এনসাইক্লেপিডিয়া ব্রিটানিকা---সেই বিশাল বড় ভারী ভারী বইগুলো, মোটা বাদামী রংয়ের বাঁধাই করা, সারি সারি করে সাজানো বইগুলো----কারো মনে আছে নাকি? আহা নস্টালজিক হয়ে গেলাম........উইকিপিডিয়ার তখনো নামও শোনে নাই কেউ, শুনবে কিভাবে, তার জন্মই হয় নাই! কিছুদিন পর যখন মাইক্রোসফট তার এনকার্টা এনসাইক্লোপেডিয়া বাইর করল, ৭ সিডির একটা কালেকশন, সেইটা কিনার পর যেইরকম একটা "কিং অব দা ওয়ার্ল্ড" ফিলিংস আসছিলো, ঈমানে বলতেছি, সেইটা মনে হয় এই জীবনে আর সম্ভব না!
যাই হউক, আজ থেকে অনেক বছর আগে---তখনো এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার যুগ---এবং আমি তখন এক সদ্য কিশোর--- ব্রিটিশ কাউন্সিলে বসে কেন যেন এমআইটির আর্টিকেলটা পড়তেছি। আমেরিকার এই কিংবদন্তীর বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে তখনো বেশি কিছু জানতামনা। কিন্তু ঐ আর্টিকেলের একটা তথ্য আমার তখনকার শিশু মনে প্রবল দাগ কেটে গেল----এমআইটির নাকি নিজস্ব একটা নিউক্লিয়ার রিয়্যাকটর আছে!
সেই শিশু মনে আমি কল্পনায় অনেক কিছু ভেবে ফেললাম---এমআইটি ইচ্ছা করলেই নিউক্লিয়ার বোমা তৈরী করে ফেলতে পারে! সেটা দিয়ে শক্তি তৈরী করতে পারে, তার মানে তো তারা ইচ্ছা করলে নিজেদের স্বাধীন ঘোষণা দিয়ে ফেলতে পারে!! এবং এরকম আরো অনেক কিছু। আস্তে আস্তে বড় হওয়ার পর সেরকম করে আর ভাবিনা, (হায় কেন যে ভাবিনা!) কিন্তু সেই যে এমআইটির প্রতি আমার দূর্বলতা তৈরী হয়ে গেল, সেটা আজো রয়ে গেছে।
মজার ব্যাপার হইল, আমেরিকায় যখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এপ্লাই করলাম, তার মধ্যে ২ টায় স্কলারশীপ পেলামম, এবং এগুলো নিয়ে ভালমত একটু পড়াশোনা করতেই বেরিয়ে এল---এদের মধ্যে একটার নিজস্ব নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টর আছে! আমি মনে মনে মুচকি হাসলাম। বলেন তো, শেষ পর্যন্ত আমি কোনটায় গেলাম?
যাই হোক, আমার এই এমআইটি দূর্বলতা আরো শক্ত হয় তাদের বিভিন্ন রিসার্চের খবর পড়ে। কেন যেন মনে হত, তাদের সব বড় বড় কাজের মধ্যে একটা "অডেসিটি" লুকিয়ে থাকত, চমকে দেবার মত, মাথা খারাপ করে দেওয়ার মত সব কাজ হত সেখানে। তাদের অনেক রিসার্চই যে বেশ ইউনিক, তাতে কোন সন্দেহ নাই, আর পপুলার সায়েন্স ম্যাগাজিনগুলোতেও তাদের খবরগুলো বেশ গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হত। কম্পিউটার সায়েন্সে পড়াশোনা আর আগ্রহের কারণে কিংবদন্তী রিচার্ড স্টলম্যানের কথা পড়েছিলাম, GNU আর ফ্রী সফটওয়্যার নিয়ে তার অবদান অপরিসীম। আদি ও অকৃত্রিম এই হ্যাকার তার জীবনের ২০ টা বছর কাটিয়েছেন এমআইটির CSAIL ল্যাবে ঘুমিয়ে, তার কোন আলাদা বাসাও ছিলনা! ফ্রী সফটওয়্যারের জন্য আলাদা কপিরাইট রুল লাগবে, বানালেন, নাম দিলেন কী? কপিলেফট!! আর হ্যাকিং আর কম্পুটিং এর জগতে এমআইটি এআই ল্যাবের কথা আলাদা পোস্টে বলব। ছোট্ট একটা উদাহরণ দেই। ৬০ এর দশকে, তাদের ল্যাবের মেশিনগুলি ছিল পিডিপি-১০ সিরিজের, কিন্তু এর সাথে আসা সফটওয়্যার তারা ব্যাবহার করতেননা, তার জন্য তারা নিজেরাই অপারেটিং সিস্টেম তৈরী করে নিয়েছিলেন---আর সেটা ছিল আগের একটা অপারেটিং সিস্টেমের উত্তরসুরি। তো, আগের অপারেটিং সিস্টেমের নাম "কম্প্যাটিবল টাইম-শেয়ারিং সিস্টেম" হলে, বলেনতো, পরেরটার নাম কী হতে পারে?? হাঁ, ঠিকই ধরেছেন ভাইসব, ওটার নাম দেয়া হয় "ইনকমপ্যাটিবল টাইম শেয়ারিংসিস্টেম"!! নামটা কিন্তু স্রেফ ফাজলেমি/ডেঁপোমি করেই দেয়া! বলেন তো, এইগুলা শুনলে কে না ফ্যানটাসীতে ভোগে, কার না জোয়ান রক্ত গরম হয়?
যাক, এমআইটির আরেকটা সাম্প্রতিক খবর দিয়ে শেষ করি। ঠিক সাম্প্রতিক না, বছর পাঁচেক আগের, কিন্তু সচলায়তনে এইটা নিয়ে পোস্ট খুঁজে পাই নাই, তাই ভাবলাম দিয়েই দেই।
যারা একাডেমিক গবেষণায় নিয়োজিত, তারা প্রায়ই মেইল পান বিভিন্ন কনফারেন্স থেকে, পেপার জমা দেয়ার অহ্বান জানিয়ে। এর সবগুলাই যে খুব ভাল মানের, তা কিন্তু না। তো এরকমই একটা কনফারেন্স হল WMSCI, যেটা কিনা ১৯৯৫ সাল থেকে হয়ে আসছে। এই কনফারেন্সের মান নিয়ে সন্দেহ থেকে ৩ তরুণ এমআইটি গ্রাড স্টুডেন্ট তৈরী করে ফেলেন এক সফটওয়্যার, যেটা কিনা নিজে থেকেই রিসার্চ পেপার তৈরী করে, একেবারে বিভিন্ন ধরনের গ্রাফ, ফিগার আর রেফারেন্স সহ! বলাবাহুল্য, যে পেপারটা তৈরী হয়, সেটার আগাগোড়া কোন অর্থই নেই, কিন্তু খুব অলস চোখে দেখলে, এটাকে একটা পুরোদস্তুর রিসার্চ পেপারই মনে হবে! শুধুমাত্র একটা বাটন চেপে তৈরী করা সেই পেপার তারা পাঠায় WMSCI কনফারেন্সে, এবং সেটা এক্সেপ্টও হয়ে যায়, এবং তাঁদেরকে ঐ কনফারেন্সে কথা বলার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়!
এরপর তারা তাদের ওয়েবসাইটে বোমাটা ফাটান, যে এটা আগাগোড়াই একটা হিজিবিজি অর্থহীন পেপার, একটা সফটওয়্যার দিয়ে তৈরী করা। ইন্টারনেটে বিশাল আলোড়ন তোলে ঘটনাটা, আর কনফারেন্সটা পরিণত হয় হাসির পাত্রে। ঐ ৩ জনের বক্তব্যের আমন্ত্রণ শেষ পর্যন্ত বাতিল করা হয়, তবু তারা ঐ কনফারেন্সে গিয়ে পাশের একটা রুম ভাড়া করে তাদের 'প্রেজেন্টেশন' দিয়ে আসেন
সেই সফটওয়্যারটা এখনো অনলাইনে আছে, আপনি চাইলে নিজের নামেও একটা পেপার রেডী করে ফেলতে পারেন! কে বলে একাডেমিক রিসার্চ কঠিন কাজ?
