অপ্রিয় সত্য হলেও কবুল করতে দ্বিধা নেই ছেলেবেলা থেকেই আর দু’দশটা ছেলের চাইতে আমি বোধহয় একটু বেশীই খাটো ছিলাম।
বার্ষিক পরীক্ষায় মেধা তালিকার শীর্ষস্থানটি রবার্ট ব্রুসের মতো বারংবার প্রচেষ্টার পর দখলে আনতে না পারলেও মর্নিং এসেম্বিলীতে আমার স্থানটি ছিল সবার পুরোভাগে—অমোঘ ও নির্ধারিত। আমাদের ক্লাসের সবচাইতে লম্বা ছেলেটি কতবার যে আমাকে কাছে টেনে মাপ দিয়ে বালখিল্য প্রশান্তিতে বুঁদ হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই।
অবশ্য স্কাউটিং এর ফায়ারম্যান লিফটিং অনুশীলনে ডামি হিসেবে ছিলো আমার ব্যাপক চাহিদা।
কলেজের মুগ্ধতামাখা দিনগুলিতে চন্দ্রা নামের একটি মেয়ের মোহিনী রূপের মায়ায় দিকভ্রান্ত হয়েছিলাম কিছুদিন। হয়ত ভেবেছিলাম, চাঁদের নাগাল পাওয়া না গেলেও বেঁটে বামুনের চন্দ্রাহত হতে তো দোষ নেই কোনো; আমার কবিতার খাতা জুড়ে সেই থেকে আজো চাঁদ আর বামুনের মোহন গোল্লাছুট।
যৌবনের উজ্জ্বল চিৎকারে মেতে উঠে আমার সতীর্থ বন্ধুরা যখন ব্রিজিত বার্দোত, রেকুয়েল ওয়েলচের ফিগারের মন্ত্রমুগ্ধতায় সিগারেট জ্বেলেছে আর জ্বলেছে— তাদের তুখোর আড্ডায় আমি বড়বেশী ম্রিয়মান থেকেছি। নিজেকে প্রবোধ দিয়েছি এই ভেবে, আলাভোলা শ্রোতা না পেলে কি মধ্যমণির দিগ্বিজয় হয়?
টিএসসির চত্বরে এক উঠোন সবুজের মাঝে মুখোমুখি বসে ফুচকার টকে টাকরার টক টক শব্দ তুলে মুগ্ধতায় দুলতে দুলতে খর্বাকৃতি পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চির এই গোবেচারাটিকে সরল চাপল্যে তুমি বলেছিলে,
“ইস! আর মাত্র তিন বা চার ইঞ্চি লম্বা হলে যা হ্যান্ডসাম দেখাতো তোমাকে”
সব ভুলে আমি তখন তোমার সৌন্দর্যের গহনে ডুবুরী!
সেসব দিন রাত্রির চৌহদ্দি পেরিয়ে মধ্যবয়সী আমি এখন ম্লান যৌবনে স্থিত হয়েছি। খাদি পাঞ্জাবীর আস্তিনে লেগে থাকা চিটচিটে ময়লার মতো জীবন আমাকে ইন্দ্রিয়ানুভূতির অনুরণনে স্মৃতিমুখীই করেছে বারবার; জানালার ফাঁক গলে হলুদ জ্যোৎস্নার পুঁজ আক্রান্ত নিলয়ের কুঠুরীতে চুমু খেয়ে মিশে গেছে পেরিকার্ডিয়াল ফ্লুইডের থকথকে স্ত্রোতধারায় প্রতিদিন; মোটের উপর, যাপিত জীবনের দায় নিয়ে আমি ছিলাম অনেকটাই বেসামাল।
গতকাল একদল সহকর্মীর সাথে কোমান্ডা পেরিয়ে যেতে হলো পোটোপোটোর গহীন জঙ্গলে। লেন্দুদের মারণ তীর থেকে কিভাবে পিগমীদের রক্ষা করা যাবে—এই ছিলো প্রতিপাদ্য।
সেই কৃপন আলোর অন্তঃপূরে— যেখানে অরণ্যের সিক্ত ছায়া আদিম আনন্দে কেঁপে কেঁপে উঠে—যেখানে নৈঃশব্দের বুক চিরে দ্রিমিকি দ্রিমিকি ঢাকের আওয়াজ সভ্যতাকে ব্যঙ্গ করে ইতুরীর সবুজ প্রান্তরে লতিয়ে উঠে সাবলীল—যেখানে লাল রক্তজবার মতো ক্ষত পিঠে নিয়ে—অদ্ভুত সারল্য ফোটায় কালোমানুষের দল;
সেইখানে এক অদৃশ্য বন্ধন সলোমন কিম্বা কনফুসিয়াসের মতো আমায় আলো দেয়—সেইখানে আমার চেয়েও খর্বাকৃতি মানুষগুলো ঢাকের তালে তালে যুথচারী নাচে, থেকে থেকে সমস্বরে বলে ওঠে, "ওসানি, ওসানি"—আমার চাদ্দিক ঘিরে কুঁদে কুঁদে প্রণতি জানায়। সেইখানে ভালোবাসা যেন আদিমতা মাখা সহস্র বনফুল হয়ে আমার বিপন্ন বোধের দগদগে ঘায়ে প্রলেপ বুলায়। আমি নিঃশব্দে ভুলি দেহের সকল পরিমাপ, সব অপূর্ণতা, সবটুকু অভিমান!
