কানে বাজছে- আমি একদিনও না দেখিলাম তারে… বাইরে বৃষ্টি।
যাচ্ছি বাসে, শহরের দিকে ঘুরতে। আমরা গ্রামেই থাকি, কোরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বিশ্ববিদ্যালয় টি গড়ে তোলা হয়েছে নিতান্তই গ্রামে। যদিও এখানকার গ্রাম আর শহরের পার্থক্যে এটুকুই যে, শুধুমাত্র বিল্ডিং এর ঘনত্ব আর উচ্চতা একটু কম আর বেশি। যা হলে স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, ইন্টারনেট ‘স্পীড’, ২৪ ঘন্টার দোকান, বার, পাব কোনো কিছুতেই কোনো পার্থক্য নেই। হোমোজিনিয়াস ডেভেলপমেন্ট এর এমন উদহারণ পৃথিবীতে বিরল। যাচ্ছি মাহমুদ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষক মাহমুদ ভাই এর বাসায়।আমারও দিন এখন অনেক বদলেছে।
একটু পুরোনো দিনের স্মৃতিচারণ করা যাক-
ইয়ংনাম বিশ্ববিদ্যালয় এর একদিককার দৃশ্য
রাত দুটোয় ডরমিটরিতে ফেরার পর দেখি রুমমেইট, ইন্দোনেশিয়ান বন্ধু ইখওয়ান তখনো জেগে আছে, পরে বুঝতে পারলাম আমার জন্যই অপেক্ষা করছিল, সাধারনত করে না কারন তাকে আবার ভোর ৫টায় উঠতে হয়। ঢোকার সাথে সাথেই ইখওয়ান বললো- “কাজী, আমাদের কালই ডরমিটরি ছাড়তে হবে।” এখানে আসার প্রথম দিকে আমার রুটিন ছিল এরকম- রাত ২/৩টায় ল্যাব থেকে রুমে ফিরতাম। তখন হয়তো কোনো অর্ধ মাতাল মেয়ে গেইটে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে আমার মতো কেউ এসে ডরমিটরির গেইট খুলবে। নিয়ম অনুসারে গেইট বন্ধ হয়ে যায় ১২টায়। আমাদের জন্য অর্থাৎ ‘গ্রেজুয়েট স্টুডেন্ট’ দের জন্য ভিন্ন নিয়ম। আমাদের রিসার্স এর জন্য যেহেতু নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই, আমরা যখন ইচ্ছে তখন কার্ড স্ক্যান করে ঢুকতে পারি বের হতে পারি। রুমে ফিরে রান্না খাওয়া দাওয়া…ফেসবুক, ব্লগ নাড়াচাড়া শেষে ঘুমাতে যেতাম ভোর ৫/৬টায়। ইখওয়ান তখন উঠতো, ওর তখন দিন শুরু আর আমার রাত।
ফরিদা থামলেন, আবিদা পারভিন গাইছেন পাঞ্জাবের ‘হীর’। আবিদা পারভিন, যার সম্পর্কে বলা হয়। সুফিবাদী গান গাইতে গাইতে নিজেই সুফী হয়ে গেছেন। বৃষ্টির প্রকোপ কিছুটা বাড়লো, বাসের জানালা ঘোলা হয়ে আসছে, আর আবিদা গাইছেন ‘হীর’।
স্বভাবজাতভাবে আমি চুপ করে ইখওয়ান এর দিকে তাকিয়ে রইলাম। ইখওয়ান আমার রুমে এসেছে অল্প কিছুদিন হলো, এর আগে আমি একাই ছিলাম। বড় হওয়ার পর জীবনে প্রথম একসাথে দুই তিন দিনের বেশি কারো সাথে রুম শেয়ার করছি।চমৎকার ছেলে ইখওয়ান আমার কোনো কিছুতেই তার কোনো আপত্তি নেই। এরমধ্যেই চমৎকার পড়তে শুরু করেছে আমাকে। আমি আরো বিস্তারিত শুনে মন্তব্য করবো বুঝতে পেরে ও বলতে শুরু করলো- “‘সামার ভ্যাকেশন’ শুরু হচ্ছে, ১০ দিনের জন্য ডরমিটরি ছাড়তে হবে, এ সময় ‘ক্লিনিং’ চলবে এবং এরপর যদি আমরা আরো থাকতে চাই তাহলে রেজিষ্টেশন করতে হবে।” আমি তা করবো না, খুব সুন্দর হলেও ডরমিটরি আমার পছন্দ হয়নি, সে কথায় পরে আসি, ইখওয়ান কে জিজ্ঞেস করলাম, এই এক দিনের নোটিশের কারণ কি? বললো নোটিশ আরো আগেই গেইটে দেয়া হয়েছে তবে যেহেতু সেটা কোরিয়ান ভাষায় ছিল আমরা কেউই বুঝতে পারিনি।
আমি রান্না করতে পছন্দ করি, কিন্তু এখানে রুম এর সাথে কোনো ‘কিচেন’ নেই, রান্না করতে হলে কমন কিচেনে গিয়ে করতে হয়। ডরমিটরি পছন্দ না হওয়ার বড় কারণ এটা, ভিয়েতনামের মেয়েগুলোর কিচির মিচির শুনতে শুনতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কমন কিচেনে রান্না টা অসহ্য লাগে। এরমধ্যেই কোরিয়ান খাবারে অভ্যস্থ হয়ে ওঠেছি কিন্তু মেয়েগুলোর রান্নায় সময়ই যে বিচ্ছিরি গন্ধ নাকে লাগতো, তা আমাকে আর কোনোদিন ভিয়েতনামিজ খাবার এর প্রতি আগ্রহী করে তুলবে বলে আমার মনে হচ্ছে না। একদিন দেখলাম গরম পানিতে ২/৩ টুকরা মাংশ এক হাড়ি গরম পানিতে দিয়ে কিছুক্ষন সেদ্ধ করলো, এরপর ছীড়ে দিল কয়েকটা মুলা’র টুকরা, এরপর লবনের মতো কিছু একটা ছিটিয়ে তুলে নিল, হয়ে গেল রান্না। খাবার এর ব্যাপারে আমার একটু নাক উচু স্বভাব আছে, যে কোনো খাবার গলা দিয়ে নামতে চায় না তবে কোরিয়ান প্রায় সব খাবারই খেয়ে ফেলেছি এর মধ্যে। এমনকি কোরিয়ান বন্ধু সু’র খালার অনুরোধে ঢেকি গিলতে গিয়ে ‘সী স্কোয়ার্ট’ এর রক্তমাখা কাচা মাংশের দলাও গিলেছি হাসি মুখে এরপর আবার ‘মাসিচছ্যয়ো’(খুব মজা) বলে আহ্লাদও দেখিয়েছি। কোরিয়ান ভদ্রতা, বড়দের কথা শুনতে হয় বিনয় সহকারে।
সু কে একটা কল দিলাম, তখন আমার ঘনিষ্টতম বন্ধু, পুরো নাম হোয়াং দক সু, আমার উচ্চারনের কষ্ট দেখে শুধু সু বলে ডাকতে বলেছে, আমি তাই ডাকি। ফোন ধরলো না, ঘুমিয়ে পড়েছে মনে হয়। কয়েকঘন্টা পর আমি যখন গভীর ঘুমে তখন সু কল ব্যাক করলো।তখন সকাল। কথা বলতে বলতে রুমের সাথে লাগোয়া বারান্দায় চলে এলাম।প্রতিদিন ভোর দেখে ঘুমাত এগেলেও অনেকদিন পর সকাল দেখা। ডর্মের সামনের লতানো গোলাপগাছগুলো এমন ভাবে রেলিংটাকে জড়িয়ে ধরে আছে আর এত বেশি ফুল এসেছে যে পুরো রেলিংটাকে একটা বিশালাকার ফুলের তোড়া বলে মনে হচ্ছে। সকালের সোনা রোদ, গোলাপের লাল আভা, দৃষ্টি সরাতে দিচ্ছে না কিছুতেই। কিন্তু আমি এখন কঠিন এক সমস্যায় আমার এখন প্রকৃতি দেখার সময় না, কয়েক ঘন্টার মধ্যেই রুম ছাড়তে হবে, বিদেশ বিভুইয়ে ধারে কাছে স্বজন কেউ নেই। অবশ্য ‘মুশকিল আসান’ বন্ধু সু যীহেতু আছে, আমি অতটা চিন্তিত নই, কারো উপর চিন্তার ভার ছেড়ে দিয়ে নির্ভার হওয়ার মধ্যে এক বিশেষ আনন্দ আছে বৈকী, সিলেট শাহজালাল এ পড়ার সময় ছিল জাভেদ, যখন যা করতে ইচ্ছে করবে, শুধু বললেই হতো জাভেদ এটা দরকার বা, এটা করবো… এখানে আছে তেমনি একজন সু, যদিও সু অনেক নিরিহ কিন্তু ভালোবাসার কমতি নেই। সমস্যার কথা শোনার পর সে বললো, তুমি ব্যাগ গুছিয়ে রেডি হও আমি দুই ঘন্টার মধ্যেই আসছি।
