--- শাহেদ সেলিম
১.
রাত তখন কত ঠিক জানিনা। আচমকা এক শব্দে হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে গেল! ধড়মড় করে বিছানায় উঠে বসলাম। ছোটবেলা থেকেই আমার ঘুম বেশ পাতলা। এখনও খুব মনে পড়ে ছোটবেলায় যখন সামান্য কোন শব্দে ঘুম ভেঙে গেলে অযথাই ভয় পেয়ে মায়ের বুকে মুখ গুঁজে দিয়ে গুটিশুটি মেরে শুয়ে থাকতাম, মা গভীর ঘুমের মাঝেও কীভাবে কীভাবে যেন টের পেয়ে যেতেন! আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ঘুমের ঘোরেই বলতেন, ‘কোন ভয় নেই বাবা।‘ আমি ধীরে ধীরে অস্পস্ট স্বরে বলতাম, ‘ওটা কিসের শব্দ মা?’ আমার কথা শুনে মা নিঃশব্দে হেসে উঠতেন। যদিও অন্ধকারে কিছু দেখা যেতোনা কিন্তু আমি তা বুঝতে পারতাম। মায়ের হাসিতে একটা আশ্চর্য তরঙ্গ ছিল যা ঘন অন্ধকারেও আমি অনুভব করতাম। ‘ওটা কিছুনা। ইঁদুর ছোটাছুটি করছে হয়ত। আর আমি আছিনা তোমার পাশে?’- মা হাসি জড়ানো কন্ঠে বলে উঠতেন। কখনো কখনো মৃদুস্বরে ঘুম পাড়ানি গান গেয়ে আমার দু’চোখে ঘুমের রাজকন্যাকে ডেকে আনতেন।
শব্দটা ঠিক কোথা থেকে আসছে তা বোঝা যায়না। আমি তীব্র মনোযোগ দিয়ে উৎস খোঁজার চেষ্টা করি। খচখচ একটা শব্দ। থেমে থেমে শব্দটা এই নির্জন রাতে যেন একা একাই বেজে চলেছে। একটা সময় শব্দটা আর শোনা যায়না। ঠিক তখনি কিছুক্ষণের জন্য যেন স্মৃতিবিভ্রম ঘটলো আমার। আমি কে? এখন আমি কোথায় আছি? কেন আমি এখানে? এখন রাত কয়টা বাজে? এটা মধ্যরাত না শেষরাত? এমন সব হাজারো অনুসন্ধিৎসু আত্মবিশ্লেষণী জিজ্ঞাসা আমার মাথার ভেতরে মাছির মত ভোঁভোঁ করে ঘুরতে লাগলো। মাথার ভেতরে খুব সূক্ষ ভোঁতা একটা যন্ত্রণা টের পেলাম। গায়ের ওপরে আলতো করে রাখা কাঁথাটা হেঁচকা একটানে শরীর থেকে দূরে ছুঁড়ে ফেললাম। যেন কোন কলঙ্কিত রমনীর কলঙ্ক মোচনের ব্যর্থ চেষ্টা! একটু শীত শীত লাগছে। মাটি ভেজা সোঁদা গন্ধ টের পেলাম। যা আমার নাকে ভীড়ে অন্যরকম অনুভূতির সৃষ্টি করে। হয়তো কিছুক্ষণ আগে এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে। খোলা জানালা দিয়ে বৃষ্টি ভেজা দখিণা বাতাস এই ঘরে প্রবেশ করে তারই জানান দিচ্ছে। হাসনাহেনার তীব্র মিষ্টি সুবাস আমার শান্ত অনুভূতিতে নতুন কোন অস্তিত্বের সৃষ্টি করে।
বৃষ্টি এসে আবার চলেও গেছে। বৃষ্টিভেজা স্বচ্ছ স্ফটিকের মত উন্মুক্ত আকাশ পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় এই গভীর অনন্য নির্জন রাতে আনমনে একাকী স্নান করছে। থালার মত বিশাল এক পূর্ণিমার চাঁদের তীব্র অথচ কোমল মসৃন আলো ঘরের দক্ষিণ দিকের জানালা গলে আমার খাটে এসে পড়েছে। এই জানালাটা বিশাল। মানুষের মনের মতই বিশাল। এখান দিয়ে পুরো আকাশ দেখা যায়। তাকে অনুভব করা যায়। আকাশের মেঘেরা বৃষ্টি হয়ে আকাশের দুঃখ ঝরিয়ে যেনো হাল্কা হয়েছে। আকাশের মনে যখন অনেক দুঃখ জমা হয়, তখন সে মেঘ হয়ে কাঁদে। আকাশের নীল কষ্ট ভরা কান্না মেঘের দল তাদের নিজ বুকে জড়িয়ে বৃষ্টি হয়ে এই পৃথিবীতে অবিরাম ঝরে পড়ে। পৃথিবীর মাটি আকাশের কষ্টগুলোকে ভাগাভাগি করে নেয়। তাতে আকাশের মন হাল্কা হয়! কে বলেছিল আমাকে একথাগুলো? মা? হবে হয়তো। আমার মনে নেই।
আমার মনটাও কেমন যেন হাল্কা হাল্কা লাগছে। কিন্তু কই? আমিতো কাঁদিনি। তবে কি ঘুমের মাঝে অবচেতনে আমার চোখের অশ্রুগুলো নিজেদের ঝরিয়ে শান্ত হয়েছে আকাশের মত? কে জানে, হবে হয়তো। ধাতস্ত হতে কিছুটা সময় লাগে আমার। ঘরের ভেতরটা চাঁদের আলোর তীব্র বন্যায় ভেসে যাচ্ছে। এই ঘরটাকেও মনে হচ্ছে যেন এক উন্মুক্ত আকাশ! এত আলো জানালা দিয়ে আসে কীভাবে? এ অনুভূতি কি তবে বিভ্রম? স্বপ্নে না দুঃস্বপ্নে?
জোছনার আলোর বন্যায় খাটের মধ্যে ভেসে যেতে যেতে মাথার পাশে রাখা মোবাইলটা হাতে তুলে নেই। এখন প্রায় চারটা বাজে। রাত শেষ হতে বেশি বাকী নেই। সাবধানে খাট থেকে নেমে লাইটের সুইচটা অন করলাম। ঘরের ভেতরে তখন চাঁদের প্রাকৃতিক আলোর বন্যা কেটে গিয়ে কৃত্রিম বিজলী বাতি ঝলমলিয়ে জ্বলে ওঠে! শহুরে আলোর তীব্রতায় আমার চোখ ঝলসে যায়। মেঝেতে তাকিয়ে দেখি তিন-চারটে তেলাপোকা ইতস্তত ছোটাছুটি করে পালাচ্ছে।
ধীরে ধীরে আমার সবকিছু মনে পড়তে থাকে। সবকিছু আমার সম্মুখে দিনের আলোর মতই স্বচ্ছ ও পরিস্কার। আমি এখন আজহার চাচার বাসায়। এখানে এসেছি আজই সন্ধ্যায়। আমি এসেছি আমার হারিয়ে যাওয়া অজানা অস্তিত্বের খোঁজে। আমার অজানা মায়ের কবর জিয়ারত করতে। যাকে আমি কোনদিন দেখেনি। এমনকি আমার এই উনত্রিশ বছরের জীবনে মাত্র একমাস আগেও আমি জানতামনা যে আমার মা বেঁচে নাই।জানতামনা আমি আমার বাবা-মায়ের পালক সন্তান!
