মধ্যেও সীমিতসংখ্যক ব্যাঙ্কের ভিসা এবং মাস্টারকার্ড কাজ করে। আমার নিজের ডাচবাংলার যে এটিএম কার্ড আছে সেটির পাত্তা নেই। তবে আশার কথা হল, আরো বিস্তৃত আকারে আরো বেশী সংখ্যক গ্রাহকের সেবা দেয়ার জন্য সমন্বয়ের কাজ চলছে। আমাদের কপাল ফাটা, তাই এখনো অধিকাংশ ব্যাঙ্কের মনোভাবই দ্বিতীয় প্যারায় যেরকম বলা হয়েছে গ্রাহকদের প্রতি সেরকমই। বইমেলাকে পাঠনো অফারটি শেয়ার করলাম এখানে। ডাচ বাংলার আরো দুটো লিঙ্ক এখানে ও এখানে
বর্তমানে অনলাইন ব্যাঙ্কিং সমর্থিত কার্ডের দুটো তালিকা আছে আমার কাছে। আর এছাড়াও বিদেশের কার্ড কিছু কাজ করে কিছু করেনা।
তাই টুকটাক অনলাইন ব্যাঙ্কিং এর যুগ শুরু হয়ে গেল বাংলাদেশে অবশেষে। আরো কয়েক বছর লাগবে হয়তো সম্পুর্ণ কাঠামো দাঁড়িয়ে যেতে, কিন্তু বাংলাদেশে বসে আপনি বাংলাদেশী পণ্য বিক্রি করতে পারবেন বাংলাদেশী গ্রাহকের কাছেই আর সেই অর্থ আপনার দেশী ব্যাঙ্কেই জমা হবে। এটা প্রায় স্বপ্ন হল সত্যি টাইপের অনুভূতি।
বইমেলার অংশঃ
আর আমাদের বইমেলার যে ওয়েবসাইট সেটি দুই দিক থেকে বেশ কার্যকরী হতে পারে বলে আমার মনে হয়। প্রথমতঃ ঢাকার বাইরের শহরগুলোতে, বিশেষতঃ বিভাগীয় শহরের বাইরে, জেলা শহরগুলোতেও বইয়ের সংগ্রহ নিতান্তই সীমিত। গৎবাঁধা কিছু জনপ্রিয় বই থাকে আর পাঠ্যবই নিয়েই সংগ্রহ শেষ। আর দোকানদারেরও খুব দোষ নেই, যেই বই পাঁচ কপি আনলে পাঁচ বছরে এক কপি বিক্রী হবে, সেটি নিয়ে আর কি করবে? এক্ষেত্রে অনলাইনে ক্রয়ের সুবিধাসমৃদ্ধ কার্ডের প্রচল আরো বাড়লে প্রত্যন্ত্য অঞ্চলেরও নেট সচেতন পাঠকদের জন্য বইয়ের বিপুল সংগ্রহ হাতের নাগলে চলে আসবে।
দ্বিতীয়তঃ আমার হিসেবে প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য বাংলাদেশের ভেতরে উপহার হিসেবে পাঠানোর জন্য বই বেশ মানানসই ও চলনসই আইটেম। আমাদের সবারই বাড়িতে ভাগিনা, ভাতিজা, ছোট ভাইবোন আছে, অনেকেরই দেশে “বিশেষ কেউ” আছে যার কাছে চিরন্তন আবেদন হিসেবে পাঠানোর জন্য বই চমৎকার জিনিষ। কদিন আগেই বই উপহার দিবস নিয়ে অনলাইনে বেশ লেখালিখি হল, বিদেশে বই পাঠানো বেশ খরচসাধ্য হলেও দেশে ভেতরের ডাকমাসুল মোটামুটি সহনীয় পর্যায়েই আছে এখন পর্যন্ত।
বাংলাদেশী গেটওয়ে দিয়ে অর্ডার করতে গিয়ে সমস্যায় পড়লে এ মেইল করে দিতে পারেন, আমি গেটওয়ের কাছে পাঠিয়ে দেব। সম্পুর্ণ সিস্টেম এখনো সাইজে আসেনি বলে ওনারাও বলেছেন সমস্যা থাকলে ওনাদের নিয়মিত বিরক্ত করতে।
বাঘ ভাল্লুক, পোকামাকড়ঃ
বইমেলার সাইট মোটামুটি হাতুড়ী বাটালি দিয়ে নিজেদেরই করা, তাই মাঝেমধ্যে এদিক সেদিকে এক দুটা পোকামাকড়ের খবর পাওয়া যায়, তাই আগে থেকেই সাবধান করে দিচ্ছি। প্রথমতঃ একদম অর্ডার করার পাতায় গেলে দু-একজনের সময় এরর দেয়। ব্রাউজার বন্ধ করে, নতুন ব্রাউজার খুলে ট্রাই করতে পারেন, অথবা অন্য সময় ঢুকে দেখতে পারেন। দ্বিতীয়তঃ ডাচ বাংলার যে গেটওয়ে সেটি অনেক বিদেশী কার্ডই নেয়না, সেটির সমাধান হল পেপ্যালে একাউন্ট থাকলে তার মাধ্যমে কাজ সারা।
=====
ফরিদ
www.boi-mela.com
মন্তব্য
বাংলাদেশে পেপ্যাল একাউন্ট মেইনটেইন করা যায়? নাকি এক্ষেত্রেও ব্যাংকের সীমাবদ্ধতা আছে!
