আমার ব্যালকনি থেকে নীল
আধুনিক ইজিপ্ট, বিশেষ করে কায়রোর জীবনযাত্রা যেন বৈপরীত্য আর বৈচিত্র্যের এক বিচিত্র প্রদর্শণী যেখানে দুর্দমনীয় হিমবাহের মত ধেয়ে আসা ট্রাফিক, গাড়ির হর্নের চিৎকার আর সহস্র মিনার থেকে ভেসে আসা আযানের ধ্বণি প্রতিমুহূর্তে ঘোষনা করে যাচ্ছে এক ব্যাতিব্যস্ত বর্তমান আর এক অতিজাগতিক ঐতিহ্য।স্কাইস্ক্রেপার, হাইওয়ে, সাবওয়ে, ফ্লাইওভার, ওভারপাস, আন্ডারপাস, হোটেল, ক্যাবারে, বার, নাইটক্লাব, অর্ধনগ্ন বেলি ড্যান্সার, বিজ্ঞাপনের বিলবোর্ড, অপেরা হাউস, সিনেপ্লেক্স, বিলিওনিয়ার পল্লী, রক্ষিতা পল্লী, বাগানবাড়ি, পশ্চিমা পোশাকের জয়জয়কার, নীলনদে রঙবেরঙের নৌকায় তরুন-তরুনীদের হুল্লোড়, স্টিয়ারিং-এ ড্রামের বোল তুলে উচ্চস্বরে পশ্চিমা গান বাজিয়ে ফোর-হুইল-ড্রাইভ হাঁকানো জিন্স-টিশার্ট পরা চক্রা-বক্রা তরুনী বা দলবদ্ধভাবে হার্লি ডেভিডসন/মোটরবাইক হাঁকানো তরুনের দল আধুনিক কায়রোর জীবনযাত্রার এক অনন্য বিচিত্র নকশায় মিলেমিশে যায় বোরখা-আবায়া পরিহিত প্রাচীনপন্থী নরনারী, পুরনো কায়রো বা ব্রিজের তলায় থাকা দরিদ্র মানুষ, পিরামিড-স্ফিংস আর সভ্যতার প্রাচীণতম নিদর্শনসমূহ, গাজী সালাউদ্দিনের দুর্গ আর হযরত উমরের মসজিদ সহ হাজারো নবীন-প্রাচীণ মিনার-মসজিদ আর মুসল্লীর দল, আল-আজহার, মৌলবাদী মুসলিম ব্রাদারহুড, প্রাচীণ কপ্টিক গীর্জা, ইহুদী সিনাগগ, গোলকধাঁধাময় মধ্যযুগীয় বাজার আর ভেসে আসা সরমা-কাবাব-কোপ্তা-শীষা-গাধা-খচ্চর আর গবাদি পশুর সম্মিলিত সুরভির মৌতাতের সাথে।
কায়রো
সেন্ট এ্যান্থনির মঠ: পৃথিবীর প্রাচীণতম খৃষ্টান আশ্রম
কায়রো তারুন্য
কায়রো তারুন্য
আজকের ইজিপ্ট সংসদীয় প্রজাতন্ত্র যেখানে প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন সরকার প্রধান। বিচার ব্যবস্থার ভিত্তি ব্রিটিশ কমন ল আর ইসলামিক নৈতিক/পারিবারিক আইন। তবে প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারক সাহেব মহাপরাক্রমশালী ব্যক্তি – প্রায় যেন একবিংশ শতাব্দীর এক ফারাও। তার বিশাল সব পোস্টার কায়রোর বহু জায়গাতেই দেখা যায়। সেই সাথে দেখা যায় কোকা কোলা, বিভিন্ন সিগারেট ব্র্যান্ড আর দামী পশ্চিমা পন্যের বিলবোর্ড। সেসবের নীচে আবার আর্মার্ড শীল্ডের আড়ালে হেভি মেশিন গান নিয়ে মোড়ে মোড়ে প্যারা-মিলিটারি ফোর্সের নিঃশব্দ চৌকি। এ দিক থেকে অন্তত ইজিপ্ট মনে হয় হাজার বছরেও পাল্টায়নি – শাসন, ব্যাসন আর বিজ্ঞাপন। তখনো ছিল, এখনো আছে। তখন মাথার উপরে ছিলেন ফারাও, এখন প্রেসিডেন্ট। প্রায় একই ব্যাপার।