২.
মাকে যেদিন জানালাম যে আমি কাশপুর যেতে চাই, মা শুনে কেমন যেন বিমর্ষ চোখে আমার মুখের দিকে অপলক চেয়ে থাকেন। আমি চোখ নামিয়ে নেই। কেন জানি মায়ের মনে কষ্ট দিতে মন সায় দেয়না। অনেকদিনের অভ্যাসতো! কিন্তু আমার যে যেতেই হবে। এ ছাড়া আমার সামনে আর কোন রাস্তা খোলা নেই। নিজের অস্তিত্বের সন্ধান না পেলে আমি এক সময় নিজেকেই নিজে কখনো ক্ষমা করতে পারবোনা। আজহার চাচার সাথে মুখোমুখি হওয়াটা কতটা জরুরী আমার জন্য মা তা বোঝেনা কেন?
অনেকক্ষণ নিশ্চুপ থাকার পর ধীরে ধীরে অস্ফুট স্বরে মা বলেন, ‘এখন কি ওখানে না গেলেই নয় রায়হান? তোমাদের বিয়ের ঝামেলা আগে শেষ হোক তারপর না হয় সময় নিয়ে যেও।‘
মায়ের মুখে অনেকদিন পর নিজের নামটা শুনে একটু চমকে উঠি। মা আমাকে সবসময় ‘বাবা’ বলেই ডাকতেন, আদর করতেন। সেই ছোটবেলা থেকেই। মাত্র দশদিন আগে যখন অকস্মাৎ এক প্রচন্ড ভূমিকম্পে আমার চেনা পৃথিবীটা হঠাৎ করেই অন্য রং এ বদলে যায়, তারপর থেকে আমার সাথে মায়ের আচরণের সূক্ষ্ণ এই পরিবর্তন এই প্রথম টের পেলাম। কেমন যেন অস্বস্তি হয়। আর তার সাথে মায়ের ওপর প্রচন্ড রাগ। তীব্র বিতৃষ্ণা নিয়ে যখন মাকে কিছু বলতে যাবো, অবাক হয়ে চেয়ে দেখি মা কিছুক্ষণ পরপর কেঁপে কেঁপে উঠছেন। মা কাঁদছেন নিঃশব্দে। সে দৃশ্য দেখে আমি ক্ষণিকের জন্য হতবিহবল হয়ে পড়ি। চুপচাপ মায়ের হাত ধরে তাঁর পাশে বসে থাকি। তারপরও মন শক্ত করে একসময় বেশ কঠিন ভাবেই বলি, ‘এবার আমাকে যেতেই হবে মা।‘
ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি মা আমাকে এক মুহূর্তের জন্যেও চোখের আড়াল হতে দিতেননা। ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় একবার ঠিক হলো স্কুল থেকে আমরা পিকনিকে যাবো। গাজীপুরের শালবনে। সবাই যাচ্ছে। রনি, আসিফ, তানভির, মুকুল, ইফতি সবাই। আর রনি যাবে শুনে আমিতো খুশীতে বাকবাক। ওর যাওয়ার কথা ছিলনা। ওর বাসায় কি যেন সমস্যা ছিল। শেষ মুহূর্তে ঠিক হয় রনিও যাবে আমাদের সাথে। ও ছিল আমার সবচাইতে প্রিয় বন্ধু। ওদিকে মাতো আমাকে কিছুতেই একা ছাড়বেননা। বললেন তিনিও যাবেন আমাদের সাথে।। বাবা শুনে অসম্ভব বিরক্ত হোন। বলেন, ‘আহ রাবেয়া। কিসব পাগলামো করছো? জানোনা গারজিয়ান এলাও না। তাছাড়া ওদের ম্যাডামরা যাচ্ছেন। রায়হানের ক্লাস টিচারের সাথে আমার কথা হয়েছে। উনি আশ্বস্ত করে বলেছেন কোন চিন্তা না করতে।‘
মা চোখমুখ শক্ত করে বলেন, ‘আমার ছোট্ট বাবাকে আমি একা কোথাও যেতে দিবনা। কোনদিননা।‘ বলেই মা হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন। আমি হতভম্ব হয়ে একটু দূরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকি। বাবা রাগ করে ঘর থেকে ঝড়ের বেগে বেরিয়ে যান।
প্রায় দেখতাম তাদের মধ্যে ঝগড়া হচ্ছে। বাবা অনেক শান্ত মেজাজের মানুষ ছিলেন কিন্তু আমাকে নিয়ে কথা উঠলেই তিনি কেমন যেন অন্যরকম হয়ে যেতেন। একটু বড় হবার পর আমি যখন আলাদা ঘরে থাকা শুরু করলাম, অনেক রাতে মা-বাবার ঝগড়া শুনতাম। বাবা বলেন, ‘তোমাকে আগেই বলেছিলাম, এসব ঝামেলায় না যেতে। রায়হান যখন বড় হবে একসময় ও নিজেইতো সব জেনে যাবে।‘
মা মৃদু স্বরে বলতেন, ‘ও আমার সন্তান। তুমি চাইলে আরেকটা বিয়ে করতে পারো।‘
তখন অনেককিছুই বুঝতামনা। এখন বুঝি। সব বুঝি। এই হল বড় হয়ে যাবার যন্ত্রণা। মা যে কোনদিনও সন্তানের জন্ম দিতে পারবেননা এটা জানার পর বাবার কেমন অনুভূতি হয় এখন তা বেশ উপলব্ধি করতে পারি। আর মায়ের জন্য প্রচন্ড একটা কষ্ট আমার বুকের মধ্যে পাথরের মত চেপে বসে।
অনেকেই বাবাকে আবার বিয়ে করতে বলেছিল। ডাক্তার নাকি পরীক্ষা করে দেখেছে মায়েরই সমস্যা। মাও একসময় বাবাকে বলেন আরেকটা বিয়ে করতে। নইলে বংশরক্ষা কীভাবে হবে? বাবা রাজী হননি। বাবা আর মা ক্লাসমেট ছিলেন। মা প্রথম থেকেই তুখোড় মেধাবী আর অসম্ভব সুন্দরী ছিলেন। বাবা প্রথম দেখাতেই মায়ের প্রেমে পড়ে যান। দীর্ঘ পাঁচ বছরের প্রেমের সফল পরিণতি তাদের বিয়ে! বাবা মাকে প্রচন্ড ভালোবাসতেন। সেই ভালোবাসার কাছে পৃথিবীর সবকিছুই অতি তুচ্ছ। এমনকি পিতা হবার আজন্ম বাসনাও।
সেই উত্তাল সময়ে আজহার চাচা যেন ফেরেশতা রুপে হাজির হোন আমাদের বাসায়। আজহার চাচা বাবার দূর-সম্পর্কের ভাই। বাবাদের গ্রামের জমিজমা তিনিই দেখাশোনা করেন। বাবার আপন বলতে শুধু এই চাচাই এখন একমাত্র গ্রামে। আজহার চাচা এসেছিলেন তার একটা সমস্যা নিয়ে। চাচার বাল্যবন্ধু হাসমত। একেবারে প্রাণের বন্ধু বলতে যা বোঝায়, ওনারা দু’জন ছিলেন ঠিক তাই। কাঁধে কাঁধ রেখে একসাথে মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন। দুজনের কত স্মৃতি একসাথে। গ্রামের সবাই তাদের বলতেন “মানিকজোড়”। সেই হাসমত একদিন আচমকাই নদীতে ডুবে মারা যায়। তবে আজহার চাচার বদ্ধ ধারণা তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। জমিজমা নিয়ে হাসমতের সাথে অনেকেরই শত্রুতা ছিল। হাসমত যখন মারা যায়, তখন তাঁর স্ত্রী সন্তান-সম্ভবা। স্বামীর এই আকস্মিক মৃত্যু তিনি মেনে নিতে পারেননি। সন্তান জন্ম দেবার সময় তিনি মারা যান। এদিকে হাসমতের তেমন আপন কেউ নেই যে এই সন্তানের দায়িত্ব নিতে পারে। এছাড়া হাসমতের উত্তরসরি বেঁচে আছে জানলে ওর শত্রুরা তাকেও এই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করবেনা।
এখন এই দুধের শিশুকে নিয়ে চাচা কী করেন, কোথায় যান? তখনই রায়হানের বাবার কথা তার মনে পড়ে। স্ত্রীর পরামর্শে সরাসরি ঢাকায় এসে হাজির হোন।
মা তো এই শিশু পুত্রটিকে পেয়ে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলেন। বাচ্চাটা দেখতেও একেবারে রাজপুত্রের মত। যেন কোন দেবশিশু! গায়ের রঙ অসম্ভব ফর্সা। আর চোখদুটো কেমন লম্বা টানা টানা!
