জীবনের মানেটা অনেক সময় দূর্বোধ্য মনে হয়। বিচিত্রসব চিন্তার মাঝে আর কাজের তাড়নায় জীবনের সবমানে খোঁজার চেষ্টার কতটা মূল্য আছে তা নির-র এখনও জানা হয় নি।
ভাল লাগছে না, তাই ভাবল একটু হেঁটে আসি। মধ্যরাত পার হয়ে গেছে। যেখানে রাতকাটানোর আয়োজন তার পাশেই একটা পুকুর আছে। ঘোলা পানি,শ্যাওলায় ঢাকা। মাঝে মাঝে ঘাই মারে কি যেন সব মাছ। জায়গাটা সুন্দর। গোছান, টিপটপ। একধারে কয়েকটা বাংলোবাড়ি, মাঝখানে বাগান, তারপর পুকুর, আবার আরো কয়েকটা বাংলো বাড়ি। আসলে পুকুর দুটো, মাঝখানে মস্ত আইল, সবুজ ঘাসের মাঝখান দিয়ে পায়চলা পথ। হাঁটতে হাঁটতে নির-র মনে হল পথটা যেন জীবনেরই প্রতিচ্ছবি। আঁকাবাঁকা, তরঙ্গায়িত। সরলপথের বিন্দুগুলি মিলে তৈরী হয়নি। চলার ছন্দের আর মাটির ছলায় গিয়েছে এঁকেবেঁকে। একটু থেমে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকল নির চকিত প্রশ্নের চমকে। পথ বাঁকে কেন। কেন অযুত মানুষ চলে একই বক্ররেখায়। ঘাস মরে যেয়ে মাটি হয় বন্ধ্যা। সবুজ সাগরের বিশালত্তের মাঝে একটু খানি কালিমা, ফিতের মত। দৃশ্যমান, হয়ত প্রয়োজনের তাড়নায় তৈরী। কিংবা অপ্রয়োজনেই। ঘুরতে আসা মানুষের স্মৃতির সাক্ষর। নিজের মনেই ভাবে নির, ফিরতে হবে একই রাস্তায়। একই আঁকাবাঁকা পথে। বন্ধ্যা মাটির রেখার অনুসরণে। সবুজঘাসের ক্ষতি যা হবার তা তো হয়েই গেছে। কিন্তু মন সায় দেয় না। মনের গহিন কোন থেকে অদৃশ্য কোন মন্ত্র পা দুটোকে ঘাসের স্পর্শ নিতে লোলুপ করে তোলে। মনের উপর সচেতন ইচ্ছার ভার চাপিয়ে নির এগিয়ে যায়। পথ সায় দিক আর না দিক আর মন যতই দিকনা কেন কূমন্ত্রণা, গন্তব্য হতে হবে সুনিশ্চিত।
পুকুরের চারপাশে খানকতক চক্কর মারে নির বসে পড়ল, একটা ছাউনীর নিচে। ছোট ছোট ঢেউ খেলে যায় আপাত: শান্ত পুকুরের জলে। যেন মনের প্রতিচ্ছবি। শতেক চিন্তার ফুট কাটায় আলোড়িত। এই আছে এই নাই। শুধু রয়ে যায় রেশ, প্রচ্ছন্ন ক্ষিপ্রতায়, কোন থেকে কোনে।
ঘড়ির কাঁটা চলে ধীর লয়ে। তারপরও কখন মধ্যরাতের পালা শেষ হয়ে বাজে শেষ প্রহরের ঘন্টি। অস্থির মন কিছুতেই শান্ত হয় না। হিমেল কুয়াশার চাদরে ঢাকা চারপাশ নির্জন প্রশান্তির আবেশ আনার প্রচেষ্টায় ব্যার্থ হাতছানি দেয়। আবার উঠে হাঁটতে থাকে নির। আজকে আর ঘুম আসবে না। দপ্দপ্ করে লাফায় মাথার পাশের শিরা। পাড় ঘুরেই দেখে বাংলোগুলোর পরে কিছু গাড়ি পার্ক করা। সন্ধ্যায় একটা অনুষ্ঠানের রিহার্সেল ছিল। হাফট্রাক গুলোতে সাউন্ডের যন্ত্রপাতি উঠান হচ্ছে। বিষন্ন চালক বিরক্ত মূখে তাড়া দেয়। সকালের আগে ফিরতে হবে শহরে। শিয়ালের ডাক শোনা যায়। আর কিছু মোরগের ভয়ার্ত আর্তনাদ।
