জহিরুল ইসলাম নাদিম
খেলাধুলো জীবনেরই অংশ। তবে জীবনের যে সার্থক অনুবাদ ক্রিকেটে পাওয়া যায় তা অন্য ডিসিপ্লিনে কোথায়? গৌরবময় অনিশ্চয়তার যে অভিধা তা কেবল অভিধান খুলে লাগিয়ে দেয়া হয়নি। খাটে বলেই খাটানো হয়েছে। একদম মশারি খাটানোর মতো! মশারি যেমন আমাদের বিছানাকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে রাখে ক্রিকেটও তেমনি জীবনকে আলিঙ্গন করে আছে। কোনো কিছুই জীবনের বাইরে নয়। সবই জীবন থেকে নেয়া। কী নেই ক্রিকেটে যা জীবনে আছে? রোমাঞ্চ, সাসপেন্স, সংঘাত, ষড়যন্ত্র - মায় রোমান্স পর্যন্ত! সব আছে সব।
এল বি ডাব্লুর কথাই ধরুন। চাকরি চেয়ে অ্যাপ্লাই করেছেন কিন্তু আর কিছুর অ্যাপ্লাই (মামা, কাকা, টাকা!) করেননি। তো ভাইভার দিন ‘ভাইভা চিন্তা’ উত্তর দেয়ার প্রতিজ্ঞা করে বোর্ডে উপস্থিত হয়েছেন। গিয়ে দেখেন ভাইভা হাওয়া। মানে পরীক্ষা হওয়ার আগেই কোনো কামেল কিসিমের লোক চাকরি বাগিয়ে বসে আছে। মানে এল বি ডাব্লু হয়ে গেছে! স্টাম্পে লাগার আগেই ব্যাটসম্যান আউট হওয়ার মতো পরীক্ষা দেয়ার আগেই চাকরির উমেদার বাতিল।
বোল্ড হয়নি এমন প্রেমিক হাজারটা খুঁজলেও একটি মিলবে কি না তা নিয়ে ঘোরতর সন্দেহ আছে। ধার চাইতে গিয়ে বোল্ড হওয়া, পরীক্ষার প্রশ্ন আউট করে মনের সুখে পরীক্ষা দিতে গিয়ে ‘খ’ সেট প্রশ্ন পেয়ে বোল্ড হওয়ার মতো কত ঘটনাই না আমাদের অ্যাকাউন্টে জমে আছে!
লুকিয়ে প্রেম করতে পার্কে গেছেন। হঠাৎ দেখেন প্রেমিকার বাবা জনৈকা সুন্দরীর বগলদাবা হয়ে হাওয়া খাচ্ছেন। একে বারে হাতে নাতে কট। তবে কে যে কার শিকার তা ভবিতব্যই বলবে।
বাস-ট্রাকের চাপায় পিষ্ট হয়ে কত কোমল প্রাণ যে জীবনের ইনিংস থেকে রান আউট হচেছ তার ইয়ত্তা কে রাখে? বেসরকারী আপিসে নয়টা-ছয়টা চাকরি পেয়েছেন। কিন্তু ভীষণ কড়াকড়ি- পান থেকে চুন খসলেই খেসারত। সবই টাইট সেখানে, কেবল বেতন দেবার ব্যাপারটি ছাড়া। তো পথে নেমেই আপনি বোল্ড কারণ বাস ধর্মঘট। হেঁটে কোনো রকমে অফিসে লেটে ঢুকে দেখেন অলরেডি টাইমড আউট হয়ে বসে আছেন আপনি। মানে দেরীর কারণে চাকরি নট!
এতো গেল আউটের কথা। নট আউটের ব্যাপারও আছে। বুড়ো দাদু পৃথিবীর তাবৎ ঝড় ঝাপটা সয়েও টিকে আছেন। নাতি তার নববই তম জন্মবার্ষিকীর কেকে লিখিয়েছে ‘দাদু নাইনটি নট আউট’!
