- মাইনুল এইচ সিরাজী
আমাদের ৫ বছরের মেয়ে কুশিয়ারা। একটু বড় হওয়ার পর যখন সে খাতা-পেনসিলে আঁকিবুকি করতে শিখল, তখন থেকেই সে স্কুলের স্বপ্ন দেখতে থাকল। টিভিতে যখন সে স্কুল-ড্রেস পরা বাচ্চাদের দেখে, কিংবা যখন কোনো স্কুলের সামনে দিয়ে যায়- বলে, মা আমি কখন স্কুলে যাব? বলে, বাবা আমাকে স্কুল-ড্রেস কিনে দাও না কেন?
তার সঙ্গে আমরাও স্বপ্ন দেখি, চার-পাঁচ বছর হলেই তাকে স্কুলে দেবো। শাদা-মেরুন কিংবা শাদা-আকাশি পোশাক পরে সে স্কুলে যাচ্ছে- আমাদের স্বপ্নের দৃশ্য!
লেখাপড়াটা সে উৎসাহ নিয়েই করে। অংক, বাংলা, ইংরেজি, ছবি আঁকা সবকিছুতেই তার আগ্রহ এবং দখল। সব বাচ্চাই হয়তো এরকম, তবু নিজের মেয়ে বলে আমাদের কাছে কুশিয়ারাই সেরা।
২১ ডিসেম্বর ছিল কুশিয়ারার স্বপ্নের স্কুলের ভর্তি প্রক্রিয়ার শুরুর দিন। অর্থাৎ জীবনের প্রথম স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা। সাধারণত সকাল ১০টার আগে সে ঘুম থেকে জাগে না। কিন্তু ২১ তারিখ ৮টার আগেই জেগে-টেগে রেডি হয়ে গেল সে। বাসা থেকে বেরুলাম ১ ঘণ্টা হাতে নিয়ে। পরীক্ষা ১০টায়। নাসিরাবাদ অঙ্কুর সোসাইটি স্কুল। আমরা খুলশি গ্রীন থেকে বেরিয়ে হাঁটছি। রিকশা নেই। ১৫ মিনিট হাঁটলাম। মেয়ে তো যেন দৌড়াচ্ছে তার স্বপ্নকে ধরার জন্য। পৌনে ১০টায় স্কুলে পৌছেঁ ভিড় ঠেলে মেয়েকে পাঠিয়ে দিলাম পরীক্ষা কেন্দ্রে। অনেক বাচ্চাই মা বাবাকে ছেড়ে একা একা কাঁদছিল। অনেকে পরীক্ষা না দিয়ে চলেও এসেছে। কিন্তু কুশিয়ারা উৎসাহের সঙ্গে পরীক্ষা কক্ষে ঢুকেছে। স্বপ্ন যে তার সঙ্গি !
দেড় ঘণ্টা উৎকণ্ঠায় কাটিয়ে দিলাম। সবার মতো আমাদেরও চিন্তা হচ্ছিল- না জানি কী করছে ওরা ভেতরে, প্রশ্ন বুঝতে পারছে তো? টিচাররা বুঝিয়ে দিচ্ছেন তো?
পরীক্ষা শেষ হলো। ভিড়ের ভেতর থেকে মেয়েকে খুঁজে নিলাম। কোলে উঠেই মেয়ে আমার কাঁদতে কাঁদতে বলল, ম্যাডাম আমাকে মেরেছে। আমি তো অবাক! রিকশায় আসতে আসতে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, বাসায় ফিরে জিজ্ঞেস করলাম। তার একই কথা- প্রশ্ন বুঝতে পারেনি বলে ম্যাডাম ওকে থাপড় মেরেছে। আমি, ওর মা বারবার বললাম- ওটা থাপড় নয়, গাল টিপে তোমাকে আদর করেছে। বিরক্ত হয়ে সে এবার নিজের গালে কষে থাপড় বসিয়ে বলল, ঠিক এভাবে মেরেছে। আমরা নির্বাক! কী বলব? কী করব?
স্কুলে শারীরিক শাস্তি দণ্ডনীয় অপরাধ- এটা না হয় বাদই দিলাম, ও এখনো স্কুলে ভর্তিই হয়নি, তবু তাকে শাস্তি দেওয়া হলো- এটাও বাদ দিলাম, বাচ্চাদের স্কুলের ম্যাডামরা বাচ্চার মনস্তত্ত্ব বোঝেন না- তাও বাদ দিলাম; আমি শুধু ভাবছি-আমাদের মেয়ের এক আনন্দময় স্বপ্নের ক্ষেত্রকে নিরানন্দ, বিষাদময়, আতঙ্কসঙ্কুল করে দেওয়ার শাস্তি কী? কে দেবে এই শাস্তি?
মেয়ে যখন বলে, বাবা স্কুল আমার ভালো লাগেনি- তখন আমার কী করতে ইচ্ছে করে বুঝতে পারি না। আমরা বিচলিত হয়ে পড়ি।
মন্তব্য
ওই বেয়াদবটাকে (কোনভাবেই তাকে আমি শিক্ষিকা বলতে রাজি নই) খুঁজে বের করে পেটানো উচিত! আপনি কেন ওইটাকে ছুটির পর খুঁজে বের করার চেষ্টা করলেন না!
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
আজকাল কিছু স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিজেদেরকে প্রচন্ড ক্ষমতার অধিকারী বলে মনে করেন। বাচ্চাদের উপর এইরকম অত্যাচারের প্রতিবাদ করা উচিত।
একবার ধানমন্ডির এক ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে আমার ছোট বোনকে (কাজিন) আনতে যাই। আচমকা তুমুল বৃষ্টি। কিন্তু দারোয়ান গেইটের ভিতরে কোন রিকশা/ গাড়ি ঢুকতে দিল না। বলে প্রিন্সিপাল ম্যাডামের নিষেধ। বাচ্চাগুলোকে মায়েরা আঁচলের তলায়, কাগজে মুড়ে, যেভাবে পারল গেইট পর্যন্ত নিয়ে আসল।
এখানেই শেষ না। সিএনজির জন্য দাঁড়িয়ে আছি। দেখি দুটো গাড়ি ভিতর থেকে বের হল। দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম ওগুলো স্কুলের টিচারদের গাড়ি!
সেলুকাস!
ফাহিম হাসান
ওটাকে আমিও শিক্ষিকা বলতে রাজি নই। পেত্নির মতো আমার মেয়ের স্বপ্নকে গিলে খেয়েছে সে।
ওটাকে ওসময় খুঁজে বের করতে গেলে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে যেত। পাবলিক সেন্টিমেন্টের কথা ভেবেছি আমি। আগের দিন ঘটে যাওয়া 'বাওয়া স্কুলের' অঘটনের কথা মনে ছিল আমার।
-মা এ সিরাজী
কয়দিন আগে কার যেন লেখায় দেখলাম তাঁর মেয়ের প্রথম ভর্তি পরীক্ষা ছিলো তাকে ক্লাসে নিয়ে যাওয়া হবে কিন্তু সে কাঁদলে ফেল! আজকে আবার এই জিনিস।
এদের তো মানুষের সাধারণ অনুভূতিগুলোই নেই, কি করে যে মানুষের প্রাপ্য চাকরী পায় বুