অনেক কাল আগের কথা। ওগিয়ারা শিন্নোজো নামের এক বিপত্নীক সামুরাই একদিন গোধূলী লগ্নে বাড়ির রোয়াকে বসেছিলেন। তাঁর বিস্মিত চোখের সামনে, একটি সুন্দরী তরুণী এবং তার একজন সহচরী একটি ফুলেল নকশা-করা লণ্ঠন হাতে কাছে এগিয়ে এল। যুগলটি ওগিয়ারার সাথে কথা বলার জন্য থামল, এবং প্রকাশ পেল তরুণীটির নাম ওতসুয়ু। তাঁদের দুজনের মধ্যে একটা তাৎক্ষণিক যোগসূত্র তৈরি হলো, এবং ওতসুয়ু পরের রাতে একই সময়ে আবার ফিরে আসার প্রতিজ্ঞা করল।
ওই রাতের পর থেকে, গোধূলী লগ্ন এলেই, সেই সহচরীকে নিয়ে মেয়েটি আসত, ওই অলঙ্কৃত লণ্ঠনটি তাদের সাথেই থাকত। ওগিয়ারা এবং ওতসুয়ুর মধ্যে খুব তাড়াতাড়িই একটি প্রণয় সম্পর্ক গড়ে উঠল, এবং মেয়েটি তাঁর সাথেই ঘুমুত, ভোর হওয়ার আগেই আবার চলে যেত। এই সম্পর্কটি বেশ কিছুদিন ধরে চলল, দুজনই খুশি ছিল এতে।
যা হোক, একজন সন্দেহবাতিকগ্রস্ত প্রতিবেশী, ওগিয়ারার এই রাত্রি জাগরণ এবং দিনমান পড়ে পড়ে ঘুমানো দেখে কৌতূহলী হয়ে সে বাড়ির কাঠের দেয়ালের গায়ে একটি ছিদ্র তৈরি করল, এটা দেখার জন্য যে বুড়ো লোকটি রাত জেগে জেগে কী করে ঘরের ভেতরে। স্তম্ভিত হয়ে সে দেখল, বিপত্নীক সামুরাইটি নিবিড়ভাবে একটি কঙ্কালকে জড়িয়ে শুয়ে আছে। কঙ্কালটির গায়ে কেবল ক্ষয়ে যাওয়া মাংস এবং মাকড়সার জাল দিয়ে ঘেরা লম্বা কালো চুল ছাড়া আর কিছু সে দেখতে পেল না। অর্ধ-উন্মাদ অবস্থায় প্রতিবেশীটি তাড়াতাড়ি সরে পড়ল সেখান থেকে।
পরদিন সে ওগিয়ারার মুখোমুখি হলো, একজন বৌদ্ধ পুরোহিতকে সাথে নিয়ে, যে আত্মার সম্মুখীন হওয়ার বিপদ সম্পর্কে তাকে সাবধান করে দিয়েছিল। কারোই মৃতদের সাথে ফষ্টিনষ্টি করাটা উচিত নয়। ওগিয়ারা এ কথাটি হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করল, এবং ওতসুয়ুর জাদুমন্ত্র থেকে নিজেকে মুক্ত করার শপথ নিল। পুরোহিতের সহায়তায়, সে বাড়িটিকে মন্ত্রপূত কাগজের টুকরো দিয়ে ঘিরে ফেলল অতিপ্রাকৃত শক্তিকে প্রতিরোধ করতে। ওই রাতে, ওতসুয়ু এবং তার সহচরী বরাবরের মতোই এল, কিন্তু বাড়ির দোরগোড়ায় পা দিয়েই তারা চিৎকার দিয়ে উঠল, তাদের পক্ষে ভেতরে আসা সম্ভব ছিল না।
রাতের পর রাত সেই তরুণীটি ফিরে গেল, ওগিয়ারাকে মন্ত্রপূত কাগজ সরিয়ে নেয়ার জন্য কাকুতি-মিনতি করল যেন তাঁরা আবার প্রেমিক-প্রেমিকা হতে পারে। ধীরে ধীরে, নিঃসঙ্গ বুড়ো মানুষটির প্রতিরোধ শক্তি শেষ হয়ে এল, এবং এক রাতে সে তাঁর বাড়ি ছেড়ে প্রেমিকার সাথে যোগ দিল।
পরের দিন সকালে, তাঁকে কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না। তাঁর বন্ধুরা এখানে-ওখানে তত্ত্বতালাশ করল, যতক্ষণ না প্রতিবেশীটি গোরস্তানে অনুসন্ধান চালানোর পরামর্শ দিল। অবশেষে, তারা ওতসুয়ু এবং তার সহচরীর কবর খুঁজে পেল, সেটিও সেই একই রকম ফুলেল নকশা-করা। ভূ-গর্ভস্থ কক্ষটি খোলার পর কেউ-ই অবাক হলো না যখন তারা দেখল ওগিয়ারার লাশটি তখনও তাঁর কঙ্কালসার প্রেমিকাকে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরে আছে।
মন্তব্য
লেখক বোধহয় নিজের নাম লিখতে ভুলে গেছেন
অথবা ভূতেই লিখল এই লেখা?
