জহিরুল ইসলাম নাদিম
ভারতবর্ষের ইতিহাস বেশ পুরনো। কত পুরনো তা সময়ের নিক্তি দিয়ে ঠিক ঠাক মেপে দেয়া হয়তো যাবে না। তবে হাজার বছর ধরে যে সভ্যতার পাদপীঠ হয়ে রয়েছে এ অঞ্চল তা বাজি ধরেই বলে দেয়া যায়। কেননা প্রাচীণ কালের অনেক পুস্তকে সেই সময়কার ভারতের বিবরণ খুঁজে পাওয়া যায়। আমাদের বিলক্ষণ জানা আছে যে গ্রীকরা এক সময় জ্ঞানে বিজ্ঞানে উন্নতির শিখরে পৌঁছেছিল। নিজেদের দেশ ও সমাজ সম্পর্কে সম্যক জানার পর তারা বেরিয়ে পড়েছিল তাবৎ পৃথিবীর খোঁজ খবর করতে। প্রাচীণ গ্রীকরা বহু আগে থেকেই ভারতবর্ষের কথা জানত। তবে সেই জানায় সত্যের চেয়ে বোধকরি কল্পনার ভাগই ছিল বেশি। ফলে কেউ কেউ সাহস করে সশরীরে এসে হাজির হন ভারতবর্ষের চৌহদ্দির মধ্যে। এখানে বাস করে বোঝার চেষ্টা করেন এর সামাজিক রীতি নীতি ও মূল্যবোধের রকম ফের সম্পর্কে। তেমনি এক গ্রীক পরিব্রাজকের নাম মেগাস্থেনীস। সম্ভবত ৩০২-২৯৮ খ্রীস্টপূর্বাব্দের কোনো এক সময় তার ভারতবর্ষে আগমন। গ্রীক সম্রাট সেলিউকাসের দূত হিসেবে তিনি মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের রাজধানী পাটলিপুত্রে এসে বছর পাঁচেক থেকে যান। ধারণা করা হয় যে তিনি কাবুল ও পাঞ্জাবের মধ্য দিয়ে পাটলিপুত্রে এসেছিলেন এবং সেখান থেকে অন্য কোথাও যাননি। ফলে তার বিবরণে পাটলিপুত্রের বিষয় যেমন প্রামাণ্য ভাবে উঠে এসেছে এ অঞ্চলের অন্যান্য প্রদেশ সম্পর্কে তেমনটি ঘটেনি। সে সব অঞ্চল সম্পর্কে তার বিবরণ নিছকই লোকশ্রুতির ওপর ভিত্তি করে প্রদত্ত যার অধিকাংশই অসত্য, অতিরঞ্জিত তাই পরিত্যাজ্য। তবু, প্রথম প্রামাণ্য বর্ণনা হিসেবে তার রচনা ইতিহাসপ্রিয়দের আগ্রহের কেন্দ্রে থেকেছে।
মেগাস্থেনীস ভারত দর্শন শেষে নিজে যে পান্ডুলিপিটি তৈরী করেন তার নাম দেন ‘টা ইন্ডিকা (Ta Indica)’। খুবই পরিতাপের বিষয় যে ঐ পান্ডুলিপিটি এখন আর পাওয়া যায় না--হয় হারিয়ে গেছে নয়তো চিরতরে বিনষ্ট হয়ে গেছে । তবে তার সমসাময়িক বা অব্যবহিত পরের কিছু গ্রীক লেখক যেমন আরিয়ান, স্ট্রাবো, ডায়োডরোস প্রমূখ তাদের লেখা বইসমূহে মেগাস্থেনীসকে উদ্ধৃত করেছিলেন। স্থানে স্থানে টেনে এনেছিলেন টা ইন্ডিকার প্রসঙ্গ। ফলে ঐ সব উদ্ধৃতির মাধ্যমে মেগাস্থেনীসের টা ইন্ডিকা সামান্য হলেও বেঁচে আছে। জার্মানীর বন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ই এ শোয়ানবেক প্রচুর খেটে বিভিন্ন লেখকের লেখার মধ্য থেকে মেগাস্থেনীসের উদ্ধৃতাংশ জুড়ে জুড়ে 'মেগাস্থেনীস ইন্ডিকা' নামক একটি সংকলন প্রকাশ করেন ১৮৪৬ সালে। বইটি প্রকাশ হবার সঙ্গে সঙ্গে বেশ সাড়া পড়ে যায়। মি. ম্যাককিন্ড্রলকৃত তার একটি ইংরেজি সংস্করণও বেরিয়ে যায় ১৮৮৮ সালে যা কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। এই উদ্যেগের ফলে প্রাচীণ ভারত সম্পর্কে প্রামাণ্য তথ্য জানার সুযোগ সৃষ্টি হল। সেই সময় বাঙালীদের মধ্যেও এই বিষয়ে জানবার ঝোঁক দেখা গিয়েছিল। তবে বাংলা ভাষায় এই বই তখন ছিল না। বরিশালের প্রতিভাবান লেখক ও অনুবাদক রজনীকান্ত গুহ এম.এ. ছিলেন গ্রীক ও ইংরেজী ভাষার সুপন্ডিত। তিনি অনেকটা স্বপ্রবৃত্ত হয়ে উক্ত বইটি মূল গ্রীক থেকে বাংলায় অনুবাদ করেন। বক্ষ্যমাণ পুস্তক পর্যালোচনাটি রজনীকান্ত গুহের বইটির ওপরই বটে।
টা ইন্ডিকা কয় খন্ডে রচিত পুস্তক ছিল সেটি সঠিক ভাবে বলবার জো নেই। তবে আথীনেয়স, ক্লিমেন্ট এবং জোসেফসের বই থেকে যে সূত্র পাওয়া যায় তা থেকে ধারণা করা চলে কমপক্ষে চারটি খন্ডে রচিত হয়েছিল ‘টা ইন্ডিকা’। উক্ত বইয়ের দ্বিতীয় খন্ডে ভারতবাসীদের আচার ব্যবহারের বিষয় বর্ণিত হয়েছে। তৃতীয় ভাগে বিধৃত হয়েছে ভারতের নানা জাতির বৃত্তান্ত; আর চতুর্থ ভাগের বিষয় ভারতবর্ষের ইতিহাস, দেবদেবী ও ধর্মানুষ্ঠান। প্রথম খন্ডের কোনো উল্লেখ কারো বইতেই নেই। তবে অনুমান করা যায় যে সেখানে ভারতের ভৌগোলিক বিবরণই হয়তো বা লেখা ছিল।
আলেকজান্ডারের সময় একশ্রেণীর তথাকথিত লেখকের প্রাদুর্ভাব ঘটে। এরা বিশ্বব্রহ্মন্ডের যাবতীয় বিষয় নিয়ে লিখতে চাইতেন। প্রতিভা ও শিক্ষায় পিছিয়ে থাকলেও গ্রন্থ সম্পাদনায় তারা কখোনো পিছিয়ে থাকতে পছন্দ করতেন না। তাদের লেখায় বিষয় ও ভাষার ভারসাম্য প্রায়শই খুঁজে পাওয়া
যেত না। শুণ্যগর্ভ ও অর্থহীন বাগাড়ম্বরে পর্যবসিত হত অনেক লেখা। মেগাস্থেনীসও তেমন ধাঁচের লেখক ছিলেন কিনা তা জানা যায় না। আজ তা জানার উপায়ও নেই। কারণ তার বইয়ের চুম্বক অংশ আজ আর অবশিষ্ট নেই-যা আছে তাতে বর্ণনার চেয়ে তালিকা করার প্রবণতাই বেশি চোখে পড়ে। মনে হয় ভাষার কারুকাজে না গিয়ে মেগাস্থেনীস ব্যস্ত ছিলেন ভারত বর্ষের নতুন আর অনাবিষ্কৃত বিষয় উল্লেখ করতেই।
মেগাস্থেনীস ভারতবর্ষের সীমা সঠিকভাবে নির্ণয় করে তার ভূ-বৃত্তান্ত শুরু করেন। বলা যায় গ্রীকদের মধ্যে তিনিই প্রথম এই কাজটি মোটামুটি সফল ভাবে করতে সক্ষম হন। তার মতে ভারতবর্ষের বিস্তার ১৬ হাজার স্টাডিয়ম (১ স্টাডিয়ম=৬০৬ ফুট ৯ ইঞ্চি)। সিন্ধু নদ থেকে পাটলিপুত্র পর্যন্ত ১০ হাজার স্টাডিয়ম এবং সমুদ্র পর্যন্ত অবশিষ্ট অংশ নাবিকদের গনণা অনুযায়ী ৬ হাজার স্টাডিয়ম। প্রকৃত দৈর্ঘ্যের চেয়ে ২ হাজার স্টাডিয়ম বেশি উল্লেখ করলেও সময় ও প্রক্ষিত বিবেচনায় এই পরিমাপকে যৌক্তিক বলা যায়। এক পর্যায়ে তিনি জ্যেতিষ শাস্ত্রের মাধ্যমে ভারতের সীমানা বিচার করেছেন। স্ট্রাবোর বই থেকে তার লেখার উদ্ধৃতি ‘‘ ভারতবর্ষের দক্ষিণ ভাগে সপ্তর্ষিমন্ডল দৃষ্ট হয়না, এবং ছায়া বিপরীত দিকে পতিত হয়’’ যা বহুলাংশে সত্য।
মেগাস্থেনীসের লেখা এখনো যা অবশিষ্ট আছে তার মধ্যে কয়েকটি থেকে বিশেষ কিছু স্থানের বৃত্তান্ত খুঁজে পাওয়া যায়। তিনি ব্যক্তিগত ভাবে যে সব স্থানে যাননি তা সম্পর্কেও কোথাও কোথাও আলোকপাত করেছেন টা ইন্ডিকার প্রণেতা। ভারতীয় নদী সম্পর্কে পূর্ব থেকেই গ্রীকদের অতি উচ্চ ধারণা বলবৎ ছিল। যেমন সিন্ধু নদ সম্পর্কে ক্টীসিয়স মন্তব্য করেছিলেন তার বিস্তৃতি ২৪০ স্টাডিয়ম। কারণ তার এই জ্ঞান পারসীদের কাছ থেকে ধার করা। পারস্যে নদী কম - যা ও আছে সেগুলো খালের মত সংকীর্ণ। সুতরাং তাদের চোখে প্রমত্তা সিন্ধুকে সুবিশাল বোধ হওয়াই ছিল স্বাভাবিক। আবার বর্ষাকালে নদীর ভরা রূপ দেখে তারা ভেবে নিয়েছে যে সেটাই নদীর চিরস্থায়ী রূপ। মেগাস্থেনীসও গ্রীকদের এই ভুল ভাঙাতে পারেননি। তিনিও সিন্ধু নদের বর্ষার রূপের বর্ণনাই দিয়েছেন। তার ভাষ্যমতে নীল, দানিয়ুব সহ পৃথিবীর তাবৎ নদীর মধ্যে একমাত্র গঙ্গা ছাড়া সিন্ধুই সর্ববৃহৎ। তিনি সিন্ধুর পনেরটি উপনদীর নামও লিপিবদ্ধ করে যান। ইউরোপীয়দের মধ্যে মেগাস্থেনীসই সর্বপ্রথম গঙ্গা নদী দর্শন ও এর বিবরণ লেখেন। তবে এই ক্ষেত্রে কিছু অতিকথনও রয়েছে তার বর্ণনায়। যেমন গঙ্গার বিস্তার যেখানে সবচেয়ে কম সেখানে নাকি ৬৬ স্টাডিয়ম বা ৮ মাইল বা গড়ে ১০০ স্টাডিয়ম ইত্যাদি। মেগাস্থেনীস শিলা নামক আরেকটি অদভুত নদীর কথা উল্লেখ করেছেন তার রচনায়। এই নদীতে নাকি কিছুই ভাসে না। যা ফেলা হয় তাই পাথরে রূপান্তরিত হয়ে তলিয়ে যায় নদীর অতলে। বোঝাই যাচ্ছে যে পৌরাণিক কোনো কাহিনী থেকেই এমন নদীর অস্তিত্বের কথা জেনেছিলেন এই পরিব্রাজক। তিনি সিন্ধু ও গঙ্গা ছাড়াও আরও ৫৮টি নদীর কথা লেখেন যেগুলো নৌ চলাচল উপযোগী ছিল।
মেগাস্থেনীস জানাচ্ছেন সর্বমোট ১১৮টি জাতির বাস ভারতে। নগরের সংখ্য অগুণতি; এখানে বহু বিশাল গিরি আর সুবিস্তীর্ণ সমতলভূমি চোখে পড়ে। মেগাস্থেনীস সচক্ষে ভারতের খুব একটা অবলোকন করতে পারেননি। তাই তার মনে হয়েছে পুরো দেশটিই বুঝি সমতল। আসলে তা নয়। তবে ভারতবর্ষের মাটির উর্বরতার বিষয়টি তার চোখ এড়ায়নি। বছরে দুই বার গ্রীষ্ম ও দুইবার শস্য কর্তনের কথা বলেছেন তিনি। আবলুস, তাল, বেত, বন্যদ্রাক্ষা, আইভি, লরেল, মার্টল প্রভৃতি বৃক্ষ লতার বর্ণনা দিয়ে গেছেন মেগাস্থেনীস। ভারতীয় পশুর মধ্যে বঙ্গীয় বাঘ, হাতি, বানর, কুকুর, কৃষ্ণসার অশ্ব, বিদ্যুৎ মাছ, সাপ, পাখাযুক্ত বৃশ্চিক সহ অনেক প্রাণীর বর্ণনা দিয়েছেন তিনি। তবে বিশদ ভাবে লিখেছেন ভারতের বিশিষ্ট হাতি সম্পর্কে। এখানকার নৃপতিরা হাজারো হাতি দিয়ে কিভাবে বহি:শত্রুর হাত থেকে দেশকে রক্ষা করেন তার কথা আছে। কিভাবে খেদায় নিয়ে গিয়ে বুনো হাতিকে আটক ও পরে পোষ মানানো হয় তাও যর্থাথ ভাবে লিখতে পেরেছিলেন মেগাস্থেনীস। তবে এক অদ্ভুত পিঁপড়ের কথাও এসেছে তার লেখায়। তার বর্ণনা মতে ভারতবর্ষের পূর্ব দিকের পাহাড়ী এলাকায় দরদ নামক এক বিশাল জাতির বাস। সেখানে তিন হাজার স্টাডিয়ম বিস্তৃত একটি অধিতক্য রযেছে। সেখানকার ভূ-গর্ভে রয়েছে স্বর্ণখনি এবং এখানেই স্বর্ণখননকারী পিঁপড়ের বাস। এদের আকার বুনো শেয়ালের চেয়ে ছোট নয়। তারা শীতকালে ভূমি খনন করে আর দরদ জাতির লোকেরা কায়দা মত তাদের খননকৃত স্বর্ণসমৃদ্ধ মাটি হরণ করে আবার কখোনো সেই সব পিঁপড়ের হাতে নিহত হয় সদলবলে। মজার ব্যাপার হচ্ছে আরব কল্পকাহিনী এবং মহাভারতেও এই রকম পিঁপড়ের উল্লেখ আছে।
মেগাস্থেনীসের লেখায় কেবল ভূ-প্রকৃতি নয় ভারত বর্ষের খনিজ সম্পদের কথাও বেশ ভাল ভাবে উল্লেখিত হয়েছে। তার ভাষ্যমতে ভারতবর্ষে প্রচুর খনিজ পদার্থ পাওয়া যেত যেমন প্রচুর স্বর্ণ ও রৌপ্য, তামা ও লোহা, টিন এবং অন্যান্য ধাতু। এগুলোর ব্যাবহার সম্পর্কেও তিনি আলোকপাত করে গেছেন। অলঙ্কার, ব্যবহারোপযোগী দ্রব্য, এবং যুদ্ধাস্ত্র ও সাজ সজ্জা গঠনে সেগুলো ব্যবহৃত হোত। স্বর্ণ সম্পর্কে অনেক কথাই বলা হয়েছে। এর উৎস হিসেবে কখনো খনি, কখনো স্বর্ণ পিঁপড়ে আবার কখনো বা সুবর্ণবাহ নদীর কথা এসেছে।
তবে এগুলোর চেয়ে মেগাস্থেনীস ভারতীয়দের জীবন ও আচার ব্যবহার সম্পর্কে বিশদ ভাবে উল্লেখ করেছেন। হয় এ সব বিষয়ে তার আগ্রহের মাত্রা ছিল বেশি অথবা যে ভাবে এ বিষয়গুলো লিখিত হয়েছিল সে ভাগই বেশি অবশিষ্ট আছে। তার সমসাময়িক অন্য লেখকদের দৃষ্টি এড়িয়ে গেলেও মেগাস্থেনীসই সর্বপ্রথম ভারতীয়দের জাতিভেদ প্রথা সম্পর্কে বর্ণনা করেন। তিনি জানাচ্ছেন মোট সাতটি জাতিতে বিভক্ত ছিল ভারতীয়রা। যথা:
1. পন্ডিত
2. কৃষক
3. গোপাল ও মেষপালক
4. শিল্পী
5. যোদ্ধা
6. পর্যবেক্ষক
7. মন্ত্রী/বিচারক
এরপর মেগাস্থেনীস প্রাচ্যের শাসন প্রণালী সম্পর্কে বিস্তৃত ও সূক্ষ্মরূপে বর্ণনা করলেও গ্রীক ভৌগোলিকরা তা অদভুত অনভ্যস্তা বোধে বর্জন করেন। তাই অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থেকে পাঠককে বঞ্চিত থাকতে হচ্ছে। আলেকজান্ডারের সহচররা যখন ভারতে উপনীত হন তখন অনেকে নিজেদের চির অভ্যস্থ নিয়মানুসারে মনে করেছিল ভারতীয় ও গ্রীক দেবতার অভিন্ন। অনেকটা সেই কারণেই মেগাস্থেনীসও তেমনটি লিখে গেছেন। তার মতে শিব ও ডায়োনীসস এক। কৃষ্ণ আসলে হারকিউলিস ছাড়া অন্য কেউ নন ইত্যাদি।
মেগাস্থেনীসের বলেন ভারতে দুই শ্রেণীর পন্ডিত বর্তমান, ব্রাহ্মণ ও শ্রমণ। শ্রমণ বলতে ঠিক কী বুঝানো হয়েছে তা স্পষ্ট না হলেও মনে হয় ভারতে প্রচলিত দ্বিতীয় ধর্ম বা বৌদ্ধদের কথাই বলা হয়েছে। তিনি ব্রাহ্মণদের বিশ্বাস সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করেছিলেন। ব্রাহ্মণরা যে বিশ্বের আদিতে পঞ্চভূতের কথা অস্তিত্বের কথা বলে থাকে তা মেগাস্থেনীসের অজানা ছিল না। গ্রীকরা চার ভূতের কথা মানত- মেগাস্থেনীস অতিরিক্ত আকাশ ভূতের কথাও উল্লেখ করে গেছেন।
‘টা ইন্ডিকা’ গ্রন্থের অনুবাদক রজনীকান্ত গুহ এম. এ.। ১৮৬৭ সালের ১৯ অক্টোবর টাঙ্গাইলের জামুরিয়া নামক স্থানে তার জন্ম। মৃত্যু ১৯৪৫ সালে। তিনি প্রখর মেধাবী ছিলেন। বাংলা ছাড়াও বিভিন্ন ভাষায় তার ছিল দারুণ দখল। মূল বইটি গ্রীক থেকে ভাষান্তরিত করেছেন তিনি- বোঝা যায় গ্রীক ভাষায় কতটা দখল থাকলে একজনের পক্ষে এমন প্রাচীণ একটি বই অনুবাদ করা সম্ভব হতে পারে। শুধু গ্রীক কেন তিনি সংস্কৃত আর ইংরেজীতেও ছিলেন সুদক্ষ। তিনি আক্ষরিক অর্থে অনুবাদ বলতে যা বোঝায় কেবল তাই করে বসে থাকেননি। মূল বক্তব্যের পক্ষে বা বিপক্ষে সংস্কৃত গ্রন্থসমূহ থেকে অগুণতি টীকা রচনা নিজের পান্ডিত্যের বড় প্রমাণ দেয়ার পাশাপাশি পাঠকের মনে উদ্রেক হওয়া বিভিন্ন প্রশ্নের ফয়সালা করার উপায়ও বাতলে দিয়েছেন। মনে রাখা দরকার মূল বইটি কলকাতার শ্রীরামনন্দ চট্টোপাধ্যায় ১৯১০ সালে ছেপেছিলেন। তখন বাংলা ভাষারীতি নিশ্চিত ভাবেই এখনকার মত ছিল না। তখনকার নিয়ম মেনে গম্ভীর সাধু রীতিতেই লেখার কাজটি করেন রজনীকান্ত গুহ। এতে তৎকালীণ পাঠকের তেমন অসুবিধে না হলেও হালের পাঠকের কাছে তা সময় সময় দুর্বোধ্য ঠেকতে পারে। এছাড়া সময়ের প্রবাহে অনেক শব্দ তার মূল অর্থ থেকে সরে গেছে বা বদলে গেছে। যেমন গ্রন্থকার ‘অপর্যাপ্ত’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন ‘প্রচুর’ অর্থে। শব্দটি আজকাল তার বিপরীত চিত্রকেই ব্যক্ত করে। বইটি বাংলাদেশে প্রথম প্রকাশ করেছে দিব্যপ্রকাশ ২০০৭ সালে। বর্তমান সংস্করণের সম্পাদক মঈনুল আহসান সাবের। তিনি ভাষার বিবর্তন নিয়ে সামান্য টিকা সংযোজন করলে তা পাঠকের পক্ষে আরো সহজ হোত। বর্তমান সম্পাদকের করা প্রচ্ছদটি মোটামুটি মানের। ছাপা ও বাঁধাইয়ের মান ভাল। শক্ত বাঁধাই আর জ্যাকেটে মোড়ানো সাদা কাগজে ছাপা ১৪২ পৃষ্ঠার বইটির দাম রাখা হয়েছে ১২৫ টাকা। দামটিকে যৌক্তিক বলা যায়। অনুসন্ধিৎসু পাঠক প্রাচীণ ভারতবর্ষ সম্পর্কে জানার আগ্রহ মেটাতে বইটি পড়ে দেখতে পারেন। খুব বেশি আশাহত তারা হবেন না- এটা দৃঢ়তা নিয়েই বলা যায়।
মন্তব্য
তথ্যপূর্ণ লেখার জন্য ধন্যবাদ
-সাইদুর রহমান
ধন্যবাদ আপনাকে কষ্ট করে পড়ার জন্য।
ভাল্লাগ্লো এই লেখাটি
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
কৃতজ্ঞতা।
ভালো লেখা। কিছু ছবি থাকলে আরও ভাল্লাগত, একটা বোধ হয় দিসিলেনও
কুটুমবাড়ি
ধন্যবাদ পড়া ও মন্তব্য করার জন্য। কেবল বইটার প্রচ্ছদই দেয়া গেছে। আর কোনো ছবি আসলে দেয়ার মতো ছিল না।
ভালো বিষয় নিয়ে ভালো আলোচনা।
ধন্যবাদ আপনাকে।
এ জায়গায় একটু কাঠখোট্টা ঠেকছে।
পোস্ট দারুণ লাগল।
আজি দুঃখের রাতে, সুখের স্রোতে ভাসাও তরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।
--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।
বিষয়টিই অনেকটা কাঠখোট্টা তো কী আর করা! ধন্যবাদ আপনাকে।
লেখাটা পড়ে খবুই ভাল লেগেছে। প্রাচীন ভারত সম্পর্কে জানতে খুবই আগ্রহী। সেই আমলে আমাদের পূর্বপুরুষদের আচার-আচরণ কেমন ছিল? তারা কেমন জীবন-যাপন করতেন? এসব জানতে খুব আগ্রহ হয়।
রজনীকান্ত গুহ সম্পর্কে ইন্টারনেট ঘেটে যেসব তথ্য জানতে পেরেছি সেগুলো হচ্ছে,
সত্যান্বেষী
ধন্যবাদ সত্যান্বেষী আপনার তথ্যপূর্ণ মন্তব্যের জন্য। বোঝাই যায় ইতিহাসের প্রতি আপনার গভীর টান রয়েছে এবং এর জন্য যে কোনো কষ্ট স্বীকারে আপনি প্রস্তুত। অভিনন্দন।
জহিরুল ইসলাম নাদিম
তথ্যসমৃদ্ধ অথচ তথ্যের ভারে ভারাক্রান্ত হয়ে না ওঠা লেখাটি পড়ে বেশ ভালো লাগলো ! লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ, অভিবাদন তাঁর শ্রম ও নিষ্ঠাকে!
