মেঘলা আকাশ রৌদ্রের সব আভা মুছে ছাই রংয়ের একটা প্রলেপ দিয়ে রেখেছে। কাঁচঘেরা ছোট্ট একটা বিমানবন্দর। আরো বেশী আলো আসার জন্য ছাদজোড়া স্কাইলাইট। ঢেউয়ের মত স্থাপত্যচিন্তাটা সুন্দর। উপরে তাকালে অদ্ভুত একটা অনুভূতি হয়। মনে হয় রাতের বেলা উপর থেকে দেখা শান্ত সমুদ্রের ঢেউ। মার্বেল পাথরের হিজিবিজি নকশা করা টাইলস। পরিচ্ছন্ন, ছিমছাম। সারিসারি চেয়ার। ব্যস্ত যাত্রীদের ত্রস্ত পদযাত্রা। ক্যাফে, বই আর কিছু পাঁচমিশালী মনোহারী দোকান। কেনার জিনিষের মধ্যে জামা কাপড়, রোদচশমা, টুকটাক গয়না, সুগন্ধী, স্মৃতিচিহ্ন এইসব।
আধুনিক চাকুরেদের মনোযোগ ব্ল্যাকবেরীতে। কফির দোকানে লাইন। ক্ষুধার্তরা সেরে নেয় একটু তড়িৎ পেট পুজা। কিছু মানুষ শুধুই বইয়ের দোকানে ঘোরে। দেখা জিনিষ আবারো ফিরে দেখে। দুরন্ত বাচ্চাদের পেছনে পেছনে ছোটে উদ্বিগ্ন বাবা-মা। কানে ইয়ারফোন গোঁজা কিছু অলস দৃষ্টি ঘুরে বেড়ায় ইতস্তত। সুতন্বীর ছন্দায়ীত পথচলা দেখতে দেখতে আনমনে থেমে যায় পায়ের নাচন। খবরের কাগজের পাতা শেয়ার করে অচেনা মানুষ। সহযাত্রীর রোমাঞ্চোপন্যাসে মগ্ন দৃষ্টি ঘুমে নত হয়ে আসে। বিষন্ন তরুনী একা বসে কোথায় যেন হারিয়ে যায়। কিন্নরী কন্ঠে যাত্রার ঘোষনা প্রতিধ্বনিত হয় দেয়ালে দেয়ালে।
মেঘলা আকাশের কারণে কেমন একটা বিষন্ন বোধ কুয়াশার মত চারদিকে ছেয়ে আছে। হয়ত মধুর কিছু স্মৃতি ফেলে চলে যাওয়ার বেদনায়। উৎকন্ঠার অবসানে শান্ত মন অনাগত দিনের প্রত্যাশায় উন্মুখ। একটা হাসিমুখ কেবলই ভেসে আসে মনে। বাড়ী ফিরতে দেরী আছে। আরো কিছু ঘাটে যাত্রাবিরতী, তারপর ফেরত। তবুও দেখা হবে না। শেষের কবিতার ভাষায় সমাজের বাঁধা ঘাটে নিয়মের লন্ঠন জ্বালিয়ে দেখতে হবে। শুধুই চোখ মেলে দেখা। এমন দেখা হয়েছে অজস্র। তারপরও এই দেখা কত ভিন্ন। মুঠোফোনের একটি কথোপকথন বদলে কতকিছু।
আশার পরতে পরতেই আবার নিরাশার দোলা। অনিশ্চয়তায় ঝাঁপ দেয়াটা হয়ত পাগলামিরই নামান্তর। কিন্তু ঝাঁপ দেয়ার পর তল না ঠেকা পর্যন্ত অস্বস্তির আরপার থাকে না। বেস জাম্পারে মত উদ্দীপনার চেয়ে উদ্বেগটাই বেশি প্রকট হয় মনের পর্দায়। চিন্তার প্রলেপ গাড় হয়ে ছায়া ফেলে চারপাশে। মেঘলা আকাশ ছন্নছাড়া বৃষ্টি নামায়। শুকনো চোখ চেয়ে থাকে নিষ্পলক। বড় অসময়ে নামল বৃষ্টিটা। আজকের দিনটা হওয়া উচিত ছিল রৌদ্রকরোজ্জ্বল, ঝকঝকে সোনালী। মনে পড়ে পুরানো একটা গান,
"একটা খসা তারা খুঁজে রেখ পকেটের কোনে
ম্লান যেন না হয় তার দ্যুতী
একটা খসা তারা খুঁজে রেখ পকেটের কোনে
আঁধার কালো দিনের সাথী
প্রেম এসে যদি টোকা দেয় কাঁধে
কোন এক তারাহীন রাতে
যদি মনে হয় বাঁধবে তারে
তারার আলো রইবে হাতে।"
অমিত্রাক্ষর
অমিত্রাক্ষর@জিমেইল ডট কম
মন্তব্য
পড়লাম, শুনলাম। ভালো লাগলো।
ভাল লেগেছে জেনে সুখি হলাম।
এ্যন্ড্রয়েড আর ব্ল্যাকবেরীর মারামারী প্রায় চরমে। তবে আকাশচিঠির নিরাপত্তায় ব্ল্যাকবেরী এখন ভাল।
অমিত্রাক্ষর
অমিত্রাক্ষর@জিমেইল ডট কম
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
ধন্যবাদ ভাইজান
অমিত্রাক্ষর
অমিত্রাক্ষর@জিমেইল ডট কম
আপনি কি মাদ্রিদ এয়ারপোর্টের কথা বলছেন নাকি? ঢেউয়ের মতনও বটে, কাঁচঘেরাও বটে; কিন্তু ছোট্ট নয় কোনোমতেই।
লেখা ভালই।
না কৌস্তুভ ভাই। এটা ছিল ব্যাঙ্গালুরুর নতুন বিমানবন্দর। গোটা দশেক বোর্ডিং ব্রীজ। টার্মিনাল ভবনটা ঢাকা বিমানবন্দরের প্রায় অর্ধেক।
মাঝেমাঝে আরো ভাল করার একটু টিপসও দিয়েন
অমিত্রাক্ষর
অমিত্রাক্ষর@জিমেইল ডট কম
স্থান-কাল মিশিয়ে এমন সীন দেখিনি কখনো, তবুও ছবিটা এত স্পষ্ট কেন?
চমৎকার লাগলো!
সহৃদয় মন্তব্যটি নতুন লেখার সাহস জোগাবে। ধন্যবাদ আপনাকে।
অমিত্রাক্ষর
অমিত্রাক্ষর@জিমেইল ডট কম
অনাবিল, স্বচ্ছতোয়া, অসাধারণ কাব্যময় বর্ণনা। তন্ময় হয়ে পড়ছিলাম, মনেই হয়নি অফিসে বসে আছি। আজ সকালে ঢাকার আকাশ কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়েছিল। কুয়াশার পিরিচে রাখা পোচ করা ডিমের কুসুমের মতো সকালের সূর্যটা ঘুমকাতুরে কিশোরীর চোখ ভরা আলস্য নিয়ে নিটোল কমলা আভা বিলিয়ে দিচ্ছিল। আপনার লেখাটি সকালের এককাপ চায়ের সাথে বেশ উপভোগ করলাম।
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
রোমেল ভাই,
আপনি যেভাবে বললেন তাতে আমি আপাতত সপ্তম আকাশে। অনেক ধন্যবাদ সাহস দেবার জন্যে।
অমিত্রাক্ষর
অমিত্রাক্ষর@জিমেইল ডট কম
*****
ধন্যবাদ আখতারুজ্জামান ভাই।
অমিত্রাক্ষর
অমিত্রাক্ষর@জিমেইল ডট কম
আমি আসলে কাষ্ঠ মানুষ কিনা, আপনার অনুভূতিসম্পন্ন লেখাগুলো আমার জন্য কঠিন কিছুটা। আসলে, অনুভূতি আমারও নেই তা না, কিন্তু হয়তো প্রকাশ এবং বিশ্লেষণভঙ্গী ভিন্ন।
একটু হুইটম্যানিশ; কিন্তু শেষপর্যন্ত স্কিমালাম।
ভাল কথা মনে করিয়েছেন সিরাত। হুইটম্যান পড়া হয় না অনেকদিন।
যুক্তি, বাস্তবতা, কল্পনা, মায়া, অনুভুতি সবই ভ্রান্ত ধারনা। ক্ষনিকের তড়িৎ-রাসায়নিক বিক্রিয়া মস্তিস্কের ভিতর। আর প্রকাশতো ঘন্টাখানিক মন দিয়ে পুনর্লিখন মাত্র।
অমিত্রাক্ষর
অমিত্রাক্ষর@জিমেইল ডট কম
চমৎকার।
পোস্টে তিন তারা।
কামরুল হাসান রাঙা
ধন্যবাদ কামরুল ভাই।
অমিত্রাক্ষর
অমিত্রাক্ষর@জিমেইল ডট কম
নতুন মন্তব্য করুন