সুমি মাঝে মাঝেই আমাকে বলে, ‘তুমি আরেকটু কম ফর্সা হলে ভালো হত। ছেলেদের এত রুপ মানায়না।‘ শুনে আমি নীরবে হাসি।
মা পড়ালেখার পাট শেষ করবার সাথে সাথেই খুব ভালো একটা চাকুরি পেয়ে যান। বাবার দিক থেকেও বিয়ের পর চাকরি করতে কোন বাঁধা ছিলনা। আগেই বলেছি মা ছিলেন অসম্ভব মেধাবী। চাকরিতেও তাই দ্রুত উন্নতি করতে তাঁকে মোটেও বেগ পেতে হয়নি। আমার মা ছিলেন প্রচন্ড হাসিখুশি আর প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরপুর একজন মানুষ। কিন্তু যখন তিনি জানতে পারেন যে তিনি কোনদিনও সন্তানের মা হতে পারবেননা, তখন থেকেই নিজেকে ধীরে ধীরে সবকিছু থেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করেন। বাসার বাইরে বেরুতেন খুবই কম। এমনকি একসময় এত ভালো চাকরিটাও ছেড়ে দেন। মা কেমন যেন মনমরা হয়ে যান। সারাদিন চুপচাপ একা একা নিজের ঘরে বসে থাকেন। বাসার আর সবার সাথে কথা বলা প্রায় একরকম ছেড়েই দেন।
মাকে নিয়ে সবাই অনেক চিন্তায় পড়ে যায়। বাবা, খালারা নানাভাবে মাকে বোঝাতে চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়না। তারপর মা যখন আমাকে তাঁর কোলে সন্তান হিসেবে তুলে নেন, তারপর থেকে তিনি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে শুরু করেন। আমি ছিলাম সে সময় তাঁর বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন!
আমাকে সবসময় চোখে চোখে রাখতেন। কারও সাথে তেমন মিশতে দিতেননা। সবসময় মনে মনে ভয় পেতেন, যদি তার কলিজার টুকরা হারিয়ে যায়। যদি তার সোনামানিককে কেউ তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়! বাবা এসব দেখে খুব বিরক্ত হতেন। কিন্তু একসময় এসব পাগলামী মেনে নেন। মায়ের মনতো। হাজার হোক মায়ের মন, পালক মা হোক, হোক না নিজের গর্ভে ধারণ না করা সন্তান, তবু মাতো!
আমার এইসব অজানা অতীত আমি জানি আমার ছোটখালার কাছ থেকে।
৩।
ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। মোবাইলের শব্দে ঘুমটা ভেঙে যায়। ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলি, হ্যালো। ওপ্রান্তে সুমির গলার উচ্ছসিত স্বর শোনা যায়। এই, ঘুমাচ্ছো নাকি? এই অসময়ে ঘুম? শরীর খারাপ নাতো? আমি গম্ভীর স্বরে বলি, সুমি তোমার সাথে আমার কিছু জরুরী কথা আছে। সুমি আমার গলার স্বর শুনে খানিকটা ঘাবড়ে যায়। ভয় পাওয়া কন্ঠে বলে, আবার কী ঝামেলা হল রায়হান? মার সাথে ঝগড়া করনিতো?
মনে মনে বলি, ‘মা থাকলে তো?’
এমন একটা বাজে টাইপের চিন্তা আমার মনে বাসা বাঁধায় নিজের উপর নিজের অসম্ভব রাগ হয়। মা হয়তো আমায় গর্ভে ধারণ করেননি কিন্তু তিনিই আমার মা।
কি ব্যাপার, কিছু বলছোনা যে? বড় কোন সমস্যা? সুমির কথায় উৎকণ্ঠার ছাপ স্পষ্ট। না তেমন কিছু না। ভয়ের কিছু নাই। আমি দু-একদিনের জন্য একটু ঢাকার বাইরে যাবো। এসে তোমাকে বিস্তারিত জানাবো। কোথায়? এসে ফিরে বলি। আমার অপরিচিত গাম্ভীর্যে সুমি আর কথা বাড়ায়না। আমি নিঃশব্দে মোবাইল নামিয়ে রাখি।
আমি যে আমার মায়ের আপন সন্তান নই, পালক সন্তান, তা জানার পর কেন জানি আমার তেমন কোন ভাবান্তর হয়না। বরং আমার মায়ের জন্যই অনেক খারাপ লাগতে শুরু করে। কেবলই মনে হয়, মায়ের বুকটা আমি জীবিত থাকতেই শূন্য করে দিলাম। কি এমন ক্ষতি হতো জীবনের এই সবচেয়ে বড় আর জঘন্য সত্যটা না জানলে?
