বড় শখ ছিল সাংবাদিক হব!-২

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ১০/০৯/২০১০ - ১১:১২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

খবিশ খানের সাথে সাক্ষাতঃ

অবশেষে সেই বহুল প্রতীক্ষিত সাক্ষাতের দিন আসলো। তো গেলাম খবিশ স্যারের সাথে দেখা করতে। খবিশ স্যার যথেষ্ট ভদ্র ব্যবহার করলেন। জার্নালিজম এর কী কী জিনিশ আমার মেজর কাভার করে, কতদিন বাকী পড়া শেষ হওয়ার, আমার কোন অ্যাপ্লিকেশন লাগবে কিনা, বা ওনাকে সুপারভাইসার হিসেবে কী কী করতে হবে এইগুলা নিয়ে কথা বললেন। উনি কিন্তু ছবি চাইলো না, সিভিও চাইলো না। এইখানে একটু বলে রাখি, আমাদের ডিপার্টমেন্টের নিয়ম হচ্ছে, যারা ইন্টার্নশিপ করবে তাদের পরের সেমিস্টারে একটা রিপোর্ট লিখে জমা দিতে হয় এবং সেটার ওপর প্রেজেন্টেশনও দিতে হয়। অনেকটা থিসিসের প্রেজেন্টেশনের মত। তাই ফাইনাল সেমিস্টারের আগে আমরা ইন্টার্নশিপ করি। অন্য ডিপার্টমেন্টে সাধারণত, সব কোর্স শেষ হয়ে গেলে তারপর ইন্টার্নশিপ করতে বলে। কিন্তু আমাদের নিয়মটা অন্যরকম হওয়ায় ইন্টার্নশিপ এর সাথে সাথে ক্লাসও করতে হত। তো আমি খবিশ স্যারকে জানালাম যে আমার তিন দিন ক্লাস থাকবে এবং সৃষ্টিকর্তার পরম করুণার কারণে ক্র্যাকে পরীক্ষা বা অ্যাসাইন্টমেন্ট প্রতিদিনই থাকে। উনি যা উত্তর দেন তা হলোঃ “কোন সমস্যা নাই। ক্লাস, পরীক্ষা থাকলে তোমার আসার কোন দরকার নাই (খিয়াল কৈরা, পরে দেখবেন কী ডিগবাজীটা মারবে)”

আমিতো মহা খুশি। মনে মনে ভাবি কে যে ওনার নাম খবিশ খান রেখেছে, ওনার নাম রাখা উচিত ছিল ফিরিশতা খান (আফসুস, কত্ত বড় ভ্রান্ত ধারণাতে ছিলাম)। তো খুদেপেজ দিয়ে বললো, জয়েন করার দিনে ১২ ঘটিকায় আসতে।

তো জয়েন করার দিনে দুরু দুরু পায়ে ১২টায় যেয়ে আমি হাজির। ওমা! যেয়ে দেখি অফিস তেপান্তরের মাঠ। এক কোনায় একজন বসা ছাড়া কোথাও কেউ নেই। খবিশ স্যারের রুমে উঁকি-ঝুঁকি দেই কিন্তু রুম খালি। আমাকে খরগোশের মত খোঁজাখোঁজি করতে দেখে সেই ভাইয়া জিজ্ঞেস করে কাহিনী কী। বিস্তারিত জানালাম। বলে, খবিশকে একটা ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করেন আজকে আসবে কিনা। দিলাম ফোন। হায়!হায়! খবিশ স্যার দেখি আমাকে চিনতেই পারে না! বহু কষ্টে মনে করার পর বলে আধ ঘন্টার মধ্যে আসবে। তখন ছিল ১২ ঘটিকা, ওনার আগমন ঘটে দুপুর ২.৩০ ঘটিকায়। খবিশ স্যারের আধ ঘন্টা যেয়ে আড়াই ঘন্টাতে হয় সেই সম্পর্কে একটা ধারণা হল।

