এনডিএম-১, চিকিৎসাক্ষেত্রে নতুন আতংক
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে, সোয়াইন ফ্লু প্যানডেমিক শেষ হয়ে গেছে এবং দুর্ভাগ্যবশতঃ নতুন এক হুমকির আবির্ভাব ঘটেছে, যার নাম এনডিএম-১ ব্যাক্টেরিয়া।
এনডিএম-১ কি?
এনডিএম-১ হচ্ছে কিছু কিছু ব্যাক্টেরিয়া দ্বারা উৎপাদিত একধরনের এনজাইম যা কার্বাপিনেম (খুবই শক্তিশালী এন্টিবায়োটিক) এর কার্যক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয়।
এনডিএম-১ এলো কোথা থেকে?
এর উৎপত্তিস্থল থেকেই এর নামকরণ। New Delhi Metallo-beta lactamase-1 পাওয়া গেছে যুক্তরাজ্যের এমনকিছু রোগীর দেহে যারা চিকিৎসার জন্য, বিশেষ করে কসমেটিক সার্জারীর জন্য সম্প্রতি ইন্ডিয়া বা পাকিস্তান ভ্রমণ করেছেন। এই রোগীরা যুক্তরাজ্য বা যুক্তরাষ্টের বিভিন্ন হাসপাতালে পরর্বতীতে চিকিৎসা নেওয়ায় সময় এটি অন্যদের দেহেও ছড়িয়ে পড়ে।
সুপারবাগ-এর ধারণাঃ
ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য এন্টিবায়োটিক হচ্ছে সবচেয়ে কার্যকরী অস্ত্র। কিন্তু ১৯৩০ সালে, যখন এন্টিবায়োটিকের বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয়, তখন থেকেই এর বিরুদ্ধে অসংবেদনশীলতা (resistance) তৈরি হতে থাকে। ‘সুপারবাগ’ গুলো, যেমন মেথিসিলিন রেজিস্ট্যান্স স্ট্রেপ্টোকক্কাস অরিয়াস (MRSA) কিছু প্রোটিন এনজাইমের মাধ্যমে এন্টিবায়োটিককে অকার্যকর করে দেয়। এদের মোকাবেলার জন্য গবেষকগণ প্রতিনিয়তঃ নতুন নতুন শ্রেণীর এন্টিবায়োটিক আবিষ্কার করতে সচেষ্ট আছেন। এনডিএম-১ ব্যাক্টেরিয়াকে কার্বাপিনেম শ্রেণীর বিরুদ্ধেও অসংবেদনশীল করে দেয়। এটাই সবচেয়ে আশংকার বিষয় যে, এর বিরুদ্ধে কার্যকর কোন এন্টিবায়োটিক খুব শিগগির আবিষ্কৃত হবারও কোন সম্ভাবনা নেই।
আশংকার কারণ কি?
এনডিএম-১ এনজাইম তৈরির জন্য ডিএনএ এর যে অংশ দায়ী, সেই অংশগুলিকে ব্যাক্টেরিয়া নিজেদের মধ্যে আদান-প্রদান করতে পারে। বর্তমানে দুটি ব্যাক্টেরিয়াতে এই এনডিএন-১ এনজাইম পাওয়া যায়; E. coli এবং K. pneumoniae।এই ব্যাক্টেরিয়াদুটি স্বাভাবিকভাবেই এবং কোন ক্ষতি না করে আমাদের অন্ত্রে বাস করে। আবার এই ব্যাক্টেরিয়াদুটি মূত্রনালীর সংক্রমণ ও সেপ্টিসেমিয়া করে এবং দ্বিতীয়টি নিওমোনিয়ার জন্যও দায়ী। আশংকার কারণ এই যে, এনডিএম-১ জীন এমন একটি ব্যাক্টেরিয়াতে স্থানান্তরিত হবে যেটি সব এন্টিবাইয়োটিকের প্রতি অসংবেদনশীল এবং সহজেই এক রোগী থেকে অন্য রোগীতে সংক্রমিত হতে পারে। এই ধরনের পরিস্থিতি আমাদের জন্য সত্যিই দুঃস্বপ্ন।
এর চিকিৎসা কি?
