১.
সুলতানের ঘরে খাট নেই। মাটিতেই জাজিম আর তোশক পাতা। সকালে ঘুম থেকে উঠে বিছানা থেকে নামার ক্লাসিকাল ব্যপারটা তাই নেই। অসহ্য গরমের রাতে সুলতান মাঝেমাঝে ঘুমের ঘোরে বিছানা থেকে গড়িয়ে মাটিতে নেমে পড়ে। তোশক আর জাজিম মিলিয়ে বিছানাটা মাটি থেকে ফুট দেড়েক উপরে। বিছানার ধারটাকেই বঊএর মতো জড়িয়ে ঘুম দেয় আবার। ইদানিং একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। সকালে ঘুম ভাঙ্গার পরে সুলতান বিছানাতেই দাড়িয়ে থাকে কিছুক্ষন। কি করবে , কেনই বা তার এখনি গোসল করে রেডি হয়ে অফিস রওনা দেয়া দরকার, বুঝে পায় না। বিছানার উপর কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকতে সুলতানের ভালোই লাগে। পরে চিন্তা করলে ব্যাপারটা বেশি স্বাভাবিক মনে হয় না অবশ্য।
সুলতানের একটা সুবিধা আছে। সকালে অনেকেরই রেডী হয়ে নাস্তা করতে অনেক সময় লাগে।সুলতানের এত নকশা সয় না । এই পুরো প্যাকেজ় সুলতানের জন্য মাত্র আধা ঘন্টার বিষয়। বাসার নাস্তার তুলনায় অফিসে নাস্তা আনিয়েই বেশি ভালো লাগে খেতে। সাড়ে নটায় অফিস, হঁাটা-বাস মিলিয়ে ঘন্টাখানেক, তাই আটটার সময় উঠলেই চলে।
বাস এর ভেতরে অসহ্য গরম। মানুষের ভিড়ে নিঃশ্বাস ফেলার জায়গাটাও নেই। পাশের লোকটা অনবরত ঘামছেই। শার্টের প্রথম বোতামটা খোলা। হাতের রুমালটা ওই খোলা জায়গাটা দিয়েই শার্টের ভেতর হাত ঢুকিয়ে যতদূর পারে মুছে নিচ্ছে ভূড়ি-বুক-বগলের ঘাম। ঘাম মুছতে মুছতে একসময় নিজ়েই বিরক্ত হলো লোকটা। বাতাস চলাচলের আসলেই কোন জায়গা নেই। সুলতান বসেছে জানালার পাশে। জানালার কাঁচ এমন জায়গায় যে জানালার পাশে বসা না বসা সমান, সেটা লোকটাও ভাল করে বুঝতে পারছে মনে হচ্ছে । ব্যস্ত কন্ডাক্টর ধাক্কাধাক্কি করে পাশ দিয়ে যাবার সময় লোকটা বলে উঠলো , ওয় ছ্যাঁড়া ,ছাদের জানলাটা খুইলা দেরে? কনডাক্টর ছ্যাঁড়াটা বলে, ছাদের ওইটা খুলন যাইবো না - স্প্রিং ভাঙ্গা। এই একটা কথাতেই ভদ্রলোক চটে উঠে বলে, বাসের জানালা ঠিক নাই, সীট ভাঙ্গা, তো এই বাস নিয়া রাস্তায় নামো ক্যান? বাসটারে বাড়িত নিয়া কোলবালিশ বানায়া হুইয়া থাকলেই পারো ?? “তোমার কথা তুমি কইতে থাকো, আমার বাপের কি!” টাইপের ভংগী করে ছেলেটা আবার লোকজন ধাক্কাতে থাকে সামনে এগোনোর জন্য। প্রতিদিন এই রকম কাহিনী দেখে সুলতান । প্রতিদিন অন্তত দেড়-দু ঘন্টা ধরে। সুলতানের মাঝে মাঝে মনে হয় , শুধুমাত্ত্র প্রফেশন এর কারনে পরকালে যদি কেঊ বেহেশতে যাওয়ার প্রেফারেন্স পায়, সেটা হওয়া উচিত ঢাকা শহরের বাস কনডাক্টর এর । টু পাইস ফাদার মাদার এই জ়ীবনটাতে বেচে থাকার জন্য যে নুন্যতম আনন্দ টা দরকার সেটা এদের কোথা থেকে আসে মাঝে মাঝে জানার ইচ্ছা হয়।
বাস থেকে নেমে আবার মিনিট দশেক হাটা পথ অফিস পর্যন্ত । মহিলা কলেজের পেছনে সুলতানের অফিস। আহারে , যখন ওদের অফিস এখানে শিফট হয়ে আসছিলো , কতই না স্বপ্ন দেখাদেখি চললো কিছুদিন অফিস কলিগদের আড্ডায়। স্বপ্নে পোলাও রাধতে পারলে ছাড়ে কে। এক একজনের সেকি কল্পনা। অফিস এর সামনে দিয়ে উত্তম স্টাইলে শুধু হেটে যাওয়ার দেরি, কিন্নরি কলেজ ছাত্রীরা তো দাড়িয়েই আছে লাফ দিয়ে গায়ের ওপর পড়ার জন্য। তারপর তো খালি প্রেমের ফুল ফুটবে ঢিশুম ঢিশুম । হেহে, কোথাকার কি। মেয়েরা আলুভাতে চেহারার লোকজনদের দুই পয়সার দামও দেয় না। যাউক, আড্ডার গলাবাজিকে সুলতান ও যে খুব সিরিয়াসলি নিয়েছে তাও না। তাও অফিসের পথে কলেজ়ের সামনে দিয়ে হেটে যাবার সময় মাঝে মাঝে মনে পড়ে আরকি।