ফারাও তুতানখামেন
ফারাও হোসনি মুবারক
কেউ কেউ বলে ‘পুলিশ স্টেট’। তবে সাধারন মানুষের দৈনন্দিন জীবনে এর প্রভাব কতটুকু তা আমার মত একজন বসন্তের কোকিল বিদেশীর পক্ষে বাইরে থেকে দেখে বুঝে ওঠা কঠিন। এমনিতে আধুনিক কায়রোর মানুষের মধ্যে উপর থেকে দেখে আমি সহজতা ও প্রানবন্ততা এই উপমহাদেশের মানুষের চেয়ে বরং বেশি অনুভব করেছি। অনেক সময় ভাষা না জানলেও চলে – চোখ আর বডি ল্যাঙ্গুয়েজের দিকে তাকিয়েও অনেক কিছু বোঝা যায়। তবে ভুলও হতে পারে হয়তো।
ইসলাম প্রায় ৯০%-এর ধর্ম। বেশ কয়েকটা জাতীয় ছুটির দিন ইসলাম-ভিত্তিক, তবে খৃষ্টান ও ইহুদী-ধর্মও সরকারিভাবে স্বীকৃত ও গৃহীত। খৃষ্টান ও ফারাওনিক উৎসজাত জাতীয় ছুটির দিনও আছে, অনেকটা আমাদের নববর্ষের মত। মিশর অন্যান্য রক্ষনশীল আরব দেশগুলির তুলনায় নিশ্চিত ভাবেই অনেক লিবারেল, কোন কোন দিক থেকে এমনকি ৩য় বিশ্বের অন্য কিছু প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক দেশের থেকেও আপাতদৃষ্টে লিবারেল মনে হতে পারে। তবে এটা অবশ্যই রাজনৈতিক ভাবে প্রকৃত গণতান্ত্রিক দেশ নয়, এমনকি বাংলাদেশের তুলনাতেও না, যদিও সাংস্কৃতিক ভাবে কোন কোন বিষয়ে হঠাৎ করে লিবারেল মনে হতে পারে। তবে ইদানিং বেশ কয়েক বছর ধরে রক্ষণশীলতা বাড়ছে আবার।
গার্লি কায়রো। নীচের ছবি দ্রষ্টব্য।
গার্লি কায়রো। উপরের ছবি দ্রষ্টব্য।
অন্যদিকে ইজিপ্ট, উপমহাদেশের কোন কোন দেশের তুলনায় অনেক কম ক্যাওটিক; অর্গানাইজড, সুশৃঙ্খল, সাধারনভাবে উন্নততর জীবনযাত্রার মানসম্পন্ন।তবে ধনী আরব দেশগুলির তুলনায় অনেক গরীব অবশ্যই।গরীব দেশই এটা। অথচ আমি যখন ইজিপ্টে, শুনেছিলাম এক ইজিপশীয় টাকায় নাকি ১৭ পিস রুটি (অনেকটা নানের মত) পাওয়া যায়। এটা সত্যি হলে, দেশের সবচেয়ে গরীব লোকটাও না খেয়ে থাকে না (যা-ই খাক, বোধহয় পেট ভরেই খায়), পার্শ্ববর্তী সৌদির মত বিলাসিতা বা নিকটবর্তী আফ্রিকা বা উপমহাদেশের কোন কোন দেশের দরিদ্রদের মত আত্নহত্যার সীমান্তবর্তী নয়। নিম্ন-মধ্যবিত্তদের ইহকালে গাড়ি-বাড়ি থাকে (অন্তত বাংলাদেশ এ্যাম্বেসীর ইজিপ্সহীয় রিসেপশনিস্টকে নিজের গাড়ি চালিয়ে অফিসে আসতে দেখেছি), আর পরকালের জন্য কবরস্থানে আগে থেকে কবর রিজার্ভ করা থাকে।