শাহেদ সেলিম
পর্ব-৪
‘তোমার কি মনে হয়না আমাদের এখন বাচ্চা-কাচ্চা নেয়া উচিৎ?’- আসিফ কিছুটা উত্তেজিত হয়েই প্রশ্নটি করলো।
‘তোমার এই একই প্রশ্নের উত্তর বার বার দিতে দিতে আমি সত্যিই ক্লান্ত। এই বিষয়ে আর কোনো কথা বলতে ইচ্ছা করছেনা আমার।’- অনাগ্রহভাবে বললো সামিয়া।
আসিফ এবার সরাসরি সামিয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। সামিয়ার হাতে একটা বই ছিল। সেটা কেড়ে নিয়ে আসিফ চিৎকার করে বললো- ‘এখন তোমাকে চূড়ান্ত কিছু বলতেই হবে। তুমি বেবি নিবা কি নিবানা?’
একথা শুনে সামিয়া একেবারে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো।
বললো-‘এতো রাতে কেন সিনক্রিয়েট করছো আসিফ?’
‘আমি জানতে চাই তুমি আমার সন্তানের মা হতে চাও কিনা?’
‘কেন তোমার কি কোনো সন্দেহ আছে?’-পাল্টা প্রশ্ন করলো সামিয়া।
আসিফ আর সামিয়ার বিয়ে হয়েছে প্রায় চার বছর হতে চললো। প্রেমের বিয়ে না হলেও সমঝোতার বিয়ে বলা যায়। বিয়ের আগে একে অপরকে বেশ ভালোভাবে জানবার সুযোগ পেয়েছিল ওরা।
বাচ্চা নেয়ার কথা উঠলেই ক্যারিয়ারের দোহাই দিয়ে বার বার আসিফের কাছ থেকে সময় নিয়েছে সামিয়া। এদিকে আসিফের পরিবারের সবাই এ ব্যাপারটা নিয়ে ইতিমধ্যেই কানাঘুষা শুরু করে দিয়েছে। চার বছর তো কম সময় না! সামিয়ার পরিবার থেকেও কিছু কথা আসিফের কানে এসেছে। এইতো বেশ কিছুদিন আগেই আসিফের শ্বাশুড়ি ওর বড় বোনকে ফোন করে জিগ্যেস করেছিলেন যে আসিফের কোন সমস্যা আছে কিনা? আর যদি সমস্যা থেকেই থাকে তাহলে কেন এখনো ডাক্তার দেখাচ্ছেনা?
আসিফের বড় বোন জবাবে বলেছিল, ‘খালাম্মা আপনি কি এ ব্যাপারটা নিয়ে সামিয়ার সাথে কোনো কথা বলেছেন?’
আসিফের শ্বাশুড়ি মানে সামিয়ার মা বলেছিলেন যে, সামিয়ার কোনো সমস্যা নেই। আসিফ-ই নাকি তাল-বাহানা করছে।
এমন একটা ডাহা মিথ্যা অপবাদ শুনে কার না মাথা গরম হয়?
এমনকি আসিফের মা’ও সেদিন বলেই ফেললেন, ‘বাবা, তোমার বা বৌমার কোনো সমস্যা থাকলে ডাক্তার দেখাও।’
আসিফের মা জোহরা বেগম খুবই ঠান্ডা স্বভাবের মহিলা। অযথা বাড়তি কথা-বার্তা অথবা চিৎকার চেঁচামেচি তিনি মোটেও পছন্দ করেননা। আর তার বৌমা মানে একমাত্র ছেলের বৌ এর স্বভাব ঠিক তার উলটো। সামিয়া অসম্ভব রাগী আর বদমেজাজী। জোহরা বেগম এ কারনে সামিয়াকে বেশ সমীহ করে চলেন! মনে মনে সামিয়াকে কিছুটা ভয়ও পান! তাই এসব মেয়েলী ব্যাপার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নিজের একমাত্র ছেলের বৌয়ের সাথে আলোচনা করতে পারেননা। বাধ্য হয়েই নিজের ছেলের সাথেই এ ব্যাপারে কথা বলতে হয় তাকে।
আসিফ সামিয়াকে জিগ্যাসা করলো, ‘তোমার মাকে তুমি কি বলেছো? আমি নাকি এখনি বাচ্চা-কাচ্চার ঝামেলায় যেতে চাইনা। এমন একটা জঘন্য মিথ্যা তুমি কি করে বলতে পারলা? তাও নিজের মা’কে?’
সামিয়া ধীর স্বরে বলতে লাগলো, ‘আমি যা বলেছি ঠিকই বলেছি। মায়ের কাছে ছোট হতে মন চায়নি আমার। তাছাড়া আসল কথা জানলে মা আমাকে অসম্ভব জোর-জবরদস্তি করবে। এখন আর এসব ঝামেলা আমার ভালো লাগেনা।’
সামিয়ার কথা শুনে আসিফ একেবারে হতভম্ব হয়ে গেলো!
‘সামিয়া,তোমার কি আসলেই মাথা খারাপ হয়ে গেছে? নিজের আত্ম-সম্মানের কথা চিন্তা করলা অথচ সবার কাছে আমাকে কতটা ছোট করলা তা একটিবারের জন্যও ভেবে দেখলানা? তাও আবার এমন নগ্ন মিথ্যা বলে?’
‘দেখো আসিফ, মা হবার জন্য যে মানসিক আর শারীরিক প্রস্তুতির দরকার এই মুহূর্তে আমার তা নেই। তাছাড়া তুমিতো ভালো করেই জানো যে এ বছরটা আমার ক্যারিয়ারের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ন! সামনের মাসে আমার যদি জার্মানী যাওয়াটা কনফার্ম হয়েই যায়, তাহলে কিভাবে এই মুহূর্তে বাচ্চার চিন্তা করা সম্ভব? জার্মানী যাওয়ার সুযোগটা পেলে আমি কিছুতেই তা হেলায় হারাতে চাইনা। এ বছর অফিস থেকে মাত্র একজন কি দু’জন এই সুবর্ন সুযোগটা পাবে। আর তুমিতো জানোই যে জার্মানীর ট্রেনিংটা নিয়ে আসতে পারলে পরবর্তীতে প্রমোশন একেবারে নিশ্চিত। এমন একটা সুযোগ কি আমার হারানো উচিৎ? তুমিই বলো?’
আসিফ কিছুক্ষন নীরব থাকলো। তারপর ধীরে ধীরে বলতে শুরু করলো, ‘বুঝলাম। সবই বুঝলাম। তোমার কথার যুক্তি আছে। আমিও চাইনা আমার কারনে তোমার ক্যারিয়ারের কোনো ক্ষতি হোক। কিন্তু তাই বলে তুমি আমাকে মিথ্যা অপবাদ কেন দিলে? কেন আমার সক্ষমতা নিয়ে সবার মাঝে প্রশ্ন ওঠে?’
কিছুক্ষন চুপ করে থেকে আসিফ আবারও বলতে শুরু করলো, ‘আর সামিয়া তোমাকেওতো বুঝতে হবে আমারও সমাজ আছে, একটা সংসার আছে।সবার রক্তচক্ষু আর হাজারো প্রশ্নের ভীড় আমি কিভাবে এড়িয়ে যাবো?’
সামিয়া খাট থেকে নেমে এসে আসিফের পাশে এসে বসলো। আসিফের ডান হাতটা নিজের দুই হাতের মাঝখানে নিয়ে হাল্কা হেসে বললো, ‘তোমার সংসার আছে তা কেন বুঝবোনা? আমিইতো তোমার সংসারের একটা অংশ! তাই না? আমাকে একটু সময় দাও। আমি কথা দিচ্ছি এরপর আর তোমাকে নিরাশ করবোনা। জার্মানী থেকে ফিরে আমরা দু’জনে বসে একটা সিদ্ধান্ত নিব, ঠিক আছে? আর তখন মাকেও সবকিছু বুঝিয়ে বলবো। প্রয়োজন হলে সবার কাছে ক্ষমা চাবো। কি, এবার খুশীতো? এখন একটু হাসো প্লিজ। সেই তখন থেকে তোমার এই গোমরা মুখ দেখতে আর ভালো লাগছেনা। প্লিজ, একটু হাসোনা।’
আসিফ কিন্তু হাসলোনা। নীরব থেকে আনমনে কি যেন ভাবতে লাগলো সে! সামিয়ার বন্ধন থেকে হাতটা সরিয়ে নিয়ে অস্ফুট স্বরে বললো, ‘আজকে সকালে আমার অফিসে ইমরান এসেছিল। ও বললো, তুমি নাকি কখনোই ইমরান ছাড়া আর অন্য কোনো পুরুষের সন্তানের মা হতে চাওনি?’
কথাটা শুনে সামিয়া প্রচন্ডভাবে চমকে উঠলো। ওর গালে এখন যদি কেউ আচমকা একটা থাপ্পড় মারতো তাহলেও ও হয়তোবা এতটা অবাক হতোনা!
(চলবে...)
১৬ নভেম্বর,২০১০
ঢাকা
মন্তব্য
ঠিক ব্যাখ্যা করতে পারবো না কেন...আমর কীরকম যেন আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিনকে মনে পড়ছে।
আপনি লিখতে থাকুন। মন্তব্য করার মতো এগোয় নাই এখনো।
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
ধন্যবাদ। চেষ্টা থাকবে ভালো কিছু লিখবার।
--শাহেদ সেলিম
হুমমম........জীবন কোনদিন বুঝতে পারেনি মানুষের রহস্য, না মানুষ পেরেছে জীবনের। বুঝতে না বুঝতেই এইসব রহস্য বাঁক পাল্টায় জীবনের পথে পথে।
দারুন বলেছেন!
--শাহেদ সেলিম
লেখাটা এখনো বোধহয় জমে উঠেনি। মনোযোগ দিয়ে পড়ছি কিন্তু শাহেদ ভাই। চলুক লেখা। দেখি কখন জমে উঠে। সেই অপেক্ষায়...
অনেক অনেক ধন্যবাদ মানিক ভাই। মনোযোগ দিয়ে পড়ছেন জেনে খুবই অনুপ্রানিত হলাম। আশা করি আপনাকে নিরাশ করবোনা। ভালো থাকবেন।
--শাহেদ সেলিম
৪র্থ পর্ব আগে পড়ে তারপর বাকী তিন পর্ব পড়ে ফেললাম। পাত্র-পাত্রীদের পরিচয় পর্ব চলছে বলে তেমন কোন মন্তব্য নেই। পড়তে ভালো লাগছে। শুধু অনুরোধ রইল, মেগা সিরিয়ালের মত যেন না হয়ে যায় বাকী পর্বগুলো।
লিখুন, পড়ছি।
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
অনেক অনেক ধন্যবাদ রেজওয়ানুল ভাই। চারটি পর্ব একসাথে পড়ে ফেলবার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
চেষ্টা করবো আপনার অনুরোধ রক্ষা করবার।
উপন্যাসের একেকটি পর্বের পরিধি কতটূকু হলে ভালো হয়? এ ব্যাপারে আপনার ব্যাক্তিগত মতামত কি?একটু কষ্ট করে এ বিষয়ে মন্তব্য করলে উপকৃত হতাম।
ভালো থাকবেন। শুভ কামনা রইল।
--শাহেদ সেলিম
নতুন মন্তব্য করুন