১।
টার্ম ফাইনালের ঠিক দশ দিন আগে ডিসিশান নিলাম, নাহ, অনেক হয়েছে। ফেসবুকের নেশা আর নয়। অন্তত পরীক্ষার এই ক'টা দিন ফেসবুককে ছেড়ে থাকতে পারবো না? আলবৎ পারবো। তো, হুট করে তো আর এই নেশা ছাড়া যায় না। একটু একটূ করে নেশা কাটাতে হবে। Rome was not built in a day. ঠিক করলাম, প্রথম তিন দিন এক ঘণ্টা পর পর ফেসবুক চেক করবো। পরের তিন দিন দু'ঘণ্টা পর পর। এভাবে ধীরে ধীরে সময় ব্যবধানটা বাড়িয়ে ২৪ ঘণ্টায় নিতে হবে। আমার বন্ধুদের অনেকেই আছে, যারা দিনে একবার মাত্র খোমাখাতা চেক করে। ওরা পারলে আমি পারবো না কেন? তো প্রথম তিন দিন ভালোই চলছিলো। চার দিনের দিন ব্যাটা এল ক্লাসিকো এসে আমার প্রজেক্টের বারোটা বাজিয়ে দিল। বন্ধুদের প্রেডিকশন আর দরকষাকষিতে হোমপেজ ভর্তি হয়ে আছে। আমিই বা পিছিয়ে থাকি কেন? আমিও বিজ্ঞের মত একখানা প্রেডিকশন দিয়ে বসলাম।(বলা বাহুল্য, রেজাল্ট আমার প্রেডিকশনের ধারকাছ দিয়েও যায়নি।) ফলস্বরূপ নোটিফিকেশনের ঝড় বয়ে গেলো ঐদিন খোমাখাতার বাম কোণে। অমুক likes your comment, তমুক commented on a status you commented এর তোড়ে গোল্লায় গেলো পড়াশোনা, মাটি হল 'ফেসবুক বর্জন প্রকল্প'এর প্রথম প্রচেষ্টা। ভাবতেসি, আরেকবার ট্রাই নিয়ে দেখবো নাকি। একবার না পারিলে দেখো শতবার।
২।
আমার মা বার্সিলোনা-রিয়েল মাদ্রিদ ভালো বোঝেন না। বোঝেন মেসি আর রোনাল্ডোর খেলা। এল ক্লাসিকোর রাতে তাই আমরা তিন ভাই যখন গোগ্রাসে রিয়েলের 'রাজকীয় পরাজয়' উপভোগ করছিলাম, তখন তিনি শুধু খানিকটা চোখ গরম করে ভালো মেয়েটির মত ঘুমুতে চলে গেলেন। রাত জেগে খেলা দেখা নিয়ে নিত্যকার ঝাড়ি আর সেদিন দিলেন না। যাই হোক, পরদিন সকালবেলা আম্মু খুব আগ্রহ নিয়ে খেলার রেজাল্ট জানতে চাইলেন। বললাম, বার্সা ৫, রিয়েল ০। আম্মু মনে হয় বিশ্বাস করতে পারলেন না রেজাল্টটা। বললেন, "তোরা না বললি, সবচেয়ে ভালো দুইটা টিমের খেলা দেখতেছিস তোরা? তাহলে রেজাল্টের এই দশা কেনো?" আরো জিজ্ঞেস করলেন, "মেসি কয়টা গোল দিসে?" "একটাও না", এবারো আম্মুকে হতাশ করতে হল। আম্মু আবার মেসির বিরাট ভক্ত। মেসির খেলা দেখতে বসলে আমাদের মোটামুটি সাত খুন মাফ---এই অবস্থা। "তার মানে মেসি খেলে নাই গতকাল?" আম্মুকে আমরা বোঝাই, মেসি খেলসে, দুটো গোলে অ্যাসিস্টও করসে, জাস্ট নিজে কোন গোল দেয় নাই। আম্মু অবিশ্বাসের দ্ষ্টিতে আমাদের দিকে তাকান। বলেন, "এরপর থেকে আর এইসব আজেবাজে ক্লাসিকো দেখে ঘুমটা নষ্ট করিস না।" আমরাও আম্মুর কথায় সায় দিই। এ্যাট লিস্ট, যতদিন বার্সা ঠিক 'এই বার্সা'র মত খেলবে তদ্দিন 'এল ক্লাসিকো' দেখাটা অপশনাল। দেখলেও চলে (বার্সা সাপোর্ট করি না, কিন্তু ওদের খেলা দেখতে ভালই লাগে ), না দেখলেও কোন ক্ষতিব্দ্ধি হবে না। পরের দিন লাইভস্কোরে রেজাল্টটা জেনে নিলেই হল, বার্সা কয় গোলে জিতসে।
