হঠাৎ লোকটাকে দেখে চমকে উঠল মিতা। কেমন যেন চেনা চেনা। আর কেমন একটা অদ্ভূত অনুভূতি।ভিষন ভির বাসে। তবুও ভাল এখন এইসব ডাইরেক্ট বাস পাওয়া যায়। আগেত একটা সি এন জ়ি র জন্য হা পিত্তেস করে বসে থাকতে হত। মিতা বনানীতে একটা প্রাইভেট ফার্ম এ কাজ করে, আর ওর বাসা মালীবাগ।প্রতিদিন সকালে এক যুদ্ধ অফিসে যাওয়া নিয়ে। প্রায় ৫ বছর হল মিতা এই অফিসে আছে কিন্ত এখনও এই সকাল যুদ্ধটা গা সওয়া হল না।আর ভিরের মদ্ধে শরিরের এখানে সেখান শিরশিরে স্পর্শ উপরি পাওনা।
আবার লোকটার দিকে তাকাল মিতা, অস্বস্তি লাগছে। কেমন বয়েস হবে লোকটার? ৪০/৪২? মিতা যেখানটায় দাড়িয়ে তার পরের রো তে বসে আছে, কিছু পড়ছে। এমন কীছু বিষেশত্ব নাই চেহারায়। তাহলে? কেন এরকম লাগছে লোকটাকে দেখে? কেমন একটা চেনা আর অচেনা অনুভূতি।উফ বিরক্তি লাগছে! মিতা আর তাকাতে চাচ্ছিল না লোকটার দিকে কিন্তু কি এক আদ্ভূত কারনে চোখ বার বার ও দিকে চলে যাচ্ছে।লোকটি কি তাকালো? ওকে notice করলো? নাহ এক মনে কি যেন পড়ে যাচ্ছে।
বুকের মদ্ধে হারিয়ে যাওয়া কোন অনূভুতি নিয়ে বাস থেকে নামলো মিতা।দু মিনিট হাটলেই অফিস। বেশ সাজানো গোজানো একটা অফিস। সিট এ বসে কম্পিউটার অন করলো মিতা। আজকে বিকেলের মদ্ধে একটা প্রেজেন্টেশান শেষ করে বস কে দিতে হবে। অনেক মনোযোগ দরকার। উফ্ লোকটা কেন মাথা থেকে নড়ছে না? সবচেয়ে বিরক্তিকর কেমন যেন একটা আদ্ভুত আনুভূতি, ঠিক বর্ণনা করার মত না। একটু কষ্ট কষ্ট, ভয় ভয় আর ফাঁকা ফাঁকা! আহ কি যন্ত্রনা!
মালেক কে ডেকে মিতা কড়া এক কাপ চা দিতে বলে, মাথাটা ঠান্ডা করা দরকার। চা খেয়ে প্রেজেন্টেশান টা খুলে বসে মিতা। অনেক ডাটা নিয়ে একটা রিভিউ প্রেজেন্টেশান। সাবধানে করতে হবে, কোন ভুল যেন না হয়। কাজে ডুবে গেল মিতা কিন্তু বুকের ফাঁকা ফাঁকা আর কষ্ট কষ্ট ভাবটা রয়ে গেল।লাঞ্চ টাইম এ সেঞ্জুতি এসে ডাকলো মিতাকে। ওরা সাধারনত একসাথে লাঞ্চ করে। কেন্টিন এ এসে বসতেই লোকটা আবার মাথায়, মিতা জোর করে তাড়ানোর চেষ্টা করে। খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না, একট সেন্ডউইচ নিল মিতা। সেঞ্জুতি বাসা থেকে লাঞ্চ এনেছে, অন্যদিন হলে মিতা খুঁজে খেত কিন্তু আজ সেঞ্জুতি সাধার পরও নিল
না। আনমনা মিতা সেন্ডউইচ এ কামড় দেয় আর কি আদ্ভুত, তক্ষুনি ভিষন কুয়াশা ভেদ করে কিছু স্মৃতি,কিছু সময় মিতার সামনে। মনে পরছে, সব মনে পরছে…….এই কি সেই?