অন্য এক শহরে যাওয়ার সময় এক ড্রাইভার আমাকে মরুভূমির মধ্যে দূরে একটা শহর দেখিয়েছিল যেখানে নাকি ওর কবর রিজার্ভ আছে। পুরো শহরটা প্রাচীণ মিশরীয় অলঙ্করনে বানানো ছোট ছোট একতলা কেবিনের সারি যেন।সারির মাঝখান দিয়ে সরলরৈখিক পাকা রাস্তা বা গলি। স্ট্রীটল্যাম্প ছিল কিনা মনে নাই – চলার পথে একটুখানি দেখা। কেবিনগুলোকে দূর থেকে পিচ্চি একেকটা প্রাসাদ মনে হচ্ছিল সুন্দর অলঙ্করনের জন্য। নির্জন, নীরব, দারুন সাজানো-গোছানো শহর। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, কই কবরস্থানটা কোথায় ? আর শহরটা এত নির্জন কেন ? তার সহাস্য উত্তর – পুরো শহরটাই তো রিজার্ভ কবরস্থান। আর ওরই মধ্যে একটা কেবিন তার অগ্রিম বুক করা সমাধিসৌধ ! আদি ও অকৃত্রিম ফারাওনিক স্টাইল। কি বলবো, আমার মুখ দিয়ে আর একটা কথাও বেরুল না এরপর অনেকক্ষন। মনে পড়ে গেল মাস দু’য়েক আগে মা’কে দাফন করেছি বাবার কবরের মধ্যে।
পুরান কায়রো
নতুন কায়রো
মধ্যবিত্তদের অনেকেরই বিভিন্ন রিসর্ট শহরে নিজস্ব হলিডে/ভ্যাকেশন হোম থাকে। রেড-সী আর মেডিটের্যানিয়ানে এমন ভিলা ও কটেজে গিয়েছি। উচ্চবিত্তদের কথা বাদই দিলাম। পৃথিবীর সর্বপ্রথম পিরামিড ও প্রাচীণতম স্থাপনা - প্রায় পাঁচ হাজার বছর পুরনো সাক্কারা নেক্রোপলিসের বিখ্যাত স্টেপ-পিরামিডের প্রায়-পাদদেশের অসামান্য এগজটিক-সিনিক লোকেশনে অবস্থিত বিশাল বাগানবাড়িতে বিলিওনিয়ারের ব্যক্তিগত পোলো-গ্রাউন্ডে পাকিস্তান থেকে প্লেনে করে নিজ খরচে উড়িয়ে আনা ঘোড়া-টোড়া-কোচ-খেলোয়াড় সমেত আস্ত একটা প্রাইভেট পোলো-দলের সাথে (যার ক্যাপ্টেন সাময়িকভাবে আবার ঐ বিলিওনার নিজেই হলেন) জর্ডান থেকে নিমন্ত্রিত ঐ দেশের এক বন্ধু-যুবরাজের নেতৃত্বে আসা আরেকটা পোলো দলের সাথে প্রাইভেট ফ্রেন্ডলি ম্যাচ দেখলাম।বিভিন্ন দেশ থেকে উড়িয়ে আনা ১ম সারির শেফদের রান্না মহার্ঘ খাদ্যবস্তুতে ভারাক্রান্ত বাগানে সাজানো সিকিমাইল লম্বা টেবিল-সারি থেকে খাবার নিয়ে খেতে খেতে। দামী রঙীণ পানীয়ের কথা বাদই দিলাম। অভুতপূর্ব, অপূর্ব লোকেশন এবং অভিজ্ঞতা। আগে পোলো দেখিনি – তাও আবার রাজা-রাজড়ার খেলা যখন রাজা-রাজড়ারাই খেলছেন ! সামনে নীল আকাশের নীচে বিশাল সবুজ পোলো-গ্রাউন্ডে দলে দলে স্বাস্থ্যবান ঘোড়ার দলের যুদ্ধ, প্রতিদ্বন্দ্বীতা, চিঁহি, ফোঁসফোঁসানি আর তীব্র এ্যকশন আর আরো বেশ দূরে নিস্পাদপ মরুভূমির উঁচু ভূমিতে বিশ্বের প্রাচীণতম ধবল পিরামিডের রাজসিক ধ্যানমগ্ন স্তব্ধতা। জীবন আর মৃত্যু, আধুনিকতা আর প্রাচীণত্ব, মৃত রাজসিকতার ধ্যানমৌন ছায়াতলে জীবন্ত রাজসিকতার এ্যাকশন-প্যাক্ড স্টাইলের দাবড়ানি, মরুভূমি আর শ্যামলিমা – সব পাশাপাশি। এক অদ্ভুত সৌন্দর্য এবং প্রায় অতিন্দ্রীয় কন্ট্রাস্ট।
কায়রোর বাইরে মরুভূমি ভেদ করে যাওয়া রাস্তার ধারে দরিদ্র গ্রাম্য মিশরীয়দেরও দেখেছি। মরুভূমির শুকনো খটখটে বালুসর্বস্ব আবহাওয়ায়, শতবর্ষ তেল-পানি না পড়া জটাজুট মরচেপড়া লোহার-তারের ছোবড়ার মত চুল মাথায় নিয়ে বোঝা-বহনকারী জীর্ণশীর্ণ গ্রাম্য-বালিকাদের দেখে বিলিওনিয়ারের চর্ব্যচোষ্যলেহ্যপেয় আর মাখনমসৃন সুবেশ-সুবেশিনী অতিথিদের কথা মনে পড়ে যায়। কোন অর্ধচেতন অপরাধবোধ ? নাহ্! মানুষে-মানুষে পার্থক্যের মাত্রা আর বাস্তবতা ততদিনে ব্যক্তিগত ভাবেই উপলব্ধি করছি। পিরামিডগুলি দেখতে দেখতে তখন সদ্য প্রিয়জন-বিয়োগজনিত সন্তপ্ত হৃদয়ে কিছু হাস্যকর, কোঁকড়ানো-কাঠকয়লার মত ফসিলে পরিণত হওয়া এককালের ক্ষমতাবান খুনিদের গগনভেদী অহমের সহস্র-বৎসরস্থায়ী আকাশছোঁয়া আত্ন-বিজ্ঞাপনের অসভ্যতার বিপরীতে পৃথিবীর সংখ্যাগরিষ্ঠ সহৃদয় আম-মানুষের (নিজের প্রিয়জনসহ) নিরবধিকাল ধরে নিশ্চিহ্ন চূড়ান্ত অবলুপ্তি আর বিস্মৃতির নির্মম বাস্তবতা বুকের ভেতর গজালের মতই সেঁধিয়ে গেছে। পৃথিবীর কোন শোক বা ভালোবাসার ক্ষমতা নেই এই বাস্তবতা বদলায়। কেউ খামাখাই সহস্র বছরকালের দুরত্ব থেকেও মুখে ঝামা ঘষে, মাথায় বাড়ি মেরে জানিয়ে দিবে তার অস্তিত্ব আর অস্তিত্বের প্রাবল্য, আর কেউ (বাকি সবাই) নিঃশেষে বাতাসে মিলিয়ে যাবে তার জীবনভর প্রেম-ভালোবাসা-স্নেহ-মায়া-মমতা- আর সমস্ত প্রাণোত্তাপ নিয়ে। যেন কোনদিন ছিলই না ! পিরামিডগুলির দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে প্রথম প্রথম এগুলিই ভাবতাম খালি। জানি না আর কোন পিরামিড-দর্শনার্থীর এরকম অনুভূতি হয়েছে কিনা কখনো, তবে এই-ই হচ্ছে আমার প্রথম পিরামিড-অভিজ্ঞতা।
খাফ-রা’র পিরামিড: গিজা, কায়রো
ফারাও ২য় র্যামসেস
Photo courtesy: Amr Soliman (old cairo, girlie cairo).