-দিফিও
(furiousfive.f5 (at) gmail.com)
মন্তব্য
হে হে আপনি লেট, আমার ভাগ্নি ২ বছর বয়সেই পাবলিশ করে ফেলসে...ওর পেপারটা পাবেন এইখানে
ভাবতেছি, আমার পেপারে আপনার ভাগ্নির পেপারটাকে রেফার করব
হে হে আগে জানতাম না ব্যাপারটা। খাড়ান, আমিও বাইর করতেছি। কয়টা লাগবে কন খালি।
অনন্ত
আমিও একটা কাগজ খাড়া করে ফেললাম! অসাধারন! হে হে হে http://apps.pdos.lcs.mit.edu/scicache/991/scimakelatex.67310.lkjdhlkgj.lvkjnlb.lfknarfhgelagh.jskdgyfasuy.dkfgh.html
তবে প্রমিজড লিখাটা তাড়াতারি হলে ভাল হয়!
--- থাবা বাবা!
ধন্যবাদ। হ্যাকিং ইতিহাস নিয়ে একটা পোস্ট লেখার ইচ্ছা আছে, সময় পেলেই।
মজার পোস্ট, দেইখেন কাজী মামুন আবার না তেড়েফুঁড়ে আসে আপনার ঘাড়ে কোপ দিতে, জানেন না MIT ইন্সটিটিউট, বিশ্ববিদ্যালয় না , এরাম বিনোদন সচল থিক্কা বিদায় নেওয়ায় মনে অনেক কোষ্ঠ্য পাইছি!
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
ধন্যবাদ এই ইন্সটিউট আর বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যাঞ্জামটা মাঝে মধ্যেই উঠতে দেখি, যেটা অন্তত আমেরিকায় একেবারেই অর্থহীন একটা বিতর্ক। সচলেই বা আর কোথাও পড়েছিলাম, আমেরিকা ফেরত এক পাত্রের ব্যাপারে তাঁর হবু শ্বশুর খুবই নাখোশ ছিলেন, কারণ ছেলে নাকি "পলিটেকনিক পাশ"! (ভার্জিনিয়া টেকের পুরো নামের মধ্যে পলিটেকনিক কথাটা আছে)। বুঝেন অবস্থা। আজ থেকে ২৫ বছর আগে হলে ঠিক ছিল, এখন আর এইটার কোন মানেই নাই।
লেখা মজারু হয়েছে।
এমন আরো আসতে থাকুক।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ধন্যবাদ পড়ার জন্য আর উৎসাহ দেওয়ার জন্য
বেশ মজারু লেখা।
এমআইটি আসলেই বস জায়গা। এখনো যদি শুনি কেউ এমআইটিতে পড়ছে কিংবা পড়েছে, তাকে হিংসা হয়।
দাড়ান, আমিও একটা পেপার লিখুম। তার পরে পাঠায়ে দেখতে হবে কী হয়।
________________________________________________
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।
------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।
ধন্যবাদ! এই সফটওয়্যারের "সাফল্য-গাঁথা"য় কিন্তু আরো কিছু কনফারেন্স আছে। ইরানের শরীফ ইউনিভার্সিটির কিছু পোলাপাইনও এটা দিয়ে লেখা পেপার এক্সেপ্ট করিয়েছে
মজা লাগলো ভাইয়া। তবে পেপার পাব্লিশের তরিকা আগে জানাবেন না! একটাও পেপার নেই, বলে প্রায়ই মরমে মরি। লেখা চলুক।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
এমাইটির সৌজন্যে আজ থেকে ঘরে ঘরে সবার ভাগ্নির পেপার হবে
মজা পেলাম। এরকম আরো লেখা আছে নাকি?
ধন্যবাদ। এরকম আরো লেখা বলতে কি আমার আরো পোস্টের কথা বোঝালেন? সচলায়তনে খুব বেশী লেখিনি, এটা ৩য় পোস্ট। আগের ২টা পোস্ট এখানে প্লাগ করে দিলাম
মাফিয়া---যেকোন আড্ডায় একটা উপভোগ্য খেলা
অবশেষে বিরিয়ানি রেসিপি: পর্ব দুই!