সুলতানের দু বছরের মতো হতে চললো এই অফিস এ। ভার্সিটি শেষে এটাই প্রথম অফিস, এখন পর্যন্ত আর চাকরি বদলানো হয়নি। ভার্সিটিতে থাকা অবস্থায় সুলতান কিছুদিন পার্ট টাইম করেছে আরেকটা অফিস এ । চাকরি জ়ীবনে প্রসব হবার আগেই বুঝে নিয়েছে, যেখানেই যাও, সেই থোড় বড়ি খাড়া। এই অফিসের কাজটা তাও কিছু্টা পছন্দ হয়, একারনে বদলানোর চিন্তা এখনো করেনি। সুলতানের অফিসে কাজ চলে কয়েকটা প্রজ়েক্টের। খান দশেক প্রজ়েক্ট আছে বিভিন্ন ধরনের। দু-তিনটা প্রজেক্ট আছে বছর ছয়েক পুরানো। বাকিগুলো ছোটখাট, কোনটাই বছর খানেকের বেশি না। এগুলো চলবেও না বেশিদিন। ছোট প্রজ়েক্ট এ থাকলে সুবিধা, কাজের ধরন বদলায়। নতুন প্রজেক্ট এ একটু তো বৈচিত্র আসে। বড় প্রজ়েক্ট এ একই কাজ় দিনের পর দিন করার চেয়ে এ অনেক ভালো। সুলতান প্রথমে ঢুকেছিলো এরকম একটা বড় প্রজ়েক্ট এই। উপরওয়ালার দয়া , ছাড়া পেয়েছে কিছুদিনের মধ্যেই। নতুন কাজ শুরু হলে বেশ মজ়া প্রথম কিছুদিন। প্রজ়েক্ট ম্যানেজার এর দিকে ভেটকি দিয়েই যায় সপ্তাহ দুয়েক, তারপর কাজ শুরু হ্য় রয়েসয়ে।
অফিসে ঢুকে মাত্র রেজিস্টার খাতায় সাইন করে তিনতলায় উঠলো সুলতান।
- মেফিস্টো
[বড়গল্পের আকারে লিখবো চিন্তা করে শুরু করেছিলাম। এক কিস্তিতে যেটুকু লিখবো ভেবেছিলাম, ধৈর্য্যচ্যুতির কারনে এক কিস্তির পুরোটা শেষ করতে পারিনি। একারনে অন্যান্য অনেক সমস্যার পাশাপাশি লেখা কিছুটা আধা-খ্যাচড়া মনে হতে পারে। দুঃখিত ]
মন্তব্য
পড়তে না পড়তেই শেষ। বাকিটা লিখেন ভাই।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
হ, একটু ছোট হয়া গেলো। মাইনষে লাথ না মারলে তাড়াতাড়ি ই বাকিটা লিখুম।
-মেফিস্টো
আরে মেফিস্টো ভাই নাকি? আমার তো ভালোই লাগতেছিল গল্পটা। একটু ধৈর্য্য ধইরা পুরোটা শেষ করেন ভাই। গল্পটাকে এমন "আলুভাতে চেহারার" করে রাইখেননা। পড়তে যেয়েই আচমকা শেষ হয়ে গেল
-- শাহেদ সেলিম
সালাম বস। আপনে আগ্রহ কইরা পড়তাসেন, আমার লিখা সার্থক । হুম, কথা ঠিক কইসেন। এইটা নিতান্তই কামলা-মজুর শ্রেনীর গল্প, কোন অ্যাবস্ট্র্যাকশন নাই। এমনিতে তো গালি খামুই, ঝুলায়া রাখলে আরো বিপদ। আমার বাংলা লেখনের স্পীড কম। শীঘ্রই দিমু আরেকটু।
-মেফিস্টো
বাসের ছাদের জানালা খোলার বর্ণনায় খুব মজা পাইলাম। "বেঙ্গলে" উঠলে রোজ এই ঘটনার পুনারাবৃত্তি দেখতে হয়। কন্টাক্টরের সাথে যাত্রীদের বাক-বিতন্ডা দেখতে খুব মজা লাগে:)
--শাহেদ সেলিম
পাশ থেকে দেখার মতই-- শুরু হতে না হতেই শেষ। বাকীটা দেন, তাড়াতাড়ি।
দৌড়ের উপরে উষ্টা খামু তো। ;-(
-মেফিস্টো
আমার ছোট্ট চাকুরীজীবনের কথা মনে পড়ে গেলো। প্রায় একই রকম ছিল (বিছানার ব্যাপারটা বাদে )
বাকিটা তাড়াতাড়ি দেন ভাই, দেরি কইরেন না।
পাগল মন
হ ভাই, একদম আপনের আমার মতোন অ্যাভারেজ একজনেরই গল্প।
-মেফিস্টো
দেড় ফুটি জাজিম? হুম্ম্ম্ম!
