(১)
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আড্ডাতে গালিগালাজ করে নাই, এমন লোক খুজে পাওয়া বোধ হয় দুস্কর। খুবই সিরিয়াস কোনো আলোচনা হচ্ছে, তাতেও ভিতরে ঢুকে যাবে এ ওকে কিভাবে ইয়ে দিচ্ছে। ব্যাপারটা এমন হয়ে গেছে যে, লবণ ছাড়া যেমন খাওয়া হজম হয় না গালি ছাড়া আড্ডা জমে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার পর সবাই তাদের বিভিন্ন গন্তব্যের কারণে নানা জায়গায় ছড়িয়ে যায়। আর আমরা মিস করতে থাকি সেই রসময় আড্ডা গুলোকে। বিশেষ করে আমরা যারা এখনো একা আছি। তাই এই ঈদে অনেকদিন পর আবার সেই গালিময় রসে সিক্ত এক আড্ডার আয়োজন করলাম। তবে সরাসরি নয়, ভার্চুয়ালি। অর্থাৎ ফেসবুকে। একটা ইয়ে টাইপের গল্প লিখে মেসেজের মাধ্যমে শেয়ার করলাম বন্ধুদের সাথে। মজার ব্যাপার হল অনেকেই এখনো সেই আগের ফর্মে আছে। সমস্যা দাঁড়ায় এক বন্ধুকে নিয়ে। সে এতই ক্ষুব্ধ হয় যে আমাকে তার ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে বের করে দেয়। যদিও সে পরে ব্যাপারটা বুঝতে পেরে দুঃখ প্রকাশ করে কিন্তু এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আমি একটা জিনিস বুঝতে পারলাম। তা হল, সবাই সব কিছু গ্রহণ করতে পারে না বা একটা সময় পরে পারে না। যেমন আমার এই বন্ধুটি এখন আর এই ধরনের গল্প হজম করতে পারে না।
আমি ওই বন্ধুটিকে দোষ দিই না। এর সাথে বয়স, পারিপার্শ্বিকতা, তার অবস্থান এবং অনেকদিন ধরে না থাকা যোগাযোগ সম্পর্কিত। ওই গল্পে আমি আমার কোনো বিবাহিত বন্ধুদের রাখিনি। রেখেছি কেবল, যাদেরই আমার মত একা একা লাগে। কারণ, আড্ডাতে আমরা এর ওর কাল্পনিক বউকে নিয়ে এটা সেটা করলেও যখন সত্যিই সে বিয়ে করে বা করতে যায় আমরা সেই আলোচনায় আর যাই না। লিখলে হয়ত অনেক বন্ধুই ব্যাপারটিকে সিরিয়াসলি নিত না। কিন্তু, নেয়াটা স্বাভাবিক ধরে নেয়াটাই যুক্তিসঙ্গত। আমার এই অবিবাহিত বন্ধুটিই নিতে পারে নাই। তবে আমি এই ঘটনায় তাকে আমার একটা ব্র্যান্ডেড গালি দিয়েছি। হ্যাঁ, এটা আর শুনাইনি তাকে। শুনলে বেচারার ডায়রিয়া হয়ে যেত।
(২)
গল্পটার শুরুটা ছিল অ্যামেরিকাতে রমযান মাসে সংযম রাখা নিয়ে। বিশেষ করে বালিকারা যখন প্রায়ই সব কিছু খোলা রেখে হেঁটে যায় তখন না দেখে কিইবা করা যায়। বালিকা দেখায় আমার পারঙ্গমতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই শুরু। সুতরাং এটা যে মার্কিন মুল্লিকেও অব্যাহত থেকবে এ আর আশ্চর্য কি! কিন্তু সমস্যা হল এই রমযান মাস নিয়ে। সংযম বলে কথা। রোজা ভাঙ্গার লিস্টে দূর থেকে লুল ফেলার ব্যাপারটা পাই নাই। তাই লুল ফেলি। আশা করি আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন। কারণ আমি শুধু লুলই ফেলি। আরোতো কিছু ফেলতে পারতাম। সমস্যা হল যখন দেখি জগিং করত একদম গায়ের সাথে লেগে থাকা জামা পড়া কোনো বালিকার বক্ষযুগল তুমুল ভাবে নড়তে থাকে তখন আমার রোজাতেও তুমুল ভাবে সেই অনুরনণ লাগে। (একটা দীর্ঘশ্বাসের ইমো হবে)
