মনমাঝি
এর আগে আমার মিশর ভ্রমনের একটা ক্ষুদ্র অংশ নিয়ে দু’টো পর্ব লিখেছি। ইচ্ছা আরো কিছু লিখবো, কিন্তু কিছুতেই মন বসাতে পারছি না। মাথা থেকে গড়গড়িয়ে ফোয়ারার মত কিছু বেরুচ্ছে না, ওদিকে কিছু একটা বের করতে হলে যে পরিশ্রমের প্রয়োজন -- সেই ভয়টাও কাজ করছে। তো, কি করি কি করি ভাবতে ভাবতে মনে হল, বড় পরিসরে বিস্তারিত কোন বর্ননায় না গিয়ে কোন একটা ক্ষুদ্র বিচ্ছিন্ন দৃশ্য ব ...
মনমাঝি
এর আগে আমার মিশর ভ্রমনের একটা ক্ষুদ্র অংশ নিয়ে দু’টো পর্ব লিখেছি। ইচ্ছা আরো কিছু লিখবো, কিন্তু কিছুতেই মন বসাতে পারছি না। মাথা থেকে গড়গড়িয়ে ফোয়ারার মত কিছু বেরুচ্ছে না, ওদিকে কিছু একটা বের করতে হলে যে পরিশ্রমের প্রয়োজন -- সেই ভয়টাও কাজ করছে। তো, কি করি কি করি ভাবতে ভাবতে মনে হল, বড় পরিসরে বিস্তারিত কোন বর্ননায় না গিয়ে কোন একটা ক্ষুদ্র বিচ্ছিন্ন দৃশ্য বা অভিজ্ঞতা দিয়েই কলমটা চালু করে ফেলি না কেন। হাত দিয়ে যা বেরোয় বেরোক, পরে দেখা যাবে কোথাকার জল কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়। তো কি হতে পারে সেই অভিনব বিচ্ছিন্ন দৃশ্য বা অভিজ্ঞতা ? ভাবতে গিয়েই মনে হল বেলি ড্যান্সের কথা। হ্যাঁ, বেলি ড্যান্স। মিশরে প্রায় সবকিছুই অবশ্য আমার মত দুনিয়া না দেখা ভ্রমন-অনভিজ্ঞ কূপমন্ডুকের কাছে অভিনব মনে হয়েছে। তা সে পিরামিডই হোক, মরুভূমিই হোক, মমি, স্ফিংস, ওবেলিস্ক, বা সামান্য রাস্তাঘাটই হোক! কিন্তু এগুলি এতই প্রত্যাশিত ও বিশ্ব-পরিচিত বিষয় যে এ সংক্রান্ত বর্ননা জীবন্ত ও নিজস্ব করতে হলে অনেক চিন্তা করে লিখতে হবে যা এ মুহুর্তে আমার পোষাবে না।
পিরামিড, মমি, ইত্যাদি যে দেখব সেটা মিশরে যাওয়ার আগেই জানতাম। কিন্তু যাওয়ার আগে যেটা চিন্তা করিনি, সেটা হলো এই বেলি ড্যান্স। কায়রোতে আড়াই-তিন মাস যে বাড়িতে ছিলাম সেটা একদম নীল নদের পারে। ১৮-১৯ তলায় অবস্থিত এ্যাপার্টমেন্টের ফুটবল মাঠের মত ব্যালকনিতে ধূ-ধূ দামাল বাতাস খেতে খেতে নীচে নীল নদের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে, তার বুকে ভেসে বেড়ানো পাল-তোলা নৌকা “ফেলুক্কা”, আরো নানান কিসিমের বোট, জাহাজ আর রেস্টুরেন্ট-কাম-বিনোদনতরী গুলি দেখতে দেখতে অনেক অলস দুপুর পার করেছি। টুরিস্টদের নিয়ে ঘুরে বেড়ানো ঐ দুই-তিন তলা এয়ার-কন্ডিশন্ড বিনোদনতরীগুলির ভিতরে কি আছে জানতাম না। ভেবেছিলাম বোধহয় নেহাতই নদীবক্ষে হাওয়া-খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপার। আর তাতে আমার তেমন উৎসাহ ছিল না। এর চেয়ে পাল-তোলা ‘ফেলুক্কা’গুলি অনেক মজার।
এর মধ্যে কায়রোর এক বাংলাদেশী ভাই করিম ভাই (ছদ্মনাম)-র বাসায় দাওয়াত খেতে গেলে উনি প্রস্তাব দিলেন – চলেন একদিন ঐ বিনোদনতরী করে নাইলের বুকে এক পাক দিয়ে আসি। খাওয়া-দাওয়া (বুফে লাঞ্চ), গান-বাজনা, কালচারাল শো, বেলি ড্যান্স – সবই আছে ওর মধ্যে। ৩-৪ ঘন্টার প্যাকেজ ট্রিপ। বেলি ড্যান্স বলেই মনে হলো উনি আমার দিকে কেমন করে তাকালেন যেন। শব্দ দু’টা একটু প্রলম্বিত স্বরে তারিয়ে তারিয়ে বললেন কি ? আমার দিকে কি একটু আড়চোখে তাকালেন, মুখে দেখা যায় কি যায় না এমন চোরা মুচকি হাসি ? কি জানি, চোরের মন পুলিশ পুলিশ হয়তো!
বেলি ড্যান্স কি চীজ তা স্পষ্ট করে জানি না, জীবনেও দেখি নি। শুধু আমার মত গাঁইয়া কূপমন্ডুকের মনে বহু আগে বিটিভিতে ধর্মীয় অনুষ্ঠান “উজ্জীবন”-এ এর একটা কয়েক পলক ‘সিল্যুট’ দৃশ্যের স্মৃতি। আর সেই সাথে ঐ অনুষ্ঠানের উপস্থাপকের এ বিষয়ে তীব্র বিষোদ্গার – কিভাবে বিশ্ব-ব্রম্মান্ড রসাতলে যাচ্ছে এই তার নমুনা ! স্বভাবতই, আমার ধারনা ছিল এটা সাঙ্ঘাতিক অশ্লীল ধরনের কোন নিষিদ্ধ বস্তু। যা সভ্য সমাজে কোন ভাবেই আলোচ্য নয়। অথচ এদিকে তাকিয়ে দেখি সামনে ভাবী পাতে ভাত বেড়ে দিচ্ছেন। কোথায় যে মুখ লুকাই! নাহ্, আমি উলটো পথ ধরলাম। দারুন গম্ভীর ভাব নিয়ে জানিয়ে দিলাম – না, আমি এসব বেলি ডান্স-ফান্স দেখি না। আমি এসব একদমই পছন্দ করি না। নীতিবাগিশতার ধ্বজা সদম্ভে উড়িয়ে পরম পরিতৃপ্তিতে তাকাতেই দেখি ভাবী যেন মুখের হাসি দ্রুত আঁচল চাপা দিয়ে তাড়াতাড়ি কিচেনের দিকে সটকে পড়লেন আরো খাবার আনতে। করিম ভাইও মনে হল কেমন যেন একটু মুচকে মুচকে হাসছেন নাকি আমার প্রতিক্রিয়া দেখে ? ঠিক বুঝলাম না। যাচ্চলে, নিজেকে কেমন যেন বোকা বোকা লাগতে লাগল।
এরপরে আরো কি কথা হয়েছে এখন আর মনে নেই, তবে শেষমেশ ঐ নদীবক্ষের প্লেজার-ট্রিপে যাওয়াই স্যাব্যস্ত হল। এটুকু বুঝেছিলাম যে, বেলি ড্যান্সটা মিশরে নিষিদ্ধ অশ্লীল কোন বস্তু নয় বা ঠিক দেশের প্রিন্সেস জরিনা টাইপেরও কিছু নয়, বরং এটা ওদের কালচারেরই অংশ। আর অন্তত শিক্ষিত মহলে এর আলোচনাও নিষিদ্ধ বা চোখ-রাঙানির শিকার নয়। বরং অনেকেই দেখলাম সপরিবারেই যায় – অন্তত দম্পতিরা তো বটেই। কায়রোর শিক্ষিত বাঙালীরাও এতে অভ্যস্ত। করিম ভাইর মুখেও নিমন্ত্রনটা এসেছিল ঐ স্বাভাবিকতার সূত্রেই খাবার টেবিলে বসে ভাবীর সামনেই, আড়ালে বা কোন রঙীন পানীয়ের আসরে নয়।
