সকালবেলা নাশতার পরপরই আব্বুর রুমে একবার ডাক পড়ে। সৌজন্য সাক্ষাৎ আর কি!
"কী ব্যাপার? শুয়ে-বসেই দিন কাটাবে নাকি? পরীক্ষা কবে?"
"ঈদের পর।"
"তা পড়াশোনা তো কিছু করতে দেখি না।"
"ঈদের পর করবো।"
"ভালই। বছরের ছয় মাসই তো দেখি বাসায় বসে থাকো। খাও, দাও, ঘুমাও আর রিমোট নিয়ে টানাটানি করো।"
ঘটনা সত্য। আব্বু রিটায়ার্ড মানুষ। সন্ধ্যার পর টিভি দেখা আর পত্রিকা পড়া ছাড়া উনার তেমন কোন কাজ নেই। কোন এক বিচিত্র কারণে আব্বু টক-শোগুলার খুব ভক্ত। মাঝে মাঝে আমাদেরও পড়া থেকে উঠিয়ে টক-শো দেখাতে বসান। বিশেষত, মুক্তিযোদ্ধা কাউকে পেলেই ডেকে বলেন, "দেখ ব্যাটা, দেখে রাখ উনাদের। আর দশ বছর পর তো এঁদের আর পাবি না।" আমরা যথারীতি বিরক্ত হই। অন্য চ্যানেলে তখন নাদালের সেমিফাইনাল চলছে কিংবা মেকিং অব 'নোলানের ইনসেপশান'। মনে মনে ভাবি, টিভি কার্ডটা এবার কিনেই ফেলবো। কিছুক্ষণ পর আব্বু নিজেই রিমোটের দখল ছেড়ে দেন। যেতে যেতে বলেন, "খেলা দেখ, ঠিক আছে। কিন্তু পড়াশোনাটাও সঙ্গে রাখিস। আমরা তো পড়ার সুযোগই পাইনি। যেটুকু করেছি, নিজের চেষ্টায় করেছি। আর তোরা এতো সুযোগ-সুবিধা পেয়েও পড়তে চাস না।" আব্বুর কথা আমাদের কানে ঢোকে কিংবা ঢোকে না। কেননা আমরা তখন নোলানের ড্রিমওয়ার্ল্ডের রহস্য উদ্ধারে ব্যস্ত।
ভেবেছিলাম, শাহান ভাইয়ের ম্ত্যুর খবরটা সামহাও আব্বুর চোখকে ফাঁকি দিয়ে যাবে। আমার ধারণা ভুল প্রমাণ করে আব্বু সকালবেলা পত্রিকা খুলেই এই খবরটা পড়তে দিলেন আমাদের। আমরা তো ফেসবুকের কল্যাণে গতকাল সন্ধ্যায়ই খবরটা পেয়েছি। সেন্ট মার্টিনে গিয়ে ভাটার টানে তিন ভাইয়া ভেসে গিয়েছিলেন। শাহান ভাই, শুভ্র ভাই আর শিমন ভাই। শেষোক্ত দু'জন ফিরে আসতে পেরেছেন, যদিও শুভ্র ভাইয়ের অবস্থা এখনো বেশ খারাপ। পারেননি শাহান ভাই। মনটা তাই বেশ ভার হয়ে আছে। দু:স্বপ্নের চেয়েও ভয়াবহ এক টার্ম শেষ হল এবার। টার্মের শুরুতে আমাদেরই এক ছোট ভাই 'সম্রাট' পলাশীর সামনে বাস চাপা পড়ে মারা গিয়েছে। বলা বাহুল্য, ঘাতক ড্রাইভারের কোন বিচার হয়নি। হবে এমন কোন আশাও নাই। আজ হারালাম সিনিয়র এক ভাইয়াকে।
সত্যি বলতে কি, একজন মানুষ কখনো একা মারা যায় না, তার ফ্যামিলিও তার সাথে সাথেই মারা যায়। ভাইয়ার ফ্যামিলি'র আজ কী অবস্থা কে জানে? আজ ভাইয়া বাসায় ফিরে এলে ভাইয়ার বাবাও হয়তো তাকে বলতেন, "কিরে? তো্দের পরীক্ষা কবে? পাশ করে বেরোবি কবে?" ভাইয়া বলতেন, "এইতো বাবা, আর মাত্র দুটো মাস।" হলের বোকাসোকা জুনিয়র ছেলেটাকে ডেকে ভাইয়া হয়তো বলতেন, "কিরে, আবাবিল? মন খারাপ করে বসে আছিস কেন? বাসা থেকে টাকা পাঠায় নি? আয়, আজ তোকে রয়েল-এ খাওয়াবো। নে, রেডী হ। কুইক।"
এবং আমরাও একটু একটু করে ম্ত্যুর দিকে এগোতে থাকি। নিয়তি, বস। প্লেন এন্ড সিম্পল নিয়তি। শ্রোতার কাজ শোনা। দর্শকের কাজ শুধু চেয়ে চেয়ে দেখা। আর মা-বাবাদের কাজ সময়ে-অসময়ে আমাদের জন্য অর্থহীন চোখের জল ফেলা।
---আশফাক আহমেদ
মন্তব্য
খবরটা দেখেছিলাম
... খবরটা পাওয়ার পরেই মনে হয়েছিলো- বিদায় নেবার ঠিক আগেই বড় ভাইয়াদের মাঝে কেউ একজন এরকম চিরবিদায় কেন ন্যান...
