ড: খোন্দকার সিদ্দিক-ই-রব্বানী
অধ্যাপক ও চেয়ারপার্সন,
বায়োমেডিকেল ফিজিক্স এন্ড টেকনোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
এর একমাত্র সমাধান রয়েছে কৃষি, আর প্রকৌশল ও প্রযুক্তি ভিত্তিক ক্ষুদ্র শিল্প খাতে, আর এ খাতদুটিই পারে প্রতি বছর যোগ হওয়া ত্রিশ লক্ষ নতুন মানুষের কর্মসংস্থান করতে। কৃষককেও আমি একজন প্রযুক্তিবিদ হিসেবেই দেখি। এ দুয়েরই অমিত সম্ভাবনা আছে এদেশের মেধাবী আর নিরলস সাধারণ মানুষগুলোর মধ্যে। অতীতে নেয়া অনুকূল নীতিমালার ফলে কৃষিতে বেশ সফলতা এসেছে, বলতে হবে। কিন্তু ক্ষুদ্র শিল্পে নীতিমালা কখনই অনুকূল হতে পারছে না, কারণ এর বিরুদ্ধে রয়েছে বিদেশী পণ্যের আমদানীস্বার্থের বিশাল শক্তি, তার সঙ্গে কখনও যোগ হয় এদেশেরই কিছু বড় বড় শিল্পগোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ। আমাদের শহুরে মানসিকতারও কিছু সমস্য রয়েছে। এ সবের ফলে ক্ষুদ্রশিল্প কখনই কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারছে না। এর প্রতিকার করতে পারে একমাত্র রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব। কিন্তু সেখানে এসে ঠেকে গেলাম, এ যে রাষ্ট্র-পদ্ধতির এক বিশাল যন্ত্র দানব, যে এর ভেতর ঢোকে সেই পদ্ধতির সেবাদাস হয়ে যায়। ব্যক্তি-মানুষের যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা সেখানে গৌণ। তাই রাষ্ট্র-পদ্ধতির দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ হল। পদ্ধতির মধ্যে যে গণতন্ত্রের দিকে অনেক আশা নিয়ে আমরা তাকিয়ে ছিলাম, আশাভঙ্গ হল সেখানেই সবচেয়ে বেশী। গণতান্ত্রিক সরকারকে তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য অনেক কাছের মানুষ তৈরী করতে হয় সারা দেশে, গ্রামে গঞ্জে, শহরে। এ কাছের মানুষদের চাহিদার যোগান না দিতে পারলে তার নিজের অস্তিত্বই বিপন্ন। আর এর ফলে তৈরী হচ্ছে বিশাল সামাজিক বৈষম্য, অথচ এ বৈষম্য দূর করার অঙ্গীকার নিয়েই আমরা গণতন্ত্র চেয়েছিলাম। এ চাহিদার যোগান দিতে হয় সারা দেশের মানুষকে, বিশেষ করে গ্রামের মানুষকে। আমরা যারা শিক্ষিত ও শহরবাসী, তারাও কোন না কোন ভাবে সরকারের কাছের মানুষদের কাছাকাছি ভিড়তে পারি, সরকারের উপর প্রভাব ফেলে নিজেদের সুযোগ সুবিধা কিছুটা হলেও আদায় করে নিতে পারি, কিন্তু শহরের অশিক্ষিত বা স্বল্প শিক্ষিত মানুষকে আর গ্রামে বাস করা সিংহভাগ মানুষকে তার দাম দিতে হয়। বৈষম্যের শিকার তারাই সবচেয়ে বেশী।
গণতান্ত্রিক সরকারের সময়ে গ্রাম জীবনে এমন সব কষ্ট ও বিড়ম্বনা তৈরী হয়েছে, যা অগণতান্ত্রিক সরকারের সময়ও ছিল না। এ ছাড়া নীতিবানের পক্ষে এ দেশে টিকে থাকাই হয়েছে বড় সমস্যা, অন্যদিকে নীতিহীনের হচ্ছে রমরমা উন্নতি। নীতিহীনতা চারদিক যেন ছেয়ে ফেলেছে, আর তার ছায়া কেবল বেড়েই চলেছে, কমছে না। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের সবচেয়ে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে খুব কাছে থেকে দেখে দু:খ পাচ্ছি কি ভাবে গণতন্ত্রের দানবীয় দিকটি দেশের সবচেয়ে মূল্যবান শিক্ষিত ব্যক্তিদেরকে তাদের আজীবনের শিক্ষা থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। দেশের এ ক্রান্তিলগ্নে যাদের দিকে আমরা তাকাব, যাদের কাছ থেকে সমাধানের কোন নতুন পথ আশা করব, তারাই যখন দানবের সেবাদাস হয়ে পড়েন, তা দেশের জন্য নিদারুণ হতাশার খবর বৈকি। এ সব কিছু নিরন্তর ভাবায়। ভাবনার এক পর্যায়ে আবিষ্কার করি বাংলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বের আরও যারা গণতন্ত্রে পদচারণা করছে, কারও অবস্থাই তেমন ভাল নেই।
আবিষ্কার করি পাশ্চাত্যের ধনী দেশগুলোর অনেকগুলিতেই এ আধুনিক যুগেও রাজতন্ত্র এখনও বেঁচে আছে, আগের মত সদর্পে না হলেও, আর তা সম্ভব হয়েছে দেশের মানুষকে গণতন্ত্রের নামে দলে দলে বিভক্ত করে, সেই বিখ্যাত ডিভাইড এন্ড রুল অনুসরণ করে। এই তো সেদিনই অষ্ট্রেলিয়া ভোট দিয়ে স্বাধীন হবার সুযোগ পেয়েও তা নেয় নি, বার হাজার মাইল দূরের রাজতন্ত্রের অধীনে থাকার পক্ষেই ভোট দিয়েছে। অথচ স্বাধীনতার আকাঙ্খা মানুষের স্বাভাবিক, এর জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষ রক্ত দিয়েছে আমাদের এই বাংলাদেশে। উপলব্ধি করি, হাজার বছর ধরে শিখেছি, একতাই বল, বিভেদ করে দুর্বল; কিন্তু কার স্বার্থে দেশের মানুষকে দলে দলে ভাগ করার পদ্ধতি বেছে নিয়েছি? হাজার বছর ধরে শিখেছি, আপনারে বড় বলে বড় সে নয়, লোকে যারে বড় বলে বড় সেই হয়;, শিখেছি আমার মধ্যে মনুষ্যত্ব-পশুত্ব দুটিই বিরাজমান, মনুষ্যত্বের সমাজ তৈরী করতে হলে নিজেকে অন্যের থেকে ছোট ভাবতে হয়, বিনয়ী হতে হয়।
কিন্তু এ কেমন পদ্ধতি বেছে নিয়েছি যেখানে গর্ব করে ঘোষণা দিতে হয়, আমাকে ভোট দাও, আমিই অন্যজনের থেকে বেশী যোগ্য? এ তো আমার ভিতরের পশুটিকেই উসকিয়ে দেয়। তাই দেশে আজ যা কিছু অপ্রিয় হচ্ছে, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ; এ তো সব এ পশুত্বেরই স্বাভাবিক পরিণতি। হ্যাঁ, পাশ্চাত্যের কিছু ধনী দেশ এ গণতন্ত্র নিয়েই আপাত:দৃষ্টিতে ভাল চলছে, কিন্তু গভীরে ঢুকলে দেখা যাবে তাদের কিছু সাংস্কৃতিক উপাদান তাদের সমাজকে শক্তভাবে জুড়ে রেখেছে। প্রচলিত গণতন্ত্রের কারণে তার কিছুটা ক্ষয় হলেও সাংস্কৃতিক শক্তির প্রবলতা তাদেরকে এত তাড়াতাড়ি নীচে নিতে পারছে না। অবশ্য তাদের কোন কোন দেশে নীচে নেমে যাওয়ার প্রবণতা ইদানীং বেশ চোখে পড়ছে। তা ছাড়া নিজের দেশের জন্য আপাত:দৃষ্টিতে মোটামুটি ভাল হলেও অন্যদের জন্য তাদের কেউ কেউ পৃথিবীকে অনাবাসযোগ্য করে তুলছে। পক্ষান্তরে আমাদের দেশের সাংস্কৃতিক শক্তির ধরণটি ভিন্ন, যেটি পাশ্চাত্য থেকে আমদানী করা প্রচলিত গণতন্ত্রের দানবীয় দিকটিকে সামাল দেয়ার জন্য কোনোভাবেই তৈরী নয়। এ জন্যই যত ব্যর্থতা, যত হতাশা। তাই আমাদের জন্য অন্য ব্যবস্থার কথা ভাবতে হবে, যা আমাদের সাংস্কৃতিক শক্তির উপযোগী।
