০১
মিজানুর রহমান চলে গেছেন। আমি জানতাম তিনি চলে যাবেন। কারণ তিনি যে বড় অন্যায় করেছেন। তিনি এক অবলা জাতির প্রতি দরদ দেখিয়েছেন। আরে ওরা কি আমাদের মত নাকি। তাদের দিকে দূর থেকে ঢিল ছুড়তে হয়, ভেংচি কাটতে হয়। এতেও মজা না পেলে ধরে নিয়ে কিছু একটা কর, তোমার যা ইচ্ছে। কেও কিচ্ছু বলবেনা। বলবে কেন? ওরা যে মেয়ে। মিজানুর রহমান এটাই বুঝেননি। হয়ত বুঝেননি কারণ তারও ছোট্ট এক মেয়ে আছে। হুমম, মেয়ে।
০২
বেশ কিছুদিন আগে লিখেছিলাম এই কবিতাটি। এর কোনো শিরোনাম নেই।
রহমান সাহেব যখন তার মেয়েকে নিয়ে বাসা থেকে বের হন
তখন আমিও তার সাথে সাথে যাই।
সাথে আরো অনেক গুলো আমার মত আমিই থাকে।
আমি আর আমার সেই অনেক গুলো আমি মিলে দলবেধে হেঁটে তাকে স্কুলে পৌছে দিই।
ফেরার পথেও আমরা তাদের সংগ দেই।
হয়ত তিনি এটা পছন্দ করেন না,
কিন্তু সেটা আমাদের জন্য বিবেচ্য নয়।
আমরা একে দায়িত্ব হিসেবে নিয়েছি।
আমরা তাকে আমাদের ভাষা শেখাবো।
হে মেয়ে কেঁদোনা,
অবহেললিত হতে হতে জানি তুমি ক্লান্ত
জানি তুমি পালাবার পথ খুজে খুজে হয়রান
কিন্তু জেনে রেখো আমরা তোমাকে অক্লান্ত ভাবে সংগ দিয়ে যাব
তোমাকে আমাদের ভাষা শেখানোর জন্য
যতদিন না তুমি উড়ে যাও ততদিন
তারপর হয়ত শেখাবো নতুন কোনো পাখিকে।
হ্যা, পাখিকে।
তুমি হয়ত জাননা মানুষ শব্দটা আমাদের ভাষায় নেই।
০৩
এভাবে পাখিরা চলে যাচ্ছে, যাবে। এখন মিজানুর রহমানরাও যেতে শুরু করেছেন। তারপর?
কিছু বেলা কিছু প্রলাপ উড়বে ফুলের গায়ে,
তারপর সব হারিয়ে যাবে প্রিয় হৃদয় মাঝে।
কিছু আশা কিছু স্বপ্ন ভাসবে নিলাকাশে,
তারপর সবই ভুলে যাবে কালো মেঘের ভাঝে।
যাদের আজ পাশে দাঁড়ানোর কথা তারা আজ বড় ব্যস্ত। কারণ তাদের আঁখের গোছানো এখনো শেষ হয় নি।
তবে এভাবে যেতে যেতে কি অমানুষরাই থেকে যাবে?