৩।
সেদিন খোমাখাতায় এমনিই ঘোরাঘুরি করছিলাম, হঠাৎই কি মনে করে (গৌতমদা'র রিসেন্ট একটা লেখার প্রভাব হয়তো)সাকিবের উইকি পাতাটা দেখে আসার খুব শখ জাগলো। দেখলাম। দেখে ভালো লাগলো। আরো ভালো লাগলো এই দেখে, বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের সবারই উইকিতে প্রোফাইল আছে। আমার প্রবল সন্দেহ ছিল জহুরুল ইসলাম অমি কিংবা সোহরাওয়ার্দী শুভ'র মত প্লেয়ার, যারা দলে নিয়মিত আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকেন, তাদের উইকিতে প্রোফাইল আছে কি না। দেখে আশ্বস্ত হলাম। উইকিতে ঢুকবো, কিন্তু বাংলা উইকিটা চেক করবো না, এটা কি হয়? গেলাম সাকিবের বাংলা উইকি পেজে। সত্যি কথা বলি, গিয়ে খানিকটা লজ্জাই পেলাম। ইংরেজী উইকিতে যেখানে তার এতো সম্দ্ধ একটা প্রোফাইল আছে, সেখানে বাংলা উইকিতে তার দৈর্ঘ্য ইংরেজীরটার এক চতুর্থাংশও নয়। ভাবলাম, ইংরেজীভাষী নয় এমন কারো উইকি পাতা ঘুরে আসবো নাকি। স্যাম্পল হিসেবে ফ্রাঙ্ক রিবেরীর ইংরেজী ও ফ্রেঞ্চ উইকি পাতাটা ঘুরে এলাম। ফ্রেঞ্চ পাতার কলেবর ইংরেজীরটার সমান না হলেও চিন চতুর্থাংশ তো হবেই। বেচারা সাকিব। নিজের মাত্ভাষাতেই ওর কোন সম্দ্ধ প্রোফাইল নেই। এনিওয়ে, আমি ব্যক্তিগতভাবে চেষ্টা করবো, টার্ম ফাইনালের পর এ্যাট লিস্ট বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের উইকি প্রোফাইল সম্দ্ধ করার। আপনাদের সাহায্য পাবো নিশ্চয়ই। আর আপনারাও একটা কিছু টার্গেট করে ফেলুন এর মাঝে।
লিঙ্কঃ
১।সাকিব-আল-হাসান
২।Shakib Al Hasan
৩।জহুরুল ইসলাম অমি
৪।সোহরাওয়ার্দী শুভ
৫।ফ্রাঙ্ক রিবেরী (ইংরেজী উইকি)
৬।ফ্রাঙ্ক রিবেরী (ফ্রেঞ্চ উইকি)
---আশফাক আহমেদ
মন্তব্য
শুভ কামনা রইল।
আমরা সবাই যদি নিজেদের পছন্দের বিষয় নিয়ে উইকিতে লিখি, তাহলে অল্পদিনের মধ্যেই বাংলাউইকি বেশ ভাল একটি অবস্থানে চলে যেত। আজহোক কাল হোক বাংলা উইকি একটি সমৃদ্ধ বিশ্বকোষ হয়ে উঠবেই।
ভাল থাকবেন।
উৎসাহ দেয়ার জন্য ধন্যবাদ বস।
দোস্ত আমি রজার ফেদেরারের টা আর আমার নানাবাড়ি যেই জেলায়, এই দুইটা পেইজ কিঞ্চিৎ আপডেট করছিলাম...
