নিয়তি (পর্ব-২) (উপন্যাস)

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ১৩/১১/২০১০ - ৯:৫৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

শাহেদ সেলিম

পর্ব-২

‘মূলত কান্না, ভালোবাসা আর ঘৃনার রঙ একই’- কথাটা বলে আসিফ ভাই একটু থেমে কি যেন ভাবতে লাগলেন।

নাদিয়া প্রশ্ন করল, ‘এর মানে কি?’

আসিফ ভাই বললেন, ‘মানে টানে কিছু না। এমনি মনে আসলো তাই বললাম। তবে হাসান হয়তো আমাদেরকে এ ব্যাপারে একটা ব্যাখা দিতে পারবে। লেখক মানুষ, ওর ভাবনার ব্যাপ্তি অনেকদূর প্রসারিত। হাসান, তুমি কি বল?’

হাসান যে ওদের কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিল তা নয়। তারপরও বলল, ‘আসিফ ভাই হয়তোবা ব্যাপক অর্থে কথাটা বলেছেন।’
ও আবার বলতে শুরু করল, ‘আমার মনে হয় এই তিনটা অনুভূতিই একই আবেগের ভিন্নধর্মী প্রকাশ মাত্র! এর বেশি কিছু এই মুহূর্তে বলতে পারছিনা’

আসিফ ভাই হেসে বললেন, ‘যা বলেছো যথেষ্ট। কি নাদিয়া, বলেছিলামনা লেখকদের চিন্তা-ভাবনা আমাদের মত নাদান মানুষদের থেকে অন্যরকম।’

‘একদম ঠিক বলেছেন।’– নাদিয়া মুচকি হেসে বলল।

হাসান, আসিফ ভাই আর নাদিয়ার ডেস্ক পাশাপাশি। মাঝখানে ছোট ছোট পার্টেশন দেয়া। আসিফ ভাই হাসানের দুই বছর সিনিয়র। নাদিয়া আর হাসান সমবয়সী। ওরা প্রায় একই সাথে এখানে জয়েন করেছিল।
অফিসটা অনেক সুন্দর। বেশ গোছানো আর ছিমছাম। বহুজাতিক কোম্পানির অফিসগুলো যেমন হয় আর কি!
সকালের দিকে কাজের চাপ একটু কম থাকে। এ সময়টাতে হাসানরা কিছুটা রিলাস্ক থাকে। কলিগদের সাথে অনেক কথা হয়। অনেকটা আড্ডার মত!

‘কি ব্যাপার হাসান ভাই?আজকে এত চুপচাপ যে?মন খারাপ নাকি?’- কম্পিউটারে মেইল চেক করতে করতে নাদিয়া জানতে চাইল।

ওরা ইয়ারমেট হলেও নাদিয়া হাসানকে সবসময় ভাই বলেই সম্বোধন করে।কেন করে তা হাসানের অজানা।ইচ্ছে হয়েছে অনেকবার জানতে কিন্তু প্রশ্ন করা হয়ে ওঠেনি। হাসান এখন আর কোন প্রশ্নের উত্তর পেতে চায়না। জীবনে অনেক প্রশ্নের উত্তর সে হাজার চেষ্টা করেও মেলাতে পারেনি।

‘হাসান ভাই,শুনতেছেন আমার কথা?’- নাদিয়া আবারও জিগাস্যা করল।

‘আরে মন খারাপ-টারাপ কিছু না। রাতে ভালো ঘুম হয়নি। এজন্য একটু খারাপ লাগতেছে। তাছাড়া রাস্তায় যেই জ্যাম। তখন থেকেই মাথাটা ব্যাথা করতেছে।’

‘শরীর ভালো না বুঝলাম। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে কোন কারনে আপনার মনটাও কিছুটা খারাপ।’- টেবিলের ওপরে রাখা ফাইলগুলো গোছাতে গোছাতে নাদিয়া বলল।

হাসান কোন উত্তর দিল না।

নাদিয়া ওর ডেস্কের পাসে এসে বলল, ‘এক কাপ গরম গরম কফি খান। দেখবেন বেশ ভালো লাগবে।’

‘থ্যাংকস ফর ইউর কনসার্ন’- হাসান একটু হেসে বলল।

‘ইউ আর অলওয়েস ওয়েল্কাম’- নাদিয়া মাথা দুলিয়ে বলল।

‘হাসান ভাই। আমি একটু ম্যাডামের রুমে যাচ্ছি। কেউ আসলে বলেন।’

হাসান বলল, ‘আচ্ছা,ঠিক আছে’

হাসান সাদ্দাম হোসেনকে বলল এক কাপ কফি বানিয়ে দিতে।

সাদ্দাম হোসেন এই অফিসের পিয়ন। ছেলেটা অত্যন্ত বুদ্ধিমান।সে দেখতেও বেশ সুদর্শন। ওকে যদি ফরমাল শার্ট-প্যান্ট আর টাই পড়িয়ে দেয়া হয় তাহলে ওকে অফিসার ভেবে অনেকেই হয়তো ভুল করবে!