সুমির সাথে আমার বিয়ের সবকিছু ঠিকঠাক। মার আগ্রহ সবার চাইতে বেশি। বাবার সাথে আমার অদৃশ্য দূরত্ব। কিন্তু পালক ছেলে বলে যে তিনি তাচ্ছিল্য করেন তা নয়। বরং বর্তমান দৃশ্যবলী তিনি অতীতেই অনুধাবন করেছিলেন বলে তাঁর এই দূরে সরে থাকা।
সুমির সাথে দেখা হওয়াটা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠতম ঘটনা! মানুষের মন যে আকাশের মত এতটা বিশাল ও প্রাচুর্যময় হতে পারে তা ওর সাথে একই বাঁধনে না জড়ালে হয়ত আমার সম্পূর্ণরুপে অজানাই থেকে যেত। সুমি আমার ছোটখালার মেয়ে তানিয়ার বান্ধবী। একেবারে প্রাণের বন্ধু বলতে যা বোঝায়, ওরা দু’জনে ছিল ঠিক তাই। তানিয়ার মাধ্যমেই সুমির সাথে আমার পরিচয়। তারপর পরিচয় থেকে পরিণয়। সুমি জানেনা অহংকার কাকে বলে। এত শিক্ষিত আর সুন্দরী অথচ মনে বিন্দুমাত্র কোনো অহংকার নেই।
মাঝে মাঝে সুমিকে আমার আকাশ বলে মনে হয়। দেখা যায় কিন্তু স্পর্শ করা যায়না, তার বিশালতাকে ধারণ করা যায়না, কেবলই অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করা যায়!
আমার কাছে আমার সুমি মানে আমার এই রুঢ় পৃথিবীতে বেঁচে থাকবার অদম্য অনুপ্রেরণা। সুমির কথা মনে হলেই আমি কেমন যেন হয়ে যাই। আমার আর আত্মহত্যা করতে ইচ্ছা করেনা।
সুমি আমার চার বছরের জুনিয়র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সোশ্যাল সায়েন্সে অনার্স আর মাস্টার্স সফলভাবে শেষ করে একটা এনজিওতে ঢুকেছে। আর আমি আছি একটা বহুজাতিক কোম্পানীতে সিনিয়র এক্সজিকিউটিভ হিসেবে। আমরা দুজনেই প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু তারপরেও বিয়ের আগে আগে বড় ধরনের ঝামেলা বেঁধে যায়। কেবলমাত্র আমার অজানা অস্তিত্বের শেকড় সমূলে উৎপাটিত হওয়ায়।
বিয়ের আগে সবকিছু জানাজানি হয়ে গেল। সুমির বাবা কিছুতেই রাজী না। তিনি কিছুতেই জন্ম পরিচয়হীন ছেলের সাথে নিজের মেয়ের বিয়ে দেবেননা। মা প্রতিবাদ করলেন।বললেন, ‘আমার সন্তান না হতে পারে, কিন্তু জন্ম পরিচয় নিয়ে কথা ওঠে কেন? রায়হানের মা-বাবার অনেক বড় পরিচয় আছে। কাশপুরে তাদেরকে সবাই একনামে চেনে। আর রায়হানের সবচাইতে বড় পরিচয় ও আমার ছেলে!’
সুমি ছোটবেলা থেকেই প্রচন্ড রকম সাহসী। ওর স্বপ্ন ছিল দুঃস্থ অসহায় মেয়েদের নিয়ে কাজ করবে। ওদের এনজিও, কেয়ারের সহায়তায় একটা প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছে। ছিন্নমূল সেক্স ওয়ার্কারদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার আলোয় শিক্ষিত করে তোলা। সুমির বাবা কিছুতেই রাজী না সুমি এসব নোংরা মানুষদের নিয়ে কাজ করুক। কিন্তু সুমি তার চেতনার কাছে পরিস্কার। বাবাকে সাফ সাফ জানিয়ে দেয় তার কাজে কোনো বাধা না দিতে। সুমি ইস্পাতসম দৃঢ়তার কাছে ইকবাল সাহেবের মত কঠিন মানুষও হার মানতে বাধ্য হোন।
আমি যে আমার বাবা-মার আপন সন্তান নই, এটা জানাজানি হবার পর সুমির বাবা ইকবাল সাহেব একেবারে তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন। এগুলো না জানিয়ে এনগেইজমেন্ট করানোয় তিনি আমাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করার হুমকি দেন। আইন প্রতিমন্ত্রী তাঁর বন্ধু।
কিন্তু সুমি তার সিদ্ধান্তে অনড়। রায়হান ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করা ওর পক্ষে সম্ভব না। মরে গেলেও না। বংশপরিচয় সুমির কাছে নগণ্য ব্যাপার। রায়হানের সবচাইতে বড় পরিচয় ও একজন ভালো মানুষ। ওর ভাগ্যেতো ওর কোন হাত নেই। তাহলে তার জন্য সে কেন শাস্তি পাবে?
সবশুনে আমি সুমিকে বলি, ‘কিন্তু সমাজ বলেতো একটা কথা আছে তাইনা? তাকে তুমি কীভাবে এড়িয়ে যাবে?’ সুমি বলে, ‘প্রয়োজনে তোমাকে নিয়ে দেশের বাইরে চলে যাবো।‘
আমি ওর কন্ঠের তেজের কাছে হার মানি। ওর বাবাও শেষপর্যন্ত মেনে নিতে বাধ্য হোন। সুমির দৃঢ়চিত্তের জয় হয় অবশেষে। জয় হয় আমাদের অদম্য ভালোবাসার।
কিন্তু যখনই আমি একা থাকি, কেবলই মনে হয় ভুল করছিনাতো? আমার এই গন্তব্যহীন, শেকড়বিহীন জীবনের সাথে সুমিকে জড়িয়ে কোন অন্যায় করছিনাতো?
৪।
কবরটা কোনদিকে চাচা? আজহার চাচা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তর্জনী উঠিয়ে দেখান, ‘ঐ যে উত্তর দিকে যে শিউলি গাছ দেখতাছো, তার নিচেই।‘ শীতের সকাল। জায়গাটা সাদা সাদা শিউলি ফুলে ভরে গেছে। কবরের কোন নিশানা-টিশানা নেই। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে খুব মৃদুস্বরে চাচা বলেন, ‘অনেক আগের কবরস্থান। এখন অনেকটা পরিত্যাক্ত বলা যায়। নতুন কবরস্থান হওয়ার পর থেকে এদিকটায় এখন আর তেমন কেউ আসেনা।‘
আমি মন দিয়ে তাঁর কথা শুনি। তাঁকে দেখাচ্ছে অনেকটা বাউলদের মত। সফেদ সাদা শুভ্র দাড়ি বাতাসে একটু একটু উড়ছে। আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকি। আমার মনের ভেতরে তেমন কোন অনুভূতির সাড়া পাইনা। যেন অনন্তকাল আমি এখানে এভাবেই দাঁড়িয়ে আছি। একটা প্রশ্নের উত্তর জানার ছিল। তা জানা হয়ে গেছে। এরপর যেন আর কিছু করার নেই। বলার নেই। জানার নেই।
আজহার চাচার বাসায় ফেরার পথে দেখি আমার দু’চোখ বেয়ে আপনাআপনি জল গড়িয়ে পড়ছে। আমি ঘন ঘন চোখ মুছতে থাকি। আজহার চাচা একটা দীর্ঘশ্বাস গোপনের বৃথা চেষ্টা করেন। মুখে কিছু বলেননা। চুপচাপ সামনের দিকে একমনে হেঁটে যেতে থাকেন। হয়ত তাঁরও আর কিছুই বলার নেই। ছিলনা কখনো।
দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করে একটু ঘুমিয়ে পড়ি। মনের ওপর দিয়েতো কম ঝড় যাচ্ছেনা। ঢাকার কি অবস্থা জানিনা। সুমি বলেছে সবকিছু সামলে নেবে। ইচ্ছা করেই মোবাইল অফ করে রেখেছি। আমি বিচ্ছিন্নতা চাই। সাবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্নতা। সুমি আর আমার মা না থাকলে আমি হয়ত আত্মহত্যাই করতাম। ওদের মুখ যখন আমার সামনে ভেসে ওঠে তখন বাঁচার বড় সাধ জাগে।
বিকালে আজহার চাচার বাড়ির উঠানে এসে দেখি এক মহিলা চুপচাপ বসে থেকে আকাশের দিকে কেমন অদ্ভূত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। আমকে দেখে আমার দিকে মুখ ফিরিয়ে তাকান। তাঁর চোখের দৃষ্টিতে কেমন যেন একটা ঘোরলাগা ভাব। আমি চমকে উঠি। তাকালেই কেমন যেন গা ছমছম করে উঠে। তাঁকে দেখে মনে হয় নির্জন পাহাড়ের নিঃস্তব্ধতার মত, যাকে কোন শব্দ কখনো স্পর্শ করেনা!
আমি ভালোমত তাঁকে দেখি। ভাবলেশহীন মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি সালাম দেই। তাতে তাঁর কোন প্রতিক্রিয়া হয়না। আমার তাকে ঠিক সুস্থ বলে মনে হয়না। আমি দ্রুত ঘরের ভেতরে চলে আসি।
রাতে খাবার সময় আজহার চাচার কাছে বিস্তারিত শুনি। মনটা অসম্ভব খারাপ হয়ে যায়।
ওনার নাম সুফিয়া। আজহার চাচার বন্ধু হাসমত মানে আমার জন্মদাতা পিতার বোন! মানে আমার ফুপু। রক্তের সম্পর্ক কি আশ্চর্যজনক! তাঁদের কাউকেই আমি কোনদিন দেখেনি। অথচ যাদের কাছে সারাজীবন মানুষ হলাম তারা আমার আপন কেউনা। কোন রক্তের সম্পর্ক নেই। আমার অস্তিত্ত্বের শেকড় এনারাই। অথচ আমরা কেউ কাউকে চিনিনা। কী অদ্ভূত সম্পর্ক। রক্তের সম্পর্ক-ই কি নিজের অস্তিত্ত্বের জন্য একমাত্র অপরিহার্য বিষয়? এসব কঠিন প্রশ্নের কোন সহজ উত্তর পাইনা।
সুফিয়া দেখতে অত্যন্ত সুন্দরী ছিলেন। এলাকার সবাই তার জন্য পাগল। কত ভালো ভালো ঘর থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসতো। কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! তিনি জয়নাল নামের এক বাটপারের প্রেমে পড়ে গেলেন। সবার অমতে রাতের আঁধারে ওর সাথে ঘর ছাড়লেন। জয়নাল তাকে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে এক দালালের কাছে বিক্রি করে দেয়।
সব শুনে আমি শিউরে উঠি। বলি তারপর। চাচা থেমে আবার বলতে শুরু করেন, ওখানে অনেক অত্যাচার সহ্য করে। জয়নাল লাপাত্তা হয়ে যায়। ওকে আর গ্রামে কোনদিন দেখা যায়না। পরে শোনা যায় ওর প্রতিপক্ষের হাতে খুন হয়।
একমাত্র বোনকে হারিয়ে আমার বাবা হাসমত আলীর মাথা খারাপের মত হয়ে যায়। কত জায়গায় যে বোনের খোঁজ করেন তার কোন হিসাব নেই।
অনেকদিন পর কীভাবে কীভাবে যেন সুফিয়া বেগম কাশপুর গ্রামে ফিরে আসেন। কিন্তু ততদিনে তার ভাইয়ের রহস্যময় মৃত্যু হয়েছে। আর মায়ের স্নেহে যে ভাবী তাকে মানুষ করেছেন, মানে আমার গর্ভধারিণী অদেখা মাও আমাকে জন্ম দিতে গিয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন। সবশুনে সুফিয়া বেগম কেমন যেন পাগলের মত হয়ে যান। সারাদিন-সারারাত ভাই আর ভাবীর কবরের পাশে গিয়ে বসে থাকেন। নাওয়া-খাওয়ার কোন ঠিক নেই। তখন তিনি পাঁচ মাসের পোয়াতী। স্ত্রীর কাছে একথা শোনার পর আজহার চাচা ঘাবড়ে যান। এখন তিনি কি করবেন? কার কাছে যাবেন? গ্রামের মানুষ সব শুনলে যে ছিঃছিঃ করবে। সুফিয়ার আপনজন বলতে আর কেউ নেই। বাবা-মা সেই ছোটবেলাতেই মারা যায়। আপন বলতে একমাত্র ভাই আর ভাবী। ওরাই ছিল সুফিয়ার বাবা-মা। সবচাইতে নিরাপদ আশ্রয়স্থল।
চাচী অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেন সুফিয়া ফুপুকে পেটের বাচ্চা নষ্ট করে ফেলতে। কিন্তু সুফিয়া তাঁর সিদ্ধান্তে অনড়। তিনি তাঁর গর্ভের সন্তানকে এই অপূর্ব সুন্দর পৃথিবীর আলো-ছায়া দেখাবেন। হোক পিতৃ-পরিচয়হীন। হোক জারজ। তবু এ সন্তান তার। তার সবচাইতে আদরের ধন।
সুফিয়া কেমন করে ভারতের কোন এক নাম না জানা পতিতালয় থেকে পালিয়ে আসে তা কেউ জানেনা। কেউ তা জানতেও পারেনা। সুফিয়া কাউকে কিছু বলেননা।
কাশপুরে থাকলে নানা কথা হবে এই ভেবে আজহার চাচা সুফিয়া বেগমকে তার স্ত্রীর বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। ওদের অবস্থা ভালো। তিনি তার শ্বশুরকে জানান, সুফিয়া তার মৃত বন্ধুর বিধবা বোন। সুফিয়া ওখানে থাকবে। খরচপাতি যা লাগে সব আজহার চাচাই দেবেন। ওনার শ্বশুর রাজী হন। খুব ভালো মনের মানুষ ছিলেন।
আজহার চাচা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন।
আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত আজহার চাচার কথা শুনতে থাকি। যেন আশ্চর্য কোন রুপকথা শুনছি!
একটু থেমে চাচা আবার বলতে শুরু করেন, কিন্তু বাচ্চাটা বাঁচেনি। সুফিয়া মৃত সন্তান প্রসব করে। এরপর থেকেই ও এমন পাগলের মত হয়ে গেছে। কারও সাথে কথা কয়না, কোন কিছু জিগাইলে উত্তর দেয়না। খালি আকাশের দিকে তাকায় থাকে আর বিড়বিড় কইরা কীসব জানি কয়, তা আমরা কেউই বুঝবার পারিনা।
সেই রাতে আমার চোখে ঘুম আসেনা। শুধু সুফিয়া ফুপুর কথা মনে হতে থাকে। মনে অনেক প্রশ্ন জাগে। কেন তিনি তাঁর গর্ভের অবৈধ সন্তান নষ্ট করতে চাননি। তিনি ভারতের সেই হাবিয়া দোজখ থেকে কীভাবে পালিয়ে এসেছিলেন? আমার তাঁর জন্য প্রচন্ড কষ্ট হতে থাকে। আমার নিজের মায়ের কোন স্মৃতিতো আমার নেই। সুফিয়া ফুপুকেই আমার মায়ের মত মনে হয়। আচ্ছা। ওনার সেই সন্তান বেঁচে থাকলে আজ কত বড় হত? তাকে তিনি কী পরিচয়ে এই নির্মম সমাজে মানুষ করতেন?
আমার বীরাঙ্গনাদের কথা মনে পড়ে। যারা ধর্ষিত হবার পরও অনেকেই নিজের গর্ভের সন্তানকে নষ্ট করতে চাননি। নিজেদের পরিচয়ে বড় করতে চেয়েছেন।
সুমির সাথে একবার ওদের সেই চাইল্ড কেয়ারে গিয়েছিলাম। বিশ-পঁচিশটা ফুটফুটে শিশু একসাথে খেলা করছে, পড়ালেখা করছে। ওদের দেখে কে বলবে ওরা পতিতার সন্তান? ওদের জন্ম বড় জঘন্য বাস্তবতার মাধ্যমে? কে বলবে ওদের কোন পিতৃ-পরিচয় নেই?
উচ্ছল শিশুগুলোকে দেখে আমি মোহিত হয়ে যাই। কী নিস্পাপ! কী পবিত্র! সুমি বলে, কী কেমন লাগছে। আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত বলি, অসাধারণ! সুমি হেসে বলে, এবার বুঝেছো কেন আমি ওদেরকে এত ভালোবাসি?
একটি ছেলেকে দেখে আমি মুগ্ধচোখে তার দিকে তাকিয়ে থাকি। ছেলেটার চোখদুটো যেন কথা বলে। বুদ্ধিদীপ্ত চোখ! আমি আদর করে বলি, কী নাম তোমার? ‘জুয়েল’। তোমার মায়ের নাম কী? ‘মা’। গম্ভীর হয়ে বলে। আমি শুনে চমকে উঠি। পরে আয়া বুঝিয়ে দেয়, ওরা মাকে ‘মা’ নামেই চেনে। ওদের মায়েদের আর কোন পরিচয় নেই।আর কোন আলাদা নাম নেই। আমার মনে ভয় জাগে, এই ফুলের মত ফুটফুটে শিশুরাও একসময় ওদের মায়েদের মতোই নাম-পরিচয়হীনভাবে হারিয়ে যাবে?
দু-একজন মায়ের সাথেও কথা হয়। তারা চাননা তাদের সন্তানেরা এই অভিশপ্ত পথে আসুক। ওদের কথা আমি অবাক হয়ে শুনতে থাকি। কত কষ্ট, কত বেদনা জড়িয়ে আছে ওদের নিষ্পাপ হাসির মাঝে!
ওরা জন্ম নিবন্ধন সনদ পায়না। কারণ ওদের বাবার পরিচয় নেই। শুনে খুব আঘাত পাই মনে। ওরা বেঁচে থাকবে কিন্তু ওদের কোন অস্তিত্ত্ব নেই।
মানুষ হিসেবে যে নুন্যতম অধিকার নিয়ে ওদের বেঁচে থাকার কথা, তা তারা পায়না।
সুফিয়া ফুপুর অনেক আগে হারিয়ে যাওয়া মৃত ছেলেটার কথা ভাবতে ভাবতে আমার সুমিদের ঐ চাইল্ড কেয়ার সেন্টারের বাচ্চাগুলোর কথা মনে পড়ে যায়! সেই রাতে আমার চোখে আর ঘুম আসেনা।
৫।
আমি তখন অফিসের কাজে দেশের বাইরে। দিন পনেরো থাকতে হবে ব্যাংককে। একদিন সুমির একটা মেইল পাই। আজহার চাচা ঢাকায় ফোন করেছিলেন। আমাকে যেতে বলেছেন কাশপুরে। সুফিয়া ফুপু খুব অসুস্থ। একেবারে যায় যায় অবস্থা। মৃত্যুর আগে আমাকে একবার দেখতে চান। শুনে আমার খুব অস্থির লাগে। কিন্তু অফিসের কাজের চাপ। তাই ফেলেও আসতে পারিনা।
দেশে ফিরেই সোজা কাশপুরে চলে যাই। সুমিও আসতে চেয়েছিল। বলেছি পরে নিয়ে যাবো। শেষ পর্যন্ত সুমি আর আমার বিয়ে হয়ে যায়। অনেক ঝামেলা হয় তারপরও। তবে খুব ছোট আয়োজনের মধ্যদিয়ে। সবাই ছিঃছিঃ করতেই বেশী ব্যস্ত ছিল। বিয়ের উৎসব করার মত সময় কই তাদের?
কাশপুরে গিয়ে দেখি আজহার চাচাও শয্যাশায়ী। আমাকে দেখেই আমার হাত ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন। বারবার বলেন, ‘আমাকে মাপ কইরা দাও বাজান। আমারে মাপ কইরা দাও।‘ পাগলের মত প্রলাপ বকতে থাকেন আজহার চাচা।
আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারিনা। উনি এমন করছেন কেন? আমিইতো অপরাধী। ফুপু অসুস্থ জানার পরও আসতে পারিনি।
এখানে এসেই সুফিয়া ফুপুর মৃত্যুর খবর পাই। আজহার চাচার বড়ছেলে হাফিজের কাছে শুনি উনি নাকি আমাকে দেখার জন্য শেষদিকে একেবারে পাগলের মত হয়ে গিয়েছিলেন। মারা যাবার কয়েকদিন আগে তিনি একদম স্বাভাবিক আচরণ করতেন। কথা বলতেন। যে ভাষা তার মুখ থেকে বিশ বছর আগে হারিয়ে গিয়েছিল।
সুফিয়া ফুপুর কবর এইগ্রামে হয়নি। গ্রামের মুরব্বিরা বাঁধা দেয়। কোন ‘পতিতার’ দাফন কাশপুরে করলে এই গ্রাম অপবিত্র হয়ে যাবে। আল্লাহ্র গজব পড়বে গ্রামের মানুষের উপর!