হাদিসে আছে মেয়েদের দিকে একবারের বেশি তাকালে জেনা হয়। এখন এ পর্যন্ত যত মেয়ের দিকে তাকিয়েছি সেটা যদি বাদ দিয়ে যতগুলো ইয়ে টাইপের ছবি দেখেছি হিসেব করি তাহলেও জেনা মিটার আর কাজ করার কথা না। জেনার মহাসাগর হয়ে যাবে। আমার এক বন্ধু অবশ্য শরিয়ত সম্মত ভাবে মেয়েদের দিকে তাকায়। মানে এক বারেই তাকায়।
(৩)
আমি জানতাম এই লুলানন্দ শুধু আমাদের মত যারা এখনো ফরজ কাজ আদায় করার মত যোগ্যতা অর্জন করতে পারে নাই তারাই করে। কিন্তু না, আমার ভুল ভাঙলো কানাডা থেকে এক বন্ধুর ফোন পেয়ে। ঈদে সে গিয়েছিল এক বড় ভাইয়ের বাসায় দাওয়াতে। যখন তাদের স্ত্রীরা রান্নাঘরে তখন সেই সিনিয়র ভাই তার আরেক বন্ধুকে বলছিল, তোরে পাঠাইছিলাম, পাইছিলি? জটিল না! জিনিস একখান। পুরা মা...। আমার সেই বন্ধুটিরই নাকি কান লাল হয়ে যাচ্ছিলো। আফসুস, মাইনষে কত কী কইরা ফালাইলো আর আমরা এখনো লুল ফেলে যাচ্ছি। এতো লুল আসে কইত্থেকা?
(৪)
তাই ভেবেছিলাম এই ঈদেও লুল ফেলেই যাবে বেলা। কিন্তু দুপুরে সেরকমটা হয় নাই। বাংলাদেশ থেকে যখন জিজ্ঞেস করে কিভাবে ঈদ কাটালে, আমি বলি খারাপ না। ৬৫ বছরের এক বুড়ার লগে ঘুরতে বাইর হইছি। আমি যেখানে থাকি সেখানে ছয়টা বাঙালি পরিবার থাকে। দুইটা পরিবার অন্য শহরে ঈদ করতে গেছে। দুইটা পরিবার মাত্র এসেছে শহরে। তাই এখনো চিনি না। একটা পরিবারকে বছরে একবার করে দেখি। আর থাকে একটা পরিবার। ও হ্যাঁ, ব্যাচেলর বাঙালি ওই এলাকায় একজনই। সেই একটা পরিবারে থাকে এক বুড়ো আর এক বুড়ি। বুড়ি গেছে কাজে। আর বুড়ো অসুস্থ। তাই আমার কাছে জানতে চাইলেন ক্লিনিকে তার সাথে যেতে আমি রাজি কিনা। আমি কম্যুনিটি সার্ভিস দিলাম। পরে যখন জানলেন যে আজকে ঈদ, তখন আমাকে নিয়ে এক ভারতিয় রেস্তোঁরায় খাওয়ালেন। তবে তার সাথে সময়টা সত্যি ভাল কেটেছে।
(৫)
এই নিয়ে তিনটা ঈদ বাইরে কাটাচ্ছি। তীব্র আকাঙ্খা থাকে দেশে সবার সাথে ঈদের সেই আনন্দ উপভোগ করা। কিন্তু হয় না। আটকে আছি, আমার ভাষায় বালের পড়াশোনা নিয়ে।
বিকেলে ছিল মুসলিম কম্যুনিটির ঈদ ডিনার। ওখানে আরব বালিকাদের আঁট সাঁট পোশাকে দেখে আবার লুল ফিরে আসে। তবে এবার শরিয়ত মোতাবেক লুল ফেলব কিনা এখনো সিদ্ধান্ত নিই নাই। তার আগে সবাইকে ঈদের লুলাশুভেচ্ছা।
--- অনন্ত ---
অনন্ত @ ইয়াহু ডট কম
মন্তব্য
"হাদিসে আছে মেয়েদের দিকে একবারের বেশি তাকালে জেনা হয়।"
আর যদি একবার তাকিয়ে--তাকিয়েই থাকি...। তাকিয়েই থাকি তাহলে? (আমার বাড়ী নোয়াখালি না, আগেই বলে রাখি)
কাজী মামুন
হে হে, আঁন্নের বাড়ি যে নোয়াখালি না, আঁই বুইজতে ফাইরছি...
