১।
: হ্যালো।
: স্লামালাইকুম। আব্বু ভাল আছ?
: হ্যাঁ ভাল। তোমার শরীর ভাল?
: জ্বী ভাল। (আসলে ভাল না, জ্বর)।
: অফিস থেকা কখন আসলা?
: এইতো, এই মাত্র। (শরীর খারাপ বলে আসলে অফিস যাইনা আজ চারদিন)।
: কাজকর্ম ঠিকমত চলতেছে?
: জ্বী। (কিসের কী? অফিস না গেলে কাজ কিভাবে চলে?)
: আচ্ছা তোমার আম্মার সাথে কথা বল। (কিছু বেসিক জিনিস ঠিক থাকলে আব্বা খুশি। দরকারী কিছু না হলে ২ মিনিটের বেশী কথা বলা যায়না আব্বার সাথে।)
: জ্বী দেন।
: হ্যালো বাবা, কেমন আছ।
: জ্বী আম্মা ভাল। তোমার শরীর কেমন।
: হ্যাঁ ভাল। তুমি কি ঠাণ্ডা লাগাইস নাকি আবার?
: কই না তো। (আসলে ঠাণ্ডা লেগেছে। আম্মা গলা শুনলেই বুঝে ফেলে।)
: গলাটা বসা বসা লাগতেছে!
: না, টেলিফোনে সমস্যা হবে।
: কি জানি (আম্মা কনভিন্সড না), দেইখো সাবধানে থাইকো। তোমার তো অল্পতেই ঠাণ্ডা লাগানোর অভ্যাস। আজকে দুপুরে কি খাইলা?
: এইতো রাইস আর চিকেন। (আসলে ওভেনে বেক করা পিজ্জা খেয়েছি। কিন্তু আম্মা রাইস শুনলে খুশি হয়)।
: রাত্রে কি রান্না করতে হবে?
: না, আগের তরকারি রান্না আছে (আসলে কিছু নাই, রান্না করতে হবে শুনলেই আম্মা বলা শুরু করবে, আমার ছেলেটার রান্না বান্না নিয়ে কত কষ্ট। রাতে ডিম ভাজার প্ল্যান আছে)। ভাত বসালেই হবে।
: বাবা খাওয়া দাওয়া ঠিকমত করো।
: জ্বি। (এই একটা জিনিসে আমার খুব নিরাসক্তি। কিন্তু আম্মাকে বলি আমি ঠিকমতোই খাই)।
: নামাজ ঠিকমত পড় তো?
: জ্বি।
: স্বরটা কেমন আস্তে শোনা গেল? (মিথ্যা কথা আম্মা অনেকসময় ধরে ফেলে) ঠিকমত পড়না মনে হয়?
: না, পড়ি।
: শনিবারে বাসায় থাকবা নাকি কোথাও যাবা নাকি?
: জ্বী। একটু দূরে একজায়গায় যেতে হবে।
: কিভাবে যাবা? গাড়িতে নাকি ট্রেনে?
: ট্রেনে। (গাড়ি শুনলে আব্বা আম্মা দুজনেরই রাতের ঘুম হারাম। বাসায় ফিরে ফোন না দেয় পর্যন্ত টেনশন করে। এটা টের পাওয়ার পর আমি সব গাড়ি-জার্নিকে ট্রেন বলে চালিয়ে দেই)।
: ঠিকআছে। বাসায় ফিরে ফোন দিও।
: জ্বী, দিব।
: তুমি কি ঐ মেয়ের সাথে আর কথা বল?
: জ্বি না।
: ঠিকতো? এরপর আর কথা বলনাই তো?
: না। এমনি হাই হ্যালো বলেছিলাম এক দুই বার।
: ওর সাথে কোন রকম কথা বলবা না। হাই হ্যালোও না। তুমি হয়তো সাধারণ একটা কথা বলবা, কিন্তু সে হয়তো অন্য কোন মানে করবে। মেয়েরা সবকিছু নিয়ে অনেক গভীরভাবে ভাবে।
: জ্বী।
: আর কোন কিছু বলতে চাও?
: জ্বী না।
(উইকএন্ড হলে আম্মা অনেক খবর দিত। কে কোথায় কি করলো, কার শরীর কেমন, সব খবর দিত। উইকডেতে অফিস থেকে ফিরে আমি টায়ার্ড থাকি, এটা জেনে আম্মা খুব সংক্ষেপে আমার খবরটা শুধু নিয়ে নেন।)
: ঠিকআছে বাবা, শরীরের যত্ন নিও। খাওয়াদাওয়া করো ঠিকমত।
: জ্বী। রাখি তাহলে।
২।
: হাই।
: হাই।
: কেমন আছ?
: ভাল। তুমি?
: একটু শরীর খারাপ।
: কি? ঠাণ্ডা?
: হ্যাঁ! তুমি কিভাবে জানলা? (আমি বিস্মিত হবার চেষ্টা করি)
: গেস করলাম। এটাতো সবচেয়ে কমন ডিসিস। (একবছর আগে হলে ঠিক বলতো, "আমি অনেক কিছু বুঝতে পারি ")।
: ওহ! তোমার পড়াশোনা কেমন হচ্ছে?
: ভাল না। উফ। প্রফেসরটা এতো অ্যানোয়িং! আজকে আমাকে দুঘন্টা ধরে বকছে রিপোর্ট কারেক্ট করার জন্য। এই রিপোর্ট আমি এই নিয়ে ৬ বার কারেক্ট করলাম। আর কতবার করবো?