গ্রামের মানুষের নির্মমতার কথা শুনে আমি স্তম্ভিত হয়ে যাই। অনেকক্ষণ আমার মুখে কোন কথা আসেনা।
হাফিজকে বলি, কবর কোথায় দেয়া হয়েছে? হাফিজ চোখ মুছতে মুছতে বলে, ওদের নানা বাড়িতে। পাশের গ্রামে।
অনেক রাতে আজহার চাচার বিছানার পাশে যেয়ে বসি। চাচা আমার হাত ধরে আমার দিকে অপলক চেয়ে থাকেন। একটুপর ঘরের সবাইকে বের হয়ে যেতে বলেন। আমি আর চাচা একা। চাচা আমার দু’হাত জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন। আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারিনা। বারবার বলেন সেই বিকালের মত, ‘বাবা, আমারে তুমি মাপ কইরা দাও। আমারে তুমি মাপ কইরা দাও। তুমি মাপ না করলে সুফিয়া আমারে কুনদিন মাপ করবোনা।‘
সুফিয়া ফুপুর নাম শুনে আমি চমকে উঠি!
চাচা কাঁদতেই থাকেন। তাঁর হাতদুটো থরথর করে কাঁপছে।
চাচা কাঁদতে কাঁদতে কেমন যেন উদভ্রান্তের মত হয়ে যান। জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকেন। আমি ঘাবড়ে যাই। হাফিজকে ডাকব কিনা চিন্তা করছি যখন, চাচা কাঁদতে কাঁদতেই বলতে থাকেন, ‘ বাবা, আমি তোমার সাথে মস্ত বড় একটা অন্যায় করছি। আল্লায়ও আমারে মাপ করবোনা। বাবা তুমি আমারে মাপ কইরা দাও। আমি তোমারে মিথ্যা বলছি। তোমার বাপ-মায়েরে মিথ্যা বলছি। তুমি হাসমতের পোলা না। হাসমতের বউ তোমার মা না। হাসমতের পোলা জন্মের পরেই মারা গেছিল। তুমি আমারে মাপ কইরা দাও বাবা। ও সুফিয়া, বইনরে, তুই আমারে মাপ কইরা দে’।
আমি স্তব্ধ হয়ে চাচার হাত ধরে বসে থাকি।
চাচা আবার বলতে থাকেন, ‘ বাবা, তুমি সুফিয়ার পোলা। সুফিয়ার নাড়ি ছেঁড়া ধন। বাবাগো, সুফিয়া তোমার মা। তোমার জননী। বাবা, তুমি আমারে মাপ কইরা দাও।‘
চাচা কাঁদতেই থাকেন। বাইরে থেকে সবাই দরজায় অনবরত ধাক্কা দিতে থাকে। সেই তীব্র শব্দ বৃদ্ধের কানে পৌঁছায়না।
তিনি বলে যেতেই থাকেন, ‘আমারে মাপ কর বাবা। ও সুফিয়া আমারে মাপ কইরা দে।‘
আমি স্তম্ভিত হয়ে বসে থাকি। চাচার হাতদুটো ধরে জানালা দিয়ে ঘোরলাগা চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি। যেভাবে আমার মা আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন।
৪/১২/২০১০
মন্তব্য
খুব ভালো লাগলো গল্পটা, আপনার লেখার হাত এবং গল্পের বাঁধন দুইই।
মূলত পাঠক, আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ এত বড় গল্পটা সময় নিয়ে পড়ার জন্য এবং মন্তব্য করার জন্য। আপনার ভালো লেগেছে জেনে আমারও খুব ভালো লাগছে। লেখালেখির অনুপ্রেরণা পাচ্ছি।
ভালো থাকবেন।
--শাহেদ সেলিম
গল্পটা খুবই ভালো লাগলো, দারুণ লেখার হাত।
[অফটপিকঃ আপনার 'সুন্দরী আর শিক্ষিত' নিয়ে ফ্যাসিনেশন আছে মনে হয় ;)]
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
আমারো তাই মনে হলো। গল্পে সুন্দরী কথাটা এত বেশিবার এসেছে মনে হলো জগতে মেয়েদের একমাত্র গুন হচ্ছে সুন্দরী হওয়া।
তবে গল্পের নায়িকারা সুন্দরী হতেই পারে যদিও ব্যাপারটা সিনেমা-নাটকের ক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য।
পাগল মন
পাগল মন, এ ব্যাপারটাকে এই গল্পের দূর্বলতা বলতে পারেন
আমি যা বলতে চাইনি তাই প্রকাশ পেয়েছে
আসলে আমার বক্তব্য ছিল, সুন্দর একটা আপেক্ষিক ব্যাপার। মানুষের মনটাই আসল। সে ছেলে হোক আর মেয়ে-ই হোক।
রায়হানের চোখে সুমিকে পরিপূর্ণ বা সার্থকভাবে ফূটিয়ে তুলতে পারিনি। এটাকে এই গল্পের ব্যর্থতা বলতে পারেন
--শাহেদ সেলিম
সজল ভাই, অনেক অনেক ধন্যবাদ সময় নিয়ে পড়ার আর মন্তব্য করার জন্য। আপনার ভালো লেগেছে জেনে আমারও অনেক ভালো লাগছে। লেখাটা সার্থক হয়েছে বলে মনে হচ্ছে
আর অফটপিকের ব্যাপারে বলছি, আসলে আমি চেয়েছিলাম মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্যের চাইতে মনের বিশালতাকে বেশী ফোকাস করতে। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হল তা মনে হয় করতে পারিনাই। এটা আমার ব্যর্থতা আশা করছি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে ব্যাপারটা দেখবেন।
ভালো থাকবেন।
--শাহেদ সেলিম
বেশ বড় গল্প। তবে আমার বেশ ভালোও লেগেছে।
দুই পর্বে আরেকটু বিস্তারিত লিখলে মনে হয় আরো ভালো হতো।
পাগল মন
পাগল মন, আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ সময় নিয়ে পড়ার জন্য আর মন্তব্যের জন্য।
আপনার বেশ ভালো লেগেছে জেনে খুব খুশী হলাম।
"দুই পর্বে আরেকটু বিস্তারিত লিখলে মনে হয় আরো ভালো হতো।" -- সহমত।
বড় গল্পের ক্ষেত্রে এর পর থেকে দুই পর্বে দেয়ার চেষ্টা করবো।
ভালো থাকবেন।
--শাহেদ সেলিম