এইবার ম্যাগাজিনের কথায় আসি। ওভারঅল ম্যাগাজিনটা বেশ ভালো। ইনভেস্টিগেশন, পলিটিক্স, স্পোর্টস, কারেন্ট ইস্যু, বুক রিভিউ, ডাইজেস্ট(এক সপ্তাহে ঘটে যাওয়া দেশে-বিদেশের ছোট ছোট মজার ঘটনা নিয়ে) অনেক গুলা সেকশন ছিল। সমস্যা যেটা ছিল, কিছু কিছু লেখা বেশি লম্বা হয়ে যেত। গুরুত্বপুর্ণ কিছু পড়ার সময় বোর হয়ে অন্য কিছু পড়া শুরু করে দেয়ার একটা সম্ভাবনা থাকতো। তো ম্যাগাজিনের একটা সেকশন ছিল যেখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন পেশার বিখ্যাত লোকদের সাক্ষাতকার নেয়া হত।

আমার ধারণা ছিল যেহেতু আমি নতুন আর ইন্টার্ন, আমকে হয়ত বলবে, ডাইজেস্টের জন্য স্টোরি খোঁজ বা কোন লেখা এডিট করতে দিবে। কিন্তু হায়, আমাকে বললো তুমি সাক্ষাতকার নেয়া দিয়ে শুরু করো। তো অনেক নামের পর একজন বিখ্যাত নাট্যনির্মাতার নাম ঠিক হল। সে সাক্ষাতকার ওনার নাটকের একটা শ্যুটিং স্পটে যেয়ে নেই। সেটার পরিবেশ অনেক ভালো ছিল। পরে আরো কিছু শ্যুটিং স্পটে যাওয়ার দুর্ভাগ্য হয়েছে যেখান থেকে মান-সম্মান নিয়ে বের হতে পারাটাই অনেক বেশি ছিল, পরের পর্বগুলোতে বলবো।

আমাদের মিটিং থাকতো শনিবার আর সেদিনই মিটিং এর আগে লেখা জমা দেয়ার নিয়ম। প্রথম মিটিং এর দিন আমার এক আত্মীয় মারা যাওয়ায় মিটিংটা অ্যাটেন্ড করতে পারলাম না, সবার সাথে পরিচয়ও হয় না। আমি অফিসে যেয়ে ভূতের মত ঘুরে বেড়াই। এর মধ্যে আরেকটা সাক্ষাতকার নেই। সেই সপ্তাহ থেকেই খবিশ স্যারের আজব ব্যবহার শুরু হয়। আমাকে বলে তোমার আর এই সপ্তাহে আসার দরকার নেই, পরের মিটিং এ লেখা নিয়ে আসো। আমি তাও মিনমিন করে বলি আমার আসতে কোন অসুবিধা নাই। বলে না, না, আসতে হবেনা। পরের দিন বিকাল পাঁচটায় দেখি খবিশ স্যারের ফোন। কথার সারমর্মঃ আর.জে. দের একটা অ্যাওয়ার্ড দেয়া হবে শুক্রবার। আমাকে সেটাতে যেতে হবে এবং কয়েকজন আর. জে.দের ইন্টারভিউ নিতে হবে। ইচ্ছা করলে ফোনেও নিতে পারি। সাথে ফ্রী একটা ধমক, যেটা ছিল-“নুসদিন, তুমি ইন্টার্নশিপ করতেসো, তোমার উচিত বেশি বেশি অফিসে আসা! আসো নাই ক্যান! ফোনে সব কিছু বুঝিয়ে বলা যায় না!” আমিতো পুরাই তব্দা খেয়ে গেলাম শুনে! মাথা চুল্কাই আর ভাবি গতকাল না বললো আসতে হবে না। একটু খারাপ লাগে কিন্তু আর.জে. দের ফোন করার পর খারাপ লাগা আর থাকে না।