কত বয়েস তখন মিতার? ১০/১১? ক্লাস ফাইভ এ পরে বোধকরি। ময়মনসি্ংহ থাকে তখন ওরা। সে সময় বাচ্চাদের স্কুল থেকে আনা নেয়া নিয়ে বাবা মারা এত আতংকে ভুগত না। একদিন স্কুল এর পর মিতা তার প্রানের বন্ধু নিপার বাসায় চলে গিয়েছিল বাসার কাউকে কিছু না বলে। নিপার মা অনেক আদর করলেন,মজার খাবার খেতে দিলেন কিন্তু যখন জানলেন যে মিতার বাসার কেউ এখানে আসার খবর জানে না তখন তিনি তক্ষুনি মিতাকে বাসায় পাঠিয়ে দেবার বেবস্থা নিলেন। মন খারাপ মিতা আর নিপা কি আর করে! নিপার মামাত ভাই কে রেডি হতে হল ওকে পৌঁছে দেবার জন্য।কি যেন নাম? সজল?
সেই সজল কে প্রথম যখন দেখল তখন কেমন লেগেছিল মিতার? ভাল লাগা? কি জানি...ছোট্ট মিতার কিবা বোঝার বয়েস, তবে অন্যরকম একটু লেগেছিলতো বটেই। কি ভিষন ভাল দেখতে! মিষ্টি একটা মুখ। ইউনিভার্সিটিতে মাত্র ভরতি হয়েছে।
নিপাদের বাসাটা ছিল দারুন একটা জায়গায়, সামনে মাঠ, মাঠ পেরিয়ে বড় রাস্তা। ডান দিকে গেলে একটু জঙ্গল মত। সেই সজল ভাই যখন মিতার হাত ধরল তখন মিতা একটু যেন লজ্জা লজ্জাই পেয়েছিল। ভাল লেগেছিল এটা কিন্তু ঠিক।
মাঠ পেরিয়ে বড় রাস্তার দিকে না গিয়ে সজল যখন জঙ্গল এর দিকে যাচ্ছিল তখন মিতার ছোট্ট বুকে কি অজানা কোন আশংকা হয়েছিল? কি জানি…এখন মিতা মনে করতে পারে না তবে সজল বলেছিল জঙ্গলের ভেতর চমৎকার রাস্তা আছে। শক্ত করে হাত ধরে মিতাকে নিয়ে জাচ্ছিল সজল।
জঙ্গল জঙ্গল মত জায়গাটায় খানিকটা গেলে একটা পোড়ো মন্দির এর ধংশস্তুপ। ময়মনসি্ংহের আনাচে কানাচে এরকম অনেক আছে। ভারি সুন্দর ছিল জায়গাটা, মিতা এখনও মনে করতে পারে। সজল বলল চল এখানে একটু বসি।গা ঘেঁষে বসেছিল সজল। হাত উঠে এসেছিল মিতার পিঠে, উঠছিল আর নামছিল, সুড়সুড়ি দিচ্ছিল।কি অন্যরকম একটা আনুভূতি! মিতা কি বাধা দিচ্ছিল? ক্লাস ফাইভে এ পড়া মিতার সেই ১৯/২০ বছরের সজলকে বাধা দেবার সাধ্যই বা কোথায়?