আপনার চমৎকার মন্তব্য পড়ে উৎসাহিত বোধ করছি!
প্রিয় নাদিম ভাই,
বইটা আমার কাছেও আছে। আপনার লেখাটা কিন্তু ভাই চমৎকার। ভালো লেগেছে। বইটায় কিছু প্রানীর হাস্যকর বর্ণনা আছে। কি এক পিঁপড়া নিয়ে বিচিত্র কিছু কথা আছে। ওগুলো দিলেন না কেন?
মানিক দা
ধন্যবাদ পড়া ও মন্তব্য করার জন্য। আসলে বিরাট ঝামেলার বই। কোনটা রেখে কোনটার কথা লিখি। তবে আপনি বোধয় খেয়াল করেননি। আমার এই লেখায় পিঁপড়ের কথা কিন্তু আছে
-----'এক অদ্ভুত পিঁপড়ের কথাও এসেছে তার লেখায়। তার বর্ণনা মতে ভারতবর্ষের পূর্ব দিকের পাহাড়ী এলাকায় দরদ নামক এক বিশাল জাতির বাস। সেখানে তিন হাজার স্টাডিয়ম বিস্তৃত একটি অধিতক্য রযেছে। সেখানকার ভূ-গর্ভে রয়েছে স্বর্ণখনি এবং এখানেই স্বর্ণখননকারী পিঁপড়ের বাস। এদের আকার বুনো শেয়ালের চেয়ে ছোট নয়।'!
জহিরুল ইসলাম নাদিম
স্বর্নভূক পিঁপড়ের গল্পটার চেয়েও মজার গল্প - কালো ভারতীয়দের এমনকি বীর্য পর্যন্ত কালো হয় - এই গল্পটা কে চালু করেছিলেন জানেন ? এটা মেগাস্থিনিসেরই আবিস্কার না ? আমি হেরোডটাস (মেগাস্থিনিসেরও পূর্বসুরী গ্রীক ঐতিহাসিক এবং 'ইতিহাসবিদ্যার জনক' নামে খ্যাত। ৩৫০-২৯০ খৃঃপূঃ), এবং এ্যারিয়ানন এর বই দুটোই পড়েছি। এদের মধ্যে একজন, বা দুজনই, এই গল্পটা উল্লেখ করেছেন অন্য এক ভারত ভ্রমনকারী গ্রীক ঐতিহাসিকের বরাত দিয়ে। এতদিন আমার ধারনা ছিল এটা মেগাস্থিনিয়ীয় আবিস্কার। এই বইটাতে কি এর উল্লেখ আছে ?
যতদূর মনে পড়ছে নেই। তবে প্রায় এক বছর আগে পড়া বই। আবারও পড়ে দেখতে হবে। ধন্যবাদ আপনাকে তথ্যপূর্ণ মন্তব্যের জন্য।
জহিরুল ইসলাম নাদিম
ভালো লেখা, দামী লেখা।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ভালো লেখা। আহারে, কত প্রশ্ন ছিল আমার! কিন্তু জহিরুল ইসলাম নাদিমকে কি আর খুঁজে পাওয়া যাবে?
---মোখলেস হোসেন।
রজনীকান্ত গুহের লেখা লেখাস্থিনিসের ভারত বিবরণ গ্রন্থটি কত সালে কোথা থেকে প্রকাশিত হয় ?প্রকাশকের নাম কি ?
নতুন মন্তব্য করুন