নিচে গাড়ি পার্ক করে আবার ফোন করলো, ঠিক দু-ঘন্টা পরই। দুজন মিলে ব্যাগ নিয়ে গাড়িতে ওঠার পর জিজ্ঞেস করলাম, “কোথায় যাবো?” বললো- “আমার রুমে।” আমি বললাম- “তুমি না জাপান যাচ্ছো?” বললো,”তিন দিন পরই ফিরবো, ফিরে তোমার জন্য বাসা ঠিক করে দেবো” সু’র রুমটা ভালো, সুন্দর সাথেই কিচেন, এরমধ্যেই আসলো ওর আরো এক বন্ধু। ফিলোসফিতে মাস্টার্স করছে।ছেলেটা কথা কম বলে, দুই কোরিয়া একত্রীকরনে কাজ করছে এমন একটা সংঘটনের নেতৃত্ব দেয়। দুপুরে ওরা দুজন মিলে একটা কোরিয়ান খাবার তৈরী করলো, আমি বাংলাদেশের মশলা দিয়ে আমার নিজস্ব স্টাইলে একটা মুরগী রান্না করলাম। ঝাল একটু বেশি হয়ে গেছে, তবে হু হা করতে করতে ওরা আস্ত মুরগীটাই চেটে পুটে খেল। ‘লাঞ্চ’ সেরে গেলাম ল্যাবের দিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃতি এখন খুবই সুন্দর, চারদিকে নানা ফুলে সেজে আছে ক্যাম্পাস। নানা রঙ এর বাহার। দুই/তিন রাত ল্যাবেই ঘুমালাম, রাত গভীর হলে ডেস্কের উপর পা তুলে দিয়ে ঘুম দিতাম, সকালে উজবেকিস্থান এর ল্যাবমেইট ফারুহ ইশিমানভ এসে ঘুম থেকে ডেকে তুলতো। সু’র আসার সময় হয়ে এসেছে।
বাস জানিয়ে দিলো সামনের স্টপেজেই নামতে হবে, বৃষ্টি হচ্ছে তখনো, আবিদা’র হীর শেষে বেগম আক্তার গাইছেন –কোয়েলিয়া গান থামা...মধু রাতি বয়ে যায়!
কাজী মামুন
মন্তব্য
পারফেক্ট ব্লগর ব্লগর
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
আমার এর আগের ঈদ সম্পর্কিত লেখায় সম্ভবত পিপি দা বলছিলেন স্মৃতিচারণ আরো দীর্ঘ করার কথা। একটু ব্লগর ব্লগর এর সুযোগ নিলাম। Thanks!
কাজী মামুন
দারূণ গল্প। আরো শুনতে চাই। ভাইয়া শাবি-তে ছিলেন নাকি?
শুনেছিলাম কোরিয়ানরা নাকি কুকুরের মাংস খাইতে পছন্দ করে। আপনিও কি .... ?
সত্যান্বেষী
এই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় সবসময়ই! হা হা হা!
আমি এখানে আসার বয়স যখন ৬ মাস তখন কোরিয়া সরকার কুকুর এর মাংস নিষিদ্ধ করে দেয়। এরপরও অনেক জায়গার বিক্রি হয় অবৈধ ভাবে। পাওয়া যায় না একথা বলবো না, কারন আমাদের জেনারেশন এর ছেলেপেলেরাও সবাই মোটামোটি কখনো না কখনো খেয়েছে। আমি খাইনি প্রধান কারণ আসলে কখনো সুযোগ হয়নি
আর এই প্রানীটির প্রতি আমার একটু বেশি মায়া এটাও সামনে না পাওয়ার একটা কারণ হতে পারে।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!
কাজী মামুন
কি জানি আমি ও একদিন হয়ত যাব এই দেশের মায়া ছেরে...
শুভ্র সাহেব, দেশে মায়া ছেড়েই দেশ ছাড়তে হবে এমনটা তো ঠিক নয়! দেশের মায়া করেও আপনি দেশের জন্য ভবিষ্যতে দেশের জন্য ভালো কিছু করতে চান এ কারণেও দেশ ছারতে পারেন।
শুভকামনা আপনার জন্য!