০৪
আমি শঙ্কিত নই, আমি ভীত নই। আমি ক্রুদ্ধ, আমি ক্ষুব্ধ। আমি সেই সব অমানুষদের বিচার চাই বজ্র কঠিন হাতে। তার আগে আমি ঘুমাবোনা। আমি আরেকটা মিজানুর হব কিন্তু আমি থামব না। হায়েনা না তাড়িয়ে, আমি উঠোন ছাড়ছি না।।
উৎসর্গঃ
যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন যে সকল নারীরা। একই সাথে বিনম্র শ্রদ্ধা মিজানুর রহমানের মত সাহসি বীরদের প্রতি।
পুনশ্চঃ
আমাদের দেশে নারীদের প্রতি যৌন হয়রানিকে ইভ টিজিং নামক শব্দ দিয়ে বোঝানো হয়। ইভ টিজিং শব্দটা অনেকটা রোমান্টিক ধাঁচের। এই শব্দের মাধ্যমে পুরো ব্যাপারটিকে একটা হালকা রসিকতার পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পৃথিবীর কোথাও এই ধরনের রসিকতা করা হয় না। নারীদের প্রতি পুরুষ রূপি পশুরা যে আচরণ করে তা পুরোপুরি যৌন হয়রানি। একারণে আমি যৌন হয়রানি শব্দটি ব্যবহার করেছি।
===============
অনন্ত
অনন্ত অ্যাট ইয়াহু ডট কম
মন্তব্য
পূর্ণ সমর্থন।
ধন্যবাদ পিপিদা।
অনন্ত
পাঁচ দেয়ার ক্ষমতা নেই, থাকলে দিয়ে যেতাম। এই ব্যাপারটা নিয়ে আমি এতটাই হতাশ যে এখন কথা বলতেও ক্লান্ত লাগে। আপনার লেখা খুবিই ভালো লাগলো। আরেকটা কথা যোগ করি, মেয়েদেরও অনেক সচেতন হওয়া দরকার। সবচেয়ে বেশি দুঃক্ষ লাগে যখন দেখি মেয়েরাই হাসি-ঠাট্টা করে উড়িয়ে দিচ্ছে। আজকেই ইউনিভারসিটিতে দেখলাম এক কোনায় একটা মাঝারি পোস্টার, কোন ব্যাপারগুলা যৌন হয়রানির আওতাভুক্ত সেই সম্পর্কে। সেটা দেখে আমার এক বান্ধবী মন্তব্য করলো, "এই ব্যাপারগুলা এত ইন্টারেস্টিং! পড়তে খুবিই মজা লাগে আর এত হাসি পায়!"
অনেক ধন্যবাদ নুসদিন।
আসলে আমাদের দেশের যে রাজনীতিক বাস্তবতা তাতে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে পুরো সমাজের সচেতনতা ছাড়া এই ধরণের অপরাধ দূর হবে না।
অনন্ত
অসাধারণ অনন্ত।
----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
সচল জাহিদ ব্লগস্পট
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
অনেক ধন্যবাদ জাহিদ ভাই।
অনন্ত
শুনতে অনেক খারাপ লাগলেও আমি বলছিঃ খুব সম্ভবত এর কোন বিচার হবে না।সরকার দল বলবে এটা বিরোধীদলের একটা ষড়যন্ত্র ছিল।বিরোধীদলীয়রা বলবে সরকার এটা করে তাদের ঘাড়ে দোষ চাপাতে চেয়েছে।এটা একটা চক্রান্ত ছিল।বিশেষ গোষ্ঠী বলবে, দোষটাতো ঐসব মেয়েদের।তারা অশালীন পোষাক পরে ঘুরবে কেন??বোরকা পরবে।শরীর দেখালে তো ছেলেরা এমন করবেই। ছেলেদের কী দোষ এতে??আবার কেউ হয়তো বলেই বসবেনঃ কে এই মিজানুর?? আমরা আজ এমন করছি, শোক দেখাচ্ছি।কারণ পুরোপুরি অমানুষ হতে পারিনি।কিন্তু সেই পথ ধরেই আগাচ্ছি।কয়েকদিন বাদে কাজের চাপে ভুলেই যাবে এক মিজানুরের আত্মত্যাগ।
এটাই খুব দুঃখজনক যে, মানুষ ভুলে যাবে যতক্ষণ না আরেক মিজানুর আত্মত্যাগ করে। এটা আমি লিখেছি আমার হতাশা আর আবেগ থেকে। তবে যেটা আশার ব্যাপার তা হল, যদি আমরা অনবরত লিখে যাই তবে মানুষের ভিতরে একদিন সচেতনতা আসবেই। তাই আমি হতাশা থেকে লিখলেও আশাবাদি হয়ে উঠি।
মন্তব্যের জন্য দেবাশিস মুখার্জি।
অনন্ত
আজ টিভিতে মিজান সাহেবে জানাজা দেখলাম, হাজারো মানুষের অংশগ্রহন সেখানে। এই সাহসী মানুষটার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা।
পূর্ণ সহমত আপনার লেখায়।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
অনেক ধন্যবাদ তাসনীম ভাই।
অনন্ত
কিছু বলার ভাষা নেই। ইভ টিজিং এর স্বীকার হয়ে কতো মেয়ে যে অকালে ঝরে পড়বে, আর মিজানুর রহমানের মতো কতো প্রতিবাদী শিক্ষকও যে হারিয়ে যাবেন, তা কেউ জানেনা। তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। তার আত্মা চিরশান্তিতে থাকুক।
রাতঃস্মরণীয়
মিজানুর রহমান একটি প্রতিক যে আমাদের আলো দিবে, এভাবে যুদ্ধ করেই অধিকার আদায় করতে হবে।
ধন্যবাদ রাতঃস্মরণীয়।
অনন্ত
-----------------------------------------------------------------------------------
...সময়ের ধাওয়া করা ফেরারীর হাত থিকা যেহেতু রক্ষা পামুনা, তাইলে চলো ধাওয়া কইরা উল্টা তারেই দৌড়ের উপরে রাখি...
