[আগ্রহীদের জন্যে আগের দুটি পর্বের সংযোগ (ব্রাজিলে ফাইনম্যান-১ ও ২), তবে সেগুলো পড়া না পড়া থাকলেও এ পর্বের রসাস্বাদনে ব্যাঘাত ঘটবে না বোধ করি।]
ডিসক্লেইমার: রচনাটি খই ভাজার আনন্দে অনুবাদিত, ফলে ফাইনম্যানের মচমচে লেখাটির (সিওরলি ইউ আর জোকিং, মি. ফাইনম্যান) চতুর্বর্গের ফিল্টারে পরিস্রুত হয়ে সেই ফাইন স্বাদ হারানোর সমধিক সম্ভাবনা বিদ্যমান, এই সতর্কবার্তা জানিয়ে ব্রাজিলে ফাইনম্যানের কিচ্ছার সমাপ্তিসূচক পর্ব সূচনা করছি।
শিক্ষাবর্ষের শেষে ছাত্ররা আমাকে ব্রাজিলে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বক্তব্য প্রদানের অনুরোধ করল। ঐ বক্তৃতানুষ্ঠানে কেবল ছাত্ররাই থাকবে না, বরং শিক্ষক ও সরকারী কর্মকর্তারাও উপস্থিত থাকবেন। আমি তাদের বললাম আমায় মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিলে তবেই বক্তৃতা করতে পারি, নইলে নয়। ছাত্ররা বলল, “নিশ্চয়ই স্যার। আপনি মন খুলে কথা বলবেন।”
তো আমি বক্তৃতা করতে গেলাম, সাথে করে নিয়ে গেলাম কলেজের প্রথম বর্ষের প্রাথমিক পদার্থবিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তকটি। ব্রাজিলীয়রা বইটিকে বিশেষ রকমের ভালো মনে করত, কারণ এতে বিভিন্ন রকমের টাইপফেস ব্যবহৃত হয়েছিল—গাঢ় কালো অক্ষরে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো লেখা হয়েছিল, আর হালকা অক্ষরে কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি ইত্যাদি।
আমার হাতে বইটি দেখে একজন বলল, “আপনি নিশ্চয় এই বইয়ের সমালোচনা করতে যাচ্ছেন না, নাকি? বইয়ের লেখক সভাস্থলে উপস্থিত আছেন আর আমরা সবাই বইটিকে আদর্শ পাঠ্যপুস্তক হিসেবে বিবেচনা করি।”
“কিন্তু তোমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলে যে আমি স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারব।”
লেকচার হলে তিল ঠাঁই আর নাহি রে অবস্থা। বিজ্ঞানকে প্রকৃতির আচরণ অনুধাবনের মাধ্যম আখ্যা দিয়ে আমি বক্তব্য শুরু করলাম। তারপর দর্শকদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করলাম, “বিজ্ঞান শিক্ষার গুরুত্ব কী? উত্তরটা অবশ্য আমরা সবাই জানি। বিজ্ঞান চর্চা ব্যতীত কোন জাতি সভ্যতার শিখরে আরোহণ করতে পারে না.....ভদর ভদর ভদর।” দর্শক সারির সবাই ঘন ঘন শিরশ্চালন করে আমার কথার সাথে ঐক্যমত পোষণ করছিল, আমি তাদের চিন্তাভাবনার ধরণটা খুব ভালোভাবেই পড়তে পেরেছিলাম।
তারপর পরই আমি বললাম, “আর এভাবে চিন্তা করাটা নেহায়েতই বেয়াকুফি, কারণ কেন আমরা অহেতুক অন্যান্য দেশের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে চাইব? এর জন্যে অবশ্যই যথোপযুক্ত কারণ থাকতে হবে, অন্যান্য দেশকে অন্ধের মত অনুসরণ করাটা তো কাজের কথা নয়।” এরপর আমি বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা আর মানবজাতির উন্নয়নে এর ভূমিকা নিয়ে আরও কিছুক্ষণ ত্যানা পেচিয়ে শ্রোতাদের কিঞ্চিত বিরক্ত করলাম।
অবশেষ আমি ঘোষণা দিলাম, “আমার আজকের বক্তৃতার প্রকৃত উদ্দেশ্য এটা দেখানো যে ব্রাজিলে প্রকৃতপক্ষে বিজ্ঞানের কিছুই শেখানো হয় না!”