দু:খ, অন্ধভাবে পাশ্চাত্যের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক পদ্ধতির অনুকরণ করতে গিয়ে আমরা নিজেদের হাজারো বছরের শিক্ষাকে সম্পূর্ণ পিছনে ঠেলে রেখেছি। তাই নতুন করে ভাববার সময় হয়েছে। আর অন্ধ অনুকরণ নয়, আমাদেরকে যৌক্তিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেশের সরকারের জন্য নতুন পদ্ধতির কথা ভাবতে হবে। ঈঙ্গিত নিতে হবে একটি ক্ষুদ্র সমাজ কিভাবে গড়ে ওঠে, কিভাবে নেতৃত্ব তৈরী হয়, এসবের উপলব্ধি থেকে। বেশ কিছু বছর এভাবে ভাবনার পর বাংলাদেশের জন্য নতুন একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থার রূপরেখা দাঁড় করিয়েছি, আশে পাশের ব্যক্তিদের সাথে আলাপের প্রেক্ষিতে এতে অনেক পরিবর্তনও এনেছি। এ নিয়ে একটি পুস্তিকা তৈরী করে এখন সচলায়তনের পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করতে চাচ্ছি, তাদের মতামতের আলোকে এটিকে আরও উন্নত ও বাস্তব সম্মত করা যায় কিনা। কেউ হয়ত এটিকে সম্পূর্ণ অবাস্তবও ভাববেন। কিন্তু মতামত দেয়ার আগে একটু চোখ বন্ধ করে নিজের জীবনের সব অভিজ্ঞতা আর উপলব্ধি গুলোকে সম্মিলিত করে বিশ্লেষণ করতে অনুরাধ করব। পুস্তিকাটি ব্লগ হিসেবে আকারে বড় হয়ে যাবে বিধায় পিডিএফ করে এখানে লিংক সংযুক্ত করে দিলাম।
আগ্রহ ভরে আপনাদের মতামতের অপেক্ষা করছি।
মন্তব্য
সচলায়তনে স্বাগতম, স্যার। নিয়মিত লিখবেন, এমন প্রত্যাশা রইলো।
সচলায়তনে স্বাগতম। ভূমিকাটা খুব ভাল লাগল। আরো ভাল হতো যদি পিডিএফ করা বইটা প্রতিটা অধ্যায় এক বা একাধিক পোষ্টে দিতেন। পাঠক প্রতিটা বিষয় নিয়ে তাদের মতামত জানতে পারতো।
বই নামিয়ে রাখলাম। পড়ে আমার মতামত জানাব। কিন্তু আমার প্রস্তাবটা বিবেচনা করার অনুরোধও রইল।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
ভালো উদ্যোগ, তবে বাস্তবায়নেই সমস্যা। সচলায়তনে স্বাগতম। পুরো লেখাটাকে কিছু প্যারা করে দিতে পারলে পড়তে সুবিধা হতো।
মডুদের কেউ প্রথম লাইনের পরিচিতি অংশটুকুকে প্যারায় ভেঙে দিলে ভালো হবে।
কিছুদিন আগেই আপনার সাফল্যের কথা পড়লাম পত্রিকায়। এখানে আপনার লেখা পেয়ে ভালো লাগলো। সচলায়তনে স্বাগতম।
লিঙ্কটি পড়বো সময় করে
ধন্যবাদ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
পুরো ৩২ পৃষ্ঠা পড়লাম। একদম মানসম্মত কোন ধারনা বলে মনে হয়নি। কিছু ক্ষেত্রে হাস্যকরও বটে। পড়তে পড়তে আইয়ুব খানের বেসিক ডেমোক্র্যাসির কথা মনে হচ্ছিলো।
৩২ পৃষ্ঠার ধারনার সমালোচনা এখানে মন্তব্যের ঘরে করা সম্ভব না। পুতুলের মতো আমিও বলি পুরো বইটা ভাগ ভাগ করে সচলে তুলে দিন। এতে করে আমরা আস্তে আস্তে আলোচনা আগাতে পারবো।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
ধন্যবাদ, ধৈর্য ধরে পুরোটা পড়ার জন্য। একটি নতুন ধারণা কারও কারও কাছে হাস্যকর মনে হতে পারে এটি তো স্বাভাবিক। আইয়ুব খানের বেসিক ডেমোক্রেসী থেকে এর একট মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। সেখানে বর্তমান দলীয় পদ্ধতির নির্বাচনের মাধ্যমে সর্বনিম্ন পর্যায়ে প্রতিনিধি নির্বাচন করা হবে। তাদের মধ্য থেকে আবার একই পদ্ধতিতে উপরের দিকে প্রতিনিধি নির্বাচন করা হবে। এভাবে যে প্রতিনিধি নির্বাচিত হবে তারা যে যোগ্য হবে তার কোন ঈঙ্গিত নেই। তা ছাড়া গণতন্ত্রের মূল যে সমস্যা, অর্থাৎ দলীয়করণ, আর নিজেকে নেতৃত্বের যোগ্য বলে প্রচার করা, তার থেকেও মুক্তি নেই।
যদি আপনি মিল খুঁজতে চান, তবে ভ্যটিকান সিটিতে পোপ নির্বাচনের যে পদ্ধতি আমরা কয়েক বছর আগে দেখলাম তার সঙ্গে কিছুটা হয়ত পাবেন (যদিও আমার এ ধারণাটির জন্ম এ খবর জানার আগে)। দ্বিতীয় কিছুটা মিল খুঁজে পাবেন বাংলাদেশের তত্বাবধায়ক সরকারের সাথে। একজন যোগ্য প্রধান উপদেষ্টাকে দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করা হচ্ছে এখানে, (যদি আমরা নির্ধারিত অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির ব্যবস্থাটিকে বাদ দিই)। তিনি যদি রাজী হন, তবে তার সাথী উপদেষ্টাদের নিজেই খুঁজে নিচ্ছেন। কিন্তু মূল তফাৎ টি হচ্ছে যে প্রধান উপদেষ্টাকে কে কিভাবে বাছাই করবে? রাজনৈতিক দলগুলো মিলে করেছিল প্রথম প্রধান উপদেষ্টাকে। ইদানীংকার ক্ষেত্রে সেটি হয়ত করেছে দেশের মিলিটারী বাহিনীর নায়কেরা। আমার প্রস্তাবনায় বাছাই করার বিষয়টিতে দেশের প্রমণিত, ও যোগ্য ব্যক্তিদের হাতে আনা হয়েছে, তাও একজন দুজন নয়, কয়েক হাজার ব্যক্তির। আর একই পদ্ধতি চলবে বিভিন্ন স্তরে। তবে এর সঙ্গে আমার ইদানীংকার আরও একটি ধারণা যুক্ত করলে ভাল হয়, যেটি আমার পুস্তিকাটিতে কিছুটা লিখেছি কিন্তু অত পরিষ্কার করে নয়। সেটি হল, রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আমাদের চাই একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান, প্রশাসক বা গভর্ণমেন্ট নয়। কিছুদিন আগে ডেইলী ষ্টার পত্রিকাটিতে এর উপর আমার একটি লিখা বেরিয়েছে।