প্রথমে কল দেই রেডিও ইয়েস্টারডের বিখ্যাত রেডিও জকি, আর.জে . বাচালকে। সে এক অভূতপুর্ব অভিজ্ঞতা। ফোন দেয়া মাত্রই দেখি কে যেন নাঁকি সুরে কেঁদে উঠলো। ছোটবেলায় একটা ভূতের গল্প পড়েছিলাম যেখানে এক পেত্নী ছিল যে রাত্রে কূলায় করে উড়ে+ঘুরে বেড়াত আর নাঁকি সুরে কাঁদতো। মনে হল সেই পেত্নী কোন ছেলের গলায় কান্না করছে। আমিতো আবারো তব্দা! কাকে ফোন দিলাম! কয়েক সেকেন্ড পর যা বুঝলাম সেটা হল এইটা একটা রিং টোন, যেটা আর.জে বাচালের নিজের গাওয়া একটা গান। সে কী গান! হো হো হো আমিতো হাসতে হাসতে শেষ! তো বাচাল সাহেব ফোন ধরেন। বহু কষ্টে হাসি চেপে কথা বলি। কথার এক পর্যায়ে বলেন, উনি জমিদারের ছেলে। ওনার নামে এখন সেই রেডিও চলে। এক মেয়ের মা নাকি তার জন্য মোটরসাইকেল কিনে নিয়ে আসছিল কারণ সে শুধু একবার রেডিওতে মোটরসাইকেল ভালু লাগে বলেছিল। বকর...বকর... (অ্যাওয়ার্ড এর দিনে যে গেটাআপে আসছিল সেটা নিজের চোখে না দেখলে হাসা সম্ভব না। জেব্রা স্ট্রাইপ এর সিল্কের শার্টের সাথে টিয়া রঙ এর টাই। সেই শার্ট আবার আলো বের হওয়ার মত চকচক করছে! সে কী দৃশ্য!)

পরের ফোন দেই রেডিও তোমারের আর.জে. কাজু বাদামকে। এইখানেও দেখি সেইম কেস। কে জানি কাঁদতেসে। আগের ফোনের অভিজ্ঞতায় বুঝলাম এইটা কাজুর নিজ কন্ঠে গাওয়া একটি গান যা তার নিজের ফোনেই রিং টোন হিসেবে সেট করা গড়াগড়ি দিয়া হাসি । ফোন রিসিভ করার পর জানলাম উনি এখন ওনার গানের অ্যালবামের অডিও রিলিজ অনুষ্ঠানে! পরের ফোন দেই রেডিও দুঃখের রেডিও জকি আর. জে. চম্পুকে। এইখানে কেউ কাঁদে নাই। প্রথমে ভালোই কথা বলে কিন্তু যেই শুনে অ্যাওয়ার্ডের জন্য ফোন করা, সে কী ঝাড়ি! বলে, কেউ একদিন ঘুম থেকে উঠে অ্যাওয়ার্ড দিতে চাইলো আর আমরা নিতে চলে যাব! আপনি যাবেন! আমি বলি না, না, ভাইয়া হক কথা। কিন্তু পরে জানলাম ওনাদের কোন আর.জ়ে. নমিনেশন পায়নি তাই এই বয়কট। খাইছে

অ্যাওয়ার্ড রাতে হওয়ায় একটু ঝামেলা ছিল। কিন্তু অবাক ব্যাপার যেটা ছিল, আমার মনে হত খবিশ স্যার ভাবতো আমার একটা ম্যাজিক কার্পেট আছে, যেখানে-সেখানে উড়ে চলে যাওয়া কোন ব্যাপার না। তাই ইচ্ছামত দূরের অ্যাসাইনমেন্টে পাঠানো আর সমস্যা হবে কিনা জিজ্ঞেসও করারও প্রয়োজন বোধ করতো না। অ্যাওয়ার্ড শুরু হয় নির্দিষ্ট সময়ের এক ঘন্টা পর। আর আমি চলে গেসিলাম নির্দিষ্ট সময়ে শুরু হওয়ারও আধ ঘন্টা আগে। আমাদের ম্যাগাজিনে দুইজন বেশ নামকরা ফোটু জার্নালিস্ট কাজ করেন। একজন খুশি ভাই আরেকজন হালুম ভাই। দুইজনই মাটির মানুষ। কোন অহংকার নেই। সারাক্ষণ মজা করে সবার সাথে। হালুম ভাই সবার অনেক সিনিয়র তারপরও সবাইকে আপনি করে বলবে।

হালুম ভাইয়ের সাথে তখনও পরিচয় ছিল না। ফোটু জার্নালিস্ট হিসেবে খুশি ভাই যায়। আগের দুইটা কাজও ওনার সাথে করেছিলাম। উনি রীতিমত বড় ভাইয়ের মত সবকিছুতে দেখে শুনে রাখতো। দেরীতে শুরু দেখে উনিও রীতিমত বিরক্ত। কই শুক্রবার বউ এর সাথে গল্প করবে তা না বোরিং প্রোগ্রাম দেখ। খবিশ খানের চেয়ে ভাইয়া বেশি চিন্তিত ছিল যে এইটা যদি শেষ হতে হতে রাত বারোটা বাজে, আমার তো দেরী হয়ে যাবে। ভাইয়ার সাহায্যের কারণে পুরো অখাদ্যটা দেখেতে হয় নাই। কিন্তু তারপরও অর্ধেক দেখতেই ১১টা বাজে। (খৈয়াল কইরেন, শুক্রবারেও কাজ করলাম, খবিশ পরে সব অস্বীকার করবে)।