আমারতো তখন শুধুই চোখ মেলে অনন্ত নীল আকাশের বিশালতা দেখা।
মন্তব্য
ঠিকাছে।
ভাই,
ধন্যবাদ ও শুভপ্রীতি!
রোমেল চৌধুরী
কাব্য (গুড়) হয়েছে
ভাই,
আপনার কাব্যবিচারের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা !
রোমেল চৌধুরী
পড়লাম।
_________♣♣♣_________
না-দেখা দৃশ্যের ভেতর সবই সুন্দর!
__________♣♣♣_________
না-দেখা দৃশ্যের ভেতর সবই সুন্দর!
ভাই,
ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য ধন্যবাদ!
রোমেল চৌধুরী
একটানে পড়ে ফেললাম।
চন্দ্রার খবর কি এখন?
ইশতিয়াক ভাই,
ধৈর্য নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
"আহা বাসন্তী, সেই বাসন্তী এখন বিহারে
ডাকাত স্বামীর ঘরে চার সন্তানের জননী হয়েছে!"
রোমেল চৌধুরী
অদ্ভূত সুন্দর।
ভাল্লাগলো
ভাই,
ধন্যবাদ, সুন্দর তো আপনার চোখ 'তিনটি', যেগুলো আপনার ততোধিক সুন্দর মনের সাথে বিনিসুতোয় যুক্ত !
রোমেল চৌধুরী
ভাল লেগেছে। শক্তিশালী লেখনী। আবেগের ধরণটাকে ধরা চমৎকার।
অমিত্রাক্ষর
অমিত্রাক্ষর@জিমেইল ডট কম
ভাই,
লেখাটি আপনাকে আনন্দ দিতে পেরেছে জেনে ভালো লাগলো ! ভালো থাকবেন !
রোমেল চৌধুরী
বাঃ। অনেক সুন্দর লিখেছেন তো
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
ভাই,
আপনাকে ধন্যবাদ। লেখাটি আপনাকে আনন্দ দিতে পেরেছে জেনে ভালো লাগলো। যার সুন্দর ত্রিলোচন আছে তার কাছে সবকিছুই রূপবান হয়ে ফোটে!
রোমেল চৌধুরী
চিত্রকল্পগুলো ভালো, তবে কবিতা হিসেবে ঠিক মানোত্তীর্ণ লাগেনি।
ভাই,
আমি পোক্ত কোন কবি নই, নেহাত কাব্যমোদী হয়তো, কবি হবার ধৃষ্টতা বা উচ্চাভিলাষ কোনটিই করি না! তাই কাব্যবিচারের মানদন্ডে উঠতে গিয়ে কেবলি মনে হয় আমায় বুঝি শূলে চড়ানো হলো! লেখাটি যদি পাঠককে এতটুকু আনন্দ দেয় তাতেই আমি খুশী! সময়ের স্রোতে তিনি ভেসে যাবেন নাকি সাফল্যের সোনালী তীরে পৌঁছুবেন, জীবনানন্দ কি তা জানতেন? তবে আমি বিশ্বাস করি, নিজ প্রতিভার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে হবে প্রতিটি মানুষকে।
রোমেল চৌধুরী
পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চিরে বামুন (তাও আবার বেঁটে) বলাটা বেশিরকম বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না?!!
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
ভাইরে,
জীবন অনিত্য এক ক্ষমাহীন বৃত্ত, পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চিরে চন্দ্রা কিন্তু গ্রহন করেনি, টি এস সির ফুচকাভূক মেয়েটিও না, ঢ্যাঙ্গা পুলাটির কথা না হয় বাদই দিলাম এমনকি,
"কাল রাত্তিরে যার পদরেখা পড়েছে আমার নিঝুম স্বপ্নপথে
সে কি সক্ষম প্রলেপ বুলাতে স্মৃতিসংকুল আমার পুরনো ক্ষতে?"
আপনার সহানুভূতির ভেজা হাতখানি আমার কাঁধে টের পাই! ভালোবাসা নিবেন!
রোমেল চৌধুরী
নতুন মন্তব্য করুন