গল্পটা বেশ লাগলো। মাঝ পথে ধরতে পেরেছিলাম শেষে কী হতে যাচ্ছে। তবে সেটা গল্পের দুর্বলাতা নয় মোটেও। যেমন আনস্টপেবল দেখলাম গতকাল। ড্রায়ভার ছাড়া দ্রুত গতিতে চলমান একটা ট্রেনকে থামানোর ছবি। ছবির শেষে নায়করা ট্রেনটাকে থামাবে, এটা অনুমান করে নেয়া কঠিন ছিল না। কিন্তু যে থ্রিল এবং সাসপেন্স দিয়ে ঘটনাটা সাজানো ছিল, সেটাই ছবির সার্থকতা। ঠিক একই ভাবে আপনার গল্পের সার্থকতা আবেগের অপূর্ব ব্যবহার। মাঝে মাঝে ফ্ল্যাশব্যাকে চলে যাওয়া গল্পের আরেকটি শক্তিশালী দিক মনে হয়েছে (এই স্টাইলটা আমি ব্যক্তিগত ভাবে পছন্দ করি)। সবশেষে গল্পটা যেভাবে শেষ করা হয়েছে সেটাও স্পর্শ করেছে আমাকে। তবে সুমির আগমন গল্পের দৈর্ঘ্য বাড়ালেও খুব একটা কার্যকরী ছিল না।
আরো নূতন নূতন গল্প লিখুন। পড়ার অপেক্ষায় থাকবো।
হোম - টুইটার - ফেইসবুক - উইকিপিডিয়া - এ্যাকাডেমিয়া
টুইটার
নিয়াজ ভাই, আমি মুগ্ধ আপনার মন্তব্য পড়ে! আপনাকে কোটি কোটি ধন্যবাদ
আপনি যে এত বড় গল্পটা পড়েছেন এবং এত চমৎকার করে বিশ্লেষণমূল্ক মন্তব্য করেছেন, এজন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আপনার এই মূল্যবান মতামত আপনার সামনের লেখাগুলোতে অনেক কাজে আসবে।
ভালো থাকবেন। অনেক অনেক ভালো।
--শাহেদ সেলিম
যখন কোন গল্প টানে, তখন সেটা বড় হলেও পড়তে গেলে ছোটই মনে হয়। এই গল্পটা তেমন ছিল।
হোম - টুইটার - ফেইসবুক - উইকিপিডিয়া - এ্যাকাডেমিয়া
টুইটার
--শাহেদ সেলিম
প্রিয় শাহেদ,
আপনার লেখার ধার যে বাড়ছে তা কি আপনি বুঝতে পারছেন? চলুক। আমার তারা দেবার ক্ষমতা নেই। নইলে অবশ্যই তিন তারা দাগাতাম। ভালো থাকবেন ভাই। লেখা চলতে থাকুক। কে জানে একদিন হয়তো অনেক বড় লেখক হবেন। তখন যদি অধমদের ভুলে যান... কাজটা ভালো হবেনা। থ্রেট দিলাম আরকি!
প্রিয় মানিকদা, লেখার ধার যে কিছুটা বেড়েছে তা বেশ বুঝতে পারছি! (দেখতে হবেনা কাদের লেখা এখন বেশি বেশি পড়ি! )
আমার প্রতিটা লেখা আপনি অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন এবং সুচিন্তিত মন্তব্য করেছেন।
আপনাকে কৃতজ্ঞতা জানাবার ভাষা আমার জানা নাই।
কোনদিন লেখক হই আর না হই, আপনাকে ভোলা কোনদিন সম্ভব হবেনা।
ভালো থাকবেন। অনেক অনেক ভালো।
আপনার নূতন কোন লেখা পড়বার অপেক্ষায় থাকলাম
--শাহেদ সেলিম
ভালো লাগলো। খুব ভালো।
আমার ব্যক্তিগত মত হলো এত ব্যপ্তির কাহিনি আসলে উপন্যাসের আয়তন দাবী করে, বেশ অনেক পর্বের উপন্যাস। সুফিয়ার দিনরাত্রি যেমন ধরা পড়লো না, তার যুদ্ধ অচেনা রয়ে গেল, তেমনি পালকপিতা আর পালিকা মায়ের টানাপড়েন আর মনের ঝড় পুরোপুরি বোঝা হয়ে উঠলো না। আজহার চাচার কথাও আরো জানতে ইচ্ছে রয়ে গেল, কেমন ভয়ানক কষ্ট লাগছিলো তার এত এত বছর ধরে সত্যকে লুকিয়ে রাখতে? সুমি আর তার সোশাল ওয়ার্কের কাজ আবার এক সমান্তরাল কাহিনি, যৌনকর্মীদের সন্তানদের সমাজের মেইনস্ট্রীমে স্থান করে দেবার লড়াই, সে তো পুরোপুরি একটা গোটাগুটি উপন্যাসেও ধরার কথা না।
যদি কিছু মনে না করেন, আপনি উপন্যাস লেখার কথা ভেবে দেখুন। আপনার গল্পে উপন্যাসের অঙ্কুর আছে, তাকে মহীরুহ করে তুলুন।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আমিও আপনার সাথে একমত।
গল্পটা পড়ার পরে আরো অনেককিছুই জানার ইচ্ছা জাগলো যেটা উপন্যাস হলে হয়ত মিটতো।
লেখককে ভেবে দেখার জন্য অনুরোধ রইলো।
পাগল মন
পাগল মন, আমিও আপনার সাথে একমত।
এই গল্পটাকে উপন্যাসে রুপ দেয়ার জন্য আমি আমার সর্বোচ্চ সাধনা করব।
এতবার এত ভালো ভালো মন্তব্য করার জন্য আপনাকে বিলিয়ন বিলিয়ন বার ধন্যবাদ
--শাহেদ সেলিম
তুলিরেখা প্রত্যূষা অহনা আপু, প্রথমেই বলি - আপনার নামটা আমার অসম্ভব ভালো লাগে। মনে হয় এই নামটাই একটা কবিতা !
আপনার সাথে আমি পুরোপুরি একমত
আমি এই গল্পটাকে উপন্যাসে রুপ দিব। এই "অঙ্কুর" কে "মহীরুহ" তে পরিণত করতে পারবোনা কিনা জানিনা, তবে আমি আমার মন-প্রাণ উজাড় করে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
আপনাকে অজস্র অজস্র ধন্যবাদ সময় নেয়ে পুরো গল্পটা পড়ার জন্য এবং এত চমৎকার করে মন্তব্য করার জন্য।
ভালো থাকবেন। অনেক ভালো।
--শাহেদ সেলিম
ভাই শাহেদ সেলিম,
গল্প লেখায় অসাধারণ হাত আছে আপনার। সাবলীল বর্ণনায় ও মুক্তোঝরা শব্দস্রোতে মুগ্ধ না হয়ে পারা যাচ্ছে না। সেই সাথে দীর্ঘ কুন্তল নিপাট বেণীর মতো বাঁধুনি তো মন কাড়ছেই। আমি গল্পের পাকা সমঝদার নই। তবে এটুকু অনুমান করতে পারি, আপনি অনেকদূর যাবেন।
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
রোমেল ভাই, আপনিতো আমাকে একেবারে লজ্জায় ফেলে দিলেন! এমন মন্তব্য পাবার পর তার প্রতিউত্তরে কি বলা উচিৎ আমার সত্যিই জানা নাই।
এরকম কোন মন্তব্য পাওয়া কোন লেখকের জন্য তার জীবনের সবচাইতে বড় অর্জন!
আপনাদের মত এত বড় মাপের মানুষদের এরকম স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন আর উৎসাহ না পেলে এই পৃথিবীতে কোন লেখকের বা কোন ভালো লেখার জন্ম হতনা।
ভালো থাকবেন।
-- শাহেদ সেলিম
নতুন মন্তব্য করুন