দেশ থেকে আসার সময়ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায়, তাই কনভোকেশনের কোন সম্ভাবনা ছিলনা। দেশ থেকে আসার সময় দেশ ছেড়ে আসার কষ্টের পাশাপাশি বুয়েটের কনভোকেশনে থাকতে পারবো না, এই কষ্টটাও পেয়েছিলাম খুব।
এর মধ্যে দুইবছর পেরিয়ে গিয়েছে কিন্তু বুয়েটের সোনার হরিণ, কনভোকেশন, আর হয়নি। আমাদের শ্রদ্ধেয় বুয়েটের শিক্ষক-শিক্ষিকা, প্রশাসন একটি কনভোকেশন আয়োজন করে উঠতে পারেনি। এবছর যখন দেশে যাবার প্ল্যান করি, তখন এ-পোড়া মনে এক অসম্ভব দুরাশা করেছিলাম যে যদি সেসময় কনভোকেশনের আয়োজন করে তাহলে আজন্মলালিত স্বপ্নটা পূরণ হবে। আমার বউ অবশ্য আমার একথা শুনে হেসেই খুন! আমি নিজেও জানতাম এ আমার এক অসম্ভব স্বপ্ন, তারপরেও আশা করতে দোষ কী?! দেশ থেকে আসার পরে আরেক নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করি, একবারে মাস্টার্সের কনভোকেশনের পরেই আন্ডারগ্র্যাডের কনভোকেশনে যাবো, যদি তখনও সেটা না হয় আরকি। যে ভাবসাব দেখছি তাতে আমি বেশ আশাবাদী ছিলাম।
দেশ থেকে আসার একমাসের মাথায় জানতে পারলাম যে অবশেষে কুম্ভকর্ণের ঘুম ভেঙেছে, বুয়েটে কনভোকেশন হবে আগামী বছর। কিন্তু কবে? ফেব্রুয়ারীর তিন তারিখ। তারিখ শুনে খুবই কষ্ট পেয়েছিলাম। আহা! আর কিছু দিন আগে হলে কি হতো?
কিন্তু এটাই শেষ না। আমি ভাবলাম, যাহোক আমিতো পাচ্ছিই না কিন্তু যেসময় কনভোকেশন হবে সেসময়েতো যারা থাকতে পারতো তারাও এটা পাবেনা। তার প্রধান এবং একমাত্র কারণ হচ্ছে কনভোকেশনের সময়। এটা অনস্বীকার্য যে বুয়েটের অসংখ্য স্টুডেন্ট পাশ করার পরে দেশের বাইরে চলে যায় (২০০৭ থেকে এপর্যন্ত ঠিক কতজন দেশের বাইরে এসেছে তা আমি বলতে পারবো না) , বেশিরভাগই পড়ালেখার উদ্দেশ্যে আর পৃথিবীর কোথাও ফেব্রুয়ারী মাসে কোন টার্মের ছুটি থাকেনা। তাই যদি কারো কনভোকেশনে দেশের বাইরে থেকে যোগ দেয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছাও থাকে তাহলে আমি তাদেরকে বলবো, ‘ভায়া, ইহা বুয়েট। স্টুডেন্টদের সুবিধা হয় এরকম কিছু সেখানে কখনই হয়নি, ভবিষ্যতেও হবার কোন সম্ভাবনা নেই।”
মাঝে মাঝে মনে হয়, বুয়েটের স্যার/ম্যাডামরা (বুয়েটের প্রশাসনের বেশিটাই বুয়েটের স্যার/ম্যাডামরা) কবে স্টুডেন্টদের ব্যাপার একটু বুঝবে? স্যাররা সেখানে পি.এলের জন্য ইচ্ছা করেই বুঝেশুনে দেন দুই সপ্তাহ, তারপরে সেটা বাড়াতে চাইলে আবার রেগেমেগে বুয়েট বন্ধই করে দেন, সেটাও স্টুডেন্টদের কথা চিন্তা না করে। যদিও আমি বুয়েটে পরীক্ষা পেছানোকে সাপোর্ট করে কিছু বলছি না এখানে। তবে স্যার/ম্যাডামদের অন্তত এটুকু বোঝা যায় উচিত যে ব্যাচেলরের সার্টিফিকেট পাওয়ার অনুষ্ঠান মানে কনভোকেশন একজন ছাত্র/ছাত্রীর জীবনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ এক ঘটনা। এটা অনেকেরই আরাধ্যের বিষয়। এ-থেকে বঞ্চিত করার অধিকার কারোরই নেই। যেখানে একটু চেষ্টা করলেই, তারিখটি একটু এদিক ওদিক করলেই, অনেক প্রবাসী স্টুডেন্ট কনভোকেশনে অ্যাটেন্ড করতে পারে সেটা না করে এরকম সময়ে কনভোকেশন করার যত কারণই থাক, সেটা আমার কাছে যুক্তিযুক্ত হবে না।
কিছুদিন আগে আমার এখানের ইউনিভার্সিটিতে এক সিনিয়র ভাইয়রে কনভোকেশনে গেস্ট হিসেবে যোগ দিয়েছিলাম, কি সুন্দর ছিমছাম, খুবই সিম্পল কিন্তু ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ অনুষ্ঠান, আর মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছিলাম- এরকম একটি অনুষ্ঠান কী বুয়েট চাইলে প্রতিবছর করতে পারেনা? বুয়েটের ক্ষেত্রে অবশ্য সামান্য একটি সমস্যা আছে, সেটা হচ্ছে আমাদের চ্যান্সেলর, প্রধানমন্ত্রীর অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। কিন্তু আমার মনে হয়, বুয়েট থেকে যদি প্রধানমন্ত্রীকে কনভোকেশনের জন্য আমান্ত্রন জানানো হয় তাহলে উনি মানা করবেন না। (কেননা প্রধানমন্ত্রীরতো রাষ্ট্রপতির মত সব বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশনে যোগ দেয়ার সৌভাগ্য হয়না, উনি হয়তো মুখিয়ে থাকেন, যদি কোন ইউনিভার্সিটি ডাকে উনাকে। )
এটা একান্তই আমার ধারণা যে, বুয়েটে কনভোকেশন নিয়মিত না হওয়ার পেছনে বুয়েটের প্রশাসনের অলসতাই দায়ী আর কিছুই না। যদি প্রশাসনের মনে হয় প্রতিবছর এরকম অনুষ্ঠান করতে অনেক টাকার দরকার যেটা বুয়েট যোগাড় করতে পারবে না, সেটাও কোন সমস্যাই না। বুয়েটে এত অনুষ্ঠান হয়, লেভেল পূর্তি, এনট্রেন্স ডে, র্যাগ, এসব কোন কিছুর জন্যই টাকার অভাব হয়না, স্পন্সর পাওয়া যায়-ই, তাছাড়া ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে যদি এত স্টুডেন্টদের কনভোকেশন প্রায় নিয়মিত হতে পারে তাহলে বুয়েটে সেটা হতে বাধা কোথায়?
মন্তব্য
চরম বলসেন ভাইয়া।
---আশফাক আহমেদ
কত কষ্টে যে বলেছি সেটা আমিই জানি।
পাগল মন
শেষ লাইনে গিয়া আমগোরে হিংসাইলেন??
ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে যাও বা হয় তাকে কি "প্রায় নিয়মিত"র মাঝে ফেলা যায়? মনে হয়না... তবে শুনেছি যে এখন থেকে নাকি নিয়মিত হবে... জানিনা তারা কথা রাখতে পারবে কিনা...
আসলে, সব ইউনিভার্সিটিতে কনভোকেশন প্রতি বছরই হওয়া উচিত। টাকা প্রধান সমস্যা না, আসলে ইচ্ছার অভাবই প্রধান সমস্যা... স্টুডেন্টদের কাছ থেকে নেয়া টাকা, স্পন্সর, অন্যান্য সব মিলিয়েতো হয়ে যাওয়ার কথা, তাও নানা অজুহাতে আমাদের এখানেও হয়না...
"চৈত্রী"
গত বছর পাঁচ ছয় ধরে তো নিয়মিতই হয় (মাঝখানে একবার বাদ দিয়ে)।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে বহু বছর কনভোকেশন হয়নি, ১৯৬০ থেকে ৯০ এর প্রায় পুরো দশক পর্যন্ত... ৬৪'র টা শিক্ষার্থীরা বর্জন করে, ৭০'এ দায়সারা গোছের ছোট্ট একটা আয়োজন করা হয় বটে... ৪৩তমটিও হয় প্রায় দুই বছরেরও বেশি সময়ের ব্যবধানে। ৪৫তমটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড়... আমার ফ্যামিলির অনেকেই কনভোকেশন পাননি, এদের মধ্যে আমার বাবাও আছেন। প্রায় নব্বই বছরের পুরোনো একটা ইউনিভার্সিটিতে এত কম আর ছাড়াছাড়া কনভোকেশনকে আমি "প্রায় নিয়মিত"র মাঝে তাই ফেলতে চাইনি। শুনেছি ৬০-৯০'এর দশকের শিক্ষার্থীদের জন্য "স্পেশাল কনভোকেশন"এর আয়োজন করা হবে, তা শেষ পর্যন্ত সম্ভবপর হবে কিনা জানিনা। "গত বছর পাঁচ-ছয়" কিংবা দশ না, চাই যে দেশের খুব জটিল সময় না চললে যেন প্রতি বছরই কনভোকেশন হয়, কেনোনা শুধুমাত্র গত বছর পাঁচ-ছয় ধরেই যে শিক্ষার্থীরা বের হচ্ছে এমনটাতো নয়। দেখুন না, এই "বছর পাঁচ-ছয়"এর মধ্যেও কিন্তু ভাটা পড়েছে। আর এইযে বহু বছর হলোনা তখনো কিন্তু দেশের অনেক আনন্দ-আয়োজনই থেমে থাকেনি, তবে কনভোকেশন কেনো? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই যে আবার কনভোকেশন আয়োজনের ধারা শুরু হয়েছে আশা করছি এটি আর বন্ধ হবে না...
আপাতত "স্পেশাল কনভোকেশনে" গাউন পরা বাবাকে দেখার প্রতীক্ষায় আছি...
"চৈত্রী"
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তো শুনছি প্রায় প্রতিবছরই কনভোকেশন হচ্ছে। কথা রাখতে চাইলে অবশ্যই কথা রাখা সম্ভব।
আমারও একই মত।
পাগল মন
বুয়েটের চ্যান্সেলর পদে পরিবর্তন হয়েছে। এখন মাহামান্য রাষ্ট্রপতি বুয়েটের চ্যান্সেলর। আর যতদূর জানি, তার অনুমতি সাপেক্ষেই কনভোকেশনের তারিখ ঠিক করা হয়।
এটা কবে হলো?
চ্যান্সেলরকে কী প্রতিবছর পাওয়া যাবে না? কিংবা যেসময়ে সবার সুবিধা সেসময় পাওয়া যাবে না? উনি তো দেখি সব ইউনিভার্সিটিতেই যায়, আর বুয়েটে বুয়েটের সময়সুযোগমত আসবেন না? এটা মনে হয় ঠিক না।
পাগল মন
চ্যান্সেলর যে-ই হোক, তাকে আনা কোনো ব্যাপার না। একটা অনারারী ডক্টরেট ডিগ্রি ধরায়া দিলেই চলবে। হাসিনাকে চ্যান্সেলর বানালে কাজটা আরো সহজ হবার কথা। আর রাষ্ট্রপতি (ওই পদে এখন কে আছেন?) ও মনে হয় না করবেন না। তবে প্রধানমন্ত্রী তাকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে ঝামেলায় ফেলতে পারেন।
বুয়েট কর্তৃপক্ষ সবসময়ই কর্তা পক্ষ। আর বুয়েটে হর্তা কর্তা যেহেতু শিক্ষকগণ, সেহেতু কর্তৃপক্ষ সবসময়ই তার পক্ষের কাজটি সূচারুরূপে করেন। কনভোকেশনের জটিলতা এড়াতে ছাত্রদের সাথে শিক্ষকদেরকেও গাউনটুপি পরিয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রতি বছরের মহামূল্যবান অবদানের জন্য পুরস্কৃত করা হোক। তাহলে এই জ্যাম থাকবে না। অবদান হিসেবে কোন সাবজেক্টে কে কতোটা বাঁশ দিতে পারলেন, তার প্রায়োরিটি দশে ১০, এরপরে থাকবে যথাক্রমে প্রাইভেটে খ্যাপ, কনসাল্টেন্সিতে অবদান, বইয়ের নাম লিখে দিয়েই সেমিস্টার শেষ করতে পারার যোগ্যতা, আদ্যিকালের স্লাইড শোর এসপিএস (স্লাইড পার সেকেন্ড) স্পিড, ছাত্রেরা কঠিন কোনো প্রশ্ন করলে তাকে স্টুডেন্ট নাম্বার জিজ্ঞেস করে দেয়া ধমকের ডেসিবেল লেভেল ইত্যাদি। এরপরেও যদি উনারা গড়িমসি করেন, তাহলে শিক্ষকদের পোষ্যদের জন্যও গাউন বরাদ্দ দেয়া যেতে পারে। সার্টিফিকেট হিসেবে পোষ্যরা কি পাবেন, সবাই মিলে গবেষণা করে বের করা অসম্ভব কিছু না। সেই গবেষণাকর্ম আইট্রিপলই আয়োজিত কোনো এশিয়াঞ্চলিক কনফারেন্সেও পাবলিশ করা যাবে।
তবে কনভোকেশন করে আদতে কোন লাভ হয় না। টেকা মাটি, মাটি টেকা। আমার বুয়েটের সার্টিফিকেটখানা রেজিস্ট্রার অফিসের কোনো চিপাচুপায় এখনো আটকে আছে; কিন্তু গত ১০ বছরে তার অভাব একবারও বোধ করি নাই, ওটা না থাকার কারণে নিজের পরবর্তী শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে কোনো চাপও অনুভব করি নাই।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
মন্তব্যে দ্বিমত নেই। কিন্তু আমার বক্তব্য এগুলো পরিবর্তনের জন্য আমরা প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে কি কোন প্রেসার ক্রিয়েট করেছি যথাযত স্থানে? এখানে আমাদের নিজেদের কোন দায় কি আমরা এড়াতে পারি? আমরা নিজেরাও সব সময় সুবিধেভোগি। নিজে যখন একবার সেই ব্যবস্থা হতে বের হয়ে গিয়েছি তখন আর মাথা না ঘামালেও চলে। বুয়েটের প্রাক্তন ছাত্র কম নয়, কিন্তু সাংগঠনিক ভাবে আমরা কখনই একত্র হইনি। বুয়েটের সমস্যা নিয়ে সেভাবে কাজ করিনি। বুয়েটের কর্তৃপক্ষ যখন শিক্ষক, আবার শিক্ষক সমিতিও যখন সেই শিক্ষক, এবং তেমন বলিষ্ঠ কোন ছাত্র সংগঠন নেই (তারা বিভক্ত বিভিন্ন উপদলে) তখন এটাই কি স্বাভাবিক নয় যে নীতিমালাতে তাঁদের ইচ্ছেটাই দেখা যাবে বেশি। এখন যদি তৃতীয় একটি সংগঠন থাকে, প্রাক্তন ছাত্রদের অথবা বর্তমান ছাত্র সংগঠন যদি ইউনাইটেড থাকে তবে কি কর্তৃপক্ষ কিছুটা চাপে থাকতো না?
আমাদের জাতিগত ভাবে মূল সমস্যা হিসেবে দেখি যে আমরা সবাই পরিবর্তন চাই, কিন্তু দায়িত্ব নিতে চাই না। অর্থাৎ পরিবর্তনের সুবিধেটুকু নিতে রাজী, কিন্তু তার জন্য কষ্ট করতে রাজী নই। কিন্তু সবাই যদি এভাবে চিন্তা করি, তাহলে দেখা যাবে আসলে কাজের জন্যে কেউ নেই। তাই কোন পরিবর্তনও আসে না। বছরের পর বছরে একই নীতিতে চলে দেশ। আমরাও একই কথা চর্বিত চর্বণ করে যাই। তাই বর্তমান রাজনীতির পরিবেশ কলূষিত বলেই মুখ ফিরিয়ে নেই। কিন্তু সেই পরিবেশ কলূষিত থেকেই যাবে যদি এভাবে সবাই মুখ ফিরিয়ে নিতেই থাকি। আর প্রাক্তন ছাত্র বা বর্তনাম ছাত্র সংগঠনে রাজনীতি না ঢুকিয়েও সংগঠন করা সম্ভব। এই সচলেই প্রচুর বুয়েটের প্রাক্তন ছাত্র রয়েছে। সংগঠনের কাজ এখান হতেও শুরু করা যায়। নিজেদের মতামত যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরার জন্য সংগঠনের বিকল্প নেই। শুধু একা একা বক্তব্য দিয়ে গেলে সেই পরিবর্তন আসবে না। পরিবর্তন যা আনতে হবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই আনতে হবে, সবাই একত্রে আওয়াজ তুলতে হবে।
কিছু না কিছু তো হচ্ছেই, যেমন, ষষ্ঠপাণ্ডবদার লেখা বুয়েটের পোষ্যকোটা আর নাইট শিফটের প্রতিরোধে একটা বিশাল ভূমিকা রেখেছে। বুয়েটিয়ান গ্রুপের পাঠক হয়ে বুঝা যায়, এক্স-স্টুডেন্টদের একটা বিরাট অংশ যথেষ্ট সচেতন।
সংগঠিত হওয়ার বিষয়ে তোর কথা ঠিকাছে। একক মতপ্রকাশের চেয়ে সংগঠিত মতপ্রকাশ অনেক বেশি কাজ দেয়।
তবে সমস্যার ডিরেক্ট ভুক্তভোগীকেই প্রধান উদ্যোগ নিতে হবে। বুয়েটের অধিকাংশ সমস্যার সরাসরি ভুক্তভোগী বর্তমান ছাত্রেরা আর ইনডিরেক্ট ভুক্তভোগী শিক্ষকরা। অনিয়মের কারণে ছাত্রদের ক্ষতির বিষয়টা সেশন জ্যামের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি প্রকাশিত হয়। কমুনিকেশন স্কিলে ঘাটতি, নিজের সম্পর্কে অবাস্তব উচ্চধারণা, চিন্তা-ভাবনায় আলস্য এগুলোর কারণও অনিয়ম। শিক্ষকদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াটা সাধারণত চোখে কম পড়ে। কিন্তু বিরাট সংখ্যক কোয়ালিফাইড শিক্ষকের বুয়েট ছেড়ে প্রাইভেট ইউনিতে যাওয়া এর একটা প্রমাণ।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
স্বাধীন ভাই, চমৎকার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
বুয়েটে নামেমাত্র একটা অ্যালুমনাই অ্যাসোসিয়েশন আছে। সেটার কাজ কী আমি তা জানিনা। তবে আমার মনে হয়, অর্গানাইজড না, এটা মূল কারণ বুয়েটের স্টুডেন্টরা কখনোই তেমন ইউনাইটেড ছিলনা। আর প্রাপ্তিযোগ না থাকলে বুয়েটের চরম চরম ব্যস্ত (!) অ্যালুমনাইরা কিছু করবেন বলেও মনে হয় না।
তবে এরকন কোন সংগঠন হলে আমি আছি।
সচলেরই সিনিয়র বুয়েটিয়ানদের প্রতি আর্জি রইলো। চিন্তা করে দেখুন এরকম একটা কিছু করা যায় কিনা, কথা দিচ্ছি আমরা ছোটভাইরা আপনাদের নিরাশ করবো না।
পাগল মন
বলাইদা,
আপনার আইডিয়াগুলো খুবই পছন্দ হয়েছে।
তবে কনভোকেশনে লাভ হয়না কথাটা একদম ঠিকনা। আমার ভর্তির ক্ষেত্রে কোন সমস্যা হয়নি কিন্তু আমার ওয়াইফের ভর্তির সময় ইউনিভার্সিটি হঠাৎ মূল সার্টিফিকেট চেয়ে বসলো। ওদের মতে প্রভিশনাল সার্টিফিকেট মানে তোমার কোন রিকোয়ারমেন্ট এখনো বাকি আছে। পরে ওদেরকে বোঝানোর পরে ওরা মেনে নিয়েছিল কিন্তু বলেছিল যে পাশ করার আগে অবশ্যই মূল সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। এটা আরো কয়েকজনের ক্ষেত্রেও হয়েছে আমি জানি। আর কনভোকেশন ছাড়া মূল সার্টিফিকেট ওঠানো বিশাল ঝক্কিঝামেলার কাজ।
পাগল মন
দুঃখের কথা কি আর বলব! আমারা পাশ করে বেরোলাম ২০০৪ এ। বাইরে আসলাম ২০০৫ এর জানুয়ারীতে। আর কনভোকেশন হোলো মার্চে। আমার বৌ কনভোকেশনটা পেলো, পেলামনা না খালি আমি। মনের দুঃখে ...
আরেকটা ঝামেলা হোলো সার্টিফিকেট তোলা। হাজারো রকম ঝামেলা করে রেখেছে। ২০০৬ এ দেশে গিয়ে সার্টিফিকেট তুলতে পারলাম না। কারণ? আমার সার্টিফিকেট পূর্ববর্তী সার্টিফিকেট এখানে ফেলে গিয়েছিলাম। আরে ভাই এটা একটা কারণ হোলো? বাবাকে সবকিছু পাঠালে হবে? না তাও হবে না। আপনার আসা লাগবে।
যেখানে মার্স্টাসের গ্রাজুয়েশনের পরদিনই কনভোকেশন হয়, মাস কয়েকের মধ্যে মেইলে সার্টিফিকেট চলে আসে সেখানে নিজের দেশের, নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম ঝামেলা। বাংলাদেশের এইরকম আমলাতান্ত্রিক গিট্টু নিয়ে একটা পোস্ট দেবার ইচ্ছা আছে।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
আপনার তবুও একজন অন্তত পেয়েছেন, আর আমরা দুইজনই অভাগা।
আমরাও গত অগাস্টে দেশে গিয়ে ভাবলাম এসেছি যখন সার্টিফিকেটটা তুলেই যাই কিন্তু কম্পট্রোলার অফিসে গিয়ে দেখি আগের সব সার্টিফিকেটই লাগবে যেগুলো নিয়ে যাইনি। কী আর করার?!
আপনার পোস্টের জন্য রাখলাম।
পাগল মন
আসলেই বাংলাদেশে এই সব আমলাতান্ত্রিকতা একটি বিশাল প্রতিবন্ধকতা যে কোন সৃষ্টিশীলতার জন্য। বুয়েটে এতো মেধাবী ছাত্র/শিক্ষক রয়েছেন, তাদেরকে দিয়ে সৃষ্টিশীল, সৃজনশীল কিছু করানোর নামে কেউ নেই। শুধু রয়েছে কিভাবে আইন করে বিষয়গুলো আরো জটিল করা যাবে।
আজকেই প্রিয় বুয়েট নিয়ে ভাবছিলাম। পুরো বাংলাদেশ ডিজিটাইজড করা তো পরের কথা, বুয়েট কতটুকু ডিজিটাইজ়ড হয়েছে। বুয়েটে যে ইনফ্রাস্ট্রাকচার রয়েছে বুয়েট কি পারে না সব ছাত্রদেরকে একটি করে দিতে? বুয়েট কি পারে না সকল যোগাযোগ এই ইমেইলের মাধ্যমে করতে? বুয়েট কি পারে না, নানান ইমেইল লিস্টের মাধ্যমে সবার মাঝে যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে? বুয়েট কি পারে না পরীক্ষা পেছানো, ইত্যাদীর সময় দ্রুত একটি অনলাইন ভোটের আয়োজন করতে? বুয়েট কি পারে না সকল নম্বর, রেজাল্ট, অনলাইনে দেখানোর ব্যাবস্থা করতে? বুয়েট কি পারে না টাকা জমা দেওয়ার ব্যবস্থা অনলাইনে নিয়ে আসতে পারে ন? পুরো সিস্টেমটাই কি বুয়েট তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় আনতে পারে না? এভাবে বুয়েট যদি দেখাতে পারতো, একটি ব্যবস্থা তৈরী করতে পারতো, সেই একই ব্যবস্থা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, হাসপাতাল, সরকারী অফিস, সব খানে ইমপ্লিমেন্ট করা যেতো। যাদেরকে অগ্রসর বলে ধরা হয়, তারাই যুক্তি তথ্যপ্রযুক্তিতে এতো বিমুখ বা ধীর গতির হয় তবে বাকীদের কি অবস্থা সহজেই অনুমেয়।
এখন বুয়েটের বর্তমান ছাত্ররা বা ভবিষ্যত প্রজন্মের ছাত্ররাই ভরসা। তারা যদি নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে সৃষ্টিশীল কাজে এগিয়ে আসে, তবেই কেবল মাত্র পরিবর্তন সম্ভব। এটা স্বীকার্য যে উপর থেকে পরিবর্তন আসলে কাজ অনেক সহজ হয়, কিন্তু যদি উপরে পরিবর্তনের কোন চেষ্টা দেখা না যায় তখন নীচ থেকে বা তৃণমূল থেকেই পরিবর্তন আসতে হয়। এটা শুধু বুয়েটের জন্যই প্রযোজ্য নয়, প্রযোজ্য রাষ্ট্রের মত বৃহৎ আকারের সংস্থার জন্যেও। উপরের মানুষগুলোকে পরিবর্তনে বাধ্য করা যেতে পারে তৃণমূল পর্যায়ে মানুষের মাঝে পরিবর্তন এনে। তবে কাজটি কষ্টসাধ্য সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।