এই ধরণের রোগীকে একই সাথে বিভিন্ন শ্রেণীর এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের (cocktail of antibiotics) মাধ্যমে চিকিৎসা করা যেতে পারে, ব্যাক্টেরিয়া সব ধরণের এন্টিবায়োটিকের প্রতি অসংবেদনশীল নাও হতে পারে। আবার গবেষকগণ দেখেছেন যে, অন্ততঃ একধরণের এনডিএম-১ ব্যাক্টেরিয়া আছে যা আবিষ্কৃত সকল এন্টিবায়োটিকের প্রতি অসংবেদনশীল। তাই এধরণের সংক্রমণ রোধ করার মূলে থাকবেঃ
• দ্রুততার সাথে নতুন রোগী খুঁজে বের করা।
• হাসপাতালের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার (hygiene) আরো উন্নতি সাধন করা।
• চিকিৎসা-সংক্রান্ত সকল যন্ত্রপাতির যথাযথ জীবাণুমুক্ত করা।
• চিকিৎসাসেবা প্রদানকারীর হাত এন্টিসেপ্টিক সাবান দিয়ে ঠিকমত
পরিষ্কার করা।
সমস্যার ব্যাপকতাঃ
এনডিএম-১ ব্যাক্টেরিয়ার প্রাদুর্ভাব ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যাপক। এছাড়া বর্তমানে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, নেদারল্যান্ড এবং অষ্ট্রেলিয়াতেও এর উপস্থিতি সনাক্ত হয়েছে।
আক্রান্ত রোগীদের ভবিষ্যতঃ
অদূর ভবিষ্যতে যেসব এন্টিবায়োটিক বাজারে আসার সম্ভাবনা রয়েছে তার বেশীরভাগই গ্রাম-পজিটিভ ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে সব ব্যাক্টেরিয়া এনডিএম-১ তৈরি করে তারা সবাই গ্রাম-নিগেটিভ। যুক্তরাষ্ট্রের Health Protection Agency এর ভাষ্যমতে, “বহু-অসংবেদনশীল (Multi-Drug resistant) গ্রাম-নিগেটিভ ব্যাক্টেরিয়া জনসার্থের জন্য স্পষ্টতঃই হুমকি এবং ফার্মাসিটিকাল ইন্ডাষ্ট্রির এদের বিরুদ্ধে নতুন চিকিৎসাপদ্ধতি আবিষ্কার করা জরুরী”।
কামরুল হাসান রাঙা
মন্তব্য
তথ্যবহুল লেখার জন্য (গুড়)
একটা দিক নিয়ে একটু আলোচনা করতে পারতেন - আমাদের দেশীয় ডাক্তারদের মত, এই ব্যাপারটাকে নিউ দিল্লী নাম দিয়ে এবং ভারত-পাকিস্তান থেকে উৎপত্তি এইটা নিয়ে বারবার চিৎকার করে ওরা আসলে এটা বলতে চাইছে, যে ওসব দিকে চিকিৎসা করাতে আর যেয়ো না। প্রচুর রোগী যে আমাদের দেশে এসে সস্তায় চিকিৎসা করিয়ে যাচ্ছে, এতে বহু টাকা ক্ষতি হচ্ছে বলে ওদের এই পন্থা এখন।
ধন্যবাদ। আমার লেখাটা রাজনৈতিক কোন বিষয়ে নয়, শুধু সমস্যাটার প্রকৃত অবস্থা ্তুলে ধরতে চেয়েছি। অধিকাংশ নতুন রোগ বা জীবাণুর নামকরণের ক্ষেত্রে প্রথম যেখানে আবিষ্কৃত হয়েছে, কে আবিষ্কার করলেন, কি ধরণের রোগ হচ্ছে, আরো হরেক রকম বিষয় কাজ করে।
আপনি কি অণুজীববিদ্যা বা জৈবরসায়নের ছাত্র? অ্যানথ্রাক্স নিয়ে তাহলে কিছু প্রশ্ন করতাম।
চমৎকার সাম্প্রতিক বিষয়ে আলোকপাত করার জন্য এক টুকরো (গুড়) । লেখালেখি জারি রাখুন।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
আমার মনে হয় MDR, ESBL, XDR ধরণের জীবাণুদের কাতারে সর্বশেষ সংযোজন MDM। সেক্ষেত্রে বাকিদের সম্পর্কে যদি আরো কিছু লেখা পড়ার দাবী রাখলাম।
অদূর ভবিষ্যতে কেবল গ্রাম পজিটিভ ব্যক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে এন্টিবায়োটিক তৈরি হবে (অথবা তার সম্ভাবনা বেশি) কেন সেটা কি একটু খোলসা করবেন? ব্রড স্পেকট্রাম এন্টিবায়োটিকগুলোর নতুন জেনারেশন কি আসবে না?
দারুণ লেখার জন্য (গুড়) সহ শুভেচ্ছা
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
মাথায় সবসময় কুচিন্তা ঘোরে, তাই একটা কুকথা বলি। আমার ধারণা, এইসব আতংক সৃষ্টির পেছনে এক ধরনের বাণিজ্য এবং রাজনীতি দুটোই রয়েছে। সোয়াইন ফ্লু নিয়ে এত হাউকাউ শুনলাম, কিছুই তো দেখলাম না। মাঝখানে টিকার ব্যবসা করে এক কোম্পানি বড়লোক হয়ে গেলো, সিডিসি প্রচুর ফান্ড পেলো। এখন আবার এনডিএম বোধহয় আরো কিছু কোম্পানির কপাল খুলে দিবে। আর রাজনীতির ব্যাপারটা এখানে আলাপ করলাম না।
তানভীর ভাইয়ের মত ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আমার ভিতরেও কাজ করে। এটা যে মিথ্যা তার কোনো লক্ষণও দেখছিনা।
খাইছে, ভয়ের কথা তো!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আপনে ডরাইলে হবে? আমরা তো খাজা বাবা ধুগোর পানিপড়া নিয়েই এ যাত্রা বাঁচব আশা করছিলাম...