আপনার ও আরও কয়েক পাঠকের সাজেশনের ভিত্তিতে আমি চেষ্টা করব ধারণাটি ভাগ ভাগ করে উপস্থাপন করার, তবে নতুন একটি ধারণার দর্শন আর বাস্তবায়ন গোটা বিষয়টি একবারে না পেলে তার সম্পর্কে মতামত দেয়া একটু কঠিন হয়ে পড়ে।
ধন্যবাদ আবারও।
ভূমিকাটা খুবই চমৎকার লাগলো। কিন্তু উপরের অনেকের মত আমিও একমত যে পুস্তিকাটির পুরো লেখাকে ভেংগে ভেংগে কয়েকভাগে পোস্ট করুন, লেখা সামনে থাকলে আলোচনা-সমালোচনা-বিশ্লেষণ সব হবে। বলতে পারেন, এটা ব্লগের একটা টেকনিক্যাল দিক।
পরিবর্তনে যে ইচ্ছা আপনি পোষণ করেন তাকে শ্রদ্ধা করি। তবে, ষাটোর্ধ প্রেসিডেন্ট ও সত্তরোর্ধ ন্যায়পাল নিয়ে দেশ চালানোসহ আরো যে আইডিয়া আপনি দিয়েছেন, সেগুলোকে গ্রহণযোগ্য মনে করছি না একেবারেই। হয়ত আরো অনেকেই করবেন না। কিন্তু আপনার রাষ্ট্র-বিষয়ক চিন্তা চলতে থাকবে, এই আশা করি।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
আপনার লেখাটি পুরো পড়ে দেখতে পারিনি। তবে গনতন্ত্রের যে দূর্বলতাগুলি তুলে ধরেছেন সেগুলি নিয়ে আমি নিজেও অনেক ভেবেছি। গনতন্ত্রের শো-ম্যানশিপ, ধূর্ততা এগুলি আসলেই মানুষকে বিপথে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। জানিনা আমরা এটি থেকে কোনদিন বের হতে পারবো কিনা।
৩২ পৃষ্ঠার ধারনাপত্রটি কয়েকপর্বে সচলায়তনে দিন। পাঠক পড়ার এবং আলোচনার সুযোগ পাবে।
ধন্যবাদ আপনাকে।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
আপনার পুস্তিকাটি পড়ে দেখলাম। ষাটোর্ধ রাষ্ট্রনেতা, সত্তোরোর্ধ ন্যায়পাল এগুলোর সাথে একেবারেই একমত নই (এসময় তো তাদের অসুখ-বিসুখ নিয়ে নিজেদেরই ঠিকমতো চলতে পারার কথা নয়)। বাকি যে কনসেপ্টের কথা বলেছেন তার সাথে আমেরিকার গণতন্ত্রের কিছুটা মিল আছে। আপনি বলেছেন যোগ্য লোকদের দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার কথা। আমেরিকায় রামসফেল্ডের মতো বিতর্কিত লোকেরা মাঝে মাঝে প্রতিরক্ষা বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেলেও, দেশের জন্য প্রয়োজনীয় বাকী সব সেক্টরের (যেমন কৃষি, যোগাযোগ ইত্যাদি) মন্ত্রীরা স্ব স্ব ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হিসেবেই প্রেসিডেন্ট কর্তৃক মনোনীত হন। আমার বস কিছুদিন আগে ওবামার মন্ত্রী হয়েছেন। রাজনীতির সাথে একেবারেই সম্পর্কহীন একজন ব্যক্তি। নিজ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হিসেবেই তিনি মন্ত্রী হয়েছেন। এক্ষেত্রে সংসদ (পড়ুন সিনেট) যেটা করেছে তারা প্রেসিডেন্টের এ মনোনয়ন যাচাই করে দেখেছে, জনগণের তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভি্যোগ আছে কিনা দেখার জন্য পাবলিক হিয়ারিং-এর ব্যবস্থা করেছে (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি আপত্তি করায় তাঁর যোগদান অনেকদিন হোল্ড হয়েছিল, কিন্তু ঐ লোক পরবর্তীতে নাম প্রকাশ না করায় অভিযোগ বাতিল বিবেচিত হয়েছে), এরপরই সিনেট চূড়ান্ত মনোননয়ন দিয়েছে। আমার ধারণা এটা অত্যন্ত স্বচ্ছ একটা ব্যবস্থা। সাংসদরা তো লেজিসলেটর, তাদের ক্ষমতা এই পর্যন্তই থাকা উচিত; আমাদের দেশের মতো সংসদে লেজিসলেটর এবং মন্ত্রী হিসেবে এক্সিকিউটিভ এই দুই পদে একসাথে থাকা উচিত নয়।
আমেরিকায় সংসদ বা কংগ্রেস আবার দুই কক্ষবিশিষ্ট। নিম্নকক্ষ হলো শুধু জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে। তারা এলাকার দাবী-দাওয়া নিয়ে কংগ্রেসে কথা বলে, এলাকা বা দেশের জন্য প্রয়োজনীয় বিল উত্থাপন করে। আপনি জাহাজের উদাহরণ দিয়ে বলেছেন জাহাজে খালাসীর সংখ্যা বেশি থাকলে খালাসীর মধ্য থেকেই নেতা নির্বাচিত হবে, যোগ্য লোক হবে না। উদাহরণ খাঁটি কোন সন্দেহ নাই। বাংলাদেশের সংসদে তাই খালাসীর সংখ্যাই বেশি। এরা অভিজ্ঞতা না থাকলেও আমাদের জন্য আইন বানায়, এরাই আবার আমাদের প্রধানমন্ত্রী (এটা আবার বাই ডিফল্ট) ও অন্যান্য মন্ত্রী হয়। দেশের অবস্থা বারোটা তো বাজবেই। আমেরিকার কংগ্রেসেও আমাদের দেশের মতো খালাসী আছে (এলাকার কথা বলার জন্য সংসদে খালাসীদেরও প্রয়োজন আছে)। কিন্তু সে বিবেচনা করেই এদের এমনি এমনি ছেড়ে দেওয়া হয় নাই। এদের উপরে খবরদারি করার জন্য আছে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ বা সিনেট যেটাকে বলা হয় ওয়ার্ল্ডের সবচেয়ে প্রেস্টিজিয়াস ডেলিবারেটিভ বডি। এলাকার প্রতিনিধি বিল বানায়, সেটা তারা একমত হয়ে পাশ করানোর পর আবার সিনেটেও পাশ করাইতে হয়, সেটার পাবলিক হিয়ারিং হয়, তারপর প্রেসিডেন্ট পাশ করায়। কাজেই খালাসী শুরুতে বিল উত্থাপন করলেও ওটা বিশেষজ্ঞ দিয়ে অনেক ঘষামাজা হয়ে তারপর আলোর মুখ দেখে। কাজেই কোনো এইট পাশ বেক্কল আমার জন্য আইন বানাইসে এমন চিন্তা করা লাগে না। আমাদের বেক্কল সাংসদগুলা যেমন নির্লজ্জের মতো নিজেদের জন্য পাজেরো গাড়ি আর করমুক্ত বেতনের আইন নিজেরা নিজেরা বানায় তেমন আইন এখানকার খালাসীরা বানাতে চাইলে সেইটা ঘ্যাচাং হওয়া কেবলমাত্র সময়ের ব্যাপার।
