ডাক্তার

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ০৩/১১/২০১০ - ১০:৪০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

-- অনন্ত আত্মা

ডাক্তার বললেন –
- আপনার সমস্যাটা কি?
ফুপুর সাথে মিরপুরে চোখের ডাক্তারের কাছে আসছি। ফুপুর চশমার পাওয়ার বেড়েছে তাই ডাক্তারের কাছে আসবে, আমি বললাম, ‘চলেন আমারও চোখ দেখানো দরকার’। আমার বাসায় সবারই চশমা আছে শুধু আমারই নাই। স্কুলের বন্ধুদের অনেকেই চশমা নিচ্ছে। গরু, ছাগল মার্কা পোলাপান চশমার বদৌলতে কেমন বিজ্ঞ বিজ্ঞ জ্ঞানী জ্ঞানী চেহারা বানিয়ে ঘোরাঘুরি করছে। আমি অবশ্য এমনিই জ্ঞানী; সবার এ বিষয়ে সন্দেহ থাকলেও আমার অন্তত নিজের কোন সন্দেহ নাই। তবে সেই সঙ্গে যদি একটা চশমা চোখে থাকে তাহলে খুব ভাল হয়, সামনের বছরেই কলেজে ভর্তি হব, কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদেরও যেন বুঝতে সমস্যা না হয় যে আমি একজন মেধাবী স্টুডেন্ট। এই ধান্দাতেই চোখের ডাক্তারের কাছে আসা; যদি ডাক্তার একটা চশমার ব্যবস্থা করেন।
ডাক্তার আবার বললেন –
- সমস্যা কি আপনার?
আমি বললাম –
- মাঝে মাঝে মাথা ব্যাথা করে।
ডাক্তার সাহেব দেয়ালে টানানো কি সব আবজাব পড়তে বললেন; ধুপ-ধাপ সেগুলো পড়ে দিলাম। এরপর ডাক্তার আগের কথার খেই ধরে বললেন –
- মাঝে, মাঝে মানে কি? কত দিন পর পর?
- এই ধরেন চার, পাঁচ মাস পর পর ব্যাথা হয়; যে কারনে তেমন গুরুত্ব দেই না।
শুনে ডাক্তার সাহেব বললেন –
- আপাতত আমিও তেমন গুরুত্ব দিব না। এই ড্রপারটা সাত দিন দিতে থাকেন, ঠিক হয়ে যাবে।
আমি ক্ষীণ স্বরে বললাম –
- চশমা-টশমা লাগবে না?
- আরে না, আপনার চোখ ঠিক আছে।
চেম্বার থেকে বের হয়ে প্রেসক্রিপশনটা রাস্তায় ফেলে দিলাম; যেই প্রেসক্রিপশনে চশমা নিতে বলে নাই, সেটা রেখে লাভ কী।

আমাদের বংশে হার্ট ডিজিজের স্ট্রং হিস্ট্রি আছে এটা জানার পর মাঝে মাঝেই আমার বুকে ব্যাথা করত। অনেক সময় ব্যাথা এত বেশী করত যে মনে হত ৩/৪ টা হার্ট এ্যাটাক মনে হয় হয়ে গেল। আমার এক বন্ধু এক ডাক্তারের কথা বলায়, এক সন্ধ্যায় ওনার চেম্বারে গেলাম। গিয়ে দেখি কালো, থলথলা টাইপের এক লোক হাতে সোনালী চেনের একটা ঘড়ি পড়ে চেম্বারে বসে আছে। মনে মনে ভাবলাম আমি কি ভুল করে চালের আড়তে চলে আসলাম; এই চিন্তা করে ডাইনে বাঁয়ে চালের বস্তা আছে নাকি দেখার চেষ্টা করলাম। হঠাৎ করে ভদ্রলোকের গলায় ঝুলানো স্ট্যাথো দেখে বুঝলাম এই আদমই ডাক্তার। আমার সমস্যা বিস্তারিত শুনে, ইতং-বিতং চেক করে ডাক্তার জিজ্ঞেস করলেন –
- আপনি সাহসী না ভীতু?
আমি বললাম –
- মানে?
- ধরেন আপনি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন; হঠাৎ আপনার পিছনে কুকুর ডেকে উঠল। তখন কি আপনার বুক ধড়-ফড় করে?
আমি বললাম –
- ডাক্তার সাহেব শুনেন, একটা মানুষের ভেতর দুইটা জিনিস আপনি এক সাথে পাবেন না; এর মধ্যে একটা হলো জ্ঞান আর একটা হলো সাহস। আর আমি প্রথম জিনিসআলা লোক।