উপস্থিত লোকজন এবার নড়েচড়ে বসল - স্তম্ভিত, ভাবছে, “বলিস কীরে গোলাম হোসেন! বিজ্ঞান শেখানো হয় না মানে? দিনরাত এত এত ক্লাসে তাহলে হচ্ছেটা কী!”
তো আমি তাদের ব্যাপারটা বুঝিয়ে বললাম। আমি যখন ব্রাজিলে আসি তখন যে ব্যাপারটা আমাকে মুগ্ধ করেছিল তা হচ্ছে প্রাইমারি স্কুলের ছেলেমেয়েদের বইয়ের দোকানে হুমড়ি খেয়ে পদার্থবিজ্ঞানের বই কেনার দৃশ্য। ব্রাজিলের এত বাচ্চাকাচ্চা পদার্থবিজ্ঞান শিখছে আর আমেরিকার ছেলেমেয়েদের চেয়ে বহু আগে তা শুরু করছে, কিন্তু কেন ব্রাজিলে পদার্থবিজ্ঞানীর এত সংকট? এত এত ছেলেমেয়ে কঠোর পরিশ্রম করছে, কিন্তু ফলাফল লবডঙ্কা!
আমি তাদের এক গ্রিক পন্ডিতের গল্প শোনালাম, যিনি গ্রিক ভাষা ভালোবাসতেন। তার দেশে খুব বেশি ছেলেমেয়ে গ্রিক শিখতো না, কিন্তু এক ভিনদেশে বেড়াতে গিয়ে তিনি দেখলেন ছেলেবুড়ো সবার মুখে গ্রিক বুলি—এমনকি প্রাইমারি স্কুলের কচিকাঁচারাও গ্রিক কয়। সব দেখে শুনে, প্রীত ও চমৎকৃত হয়ে পন্ডিতমশাই গ্রিকে ডিগ্রিপ্রত্যাশী এক ছাত্রের গ্রিকজ্ঞান বাজিয়ে দেখার দায়িত্ব নিলেন। তিনি ছাত্রটিকে প্রশ্ন করলেন, “সত্য ও সুন্দরের মধ্যে সম্পর্কের ব্যাপারে সক্রেটিসের মতামত কী বলে গেছেন জানো কী?”—ছাত্র লাজওয়াব। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে তিনি জিজ্ঞেস করলেন সক্রেটিস প্লেটোকে তৃতীয় সিম্পোজিয়ামে কী বলেছিলেন, আর অমনি ছাত্রটির মুখ একশ ওয়াট বাতির মত জ্বলে উঠল, গড়গড় করে বিশুদ্ধ গ্রিকে সক্রেটিস কী বলেছিলেন তা হুবহু উগড়ে দিল।
সক্রেটিস তৃতীয় সিম্পোজিয়ামে যা বলেছিলেন তাই ছিল আদতে সত্য ও সুন্দরের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে তার মতামত!
এভাবেই গ্রিকজ্ঞানী পন্ডিত ভিনদেশের জনগণের গ্রিক গলাধঃকরণের বিচিত্র চিত্র উদঘাটিত করলেন। সে দেশে ছাত্ররা গ্রিক শেখে প্রথমে বর্ণগুলো চিনে, উচ্চারণ করে, তারপর শেখে শব্দগঠন, তারপর বাক্য ও অতঃপর অনুচ্ছেদ আবৃত্তি করা। তারা শব্দের পর শব্দ শুদ্ধভাবে তেলাওয়াত করতে পটু বটে, সক্রেটিস কী বলেছেন না বলেছেন সকলই তাদের ঠোঁটের আগায়, কিন্তু ঐ গ্রিক কথাগুলো তাদের কাছে অর্থপূর্ণ কিছু নয়। ছাত্রদের কাছে এগুলো কেবলই শেখানো বুলি, এদের যে কোন অর্থ আছে তা তাদের ভাবায় না।
আমি বললাম, “ব্রাজিলের ‘বিজ্ঞানচর্চা'র ব্যাপারটিও আমার কাছে এমনটিই মনে হচ্ছে।” (বিরাট এক ধাক্কা, তাই না?)