তাইলে কইতে পারেন এতো ভালো সিস্টেম থাকতে বুশের মতো ছাগু কেমনে প্রেসিডেন্ট হয়। এটাও হয় খালাসী সিস্টেমের কারণে- জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে। আপনি চেক এন্ড ব্যালান্সের পক্ষপাতী না, কিন্তু এই খালাসীদের সাইজ করার জন্যই চেক এন্ড ব্যালান্স জরুরী। প্রেসিডেন্টকে পদে পদে সিনেটের পারমিশন নিতে হয়, বেশি উল্টা-পাল্টা করলে কংগ্রেস ইমপিচ করতে পারে। অন্যদিকে দেশের প্রয়োজনীয় সেক্টরগুলো কিন্তু নিভৃতে বিশেষজ্ঞদের দিয়েই চলছে; প্রেসিডেন্ট বা সাংসদ বা কোনো রাজনৈতিক কারণে সেগুলো বসে নাই। আর সবচেয়ে জরুরী যেটা ফাঁকতালে কোনো ছাগু প্রেসিডেন্ট হয়ে গেলে এক টার্মে চার বছর তার বেশি দুই টার্মে সর্বোচ্চ আট বছর গ্যানজ়াম সহ্য করা লাগে। তারপর খুদাপেজ। আমাদের দেশে এটার তো কোনো লিমিট নাই। আমগো খালাসীদের আবার ছাগু খুব পছন্দ। তাই বছরের পর বছর এদেরই দেশের মাথা বানাই এবং যা ইচ্ছা তা করতে দেই।
কাজেই আমার মত হইলো নিম্নরুপ-
১। খালাসীরা খালাসীগো নেতা নির্বাচন করতে পারে। এই ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। বরং নেতা হিসেবে হামবড়া এলিটের কোনো দরকার নাই।
২। কিন্তু খালাসী নেতারে সাইজ করার ব্যবস্থা থাকতে হবে। তার লাগাম খুইলা দেয়া চইলত ন।
৩। পার্লামেন্টের চেয়ে প্রেসিডেনশিয়াল ব্যবস্থা উত্তম। চুতিয়া বিটিশদের আজাইরা ফলো করার দর্কার নাই।
৪। সংসদ দুই কক্ষ বিশিষ্ট হতে হবে। নিম্নকক্ষ- খালাসীদের; উচ্চকক্ষ- অভিজ্ঞ নেতা ও আইন বিশেষজ্ঞদের
৫। লেজিসলেটিভ, জুডিশিয়াল, এক্সিকিউটিভ প্রতিটি বিভাগ স্বাধীন ও আলাদা হতে হবে। কোনো এক ব্যক্তি একাধিক বিভাগে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। কোনো সাংসদ তাই মন্ত্রী হতে পারবে না।
৬। কোনো সেক্টরের বিশেষজ্ঞদের মধ্য থেকে প্রেসিডেন্ট সেক্টরের মন্ত্রীদের মনোনয়ন দেবে, সংসদ এবং পাব্লিক তা যাচাই-বাছাই, চূড়ান্ত করবে।
৭। সংসদ, প্রেসিডেন্ট ও পারিষদের মেয়াদ চার বছরের হবে, পাঁচ বছর চুরি করার জন্য বেশ লম্বা সময়। তবে সিনেটের মতো উচ্চকক্ষ বেশি মেয়াদে থাকতে পারে।
৮। কোন এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই টার্মের বেশি প্রেসিডেন্ট হতে পারবে না।
• আপনার পুস্তিকাটি এখানে ব্লগ হিসেবে দেয়ার প্রয়োজন দেখছি না। যাদের পড়ার ইচ্ছা লিংক থেকে পড়ে নিতে পারেন।
ধন্যবাদ, আপনার সুচিন্তিত মতামতের জন্য। আলোচনা সমালোচনার মধ্য দিয়েই তো আমরা পথ খোঁজার চেষ্টা করব।
হ্যাঁ, আপনি ঠিক বলেছেন যে আমেরিকার পদ্ধতির সঙ্গে আমার প্রস্তাবিত পদ্ধতির কিছুটা মিল আছে, কিন্তু মূল তফাৎটি হল প্রেসিডেন্ট বা রাষ্ট্রনেতা নির্বাচন ব্যবস্থায়। অর্থাৎ পদ্ধতির মূল দর্শনে, যার উপর আমি বেশী জোর দিচ্ছি। সেখানে দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন হচ্ছে, যার ফলে দেশের মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হচ্ছে, - অন্যদিকে আমার প্রস্তাবে দেশকে দলে দলে ভাগ করার বিপক্ষে বলেছি।
দ্বিতীয়ত: যে ঐ পদে যেতে চায় তাকে নিজেকে তা চেয়ে ঘোষণা দিতে হয়, নিজের ভোট নিজে চাইতে হয়। বলতে হয়, 'আমাকে ভোট দাও, আমার ধারণা, পরিকল্পনা, ওর থেকে ভাল', অর্থাৎ 'আমি ওর থেকে উন্নত, ও আমার থেকে অযোগ্য, খারাপ, ইত্যাদি'। এ পদ্ধতিরও বিপক্ষে আমার প্রস্তাব। আমি বলেছি যে এতে নোংরামী ঘাটা হয়, আমাদের ভিতরের পশুত্বটি উসকে দেয়া হয়, তাই পরবর্তী রাস্তাটি স্বাভাবিকভাবেই নীচের দিকের, পতনের। আমেরিকা ও ইউরোপে সাংস্কৃতিক ও অন্য কিছু রক্ষাকারী ফ্যাক্টর রয়েছে যা এই স্বাভাবিক পতনটি ধীর করে দিতে পারছে (কিন্তু বন্ধ করতে পারছে না), কিন্তু বাংলাদেশ ও অন্যান্য তৃতীয় বিশ্বে সেই ফ্যাক্টরগুলো নেই। তাই প্রচলিত গণতন্ত্রের কারণে এ দেশগুলোর সমাজ, চরিত্র সবই তাড়াতাড়ি নীচের দিকে নামছে। আবারও বলছি যে এর মানে এই নয় যে আমরা খারাপ। বলতে চাচ্ছি যে প্রচলিত গণতন্ত্রের ব্যবস্থাটি (হোক সে ইংল্যান্ডের বা আমেরিকার) আমাদের জন্য মোটেও ঠিক নয়। তাদের জন্যও যে ভাল, তাও বলছি না।
আমাদের মনে আছে, বুশ আর কেরি যখন ভোট যুদ্ধে, তারা একজন খুঁজে বের করেছিল যে অপরজন ১৮ বছর বয়সে মাতাল হয়ে গাড়ী চালিয়েছিল, আর পুলিশ তাকে ধরেছিল? অর্থাৎ পুরোনো নোংরা ঘাঁটাঘাটিঁ। বুশ আর কেরির ভোটের সময় একটি ছবিতে দেখেছিলাম দু পক্ষের ক্যামপেইনাররা প্লাকার্ড নিয়ে একেবারে মারদাঙ্গা ভাবে মুখোমুখী, ভাগ্যিস মারামারি হয় নি। আবার বিচারকদেরও কিভাবে প্রভাবিত করা হয় ফ্লোরিডার নির্বাচনে তাও সে সময়ে দেখেছি। এবারও দেখুন ওবামাকে 'কালো', 'মুসলমান' ইত্যাদি বলে ঘায়েল করার চেষ্টা হয়েছে। আবার বুশের সময় নাসার একজন সিনিয়র বিজ্ঞানী গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ে তার ২০ বছরের গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করলে নাসার একজন জুনিয়র বিজ্ঞানী তাকে রীতিমত ধমকে দেয় এই বলে যে, 'তুমি কি জান না যে বুশ এ ধারণার বিপক্ষে?' এতে সিনিয়রেরা খুব অসন্তুষ্ট হন এবং খোঁজ নিয়ে দেখেন যে বুশের নির্বাচন ক্যামপেইনে সাহায্য করার পুরষ্কার হিসেবে তাকে নাসা তে চাকুরী দেয়া হয়েছিল (পরে অবশ্য আরও প্রকাশ পায় যে তার একটি ডিগ্রী ভুয়া, যার জন্য তাকে চাকুরীচ্যূত করা হয়)। আবার বৃটেন, ইতালীর মত গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোতে পেশাদার ডিপ্লেম্যাটদেরকে না পাঠিয়ে ব্যবসায়ীদেরকে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত করা হয়, কারণ তারা বুশের ক্যামপেইনে প্রচুর অর্থসাহায্য করেছিল। এটিকে কি ঘুষ দেয়া বলব না?
আর একটি জিনিস খেয়াল করবেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বা গণতন্ত্র কিন্তু একটি মুখোশের মত, পেছনে অন্যেরা কাজ করে যাচ্ছে, যার ঈঙ্গিত আপনিও দিয়েছেন। কিন্তু পেছনের ওরা কাদের স্বার্থে কাজ করছে? ধনী ব্যবসায়ীদের। আর যেহেতু এদের বেশীরভাগই ইহুদী, তাই ইসরায়লের স্বার্থ আমেরিকার জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ, নিজের জনগণের চেয়েও। তাই আফগানিস্তানে, ইরাকে এত সব মিথ্যার আবরণে আক্রমণ, আমেরিকার টাকা খরচ করে, আমেরিকার সৈন্যদের জীবনের বিনিময়ে। আফগানিস্তান আর ইরাকের জীবন হানির কথা আর বললাম না। তাই গণতন্ত্রের মুখোশে স্বার্থবাদীরা সুযোগ পেয়ে যায়। আমেরিকার সাধারণ জনগণকে তা বুঝতে দেয়া হয় না, তারা ঠিকমত খেতে পেয়ে আর বুঝতেও চায় না। যেহেতু গণতন্ত্রের মাধ্যমে তারা নিজের দেশের অর্থনীতিকে ঠিকমত চালাতে পারে না, তাই সারা পৃথিবী জুড়ে তাদের এই অন্যায় যুদ্ধ। যুদ্ধের ফসল হিসেবে ইরাক থেকে সস্তায় আগামী ৩০ বছরের তেল পাওয়ার চুক্তি করা হয়েছে। সৌদি আরব সহ বিভিন্ন দেশে যুদ্ধাস্ত্র বিক্রী করা হয়েছে। তাই পরোক্ষভাবে আমেরিকার গণতন্ত্রের কারণে সারা পৃথিবীর মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপন অসম্ভব হয়ে উঠেছে।
তাই রাষ্ট্রের মূল দর্শনে যদি অস্বচ্ছতা ও হিপোক্রেসী থাকে, তবে তা দেশের ও পৃথিবীর, কারও জন্যই ভাল নয়।
আপনার লেখাটা পড়া শুরু করেছিলাম আশাবাদী হয়ে। ভেবেছিলাম হয়তো খুব চমৎকার কিছু আইডিয়া পাবো, যা একটু ফাইন টিউনিং করলে মুক্তির উপায় হিসেবে একটা দারুণ জিনিস হবে। কিন্তু লেখাটা পড়ে যতোই এগোই, ততোই হতাশ হই। ফাইন টিউনিং করা দূরের কথা, এর থেকে কাজের কিছু খুঁজতে গেলেই বরং লোম বাছতে ভেড়া উজাড় হয়ে যাবে।
হাস্যকর কথাবার্তা শুরু হয়েছে একেবারে সূচনার প্রথম প্যারা থেকে, আপনি ধারণা করেছেন, আমরা বাঙালিরা মানুষ হিসেবে এত খারাপ হতে পারি না! তারপরই আমাদেরকে ইউরোপ আমেরিকার লোকদের সাথে তুলনা করে চাঙে তুলে দিয়েছেন। আমরা এতই বুদ্ধিমান যে, গণতন্ত্রের ভালোমন্দের বিচার আমরা দুই যুগে করে ফেললে ইউরোপ-আমেরিকায় সেটা করতে শতাব্দী লেগে যাবে! শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বহিরাগতের দ্বারা শাসিত হওয়া একটা জাতিকে এতোটা বুদ্ধিমান মনে করতে সেইরকম বুকের পাটা লাগে বটে! তবে ফ্যাক্ট হলো, পৃথিবী বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে নেই। বাংলাদেশে কবে কোন ধারণা আসবে কিনা, তার ওপর নির্ভর করে পৃথিবীর কোনো দেশেরই পলিসি নির্ধারিত হয় না। আমরা গণতন্ত্রের বিকল্প খুঁজে পাই আর না পাই, পৃথিবীর অন্যান্য দেশ তাদের মতো করেই চলবে। সুতরাং আমাদের মহান আবিষ্কার আপাতত বাংলাদেশের প্রেক্ষিতেই সীমাবদ্ধ রাখা যাক।
আমার মন্তব্যে আমি আপনার পুস্তিকার ফর্ম্যাট বজায় রেখেই কথা বলে যাই।
১ম পর্যায়:
এসএসসি-এইচএসসির উদাহরণ টেনে আপনি প্রতিযোগিতা চলে যাওয়ার যে বিষয়টি বলেছেন, তা সর্বাংশে ভুল। প্রতিযোগিতা মোটেই চলে যায় নি; রোল নাম্বার ১ আর ২ এর প্রতিযোগিতা ঠিকই আছে; একই সাথে যোগ হয়েছে মুড়িমুড়কি একদর করার হতাশা, যাতে রোল নাম্বার ১০০ও একই প্রবাহে মিশে গেছে। মানব সভ্যতার অগ্রগতির জন্য প্রতিযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। প্রতিযোগিতা এবং সহযোগিতা সবসময় বিপরীতমুখী এনটিটি না এবং এ দুয়ের সম্মিলন ঘটিয়েই সভ্যতা এগিয়ে যায়। এ দুটো জিনিস না থাকলে আমরা এখনো বটের পাতা পরে কাঁচা মাংশ চিবিয়ে জীবনধারণ করতাম।
এরপরে বিশ্বাসের যে কথাটি বলেছেন - মূলত এ বিশ্বাসের বিষয়টিই আপনার পুরো লেখার মূল ভিত্তি - তা একেবারেই ছেলেমানুষী। কারণ, আপনার তরফ থেকে বিশ্বাস থাকলেও অপর পক্ষ যে ঠকাবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এজন্যই আপনাকে আপনার পাওনা বুঝে নেয়ার ক্ষেত্রে সজাগ থাকতে হবে। এটা অবিশ্বাস নয়, এর নাম সচেতনতা এবং সাবধানতা।
১। নিজের জন্য ভোট চাওয়া পশুত্বের দিকে নিয়ে যায়!!
রাষ্ট্র পরিচালনার কাজ আর নোতুন জামাইয়ের মামাশ্বশুর বাড়িতে প্রথম দাওয়াত খেতে যাওয়ার মধ্যে পার্থক্য আছে। দেশ চালনার কাজটা কাউকে জোর করে চাপিয়ে দেয়ার মতো বিষয় না, এটা করতে কে ইচ্ছুক, সেটা আগে জানতে হবে। আর এরপর কাজটা তাকে দেয়া হবে কিনা, সে ভার তো জনগণের ওপরই। এ কাজটা করতে চাইলেই কেউ পশু হয়ে যায় কোন ফর্মূলায়, আল্লাহ মালুম!
২। উন্নত মানুষ কখনো নিজেকে নির্বাচনে দাঁড় করাতে চাইবেন না!!
আপনার কাছে উন্নত মানুষের সংজ্ঞা যে কি, তা বোধগম্য হলো না। কোনো কাজের জন্য যোগ্য একজন মানুষ সাধারণত প্রোঅ্যাকটিভ হন, তিনিই নিজ থেকে এগিয়ে আসেন কাজটা করতে। যাকে কোনো কাজ করাতে আমাকে জনগণ হিসেবে গিয়ে তেলাতে হবে, তাকে সেই কাজের জন্য যোগ্য মনে করি না। কারণ, এতে তার নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসের অভাব বুঝা যায়, আত্মবিশ্বাস থাকলে তাকে ভন্ড বলা যায়, কারণ, কেউ এসে তেলাক, তিনি এটাই চাইছেন। তবে সবচেয়ে বাজে ব্যাপার হলো, তিনি দায়িত্শীল না হওয়াই স্বাভাবিক। বরং এসকেপ রুট খুঁজবেন এই বলে যে, "আমি তো দায়িত্ব চাই নাই, জোর করে দেয়া হয়েছে!"
৩। একটাই বল, তবে দলে দলে ভাগ করা কেন?
এখানে দলে দলে ভাগ করার উদ্দেশ্য একে অন্যের বিরোধিতা করে ঝামেলা সৃষ্টি করা নয়, এখানে রাষ্ট্র সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য প্রত্যেক দলেরই ভূমিকা থাকে এবং সবদল 'মিলেমিশেই' রাষ্ট্রকে পরিচালনা করে। সহজ উদাহরণ হিসেবে একটা যন্ত্রকে চিন্তা করেন, বিভিন্ন দল সেই যন্ত্রের ভিন্ন ভিন্ন পার্টস। একদলের অবস্থা কি হয়, তা আপনার সারফেসে থাকা বিশ্লেষণেও উঠে এসেছে, তখন স্বৈরাচার আসে।
৪। অবিশ্বাসের ভিত্তিতে গড়া গণতন্ত্র অবিশ্বাস আর দুর্নীতি ছড়ায়:
আমার মন্তব্যে আগেই বলেছি, এটা অবিশ্বাস নয়, এর নাম সাবধানতা। এজন্যই নির্বাচিত প্রতিনিধির জন্যও জবাবদিহিতা আছে। এটা তাকে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের প্রশ্ন না, এটা হিসেব বুঝে নেওয়া। সিরাতুল মুস্তাকিম!
৫। প্রচলিত গণতন্ত্রের দর্শন স্ববিরোধিতায় পূর্ণ:
গণতন্ত্রের ইমপ্লিমেনটশনও নিশ্চিতভাবেই পারফেক্ট নয়; কিন্তু আপনি নীতিবান মানুষের সাথে দায়িত্ব নেয়ার কথা না বলার সে কনফ্লিক্ট দেখানোর চেষ্টা করেছেন, তা একেবারেই প্যাথেটিক। বিরোধী দল মানেই বিরোধীতার জন্য সৃষ্টি -এটা আপনার একেবারেই ছেলেমানুষী বক্তব্য। রাজনৈতিক দলগুলোর মূল উদ্দেশ্য দেশকে চালনা করা এবং এটা করতে গিয়ে প্রয়োজনবোধে বিরোধী দল সরকারকে সমর্থন করতেও পারে, সমালোচনাও করতে পারে। দরকার মতো তারা এক হয়ে কোয়ালিশনের মাধ্যমে সরকারও গঠন করতে পারে। যেমন, জার্মানীতে ২০০৫ এ নির্বাচনে প্রথম ও দ্বিতীয় হওয়া দল দুটি একসাথে কোয়ালিশন করেছিলো।
৬। রাষ্ট্র প্রতিনিধি, না নেতা?
এখানে আপনি রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিক সমান বলতে সবাইকেই সমান যোগ্যতা হওয়া প্রয়োজন বলে যে ফতোয়া দিয়েছেন, তা অনেকটা নারী-পুরুষ সমানাধিকার সম্ভব নয়, কারণ নারী ও পুরুষের জননেন্দ্রিয় ভিন্ন - এরকম হয়ে গেছে। নাগরিক অধিকার সমান হওয়া মানে শিক্ষাগত যোগ্যতা বা অর্থোপার্জন সমান হওয়া না, এর অর্থ নাগরিককে তার যোগ্যতা বিকাশের জন্য যতোটা সম্ভব সমান সুযোগ দেয়া এবং অর্জিত যোগ্যতা অনুযায়ী নাগরিককে রাষ্ট্রের প্রয়োজনে ব্যবহার করা।
৭। দল ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ করে!
দল ব্যক্তির সামষ্টিক স্বার্থ রক্ষা করে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দল একটি গণবিচ্ছিন্ন এনটিটি নয় এবং তারা যা-ইচ্ছা তা-ই করার অধিকার পায় না। আপনি-আমি কোনো নির্দিষ্ট দলভুক্ত না হলেই তারা আমাকে আক্রমণের অধিকার পায় না। এখানে কোনো সমস্যা থাকলে সেটা আইনের ইমপ্লিমেনটেশনের সমস্যা, দলবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা তাতে নাই হয়ে যায় না।
৮। দেশ শাসনের পদ্ধতি প্রাইভেট কোম্পানীতে অ্যাপলাই করি না কেন?
এখানে সমস্যা হলো, কুইনাইন ম্যালেরিয়ার ওষুধ হিসেবে ভালো হতে পারে; কিন্তু এইডসের ক্ষেত্রে সে নাচার। দেশের মালিক জনগণ, একটি প্রাইভেট কোম্পানীর মালিক একজন ব্যক্তি, একটি জাহাজের ক্ষেত্রেও তাই। জাহাজের কর্মচারী (ক্যাপ্টেন থেকে খালাসী পর্যন্ত) জাহাজটির মালিক নয়, তাই এমপ্লোয়ী; তাই তাদের ভোটাভুটির ওপরে জাহাজ পরিচালনার স্ট্র্যাটেজী নির্ভর নাও করতে পারে। দেশের ক্ষেত্রে সবাই মালিক।
৯। অভিজ্ঞতা থেকে শেখা বা অভিযোজন:
এখানে আপনি স্রেফ ভুল বলেছেন, সরকারের দায়িত্ব কোনো নির্দিষ্ট দলের ম্যানিফেস্টো বাস্তবায়ন করা নয়, তাদের দায়িত্ব দেশের উন্নয়নের জন্য বেস্ট অপশন বেছে নেয়া। নির্বাচনের আগে দেয়া ম্যানিফেস্টো শুধুমাত্র তাদের ফোকাস জনগণকে দেখানো; কিন্তু এর থেকে বেটার সমাধান কার্যক্ষেত্রে দেখা গেলে বা ম্যানিফেস্টোর সমাধানে ভুল থাকলে অভিযোজন করতে গণতন্ত্র মোটেই বাধা হয়ে দাঁড়ায় না।
১০। গণতন্ত্র রাজতন্ত্রকে রক্ষা করা:
এখানেও আপনার সেই বেসিক ভুল। আপনি সেইসব নপুংসককে যোগ্য, গুণী ব্যক্তি ভাবছেন, যারা এসব সমস্যা দেখেও 'সিস্টেম ভালো নেই, সিস্টেমে যাবো না' বলে পাশ কাটিয়ে যায়।
১১। সন্ত্রাসী ও গডফাদার:
এটা আমাদের আইন ইমপ্লিমেনটেশনের সমস্যা। আমাদের থেকে বুদ্ধিতে পিছিয়ে থাকা আমেরিকা ইউরোপে এ জিনিসটা এখনো এত প্রসার পায় নাই। বুঝতেই পারছেন, সমস্যাটা গণতন্ত্রের না।
১২। ঔপনিবেশিকতা ইত্যাদি:
এখানে সমস্যা জনসচেতনতায়। আমার আপনার নির্বাচিত লোকজন ঠিকমতো কাজ করছে কিনা, সে জবাবদিহিতা আদায় করাও আমার আপনার দায়িত্ব। এবং গণতন্ত্র সেই জবাবদিহিতার পথ রুদ্ধ করে না, আপনি আমি আগাদের পাওনা বুঝে না নিতে পারলে, সেটা আমাদের প্রবলেম, গণতন্ত্রের প্রবলেম না।
১৩। ধর্ম নিরপেক্ষ, কিন্তু আদর্শ নিরপেক্ষ নয় কেন?
সরকার দেশ শাসন করার সময় তার নিজ দলের আদর্শ ইমপ্লিমেন্ট করে না, বরং সংবিধানকে ইমপ্লিমেন্ট করে। সুতরাং রাইট-লেফট-সাইড যারাই ক্ষমতায় যাক, তাদের সামনে থাকে দেশের সংবিধান, নিজদলীয় গঠনতন্ত্র না।
১৪। প্রচলিত গণতন্ত্রই আমাদেরকে পিছনে টেনে রেখেছে:
এখানে আপনার বক্তব্য কিছুই নাই। নিজে থেকে ভোট চাওয়া যে পশুত্ব - সেই অ্যাজাম্পশনের ওপরেই পিছুটানে পড়েছেন।
১৫। ভোট ব্যবস্থা ধোকা:
ধোকায় না পড়লেই হয়। ধোকাবাজী করে না, এমন দলকে নির্বাচিত করি না কেন? আর সব দলই যদি ধোকাবাজ হয়, তাইলে নিজেই দল বানিয়ে বা নির্দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করি না কেন? গণতন্ত্র তো তাতে বাধা দেয় না। বাঙালির মতো ইউরোপ-আমেরিকা থেকে দুইশ বছর এগিয়ে থাকা হাই আইকিউ জাতিকে ধোকা দিয়ে যায়, কেমনে কি!