আরে! আপনেই সেই বিরিয়ানির লেখক! আমি তো আপনার রেসিপি ফলো করে লিনসপিং এ বিখ্যাত বিরিয়ানি বাবুর্চি হয়ে গেছি।
এই পর্যন্ত বাংলাদেশি, সুইডিশ, ইন্ডিয়ান, আজারবাইজান বন্ধুদের এই কাচ্চি বিরিয়ানি খাওয়াইয়া মুগ্ধ করেছি। B-)
আপনার এই লেখাটাও খুব সুন্দর হয়েছে।
কমল
আহা জেনে খুব খুশী হলাম ধন্যবাদ!
বাংলাদেশ ম্যাথ অলিম্পিয়াড টিমের নাজিয়া এ বছর ফুল ফান্ড নিয়ে এম.আই.টি. তে আন্ডারগ্র্যাডে ভর্তি হয়েছে। এর আগে ম্যাথ অলিম্পিয়াড টিমের তানভীর ফুল ফান্ড নিয়ে ক্যালটেকে আন্ডারগ্র্যাডে ভর্তি হয়েছে।
চমৎকার!
আমিও একখানা লিখে ফেললাম পেপার।
সেরকম মজাক পাইলাম......... :D
অভিনন্দন
হা হা হা..
চমৎকার একটা জিনিস জানলাম।
কাকস্য পরিবেদনা
ধন্যবাদ:)
কাচ্চি বিরিয়ানি তৈরীর একটা সফট-ওয়্যার বানালে তবে বুঝি এদের ক্যালি।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
হাহাহা, এইটা ভাল বলেছেন!
এইটা লাইক না করে থাকা গেল না।
এইধরণের মজা+বিজ্ঞান প্রবন্ধ আমি লিখতেও ভালবাসি, পড়তেও খুব ভালবাসি।
হ, পেপার জেনারেটরের খবর জান্তেম। সোকাল অ্যাফেয়ার ইত্যাদি কেচ্ছা নিয়ে একসময় মনের আনন্দে অনেক পড়েছিলাম। এইসব পেপার ছাপানোর নিয়মকানুন আমি বিশেষ ভালো পাই না।
চলে আসেন, এমআইটি দেখিয়ে দেব খন। তবে হাঁড়ির খবর দিতে পারব না, ছাত্র নই তো।
ধন্যবাদ! আর যেভাবে লোভ দেখাচ্ছেন, এসে পড়তেও পারি আপনার পোস্টে ব্লু রিজ পার্কওয়ের ছবির কথা বলছিলেন, কিন্তু আমার সম্বল ৩ বছর বয়সী একটা পয়েন্ট এন্ড শুট, আর ছবি তোলার হাতটিও সেই পয়েন্ট-এন্ড-শুট গোত্রের
http://hacks.mit.edu/
এইটা দেইখা বহোত কড়া ফিলিংস পাইসিলাম ।
-মেফিস্টো
দারুণ লিংক দিলেন তো! আগে দেখিনি, এখন ঘেঁটে দেখছি, আসলেই "কড়া ফিলিংস" দেয়ার মত
কই জানি শুনছিলাম, মাইটি তে অ্যাভারেজ 'বি' জিপিএ ধইরা রাখতে হইলে বলে মাইনশের দিনে ১২-১৪ ঘন্টা খাটাখাটনি করন লাগে। বেশী খাটাখাটনি কি তাইলে বুদ্ধিমান লোকজনের সেন্স অব হিউমার এর পাওয়ার বাড়ায়া দেয় নাকি? এই দুইটার মধ্যে সংযোগ দেখাইবার পারলে অন্তত একটা মাস্টার্স ডিগ্রি নিশ্চিত।
-মেফিস্টো
হা হা হা...এতো দেখি পুরাই কষ্কী মমিন!!
হ!
লেখাটা দারুন! মজা পেয়েছি।
সুপার ভাইজার স্যাররে পেপার লেখার তরিকা দেখায়ে মজা লইলাম আজকে!
ধন্যবাদ!
অসাধারন অসাধারন অসাধারন রে ভাই, কেমনে যে আপনাকে ধন্যবাদ দিমু বুঝতে পারতাসি না
নতুন মন্তব্য করুন