ঐ বিনোদনতরী ছাড়াও মিশরে এরপরে আরো দুয়েক জায়গায় আমার বেলি ড্যান্স দেখার সুযোগ হয়েছে। এক সময় মনে হয়েছে, দর্শনটা এই রকম যে - দেহটা সর্বদা নিষিদ্ধ পিচ্ছিল কৌতুহলের অপরাধী আলো-আঁধারির বিষয় নয় সবার কাছে, বরং তা দৃপ্ত প্রানপ্রাচুর্যের একটা সুন্দর স্বাভাবিক অংশও হতে পারে। বেলি ড্যান্স যদিও ক্যাবারে হোটেল, অডিটোরিয়াম মঞ্চ, বিভিন্ন উৎসবের ভেন্যু, ইত্যাদি চার দেয়াল ঘেরা স্থানেই হয় এবং প্রোফেশনাল পারফরমাররাই এটা পারফর্ম করে থাকেন – কিন্তু সাধারন কায়রোবাসী তরুন-তরুনীদেরও দেখেছি শহরের মধ্যখান দিয়ে বয়ে যাওয়া নীল নদীর বুকে ২০-৩০ জনের দল বানিয়ে বড়সড় একটা কারুকার্যমন্ডিত খোলা ইঞ্জিন-বোট ভাড়া করে ছুটির দিনে গান বাজাতে বাজাতে উদ্দাম গতিতে নাচতে নাচতে ভেসে পড়তে। এদের যদিও পুরো শরীর স্বাভাবিক পোশাকে ঢাকা থাকে এবং এগুলি ঠিক বেলি ড্যান্সও নয়, কিন্তু নাচের সময় আর প্রানের ফুর্তি, তনুমনের হিল্লোল বাধ মানে না। কঠিন মুসলিম আরব দেশ হলে কি হবে, কেউ ফিরেও তাকায় না। দেখতে দেখতে আমি ভাবি, বাংলাদেশ হলে কি হতো। ভাবতেই ভয় হয়। আর হ্যাঁ, মেয়েদের নিরাপত্তাও এখানে অনেক উঁচু মাত্রায়। পশ্চিমা টিভিতে বা টুরিজম সঙ্ক্রান্ত ওয়েব সাইটগুলাতে যাই বলা হোক না কেন, রাস্তায় হাটলে বোঝা যায় একদিকে বাংলাদেশের সাথে অন্যদিকে সৌদির সাথে আকাশ-পাতাল পার্থক্য।
তবে হ্যাঁ, ধর্মীয় রক্ষনশীলতা এখানেও বাড়ছে। অনেকে মুসলিম ব্রাদারহুডের কথা শুনে থাকবেন। ফলে, প্রপার বেলি ড্যান্স-ট্যান্স এখন অনেক নিয়ন্ত্রিত ও নিয়ম-কানুনের নিগড়ে আবদ্ধ।
তো বেলি ড্যান্সটা কি ?
বেলি-ড্যান্স মধ্যপ্রাচ্যের একটি বিশেষ ঘরানার ঐতিহ্যবাহী নৃত্য রূপের পাশ্চাত্য প্রদত্ত নাম। মধ্যপ্রাচ্যে এটা মূলত রাক্স শারকি নামে অভিহিত, যদিও বিশ্বব্যাপী এটা বেলি ড্যান্স হিসাবেই খ্যাতি লাভ করেছে। নামটা একটু বিভ্রান্তিকরও বটে, কারন এটা ঠিক ‘উদর-নৃত্য’ নয় – বরং দেহের সর্বাঙ্গই এর সাথে জড়িত। বিশেষত বক্ষ ও নিতম্ব।
বেলি ড্যান্সের দুটি প্রধান রূপ – রাক্স শারকি এবং রাক্স বালাদি। রাক্স শারকিবহিঃর্বিশ্বে বেশী পরিচিত এবং জনপ্রিয়। এটা প্রধানত নারী শিল্পীরাই পারফর্ম করেন, যদিও কদাচিৎ পুরুষরাও করে থাকেন। এটা মূলত একক নৃত্য এবং কিছুটা ইম্প্রোভাইজেশনাল, তবে কোরিওগ্রাফ করে বা দলবদ্ধ ভাবেও করা হয় অনেক সময়। রাক্স বালাদি মূলত একটা লোকায়ত স্টাইল যাতে বিয়েশাদি বা বিভিন্ন উৎসবে সববয়সের নারী-পুরুষই যৌথ ভাবে শামিল হন। রাক্স শারকির সাথেরাক্স বালাদির মনে হয় উদ্দেশ্যগত পার্থক্যও রয়েছে কিছুটা।
ইজিপ্ট তথা মিশরকে বেলি ড্যান্সের তীর্থভূমি ও স্বর্গরাজ্য বলে সাধারন ভাবে গন্য করা হলেও, বর্তমানে খোদ ইজিপ্টে ধর্মীয় রক্ষনশীলতা বৃদ্ধির কারনে এর প্রকাশ্য রমরমা আগের মত অবশ্য নেই। প্রধানতঃ টুরিস্টদের জন্য ইজিপ্টের বিভিন্ন দামী রেস্টুরেন্ট, নীল-নদের উপর বিনোদন-তরী বা হোটেল ক্যাবারে-তে বেলি ড্যান্স দেখা গেলেও এখন তা অনেক বেশী সংযত ও নিয়মের নিগড়ে আবদ্ধ এবং এসব বেলি ড্যান্সাররা প্রায় সবাই সম্ভবত বহিরাগত অ-মিশরীয়। আমার ধারনা প্রধানত মধ্য এশিয়া, রাশিয়া এবং পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা। মিশরী নারী মনে হয় না খুব বেশী পাওয়া যাবে যারা এর সাথে জড়িত (তবে এ ধারনা আমার অজ্ঞতাপ্রসূতও হতে পারে)।
মিশরের পাশাপাশি লেবানন, তুরস্ক – মধ্যপ্রাচ্যের এসব দেশেও বেলি ড্যান্স রাক্স শারকি) ব্যাপক ভাবে প্রচলিত এবং মিশরের মত অতটা নিয়ন্ত্রিত বোধহয় নয় এখনো। এছাড়া এই নাচের স্টাইল এখন পশ্চিমা বিশ্বেও ব্যাপক ভাবে জনপ্রিয়তা পাওয়ার ফলে বহু পশ্চিমা নৃত্যশিল্পীও এখন এই ঘরানা চর্চা করেন। ফলে এর মধ্যে অবধারিত ভাবেই এসেছে অনেক বিবর্তন ও প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের ফিঊশন । এছাড়া বেলি ড্যান্সের কিছু নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের কারনে এর কিছু প্রভাব বর্তমানে আরো অনেক দেশের আন-অফিশিয়াল নাচের ঘরানাতেও মনে হয় বেনামে ঢুকে পড়েছে (যেমন ভারতীয় সিনেমাতে)।
ইতিহাসঃ