------------------
এইটা মন্তব্যের প্রথম অংশ। যাতে আপনার প্রস্তাবনার ভিত্তিই কতো নড়বড়ে তা দেখানো হয়েছে। ভিত্তি ঠিকঠাক হলে প্রস্তাবনা নিয়েও আলোচনা করা যাবে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
অনেক ধন্যবাদ, ধৈর্য ধরে লিখাটি পড়ে কিছু প্রাথমিক মন্তব্যের জন্য। এখানে মানুষকে আস্থা ও বিশ্বাসের কথাটি আমি বিশেষভাবে তুলে ধরেছি, এজন্য যে আমি যখন বিশ্বাসের সাথে মানুষের সাথে ব্যবহার করেছি, আমার ৬০ বছরের জীবনে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তার যোগ্য প্রতিদান পেয়েছি, গুটিকয়েক ক্ষেত্র ছাড়া।
এর মধ্যে একটি ক্ষেত্রের কথা উল্লেখ করব যেখানে আমি প্রায় ৫০ জনের একটি ছোট শিল্প প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্ব দিয়েছি, যে প্রতিষ্ঠানে আমার আগে দুর্নীতি শুরু হয়ে গিয়েছিল। তবে দুর্নীতির কারণ ছিলেন আমার পূর্ববর্তী নেতা। সেখানে শিক্ষিত অল্প শিক্ষিত সব ধরণের কর্মীই ছিল। শুরুর দিনই আমি বিশ্বাসের ভিত্তি নিয়ে কথা শুরু করি। কোম্পানীর ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িতদেরকে নিয়ে সভা করে তাদেরকে বলি যে আমি পিছনের সব অন্যায় ভুলে যাব যদি ভবিষ্যতে তারা বিশ্বাস নিয়ে চলার অঙ্গীকার করে। একে একে কর্মীদের সবাই নিজে থেকেই এসে আমাকে জানায় তাদের কাছে কোম্পানীর এত এত টাকা আছে, আমি সময় দিলে কিস্তিতে ফেরৎ দেবে। আমি রাজী হয়ে গেছি, ওরা তাই করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার পাশাপাশি এ নেতৃত্ব দিতে হয়েছে বিধায় এদের হাতেই মূলত: পুরো কোম্পানী চলেছে। প্রথমদিকে রোজ বিকেলে, ও পরের দিকে সপ্তাহে দু দিন আমি অফিসে আসতাম, বাকী নির্দেশনা চলত মোবাইল ফোনে। আমার আগে যেখানে মাসে দু লক্ষ টাকা লোকসান হয়েছে প্রায় দু বছর ধরে, সেখানে আমি হাল ধরার দু মাসের পর থেকে মাসে দু লক্ষ টাকা লাভ হয়েছে কোম্পানীর। নগদ লক্ষ লক্ষ টাকা এসেছে বিভিন্ন সময়ে, কিন্তু সেখানে দুর্নীতি হয় নি। ছ মাস পরে আমি বেতন বাড়ানোর জন্য প্রতিটি কর্মচারী-শ্রমিককে চিঠি দিই তার আকাঙ্খিত বেতন কত হতে পারে। এ ভাবে চিঠি দিতে আমার ডেপুটিরা নিষেধ করেছিল, যে মানুষের চাহিদার শেষ নেই। কিন্তু শুনে অবাক হবেন, প্রত্যেকেই যৌক্তিক বেতনের কথা বলেছে, আর বেশীরভাগের ক্ষেত্রেই তাদের আকাঙ্খিত বেতন থেকে আমি বেশী বেতন দিতে পেরেছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার গবেষণাগারে গত ৩২ বছর ধরে এক শতজনের মত ছাত্র এম এস সি গবেষণা করেছে। আমি নিজেও এখানেই বসি। আমি প্রতিটি ছাত্রকে এ কামরার চাবি দিয়ে দিয়েছি, এখনও দিচ্ছি। অন্য শিক্ষকেরা নিষেধ করেছিলেন কিন্তু আমি শুনি নি। আমাদের গবেষণাগার থেকে গত ৩২ বছরে বই পত্র বা যন্ত্রপাতি এরা কেউ নিয়ে যায় নি। হ্যঁ কয়েকটি বই হয়ত হারিয়েছে, তবে তা ইচ্ছাকৃত নয়। তার কারণ হয়ত ছাত্র বইটি বাড়ীতে নিয়ে পরে ভুলে গেছে, বিদেশে চলে গেছে, এ সব কারণে। এর ফলে আমাদের বিভাগে কোন পাহাড়াদার দরকার হচ্ছে না, শিক্ষক, ছাত্র, কর্মচারী সবাই দায়িত্ব নিয়ে বিভাগকে দেখে রাখছে।
আমার মনে হয় আপনার জীবনেও এরকম অভিজ্ঞতা আছে। সেগুলো মিলিয়ে আবার একটু চিন্তা করে দেখুন না, প্রস্তাবিত ধারণাটির কোন সম্ভাবনা আছে কিনা। আপনার অন্যান্য মতামত নিয়ে একটু চিন্তা করে ঈদের ছুটিতে লিখব।
ঈদ মোবারক।
আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি, সময় দিয়ে লিখাটি পড়ার জন্য।
আপনি যে উদাহরণগুলো দিলেন, এগুলোর চরিত্র ও ব্যপ্তির সাথে রাষ্ট্রের চরিত্র ও ব্যপ্তির পার্থক্য আছে। এমনকি আপনার উদাহরণেও কেউ যদি সত্য কথা না বলে তার জন্য কোনো সাবধানতামূলক ব্যবস্থা নেই।
রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে, যদি সবাই বিশ্বাসী হয়, সবাই একই রকমভাবে চিন্তা করে, তাহলে সমস্যা নেই। কিন্তু সবাই বিশ্বস্ত হওয়া সম্ভব না, সবাই একইরকমভাবে চিন্তা করাও সম্ভব না। পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাস খুবই রক্তাক্ত জিনিস। ইভেন খোলাফায়ে রাশেদীনকেও হত্যা করা হয়েছে। আপনি বিশ্বাসের ওপর ছেড়ে দিলে মানব ইতিহাসের ব্যতিক্রম হয়ে টিকে থাকার পক্ষে তেমন কোনো স্ট্রং যুক্তি নেই।
এর বাইরে আপনাকে বহির্বিশ্বের সাথেও ডিল করতে হবে। আপনার রাষ্ট্রের সবাই বিশ্বাসের সৈনিক হলেও অন্য রাষ্ট্রের নেতারা শঠ হতে পারে, তারা আপনার বিশ্বাসের মূল্য দিবে না।
বিশ্বাস একমাত্র তখনই কাজের, যখন সবকিছু আইডিয়ালভাবে চলে। কিন্তু যতো বেশি লোক এটা থেকে বিচ্যুত হবে, বিশ্বাসভিত্তিক ব্যবস্থা ততোই অকেজো হয়ে যাবে। এখানে আমরা ৫০ জনের সংগঠনের কথা বলছি না, বলছি ১৬ কোটি মানুষের কথা।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
ধন্যবাদ, আলোচনাটিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য। এটিই তো আমরা চাই, সবার আলোচনা আরও গভীরের চিন্তা বের করে নিয়ে আসতে পারবে। আমরা সবাই মিলেই নতুন একটি পদ্ধতি দাঁড় করাতে পারব আশা করি। পাশ্চাত্যের হিপোক্রেসীকে ডিল করা সত্যিই বড় সমস্যা. তবে যদি নিজেরা আত্ম-শক্তিতে বলীয়ান হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারি, তবে তাদের ব্যবহারও পাল্টাবে। দেখুন না, এতদিন আমেরিকার সপক্ষের দেশ হিসেবে ভারতের পরিচিতি ছিল না। আমেরিকার উপদেশ ও প্রস্তাব, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উপদেষ্টাদের কথা, ইত্যাদি না শুনে নিজেদের প্রযুক্তিভিত্তিক শিল্প গড়ে নিজের অর্থনীতিকে বলীয়ান করে তুলেছে। এখন আমেরিকা স্বয়ং এসেছে ভারতের সঙ্গে করমর্দন করতে।