পরেরদিন ছিল প্রথম মিটিং। আর সেই সপ্তাহেই লঙ্কা করিমের (অ্যাসিস্টেন্ট ফিচার এডিটুর) আবির্ভাব ঘটে যার লঙ্কা কান্ডের কারণে জীবনটা বেশি ঝালওয়ালা একটা তরকারীতে পরিণত হয়ে যায়।

পরের পর্ব ঈদের পর আসিবে।
*নাম পরিবর্তিত।

নুসদিন।


মন্তব্য

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

কবে যে প্রতিষ্ঠানেরা ইন্টার্নদের 'মানুষ' হিসাবে দেখা শুরু করবে... এগুলোতে অনেকের সাথেই (হয়ত) মিল পাওয়া যাবে। শেষটা জানার অপেক্ষায় রইলাম হাসি
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

অতিথি লেখক এর ছবি

শেষটা দুঃখের মন খারাপ

নুসদিন।

অদ্রোহ এর ছবি

গত ঈদ মৌসুমের কথা। কোন কুক্ষণে রেডিও বেদনা অন করেছিলাম কে জানে। তখন ইফতারির সময় হব হব করছে। এদিকে জনৈকা আড় ঝে নাকি গলায় বলছে-

ঢিয়ার লিসেনার্স, ইটস মাহে রমঝান, রমঝান মানে মজাডার সব মাউথ ওয়াটারিং ইফঠার , আর ইফটার মানেই এ লঠ অফ ফুর্থি। সো, এই ইফঠার ঠাইমে রক উইথ রেডিও ফুর্থি!!!...ওদিকে ব্যাকগ্রাউণ্ডে তখন আযানের শব্দ শোনা যাচ্ছে।

আমি ভির্মি খেয়ে তাড়াতাড়ি রেডিও বেদনা অফ করে দিলাম।

--------------------------------------------

আজি দুঃখের রাতে, সুখের স্রোতে ভাসাও তরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

ঢিয়ার লিসেনার্স, ইটস মাহে রমঝান, রমঝান মানে মজাডার সব মাউথ ওয়াটারিং ইফঠার , আর ইফটার মানেই এ লঠ অফ ফুর্থি। সো, এই ইফঠার ঠাইমে রক উইথ রেডিও ফুর্থি!!
হো হো হো গড়াগড়ি দিয়া হাসি দিলেন্তো নাম প্রকাশ করে।

নুসদিন।

জাহামজেদ এর ছবি

প্রথমটার মতো মজা পাইনি, পরবর্তী পর্বে মজার কিছু পড়ার অপেক্ষায় আছি। তবে নামগুলো আগের পর্বের মতোই জটিল হইছে !

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসি বর্ণনার একটু দরকার ছিল। চেষ্টা করবো আরেকটু মজা করে লিখতে।

নুসদিন।

অতিথি লেখক এর ছবি

পরের পরবের অপেক্ষাই থাকলাম, লেখাতা পড়তে ভালই লাগলো

চানক্য এর ছবি

ভালো হয়েছে।ঈদে তো পত্রিকাওয়ালা'রা বিশেষ সংখ্যা বের করে ঢাউস সাইজের।
আর আপনার ঈদ এডিশন এত ছোট , এইটা কোন কথা হইল।
লেখা আগেরবারের মতই ঝাঝালো।
চালিয়ে যান।

কাকুল কায়েশ এর ছবি

ভালই লাগছে! প্রথম পর্বের লিঙ্কটা পাওয়া যাবে নাকি কোথাও??

==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!

==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!

অতিথি লেখক এর ছবি
অমিত আহমেদ এর ছবি

প্রথম পর্বটা পড়ে যেমন মজা পেয়েছিলাম, তেমন নয়। বেশ ছোট হয়ে গেছে, গল্প বলার আগেই শেষ, এমন। আগামী পর্ব জলদি আসুক।

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

ইহাকে চিনি চিনি লাগে খাইছে আপনে দেখি পুরাই জীবিত!
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।