: হমম।
: আই ওয়ান্ট টু ফিনিস। একটা জব স্টার্ট করতে হবে অ্যাজ সুন অ্যাস আই ক্যান।
: তোমার কথা বল।
: আমার সব আগের মতই। নতুন কিছুও নেই, কিছু বদলায়ওনি। (এক বছরে ৯০ডিগ্রী ফেজ শিফট হয়েছে আমার। কিন্তু স্বীকার করি না ওর কাছে)।
: ওহ। বিডি যাবা?
: হ্যাঁ।
: এবার কিছু হবে?
: হতে পারে। আই থিংক আই উইল ফাইন্ড সামওয়ান। (কাউকে আর মনে ধরেনা, সেটা চেপে যাই)।
: গ্রেট! গুড লাক।
: নতুন কিছু ছবি দিয়েছি ফ্লিকারে। দেখো। (ও লিংক পাঠায়)
(ওর ছবি তোলার সেন্স আগে থেকেই অসাধারণ। আমি আগের মত মুগ্ধ হয়ে দেখি। কয়েকটা ছবি দেখার পর ওর একটা নিজের ছবি বের হয়ে আসে। এক পলকে অনেক কিছু চোখে ভেসে ওঠে। ওর কাজল দেয়া চোখ, ভ্রুর একটা শার্প বাঁক, গালে একটা স্পট সব আমার খুব মুখস্ত। আমি আর কন্টিনিউ করতে পারি না, ফ্লিকার বন্ধ করে দেই)
: হ্যাঁ দেখলাম। ভালই। ("প্রীটি" শব্দটা আর বলি না। ওর জন্য রিজার্ভড ছিল শব্দটা)।
(আর কথা বলতে ইচ্ছে হয়না, ভয় হয় যদি মুখ ফুটে কিছু বলে ফেলি)
: আমি একটু উঠবো, তুমি কাজ কর। পড়ে আবার কথা হবে।
: ঠিকাছে। ভাল থেক।
(ভাল থাকব আমি? হাহা। আমার হাসি পায়)।
: ঠিকাছে। টিসি।
: বাইইইইইইইই।
: বাই।
|
অতিথির নাম: বরফ
মেইল ঠিকানা:
মন্তব্য
১ পড়ে মজা ও লাগলো, খারাপ ও লাগলো। দেশে থাকতে বাবার সাথে এক মিনিটের বেশি বলার কিছু পেতামনা। এখন ফোন করলে বাবা অবশ্য অনেক কিছু জানতে চায়। মায়ের কমন প্রশ্ন ছিল, কী দিয়ে খেলাম, এখন আমি বিরক্ত হই বুঝতে পেরে প্রশ্নটা তেমন করেনা
২ নিয়ে কোন মন্তব্য নেই (পুরোটা বুঝতে পারিনাই বলে হয়ত)
সজল
অনেক ধন্যবাদ সজল, প্রথম মন্তব্যের জন্য। খাওয়া দাওয়া বোধহয় সব মায়েদের প্রাধান চিন্তার বিষয়। আম্মা আগে অনেক কথা বলতে চাইতেন ফোন পেলেই। আমি জানি উনি ওয়েট করে থাকেন আমার ফোনের জন্য। কিন্তু আমি বলার মত বিষয় খুঁজে পাই না। শুধু প্রশ্নের ভুল অথবা মিথ্যা উত্তর দিতে থাকি।
দ্বিতীয়টা .... এমবেড করা গানটা শুনে দেখতে পারেন। আর না বুঝলেও তেমন ক্ষতি নেই
বুঝতে পেরেছি
সজল
বুঝতেই হবে! জ্ঞানীদের জন্য তো ইশারাই যথেষ্ট!
প্রথমটা কখনো ঘটে না আমার সাথে।
আর দ্বিতীয়টা - এত ভালো করে মনে হয় আর কিছু কোনদিন বুঝি নি। নিজেকেই আবার খুঁজে পেলাম আপনার গল্পের চরিত্রের (আপনি নিজে কিনা জানি না) মধ্যে। পার্থক্য শুধু ভালো না থেকেও ভালো থাকবো বলতে পারা আর না পারার মধ্যে।
ধন্যবাদ।
আরে! ধন্যবাদ তো দেব আপনাকে, পড়ার এবং মন্তব্য করার জন্য।
এরকম মন্তব্য পেলে মনে হয়, লেখাটা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়নি। অনেক উৎসাহ পেলাম।
ভাল না থেকেও আমরা নিয়ত বলে চলি, বলে চলতে হয়, ভাল আছি। অদ্ভুত এই রীতি।
ভাল থাকবেন।
১ নাম্বারটা পড়ে মজা পাইলাম.. মোটামুটি সবই কমন পড়ল.. খালি আমারে নামাজের কথা জিগায় না কোনকালে..
২ নাম্বার.. ভাল লাগছে...
-ইকথিয়ান্ডার
এগুলা তাইলে কমন কোশ্চেন! আমি ভাবছিলাম আমার একারই শুনা লাগে এগুলান রেগুলার।
২ নাম্বারটা পড়তে ভাল লাগতারে, তয় ঘটতে লাগলে পুরা শেষ।
পড়ার এবং মন্তব্যের লাইগা ধইন্যবাদ।
কথোপকথনের ভঙ্গিমাটা চমৎকার।
তপু ছেলেটা আর বছর ১৫ আগে জন্মায়ে গান লিখলে ভাল হত।
অমিত্রাক্ষর
অমিত্রাক্ষর@জিমেইল ডট কম
নতুন মন্তব্য করুন