দ্যা প্রজেক্ট অফ অ্যা লাইফটাইম

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ০৩/১১/২০১০ - ৫:২৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এবং কোন এক শুভক্ষণে আমাদের "রিমোট কন্ট্রোলড মাউস" আমাদের কোড করা মুদ্রার তালে তালে ন্‌ত্য জুড়ে দিলো। আমরা রিমোটের "Channel+" বাটন প্রেস করলে সে সাঁই করে উপরে লাফ দেয়, আবার "Channel-" এ প্রেস করলে ভালো ছেলেটির মত নিচে নেমে আসে। "Volume+" এ প্রেস করলে সে খানিকটা ডাইনে সরে, অবশ্য "Volume-" এ চাপ দিলে ভোল পাল্টে বামপন্থী হতে ভুল করে না। রিমোটের ২ আর ৩নম্বর বাটন দুটি পরপর প্রেস করলে সে যে কোন ফাইল ড্র্যাগ করে আবার ড্রপ করতে পারে। আমরা সবাই তো মহাখুশি। আমি , কোপা (আসল নাম হাসিব। কবে থেকে ঠিক কী কারণে আমরা ওকে 'কোপা' ডাকা শুরু করেছিলাম , সে ইতিহাস আজ কালের গহবরে হারিয়ে গেছে। কেউ খোঁজাখুঁজি করে হয়রান হবেন না প্লিজ) তো আনন্দে মাউসের সাথে সাথে নাচা শুরু করলাম। আমি বললাম, "Guys, this calls for a celebration".কিন্তু কে শোনে কার কথা? মহামতি লুনার আর খালিদ দেখি স্টিল দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। কেয়া হুয়া? প্রজেক্টে তো কোন এক্সট্রা ফিচার তো যোগ করা হল না। অতীব সত্যি কথা। এখন কী করা? সেটা আমরা লুনারের মুখেই শুনি,"হাতে তো আরও কিছুদিন সময় আছে। এর মধ্যে আমরা কীবোর্ডের কাজটা করে ফেলি। (মানে রিমোট দিয়ে একই সাথে মাউস আর কীবোর্ড কন্ট্রোল করা যায় কিনা)। আর তুমি তো প্রজেক্টের কাজ কিছুই করলা না। এখন ভিডিও আর এডিটিং এর দায়িত্বটা তুমি নাও।" "মাই প্লেজার, মাই প্লেজার"। ঠিক এই কাজটাই মনে অনে চাচ্ছিলাম আমি। তা না দিয়ে রিপোর্ট লিখতে দিলে বসে বসে মুড়ি খেতে হত আমায়। যাই হোক, ঠিক করলাম, পরদিনই পুণ্যভূমি মিরপুরে (মিরপুরে আমাদের ক্লাসের সব রথী-মহারথীদের বসবাস। এদের সাথে দুমিনিট কথা বললেও অনেক জ্ঞান হয়। এজন্য মিরপুরকে পুণ্যভূমি বলছি।) গিয়ে এক ফ্রেন্ডের কাছ থেকে একটা Sony Cyber Shot বাগিয়ে নেব নে।

পরদিন শুক্রবার। সকাল ১১টার মত বাজে। বন্ধু ডালিমকে ফোন করে বললাম, "বন্ধু, আমি তো MNA(মিরপুরে নতুন আসছি)। তোর বাসা ঠিক চিনতে পারবো না। আমি ফোন দিলে তুই আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাস।" ডালিম বললো, "ওকে, Done. তোর জন্য জান কুরবান।" তো মিরপুরে গিয়ে আমি ১ নম্বরের পুলিশ ফাঁড়ির বাইরে অবস্থান নিলাম। একটু পর দেখি, ভেতরের পুলিশ দেখি আমার দিকে সন্দেহজনক দ্‌ষ্টিতে তাকাচ্ছে। আচ্ছা, আমার চেহারায় কি কোন দুই নম্বরি ভাব আছে? তা না হলে সবাই আমার দিকে এমন করে তাকাবে কেন? এর আগেও মিরপুরে খেলা দেখতে হিয়ে এক লোক আমাকে ব্ল্যাকার ভেবে আমার কাছে টিকেট চাইতে এসেছিলো। বাংলাদেশ সেবার প্রথমে ব্যাটিং করে ২৯৬ রান করেছিলো। তো সেই লোক আমাকে ২০০ টাকার ৩৩০ টাকা পর্যন্ত সেধেছিলো। খেলার তখন মধ্যাহ্ন বিরতি। আমি যত বোঝাই, "ভাই, আপনি আমাকে যা ভাবতেসেন আমি আসলে সেরকম ছেলে নই।" সে তত রেট বাড়ায়। পরে বন্ধু ডালিম এসে আমাকে সে যাত্রা উদ্ধার করে। যাক্ সে কথা। পুলিশের বিষদ্‌ষ্টিকে উপেক্ষা করে আমি ডালিম কে ফোন দিতে থাকলাম। কী কারণে জানি ***জাদা ফোন ধরতেসিল না। এর মধ্যে পুলিশ বাবাজি দেখি আমার বেশ ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি খানিকটা বিব্রত বোধ করছি। এক পুরুষমানুষ কেন আরেক পুরুষমানুষের এতো ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়াবে? (আমার কলুষিত মন!!!) এটা কি ইউরোপ-আমেরিকা নাকি? আমি ভদ্রতাবশত বাবাজির দিকে তাকিয়ে একটু হাসলাম। সেও ফিরতি একটা হাসি দিল। আমি আবার হাসলাম। বাবাজি এবার মুখ খুললেন, "এক্সকিউজ মি, আপনার মোবাইলটা কি একটু দেয়া যাবে? আমার ব্যালান্স শেষ হয়ে গেছে। বাসায় একটা জরুরী ফোন দেয়া দরকার।" পুলিশ ভাইজানের ব্যবহারে আমি রীতিমত মুগ্ধ। ইনাকে মোবাইল দেব নাতো কাকে দেব? ইনার দোয়ায় যদি ভালোয় ভালোয় আমাদের ভিডিওর কাজটা আজ হয়ে যায়!