পুকুরের এইপাড়ে একটা বাঁশের বেন্চি, মস্ত একটা আমগাছের নিচে। নির কিছুক্ষণ বসল সেইখানে। গাছের ডাল নিচু হয়ে এগিয়ে গেছে পুকুরের মধ্য পর্যন্ত। কুয়াশায় ম্লান চাঁদের ছায়া ফেলে পুকুরের পানিতে। নির মনে করার চেষ্টা করল, শেষ কবে পুকুরে নেমেছে। ধোঁয়াওঠা পুকুরের পানি নিরকে ডাকে শীতল পরশে আলিঙ্গনে। একটা কুকুর শুয়ে আছে কাছেই, ইটের বাঁধাই করা ঘাটে। মাঝে মাঝেই মাথা উঠিয়ে বিরক্ত ভরে তাকায় নির-র দিকে। তার শান্ত দুনিয়ায় এক অনাহুত আগন্তুক। চেনা ঘ্রাণের বেসাতিতে এক অচেনা ঘ্রাণ।
আবার উঠে পড়ে নির। হাঁটতে শুরু করে। গন্তব্য অনিশ্চিত।
অমিত্রাক্ষর
অমিত্রাক্ষর@জিমেইল ডট কম
মন্তব্য
'নির' - মনে হচ্ছিল এটা যেন কোনো নামের অপভ্রংশ! এই নামটার মানে কী? দৃশ্যবর্ণনা ভালো লাগল।
ধন্যবাদ।
'নির' বা 'নীর' মানে পানি বলেই জানি, কিন্তু বানানটার ব্যাপারে নিশ্চিত নই। লেখার সাহস পেলাম সচেতন পাঠক/পাঠিকাদের ভরসায়; ভুল হলে নিশ্চয়ই ঠিক করে দেবেন। চরিত্রের মানসিক বহমানতা চিন্তা করেই নামটা দেয়া। অপভ্রংশও বটে, কিন্তু সেটার মাহাত্ন্য স্বল্পই।
অমিত্রাক্ষর
অমিত্রাক্ষর@জিমেইল ডট কম
" সবুজঘাসের ক্ষতি যা হবার তা তো হয়েই গেছে। কিন্তু মন সায় দেয় না। মনের গহিন কোন থেকে অদৃশ্য কোন মন্ত্র পা দুটোকে ঘাসের স্পর্শ নিতে লোলুপ করে তোলে। মনের উপর সচেতন ইচ্ছার ভার চাপিয়ে নির এগিয়ে যায়। পথ সায় দিক আর না দিক আর মন যতই দিকনা কেন কূমন্ত্রণা, গন্তব্য হতে হবে সুনিশ্চিত।"
চমৎকার!
ধন্যবাদ ভাই। মনে সাহস পেলাম।
অমিত্রাক্ষর
অমিত্রাক্ষর@জিমেইল ডট কম
বেশ ভাল লেগেছে। ঘেসো পথের বর্ণনায় কেন যেন রবার্ট ফ্রস্টকে মনে করিয়ে দিল।
"....be one traveler, long I stood
And looked down one as far as I could
To where it bent in the undergrowth;
Then took the other, as just as fair,
And having perhaps the better claim,
Because it was grassy and wanted wear;
Though as for that the passing there
Had worn them really about the same, "
বাপরে! অত্যন্ত আনন্দিত।
অমিত্রাক্ষর
অমিত্রাক্ষর@জিমেইল ডট কম
লেখাটা উপর দিয়ে গেল। ব্যাপার না।
ফ্রস্টের শেষ যেই পংক্তিটা দেখসিলাম, মজা লাগসিলো।
কোনটা লেখাটা? ফ্রস্ট না আমারটা?
অমিত্রাক্ষর
অমিত্রাক্ষর@জিমেইল ডট কম
বর্ণনা ভাল্লাগলো।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
জেনে সুখিতঃ :)। উৎসাহের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
অমিত্রাক্ষর
অমিত্রাক্ষর@জিমেইল ডট কম
গল্প ভাল লাগল।
ধন্যবাদ কৌস্তভ ভাই।
অমিত্রাক্ষর
অমিত্রাক্ষর@জিমেইল ডট কম
নতুন মন্তব্য করুন