তারপর কি যে হল, হঠৎ সজল দুহাতে মিতার মুখট ধরে ঠোঁটে চুমু দিল। ওহ্ কি ভয়ঙ্কর! ধাক্কা দিচ্ছিল মিতা দু হাতে,কাঁদছিল। বড় না হয়ে উঠা মিতা বড় হয়ে যাচ্ছিল। সজলের হাত পিঠ থেকে নেমে সামনে চলে এসেছিল, নেমে যাচ্ছিল নিচে…ভয়ে আতঙ্কে সিঁটিয়ে যাওয়া মিতা তখন জানেই না কি করে বাধা দেবে। ঠোট দিয়ে চোখের পানি শুষে নিচ্ছিল সজল আর ভিষন নরম করে বলেছিল কাঁদে না সোনা। আমি একটু ও কষ্ট দেব না তোমায়। আস্তে করে শুইয়ে দিয়েছিল মিতাকে ভাঙ্গা মেঝেতে।
না খুব বেশি দূর যেতে পারেনি সজল…শুরুতেই যন্ত্রনা, ভয় আর কান্না ভেজা মিতার মুখ দেখে থেমে গিয়েছিল। তারপর ভিষন আদরে দু হাতে চোখ মুছে বলেছিল এ কথা কাউকে না বলতে। সজল থেকে বাচাঁর আশায় সজলকেই দু হাতে জড়িয়ে ধরেছিল মিতা শক্ত করে।
নাহ্ আর কিছু করে নি সজল, যত্ন করে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিল। শুধু দুহাতে চুরি করে নিয়েছিল মিতার শৈশব আর বুক ভরে দিয়েছিল অন্যরকম অজানা, অচেনা আনুভূতিতে।
কি বিচিত্র সে সব কষ্টের আনুভূতি তাড়া করে ফিরেছে মিতাকে সারা জীবন! কাউকে আর ভালবাসতে পারল কই? সজলের প্রতি ঘৃনা আর বিচিত্র এক ভাললাগা থেকে বেরুতেই পারেনি অনেক বছর। এতদিন পর বিস্মৃতির অতল থেকে সেই মুখ। ঠিক মত চিনতে পারেনি কিন্তু দেখামাত্র অবচেতনে সেখানেই ফিরে গিয়েছিল মিতা…
সেঞ্জুতির অবাক চোখের সামনে ঝট করে উঠে দাড়াল মিতা, এক দৌড়ে বাথরুম। হু হু কান্নায় ভেঙ্গে পরা মিতা দেয়াল ঘেঁষে বসে পরতে পরতে দু হাতে দিয়ে কাকে যেন আঁকড়ে ধরতে চেষ্টা করে।
মেঘলামন
নভেম্বর ৯, ২০১০
(কত শত বছর পর বাংলায় লিখলাম!আর কম্পিউটার এ বাংলা লিখা এই প্রথম। লজ্জার কথা কিন্তু এটা বাস্তব। নিঃসন্দেহে অনেক বানান ভুল, ফরমেট এ ভুল, বাক্য গঠনে ভুল। কেউ ভুল ধরে দিলে তার প্রতি অগ্রিম কৃ্তজ্ঞতা)
মন্তব্য
আমি নিজেই ম্যালা বানান ভুল করি, আরেকজনের বানান ভুল ধরা তাই ঠিক শিষ্টসম্মত হয় না..
গল্পটা অনেক ভাল হইতে পারতো...
তাই??!! ময়মনসিংহ শহরের কথা বলতেছেন তো? আমি তো এইরকম মন্দির পাই নাই..
ক্লাস ফাইভের একটা বাচ্চার ভার্সিটি পড়ুয়া একটা ছেলেরে দেইখা অন্যরকম একটু লাগার কথা কি? আমি ফাইভে পড়ার সময় ক্লাস ১০ এর পোলাপানরেই মনে হইতো অনেক বড়ো.. কি জানি..
যাই হোক .. লেখা চালায়া যান..
-ইকথিয়ান্ডার
ধন্যবাদ পড়ার জন্য
এটা কি সচলে আপনার প্রথম লেখা?