এ যাত্রা বাঁচন নাই বৎস্য। খাজা বাবা নিজেই পাৎলুন তুলে খাড়া দৌঁড়ের উপর আছে।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ডুপ্লি ঘ্যাচাং
ভাই,
আমার সত্তর বছরের বৃদ্ধ বাবা ও পাঁচ মাসের ছেলে রিলকে'র একি ধাঁচের সমস্যা। জ্বর ছাড়ছেই না, ইউরিন ইনফেকশান, এন্টিবায়োটিক রেজিষ্ট্যান্ট। বড় টেনশনে আছি রে ভাই! কি যে করি!
রোমেল চৌধুরী
ভাই
এই রোগ হইলে কী হয় তা তো বুঝলাম না
এইটাও কি ম্যাড কাও - বার্ড ফ্লুর মতো পত্রিকা ফাটানো রোগ নাকি সত্যি সত্যি মানুষের হয়?
এইটা আমিও জানি না। তবে এইটা জানি যে এইটার টিকা বানানো যাবে এবং মিডিয়াতে এই রোগ নিয়ে যথেষ্ট হাউকাউয়ের পর সেইটা পুরো পৃথিবীজুড়ে বিক্রি করা যাবে। টাকায় টিকা, টিকায় টাকা।
________________________________________________
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
মোক্ষম বলেছেন, ভাই!
রোমেল চৌধুরী
* ধন্যবাদ সবাইকে। ব্লগ-এ এটা আমার প্রথম পোস্ট, এতো মন্তব্য এবং পাঠক সংখ্যা দেখে আমি খুবই আনন্দিত।
* আমি এক নবীন ডাক্তার, সরকারী চাকুরীর সুবাদে টাংগাইলের ধনবাড়ী উপজেলায় এখন আছি।
* NMD-1 সারা বিশ্বে বর্তমানে একটি আলোচিত বিষয়, এটি একটি চ্যালেঞ্জ। মুনাফাখোরীরা আমার মতে এটার প্রচারণায় জড়িত নয়, কারণ তারাই এর প্রথম ভিক্টিম। আর এর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যাবস্থাও তারা জানে না। তৃতীয় বিশ্বে এই ধরণের স্বাস্থ্য-সমস্যার উদ্ভব হওয়াটাও একেবারে উড়িয়ে দেয়ার মত ব্যাপার নয়। এর কারণ মূলতঃ এন্টিবায়োটিকের যথেচ্ছা ও যত্রতত্র ব্যাবহার। এ বিষয়ে পরে একদিন লেখার ইচ্ছা রাখি।
* এনথ্রাক্স নিয়ে আজ একটা পোস্ট দিলাম।
* আবারো সবাইকে ধন্যবাদ।
ডাক্তার সাহেব,
ব্লগে লেখা দিলে তার সাথে পাঠকদের মন্তব্যের উত্তরও দিতে হয়। আশা করি আপনি ফিরে আসবেন।
আমি দুঃখিত। নতুন বলে বাংলা লেখায় একটু সমস্যা হচ্ছে ভাই, তাই সব জবাব একসাথে দিতে চেষ্টা করলাম। আশা করি এই অসুবিধা কাটাতে খুব বেশী সময় নেব না।
খাইছে!
কাকস্য পরিবেদনা
রাঙ্গা ভাই , ভাল লিখেছেন ।
"তৃতীয় বিশ্বে এই ধরণের স্বাস্থ্য-সমস্যার উদ্ভব হওয়াটাও একেবারে উড়িয়ে দেয়ার মত ব্যাপার নয়। এর কারণ মূলতঃ এন্টিবায়োটিকের যথেচ্ছা ও যত্রতত্র ব্যাবহার।" -- উড়িয়ে দেয়া তো না রীতিমত ভীতিকর একটা বিষয় , যে দেশে সাধারন রোগীদের সামান্য জ্বরকাশি তে ও এন্টিবায়োটিক না দিলে এরা একেবারে খেপে যায় !!
ব্লগে নিয়মিত লিখলে সমস্যা কেটে যাবে আশা করি । আপনাকে সচলে দেখতে পেয়ে খুশী হলাম
অনেক ধন্যবাদ, ইতুকি।
নতুন মন্তব্য করুন