মন্তব্য
আপনার সাথে আমিও মিশর ঘুরে এলাম। এত ভাল লাগলো! রুপকথার দেশে একবার যেতেই হবে।
আপনার ভাল লাগাতেই আমার সার্থকতা। নিশ্চয়ই যাবেন।
মনমাঝি
মাঝিভাই কি ইস্কুলে খুব বেশি ভগ্নাংশ আর ত্রৈরাশিক কষতেন? অন্তত মরুযাত্রা সিরিজের নম্বর দেখে তো তাইই সন্দেহ হচ্ছে। ভয় লাগে, ইনফিনিট সিরিজের মত ১/২ + ১/৮ + ১/৩২ + ... হতে হতে পূর্ণসংখ্যায় পৌঁছতেই না পারে যদি; এমন একটা সিরিজ পূর্ণতা পাবার আগেই পঞ্চত্বপ্রাপ্তি হলে আক্ষেপ হবে বই কি। লেখার কথা আর কি বলি, অত্যুত্তম হয়েছে।
হাঃ হাঃ দুনিয়ায় কে কবে কোথায় পূর্ণতা পায় ! তার আগেই ঘটে পঞ্চত্বপ্রাপ্তি। আর এতো সামান্য পর্ব/অধ্যায়ের নাম্বারিং। ভয় নাই, পূর্ণ সঙ্খ্যায় পৌঁছুবো শিগগির
পড়ার জন্য ধণ্যবাদ।
মনমাঝি ভাই,
'কায়রো ও লেখা' দুটির জৌলুসই চোখ ধাধিয়ে দিলো। সেলাম! বাইতে থাকুন ভাটিয়ালী সুরে!
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
বেয়ে যাচ্ছি। আশা করি শিগগির আবার ব্লগে ঘাটে ভিড়তে পারব। পড়ার জন্য ধণ্যবাদ।
মনমাঝি
আপনার মরুযাত্রা সিরিজটা ভাল হচ্ছে।
লেখালেখি জারি থাকুক।
পড়ার জন্য ধণ্যবাদ। চেষ্টা করব।
মনমাঝি
অতি চমৎকার পোস্ট ! আপনার সৌজন্যে মীশর দেখে ফেললাম। আরো লিখুন।
ধণ্যবাদ। চেষ্টা করব।
মনমাঝি
মিসর যাওয়ার শখ অনেক দিনে, আপনার লেখা পরে মনে হচ্ছে এখনি চলে যাই ......লেখা ও ছবি দুইই চমত্কার হয়েছে
২য় ছবিটা কি আসল না সিজিআই?
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
পড়তে ভালো লাগছে, চলুক।
সিজিআই-ই হবে। এটা 'কায়রো এক্সপো সিটির' নির্বাচিত ডিজাইন - এ বছর কাজ শুরু হওয়ার কথা। এই দিক থেকে এটা বাস্তব, কাল্পনিক না। আমার একটা বড় সমস্যা হলো, মিশরে থাকার সময় আমি অনেক ছবি তুললেও শহরের ছবি বলতে গেলে তুলিই নাই। সব মনোযোগ কেন্দ্রিভূত ছিল পিরামিড, স্ফিংস, ওবেলিস্ক, মরুভূমি এবং অন্যান্য এগজটিক সব বিষয়ের প্রতি। ছোট্ট মেমোরি কার্ডটার সঙ্কীর্ণ স্পেস এমন কোন দৃশ্য দিয়ে ভরতে বা অপচয় করতে চাই নি তখন, যা দুনিয়ার অন্য বহু দেশেই আছে এবং যা করতে গিয়ে অন্য কোন ইউনিক দৃশ্যের জন্য স্পেসের সঙ্কট হয়ে যায় ক্রিটিকাল মুহুর্তে। তাই গাড়ি-বাড়ি-রাস্তা-ঘাট প্রায় সবই বাদ গেছে। কিন্তু এখন ভ্রমন-কাহিণী লিখতে গিয়ে অসুবিধাটা টের পাচ্ছি। এই অসুবিধা কাটাতে গিয়ে ইন্টারনেটের দ্বারস্থ হয়ে আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম, বেশির ভাগ মানুষই আমি যা করেছি তারাও ঠিক তাই করেছে। কায়রো শহরের আধুনিক স্মার্ট দিকগুলির ছবি প্রায় নেই-ই। বেশির ভাগই আমার মতই পিরামিডসহ বিভিন্ন টুরিস্টিক/এগজটিক লোকেশন বা ইন্টারেস্টের ছবি। সবার আগ্রহ ঐ ধরণের বিষয়েই। পশ্চিমা টুরিস্টদের তোলা শহরের অল্প কিছু ছবি দেখলাম - যেগুলি বেছে বেছে পশ্চাৎপদ দিকগুলিকেই হাইলাইট করে। ঐখানেই তাদের আগ্রহ। আমার উদ্দেশ্য ছিল কায়রোর একটা অপুলেন্ট স্মার্ট দিকের সাথে একটা দরিদ্র পশ্চাৎপদ দিকের কন্ট্রাস্ট করা যেমনটা কিনা আমি নিজে দেখেছি কিন্তু ছবিতে ধরে রাখা হয়নি - কিন্তু স্মার্ট দিকের ছবি পাচ্ছিলাম না। অনেক খুঁজে-পেতে এই ছবিটা পেয়েছি। তবে আপনি বলার আগ পর্যন্ত তাড়াহুড়োতে আমিও খেয়াল করিনি যে এটা সিজিআই হতে পারে তবে ছবিটা কাল্পনিক নয় - কোটি কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মিতব্য একটা বাস্তব প্রকল্প এটা। এই পর্বে ১, ৩, ৯, ১২, ১৩ - নং ছবিগুলিই শুধু আমার তোলা।
হুম...আপনি এখন কৈ?