জোস তো। পারলে লিঙ্ক দে।
আর তুই তো ক্রিকেটের খোঁজখবর ভালোই রাখিস। Cricinfo ছাড়া অনলাইনে আর কোথাও আমাদের প্লেয়ারদের বায়োব্ত্তান্ত তথ্য পাওয়া গেল আওয়াজ দিস তো।
হাহাহা পিএল খুব প্রোডাক্টিভ সময়। আমার ব্লগের তিন-চতুর্থাংশ পরীক্ষার সময় লেখা। যা করার এখনই করে নেন, পরীক্ষার পরে আর পারবেন না হাহাহা।
ভালো বলসেন ভাইয়া। পিএল এর সময় রাজ্যের যত আইডিয়া মাথার ভিতির গিজগিজ করতে থাকে।
অঃটঃ ভাইয়া কোন ব্যাচ, জানতে পারি কি?
নামটা পালটে 'এল-ইন্সাল্টো' রাখা উচিৎ, যদ্দিন অন্ততঃ এই ড্রিমটিম অক্ষুণ্ণ থাকবে...
উইকিতে খেলাধূলা সংক্রান্ত ভুক্তিগুলো আপডেটানোর ইচ্ছা অনেক দিনের। এই সচলেই প্রথম দিককার একটা লেখা থেকে ব্রাডম্যানের ভুক্তিটা আপডেট করেছিলাম। এরপর আরো দুয়েকটা খসড়া করে আধা-খেচড়ায় ফেলে রাখা হয়েছে।
...আর পিএল খুবই কাজের সময়। লেখাটেখার কাজ পিএলের সময় খুবই ভালো হয় সচরাচর।
_________________________________________
সেরিওজা
'এল-ইন্সাল্টো'
ভালো বলছিস। এখন থেকে এই নামটাই ইউজ করবো
বুয়েটের সবচেয়ে প্রোডাক্টিভ সময় পিএল। যে কোনো ক্ষেত্রে।
লেখা খুবই ভালো লেগেছে। উইটি।
ধন্যবাদ ভাইয়া।
খুব ভালো লাগল পড়ে। আমরা নিজেরা যদি নিজেদেরকে সমৃদ্ধ না করি তাহলে কীভাবে হবে? আমরা আমাদের গর্বের বিষয়গুলো নিয়েই সবচাইতে বেশি পরিমাণে উদাসীন।
--শাহেদ সেলিম
ভয়াবহ সত্যি কথা
লেখা ভালা পাইছি।
আমারও মনে হয় বুয়েটের পি.এল. সবচেয়ে প্রোডাক্টিভ সময়।
এল ক্লাসিকো দেখতে পারিনি কিন্তু রেজাল্ট শুনে দারুন মর্মাহত হয়েছি।
বাংলা উইকিতে আসলেই লেখা শুরু করা উচিত। দেখি একদিন শুরু করে দিবো ইনশাআল্লাহ।
পাগল মন
ভাইয়া কি রিয়েলের সাপোর্টার?
আসলে, খেলা দেখে আমি নিজেও কিছুটা মর্মাহত। এরকম একপেশে খেলা দেখেতে ভাল্লাগে, বলেন? বার্সা দেখে দেখা আর কি
বাংলা উইকি দেখলে আসলেও লজ্জা লাগে, আমিও এই কাজে নামব, কথা দিলাম।
লিখবো লিখবো করে এদ্দিন কাটিয়ে দিলাম।
পরীক্ষার পর আসলেই লিখবো রে।
খুব সুন্দর একটা পোস্ট।
সাত্যকি
এটাকে টেলিপ্যাথী বলে কিনা জানি না, আমার মন বলতেসিলো 'নতুন ১টি মন্তব্য' টি তোরই করা। লিখলে রেগুলার আপডেট দিস। ফেসবুকে বা সচলে যেখানে পারিস। অন্য কাউকে লিখতে দেখলে নিজের লেখার আগ্রহ বহুগুণে বেড়ে যায়। আর সেটা যদি হয় খুব কাছের কোন বন্ধু তাহলে তো কথাই নেই
নতুন মন্তব্য করুন