১
তিন জন একটা রিক্সায় উঠলাম, পুলিশে ধরবে নাতো! না মনে হয়, এই জুন মাসের ভর দুপুরে কোন পুলিশের খেয়ে দেয়ে কাজ নাই যে ডিউটি দিয়ে বেড়াবে। ভাগ্য ভাল বোলে তাওতো একটা রিকশা জুটল কপালে। চালক এবং আরোহীরা কাছাকাছি বয়সেরই হবে। ছেলেটা টানছেও জোরসে, একটু বেশিই জোরে। সামনের মোড়ে বামে যেতে হবে, গতি না কমালে খবর আছে। তার উপরে ছোকরা মনে হয় এই কম জায়গার মধ্যেই সামনের রিকশাকে ওভারটেক করার ধান্ধায় আছে। "ওই, আরও সাবধানে টান্"।
সাবধান বাণীর পরোয়া না করেই, রিক্সার গতি আরেকটু বেড়েই গেলো। গায়ের জোরে ওভারটেকটা শেষ করেই এনেছিল, কিন্তু শেষ মুহূর্তে কীভাবে গতিটা যেন আর ধরে রাখা গেলনা। ছোট্ট একটা টোকা বিশাল অ্যাকসিডেন্টে রূপ নেওয়ার আগেই দুই রিকশাচালক সামলে নিলো। পিছন থেকে রাগী ভাষায় কিছু শোনা গেলো। একটা অ্যাকসিডেন্ট, তাও বড় কিছু হয়নি, এতো চিল্লানোর কি হোল? এগিয়ে গেলাম ওই রিকশার কাছে। চালক আমার দিকেই তাকিয়ে ছিল। চাপা গলায় কয়েকটা মাত্র শব্দ বললাম, "চোখ নামা। চোখ নামা বান্দির বাচ্চা"।
২
খুব যত্ন করে নিজের সিঁথিতে সিঁদুর দিল মিতা, মা আর মাসীদেরও দিয়ে দিল। বিয়ের পর এই প্রথম সবার একসাথে হওয়া। আজ ওদের নিয়ে দোকানে টুকটাক কিনতে যাবে। বাসা থেকে দোকান হাঁটাপথ, মিতা প্রায়ই আসে। অবশ্য মায়ের জোরাজুরিতে এখন রিকশা নিতেই হোল। কাপড়ের দোকানগুলোর সামনে রিকশা ছেড়ে দিল। কাছেই কয়েকজন তরুণের একটা দল বসা, হাল্কা হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে। মিতাদের উদ্দেশ্য করে কিছু বলল মনে হয়, ঠিক বোঝা গেলো না। আবার বলল, এবার একটু জোরে। "মালু আসছে"। হাসির শব্দ আরও বাড়ল। অন্য দিক থেকেও কারা যেন বলে উঠলো, "মালু আসছে, বসতে দে"।
-রু
মন্তব্য
নামটা কেন 'অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ' সেটা একটা টীকা হিশাবে দিব ভেবেছিলাম। কাজের সময় ভুলে গেছি। ঘটনা দুইটা আমার নিজের দেখা (১) অথবা থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বারে শোনা (২)। বিভিন্ন টক শো বা কাগজে দেখতে/শুনতে পাই যে বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ। এই কথাটা শুনলেই আমার এই ঘটনা দুইটা খুব মনে পড়ে।
গল্পের ভিত সত্যি, বর্ণনা করেছি নিজের মত করে।
(১) আর (২) এভাবে ছেড়ে না দিয়ে একসুতো গেঁথে দিলে ভালো হত।
আর অসাম্প্রদায়িক?? কিন্তু কীভাবে?? ব্যাপারটা ব্যবহারিক ভাবেই অনেক ক্ষেত্রেই সত্য না। আর তাত্ত্বিকভাবে সত্য হবার শেষ সম্ভাবনাটাও সম্ভাবনাময় সরকার খুবু সম্ভবত মুছেই দিচ্ছে।
_____________________________________
দেবাশিস মুখার্জি
[db.mukherjee.blog@gmail.com]
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
'অসাম্প্রদায়িক' শব্দটা বলে অনেক লাফালাফি করা হয়, কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার উদাহরণগুলোকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন ঘটনার মত করে উপস্থাপন করা হয়। নিজেদের ভুল চিহ্নিত করতে না পারলে শুধরানোর প্রশ্নই আসে না।
ঐ যে মালু আসছে- এই কথাটা আমার মাকে উদ্দেশ্য করে একবার বলতে শুনেছিলাম। তখন মনে হয় আমি ক্লাস সিক্স বা সেভেনে পড়তাম। তারপর থেকে মা খুবই হালকা করে সিঁদুর দিতেন। আর সোনালী রাংতা দিয়ে প্যাঁচানো শাখা পরা শুরু করেন এরপর থেকে।
মিতা একটা কাল্পনিক চরিত্রের নাম। এর পিছনের মানুষটিকে আমি 'আন্টি' বা 'টিনার মা আন্টি' বলে রেফার করতাম। ঢাকার মোহাম্মাদপুরে শেরশাসুরী রোডের উপর একটা মার্কেট ছিল। নিয়মিত যাতায়াতের কারণে মানুষগুলোর মুখও চেনা ছিল। আসলে যে চিনতে পারি নাই সেটা এই ঘটনা শোনার পড়ে বুঝেছি।
বিষয়টি সত্যি দুঃখজনক।
@লেখকঃ প্রথম ঘটনাটা ঠিক বুঝতে পারলাম না।
রিক্সাচালক কি হিন্দু ধর্মালম্বী ছিলেন?
