ফারুকেরা লাশ হয়ে ফিরে যায়,
ফিরে যায় মাতৃক্রোড়ে,
ছিন্নভিন্ন যকৃত-বৃক্কের অবিরাম রক্তক্ষয়ে
ফিরে যায় ঘুমন্ত একটি তাজা রক্তজবা হয়ে।
কফিনের অন্ধ কারাগারে শুয়ে
নিথর ফারুক কখনোই দেখবে না -
শুনবে না আমাদের বৃথা আস্ফালন –
মিছিলে মিছিলে আর্তচীৎকার –
“আমার ভাইয়ের রক্ত
বৃথা যেতে দেব না! ”
শুনবে না গলিত শবের মত নিষ্প্রাণ-অক্ষম
নেতৃবৃন্দের ফাঁকাবুলির
অহেতুক হুংকার,
দেখবে না টেলিভিসনের চ্যানেলে চ্যানেলে
মুখ দেখানোর অশ্লীল প্রতিযোগিতা!
আর বেঁচে থাকে খুনীরা- অথর্ব আইনের
ফাঁক গলে;
নাকি আইনের নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে?
গণতন্ত্রের ধুয়ো ধরে
নির্দ্বিধায় চলে ধর্মের বেসাতি;
বাংলার শহীদ মীনারে
শোভা পায় খুনী নিজামীর ব্যানার
রক্তাক্ত ফেব্রুয়ারী মাসে।
ফারুকের ক্লেদাক্ত শব আমাদের একবারও প্রশ্ন করে না –
কোন অধিকারে একাত্তরের ঘাতক
আল-বদর নিজামী জনসভা করে
প্রকাশ্যে চালায় ঘৃণ্য আস্ফালন,
উস্কানি দেয় লাশে লাশে চারদিক ছেয়ে ফেলার?
শহীদ মীনারে ওড়ে তার
জয়গাথার অপবিত্র ব্যানার –
আর ‘স্বাধীনতার পক্ষের’ অর্থগৃধ্র ক্লীব প্রসাশন
আনন্দে নিশ্চুপ রয় রিয়ালের ঝাঁঝে!
ফারুকেরা খুন হয়
খুন হয় ধর্মান্ধ জান্তার হাতে,
খুন হয় বাঁচার আশ্বাস- দালাল পুলিসের নির্বাক ভূমিকায়,
কিংবা পা ঝেড়ে ফেলার ঈমানী দায়িত্বে!
আমরা নির্বাক চেয়ে থাকি,
চেয়ে থাকে নিথর ফারুক,
বেঁচে যায় ঘাতকেরা,
বেঁচে থাকে ধর্মের ব্যবসা;
আর বেঁচে থাকে গণতন্ত্রের নপুংসক ধারকেরা,
খুনীদের পক্ষে মাঠে নামে
জাতীয়তাবাদী অপশক্তি।
আইনের অন্তরালে ঘাতকেরা পার পেয়ে যাবে;
আর আমরা অপেক্ষা করে যাবো-
ফারুকের মত লাশ হয়ে ম্যানহোলে পড়ে থাকার অপেক্ষা!
[গত বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাতের অন্ধকারে ছাত্রশিবিরের বর্বরোচিত হামলায় নিহত হয় গণিতের মেধাবী ছাত্র ফারুক হোসেন। পুলিসের ভূমিকা ছিল ন্যাক্কারজনক এবং বিতর্কিত। রাজশাহীর পুলিস অধিকাংশই জামাত-শিবিরের বেতনভোগী। সে রাতে মেডিকেল কলেজ হোস্টেল ছিল অরক্ষিত। যে কোন সময় শিবিরের আক্রমণে আমাদের যে কারো প্রাণ যেতে পারত। সক্রিয় রাজনীতি করতাম বলে খুব কাছে থেকে দেখলাম পরবর্তী কয়েকদিনের -লাশের রাজনীতি।]
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন