২।
চেয়ারে বসে ক্যারেকটার এ ঢোকার জন্য কিছুটা সময় নিলো সুলতান। হূম, আজকের অফিসের নয় ঘন্টা ভালো যাওয়া উচিত। গতকাল একটা ইন্টারেস্টিং কাজ শুরু করেছিলো, আজকে বা কালকের মধ্যে সেটা শেষ করতে হবে। ভালো ভালো, এখন নাস্তার অর্ডার দেয়া উচিত।
দুপুরে নিচতলায় খেতে নেমে রান্নাঘর এ ঢোকে সুলতান। পাশেই তার ম্যানেজার বস প্লেটে খাবার নিচ্ছে। এই লোকটা সম্পর্কে নানান জাতের, নানান মাপের বাজে কথা শোনে সে সারাদিন। এমপ্লয়ীদের টাকা আসে বিদেশ থেকে। সুলতানদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এ টাকা ট্রান্সফার হবার আগে সেই টাকা এই বসের অ্যাকাউন্ট এ তশরীফ রাখে, এবং সেই সময়টায় কিভাবে টাকার গায়ের চর্বি ঝরে যায় সেই কথা তো অনেকবার শোনা হলো গত দুবছর । যাহোক, সুলতান যা পায়, তাতেই খুশী, যা পেতে পারতো সেটা চিন্তা করে রস শুকানোর কোন মানে নেই আপাতত। আর সুলতানের ধারনা, ম্যানেজার শ্রেনীর লোকজনের জব রেস্পন্সিবিলিটির একটা বড় পয়েন্টই হচ্ছে পিঠের পিছনে বিষাক্ত গালি খাওয়া। আপাতত মেজ়াজ বিলা করার একটা কারন সামনেই আছে। লাঞ্চে সবজ়ীর আইটেম দেখা যাচ্ছে ভেন্ডী ভাজি। ধুরোহ!
আজকে ঘুমাতে যাবার সময় একটা ম্যাগাজিন নিয়ে বিছানায় যায় সুলতান। মহিলাদের ম্যাগাজিন, আম্মার ঘর থেকে নিয়ে আসা। মাসে দুটা করে আসে বাসায়। ভালোই। কোমর ভাঙ্গা কাঁকলাশ মেয়েদের ছবি আছে, খান তিনেক ছোটগল্প আছে, প্রথম রিপুর তাড়নায় সালমান এখন কার বুকের ভাঁজ়ে গোত্তা খাচ্ছে, এইসব প্রয়োজনীয় তথ্য আছে। ম্যাগাজিন এর পাতা ওল্টায় সুলতান, কাঁকলাশদের কে একটু উলটে পালটে দেখে, তাদেরকে নগ্ন করার চেষ্টা করে মনে মনে। আজকে সুলতানের অফিস টাইমটাই যা ভালো কাটলো। সন্ধ্যায় বন্ধুদের সাথেও দেখা হলো না, শাজাহানের এর টং দোকানের চা খাওয়া হলো না। চাতো না, শাজাহানের গুহ্যস্রাব। ওই চা টাকে এর চেয়ে ভালো কিছু মনে করাটাকে নিজের স্বাদ্গ্রহনের ক্ষমতার প্রতি অপমান হিসেবে দেখে সুলতান। যাহোক, বছর ছয়েক ধরে এই খেতে খেতেই সুলতানের কন্ডিশনড রিফ্লেক্স তৈরী হয়েছে, চা না খাওয়া পর্যন্ত আড্ডার মোতাত জাগে না। বই কেনা হয়না অনেকদিন, বাসায় নতুন কোন সিনেমার ডিভিডি থাকলেও হতো। আসুক সামনের শুক্রবার, দোকানে গিয়ে একগাদা ডিভিডি কিনবে ঠিক করে সুলতান।
রাত বেশ গভীর হয়েছে। পাশের ঘরটাই আম্মা-আব্বার। আম্মা অনেক রাত পর্যন্ত টি.ভি. দেখে - ঘুমাতে ঘুমাতে একটা-দেড়টা বাজায়। নিজের ঘরের দরজাটা খুলে পাশের ঘরে একবার উঁকি দিয়ে আসে সুলতান। টিভি চলছে, আম্মা ঘুম। আব্বা ঘুমিয়েছে আরো অনেক আগে। নিজের ঘরে ফেরত এসে আলো নিভিয়ে একটা সিগারেট ধরায় সুলতান।
৩।
গত ২৪ ঘন্টার বর্ননা দিয়েই সুলতানের ভিতর-বাইরেটা একেঁ ফেলা যায়। ছবিটার আনাচে কানাচে একটু আধটু রং মাখানো ছাড়া আর বাকি সব কিছু মোটামুটি কাভারড হয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়। পরে সময়মতো বাকিটা আসবে। সুলতান প্রেমের পাকে পড়েনি এখনো । মেয়েদের সাথে ঘোরাফেরা না করা, বা করার ইচ্ছা না পোষন করার পেছনে শক্ত যুক্তি আছে তার। প্রেমটাকে একটা বয়স পার হবার পর জঙ্ঘাদেশের রস মাথায় উঠার ফলাফল হিসেবেই ভাবতে পছন্দ করে। প্রেম