আমার সাথে করে নিয়ে আসা পদার্থবিজ্ঞানের বইটি সবার সামনে উঁচিয়ে ধরলাম। “এই বইটিতে কোথাও কোন পরীক্ষামূলক পদ্ধতির ফলাফল লেখা হয় নি, কেবলমাত্র একটি ব্যতিক্রম বাদে, যেখানে বলা হয়েছে একটি বলকে আনত তলে গড়িয়ে দিলে বলটি এক সেকেন্ড, দুই সেকেন্ড, তিন সেকেন্ড ইত্যাদি সময় পর কত দূরত্ব অতিক্রম করবে।” সেখানে আরও বলা হয়েছে যে এ ফলাফলে কিছু ‘ত্রুটি’ আছে, কারণ সংখ্যাগুলো নেয়া হয়েছে পরীক্ষণ হতে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, ফলে সেগুলো তত্ত্বীয় হিসাবের চেয়ে কিছু কম বা বেশি হয়েছে। এমনকি এ কথাও সেখানে আছে যে সঠিক ফলাফলের জন্যে পরীক্ষণ পদ্ধতির ত্রুটি হিসেব করে বাদ দিতে হবে—উত্তম কথা। সমস্যাটা হচ্ছে যখন কেউ এ দূরত্বের মানগুলো ব্যবহার করে ত্বরণ হিসেব করবে, সে এক্কেবারে সঠিক ফলাফল লাভ করবে। কিন্তু একটি বলকে যদি সত্যিই আনত তলে গড়িয়ে দেয়া হয়, তবে গড়াতে হলে তার নিজের জড়তাকে অতিক্রম করতে হয়, এবং যদি সত্যি সত্যি পরীক্ষাটি করা হয়, তবে ফলাফল হয় সঠিক ফলাফলের সাত ভাগের পাঁচ অংশ, কারণ বলটির ঘূর্ণনের জন্যে কিছুটা শক্তি খরচ হয়। তাহলে ব্যাপারটা এই দাঁড়াচ্ছে যে বইটির সবেধন নীলমণি পরীক্ষণের ফলাফলও আসলে 'পরীক্ষিত' কোন ফলাফল নহে। কেউ এমন কোন বল আনত তলে গড়িয়ে দেখেনি, তাহলে তারা কখনোই এ ধরণের ফলাফল পেত না!
“আমি আরো একখানা গিয়ানজাম শনাক্ত করেছি,” আমি বলতে থাকলাম, “বইয়ের পাতা উল্টেপাল্টে যে কোন একটি পাতা খুলে দৈবভাবে একটি বাক্য পড়ে শুনিয়ে আমি আপনাদের দেখিয়ে দিতে পারব যে এটা বিজ্ঞান শেখা নয়, বরং মুখস্থবিদ্যা শেখা।” একথা বলে আমি হলভর্তি দর্শকের উৎসুক চোখের সামনে বইটি উল্টেপাল্টে একটি পৃষ্ঠায় আঙুল ধরে সে বাক্যটি পড়তে আরম্ভ করলাম: “ট্রিবলুমিনিসেনস। ট্রিবলুমিনিসেনস হল ক্রিস্টাল চূর্ণ করার সময় নিঃসৃত আলো।”
আমি বললাম, “শুনলেন? এখানে বিজ্ঞানের কিছুমাত্র কী ছিল? না! এখানে কেবল একটি অজানা পদকে কয়েকটি শব্দের সাহায্যে সজ্ঞায়িত করা হয়েছে, কিন্তু কোন ধরণের ক্রিস্টাল গুঁড়ো করলে এ ধরণের আলো নিঃসরণ করে, কেন করে সে সম্বন্ধে কিছু বলা হয়নি। তবে ছাত্ররা কেমন করে বাড়ি গিয়ে এ পরীক্ষাটি করে দেখবে?”
