দেবাশিস মুখার্জি
[db.mukherjee.blog@gmail.com]
ভারত আমদের প্রতিবেশী দেশ।পরাক্রমশালী দেশ।এর বাইরেও অনেক বিশেষণে তাদেরকে বিশেষিত করা হয়। যেমন- আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু।এটা ঠিক যে তাঁদের সহায়তা ছাড়া আমাদের স্বাধীনতা আটকে না থাকলেও অনেক দূরুহ ছিল।তাদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহায়তায় আমরা মাত্র নয় মাসেই স্বাধীনতা অর্জণ করি।
আমি ভারতের এই সাহায্যে চির কৃতজ্ঞ।কিন্তু তার বিনিময় মূল্যের কি কোন শেষ আছে?
আমাদের জন্মের পূর্বেই আমাদের কৃতিত্বকে ছোট করার ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে গেল।ভারতের রাজনৈতিক এবং সামরিক সাহায্যে আমাদের মুক্তি বাহিনীর বিজয় যখন অতি সম্ভব বলে মনে হচ্ছিল ঠিক তখনই ভারতের সেনারা আমাদের দেশে প্রবেশ করলো।সারা বিশ্বকে দেখানো হল এ বিজয়ে আমাদের চাইতে ভারতের কৃতিত্বই বেশি।নাপাকিদের আত্মসমর্পণ কিংবা আমাদের বিজয় দলিলে যদিও আছে থাকলো ভারত-বাংলাদেশ যৌথ বাহিনীর নাম।কিন্তু তাতে আমাদের দেশের কেউ প্রতিনিধিত্ব করলো না। সুকৌশলে ওসমানী সাহেবকে আসতে দেওয়া হল না।
আমাদের জন্মের শুরুতেই ১৬ ডিসেম্বর থেকেই জোড়পূর্বক আমাদের মুদ্রামানকে করে দেওয়া হল ভারতের সমান।যেখানে ঠিক আগের দিনও আমাদের মুদ্রামান(তৎকালীন নাপাকিস্তানি) ছিল ১ বাংলা টাকা/পাক রূপি = ১.২০ ভারতীয় রূপি।একে নাপাকি কুকুরেরা আমাদের দেশের ব্যাংক লুট করে ২ বিলিয়ন ডলার নিয়ে গেছে।তার উপর এই নতুন চাপ একটা যুদ্ধ-বিদ্ধস্ত দেশের পঙ্গু অর্থনীতিকে আরও পঙ্গু করে দিল।
পঙ্গু দেশের অর্থনীতি কে থামিয়ে দেবার জন্য ফেঞ্চুগঞ্জে ভারতের সাহায্যে সার কারখানা তৈরি করা হয়।তাতে শর্ত ছিল ভারত পনের বছর পর্যন্ত প্রায় বিনামূল্যে উৎপাদিত সারের অর্ধেক পাবে।অথচ এর কাঁচামাল গ্যাসের যোগানদার আমরাই।
১৯৭৪ এ শুরু হল ফারাক্কার পরীক্ষামূলক কার্যক্রম।যেই পরীক্ষা প্রায় ৪০ বছরেও শেষ হল না আর শেষ হবারও কোন লক্ষণ দেখি না।ফাটল তৈরি করল শেখ মুজিব আর ইন্দিরার বন্ধুত্বে।একে একে তৈরি হল তিস্তা ব্যারেজ। টিপাইমুখ বাঁধ সময়ের ব্যাপার।গোমতী বাঁধের কাজ সম্পন্ন।আর ব্রহ্মপুত্রে আট পর্যায়ের বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা বিবেচনাধীন।এবার বলুন বাংলাদেশে পানি আসবে কোন নদী দিয়ে??যদিও আন্তর্জাতিক নদী কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী আন্তর্জাতিক কোন নদীতে বাঁধ দেওয়া যায় না।চীন যখন ব্রহ্মপুত্রের গোড়াতেই বাঁধ দিতে চাইল তখন ভারতের করা প্রতিবাদটা একবার ভেবে দেখুন।অথচ ছোট দেশ বলে আমদের মুখ বন্ধ।
মূলা ঝুলিয়ে আমাদের ১ বিলিয়ন ডলারের ঋণ দিল ভারত।সুদের হার খুবই কম কিন্তু ঋণের শর্তগুলো আমাদের জন্য খুব একটা সুখকর না।এই ঋণের অধিকাংশ টাকা ট্রানজিটকে কার্যকর করার জন্য।পরিবহন খাতের উন্নয়ন।নতুন বাস, ট্রেন এর ব্যবস্থা করা হবে।কিন্তু বাসগুলো ভারত থেকেই কিনতে হবে।মূলা ঝুলানো হল এই ট্রানজিট থেকে বছরে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা আয় হবে।আর আমরা সেই মূলার পেছনে দৌড়াচ্ছি।এডিবির হিসেবে দেখাগেল বছরে ১৮০০ কোটি টাকা আয় হবে।ক্রমান্বয়ে দ্রুতহারে ট্রানজিট এর উপযোগিতা বৃদ্ধি পেলে ১৫-২০ বছর পরে এই টাকার পরিমাণ ৭ হাজার কোটি টাকা হলেও হতে পারে।অথচ আমাদের দেশের অর্থনৈতিক সংস্থা গবেষণা করে দেখলো এই বার্ষিক টাকার পরিমাণ কোনভাবেই ৪০০ কোটি ছাড়াবে না।তাহলে এডিবি কেন বেশি দেখাচ্ছে??কারণ তাতে তাদেরই লাভ।তারা এইখাতে বাংলাদেশকে ঋণ দিতে চায়।
ভারত আমাদের দক্ষিণ তালপট্টি দখল করে নিয়েছে।১৯৭৪ সালের করা মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি এখন কার্যকর করা হয় নি।যার মাধ্যমে দুদেশের মাঝে বিরাজমান ছিটমহলের সমাধান হওয়ার কথা।চুক্তি অনুযায়ী অবশ্য বাংলাদেশের ভূমির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।ভারতের বিএসএফ বাহিনীর হাতে প্রতিবছর ১০০ জনেরও বেশি বাংলাদেশ মারা যায়।গারো-হাজংরা যখন-তখন বিএসএফ পাহারায় আমাদের সীমান্তে ঢুকে ফসল কেটে নিয়ে যায়।
বাণিজ্যের কথায় আসলে দেখা যাবে দুদেশের মাঝে বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি।আজ পর্যন্ত কয়টা দ্রব্যে ভারত আমাদের শুল্কমওকুফের সুবিধা দিয়েছে?আমাদের দেশের টিভি ভারতীয় স্যাটেলাইট চ্যানেলে পরিপূর্ণ। আর আমাদের দেশের কয়টা চ্যানেল ঐদেশে সম্প্রচার করা সম্ভব হয়েছে।যেখানে আমাদের চ্যানেল আরব-দেশ,আমেরিকাতেও দেখা যায়।
এরপরও কেন আমরা ভারতকে এত বেশি ভালোবাসবো??কেন বলবো তার আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু?? মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছিল বলে।তারা কোটির উপরে বাঙালিকে জায়গা দিয়েছে,খাবার দিয়েছে।এই ঋণ অস্বীকার কোনই উপায় নেই।কিন্তু তারা সামরিকভাবে যে সহায়তা করেছিল তা কি শুধুই আমাদের স্বার্থে??অন্তত আমি তা মনে করি না।আমার ভাবনায় প্রধান দুটি কারণঃ
১।দুই উইঙ্গের পাকিস্তানকে তারা সামরিকভাবে ভয় পেত।একমাত্র পূর্বপাকিস্তানের পক্ষেই ভারতের পুর্বাংশ ভারত থেকে আলাদা করা সম্ভব ছিল।এখনো বাংলাদেশ ভৌগলিকভাবে সেই ক্ষমতা রাখে।যদিও সামরিকভাবে কিংবা রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশের কোন ক্ষমতা কিংবা ইচ্ছা নেই।বাংলাদেশ অনেক বেশি বন্ধু-প্রতীম দেশ।
২।ভারতের এক সস্তা বাজার তৈরি করা।যা অন্য কোথাও চলবে তারা তা অন্তত বাংলাদেশ এ চালাতে পারবে।
অনেকেই হয়তো ভেবে বসবে লীগ সরকারেরই দোষ।তারাই বিভিন্ন চুক্তি করেছে।আমি বলবো এককভাবে কখনই তারা দোষী না।লীগ সরকার ঘোষণা দিয়ে ভারত-প্রীতি প্রকাশ করে।আর বিএনপি সরকার ঘোষণা না দিয়েই তা করে।বিএনপি সরকার নেত্রীর বাড়ি বাঁচাতে আন্দোলনের হুমকি দেয়।রাজপুত্রদের প্যারোল বাঁচানোর জন্য আন্দোলনে নামতে চায়।তারা কি কখনো বলেছে সীমান্তে কেন এত বাংলাদেশি বিএসএফের জাতে মারা যাচ্ছে।সরকার এক্ষত্রে কিছু করতে পারছে না বলে হরতাল দিবে। তারা কখনই তা বলবে না।বলার কোন সাহসই তাদের নেই।আসলে আমরা এক দুষ্টচক্রের মাঝে পড়ে গেছি।একমাত্র সময়ই উত্তর দিতে পারিবে যে কখন আমরা এর থেকে বেড় হতে পারবো।
মন্তব্য
আপনার পুরো লেখায় বেশ কিছু তথ্যের অসংগতি রয়েছে। আমি শুধু আমার জ্ঞানের পরিধি যেদিকে সেদিকটা আলোকপাত করলাম।
সেই পরীক্ষা ৪০ বছরেও শেষ হলোনা বলতে আপনি কি বুঝাতে চেয়েছেন?