প্রথম লেখা হিসেবে মন্দ না। লেখালেখি জারি থাকুক
---আশফাক আহমেদ
ধন্যবাদ
হাত-পা খুলে লিখতে থাকেন।
ধন্যবাদ
হাত-পা খুলে লিখতে থাকেন
আমিও তাই বলি। এগিয়ে যান।
ধন্যবাদ
গল্প ভালো হইছে, চালায়া যান। গল্পে সবকিছু ঠিক ঠিক হতে হবে কে বলেছে!
অনেক ধন্যবাদ
আমিও জিজ্ঞেস করি, এটাই কি সচলে প্রথম লেখা আপনার? সেটা হয়ে থাকলে স্বাগতম জানাচ্ছি আরও লিখুন।
ধন্যবাদ
কিছু জায়গায় সামান্য খটকা লেগেছে। তবে সব মিলিয়ে আমার কাছে ভালো লেগেছে। লেখা চালিয়ে যান।
অনেক ধন্যবাদ
অজস্র বানান ভুল। তবে প্রথম লেখা যেহেতু, আস্তে আস্তে নিশ্চয়ই সব ঠিক হয়ে যাবে। সচলায়তনে স্বাগতম। লিখতে থাকুন হাত খুলে। মনের ইচ্ছামতো।
গল্পের ব্যাপারে, পঞ্চম শ্রেণীতে পড়া একটা মেয়ের জন্য এতসব অনুভূতি এইভাবে... কেমন একটু খটকা লাগলো। তবে সব মিলিয়ে গল্প খারাপ লাগে নি।
ধন্যবাদ পড়ার জন্য। জানি অনেক বানান ভুল। শুধু টাইপো না অনেক বানান ভুলে গেছি। শিখতে হবে। পঞ্চম শ্রেণীতে পড়া একটা মেয়েরও অনেক সময় বড় হবার আগে বড় হয়ে যেতে হয়....
এ গল্পটা কিন্তু শুধু কল্পনা নয়
ভালোই লেগেছে। লেখা চালিয়ে যান। মনসুন ওয়েডিং ছবিতে দেখেছিলাম প্রৌড় ফুফা শিশু ভাতিজির সাথে অপকর্ম করার চেষ্টা করেছিলো এবং সে অভ্যাস অব্যহত রেখেছে। আর সজল তো কামোন্মাদ এক তরুন। তবে বেশিরভাগ মেয়েই আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে এবং হয়েও যায়। ইমপ্যাক্ট তেমন না থাকলেও স্মৃতি কিন্তু মুছে ফেলা যায়না। মেয়ে পাঠকরা বিষয়টা ছেলেদের থেকে আরও ভালো বুঝবেন।
রাতঃস্মরণীয়
হুমম...এ ধরনের অভিজ্ঞতা থেকে বের হয়ে আসা অনেক কঠিন
ভালবাসা মানে কি? শিরোনামেও বানান ভুল, আপনে দেখি আমার লাইনের লুক, আমি কিন্তু লুক খ্রাপ
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
ধন্যবাদ
স্বাগতম। বিষয়বস্তুটা প্রাণঘাতী নিঃসন্দেহে। লেখার হাত ঝরঝরে। আরো লেখা পড়ার প্রত্যাশা রইল।
অমিত্রাক্ষর
অমিত্রাক্ষর@জিমেইল ডট কম
অনেক ধন্যবাদ
সচলে স্বাগতম
বেশ ভালো লাগলো
বানান অনেক ভুল, আশা করি আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন
লেখালেখি চলুক
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
অনেক ধন্যবাদ
ভালো হয়েছে। লেখা চালিয়ে যান। আরও ভালো করতে পারবেন।
বাংলাদেশে মেয়েরা এখনও নানাভাবে অত্যাচারিত যেকোনো বয়সেই। এর থেকে কবে নিস্তার মিলবে জানা নেই।
শুভ কামনা রইল।
-শাহেদ সেলিম
লেখালেখি চলুক...
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
আপনার গল্প টা ভাল লেগেছে
আপনার গল্প টা ভালো লেগেছে
নতুন মন্তব্য করুন