নিয়ে চিন্তা বেশীদুর এগোতে চায় না আসলে। ফুটবল ক্রিকেট এর অতটা ভক্ত নয়, তাই আড্ডায় যখন এসব বিষয়ে মুশায়রা জমে ওঠে তখন অন্যদিকে তাকিয়ে সিগারেট এ টান দেয়া ছাড়া আর কোন কাজ খুঁজে পায় না। শুধু মাঝে মাঝে দু একটা বোকা বোকা প্রশ্ন বা মন্তব্য। আবার বই-সিনেমার প্রসঙ্গ উঠলে মোটা গলায় জ্ঞান দিতে ছাড়ে না। নারীশরীর নিয়ে কথা জমে না বহুদিন হলো। স্পেক্যুলেশন আর কতদিন চালানো যায়! এইসব কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট এর কারনে দেখা যায়, প্রায়ই আড্ডা দু-তিন ভাগে ভাগ হয়ে যায়।স্মল টাইম ধুনফুন কথায় সময় পার হয়।
দৌলত আজকে সুলতানের পাশে বসে আছে। একটা লম্বা চিকন সাইজের বেঞ্চিতে চার জনের বেশী ধরে না। এর বেশী মানুষ বসতে গেলে কারো কোলে উঠে বসতে হবে। শাজাহানের পেছনটায় মাস কয়েক ধরে চুমু খাওয়ার পরে শাজাহান আরেকটা বেঞ্চি বসিয়েছে।
দৌলত আর সুলতান একই ব্র্যান্ডের সিগারেট টানে। দৌলত দুই আঙ্গুল বাড়িয়ে দেয় সিগারেট এর জন্য। সুলতানের গলা ধরে এসেছে পরপর কয়েকটা টান দিয়ে। দু তিন টান দিয়ে দৌলত হঠাৎ বলে, ধ্যার, এই একই রকম ভূঁসকি মার্কা লাইফ তো আর ভালো লাগে না রে। সকাল বিকাল রাইত একই ত্যানা পেচাইন্না কারবার। সুলতান দৌলত এর দিকে তাকিয়ে থাকে। দৌলত বলে, চায়া থাকলা যে? তোমার মনে হয় লাইফটা খুব মজায় যাইতাছে? আমাগো সবার মত মালগিরি কইরাই তো দিন যায় তোমারো। এমনে ঢং কইরা চায়া থাইকো না মাইয়া মাইনষের মতন।
সুলতান তাও বাঁকা মুচকি হাসিটা দিয়ে চেয়েই থাকে দৌলত এর দিকে। দৌলত ঘাড় ফিরিয়ে সিগারেটে টান দেয় আর শাজাহানের ব্যাটম্যানের দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা চালাতে থাকে। দৌলত এর চায়ের তৃষ্ণা পেয়েছে। সুলতানের মাথায় তখন আর আড্ডার কোন কিছু নেই। একসময় দৌলত এর দিক থেকে ঘাড় ফিরিয়ে নেয় সুলতান। পিচ্চিটাকে ডাক দিয়ে আরেকটা সিগারেট আর চা দিতে বলে সুলতান।
সে রাতে নিজের ঘরে অন্ধকারে সিগারেট ধরিয়ে সুলতান একটা ইন্টারেস্টিং ডিসিশান নেয়। কঠিন এক মনস্তাত্বিক খেলা শুরু করবে সে নিজের সাথে। প্রথমে নিজ়ের সাথেই খেলা শুরু হবে, আস্তে আস্তে আরো খেলোয়াড় নামবে মাঠে। কে কার পক্ষে বা বিপক্ষে খেলবে, সেটা হবে পুরা ডাইনামিক। সুলতানের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দী সে নিজে, আবার সময়মতো তাকেই আবার নিজের পক্ষে টেনে নিতে হবে।খেলার শুরুটাও কিভাবে হবে, জানে না। কিন্তু একবার শুরু হয়ে গেলে নিজ়েকে সামলে কতক্ষন খেলতে পারে সে্টাই বড় প্রশ্ন।
ঘর থেকে বের হয়ে একগ্লাস ঠান্ডা পানি খেয়ে আবার শুয়ে পড়ে সুলতান। কালকে অফিস আছে। চিত হয়ে শুয়ে অনেকটা নাটকীয় ভঙ্গীতে স্বগতোক্তি করে – কিপ ইট কুল, হানি।
-মেফিস্টো
মন্তব্য
রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি মনে হচ্ছে।
পাগল মন
দেখা যাক, কিসের থেইকা কি হয়।
-মেফিস্টো
ভাই, আপ্নের লেখার হাত ভালাই মনে হইতাছে, দেখি সামনে কী দেন।
কামরুল হাসান রাঙা
দুই পর্বই পড়লাম। অ্যাভারেজ জীবনের গল্প লেখা কঠিন কাজ, যদিও আমরা সবাই সেই
জীবনটাই কাটাই। আপনি এই কঠিন কাজটা করছেন দেখে ভাল লাগছে।
চলুক।
নতুন মন্তব্য করুন