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
হ তোশক আর জাজিম মিলায়া। আর যদি মনে করেন যে হিসাবে ইঞ্চি দশেক এদিক ওদিক হইসে, তাহলে নিজ গুনে ক্ষমা কইরা দিয়েন
-মেফিস্টো
বাকীটুকু তাড়াতাড়ি পোষ্ট করেন ভাই, তর সৈছে না। ক্লাইম্যাক্সের গন্ধ পাচ্ছি।
======================================
অন্ধকারের উৎস থেকে উৎসারিত আলো, সেইতো তোমার আলো।
সকল দ্বন্ধ বিরোধ মাঝে জাগ্রত যে ভালো, সেইতো তোমার ভালো।।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আমারো তো সইতাছেনা। কিন্তু করুম কি। জমা তো দিছি।
-মেফিস্টো
বর্ণনা ভঙ্গীটা ভালা পাইছি...দেরী কইরেন না বস্, আমার আবার ব্রেইন বেশি ভালা না, ভুইল্যা যামু।
(তোশক-জাজিমের স্থুলতা বদলাইয়া দিয়েন পারলে)
মন্তব্য করায় খুশী হলাম। আমি নিজে এরকম মোটা তোশক জাজিম এর উপর ঘুমাইসি বন্ধুর মেস বাসায়। যাউক, ওরা গোল্লায় যাউক।
-মেফিস্টো
ভালই তো যাচ্ছিল, হঠাৎ থামিয়ে দিলেন যে!
চলুক না।
কামরুল হাসান রাঙা
সুলতানের ব্যাপারটা খেয়াল করলাম, মানে ভিজুয়ালাইজ করলাম আরকি! ঘুম ভেঙে একজন তড়াক করে লাফিয়ে বিছানার উপর ঠায় দাঁড়িয়ে আছে সটান হয়ে। নড়েও না চড়েও না। সাক্ষাৎ মুর্তি যেনো!
এমন হলে সুলতানের সাথে প্রথম ডাবলিং করা বেড়াতে আসা কোনো আত্মীয় কিংবা বিবাহিত আপন বউও বাপের বাড়ি দৌঁড় দিবে এক কাপড়ে। পরিস্থিতিটা একটু ভয়াবহ লাগার কথা!
তারচেয়ে সুলতান যদি বিছানা থেকে গিয়ারে গিয়ারে উঠতো, ব্যাপারটা স্বাভাবিক হতো। এই ধরেন প্রথমে ঘুম ভেঙে মাথা বালিশে রেখে শরীর বিছানা থেকে উঠিয়ে সেজদা স্টাইলে পাঁচ মিনিট ঘুমিয়ে নেয়া, তারপর মাথাটা তুলে দুই সেজদার মাঝের বৈঠক স্টাইলে আরও পাঁচ মিনিট ঘুমিয়ে নেয়া, তারপর দাঁড়ায়ে আরও পাঁচ মিনিট। তাইলে মনে করেন নতুন কেউ দেখলেও ভয় খাবে না। সয়ে যাবে।
আর সুলতান এতো তাড়াতাড়ি তৈরী হয় কেমনে? ওর কি সকালে এস্তেঞ্জা করার দরকার হয় না? ঐখানেই তো মিনিমাম পনেরো মিনিট চলে যাওয়ার কথা। সারাদিনের প্ল্যান তো ওখান থেকেই আসবে!
যাইহোক, এগুলা হলো লেখার 'কড়্ড়া সমালোচনা'। বাকিটা লিখুন। সমালোচনা করার জন্য আগ্রহভরে অপেক্ষায় আছি।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আপনের আইডিয়া তে মজা পেলুম। আসলেই তো, সুলতান একটু ইয়োগা স্টাইলে ঘুম থেকে উঠে দাড়িয়ে থাকার ব্যাপারটা করতেই পারতো ;-)।
-মেফিস্টো
নতুন মন্তব্য করুন