নিয়তি (পর্ব-৩) (উপন্যাস)

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ১৪/১১/২০১০ - ৮:৩০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

নিয়তি (পর্ব-১) (উপন্যাস)

নিয়তি (পর্ব-২) (উপন্যাস)

শাহেদ সেলিম

পর্ব-৩

সকাল থেকেই নাদিয়ার মনটা খারাপ। শুধু খারাপ না, ভয়ংকর রকমের খারাপ। যেন রাজ্যের অন্ধকার এসে ভর করেছে ওর সমস্ত চেতনায়! মাঝে মাঝে নাদিয়ার এমন হয়। কারনে-অকারনে মনটা অসম্ভব রকমের খারাপ হয়ে যায়। তখন খুব অস্থির লাগে। নিজেকে প্রচন্ড অসহায় আর ভয়ানক একা মনে হয়।

ছুটির দিন হওয়ায় ইচ্ছা করেই বেশ বেলা করে ঘুম থেকে উঠেছে নাদিয়া। আর ঘুম থেকে জাগার পর থেকেই এমন অস্থির লাগছে! কারও সাথে যে কিছু শেয়ার করবে তারও কোনো উপায় নেই। এত বড় বাসা অথচ মানুষ বলতে ওরা মাত্র তিনজন! নাদিয়া, ওর বাবা আর কাজের মেয়ে জরিনা। জরিনার মা’ও এ বাসায় কাজ করে। সে গেছে তার গ্রামের বাড়িতে কি এক জরুরী কাজে।

নাদিয়ার এই মুহূর্তে মা’র কথা খুব মনে পড়ছে। ‘ইস! মা’যে কবে আসবে?’ মনে মনে ভাবলো সে। ওর মা’ই ওর সবচাইতে কাছের বন্ধু।
নাদিয়া ওর জীবনের প্রায় সবকিছুই ওর মায়ের সাথে শেয়ার করে।

নাদিয়ার মা মিসেস রহমান গেছেন কানাডায় ওনার ছেলের কাছে। তাও প্রায় একমাস হতে চললো। নাদিয়ার ভাই তমালের ছেলে হয়েছে কিছুদিন আগে। নাদিয়ার ভাবী তাসনুভাও ওখানে জব করে। যদিও ভাবী বেশ লম্বা একটা ছুটি পেয়েছেন, কিন্তু তারপরেও এ যুগের মেয়েতো তাই সবকিছু এত সহজে সামলাতে পারবেনা। সেজন্যই নাদিয়ার মাকে যেতে হয়েছে সদ্য নবজাতকের দেখাশোনা করার জন্য।

ছুটির দিনগুলো কেন জানি নাদিয়ার খুব একটা ভালোভাবে কাটেনা। আসলে নাগরিক ব্যস্ত জীবনের সাথে সে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে যে খানিকটা অবসরের অর্থ হয়তোবা তার কাছে জীবন সংগ্রামের কিছুটা ছন্দপতন সরুপ! বাসার চাইতে অফিসের সময়টাই নাদিয়ার কাছে বেশি উপভোগ্য বলে মনে হয়! এমন অদ্ভূত অনুভূতি ওর নিজের কাছেই মাঝে মাঝে বেশ আশ্চর্য লাগে! বাসার মায়া কেন যে ওকে এখন আর টানেনা তার কারন আসলেই জানেনা নাদিয়া।

আজকের সকালটাও কেমন যেন বিষন্ন! মনমরা! ছুটির দিনের যেমন একটা ঝলমলে সকাল সে কামনা করছিল আজকের এই সকালটা ঠিক তেমন নয়। অথচ অগ্রহায়ন মাস, মেঘমুক্ত স্বচ্ছ নীল আকাশ স্বাভাবিক ভাবেই প্রত্যাশিত!

নাহ্! ভালো লাগছেনা। কিচ্ছু ভালো লাগছেনা। এই ভেবে বারান্দায় এসে বসল নাদিয়া। ওর মায়ের ফুলের প্রতি অসম্ভব আগ্রহ! বারান্দা ভর্তি সারি সারি টব। সেখানে অনেক রকমের ফুল থরে থরে ফুটে আছে! ‘বাহ্! কি সুন্দর!’- নাদিয়া মুগ্ধ হয়ে বিড়বিড় করে বললো! কতদিন ও বারান্দায় আসেনা তা ও নিজেই জানেনা!