কাজী মামুন
কোরিয়া সম্পর্কে জানার আগ্রহ জাগলো। হীর কী?
পাঞ্জাবের ফোক ধাঁচের গান- শুনুন ভালো লাগবে।
http://www.youtube.com/watch?v=E0AVSMgmdUs
ভালো লাগলো। কোরিয়ান কালচার , শিক্ষা , নৈতিক মান ইত্যাদি নিয়ে আস্তে আস্তে লেখেন। যে যে বিষয় গুলিতে কালচার শক পাইছেন , যে যে বিষয়ের তফাৎ আপনার বাঙালী মনকে নাড়া দিয়েছে সেগুলি নিয়া লিখেন। সচলে ইউরোপ-আমেরিকার খবর খুব পাই , অন্য দেশগুলোর খবর ততো পাইনা। ডাইভারসিটিত দরকার আছে। আপনার সরস মন আছে , সাহিত্য ভালবাসা আছে , চিন্তাশীলতা আছে আপনি পারবেন। লিখেন আপনে , আছি আপনার সাথে।
এদের সংস্কৃতি নিয়ে লিখতে গেলে অনেক লেখা যাবে। হুম শুধুমাত্র সংস্কৃতি নিয়েই একটা লেখা দিবো ভাবছি। এর পাশাপাশি এদের সংস্কৃতির লালন পালন নিয়েও বেশ কিছু উল্লেখ যোগ্য দিক আছে, ইচ্ছে আছে ঐ বিষয়গুলোও গল্পে গল্পে নিয়ে আসার। শুধুমাত্র প্রবন্ধ অনেকের কাছে বিরক্তিকর তাই একটু পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছি।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!
কাজী মামুন
প্রবন্ধ লেখতে যাইবেন কোন দুঃখে ? অই চিন্তা ভুলেও মনে জায়গা দিয়েন না। গল্প লেখেন মিয়া গল্প। মনের আনন্দে লেখেন । এইটাতো আর রিসার্চ পেপার না যে ভুল হইলেই ক্যাঁক কইরা চাইপা ধরবে । পাঠকের বুদ্ধির উপর আস্থা রাখেন। আপনে আপনর গল্প বইলা যান , পাঠক আপনার subjective narration থেকে ঠিকই objective জিনিসপাতি বের করে নিবে। বেশী বুদ্ধি কইরা পরিশ্রম কইরা রচনা লিখছেন কি মরছেন। গল্পটাও মাটি আর পাঠকের সময়টা ও মাটি। বেশী fact-checking দরকার নাই মাথায় যা আছে তাই নিয়া লেখেন। নাইলে আইলসামি কইরা কেয়ামত পর্যন্ত লাগায়া দিবেন। আর গল্পে একটু-আকটু স্বাধীনতা নিতে ডরায়েন না। গল্পটাই আসল। বাকি সব বাড়তি পাওনা।
আর নিচের দাদা যা বললেন - প্রতি পোস্টে ৩-৪ টা ছবি embed কইরেন পাঠকের কল্পনা করতে একাত্ম হতে সুবিধা হবে।
মুসা মিয়া ভালই বলেছেন। অস্ট্রেলিয়ার সচলেরা ভালু না, হালহকিকত বলেননা কিচ্ছু। এখন অবশ্য আফ্রিকা থেকেও সংবাদ আস্তাছে।
লেখা ভাল হয়েছে। কিন্তু "বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃতি এখন খুবই সুন্দর, চারদিকে নানা ফুলে সেজে আছে ক্যাম্পাস। নানা রঙ এর বাহার।" - এর ছবি না দিলে হবে?
ছবি দিতে চাচ্ছিলাম, কিন্তু সচলে ছবির সেটিংস টা এখনো ভালো ভাবে শেখা হয়নি, তাই দিই নি। একবার আমার ফ্লিক আর থেকে ঘুরে আসবেন দয়া করে?
http://www.flickr.com/photos/kazimamun/
আপনিতো বেশ ভালো ছবি তোলেন দেখি। ডিএসএলআর নিশ্চয়ই?