লেখকের হতাশা অনুমেয়। কিন্তু এই হতাশা থেকেই নুতন ধারণা নিয়ে এসে এই ব্যাস্থাকে পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা করতে হবে। অন্যথায় হতাশা চিরদিন বাড়তেই থাকবেই।
আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিয়ে আসলে কিছু বলার নেই।
আর বুয়েটের ছাত্রছাত্রীদের দিবে বুয়েটের ইমেইল আইডি, তাহলেই হয়েছে। শিক্ষকশিক্ষিকারা নিজেরাই সেই ইমেইল বছরে একবার চেক করে। তাছাড়া এখনও বুয়েট সব আবাসিক হলগুলোতে নিজস্ব ইন্টারনেট সার্ভিস দিলো না যেটা দিলে নেটের স্পীড অনেক বেড়ে যেতো পাশাপাশি সবার মধ্য যোগাযোগও বাড়তো।
বুয়েটের লাইব্রেরীর ইন্টারনেট সার্ভিসের অবস্থা বর্তমানে কিরকম আছে কে জানে? আমি যখন ছিলাম তখনতো ভয়াবহ ছিল।
তবে কিছু কিছু জিনিস মনে হয় এখন অনলাইনভিত্তিক হয়েছে। আমরা থাকাকালীনই রেজিস্ট্রেশন অনলাইনে করা যেতো। পরে মনে হয় রেজাল্টও অনলাইনে দেখার সুবিধা ছিলো। এখন কী অবস্থা সেটা বলতে পারবো না।
পাগল মন
আরেকটি বিষয়। এটা অনস্বীকার্য যে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে রাজনীতিকে উপেক্ষা করার উপায় নেই। সব কিছুর মধ্যে রাজনীতি ঢুকে রয়েছে। সেটা যেমন ছাত্রদের মাঝে রয়েছে তেমনি রয়েছে শিক্ষদের মাঝে। এই বাস্তবতাটুকু মেনেই নিতে হবে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি সাধারণ অরাজনৈতিক ছাত্র এবং শিক্ষক তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। অধিকাংশ ছাত্র যেমন রাজনীতির মাঝে নেই, অধিকাংশ শিক্ষকও রাজনীতির মাঝে নেই। সময় এসেছে এদের একত্র হবার। এদের কথাই জোরে উচ্চারিত করার। সাধারণ ছাত্ররা অরাজনৈতিক ব্যানারে , ফেইসবুকে, কিংবা গ্রুপ মেইলে বা ব্লগ খুলে নিজেদেরকে সংগঠিত করতে পারে, নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারে এবং তার মাধ্যমে নিজেদের মতামত কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরতে পারে। আগে একটি সমস্যা ছিল এই সকল অরাজনৈতিক মানষগুলো একত্র করার। কিন্তু ইন্টারেনেট, ফেইসবুক, গুগুল, ব্লগ তথ্যপ্রযুক্তি আমাদেরকে সূযোগ এনে দিয়েছে খুব সহজেই নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য। একই কথা প্রযোজ্য প্রাক্তন ছাত্রদের বেলাতেও। অন্তর্জালের মাধ্যমে দেশে/বিদেশে ছড়িয়ে থাকা সকল প্রাক্তন ছাত্রদেরকে একত্রে করাও এখন খুব সহজ হবে। আমরা কি এই সূযোগকে কাজে লাগাবো না?
দেখা যাচ্ছে অনেকে জেনে আর অনেকে না জেনেই অফটপিকে অনেক কিছুই বলে যাচ্ছেন!
এই ধারণাটা আপনার কোথা থেকে হলো জানতে পারলে ভালো লাগতো! আর বুয়েটের লাইব্রেরীর ইন্টারনেট সার্ভিসের অবস্থা ভালোই আছে। আর নতুন অনেক অনলাইন জার্নালের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সকল রেজিস্ট্রেশন, রেজাল্ট, ডিফল্টার লিস্ট, বিভিন্ন ফর্ম এখন অনলাইনেই পাওয়া যায়। আর ছাত্র-ছাত্রীদের ইমেইল ঠিকানা না থাকলেও BIIS এ একটা একাউন্ট সব ছাত্রেরই আছে। সেখান থেকেই তার রেজিস্ট্রেশন, রেজাল্ট দেখা, ডিগ্রীর জন্য আবেদন সব করতে পারে!
