১.
'নুটু মোক্তারের সওয়াল' গল্পটা বেশ ভাবালো কিছুক্ষণ। ভাবলাম, লিখে ফেলবো নাকি একখানা কঠিন রকমের সাহিত্য সমালোচনা। লিখতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম, তারাশঙ্কর বাবু আমাকে এখনো 'যারপরনাই মুগ্ধ' করে রেখেছেন। এ অবস্থায় ভাল সমালোচনা লেখা সম্ভব না। তার চেয়ে বরং গল্পটাই সংক্ষেপে তুলে ধরি বিজ্ঞ পাঠকদের জন্য। তারাই বিচার করবেন গল্পের ভালোমন্দ। এই মুরুখ্যু আদমভূতকে নিশ্চয়ই পাঠক দায়িত্বে অবহেলার জন্য হাসিমুখেই ক্ষমা করে দেবেন।
২.
স্থানীয় মহকুমার এক সাধারণ মোক্তার নুটু মল্লিক। এমনিতে নিরীহ মানুষ,দোষের মধ্যে ওই একটাই---লোকটা বড্ড ঠোঁটকাটা। সত্য, সে যত অপ্রিয়ই হোক, সবার সামনে ফস করে বলে দিতে তার জুড়ি নেই। ঘটনাচক্রে সে এলাকার প্রভাবশালী মুখুজ্যে পরিবারের সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। ঘটনাটা এরকম। গ্রামে দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন করা হবে। সেই উপলক্ষ্যে এলাকার গন্যমান্য সবাইকে নিমন্তণ জানানো হয়েছে। নুটু মোক্তারও বাদ পড়েনি। সবাই যেখানে মুখুজ্যেদের প্রশংসায় গলে গলে যাচ্ছে, সেখানে নুটু মোক্তার এই লোক দেখানো জনসেবার ভেতরের গোমরটা ফাঁস করে দেয়। তার মতে, মুখুজ্যেরা গরীবের হক মেরে তাই দিয়ে তাদেরই বাচ্চাকাচ্চার জন্য একটা ক্লিনিক বানিয়ে দিচ্ছে। ব্যাপারটা অনেকটা গরু মেরে জুতা দানের মত। স্বভাবতই মুখুজ্যেরা এঘটনায় দারুণভাবে অপমানিত হয়। তারা সুযোগ খুঁজতে থাকে, কিভাবে এই মামুর ব্যাটাকে শায়েস্তা করা যায়। তারা নুটু মোক্তারের ভ্ত্যস্থানীয়দের বাড়িঘরে আগুন দিতে শুরু করে। কারণে অকারণে নুটু মোক্তারকে হেনস্তা করতে থাকে। নুটুর ক্ষমতা তখন সামান্যই। সে কিভাবে পারবে এই অত্যাচারী মুখুজ্যেদের সাথে?
নুটু তাই কলকাতায় যায় ব্যারিস্টারী পড়তে। ব্যারিস্টার হয়ে সে গরিব মানুষের পক্ষে লড়বে। যে মানুষগুলো সারাটা জীবন নীতব্র নিভ্তে বড়লোকদের অত্যাচার সয়ে যায়, তাদের পাশে দাঁড়াবে এই নুটু।
গল্পের এই পর্যায়ে নুটুর উপলব্ধিতে এক ধরণের পরিবর্তন আসে। তার মধ্যে এই বিশ্বাসটা বদ্ধমূল হয় যে, মা লক্ষ্মীই এই জগতের যাবতীয় অনিষ্টের হোতা। মা লক্ষ্মীকে ঘরে তুলতে গিয়েই তো মানুষে মানুষে এতো শত্রুতা, এতো ঝগড়াবিবাদ। লক্ষ্মীকে তাই সে পূজাঘর থেকে নির্বাসন দেয়। বউকে বলে দেয়, যাকে ইচ্ছা পূজো দাও, কিন্তু ঐ মা লক্ষ্মীকে নয়। বউয়ের শত অনুরোধেও নুটুর মন গলে না। লক্ষ্মীকে সে তাড়িয়ে ছাড়বেই। সমাজের মানুষকে দেখিয়ে দেবে, মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদ ছাড়াও সুখে শান্তিতে জীবন কাটিয়ে দেয়া যায়। নুটুর মুখেই ব্ত্তান্তটা শোনা যাকঃ
"বিরোধ তো আমার ঐ লক্ষ্মীর সঙ্গে। ঐ দেবতাটির অভ্যাস হল লোকের মাথার ওপর পা দিয়ে চলা। তার পা দুটো আমি মাটির ধুলোয় নামিয়ে দেব।"
"মা লক্ষ্মীর চরণ দু'খানি এমনই লোভনীয় যে মা থায় না ধরে পারা যায় না।"
৩.
গল্পটা পড়ে বেশ কিছু ভাবের উদয় হয়েছিলো। ইচ্ছে আছে একদিন পাঠকদের সাথে সেটা শেয়ার করার।
লেখা বড় হয়ে যাচ্ছে। আজকের মত উঠি তাহলে।
---আশফাক আহমেদ
মন্তব্য
ভাবগুলো এই পোস্টেই শেয়ার করলে পারতেন। ভালোইতো আগাচ্ছিলো সব।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
কলকাতায় ব্যারিষ্টারী পড়া যেতো নাকি সেই কালে?
অবশ্য আপনি নন, তারাশংকর এর জবাব দিতে পারতেন।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
সিটি ল কলেজ, মহানগর ল কলেজ ইত্যাদি না থাকলে তো চিন্তার কথা। বেচারা নুটুকে টাইম মেশিনে ভর করে ২০১০ সালে ভ্রমন করতে হয়েছে বটে!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
তথ্যগত বিভ্রান্তির জন্য ক্ষমা চাচ্ছি।
নুটু আসলে কলকাতায় গিয়েছিলো ওকালতি পড়তে। স্লিপ অব পেন।
পাঠক ক্ষমাসুন্দর দ্শটিতে দেখবেন আশা করছি
গল্পটা সরাসরি বলে দিলে নতুন পাঠকদের জন্য সেটা আখেরে হিতে বিপরীত হতে পারে।তারপরও পাঠ প্রতিক্রিয়া মন্দ লাগেনি।
--------------------------------------
আজি দুঃখের রাতে, সুখের স্রোতে ভাসাও তরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।
--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।
প্রথমে ভেবেছিলাম গল্পটা অর্ধেক বলে বাকিটা পাঠকের আগ্রহের ওপর ছেড়ে দেবো কিনা।
পরে ভাবলাম, পুরোটা না বললে গল্পের থিমটাকে ঠিক তুলে ধরা যাচ্ছে না।
পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ
নতুন মন্তব্য করুন