(আমার বাড়িও কিন্তু নোয়াখালি না )
অনন্ত
আপনি তো ভাই ভালোই লুলপুরুষ! ঈদোত্তর লুলাশুভেচ্ছা গ্রহণ করুন।
কুটুমবাড়ি
সবই আপনাদের দোয়ায়...
অনন্ত
লুল পড়ছে তো পড়ছেই, সাবধান লুলাসাগর হয়ে যাবে যে ...
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
ইয়ে দাদা আস্তে, আর ফেইলেন্না। আচ্ছা, এইটা আমার না আপনার কথা বলছেন...
অনন্ত
এহেম এহেম, পোলাপান মুরুব্বী মানেনা !!!
যাউজ্ঞা বিয়াফক মজা পাইলাম।
----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
ধন্যবাদ জাহিদ ভাই। আমরা তো মুরুব্বীদেরই অনুসরণ করি।
অনন্ত
ধর্মে বলছে পরনারীর দিকে না তাকাইতে। আমি কখনোই কোনো পরনারীর দিকে তাকাই না। যার দিকেই তাকাই, নিজের নারী ভেবেই তাকাই
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
এতো দেখি সহিহ শরিয়ত সম্মত উপায়। আমিও এখন থেকে তাই করুম।
অনন্ত
সেই রকম হয়েছে
টুইটার
জায়গামত ক্লিক করেছেন। এর জন্য আমি দায়ী না।
অনন্ত
হে হে হে জট্টিল লিখছেন ভাইজান। কিন্তু রমজান মাসে জগিং করতে গেছিলেন কোন দুঃখে? নাকি ললনাদের বক্ষালোড়ন দেখার আশায় রোজা রাইখ্যাও জগিং মিস করেন নাই
সত্যান্বেষী
না, ইয়ে আমি আসলে বেশ ভালু পোলা। ওই ললনারাই আমার পাশ দিয়ে দৌড়ে যায়।
অনন্ত
মজার লেখা। বাংলাদেশও আজকাল কম যায় না। ঈদের সময় মার্কেটে গেলে সংযমের হাদিস পর্যন্ত ভূলে যাবার জোগার হয়।
অমিত্রাক্ষর
অমিত্রাক্ষর@জিমেইল ডট কম
সবই কলিযুগের দোষ।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
দুই-তিন বছর আগে ঘোষণা দিছি, আমার মেয়ের মা'রে খুঁইজা না পাওয়া পর্যন্ত আর কোনো ঈদ না! হেরপর, খালি ঈদ আর ঈদ...
আর রোযা! এইসব ইহূদি-নাছারার দেশে সবাই ঈমানের পরীক্ষা নেয়ার জন্য নেমে পড়ে। এইসব দেশে রোযা আরও পাকাপোক্ত হয়। বেশি করে রোযা রাখুন, দোজখের উপর চাপ কমান।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ঠিক বলেছেন, বস। এই জন্যই আমি রোযা রাখতে পছন্দ করি। সব কাটাকাটি করে আর কিছু থাকে না। তাই দোযখের যাওয়ারও চান্স নাই।
নতুন মন্তব্য করুন