ঠেলাওয়ালার গান

রোমেল চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন রোমেল চৌধুরী [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ২২/১০/২০১০ - ৮:৩১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সূর্যের তাপে ঘামে ভিজে দেহ ক্লান্তিতে পড়ে নুয়ে
মধ্য দুপুরে ঠেলা ঠেলে নিয়ে চলেছি এ পথ দিয়ে
সামনে আমি হাতা ধরে টানি পেছনে কিশোর ছেলে
গাড়ী সাইকেল রিক্সা পেরয় আমাদের পাছে ফেলে

রাজপথে জ্বলে লাল রঙ বাতি দু’দন্ড থামতে হয়
যন্ত্রের মতো ব্রেক চেপে থামা আমার কি শোভা পায়?
তবু ঘাম মুছে গতির লাগাম দুই পায়ে চেপে রাখি
ট্রাফিক পুলিশ রক্তচক্ষু আমি ভয়ে ভয়ে কাঁপি

কত বাসা-বাড়ী বদলী হলো, কত মন হলো ধু ধু
পিচ ঢালা পথ পায়ের তলায় ফোস্কা ফোটালো শুধু
সব সহে গেছি কষ্টের সাথে সাহস ধরেছি বুকে
নাকি জোয়ালের গরুর মতোই ঘানি ঠেলে গেছি দুখে

ছেলেটি আমার বড়ই ন্যাওটা ইশকুলে যাবে না
বাপজান তোর কাছ ছাড়া হলে কিছু ভালো লাগে না
ঠেলা ঠেলে ঠেলে কাটুক জীবন এই বুঝি ঢের ভালো
কি হবে মোদের শিক্ষিত হয়ে, আসবে কি তাতে আলো?

রোমেল চৌধুরী


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

রোমেল ভাই, আরেকটা চমৎকার ছড়া। শব্দচয়ন 'অচল আনি'র তুলনায় বেশ সহজবোধ্য তবে ছন্দটা অতি সামান্য একটু স্লিক করেছে দু'এক জায়গায়। নো ম্যাটার।

ঠেলা ঠেলে ঠেলে কাটুক জীবন এই বুঝি ঢের ভালো
কি হবে মোদের শিক্ষিত হয়ে, আসবে কি তাতে আলো?

আমাদের সামনে কিন্তু এটা একটা বাস্তবতা। ৬-৭টা পেটের একটা সংসারে দিনমজুর বাবা আর বাসাবাড়ির বুয়া মায়ের উপার্জন যখন কোনমতেই কুলোতে পারে না তখন কিন্তু সংসারের বড় শিশুটা ওদের পাশে এসে দাঁড়ায়, এভাবে ক্রমশ মেজোটা, তারপর ................ এভাবেই। আমাদের দেশের একটা বড় অংশ জনগোষ্ঠীর ফুড সিকিউরিটিতে শিশুশ্রমের অবদান আছে। আইন করে শিশুশ্রম ব্যান করলে তার কিছু নেতিবাচক প্রভার অবশ্যই সমাজে পড়বে।

শিশুশিক্ষা অবৈতনিক বাধ্যতামূলক করলেও সমস্যার সমাধান আসবে না যদি কি না কিছু ইনসেনটিভ না দেয়া হয় ওই কর্মজীবি শিশুগুলোকে।

বাংলাদেশ লেবার ল'তে শিশুশ্রম ক্লাসিফাই করা আছে। তবে লেবার ডিপার্টমেন্টের লোকজন ওগুলো নিয়ে ব্যবসা করে। আমাদের পারিবারিক ব্যবসায় কিছু শিশুকিশোর শ্রমিক ছিলো, এখনও আছে। ওরা অঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে। ওরা মূলতঃ আমাদের পুরানো শ্রমিকদেরই সন্তান। ওদের মধ্যে যারা পড়ে, আমরা তাদেরকে মাঝে মাঝে হিসেব ছাড়া কিছু টাকা-পয়সা দেই বই কিনতে বা অন্যান্য প্রয়োজনে। মাঝে মাঝে লেবার ডিপার্টমেন্ট থেকে লোক আসে, আমাদের হুমকি-ধামকি দিয়ে যায় ওদেরকে ফায়ার করার জন্যে, ফাইন করে দিয়ে যায়। আমরা ফাইন দিয়ে দেই কিন্তু ওদের ফায়ার করিনা। ওদের ফায়ার করে দিলে সরকার কখোনোই এসে ওদের মুখে ভাত তুলে দেবেনা।