“কিন্তু এমন যদি হত, ট্রিবলুমিনিসেনস বোঝাতে লেখক লিখতেন ‘এক টুকরা চিনি নিয়ে তা প্লায়ার্স দিয়ে চেপে অন্ধকারে গুঁড়ো করা হলে এক ঝলক নীল আলো দেখা যায়। আরো কিছু কিছু ক্রিস্টালে ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটে। তবে এর কারণ এখনো অজানা। এ ঘটনাকেই বলা হয় ট্রিবলুমিনিসেনস।‘ তাহলে কৌতূহলী ছাত্ররা বাড়ি গিয়ে ব্যাপারটা চেষ্টা করে দেখতে পারত। এভাবেই প্রাকৃতিক ঘটনা সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়।” এভাবে আমি দৈবচয়নের মাধ্যমে বইটির আরো কয়েকটি পৃষ্ঠা থেকে পড়ে শুনিয়ে সপ্রমাণ করলাম যে ব্রাজিলের বিজ্ঞান বিষয়ক বইগুলোতে ব্যাপক গিয়ানজাম বিদ্যমান।
অবশেষে আমি মন্তব্য করলাম কীভাবে এই পদ্ধতিতে কেউ কিছু শিখতে পারে তা আমার মাথায় আসছে না, যেখানে ছাত্ররা কেবল পরীক্ষা পাশ করতে শেখে এবং চাক্রিক পদ্ধতিতে পরবর্তীতে অন্যদেরও তাই শিখিয়ে ঐতিহ্য সমুন্নত রাখে, ফলে তাদের পক্ষে আর পদার্থবিজ্ঞানের অমৃতসুধার সন্ধানলাভ হয়ে ওঠে না। “তবে মনে হয় আমি ভুল সিদ্ধান্তেই পৌঁছেছি। আমার ক্লাসে দু’জন ছাত্র চমৎকার কৃতিত্ব দেখিয়েছে, এবং আমি একজন পদার্থবিজ্ঞানীকে চিনি যিনি ব্রাজিলেই পড়ালেখা করেছিলেন। তাহলে কিছু কিছু লোক ঠিকই তাদের পথ করে নেন, তা সে যত কঠিনই হোক না কেন।”
আমার বক্তব্য শেষ করলাম। তারপর একটা অপ্রত্যাশিত কান্ড ঘটে গেল। একজন ছাত্র উঠে দাঁড়িয়ে হেঁকে বলল, “জনাব ফাইনম্যান শেষের দিকে যে দু’জন ছাত্রের কথা বলেছিলেন আমি তাদের একজন। আমি ব্রাজিলে পড়ালেখা করিনি; আমি জার্মানিতে বিদ্যাভ্যাস করেছি, ব্রাজিলে এসেছি আমি বেশিদিন নয়।”
অপর ছাত্রটিও একই ধরণের কথা বলল। আর যে অধ্যাপকের নামে আমি সুখ্যাতি করেছিলাম তিনিও পোঁ ধরলেন, “যুদ্ধকালীন সময়ে আমি লেখাপড়া করেছিলাম, যখন সৌভাগ্যবশতঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর সাহেবরা কেউ ছিলেন না, তাই আমি যা কিছু শিখেছি তা নিজের চেষ্টায় বই পড়ে শিখেছি। এ কারণে আমাকে ব্রাজিলের শিক্ষাব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করা চলে না।” এ ছিল একেবারেই অপ্রত্যাশিত। আমি জানতাম সেখানকার পড়ালেখার পদ্ধতিতে গলদ আছে, কিন্তু একেবারে শতভাগ! ব্যাপারটা হজম করা কঠিন বটে।
________________________________________________
চতুর্বর্গ
মন্তব্য
দোস্ত এইটাই বেশী ভাললাগল। খইভাজা প্রতিবার আগের চেয়েও ঝরঝরে হচ্ছে।
এইদেশে গলদ কত? আর আমাদের কি হবে?
ধন্যবাদ জুনেব্বাই। তোর মতামত এই লেখার জন্যে বিশেষ হেল্পফুল আছিলো।
আর আমাদের কী হবে? চেঞ্জ উই নিড। দেশের পড়ালেখার পরিবর্তন কিন্তু ধীরে ধীরে হচ্ছে, সেগুলোর কারণে আশাবাদী হতে পারি। মনে হয় সত্যিই ২০৩০ এর মধ্যে কোন বাংলাদেশী বিজ্ঞানে নোবেল পাবে, গণিতের ফিল্ডস মেডেলও সুড়সুড়িয়ে বাংলার মাটিতে চলে আসবে। স্বপ্ন দেখতে হবে রে মামু, মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়...
________________________________________________
চতুর্বর্গ
আমি আপনাকে গ্যারান্টি দিতে পারি এই দেশে গলদ শতভাগের বেশি হবে না।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। পিস্তল-কামান-মিসাইল কেনার টাকাটা বাঁচিয়ে দিলেন। তবে প্রতি মাসে যদি একটা করে নতুন সিরিজ শুরু না করছেন, তাহলে বাধ্য হয়ে কিন্তু কিনতেই হবে। তখন আবার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি বা হাবিজাবি বলে নিরস্ত করতে চায়েন না।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
আমাকে নিরস্ত করতে হবে না গৌতমদা, আপনিই তখন বলবেন, "খ্যামা দিবি? নাকি র্যাব ডাকুম!"
