ভাদ্রমাসের ক্লান্ত বিকেল। ভ্যাপসা গরম। খাঁ-খাঁ করা একটি জনশূন্য ফুটপাতে বসে ভাবছি, সকলেই যেন কিছু না কিছু চাইছে, কিছু না কিছু খুঁজছে। কি চাইছে, কিংবা খুঁজছে? কিছু একটা তো নিশ্চয়ই।
পাত্র’র বাবা-মা পাত্রী খুঁজছে, পাত্রী’র অভিভাবকরা পাত্র।
উপেক্ষিতা স্ত্রী অপেক্ষা-প্রতীক্ষা’র পার্থক্য নিয়ে ভাবতে ভাবতে গোপনে গোপনে চোখের জলে বুকটি ভাসায় মধ্যরাতে।
নির্যাতিতা স্ত্রী, নারী সংগঠনের নারী নেত্রীটির চেহারাতেও নির্যাতনের চিহ্ন দেখতে পায়।
আর নির্যাতিত স্বামী? সে হয়তো দরজা বন্ধ করে টয়লেটের ভিতর সময় পার করে একলা একা।
একাকী বৃদ্ধা শূণ্যে চেয়ে শূণ্য হতেই সঙ্গী খোঁজে।
নাকে সিকনি ঝরা বালক ঝোপের আড়ে হারানো মার্বেলের খোঁজে হা-হুতাশ করে।
মধ্যবিত্তের শ্যামলা রঙের কুমারী মেয়েটির মা ক'দিন ধরেই উদ্বিন্ন কোন এক গুপ্ত ক্লিনিকের খোঁজে।
ক্যাশিয়ার সাহেব একটা বড় অংকের ক্যাশ ভাউচারের খোঁজে বড় কর্তার ভয়ে তটস্থ।
পার্থিব নানা রঙের রস আস্বাদন হতে বিরত থেকেও বোধি বৃক্ষের তলায় দু’চোখ মুদে বসে আছেন বিবাগী ব্রহ্মচারী।
দুর্গম হিমালয়ের চূড়ায় নব আবিষ্কারের কিছু নেই জেনেও ছুটে যাচ্ছে নবাগত পর্বতারোহী।
ভণ্ড প্রেমিক বিছানাকে ফোকাস করে, বিভিন্ন এঙ্গেলে গোপন ক্যমেরা বসিয়ে সুখ স্বপ্নে বিভোর।
তিরিশ বছরের পুরনো সংসার ভেঙ্গে নতুন বাসর সাজায় মাছরাঙ্গা রঙের রঙ্গিলা কোন মন।
বিশ্বপিতারা নতুন কোন দেশ হামলায় রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মগ্ন।
নিশ্চিত মৃত্যুর দুয়ার হতে সদ্য ফেরত আসা বৃদ্ধ নব উদ্যমে জীবন শুরু করতে উদগ্রীব।
ফিল্মের ডাকসাইটে পরিচালক তার নতুন ছবির জন্য লাস্যময়ী নতুন নায়িকার খোঁজে চিন্তিত।
উঠতি মাস্তানকে কি করে দমানো যায় সেই ভাবনায় অস্থির পাড়ার পুরনো মাস্তান।
সদ্য ধর্ষিতার অসহায় পিতাটি রান্নাঘর আর স্টোর রুম তন্ন তন্ন করে কি যেন খুঁজে।
ফুটপাতের অন্ধ ভিক্ষুক ঘুম থেকে জেগে সুতলি দিয়ে বাঁধা তার বহু পুরনো চশমা হাতড়ে মরে।
নিম্নাঙ্গে বস্তা পেঁচানো পাগলটি সর্বদাই অদৃশ্য কারো সাথে তর্কে লিপ্ত।
কিবোর্ডে এক বিবাহিত পুরুষের ঘর্মাক্ত আঙ্গুল সদা ব্যস্ত ইন্টারনেটের বিশেষ ওয়েবসাইটের সন্ধানে।
সরদার বাড়ীর নতুন বউটি বাসরের পরদিন মুখ গোঁজ করে বসে থাকে হারানো নাকফুলের আফসোসে।
থ্রি স্টার হোটেলের অনতিদূরের ডাস্টবিনে হাঁটু গেঁড়ে বসে থাকে কঙ্কালসার প্রৌঢ়।
কিশোরী মেয়েটি আলতার বোতলের খোঁজে খাটের নীচ, আলমারীর তলা, ভাঙ্গা ট্রাঙ্কের ভেতরটা তছনছ করে।
রেল লাইনের পাশের ঝুপরির ওই ডবকা যুবতীটি গাল দিতে দিতে কিপ্টা খদ্দেরের ধাত্রীকে সহ কবর থেকে তুলে আনার দশা।
আঁচলে নীচে কাঁচা মাংশ নিয়ে সটকে পড়ার ফাঁক খুঁজে ঠিকা ঝি।
মক্কেল খুনী, নিশ্চিত জেনেও ভোর পর্যন্ত আইনের মোটা মোটা বই ওল্টায় আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বিশিষ্ট আইনজীবি।
অসহিঞ্চু যৌবন যাতনায় হাতে দুর্বিন নিয়ে বাথরুমের জানালা দিয়ে কি যেন খোঁজায় ব্যস্ত যুবক ছেলেটি।
রাস্তার মোড়ের ট্রাফিকটির চোখজোড়া কালো চশমার আড়ালে খুবই সজাগ।
‘নোভেল’ পাওয়া বিজ্ঞনীটি নতুন প্রতিষেধক আবিষ্কারের নেশায় অনুবীক্ষন যন্ত্রের উপর হুমড়ি খেয়ে থাকে।
হিরোইনের পুরিয়া হাতে নিরাপদ স্থানের খোঁজে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ায় ভদ্র ঘরের সন্তান।
যখন এই সমস্ত গাঁজাখুরী খোঁজাখুঁজির ব্যাপার মাথা থেকে ঝেরে ফেলার কথা ভাবছি, তখন বিরক্তিতে থু থু ফেলতে গিয়ে একদিকে চোখ গেল। বুকের ভিতর থেকে ভস্ করে কিছু বায়বীয় জীবাণু বেরিয়ে এল। শুধু মানুষের কথা আওড়াচ্ছি কেন আমি? আমিতো তাদেরই একজন। আমিও কি সাধু, সফেদ? আমার মাথায় কি কিলবিল করে না কালো কালো কৌতুহল?