হাজার প্রতিবন্ধকতা ও হতাশার মাঝেও আমরা আলো দেখতে চাই। কিছুটা উদ্যোগ প্রয়োজন। আমার কিছু বন্ধু উদ্যোগ নিয়েছে। ওরা এর মধ্যেই একটা শিশুকে আইটি এ্যাপ্লিকেশনে বেশ দক্ষ করে তুলেছে। শিশুটা দু বছর চা বানানোর চাকরীর পাশাপাশি আইটি প্রশিক্ষণ পেয়ে এখন স্থানীয় বাজারেই ২০,০০০ টাকা বেতনের চাকরির অফার পাচ্ছে। ওদের ইচ্ছে আছে এখন থেকে নিয়মিত কিছু শ্রমজীবি শিশুকে প্রয়োজনী আইটি প্রশিক্ষণ দিয়ে বিদেশী আইটি প্রতিষ্ঠানগুলোর আউটসোর্সিং পুল-এ এনরোলড করে দেবে। বিত্তবানেরা এক একটা শিশুর জন্যে স্পন্সর করবেন একটা মাসিক টাকা দিয়ে, পরিমান খুব বেশি না অবশ্য।

রাতঃস্মরণীয়

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই,
দামী এসেন্সের মতো আপনার মন্তব্য আমাকে সুরভিত করে। বিষয়বস্তুর সিরিয়াস ভাবটি ফোটানোর জন্য ৬+৬+৬+২ চালের মাত্রাবৃত্তের আশ্রয় নিতে হয়েছে, হয়তো অক্ষরবৃত্তে তা আরো ভাবগম্ভীরতা পেতো। মাত্রাবৃত্তের ক্ষেত্রে শব্দে কোলজড সিলেবল আর মুক্ত সিলেবল যাই যাক অক্ষর গুণে গুণে মাত্রা হবে, তাইতো? ঋ-কার কিংবা র ফলাতে তে কোন অতিরিক্ত মাত্রা হবে না। ঠিক ধরেছেন, মাঝে মাঝে শব্দচয়নে একটু হিসেবী হতে গিয়ে মাত্রাফেরের কলঙ্ক রেখে দিতে হয়েছে, যেমনঃ
রাজপথে জ্বলে (৬) লাল রঙ বাতি (৬) দু’দন্ড থামতে (৭) হয় (২)
এমনটি লেখা যেতঃ
রাজপথে জ্বলে (৬) লাল রঙ বাতি (৬) খানিক থামতে (৬) হয় (২)
তবে দু'দন্ড শব্দটি মনে ধরে গেল, নাই একটু মাত্রাফেরের ছাড় নিলাম। আপনি পাকা জহুরী, ধরে ফেললেন।

দীনজনের কষ্ট আপনাকে যে শুধু পীড়িতই করে না বরং যুদ্ধে যাবার শপথে উদ্দীপিত করে জেনে ভালো লাগলো। আপনার প্রতি শুভকামনা।
রোমেল চৌধুরী

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনি আমার কাব্যবোধকে অন্যায্যভাবে সন্মানিত করলেন রোমেল ভাই। আমি মাত্রবৃত্ত বা অক্ষরবৃত্ত শব্দুদটো শুনেছি বন্ধুদের কাছ থেকে কিন্তু বাস্তবে একটুও জানিনা যে ওদুটোর রহস্য কি। শুধু জানি ওদুটো ছন্দের প্রকারভেদ। তবে সত্যি কথা, পড়তে যেয়ে আমার দুএকটা জায়গায় একটা স্বরের ফাঁক মনে হয়েছে। যেমন-