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
আজ দেখলাম প্রধানমন্ত্রী নিহত মিজানুর রহমানের বিধবা স্ত্রীর চাকুরীর দায়িত্ব নিয়েছেন, যা একটি ভাল কাজ। কিন্তু এধরনের চাকুরি থেকে আসলে প্রয়োজন হচ্ছে সমস্যা অনুধাবন করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি নিশ্চিত করা। এই লেখাটি পড়ে দেখতে পারেন।
দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি আর একই সাথে দরকার মানুষের সচেতনতা। আপনার লিঙ্কটা পড়েছি। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
অনন্ত
স্যারের প্রতি শ্রদ্ধা।
আপনার লেখায় পূর্ণ সমর্থন। কবে যে আমরা মানুষের মতো মানুষ হবো।
অনেক ধন্যবাদ শান্ত।
অনন্ত
'বিনম্র শ্রদ্ধা মিজানুর রহমানের মত সাহসি বীরদের প্রতি।'
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ধন্যবাদ তিথীডোর।
আর বিনম্র শ্রদ্ধা মিজানুর রহমানের মত সাহসি বীরদের প্রতি।
অনন্ত
বিষয়টা নিয়ে বলার আগে একটু কবিতা নিয়ে বলি। ২ নম্বরটা অসাধারণ লেগেছে, কবিতার কথ্যভংগিটা অন্যরকম লাগল। পড়তে পড়তে আততায়ী ছায়াগুলো যেন ছুঁতে পাওয়া যায়।
মিজানুর রহমান- আসলেও কি বোকা। খেয়েদেয়ে কাজ নেই গেলেন বখাটেদের শায়েস্তা করতে। আমাদের চতুর সমাজ এসব বোকাদের প্রশ্রয় দেয় না, আমাদের আধাঁখেচড়া দেশ এসব ছোটখাট 'ভুল' ধর্তব্যেও আনে না। মিজানুররা যায় আসে, তাতে কার কি যায়-আসে?
বোকা মিজানুরের কবরে বোকা গোলাপেরা পড়ে থাকুক, পড়ে থাকুক কিছু বোকা বোকা কথা। আর কিছু বেমানান জ্বলন্ত চিঠি।
তারপরও আমি আশায় থাকি অগনিত এই বোকাদের ভিড়ে অমানুষ গুলো সব হারিয়ে যাবে।
আর কবিতা নিয়ে মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
অনন্ত
ভার্চুয়াল পাঁচ তারা!
=================================
"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে
ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি
মানুষ দেখি না।।"
=================================
"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে
ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি
মানুষ দেখি না।।"
ধন্যবাদ কাজী মামুন।
অনন্ত
বিনম্র শ্রদ্ধা মিজানুর রহমানের প্রতি।
------------------------
হামিদা আখতার
নতুন মন্তব্য করুন