________________________________________________
চতুর্বর্গ
আমাদের দেশে গলদ মনে হয় শতভাগেরও বেশি। খুবই দুঃখজনক ব্যাপার।
লেখাটা চমৎকার হয়েছে। চালিয়ে যাও বন্ধু।+++++
এই দিন দিন নয় বন্ধু। সুদিন সমাগত। হয়তো আমাদের জীবদ্দশাতেই আমরা বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন দেখতে পারব। তখন আর ছেলেপেলেদের পীথাগোরাসের উপপাদ্যের ইউক্লিড-প্রদত্ত মহাভারত মার্কা সেই প্রমাণখানা পরীক্ষার খাতায় মুখস্থ লিখতে হবে না।
________________________________________________
চতুর্বর্গ
অনুবাদ কর্ম বেশ ভাল হচ্ছে। আর বাংলাদেশের সাথে যে মিল খুঁজে পেয়েছেন সেটাও ঠিক আছে। কিছু ব্যতীক্রম রয়েছে অবশ্যই, তবে বেশিরভাগই বিজ্ঞান/গণিত মুখস্থ করেন, না বুঝে। এখানে ছাত্রদের চেয়ে দায়ী বেশি শিক্ষকেরাই, আমার মতে, অথবা শিক্ষা ব্যবস্থা।
সহমত। যে দেশে অংক স্যারের শেখানো নিয়ম ছাড়া করলে শূণ্য দেয়া হয় সেখানে স্বাধীন চিন্তা-ভাবনা করতে শেখাটা বড্ড কঠিন।
________________________________________________
চতুর্বর্গ
দারুণ লেখা! পাক্কা ৫ তারা, আমার বিশ্বাস, আমাদের দেশে এই শিক্ষাব্যবস্থার ব্যর্থতা ব্রাজিলিয়ানদের চেয়ে অনেক কম হবে, নাহলে ঐখানে যে গন্ডগোল হচ্ছে সেটা তো আমরা বুঝতে পারতেছি। স্কুল কলেজে অনেকে মুখস্ত বিদ্যার উপর ভর করলেও সেরকম ভুদাই এর পাশাপাশি বুঝে পড়ার লোকও কিন্তু কম নয়। আর আরেকটা জিনিস বলতে পারি, বুয়েটে যারা ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছেন তারা জানেন, মুখস্ত বিদ্যার বেইল সেখানে নাই। আমাদের মেডিকেলের পড়াশোনা সিস্টেমে মুখস্ত করার ব্যবস্থা থাকলেও উচ্চশিক্ষায় তারা একইভাবে বাদ পড়ে যেতে বাধ্য।
এফসিপিএস (ফেলো অব কলেজ অফ ফিজিশিয়ান্স এন্ড সার্জন্স) এর পরীক্ষার প্রথম পর্ব লিখিত (MCQ) হলেও ২য় ভাগে ভাইবা অংশে পরীক্ষকরা প্রশ্ন করেন তাদের অভিজ্ঞতা থেকে, পুরা ক্লিনিকাল প্রশ্ন, যার উত্তর কোন বইয়ে দেওয়া নেই, আর প্রশ্নে ত্যানা এমনভাবে পেচানো থাকে যে কোন দিক থেকে গিট খুলতে হবে সেটা আগে থেকে ঐভাবে অভ্যাস না করলে ঐ গিট খুলা সম্ভব না।
আর আরো মজা ইউএসএমএলই তে, বই পড়ে মহা পন্ডিত হতে পারেন আপনে, কিন্তু বই থেকে ১ লাইন ও আসবে না, ঐ উপরোক্ত পন্থায় প্রশ্ন লেখা হবে, এদের আছে অবাধ ত্যানার সাপ্লাই, mcq হলেও উত্তরে বর্ণিত ৫টা উত্তরই সঠিক, আপনাকে বের করতে হবে কোনটা সবচেয়ে বেশি ফিট। বাংলাদেশ থেকে এসেও যখন আমরা এসব পরীক্ষায় ভালো করি, তখন স্বীকার করতেই হবে, কিছু একটা তো দেশে আমাদের শিখিয়েছে। কি বলেন ভায়া? ভুল বললাম? হতে পারে এরকম লোক সংখ্যা লঘু, কিন্তু আমাদের পরাজয় শতকরা ১০০ ভাগ হতে পারে না কোন ভাবেই