বেলি ড্যান্সের উৎপত্তি মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন নাচের ঘরানা থেকে। এনিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে প্রচুর মতভিন্নতা আছে। কারো মতে এই নাচের শিকড় প্রাচীন আরবের বিভিন্ন ট্রাইবাল ধর্মগুলির মধ্যে, যেখানে এটা “উর্বরতার দেবী”র উদ্দেশ্যে নিবেদিত হতো। কারো মতে প্রাচীনযুগের আরব নারীরা এটা চন্দ্রদেবতা “হুবাল”-এর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করত। সেখান থেকেই এর সূচনা। আবার অনেক বিশেষজ্ঞের মতে বেলি ড্যান্সের প্রাচীনতম নিদর্শন বা লক্ষন পাওয়া যায় মিশরের ফারাওনিক যুগের বিভিন্ন দেয়াল-খোদাইচিত্র থেকে। আবার কারো কারো মতে আদিতে এই নাচ কেবল নারীর জন্য নারীরাই চর্চা করতো, এবং এর জন্ম উত্তর আফ্রিকা ও “লেভ্যান্ট” অঞ্চলে (মূলত লেবানন, সিরিয়া, জর্ডান, ইসরায়েল, প্যালেস্টাইন এবং কখনো-সখনো গৌনত সাইপ্রাস, সিনাই, ইরাকও; অথবা আরেক সংজ্ঞায় – পশ্চিম এশিয়া, পূর্ব-ভূমধ্যসাগর এবং উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার সঙ্গমস্থল)। আবার আরো একটি মতে, দীর্ঘকাল ধরে ভূমধ্যসাগরের চতুর্পাশ্বের তীরবর্তী অঞ্চল থেকে আসা দেশান্তরী মানুষদের বিভিন্ন স্টাইলের সংমিশ্রণের ফসল এটি যা উত্তর আফ্রিকায় এসে বিশেষ রূপ লাভ করেছে।
বেলি ড্যান্স পাশ্চাত্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠে ১৮শ এবং ১৯শ শতকের দিকে, যখন পশ্চিমা ওরিয়েন্টালিস্ট শিল্পীরা তুর্কী অটোমান সাম্রাজ্যে ‘হারেম’-জীবনের সুড়সুড়ি জাগানো একজটিক চিত্র আঁকা শুরু করেন। এইরকম সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের নাচিয়েরাও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মেলাগুলিতে প্রদর্শনী শুরু করেন যা পাশ্চাত্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। এই সময়েই “ওরিয়ান্টাল” এবং “ইস্টার্ন” নৃত্য নামগুলির প্রচলন ঘটে। “ওরিয়েন্টাল” নাচ এসময় এত জনপ্রিয়তা লাভ করে যে অনেক পশ্চিমা শিল্পীও এতে নাম লিখান, যেমন ফরাসী লেখিকা কোলেট, যারা অনেক সময় নিজেদের উদ্ভাবন বা ইন্টারপ্রিটেশনকেই অথেনটিক বলে চালিয়ে দিতেন। এরকম আরেক চরিত্র হচ্ছেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-কালীন সেই বিখ্যাত লাস্যময়ী জার্মান স্পাই – মাতা হারি। মাতা হারি বেলি ড্যান্সের কাছাকাছি একটা স্টাইল অনুসরন করতেন।
মিশরকে বেলি ড্যান্সের তীর্থভূমি বলে গন্য করা হলেও, এখানেও এই কলা নগরায়ন এবং বহু ভিনদেশী তথা বহুসাংস্কৃতিক সঙ্করায়নের প্রভাবে প্রভাবিত। বর্তমানে বেশির ভাগ শিল্পীও বোধহয় বহিরাগত অ-মিশরীয়।
যাই হোক, বেলি ড্যান্স নিয়ে এখানেই আমার এ লেখাটা শেষ করি। এই নাচের ব্যাকরন, এর নন্দনতত্ত্ব, বা এতে ব্যবহৃত কস্টিউম, বিভিন্ন দেশে এর বিভিন্ন রূপ, ইত্যাদি নিয়ে আমার পক্ষে বেশি কিছু বলা সম্ভব নয় – কারন মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত-র মতো আমারো এ বিষয়ে চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে তাকিয়ে হাভাতে বোকার মতো শিল্পসুধা পান করার চেয়ে বেশি কোন ইন্টেলেকচুয়াল ক্ষমতা নেই। আশা করি আকেলমন্দ্ পাঠকরা বুঝবেন !