ধন্যবাদ, লীলেন্দা। দারুণ আপনার রসিকতা বোধ। আপনার মন্তব্যের উত্তর আগেই দিয়েছি, কিন্তু কী করে যেন সেটা নিচে চলে গেছে।
কুটুমবাড়ি
ভৌতিক প্রেম???
ভালোই লাগলো
অতিথি মন্তব্যকারী দেখি নিজের নাম লিখতে ভুলে গেছেন। অথবা ভূতেই লিখল এই মন্তব্য?
পড়া এবং মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। যদি সম্ভব হয় তাহলে নিকটা জানিয়ে দিয়েন, কেমন?
কুটুমবাড়ি
লেখকের নাম কই?
গল্পটা পড়া ছিলো হার্ণের কাইদানে , নাম বোতান দোরো, the peony lantern।
অনেক সংক্ষেপে শেষ করে ফেলেছেন, আরেকটু বড় করলে ভাল হত
------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
সরি, খেঁকুদা। একটু বেশিই সংক্ষিপ্ত হয়ে গেল।
অট: জাপানি ভূত নিয়ে আপনার লেখার কথা না? কবে ছাড়ছেন? আশায় আশায় আছি শিগগিরই পাব।
কুটুমবাড়ি
লীলেন্দা, মনে হয় এইটা ভূতের আসর! নয়তো নিজের নাম লিখতে ভুলে গেলাম ক্যামনে।
সংক্ষেপে হলেও বর্ণনা খুবই হৃদয়গ্রাহী। খুবই ভাল লাগেছে।
অমিত্রাক্ষর
অমিত্রাক্ষর@জিমেইল ডট কম
আপনার চমৎকার মন্তব্যটি পেয়ে উৎসাহিত বোধ করছি। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকুন।
কুটুমবাড়ি
ভাল লাগল
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
ধন্যবাদ, নিবিড় ভাই।
কুটুমবাড়ি
তার মানে ভুতের সাথে প্রেম করতে হইলে ভুত হইতে হবে। তাইলে তো খেলুম না। গল্প ভাল্লাগছে।
অনন্ত
না খেলাই ভালো। গল্পেও তো আছে এই লাইনটা : মৃতদের সাথে ফষ্টিনষ্টি না করাই ভালো। নেহায়েতই ভূতের সাথে প্রেম কর্তে চাইলে গুণিন হবার চেষ্টা করে দেখতে পারেন। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
কুটুমবাড়ি
কুটুমবাড়ি, আমি জানি না আপনি গল্পটি মূল জাপানীজ থেকে অনুবাদ করেছেন নাকি ইংরেজী থেকে। তবে যে ভাষা থেকেই করে থাকুননা কেন আমার কাছে বাংলা অনুবাদটি বেশ আড়ষ্ট লেগেছে।
পরদিন সে ওগিয়ারার মুখোমুখি হলো, একজন বৌদ্ধ পুরোহিতকে সাথে নিয়ে, যে আত্মার সম্মুখীন হওয়ার বিপদ সম্পর্কে তাকে সাবধান করে দিয়েছিল।
আপনি যদি বাংলায় মৌলিক কোনো গল্প লিখতেন তাহলে এমন বাক্য কি লিখতেন?
যাকগে, মৌলিক হোক আর অনুবাদ হোক লেখালেখি চালিয়ে যান, সেটাই জরুরী।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পান্ডবদা, মন্তব্যের জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
গল্পটি মূল জাপানিজ থেকে নয় ইংরেজি ভার্সন থেকে অনুবাদ করা। আপনি যে উদ্ধৃতিটি দিয়েছেন সেটিসহ আরও দু-একটি বাক্য নিয়ে আমিও একটু দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম। ভবিষ্যতে আরও সতর্ক হব আশা করছি।
লেখায় ভুল-ত্রুটি বা অসঙ্গতি পেলে ভবিষ্যতেও এভাবে ধরিয়ে দেবেন এই আশাবাদ জানিয়ে রাখলাম এই সুযোগে। ভালো থাকবেন।
কুটুমবাড়ি
নতুন মন্তব্য করুন