মনযমুনায়।
@মডুভাইয়েরা,
আমার পোস্টের শুরুতেই ১টা/২টা ছবি আছে, কিন্তু হোমপেজে যেখানে আমার পোস্টের চুম্বকটা দেখা যাচ্ছে সেখানে এগুলি দেখা যাচ্ছে না - যদিও ছবির উপরের ও নীচের টেক্সট কিন্তু ঠিকই দেখা যাচ্ছে। ছবির জায়গায় বিশাল এক শুন্যতা ! আমার আগের সব গুলি পোস্টের বেলাতেও একই ঘটনা। এর কারন কি ? প্রশ্নটা একারনে করছি যে, আমার আগের ধারণা ছিল যে হোম্পেজে ছবি না দেখানোই আপনাদের পলিসি - কিন্তু এখন লক্ষ্য করছি ব্যাপারটা তা না।
আমার পোস্টে এ বিষয়ে কোনো সমস্যা থাকলে আশা করি জানাবেন।
এই ফ্যাসাদটা আমার আগে হত। আমার পোস্টে এই প্রশ্ন করায় একজন (কে মনে নেই) বলেছিলেন, যে রিচ টেক্সট এডিটর ব্যবহার করে ছবি লাগালে ছবি প্রথম পেজে আসে না। বিবিকোড ব্যবহার করে ছবি ঢোকালে আসে। সেটা দিয়ে দেখতে পারেন।
চালাতে থাকুন।
মনমাঝি ভাই, বাইতে থাকুন ভাটিয়ালি সুরে। আমরা সওয়ারী আছি ক-জনা, আমাদের কথা ভুলে যাবেন না যেন!
-কুটুমবাড়ি
সংযোজনঃ
উপরে মুবারকের একটা ছবি তুতানখামেনের স্বর্ননির্মিত কফিনের ছবির সাথে প্রতিতুলনা করে মুবারককে একবিংশ শতাব্দীর এক ফারাও হিসেবে চিহ্নিত করেছিলাম। এই লেখাটা লেখার সময় চিন্তাও করিনি কত দ্রুতই ৭০ বিলিয়ন ডলারের মালিক, পৃথিবীর সবচাইতে ধনাঢ্য এই একবিংশ শতাব্দীর মহাপরাক্রমশালী ফারাওয়ের রাজনৈতিক জীবন, তার তখ্তে-তাউস, সামান্য কয়েকটা চ্যাংড়া 'আযাইরা' ব্লগারের হ্যাঁচকা টানে উলটে যাবে!