যারা আরো জানতে চান, তারা এই এবং এই লেখা দু’টি পড়ে দেখতে পারেন।
তো আকেলমন্দ্ পাঠক যারা এদ্দুর পর্যন্ত আমার ভ্যাজর ভ্যাজর পড়তে পড়তে হাঁপিয়ে গেছেন, তাদের জন্য নীচে বেশ কিছু বেলি ড্যান্সের একটা ভিডিও লিঙ্ক দিলাম। আপনাদেরকে তো আমার সাথে আর মিশর ভ্রমনে নেওয়া গেল না, তো এই তার বিকল্প। এর মধ্যে একটা আমার তোলা, বাকিগুলো ইন্টারনেট থেকে এমবেড করা : --
মন্তব্য
আমার তো এমনই অবস্থা যে, মনখ্রাপ হইলেই শাকিরার hips don't lie ভিড্যুটা ছাইড়া দেখি। ব্যস, নিমিষেই মন ফকফকা। শাকিরার ওই নাচ কি বেলি ড্যান্স না? আপনার দেয়া ভিড্যুগুলি দেখতে পারি নাই, নেট স্লো।
সংযোজন :
hip শব্দের অর্থ- উরুর অস্থি এবং মধ্যশরীরের সংযোগস্থল; কটি; কোমর; মাজা।
belly শব্দের অর্থ- পেট, উদর।
আক্ষরিক অর্থ বিবেচনায় এই নাচের নাম বেলি ড্যান্স (Belly dance) না হয়ে হবে হিপ ড্যান্স (hip dance)।
কুটুমবাড়ি
ভিডিও গ্যালারির প্রথম ভিডিওটা দেখলে আপনি তাহলে কি বলতেন খোদাই মালুম। আপনার অভিধান ফেল মারতো নিঘঘাৎ। আর "দেঁতো হাসি"র ইমো না দিয়ে তখন বোধহয় "কেনো হাসি"-র (ear-to-ear) ইমো দিতেন।
ভিডিও গ্যালারিতে
মিশর নিয়ে আরো লিখুন।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ধণ্যবাদ।
ভিডিও গ্যালারি দেখলাম। প্রথম ভিডিও ছাইড়াই যে শব্দটা প্রথম বাইর হৈলো সেটা হলো, নাউযুবিল্লাহ্! বেলি ডান্সের এই ক্লিপে তো বেলি নাচে না, নাচে অন্যকিছু! রোযা রমযানের দিনে ঈমান নিয়া টানাটানি!
আপনার পোস্টের জাররা জাররায় (গুড়) দিলাম।
মিশর যাওয়ার শখ আমার বহুদিনের। দেখি, বড় হয়া অবশ্যই যাবো।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
তোবা! তোবা! আপনি ঠিক আছেনতো ভাই? আপনার রোযা ভাঙে নাই তো ?
দায়বর্জনবিবৃতিঃ এই ভিড্যুগুলা নির্মল শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে দেওয়া হইছে, কাহারো রোযা ভাঙানোর মত বিতর্কিত উদ্দেশ্য এতে নাই!
শ্লো নেটের কারণে বাধ্য হয়ে নাচ পড়ে সন্তুষ্ট থাকলাম
আমিও আপাতত নাচ পড়লাম।
তবে এ জিনিস সচক্ষে দেখেছি দুবাইতে। তখন আমি খুবই ছোট। দেশে এসে আমার নৃত্যসংক্রান্ত বয়ান শুনে বড়রা হেসে কুটিপাটি হয়েছিলো।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
আবুধাবিতে একবার বেলি নাচ দেখার সৌভাগ্য হইছিলো। লেবানীজ মেয়ের সেই নাচ দেখার পর সেই যে মন উদাস হইছে আর ঠিক হইলো না
লেখা আর নাচ এর কম্বিনেশন ভালো পাইলাম।
love the life you live. live the life you love.
