সভ্যতা চিনবে বলে আদিম একটি নর
গুহার আশ্রয় কিম্বা আরণ্যক ভিটে
ছেড়ে পা বাড়ালো পৃথিবীর দিগন্তের পথে
ব্যাক-প্যাক, হ্যাভার স্যাক নেই পিঠে
নির্জলা জিগীষা শুধু করে আছে ভর
তার খুলির ভেতর।
সময়ের ঘোড়া চেপে পেরুয় সে কালের চাতাল
তখন প্রভাত আলোর হামাগুড়ি নাবাল
জমিনের উপর, অরণ্যের পথে।
এখানে রক্ত কেন? অগ্রযাত্রার এই রথে?
এখানে ঘাসের শিশির কেন ধরে আছে
অশ্রুবিন্দুর মতো নোনা ঘাম? অতশত না বুঝেই
সে বেরিয়ে পরে বনস্পতির সীমানা ছেড়ে
নগ্নপায়ে চেপে সময়ের রথে
পৌঁছুলো সুসভ্য এক দেশে
জানলো, সভ্যতার চাষ হয়েছে সেখানে তিনশ’ বছর
তিনশ ফেরিওয়ালা সে ফসল বিমূঢ় জনপদ জুড়ে
ঘুরে ঘুরে
ফেরি করেছে বেনিয়ার বেশে
নির্লোভ কায়ক্লেশে ?
সন্ধ্যায় পাখিদের ঝুমঝুমি কোলাহল শেষে
অদ্ভুত আঁধার যখন পৃথিবীতে নেমে আসে
কালো কাফনের বেশে
তার খানিকটা সময় আগে
সে প্রবেশ করে ফ্যারাও, চেঙ্গিস, তৈমুরের দেশে
এখানে নীরবতা কেন প্রস্তর কঠিন?
নিষ্ঠুর কৃপাণের গায়ে লেগে আছে
বেতের ফলের মতো, কোন বিষন্ন বেদনার বীণ
কেন পাখি নেই কোন কুসুমবাগে ?
এতসব জানার আগেই দ্রুতরথে
বিশ্বযুদ্ধ, স্বাধীনতা, মানব-মুক্তি, সাম্যবাদ, পুঁজি, গণতন্ত্র
ইত্যকার শব্দের সাথে পরিচিতি পর্ব সেরে
কোল্ডওয়ারের হিম কিম্বা সন্ত্রাসের বারুদগন্ধী বাতাস
গায়ে মেখে কিম্বা না মেখেই
সে এসে দাঁড়ালো ত্রস্তপায়ে, আমাদের এই সময়ে
যেখানে বিশ্বায়ণ মোহনীয় ময়ূরীর মতো মেলেছে পেখম
বিস্মিত চোখ তার আটকে যায় প্রাযুক্তিক ভার্চুয়াল ইমেজে
কাঁটাতারের ব্যবসায়ীকে বলছেন একজন ঠিকেদার
"মামু, ব্যবসাটা গুটিয়ে ফেলুন, শুনছি বিয়োন্ড দ্য বর্ডার
থাকবেনা কোন কাঁটাতার"।
ছেঁড়া পালে পত পত শব্দ তুলছে হাওয়া
গলা সেধে নাও হে তিস্তাপারের মাঝি
ভাটিয়ালী গাইতে হবে ভলগার বাঁকে
তৃষ্ণা ভুলে একজন সুদানী লোলচর্ম বৃদ্ধ
দেখেন অলৌকিক বানভাসি সাহারায়;
একজন সাহিত্যের ছাত্র তার আঁকিয়ে বন্ধুর কাঁধে হাত রেখে বলে,
"দেখিস এবার বিল ক্লিনটন সবিনয়ে করবেন প্রেম নিবেদন
কাদম্বরী দেবীকে।"
"ঠিক বলেছিস, তাহলে তো আঁকা যায় জয়নুলী কাক
রেমব্রান্ডের তুলিতে।"
মারা নদীর তীরে 'গ্রান্ড ওয়াইল্ড বিষ্ট মাইগ্রেশন' দেখতে আসা
মোজার্ত ও বিটোফেন ভায়োলিন হাতে বলে উঠেন
"চলো, এবার পাহাড়ী সুরে বোল তুলি মাসাই পল্লীতে"
একজন আদম ব্যাপারী মাথা চুলকান,
"ব্রিটেনের রাজপ্রাসাদে হবে নাকি চামুন্ডার কীর্তনমেলা"
একজন সংশয়বাদী বুদ্ধিজীবি মন্ত্রপাঠ করেন তাঁর গুটিকয় চেলার কানে,
"পৃথিবীটা পরিণতঃ হবে বিকিকিনির বিশাল বাজারে",
সেই শুনে লোভে চিক চিক দুজন নারী পাচারকারীর চোখ।
শিকারের গান ভুলে হাঁপিয়ে উঠে হিংস্র হাঙ্গর এক
বেজায় গরম পড়েছে ইদানিং অতলান্তিকের গভীরে
একটা হাতপাখা না হলে আর চলছে না
পারমানবিক বর্জ্য ঠেলে আনা জাহাজের ক্যাপ্টেন লিখছেন
ক্ষেপণাস্ত্র-বিশেষজ্ঞ বাল্যবন্ধুর পাঠানো ই-মেলের উত্তর,
"যেভাবে একের পর এক ফাটাচ্ছিস পাতালে, এই এলো বুঝি বিশাল সুনামী
তোর হতচ্ছাড়া কান্ড দেখে ভাবি
আদিম গুহাই বুঝি এ মুহূর্তে সবচেয়ে দামী।"
প্লেনারি সেশন শেষে আদিম গুহায় আবার সে যায় বুঝি ফিরে
ফিনিক্স পাখির মতো চোখ তার মেঘের ডানায় ওড়ে
রেখে যায় আশা-আঁকা মন, পৃথিবীর ঘাসের শিশিরে
আবার আসিব ফিরে, কোন এক সোনারোদ ভোরে ।
রোমেল চৌধুরী
মন্তব্য
ভাল লাগল।
শুভকামনা।
আপনাকে ধন্যবাদ
রোমেল চৌধুরী
কবিতাটা পড়ে অনেক ভাল লাগল।
সুন্দর একটা কবিতা।
অনেক কথা বলার চেষ্টা করছে যেন।
--------------------------
> ভূঁতের বাচ্চা
ধৈর্য ধরে দীর্ঘ লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। কবিতাকে শ্লোগানকেন্দ্রিক করে তোলার বিপক্ষে আমি, তবুও মগ্ন চৈতন্যে শিস দিয়ে যাওয়া অনেক কথাই হয়ত হৃদকলমের টানে আত্মার অনিবার্য শ্লোগানে পরিনত হয় কখনো কখনো।
রোমেল চৌধুরী
লেখার ভঙ্গিমা ভাল লাগল। বিশ্বায়ন-প্রবেশের পরের অভিজ্ঞতাগুলোর চিত্রায়ন ভাল হয়েছে। দীর্ঘ হলেও ক্লান্তি-জাগানিয়া নয়।
ফারাবী ভাই,
আপনাকে ধন্যবাদ! জীবন আমাদের বাচার ছন্দে যখন দোলা শেখায় তখন সাইবেরিয়ায় নির্বাসিত সলঝেতসিনের মতো 'সোনারোদ ভোর'ই একমাত্র কাম্য হিসেবে আশার আলো জাগানিয়া হয়ে ভরসার আশ্রয়স্থল হয়ে উঠে!
রোমেল চৌধুরী
নতুন মন্তব্য করুন