লটারির টিকেট কিনেছেন। ফল বেরিয়েছে পত্রিকায়। আপনি মেলাচ্ছেন। ঙ ০৩১২... হবহু মিলে যাচ্ছে...৫২১...দারুণ! আপনি এবার পঁচিশ লাখ জিতছেনই...আর মাত্র দুটো সংখ্যা...৭...আপনার লাফ দেখে কে...বাকী কেবল একটি সংখ্যা, আর এক দরকার। একটি সংখ্যাই দরকার আর সে সংখ্যাটি আসলে এক। কিন্তু আপনাকে হতাশার আউট ফিল্ডে রেখে নম্বর বেরুলো শূণ্য। শেষ বলে ‘ডাক’ মারাতে পঁচিশ লাখের সাথে পুরো জীবনই গেল আপনার।
আপনার প্রতিবেশীর ছেলে স্কুল-কলেজের সব পরীক্ষায় জি পি এ ফাইভ/গোল্ডেন ফাইভ পাচ্ছে। ভাল ভাল প্রতিষ্ঠানে চাকরির অফার পাচ্ছে সে। মানে ফর্মের তুঙ্গে এখন সে। প্রতি ম্যাচেই সেঞ্চুরি/ডবল সেঞ্চুরি হাঁকাচ্ছে ছেলে।
অফিসেই আপনার কলিগ শেয়ারে বিনিয়োগ করেই রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। যে লটেই বিনিয়োগ করে তার দামই বেড়ে যায়। বোঝাই যাচ্ছে কলিগের টসভাগ্য বড়ই সুপ্রসন্ন। যে পুত পুত করে এক দুই রান না নিয়ে ‘বীরু’র মতো সপাটে ব্যাট চালিয়ে বল সীমানা ছাড়া করতে পারে দেখবেন রাতারাতি সাফল্য ধরা দিয়েছে তার হাতেই।
পাশের বাড়ির ছোকড়াটাকে আপনার কাছে পাঙ্ক বলে মনে হয়। অথচ পাড়ার রূপসীরা ওর পেছনেই লাইন দিলে বুঝবেন ছোকড়া ফিল্ডিংটা বেশ ভালই রপ্ত করেছে। ক্লাসে অন্য সারির বেঞ্চে বসা বান্ধবীর কাছে জরুরী চিরকুট নির্ভুল ভাবে পৌঁছুতে চাই ক্রমাগত থ্রোয়িং প্র্যাকটিস।
মিলের আর কী দেখলেন- বিভিন্ন ইনিংস নিয়েও নানান মিল দেখানো যায়। বিয়ের আগের ইনিংস বিয়ের পরের ইনিংস। মাঝে মাঝে আপনাকে পুরো ইনিংস ডিফিটও খেতে হয়। আপনার সাথে দীর্ঘদিন প্রেম করে যখন ধনী দোজবরে এক লোকের গলায় মালা দিল আপনার প্রাক্তন হৃদয়েশ্বরী তখন ইনিংস ডিফিটের মজাই তো আপনি পেলেন! সব সময় হারজিৎ-ই হবে তা কিন্তু নয়। মাঝে মাঝে ড্রও হয়। গিন্নীর সাথে ঝুম ঝগড়া করে যথাসময়ে আবার মিটমাট করে নিয়েছেন মানে ড্র করেছেন।
এই লেখাকে ফলো অন করিয়ে আবার লেখা যায় তবে তাতে জীবনের সাথে ক্রিকেটের মিল তো আর কমবে না বরং বাড়বে। তাই মানে মানে ইনিংস ঘোষণা (লেখা শেষ) করে দেয়াই সমীচিন, কী বলেন?!
মন্তব্য
মজার অনুসন্ধান। ক্রিকেট মারাত্মক ভালু পাই। আমিতো এখনই ওয়ার্ল্ড কাপের দিন গুনছি।
ধন্যবাদ নুসদিন। আমিও সে অপেক্ষাতেই আছি।
জহিরুল ইসলাম নাদিম
মজার লেখা। কিন্তু ব্যাটসমান, ফিল্ডারের দিক থেকে লিখলেন, বোলারদের দিক থেকে কিছু দিলেন না তো? কোনটা গুগলি, কোনটা বাউন্সার? কোনটা আবার (ভেত্তোরি-বণ্ড বাদে) কিউই বোলারদের মত ডিবলি-ডবলি?
হা হা ..মজা পেলাম লেখায়।
নতুন মন্তব্য করুন