লেখালেখি জারি রাখ। জনবল বাড়ুক এ পাড়ায়।
_________________________________________
সেরিওজা
শুরুর মত টার্মের শেষটাও হল দমবন্ধকরা,গুমোট। বিদায়বেলায় আচমকা ঝড়ে একটি পরিবারের স্বপ্নগুলোও ধূলোয় মিশে গেল
--------------------------------------------
আজি দুঃখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।
--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।
তিন বোনের এক ভাই শাহান ভাই। চুপচাপ, মুখে একটা ট্রেডমার্ক হাসি। ০৫ ব্যাচের হলেও যুক্তরাষ্ট্রের ডিভি পাওয়াতে ঐ সংক্রান্ত ঝামেলায় এক বছর ড্রপ দেন। আমাদের ০৬এর সাথে পুরো তৃতীয় লেভেল ক্লাস করলেন। আর আজকে যখন সেই হাসিমুখটাকে খাটিয়ায় ম্লান দেখলাম.......
শান্তিতে ঘুমাক ভাইয়া।
এ ব্যাপারটা আমি জানতাম না। ফেসবুকে ব্যাচমেটদের স্ট্যাটাস দেখে ভেবেছিলাম, ভাইয়া হয়তো কোন এক কোর্স রিটেক করেছেন। যারা উনার সাথে সারা বছর ক্লাস করেছে, তাদের না জানি কেমন লাগছে
প্রায়ই এই রকম দুঃসংবাদ শুনতে হচ্ছে! যেমনটা সুহান বললো, প্রতি বছরেই এমন একটা করে ঘটনা ঘটে চলেছে। আমার আশঙ্কা হলো, 'কেনো'? কেনো প্রতি বছরেই একটা মেধাবী ছেলেকে সেন্ট মার্টিনস্, কক্সবাজার- এসব জায়গা থেকে সমুদ্রে ভেসে যেতে হবে? 'কারণ'টা কী?
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
কী দরকার বাপু ভাটার সময় নামা, দুঃসাহস দেখানোর আগে মা এর মুখটার কথা একবার মনে রাখা উচিত। বেচারা আবার বন্ধুদের উদ্ধার করতে গিয়েছিলেন শুনলাম। কপাল দোস্ত, সবই কপাল, কপালের নাম পোঁড়া গোপাল।
কারণগুলো খুব রূঢ়। বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
আমাকে কিছুক্ষণ মন ভার করে বসে থাকতে দাও।
আহারে।
সাত্যকি
দুঃখজনক
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
প্রতি বছরই এরকম একটা দুটা খবর আসবেই!
-----------------------------------------------------------------------------------
...সময়ের ধাওয়া করা ফেরারীর হাত থিকা যেহেতু রক্ষা পামুনা, তাইলে চলো ধাওয়া কইরা উল্টা তারেই দৌড়ের উপরে রাখি...
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
আমরা একসাথেই নামছিলাম সেসময়। কোন ফাঁকে যে আলাদা হয়ে গেল ওরা তিনজন, টেরই পেলাম না।
রাতে ওর লাশ নিয়ে যখন বন্ধুরা ঢাকার পথে রওয়ানা হচ্ছে, সেসময় শাহানের মোবাইল আমাদের কাছে। সেখানে তখন সমানে ফোন করে যাচ্ছে ওর বন্ধুরা, বড় ভাই, আপু, আব্বু। সবার ফোনই ধরা হয়, কেবল আব্বুর ফোনটা বাদে। সবার সব প্রশ্নেরই উত্তর আমরা দিয়েছি, শুধু ওর আপু যখন বলে ওঠেন, "ভাইয়া, তোমরা আমার ভাইটাকে নিলে, কিন্তু ফিরায়ে তো দিলা না।" আমরা চুপ করে থেকে ফোনটা কেটে দেই।
ভাইয়া, পত্রিকায় যে শিমন ভাইয়ের নাম লিখেছিলো, উনি কি সেই বিখ্যাত শিমন ভাই যিনি রাত-বিরাতে পরীক্ষার পড়া ফেলে বন্ধুর জন্য রক্ত দিতে ছুটে যান?
শুভ্র ভাই আর শিমন ভাই কেমন আছেন এখন?
সি.এস.ই.তে একটাই শিমন আছে। সারাক্ষণ হুলুস্থুল করে, হই-চই করে।
ওকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেবার পরই সুস্থ হয়ে যায়। আর শুভ্রকে কক্সবাজারে হাসপাতালে পাঠানো হয় চিকিৎসার জন্যে সেই রাতেই, এরপর আঙ্কেল- আন্টির কথা মত ওকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়..
ভাইয়া, পত্রিকায় যে শিমন ভাইয়ের নাম লিখেছিলো, উনি কি সেই বিখ্যাত শিমন ভাই যিনি রাত-বিরাতে পরীক্ষার পড়া ফেলে বন্ধুর জন্য রক্ত দিতে ছুটে যান?
শুভ্র ভাই আর শিমন ভাই কেমন আছেন এখন?
নতুন মন্তব্য করুন