এই তথ্যের সুত্র যোগ করবেন দয়া করে।
"আন্তর্জাতিক নদী কমিশন" বলতে কোন সংস্থার অস্তিত্ত্ব আমার জানা নেই। ভুল হলে ক্ষমা করবেন। সেক্ষেত্রে আপনার এই তথ্যটি ভুল। যা রয়েছে তা হচ্ছে ' UN Convention on the Law of the Non-navigational Uses of International Watercourses", লিঙ্ক এখানে। এটি এখনো আইননা, কারন পর্যাপ্ত পরিমান স্বাক্ষর পড়েনি এতে। এবং এই আইনেও ট্রান্সবাউন্ডারি নদীর ক্ষেত্রে আপস আলোচনার কথাই বলা আছে। আপনি তখনই আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবেন সেখানে একটি চুক্তি থাকবে নচেত নয়।
প্রতিবাদ করেও ভারত কিছু করতে পারেনি। চীন বাঁধ নির্মান শুরু করেছে এবং তা ঘোষণা দিয়েই।
দুঃখিত পোষ্টটি তথ্য ও যুক্তির বিচারে আমার কাছে দূর্বল মনে হয়েছে।[১ দিয়েছি]।
----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
সচল জাহিদ ব্লগস্পট
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
একমত । তথ্যসূত্রগুলো যোগ করতে পারলে ভালো হত ৷
দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ এখন আর নাই ভাই। লেখাটা ভাল লাগল না। তথ্যগুলো নির্ভেজাল মনে হল না।
স্বাধীনতার পর ভারতের প্রত্যক্ষ পরোক্ষ শোষণ নিয়ে আপনার সাথে একমত, যদিও আরেকটু পরিসংখ্যান ভিত্তিক হলে ভালো হত। তবে স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে আপনার কথা
এর সাথে একমত হতে পারলাম না। এটা ঠিক আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা সারাদেশ জুড়ে পাকিস্থান বাহিনীর মনোবল শুন্যের কোঠায় নামিয়ে এনেছিল, আর তার পরিণতিতেই আমাদের চূড়ান্ত বিজয়। কিন্তু ভারত যুদ্ধে নামতে ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিল, কারণ তাদেরকে নিশ্চিত করতে হয়েছিল, চীন যেন বরফ-গলা শুকনো পাহাড়ী পথে তাদেরকে আক্রমণ না করে বসে। তাছাড়াও সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে সহায়তা চুক্তি ছাড়া ভারতের পক্ষে এই যুদ্ধে জড়ানোর পরিণতি শুভ হতনা। শুধুমাত্র বিশ্বকে দেখানোর জন্য এই যুদ্ধে জড়ানো ভারতের পক্ষে ঠিক সুবিবেচনা প্রসূত হতনা, যেখানে বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো হয় আমাদের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে, না হয় নীরবতা অবলম্বন করছে।
আর
সজল
এই লেখাটাতে কিছু তথ্য বিভ্রাট আছে।তাই প্রকাশের পরেই কর্তৃপক্ষকে মেইল করেছি লেখাটা মুছে দেবার জন্য।এখন কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপের আশায় বসে আছি।
আপনাদের ভুলগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ জনাচ্ছি।আশা করি কিছুক্ষণের মাঝেই মডারেটররা লেখাটি মুছে দিবেন।
আমি লেখাটি মুছে দেবার অনুরোধ করে http://www.sachalayatan.com/feedback লিঙ্কে মেইল করেছি।অন্যকোনভাবে লেখাটা মুছে দেবার উপায় থাকলে শীঘ্র জানান।আশা করি খুবশীঘ্রই আরো যাচাই করে তথ্যসূত্রসহ লেখাটা রিপোস্ট করবো।বাকিটা কর্তৃপক্ষ দেখবেন।
দেবাশিস মুখার্জি
[db.mukherjee.blog@gmail.com]
contact এট sachalayatan ডট com এ মেইল করে দেন।
----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
সচল জাহিদ ব্লগস্পট
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
ধন্যবাদ।
এইমাত্র মেইল করে দিলাম।এখন মুছে দেবার অপেক্ষায়।
আশা করি রিপোস্টটি(যদি সচল মডারেশন দেয়াল ভেদ করতে পারে) তে আর কোন সমস্যা থাকবে না।
দেবাশিস মুখার্জি
[db.mukherjee.blog@gmail.com]