হ্যাঁ, আপনি ঠিকই ধরেছেন, আমার প্রস্তাবে (যে টুকু লিখেছি) কেউ যদি সত্য কথা না বলে তার জন্য কোনো সাবধানতামূলক ব্যবস্থা নেই। কি ভাবে সেটা করা যাবে তা নিয়ে অন্য সবার মতামত চাচ্ছি। তবে মোটামুটি আমার ধারণা হল, পদ্ধতিটি হবে ধারাবাহিক ভাবে এরকম, প্রথমে বিশ্বাস (Trust), কেউ তা ভাঙলে তাকে উপদেশ দেয়া (Counseling), তার পরও ভাঙলে সতর্ক করে দেয়া (Warning), তার পরও ভাংলে চুড়ান্ত উদাহরণমুলক শাস্তি (Extreme exemplary punishment) । তবে দেখা যাবে বিশ্বাসের ভিত্তির উপর পদ্ধতি তৈরী হলে বেশীরভাগ মানুষই বিশ্বাস রাখার চেষ্টা করবে, শাস্তি দিতে তেমন হবেই না।
অপরপক্ষে পাশ্চাত্যের প্রচলিত গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হচ্ছে অবিশ্বাস (Mistrust), আর বিরোধী পক্ষের মাধ্যমে চেক এন্ড ব্যালান্স (Check & Balance)। এর ফলে Mistrust ছড়াচ্ছে, চেক এন্ড ব্যলান্স কতটুকু হচ্ছে তা তো দেখতেই পাচ্ছি। সাংসদদের জন্য শুল্কমুক্ত গাড়ী, আয়করমুক্ত আয় এগুলো পাশ হয়ে যাচ্ছে সবার সম্মিলিত ভোটে, অল্প সময়ে। আর দু পক্ষই যার যার সময়ে দুর্নীতি করে যাচ্ছে অবলীলায়। বৃটেনে সাংসদেরা কিভাবে জনগণের টাকা দিয়ে নিজের বিনোদন করেছে তাও দেখেছি কিছুদিন আগে। আর আমেরিকার অবস্থার বিষয়ে অন্য একজনের মতামতের (১০। তানভীর) জবাবে কিছুটা ইঙ্গিত আছে।
আপনি নিজের দিকে চেয়ে দেখুন না। আপনার পরিমন্ডলে আপনার উপরে যারা ক্ষমতাবান, তার যদি আপনাকে বিশ্বাস করেন এবং একটি ন্যায়ের পরিবেশের সৃষ্টি করেন, তাহলে আপনার কি ইচ্ছা হবে ঐ পরিবেশ নষ্ট করার? মনে হয় না। প্রতিটি মানুষ কিন্তু এরকম একটি সুন্দর মন নিয়ে জন্মায়। ক্ষমতাবানের সৃষ্ট অন্যায় পরিবেশ তাকে বাধ্য করে দুর্নীতি করতে।
এবারে আসি ৫০ জনের বিপরীতে ১৬ কোটি মানুষের সংগঠনের কথায়। কল্পনাকে একটু ছড়িয়ে দেখুন, আমার ব্যক্তিজীবনের অভিজ্ঞতা, আমার ভাল-মন্দ লাগা ইত্যদির উপলব্ধি আমার স্ত্রী-সন্তানদেরকে নিয়ে যে পরিবার সেটিকে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। আবার পরিবারের অভিজ্ঞতা নিয়ে আশে পাশের মানুষদের নিয়ে ছোট সমাজ, তারপর সেই ছোট সমাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে আরও বড় সমাজ বা রাষ্ট্র তৈরী করি। কারণ একই তো মানুষ। ৫০ জন পরিসংখ্যাণের তত্ত্বের দিক থেকে খুব ফেলনা নয়। আবার বিশ্বের ভৌত কাঠামোর দিকে তাকিয়ে দেখুন - পরমানুর গঠনের সঙ্গে সৌর জগৎ - গ্যালাক্সীর কত মিল। আবার সবচেয়ে সহজ জীবের ভিতরকার ডিএনএ আর অনেক জটিল মানুষের ডিএনএ এর মধ্যে কত মিল। তাই ছোট সমাজ আর বড় সমাজের মধ্যে মিল থাকাই তো স্বাভাবিক।
এখন যদি বলা হয়, ১৬ কোটি মানুষের রাষ্ট্রে ৫০ জনের সমাজের অভিজ্ঞতা ব্যবহার করা যাবে না, তবে আমার প্রথম প্রশ্ন, কোন অভিজ্ঞতাকে আমি সেখানে ব্যবহার করব? কোন ক্ষমতাবান ও অতি বুদ্ধিমান ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যদি তাদের নিজস্ব কোন উদ্দেশ্যে ও নিজস্ব ধারণা দিয়ে কিছু একট আবিষ্কার করে, ও প্রচারের মাধ্যমে সেটিকে একমাত্র ঔষধ হিসেবে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে, সেটিকে কি অভিজ্ঞতা প্রসূত বলব? বর্তমানে প্রচলিত গণতন্ত্রের বেলায় কি এরকমটিই ঘটে নি?
গ্রীসের সেই প্রাচীন গণতন্ত্র ছিল রাজার একচ্ছত্র ক্ষমতা রদ করে কিছু Nobles দের মধ্যে তা ভাগ করে নেয়া। নারী, দাস-দাসী ও গ্রামের মানুষ এ ক্ষমতার বলয়ের বাইরে ছিল। আবার আধুনিক যুগের নতুন গণতন্ত্রের সুচনা হিসেবে 'ম্যগনা কার্টা'কে আমরা এক যুগান্তকারী দলিল হিসেবে শুনে এসেছি। ইন্ন্টারনেটে সহজেই দলিলটি পাবেন। পড়ে দেখবেন, মূলত: সাধারণ জনগণের জন্য স্বাধীনতা বা ক্ষমতা আনা এর বিষয় নয়। এর বিষয় ছিল রাজার একচ্ছত্র ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে কিছু ডিউকদের মধ্যে ভাগাভাগি করা। আর কিছু ক্ষমতা দেয়া হয় চার্চকে, কারণ তাদের মাধ্যমে জনগণকে দমন করে রাখা যাবে। তাই ১৬ কোটি মানুষের জন্য যে গণতন্ত্র আমরা অনুসরণ করছি, তা মানুষ সভ্যতার স্বাভাবিক বিবর্তনের অংশ নয়, তার স্বাভাবিক অভিজ্ঞতা প্রসূত নয়। যারা নবী রসুল এসেছিলেন, তারাও কিন্তু এই ব্যক্তি বা গোষ্ঠীবিশেষের ক্ষমতার বিপক্ষে সাধারণ জনগণকে নিয়ে আন্দোলন করেছিলেন।
মনে করে দেখুন, বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর দেশের সাধারণ মানুষ সুন্দর হবে চলতে চেয়েছিল। ট্রেনে গার্ড নেই, কিন্তু মানুষ স্টেশন মাষ্টারের ঘরে গিয়ে টিকেটের টাকা দিয়ে এসেছে। কিন্তু যখন দেখল যে যাদেরকে তারা নেতা হিসেবে দেখে ভাল হবে চলার চেষ্টা করছে তারাই দেশকে লুটপাট করতে শুরু করেছে। যাদের হাতে ক্ষমতা, যারা অন্যায় করছে, তারাই ন্যায় অন্যায়ের বিচার করছে, এসব মানুষ পাল্টিয়ে গেল। আমরা একটি বিশাল সুযোগ হারালাম। প্রচলিত গণতন্ত্র কি এর জন্য দায়ী নয়? কারণ সেটি জনগণের স্বার্থের জন্য নয়, গোষ্ঠবিশেষের স্বার্থের জন্য তৈরী করা। আমাদের দেশ বা সারা পৃথিবীর কেবল বেড়ে চলা বৈষম্য কি তাই প্রমাণ করে না?
-----------------
আমার উপরের মন্তব্যের ৭ প্যারায় প্রাচীন গণতন্ত্রের কথা বলতে গিয়ে ভুল করে গ্রীসের নাম এসেছে, এটি হবে রোমান গণতন্ত্র। এ জন্য দু:খিত।
-----------------
নতুন মন্তব্য করুন