সাদ্দাম হোসেনের নামটা ওর বাবা রেখেছে। ওর বাবা ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের খুব ভক্ত ছিল। এই হলো ওর নামকরনের পেছনের রহস্য!

কফি হাতে নিয়ে হাসান আবারও অন্যমনস্ক হয়ে গেল। আসিফ ভাইও ডেস্কে নেই। হাসান বুঝতে পারছেনা সে এখন কি করবে। কাজেও মন বসছেনা। শুধু আগের অনেক স্মৃতি এসে ভীড় করছে ওর মনোজগতে!

তিন বছর আগে শেষবার সুমির জন্মদিনটা একসাথে পালন করেছিল ওরা। এখনও হাসানের সবকিছু মনে আছে খুব স্পষ্টভাবে। হয়তো শেষবার ছিল বলেই এতটা গভীরভাবে স্মৃতিকাতরতায় আক্রান্ত সে!

সারাটা দিন একসাথে ছিল হাসান আর সুমি। কত কথা, কত স্মৃতি!
সুমি এখন কোথায় আছে, কেমন আছে তার কিছুই জানেনা হাসান। ওর বন্ধু-বান্ধবেরাও তেমন কিছু বলতে পারেনা। একবার শুনেছিল কানাডায় চলে গেছে স্বামীর সাথে। অতুটুকুই,তাও নিশ্চিত না এ ব্যাপারে।
ফেসবুকে সার্চ করে দেখেছে হাসান। কিন্তু ওকে পায়নি। হয়তো অন্য নামে আছে!
তবে সুমিকে না পেলেও লোপাকে ঠিকই ফেসবুকে খুঁজে পেয়েছে হাসান!
লোপা! এ আরেক ইতিহাস! সেই ইতিহাস অতীত হবার পর হাসান বুঝতে পেরেছিল সেও সেই ইতিহাসেরই অংশ ছিল!

১২ নভেম্বর,২০১০

shahedshelim31@gmail.com


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ছোট মনে হলো পর্বটা। আর ঘটনাও কোথাও আগায়নি এপর্বে।
আসলে প্রথম পর্বের পরে এক্সপেক্টেশনটা বেড়ে গিয়েছিল। আরেকটু বেশি কিছু আশা করেছিলাম।
আশা করি পরের পর্বে আরো ভালো লাগবে। (জানিনা বেশি প্রেশার দিয়ে ফেললাম কিনা)

পাগল মন

অতিথি লেখক এর ছবি

@পাগল মন, অনেক অনেক ধন্যবাদ লেখাটি পড়বার জন্য আর মন্তব্যর জন্য। আপনি মোটেও বেশি প্রেশার দিয়ে ফেলেননি বরং আপনার কাছ থেকে যা পেলাম তা হচ্ছে আরও ভালো লিখবার অনুপ্রেরনা!
পর পর দুইটি পর্ব মনোযোগ দিয়ে পড়বার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
-শাহেদ সেলিম

কামরুল হাসান রাঙা [অতিথি] এর ছবি

কিছু মনে করবেন না, লেখার আগামাথা কিছু বুঝা গেল না। যেহেতু সিরিজ লিখতে চাইছেন, প্রত্যেক লেখায় আগের লেখাগুলোর লিংক দিলে ভালো হয়।
ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই কামরুল হাসান রাঙা , অনেক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যর জন্য। আসলেই লিংক দেয়াটা প্রয়োজন ছিল। আশা করি এর পর আর ভুল হবেনা।
শুভ কামনা রইল।
-শাহেদ সেলিম

বেগুনী-মডু এর ছবি

আপনার লেখার তৃতীয় পর্বটি মডারেশন কিউতে আছে। প্রথম পাতায় এক লেখকের একাধিক লেখা প্রকাশিত হয়না। এ বিষয়ে এই পোস্টটি দেখতে পারেন। অনুগ্রহ করে আপনার পোস্ট প্রথম পাতা থেকে সরে যাবার পর পরবর্তী লেখা জমা দিবেন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।