সিভিল বিল্ডিঙ্গের দোতালার এক চিপায় আমরা চার জন ভিডিও করছি। এমন সময় কোত্থেকে না কোত্থেকে নাম না জানা এক মামা এসে হাজির। মামার বক্তব্য, এখানে তো ভিডিও করা যাবে না। ভিসি স্যারের অনুমতি লাগবে। নিদেনপক্ষে ডিপার্টমেন্টের হেড-এর। মেজাজটা গেলো বিগড়ে। এমনিতেই ভিডিও কিছু হচ্ছে না, তার উপর এইসব মামাবাড়ির আবদার সহ্য হয়? ভাবলাম, মামাকে একটু চা-নাশতা করিয়ে খুশি করে দেব নাকি। তাতে যদি মামার মনটা একটু গলে। সেরকম কিছু করা লাগলো না। কিছুক্ষণের মধ্যেই প্‌থিবী অবাক তাকিয়ে দেখলো, লুনারের সাথে মামার সে কী ভয়াবহ খাতির। লুনার বরিশালের ছেলে, আমাদের মামাও বরিশালের। আর যায় কই? মামার কয় ছেলেমেয়ে, কয় জনের বিয়ে হয়েছে, ক'জনের বাকি আছে ইত্যাদি সব হিস্ট্রি সে নিমেষে উদ্ধার করে ফেললো। মামাও দেখলাম অতি আগ্রহের সাথে তার জীবন কাহিনী বেচারা লুনারকে বলে চলেছেন। মামা খুশি, আমরা ভাগ্নেরাও খুশি। যাবার সময় মামা বলে গেলেন, "ভিডিউ শেষ করে একটু ডিপার্টমেন্টের হেড এর অনুমতি নিয়া যায়েন। সব কিসুরই তো একটা নিয়ম আসে নাকি?" বলা বাহুল্য, আমরা আর নিয়মের ধারকাছ দিয়ে গেলাম না। সূর্য ডোবার আগেই ভিডিওর কাজ শেষ করে ভালু ছেলেটির মত বাদুড়ঝোলা হবার জন্য বেড়িয়ে পড়লাম।

বাসায় এসে দেখি কম্পিউটার ছোট ভাই'র দখলে। জিজ্ঞেস করলাম, "কী করিস?" ওপাশ থেকে ঠান্ডা গলায় উত্তর এল, "কালকে মেকানিক্স কুইজ। পড়তেসি। ডিস্টার্ব দিও না।" নর্ম্যালী ওর সাথে আমার তুই-তোকারি রিলেশন। "বড় ভাই, এই অঙ্কটা একটু বুঝিয়ে দে না", "বড় ভাই, এই ওয়ার্ডটার মিনিংটা একটু বল না", এই হচ্ছে ওর সাথে আমার কথাবার্তা। এই মুহূর্তে ও আমার সাথে তুমি তুমি করে কথা বলছে। তার মানে অবস্থা সিরিয়াস। এখন ওকে না ঘাঁটানোই ভাল। ভাল, আমিও একটা অজুহাত পেয়ে গেলাম। ওই দিন আর এডিট করতে ইচ্ছে করতেসিলো না। খেয়েদেয়ে বোকাবাক্স খুলে খেলা দেখতে বসলাম। সেদিন রিয়েলের কী একটা খেলা ছিল আবজাব কোন দলের সাথে (মোস্ট প্রোব্যাবলী দলটার নাম রিয়েল রেসিং)। বিশ মিনিটের মধ্যে রোনাল্ডোর দুটো গোলও দেখতে হল। আমি আবার রিয়েলকে দু'চোক্ষে দেখতারি না। রিয়েলের কোন সাপোর্টার থাকলে ক্ষমা করবেন, প্লিজ। এই দলের কিছু কিছু প্লেয়ারকে আমার কেন জানি খুব অহঙ্কারী, আত্নম্ভরী মনে হয়। টাকার গরমে যাদের কখনো মাটিতে পা পড়ে না। বোকাবাক্স বন্ধ করে তাই বুদ্ধিমান বাক্সের খোঁজ নিতে এলুম। পাঠক বুঝতেই পারছেন, আমাদের বাসায় বুদ্ধিমান বাক্স ওই একখানাই। বেচারাকে নিয়ে তাই এতো টানাটানি। নাহ, বাক্সের সামনে মালিকপক্ষীয় কেউ নেই। ভাবলাম, এডিটিং টা তাহলে সেরেই ফেলা যাক। রাত তখন একটা। এখন কাজ শুরু করলে চারটার মধ্যে এনশা-আল্লাহ খতম করেই উঠবো। আল্লাহর নাম নিয়ে কাজে লেগে গেলাম।

অভাগা যেদিকে যায়, সাগর শুকিয়ে যায়। এই সেন্সে আমাকে মোটামুটি প্রথম শ্রেণীর অভাগাই বলতে হবে। তা না হলে, রাত দেড়টার সময় কেন কারেন্ট যাবে? একটা Scene ও এডিট করা হয়নি এখনো। পরদিন লুনারকে কী অজুহাত দেব তাই ভাবছি বসে বসে। ছোট ভাই'র কারণে কম্পু'র দখল পাই নি- একথা তো ভুলেও স্বীকার করা যাবে না। বড় ভাই হিসেবে আমার একটা ইজ্জত আসে না? :পি। তো এই অবসরে আমি মনে মনে একটা ঝাড়া বক্ত্‌তা রেডী করে ফেললাম। "দেখো, লুনার, জীবনে তো কখনো এডিটিং করো নাই, একজন এডিটরের উপর দিয়া যে কত ঝড়-ঝাপ্টা যায়, তুমি বুঝবা কেমনে? এক একটা Scene এডিট করতে কত ঘণ্টা শ্রম দিতে হয়, তুমি জানো?" এখানে সত্যি কথাটা একটু স্বীকার করি। যারা কখনো সখনো এডিটিং করেছেন, তারা নিশ্চয়ই জানেন, এহেন সোজা কাজ প্‌থিবীতে খুব কমই আছে। হ্যাঁ, আপনি যদি স্পেশাল এফেক্ট-টেফেক্ট দিয়ে তুমুল গোছের কিছু তৈরি করতে চান তো ভিন্ন কথা। সিম্পল যে ভিডিও কাটাকাটি, তা করার মধ্যে গৌরব বা ভাব নেয়ার কিছু নেই। কপি-পেস্ট ছাড়া কম্পিউটারের আর কোন কাজ জানে না এমন কোন লোককেও একটু দেখিয়ে দিলে সে ঘন্টাখানেকের মধ্যে গোটা ব্যাপারটা শিখে নিতে পারবে।

শেষ পর্যন্ত অবশ্য লুনারের কাছে আর আলগা ভাব নিতে হয় নি। কীভাবে কীভাবে যেন সেই রাতেই এডিটিং এর কাজ শেষ করে ফেললাম। প্রজেক্টের কাজে এই প্রথম কিছু কন্ট্রিবিউট করলাম। সত্যি বলছি, অন্যরকম একটা ভাল লাগায় পেয়ে বসেছিলো আমাকে ওই মুহূর্তে। একটু পরেই ফজরের আজান দেবে। বরাবরের মতই আমাকে শয়তানে পেয়ে বসেছে। সো, দিলাম ঘুম। বৎসরের সেরা ঘুম। এমন ঘুম কে ঘুমিয়েছে কবে? স্বপ্নে দেখলাম, আমি একটা ফড়িং হয়ে গেছি। সবাই আমাকে ধরার চেষ্টা করছে, বাট পারছে না। কিন্তু হায়! যে জীবন দোয়েলের, যে জীবন ফড়িং-এর, সে জীবন আমার হয়তো কখনোই পাওয়া হবে নাঃ(

---আশফাক আহমেদ


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

হুমম...
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অতিথি লেখক এর ছবি

বস, ভালো মন্দ কিছু বললে ততুন লেখকের উপকার হয় যে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।