নতুন খবর হচ্ছে, আজ বাংলাদেশ সময় ভোর ২-৩টার (১১ ফেব) মধ্যে ফারাও মশাই মিশরীয় টিভিতে ভাষন দেয়ার কথা। ব্যাপক গুজব হচ্ছে, এই ভাষণে উনি যথাশীঘ্র পদত্যাগের কথা ঘোষনা করবেন (অর্থাৎ সেপ্টেম্বরের নির্বাচন পর্যন্ত থেকে যাবার হাঙ্কি-পাঙ্কি ক্যান্সেল)। অর্থাৎ, ফারাও মুবারকের রাজত্ব অবশেষে উপরের ঐ কফিনের ভেতরেই ঢুকতে যাচ্ছে শিগগির।
আমার লেখাটার শিরোনাম ছিল "...এ স্টাডি ইন কনট্রাস্টস"। কিন্তু এই এক জায়গায় অবশ্য দূঃখজনকভাবে কোন কনট্রাস্ট দেখছি না। প্রাচীন ফারাওরা চরম বৈভবের মধ্যে জীবন-যাপন করে মৃত্যুর পরে তাদের লাশের জন্য পর্যন্ত ততোধিক বৈভবের ব্যবস্থা পাক্কা করে যেত পিরামিডের ভেতরে। ৩-৪ হাজার বছর পরে একবিংশ শতাব্দিতে তাদের আধুনিক উত্তরসূরীরও দেখি একই অবস্থা। কোন পার্থক্য নেই। মুবারকের রাজদুর্নৈতিক জীবন হয়তো শেষ হবে আজ বা ক'দিন পরে - কিন্তু ব্যাটা তারপরেও দুনিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিই থেকে যাবে। নামে না হলেও ধনে ফারাওই থাকবে। মরার পরেও হয়তো তুতানখামেনের মতই একটা সলিড গোল্ডের কফিনেই তার হাড্ডি-গুড্ডি ঢুকবে। এইখানে একটা কনট্রাস্ট হইলে খুব ভালো হতো। তবু ভালো, তখনকার ফারাওদের জনগন নামাতে পারে নাই, এখন নামাচ্ছে। তাও আবার 'আযাইরা' ব্লগারদের নেতৃত্বে ! আর এইসব ফারাওদের উত্তরাধুনিক উচ্ছিষ্টভোগী আর পেটোয়াবাহিনীকে কায়রোর রাস্তায় আগ্পাস্তলা ডিকন্সট্রাক্ট করে কাউন্টার-ন্যারেটিভ কারে বলে তা মর্মে-মর্মে বুঝিয়ে দিচ্ছে ব্লগ-জেনারেশন আমজনতা।
উপরের লেখায় এক জাগায় লিখেছিলাম --
"কেউ কেউ বলে ‘পুলিশ স্টেট’। তবে সাধারন মানুষের দৈনন্দিন জীবনে এর প্রভাব কতটুকু তা আমার মত একজন বসন্তের কোকিল বিদেশীর পক্ষে বাইরে থেকে দেখে বুঝে ওঠা কঠিন। এমনিতে আধুনিক কায়রোর মানুষের মধ্যে উপর থেকে দেখে আমি সহজতা ও প্রানবন্ততা এই উপমহাদেশের মানুষের চেয়ে বরং বেশি অনুভব করেছি। অনেক সময় ভাষা না জানলেও চলে – চোখ আর বডি ল্যাঙ্গুয়েজের দিকে তাকিয়েও অনেক কিছু বোঝা যায়। তবে ভুলও হতে পারে হয়তো।"
আসলেই কত কঠিন, কত ভুল - এখন বুঝতে পারছি (অবশ্য সাম্প্রতিক ঘটনাবলী ২ মাস আগে এমনকি মিশরীয়রাও কল্পনা করতে পেরেছিল কিনা আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে)। আমি "সহজতা" আর "প্রানবন্ততা" দেখেছি। অথচ, কি ভীষন "অসহজতা", কি প্রচন্ড অপ্রাপ্তিবোধ, ক্ষোভ, ক্রোধ আর হতাশা তাদের মধ্যে লুকিয়ে ছিল তা দেখতে পাইনি। বসন্তের কোকিল টুরিস্টদের নিয়ে এই এক সমস্যা।
........................................................
এইটুকু লেখার পর বিবিসিতে দেখতে পাচ্ছি মুবারকের ভাষন শুরু হয়ে গেছে..... এবং না, ব্যাটা ছ্যাঁচড়া বাটপার এখনই যাচ্ছে না ! ঐ সেপ্টেম্বরের পোঁ ধরেই বসে আছে এখনো।
মনমাঝি
নতুন মন্তব্য করুন