কত বাসা-বাড়ী বদলী হলো, কত মন হলো ধু ধু

এখানে একটা স্বরের গ্যপ মনে হচ্ছে। এমনটা হলে বেশ হতো মনে হয়-

কত বাসা-বাড়ী বদলী যে হলো, কত মন হলো ধু ধু অথবা
কত বাসা-বাড়ী বদলী হলো যে, কত মন হলো ধু ধু

এই দুটো লাইনেও একটা করে স্বরের শর্টেজ মনে হলো-

ছেলেটি আমার বড়ই ন্যাওটা ইশকুলে যাবে না
বাপজান তোর কাছ ছাড়া হলে কিছু ভালো লাগে না

আরও লিখতে থাকেন ভাই। শুভকামনা থাকবে সমসময়ে। সময়-সূযোগ পেলে আমার কাব্যচর্চার দুটো ব্যার্থ প্রয়াস, এই সচলে বন্ধু এবং প্রেম পড়ে দেখতে পারেন। বন্ধুতে ফরম্যাটিংএর গোলমাল আছে। নিচে মন্তব্যে আসল ফরম্যাটিংএ দিয়েছি আবার।

রাতঃস্মরণীয়

অতিথি লেখক এর ছবি

এই তিনটে স্থানেই মাত্রাফের হয়েছে, দু'জায়গায় এক মাত্রা করে কম, এক জায়গায় এক মাত্রা বেশী। তাই আপনার কাব্যবোধকে অন্যায্যভাবে নয়, বরং যথার্থই কবুল করেছি।

আপনার 'বন্ধু' ও 'প্রেম' পড়লাম। বাগদেবী ভালোই বাজিয়েছে আপনাকে!

রোমেল চৌধুরী

ফারাবী [অতিথি] এর ছবি

ছড়া ভাল লাগল। ছন্দপতন কিছু টের পাইনি। শেষটা যদিও মনে হল বিনা নোটিশে চলে এল। ঠেলাওয়ালা বা তার ছেলের কথা নাই বা বললাম আর, বলে-লিখে এসবের কিছু হবে কিনা সন্দেহ জাগে এখন। ভাল থাকবেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

ফারাবী ভাই,
ধৈর্য্য ধরে লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। তিন জায়গায় মাত্রাফের আছে, বের করুন তো! ভালো থাকবেন!
রোমেল চৌধুরী

কৌস্তুভ এর ছবি

এই সেরেছে, কবিতা পড়লে আবার পরীক্ষাও নেবেন! কি কাণ্ড!

কৌস্তুভ এর ছবি

রোমেল ভাই, রাতঃস্মরণীয় ভাইয়ের কমেন্টটার সাপেক্ষে বলি, এই সিরিয়াস বিষয়ের কবিতাটাকে ছড়া বলতে কেমন জানি লাগছে, ছড়া একটু লঘু, মজার বিষয়কেই বলতে অভ্যস্ত আমি।

তাই বলি, আপনার এবারের ছড়া না, কবিতাটা যেন খুব একটা জমল না। মূলত কিছু কিছু জায়গায় যে শব্দগুলো ভাব বোঝাতে ব্যবহার করেছেন সেগুলোতেই যেন ঠিক খুলছে না।

আপনার কাছ থেকে অনেক ভাল কবিতা পেতে চাই।

অতিথি লেখক এর ছবি

কৌস্তুভ ভাই,
নিজের কবিতা সম্পর্কে ফেদেরিকো গার্থিয়া লোরকা বলেছিলেন,
"একমাত্র যে বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারবো না তা হলো আমার কবিতা।"
কবিতার মায়াবী জ্যোৎস্নাকে বুদ্ধিবাদী নিক্তিতে মাপা হবে - জগৎ ও জীবনের এটাই তো অনিবার্য নীতি। সে বিচার মেনে নিতে চাই নির্বিকার, হয়ত মিলবে আখেরে, উত্তরণ আরবার।
রোমেল চৌধুরী

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।