কিছু দিন আগে এ্যাপোলো হাসপাতালে গিয়েছিলাম চেকআপের জন্য। ডাক্তার জিজ্ঞেস করছিল –
- বুকে পেইন ছাড়া আর কোন সমস্যা?
আমি বললাম –
- মাঝে মাঝে মাথা ব্যাথা করে।
- কত দিন পর পর?
আমি বললাম –
- ধরেন বছরে ২/৩ বার।
ডাক্তার আবার জিজ্ঞেস করলেন –
- আর কোন সমস্যা?
এবার অবশ্য একটু চিন্তা-ভাবনা করেই বললাম –
- মাঝে মাঝে পা ব্যাথা করে।
- কখন ব্যাথা করে?
আমি বললাম –
- যেই দিন একটু বেশী হাঁটা হয় সেই দিন পা খুব ব্যাথা করে।
চেকআপ শেষ হবার পর সব রিপোর্ট, প্রেসক্রিপশন যখন হাতে পেলাম তখন ভাল করে চেক করে একটু অবাকই হলাম। ডাক্তার শুধুমাত্র আমার বুকে পেইন প্রবলেমটারই উল্লেখ করেছেন, অন্য আর কোন ব্যাথার কথা সেখানে লেখা নাই। মনে মনে ভাবলাম, ডাক্তার কী তাহলে আমার মাথা আর পা’র কোন দামই দিল না!


মন্তব্য

কামরুল হাসান রাঙা [অতিথি] এর ছবি

উদ্ধৃতি

"কালো, থলথলা টাইপের এক লোক হাতে সোনালী চেনের একটা ঘড়ি পড়ে চেম্বারে বসে আছে। মনে মনে ভাবলাম আমি কি ভুল করে চালের আড়তে চলে আসলাম"

ভাই, ডাক্তার হলেই যে একেবারে বাংলা সিনেমার নায়কের মত হতে হবে তা তো জানতাম না।

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

রাঙা ভাই এর সাথে সহমত।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

লেখা অনেক ইমপ্রুভ করেছে। লিখতে থাকলে লেখা হয়। লেখা চলতে থাকুক। এটা অনেকটাই ঝরঝরে হয়েছে। ভালোও লেগেছে। শেষে কোন টুইস্ট না থাকাতেই হয়তো অন্যরকম লেগেছে।

মূলত পাঠক এর ছবি

বক্তব্য কী বোঝা গেলো না। রম্যরচনা হলেই যে কোনো বক্তব্য ছাড়া চলবে এমনটা তো নয়। গল্পের "আমি" একটু রোগটোগ হোক এটা চায়, এবং ডাক্তারেরা সেটা পাত্তা দেয় না। এ-ই?

ব্যথা-কে ব্যাথা লিখেছেন দেখলাম, এছাড়া "বদৌলতে" কথাটা ভুল, "বামালসমেত"-এর মতো। হয় লিখুন "দৌলতে" অথবা "বদৌলত"।

দুর্দান্ত এর ছবি

এটা কেন রম্যরচনা বুঝতে পারিনাই।

হরফ এর ছবি

আরে আপনার তো নন্দ-র কেস (পরশুরামের চিকিৎসা সংকট)। আপনার দরকার একজন জাঁদরেল মহিলা ডাকতার, স---ব রোগ সেরে উঠবে। ঋষিবাক্য মিথ্যা হয় না।

ছুটলে কথা থামায় কে/আজকে ঠেকায় আমায় কে

ধীমান সাহা [অতিথি] এর ছবি

ভালোই লাগলো। অতিথি লেখক হিসেবে মন্দ নয়। চালিয়ে যান। হবেই।।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

এইটা পড়েন, সব রোগের চিকিৎসা এইখানে দেওয়া আছে। অন্য ব্লগের লিংক দেওয়া আমি একদম পছন্দ করি না, তাও দিলাম, কারণ এই লেখাটা আমাদের সবুজ বাঘের এবং সচলায়তনে দিয়েছিলেন। কি এক অজানা কারণে তিনি এই লেখাটা মুছে দিয়েছেন তা জানি না। তবে অনেক শিক্ষনীয় আপনার জন্যে

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

অতিথি লেখক এর ছবি

বেশ লাগলো!
রোমেল চৌধুরী

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।