আর DSW এর পক্ষ থেকে অ্যালুমনি ডাটাবেস আপডেট করার একটা উদ্যোগ অতি সম্প্রতি নেওয়া হয়েছে। আমাদের সকলেরই অনেক অভিযোগ আছে এবং থাকবে, ঠালাওভাবে অভিযোগ না করে এর সমাধানের উপায় নিয়ে আলোচনা করাটাই আমাদের অ্যালমা মাটার এর জন্য ভালো হবে, তাই নয় কি?
আমি দেশের বাইরে আসার সময় এখানে অবস্থান্রত বুয়েটের এক শিক্ষককে বুয়েটের ইমেইল অ্যাড্রেসে মেইল করেছিলাম কিন্তু উনি সেটার রিপ্লাই আমাকে প্রায় দুইমাস পরে দিয়েছিল যখন আর কোন প্রয়োজন ছিলনা।
আমি আর আমার ওয়াইফ রিকমেন্ডেশন লেটারের জন্য বুয়েটের স্যার/ম্যাডামদের বুয়েটের ইমেইল অ্যাড্রেসে মেইল করতে চাওয়ায় উনার বলেছিল সেটাতে না করতে কেননা সেটা উনারা খুব একটা ব্যাবহার করেননা আর তাছাড়া সেখানে নাকি প্রচুর স্পাম আসে।
BIIS এর একাউন্ট আমি যখন বুয়েটে ছিলাম তখন মাত্র মনে দেয়া শুরু করে যদিও আমরা সেটার সুফল দেখতে পারিনি।
শুনে ভালো লাগলো।
DSW এর সাম্প্রতিক উদ্যোগে সাড়া দিয়ে আমি ইতোমধ্যেই ফরমটি পূরণ করে পাঠিয়ে দিয়েছি যদিও ফরমতো তেমন কিছু না, আমি সেটা পেয়েছি ফেসবুকের মাধ্যমে যেটা খুব সহজেই ইয়াহুর বুয়েটিয়ান গ্রুপের মাধ্যমে দেয়া যেত। সেটা অনেক কনভিনিয়েন্টও হতো। যাহোক উদ্যোগ শেষ পর্যন্ত একটা নিয়েছে তাতে কিন্তু ঠিকই সাড়া দিয়েছি।
সর্বশেষ, আপনি কিন্তু পোস্টের মূল বিষয় অনিয়মিত কনভোকেশন নিয়ে কিছুই বলেননি। আমি কী ধরে নিব, আপনি আমার সাথে এব্যাপারে একমত?
পাগল মন
পাশ করার পর দেড় বছরের মত দেশে ছিলাম, সবসময় আশা করতাম হয়ত কনভোকেশন পাব। বিশেষত পাশের ঢাবির কনভোকেশন দেখে মনে হচ্ছিল, আমাদের ও নিয়মিতই হবে। এবার কনভোকেশনের তারিখ দেখে কেন জানি খুব রাগ হল। এমন না যে, কিছুদিন এগোলে বা পেছালে আমি অ্যাটেন্ড করতে পারব। তবুও অন্তত যারা এই ডিসেম্বরে দেশে যাচ্ছে, তারা যেন অ্যাটেন্ড করতে পারে। আর কনভোকেশন গুলিতে ওভারলেপিং এর ব্যবস্থা করলে ভালো হত, তাতে যাদের মিস হয়ে গেল, তারা পরের কনভোকেশনে অ্যাটেন্ড করতে পারত, অবশ্য এটা বাস্তবধর্মী কিনা জানিনা।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
ডিসেম্বরে কনভোকেশন করা মনে সম্ভব না কেননা বুয়েটে তখন টার্ম ফাইনাল চলবে। তবে চাইলেই এপ্রিল/মে মাসে সেটা করা যেত। সেসময়েও প্রচুর প্রবাসী ছাত্রছাত্রী দেশে যায়।
ওভারল্যাপিং থেকে আসলে লাভ কী? সময়ের কাজ সময়ে না করলে সেটার তেমন কোন মূল্য থাকে না।
পাগল মন
কনভোকেশন নিয়ে আর কোনো আগ্রহ নেই। বাইরে আসার আগে মুল সার্টিফিকেটও তুলে নিয়ে এসেছি। তাই সমাবর্তন কখন হবে, কখনো ভাবায়নি। তারপরো মনের ভিতরে একটা দুঃখ মাঝে মাঝে উকি দেয় বন্ধুদের সাথে গাউন পরে কোনো একদিন আনন্দ করতে পারিনি।
অনন্ত
নতুন মন্তব্য করুন