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
তাহসিন ভাই, আপনার বিশ্লেষন খুব ভাল লাগল। আমি আপনার সাথে একমত।
যদিও আমাদের শিক্ষাব্যাবস্থা তেমন ভাল না, কিন্তু এর ভিতরে থেকেও কিছু পোলাপাইন ঠিকই নিজে নিজে হলেও শিখে নিচ্ছে। আমাদের পোলাপাইন কিন্তু আম্রিকায় আইসা ভালই করতেসে। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বলতে পারি, আমারা ফিজিক্সে আন্ডারগ্রাজুয়েটে/ মাস্টার্সে এ যে বইগুলো পড়েছি, প্রায় সব বিষয়ে সেই সব বই'ই পাঠ্য এখানেও। তবে এইখানে, শিক্ষকদের পড়ানোর এবং বোঝানোর ধরনটা একটু বেশি ভাল, এই যা। আর পরীক্ষার প্রশ্ন থাকে এমন যে মুখস্তের কোনো বেইল নাই।
আমার ধারণা ফাইনম্যান পুরো ব্রাজিলের শিক্ষাব্যবস্থা সম্বন্ধে মন্তব্য করেননি, তিনি কেবল পদার্থবিজ্ঞানে দুরবস্থার কথা উল্লেখ করেছেন। সে সময়ের ব্রাজিলের সাথে বাংলাদেশের বেশ কিছু মিল সত্যিই খুঁজে পাওয়া যায়। আপনি বুয়েট ভর্তি পরীক্ষার কথা বলেছেন, সত্যিই সেখানে মুখস্থবিদ্যা দিয়ে খুব একটা সুবিধা করা যায় না। তবে ইঞ্জিনিয়ারিং ক্লাসে স্যারের মুখনিঃসৃত বাণী অহির মতন কপি করা নিজের চোখে দেখা সাইফ ভাই।
ফাইনম্যানের পর্যবেক্ষণের সাথে আমাদের লেখাপড়ার সিস্টেম কিছু কিছু মিলে যায়। যেমন ধরেন টেক্সট বইয়ের বিষয়টা। আমাদের টেক্সট বইগুলা (ধরা যাক, মাধ্যমিক পর্যায়েরগুলো) ব্রাজিলের বইগুলার মতোই নিরস, সেখানে সত্যিকারের বিজ্ঞান কেমন করে শিখতে হবে না বলে সংজ্ঞা ও প্রমাণ করা শেখানো হয়। জ্যামিতি বইতে উপপাদ্যের বিশাল সব প্রমাণ আছে, ছেলেমেয়েরা সেগুলোর নাম্বার সহ মুখস্থ করে এবং পরীক্ষায় বইয়ের উপপাদ্যই প্রমাণ করতে দেয়া হয়। তার ওপর আছে স্যারের করানো নিয়ম অনুযায়ী অংক না করলে নাম্বার না পাওয়ার বিড়ম্বনা। কিন্তু এসব সমস্যা সত্ত্বেও বাংলাদেশ কিন্তু আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বছর বছর ভালো ফলাফল করছে এবং আমাদের গণিত দল সবচেয়ে ভালো করে কিন্তু জ্যামিতি সংক্রান্ত সমস্যাতেই! আমাদের দেশের ছেলেমেয়েদের প্রতিভার বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। একদিন আমরা নিশ্চয়ই বিজ্ঞানচর্চায় বিশ্বমানে উন্নীত হব। এজন্যে পাঠ্যবই, শিক্ষকদের দৃষ্টিভঙ্গি, পরীক্ষা পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয়ে সংস্কার প্রয়োজন। গণিত অলিম্পিয়াডের মাধ্যমে দেশে গণিত সংক্রান্ত একটা শুভ পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে, এভাবে বিজ্ঞানের অন্যান্য বিষয়েও আমাদের পড়ালেখার ধরণটা একটু পরিবর্তিত হলে নিশ্চিতভাবেই আমরা মৌলিক বিজ্ঞানে ভালো করতে পারব।
পুরো সিরিজ জুড়ে আপনার মন্তব্য ও তারকারাজির জন্যে অনেক , সাইব্বাই!