অনলাইন ব্যাংকিং চালু হলে সেটা হবে নিঃসন্দেহে বেশ বড় একটা পদক্ষেপ। দেশের তথ্য চুরি হওয়া, টাকা পাচার হওয়ার জুজুর ভয় আর কতো!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
বাংলাদেশে বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবে পেপ্যালের একাউন্ট খোলা বা মেন্টেইন করা সম্ভব না। প্রবাস জীবনে আইডি খুলে রেখেছিলাম। সেটাই এখনো টিকে আছে।
উজ্জ্বলতর ভবিষ্যতের অপেক্ষায়
ফরিদ
তাইলে আর কী!
আর আপনাদের বইমেলা ডট কমে কার্ড ব্যবহারকারীদের জন্য সিকিউরিটির ব্যবস্থা কেমন? যে সমন্বয়কারীর কথা বললেন, তারা কতোটা প্রফেশনাল! কার্ডের তথ্য চুরি যাওয়ার রিস্ক কতোটা!
এগুলো জিজ্ঞেস করছি কারণ খুব কাছের একজন অতি সম্প্রতি বেশ বড় একটা ঝামেলার শিকার হয়েছেন। যারা বইমেলা ডট কমে কার্ড ব্যবহার করবেন, তাদের নিশ্চয়ই সিকিউরিটির ব্যাপারটা জানা উচিৎ।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
কার্ডের তথ্য সরাসরি ডাচ বাংলা ব্যাঙ্ক কর্তৃক সামনলানো হয়। এখানে পেপ্যালের মত বইমেলার নিজস্ব কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। বাংলাদেশী ব্যাঙ্কিং খাতে ডাচ বাংলার কিছু সুনাম আছে আশা করি। সেইটুকুই ভরসা। নাহলে ব্যাঙ্কের ডাটাবেস হ্যাক হয়ে গেলে তো সেই লাউ আর কদুই।
বাংলাদেশ থেকে পেপ্যাল অ্যাকাউন্ট মেইনটেইন করা দূরে থাক বাংলাদেশী আইপি থেকে লগিন করা মাত্র অ্যাকাউন্ট লক হয়ে যায়। বিয়াপক গিয়ানজাম করে অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধার করা লাগে।
কি মাঝি, ডরাইলা?
আমার্টা অহনো লক হয়নাই। দিলেন তো ট্যানশন বাড়ায়
লক হয় নাই? ক্যামনে কী? আমি ঢাকায় গিয়ে বাসার জিপের কানেকশন [সিরিয়াস ব্রডব্যান্ড] দিয়ে লগিন করার পর অ্যাকাউন্ট লক করে দিয়েছিল।
কি মাঝি, ডরাইলা?
আশা করতেছি আমিও বড় হইয়া প্যাপল ব্যবহার করুম। আর আমি বড় হইতে হইতে ততদিনে বাংলাদেশেও ই-কমার্সের তুমুল যুগ শুরু হইয়া যাইবো !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
ভারতে বই কেনার জন্য ফ্লিপকার্ট আর ইন্ডিয়াপ্লাজা বেশ ভাল৷ প্রচুর ডিসকাউন্ট দেয়, বেশ আয়েশ করে বই কেনা যায়৷ কিন্তু এরা কেউ বাংলা বই বেচে না হায়!
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
ভারতের তিন বছর থাকার সময় কখনোই স্নাতক পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ভারতীয় ভাষার কোন সাহিত্য সম্পর্কে আগ্রহ বা চর্চা দেখিনি। বইয়ের ক্ষেত্রেও মনে হয়েছে তেমনই। তেমন কোন ওয়েবসাইট চোখে পড়েনি যেখানে একসাথে প্রধান ৫-৬টি ভারতীয় ভাষার সমৃদ্ধ সম্ভার পাওয়া যাবে।
আপনার উল্লেখিত দুটো সাইটেই মূলত ইংরেজী বইভিত্তিক। আমি মনে করি ভারতীয় মিনিমহাদেশের জন্য এই চিত্র একান্তই গ্লানিকর।
বাই দা ওয়ে বইমেলারে নকল করে এই সাইটটি হয়েছে। ব্যাবহার করে দেখতে পারেন
নতুন মন্তব্য করুন