ওদের বারান্দাটা অনেক বড়। আলো-বাতাসও লাগে প্রচুর। তাই গাছগুলোও বেশ ঝরঝরে! জরিনা এসে একবার জিগ্যাসা করল, ‘আপা,নাস্তা খাইবেননা?’ নাদিয়া একটু চমকে উঠল। আনমনে কি যেন ভাবছিল সে!
নাদিয়া সচকিত হয়ে বললো, ‘না খিদে নেই। পরে খাবো। তুমি শুধু চা দিয়ে যাও এখানে।’

জরিনা চলে যাচ্ছিল। নাদিয়া পেছন থেকে আবার জিগ্যাসা করলো, ‘বাবা কই? কি করছে?’

জরিনা বললো, ‘মোবাইলে কার লগে জানি কথা কইতাছে।’

কার সাথে আবার এই সাত-সকালে কথা বলছে বাবা? শুক্রবারেও একটু সময় দেয়না নিজের পরিবারকে। এত ব্যবসা-ব্যাবসা করে কি হবে?

এখন মাকে খুব মিস করছে নাদিয়া। মা থাকলে ওর সাথে কত কথা বলত। ওকে এমন বিষন্ন মনে দেখলে মা কোনো না কোনো ভাবে ওর মন ঠিকই ভালো করে দিত।

বারান্দায় বসে থাকতে বেশ ভালো লাগছে নাদিয়ার। বসে বসে একা একা অনেক কিছু ভাবতে লাগলো সে। নাদিয়া বেশ ভালো করেই জানে যে কেন তার বাসার থেকে অফিসেই বেশী ভালো লাগে! অফিসের পরিবেশ, কাজের ধরন আর সহকর্মীরা ওর মন-মানসিকতার সাথে বেশ মানানসই তা সত্য, তবে মূল কারন যে হাসান ভাই এ ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত নাদিয়া!

নাদিয়া অবশ্য এখনও জানেনা যে সে আসলেই হাসান ভাইয়ের প্রেমে পড়েছে কিনা! হাসান ভাইকে সে ঠিক বুঝতে পারেনা! এমনকি হাসান ভাইয়ের সাথে ওর নিজের আচরনও নিজের কাছেই মাঝে মাঝে রহস্যময় মনে হয়! যেমন সমবয়সী হওয়া স্বত্তেও কেন তাকে শুধু ‘হাসান’ না বলে সে ‘হাসান ভাই’ বলে তার কোনো উপযুক্ত কারন সে নিজেই বের করতে পারেনি।

হাসান ভাইয়ের সাথে খুব অল্পদিনের চেনা-জানা হলেও একই সাথে কাজ করার ফলে ভালো একটা সম্পর্ক হয়ে গেছে ওদের।

প্রেম-ভালোবাসা সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা নাদিয়ার নেহায়েত কম না হলেও হাসান ভাইয়ের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারছেনা সে। তবে মানুষটা যে ভালো এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।

নাদিয়ার জীবনে হাসান ভাই সেই বিরলতম পুরুষদের একজন যে কিনা এখনও তাকে সরাসরি প্রেমের প্রস্তাব দেয়নি!

নাদিয়ার বয়স এখন ছাব্বিশ। অথচ যখন নাদিয়া ওর জীবনটাকে পেছন ফিরে দ্যাখে তখন অবাক বিস্ময়ে উপলব্ধি করে কতইনা বিচিত্র অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছে ওকে!

১৪ নভেম্বর,২০১০
ঢাকা


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লাগছে পড়তে।
শুভ কামনা রইল।
....পর্বগুলো আর একটু বড় হলে কি খুব ক্ষতি হয়?

সন্ধ্যা

অতিথি লেখক এর ছবি

@সন্ধ্যা, অনেক অনেক ধন্যবাদ পড়বার জন্য। আরও ধন্যবাদ পড়ে মন্তব্য করার জন্য।
আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশী হলাম। আরও ভালো কিছু লিখবার অনুপ্রেরনা পেলাম।
পর্বগুলো আরও বড় হলে কোনো ক্ষতি নাই, তবে সমস্যা হলো বড় লেখা অনেক পাঠক পড়তে চায়না অনেক সময়।
তবে চেষ্টা করবো আগামী পর্বগুলো আরও বড় করবার।
আপনার জন্যও অনেক অনেক শুভকামনা রইল।

শাহেদ সেলিম

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।