________________________________________________
চতুর্বর্গ
@ সাইফ তাহসিন,
আপনার সাথে কিছুটা দ্বিমত করছি। বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষাতেও মুখস্থবিদ্যা অল্প হলেও কিছুটা লাগে। আমি বিশেষত রসায়ন পার্টটার কথা বলছি।
আর এই কথাটা ঠিক আমাদের ছেলেমেয়েরা অনেক জায়গাতেই ভাল করছে, কিন্তু এর জন্য আমি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে, অথবা কোন প্রতিষ্ঠানকে খুব একটা কৃতিত্ব দিতে চাইনা। যারাই ভাল কিছু করছে বা করেছে নিজের আগ্রহে শিখেছে ।
বাহ বাহ বাহ পুরাই বাংলাদেশ। আসেন সবাই আমরা খুশিতে হাত ধরাধরি করে নাচি। আশে পাশে ব্রাজিলিয়ান কাউরে পাইলে ডাক দেন তার সাথে কোলাকুলি করুম। বিপরীত লিঙ্গের হইলে আরো ভাল হয়।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
চলেন ব্রাজিল-বাংলা শিক্ষা পরিষদ খুলি। তারপর ব্রাজিলিয়ান তরুণীদের সাথে মতবিনিময় করতে সাও পাওলোর বিচে যাইগা। সেখানে গিয়ে জুত করে বসে অনেক শিক্ষা বিষয়ক নিভৃতালাপ করা যাবে ।
________________________________________________
চতুর্বর্গ
৩টা পর্বই পড়েছি। অনুবাদ ভঙ্গিটা খুব ভালো লেগেছে।
ফাইনম্যানকে ফাইন ভাবে অনুবাদ করায় আপনাকে ধইন্যা।
আপ্নাকেও তিনকেজি দেশি
________________________________________________
চতুর্বর্গ
অনুবাদ অতি উত্তম লাগল, পাঁচ তারা অনায়াসে দেয়া যায়। এবং হ্যাঁ, তখনকার ব্রাজিল আর এখনকার বাংলাদেশের মধ্যে কুনোই তফাত নাই। আরও অনেকের মত আমিও এদেশের শিক্ষাব্যবস্থার শিকার- এমন কোন অংক পরীক্ষা যায় নাই যেটাতে টেনশনে পেটে অম্ল পাক হয় নাই। এই অপরাধের জন্য (আমাকে অংক-ভীতু এবং পদার্থ-রসায়ন-বিমুখ করার জন্য) আমি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে কোনদিন মাফ করব না।
চমৎকার। ... অনুবাদ কম্মো চলুক।
_________________________________________
সেরিওজা
বইটা নামাইলাম। দেখি তো। অনুবাদের চেয়ে ডাইরেক্ট ইংরেজিতেই শুনি সে কি বলতে চায়, অনেক নাম শুনছি কিনা।
চাগানোর জন্য ধন্যবাদ!
গুড ডিসিশান। পরের মুখে ঝাল খেয়ে কী লাভ? পড়ে কেমন লাগল জানাতে ভুলবেন না যেন।
________________________________________________
চতুর্বর্গ
অনুবাদটা বেশ ঝরঝরে।
পাঁচ তারা দাগায়ে গেলাম। লেখা বরাবরের মতোই মুড়মুড়ে
ধন্যবাদের সাথে গৃহীত হল হয়রানাবীর্ভাই!
________________________________________________
চতুর্বর্গ
এত তাড়াতাড়ি সিরিজ শেষ করে দিলেন? মানি না মানবো না। আন্দোলওওওওওওন!
লেখা
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
হাহাহা, এই সিরিজ পড়নের লাইগ্যা আবার আন্দোলন কর্বেন্নাকি? তারচে মূল বইটা পইড়া ফালান, তখন বিপ্লব-যুদ্ধ করতে ইচ্ছে হবে আরও পড়ার জন্যে ।
গুড় পেয়ে কৃতার্থ হলুম দিদি, আমার কালেকশানের পয়লা গুড়!
________________________________________________
চতুর্বর্গ
নতুন করে আর কি বল্ব!!!যা যা কম্পলিমেন্ট দেয়ার সবই আগের ব্লগার গণ দিয়ে গেছে!!!!এক কথায় দারুণ!
দারুণ
নতুন মন্তব্য করুন