আড় চোখে দেখতে লাগলাম; ল্যামপোস্টের নীচে যৌবনা এক কুক্কুরীর পিছে ঠাঁই দাঁড়িয়ে লোল ঝরাচ্ছে ছাল ওঠা এক নেড়ি কুত্তা।
নাসির উদ্দিন খান
email:
মন্তব্য
আমার কাছে অনেকটা কবিতার মত লাগলো। অনেক গুলা বাস্তব ঘটনাগুলা একসাথে তুলে ধরেছেন।
কবিতা খুব পছন্দ বুঝি?
যাই হোক, লেখাটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
এই অংশটুকু একটু খাপছাড়া লাগল কেন জানি। বাকি গল্পটা বেশ লাগল
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
ভেবে দেখলাম, আপনার কথা ঠিক।
প্যারাটা এখন আমারও খাপছাড়া লাগছে।
ধন্যবাদ নিবিড়।
অসাধারণ।
এতো অবজারভেশন করাও অনেক কঠিন কাজ।
আপনার মন্তব্যে অনুপ্রণিত হলাম কামরুল ভাই।
ধন্যবাদ আপনাকে।
হুমম
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
তবু সবাই জানে তারা কি খুজছে...কিন্তু আমি???...এখনো জানি না কি খুজছি আমি..!!
তোফযেল৭১@জিমেইল.কম
আপনি কি খুঁজছেন তা আপনি ভাল করেই জানেন।
নইলে বুঝলেন কি করে যে, আপনি কি খুঁজছেন তা আপনি জানেন না?
আর যদি সত্যিই না জেনে থাকেন, তাহলে কারো কাছ থেকে জেনে নিতে হবে।
আবার কার কাছ থেকে জানতে হবে, সেটাও একটা জানার বিষয় বটে।
এই ‘জানার বিষয়’টা জানার জন্য আপনাকে কিছুটা অপেক্ষা করতে হবে।
সেই অপেক্ষার সময় কোনটা, সেটি আপাতত জেনে রাখুন;
‘যেদিন আপনার মনে হবে, আপনি এখন জানার উপযুক্ত হয়েছেন, সেদিন আপনি আপনিই জানতে পারবেন যে, আপনি কি খুঁজছেন।’
ধন্যবাদ ভাই।
বেশ লাগল। আপনার স্যাম্পল করা ঘটনাগুলোর বিস্তার বেশ বড়।
ধন্যবাদ কৌস্তুভ ভাই।
আপনার নামটাই তো একটা ছোটগল্প দেখছি।
কি অর্থ এর?
চমৎকার কোলাজ।
অমিত্রাক্ষর
অমিত্রাক্ষর@জিমেইল ডট কম
মন্তব্যের 'কোলাজ' শব্দটা দারুণ লাগল।
এটাই মাথায় ঘুরছিল।
ধন্যবাদ ভাই।
ভালো লাগলো......
সব পাখি ঘরে আসে--সব নদী--ফুরায় এ-জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন
"যখন এই সমস্ত গাঁজাখুরী খোঁজাখুঁজির ব্যাপার মাথা থেকে ঝেরে ফেলার কথা ভাবছি, তখন বিরক্তিতে থু থু ফেলতে গিয়ে একদিকে চোখ গেল। বুকের ভিতর থেকে ভস্ করে কিছু বায়বীয় জীবাণু বেরিয়ে এল। শুধু মানুষের কথা আওড়াচ্ছি কেন আমি? আমিতো তাদেরই একজন। আমিও কি সাধু, সফেদ? আমার মাথায় কি কিলবিল করে না কালো কালো কৌতুহল? "
এই অংশটা এতটা খোলাসা করে না বললেও চলত মনে হয়। শেষ লাইনটাই ওটার বক্তব্য প্রকাশ করে। বাকিটা সুন্দর, অনেকটা কবিতার মত লাগল,চিত্রকল্পময়।
ফারাবী
আপনার ছোট্ট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাই।
বেশ কয়েকবার পড়লাম। আপনার কথাটা ঠিক বলে মনে হল।
সম্পাদনাটা নিজের খাতায় করলাম, এখানে আর ঠিক করলাম না।
সার্থক নাম।
আসলেই এক একটা লাইন এক- একটা গল্প।
লিখা পড়তে পড়তে যেন হারিয়ে গিয়েছিলাম।
শেষ অংশটুকু অবশ্য ঈষৎ অনুমিতই ছিল।
সাত্যকি
ছোট্ট একটা মন্তব্য একজনকে অনেক অনুপ্রাণিত করতে পারে।
যেমনটা আমি হলাম।
অনেক ধন্যবাদ।
অন্যরকম একটা লেখা পড়লাম। অনেক ভাল লাগল।
আদনান0০৭
অন্যরকম লেখাটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ আদনান ভাই।
ভাল থাইকেন।
বাহ! ৫*
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
নতুন মন্তব্য করুন