নিছক শখ। আর কিছু নয়। হুম আমি মান্ধাতার আমলের একটা DSLR ব্যবহার করি, Nikon D70, 6 mp only. পয়সা নষ্ট করেছি লেন্স এর জন্য, তিনটা লেন্স আছে এখন- 35-70, 70-200 এবং 70-300mm প্রতিটাই Nikon এর autofocus lens. তবে ক্যামেরাটা পুরোনো হলেও অনেক পছন্দ আমার।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!
লেখা ভালো লাগলো
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
অনেক ধন্যবাদ নজরুল ভাই।
কাজী মামুন
বাহ দারুনতো!
নিয়মিত চাই কিন্তু।
চেষ্টা করবো নিয়মিত হতে, কিন্তু মন বড়ই উচাটন!
ধন্যবাদ আপনাকে!
কাজী মামুন
ধন্যবাদ মামুন ভাই, ব্লগটি লিখবার জন্য। ভেবেছিলাম শুরু করব কোরিয়ার জীবন নিয়ে লেখা। কিন্তু এত ঘটনা বহুল জীবনের বিস্তারিত লেখার আর সুযোগ হয়ে ওঠেনি। শুরুটা বেশ ভালো হয়েছে, পর্যায়ক্রমে আশা করি সিরিজটা বেশ উৎসাহব্যাঞ্জক হবে।
বিদেশে অবস্থানরত এক ছাত্রের দিনলিপি-র একতৃতীয়াংশের অধিক সময় কেটে যায় ল্যাবে অথবা ক্লাসরুমে। সবকটি দিন যেন একই রকম, মাঝে মাঝে এই বোধটিও হারিয়ে যায় - ওহ! কাল তো দেশে ঈদ বা পহেলা বৈশাখ। দেশে থাকা পরিবার-স্বজনদের ছেড়ে বিশ্বঃবিদ্যালয়ের এই ছোট্ট স্বদেশী কমিউনিটিকে বড় আপন মনে হয়। মনে হয় যেন আমার সমবয়েসী এই ছেলেটি-কে দেশে থাকতে কখনোই চিনতাম না, কিন্তু সে-ই এখানে আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু, এই বড়ভাইটির সাথে আমার আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই, কিন্তু আত্মার সম্পর্ক বিচ্ছিন্নহীন। পুরোনো সদস্যরা চলে যায়, নতুন মুখ আসে ক্যাম্পাসে। পুরোনোদের স্মৃতি ধীরে ধীরে বিস্মৃতি হতে থাকে আর নতুনেরা তাদের নব অভিজ্ঞতা গুলো স্মৃতির কোঠায় জমা করে রাখে, একসময় হয়তো সেগুলো ভেবে নস্টালজিক হবে, এই আশায়। এরই মাঝে বর্তমানকে যতটা আনন্দদায়ক রাখা যায় তার পুরোটাই হয়তো আমরা করেছি। কোরিয়ায় যে নিত্য-নতুন অভিজ্ঞতা, মজা আর এডভেঞ্চার করেছি, চিরকাল মনে রাখবার মতন। একসময় আমার বুয়েটে থাকা সময়টাকে জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় ভাবতাম, এখন এই সময়টিকেও যোগ করে নেয়ার ক্ষণ এসেছে।
সিরিজটা চলুক তার আপন গতিতে ...
নুভান, এই লেখাটা তুমি লিখলে আরো অনেক ভালো হতো। কারণটা বলি, আমার শুরুটা খুব খারাপ ছিল তাই যাই লিখতে চাই একটা টোন চলে আসে...দুঃখের।
তোমাদের টা শুরু থেকেই ছিল বর্ণিল, বিশেষ করে তোমার তো সেই প্রথম দিন থেকেই!
অনেক অভিজ্ঞতা আছে আমাদের যা হয়তো সরাসরি লিখবার নয়, সেগুলো বুদ্ধিমানদের বোঝার আর বোকাদের শুধু মজা পাওয়ার মতো করে লিখলেও চলবে।
আমি অস্থির চিত্তে লিখি, এই স্টাইলটা অনেকে পছন্দ করে অনেকে করে না! আমার লেখা মানেই কোনো একটা অস্থিরতা থেকে মুক্তির চেষ্টা করা।
তবুও লিখবো।
সবদিক চিন্তা করে দেখো- আমরা যেমন ছিলাম, আর যেমন আছি, এমন অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের সুযোগ খুব কম মানুষই পায় জীবনে!
তোমার লেখারও অপেক্ষায় রইলাম।
শুভকামনা!
কাজী মামুন
নতুন মন্তব্য করুন