এখন আসি আপনার পরের ঘটনায়। এজিনিসগুলো বন্ধ হবে না যদ্দিন পরিবার থেকে না শিখানো হয়। অনেক তথাকথিত শিক্ষিত আধুনিক মানুষ এখনও এসব ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি।
অনেক ছোট থাকতে অনেককে বলতে শুনতাম লাল পিঁপড়া হিন্দু কারণ এরা কামড়ায়, কাল পিঁপড়া মুসলমান কারণ এরা কামড়ায় না।
আমি খুব ভাগ্যবান কারণ আমার বাবা মা দুইজনে খুব একটা শিক্ষিত না হলেও সব সময় শিক্ষা দিয়েছেন অসাম্প্রদায়িক।
ধন্যবাদ, ভাল থাকবেন
প্রথম ঘটনার সময় আমি দ্বিতীয় রিক্সার যাত্রী ছিলাম। প্রায় ১৫-১৬ বছর আগের কথা, তখন আমি কলেজে পড়ি। যেই ছেলেটা এই মন্তব্য করেছিল সে ২০-২২ বছরের মত কিছু একটা হবে। ছেলেটার চেহারা আমার মনে নেই, কিন্তু এক্সপ্রেশনটা মনে আছে। খুব শান্ত একটা মুখ, শুধু ঠোঁটের কোনা দুটো নিচের দিকে বাঁকানো।
সেদিন শুধুমাত্র সামাজিক অবস্থানের কারণে একজনকে আমি ছোট হতে দেখলাম। হাত-পা না চালায়, শুধু কথা দিয়ে একজনকে হেয় বা অবজ্ঞা করাটাও যে সোশ্যাল এবিউয সেটা আমাদের বুঝতে হবে। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ। মন্তব্য কেন যেন পোস্ট হচ্ছে না। আবার লিখছি, এবার একটু ছোট করে।
প্রথম ঘটনায় ধর্মটা মুখ্য নয়, সামাজিক অবস্থানের ভিত্তিতে আমাদের প্রতিনিয়ত অপমানিত হতে হয়। হাত-পা না চালায়ও শুধু কয়েকটা কথা দিয়ে কাউকে হেয় বা অবজ্ঞা করাটাও একটা সামাজিক অপরাধ।
-রু
ছোটরা সাধারণতঃ পরিবারের বড়দের আচরণ অনুসরন করে এবং তা পরে তাদের নিজের ব্যবহারে আত্মীকৃত হয়ে যায়। যে পরিবার তথাকথিত ছোট পেশার মানুষের সাথে অমানবিক আচরণ করে বা হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে টিজ করে, সেই পরিবারের অনুজরাও এটা শেখে। এখানে পারিবারিক শিক্ষার বিকল্প কিছু নেই।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকেও এগুলো গর্হিত অপরাধ। পৃথিবীর সব ধর্মেই সাম্যের বানী লেখা আছে। মানুষের মাঝে ভেদাভেদ সৃষ্টি করা পক্ষান্তরে ধর্মকেই অবজ্ঞা করা। আর ইসলামে ক্ষমার অযোগ্য যে অপরাধগুলো আছে তার একটা হচ্ছে কাউকে 'মালাউন' বলে গালি দেওয়া। আমার ধর্মীয় জ্ঞ্যান নেই বললেই চলে তবে একথা শুনেছি একাধিক আলেম-উলামার কাছ থেকে।
======================================
অন্ধকারের উৎস থেকে উৎসারিত আলো, সেইতো তোমার আলো।
সকল দ্বন্ধ বিরোধ মাঝে জাগ্রত যে ভালো, সেইতো তোমার ভালো।।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
আপনার সাথে একমত। আমি অনেক 'উচ্চশিক্ষিত' মানুষকে দেখেছি যারা আড়ালে আবডালে অমুসলিম সম্প্রদায়কে টিজ করে কথা বলে। পালটা মন্তব্য করলে বলে এগুলো শুধুই মজা করে বলা। মজাটা যে কথায় লুকিয়ে আছে আমি আর খুঁজে পাইনা।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
আমি পূর্ণ উচ্চারণে মালাউন কয়েকবারই শুনেছি। তবে আমি অবশ্য দুঃখ পেয়ে মাথা নীচু করে চলে আসিনি একবার ও। অন্তত তিনবারের কথা মনে আছে চাপা আর হাতের জোরে কথা গিলতে বাধ্য করেছি।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
শুনে ভাল লাগলো যে যেভাবেই হোক না কেন কথাটা গেলাতে পেরেছেন। ভাল থাকবেন।
নতুন মন্তব্য করুন