পুরো না দেখতে পেলেও কিছুটা দেখলাম। পাকিস্তানী মুজরা এবং বেলি ড্যান্স, দুটোই ভালো লাগে। সম্প্রতি কিছু সোমালি হিপ শেকার্সও দেখলাম, খারাপ না। তবে বেলি ড্যান্সটা বেশি ভালো লাগে। কৈশোরে পোংটা জীবনের প্রারম্ভে মিশরের বাদশাহ্ ফারুক আর বিশ্বসেরা মিশরিয় বেলি ড্যান্সার ক্যামেলিয়ার অবৈধ প্রণয় নিয়ে কিছু কাহিনী পড়েছিলাম। তবে জোস ডায়লগ দিয়েছিলেন বাদশাহ ফারুক-
রাতঃস্মরণীয়
অনেকেই দেখছি স্লো নেটের কারনে ভিডিও দেখতে পার্ছেন্না। অথচ এই লেখার প্রানকেন্দ্র এই ভিডিওগুলাই। নাচ তো ঠিক "পড়ার" বিষয় না। তবে অনলাইনে দেখতে না পারলে ডাঊনলোড করে নেয়া যেতে পারে হয়তো।
ধৈর্যধারণকারীর জন্যে ইহকালে এবং পরকালে সুফল সুনিশ্চিত। আমি কিন্তু দেখেই ছেড়েছি মনমাঝি। জোস্ জিনিস দিয়েছেন। তবে ২-১টায় কিছুদুর হওয়ার পর আর বাফার হয় না। তবুও ভালো। ইজিপ্টে কখনও না গেলেও আপনার লেখার মাধ্যমে অনেক কিছুই জানলাম। ধন্যবাদ আপনাকে।
রাতঃস্মরণীয়
নাচ পড়া এবং দর্শন সবই হলো। দারুণ লাগলো।
মধ্যপ্রাচ্য বেলি ড্যান্স নিষিদ্ধ বস্তু নয় বরং আপনি যেটা বলেছেন কালচারেরই একটা অংশ, আমেরিকার মিডল ইস্টার্ন অনেক রেঁস্তোরাতেই এটা হয়। আমাদের শহরেই একবার এক রেঁস্তোরাতে সপরিবারে বেলি ড্যান্স উপভোগ করেছি।
মরুযাত্রা চলুক, আশা রাখি এই জীবনেই এগুলো দেখা হবে, এখন আপাতত পড়ে রাখি
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
আগ্রহ যদি থাকেই, টার্গেট করে যেকোন একটা লম্বা ভ্যাকেশনে চলে যান। মিশরে মমি, পিরামিড এসবের বাইরেও দেখার জিনিষ আছে। চাইলে আমি আপনাকে মরুযাত্রার বাইরেও ট্রাভেল এ্যাডভাইস দিয়ে দিমুনে - কোথায় যেতে হবে বা কোথায় না গেলেও চলে, কি কি দেখার আছে, ইত্যাদি। অক্টোবর-ফেব্রুয়ারির দিকটাই বোধহয় সেরা সময়। টার্গেট না করলে অনেক সময় হয়ে উঠে না।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
উলাল্লা!
লেখা আর ছবি দুই-ই ভালো হইছে। ভিড্যু পরে দেখুমনে।
আমি আমার ইউনিভার্সিটিতে একটা ইন্টারন্যাশনাল কালচারাল প্রোগ্রামে একটা লোকাল ড্যান্স গ্রুপের বেলী ড্যান্স দেখেছিলাম, ভয়াবহ লেগেছিল (আসলে ড্যান্সারগুলা বুড়ি ছিল আর ভালো পারতোও না) কিন্তু আপনার বর্ণনা শুনে মনে হচ্ছে জিনিসটা খারাপ না।
পাগল মন
লেখা ভাল হয়েছে। আর উদরনৃত্য... নাঃ, থাক!
থাক কেন ? বলেন না প্লিজ!
উপরে বিভিন্ন মন্তব্যে প্রচুর "দেঁতো হাসি"-র ছড়াছড়ি দেখতে পাচ্ছি। তাই সম্মানিত পাঠককুলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে, বেলি ড্যান্স দেখার একটা "এটিকেট" আছে। এটা দেখার সময় আপনার বদনসুরতে একটা সংযত, বিনম্র, প্রসন্ন ভাব ধারন করে হাততালি দেওয়াই রেওয়াজ। একটা উচ্চ মার্গের রেস্পেক্টেবল পারফর্মেন্স দেখলে যেমন করা উচিত আরকি। আপনি মনে মনে কত দাঁত কেলাচ্ছেন, সেটা কেউ দেখতে আসবে না !
লেখাটা পড়া ও দেখার জন্য ধণ্যবাদ সবাইকে।
ভিডিও না দেখতে পেয়ে মিজাজ খ্রাপ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
নতুন মন্তব্য করুন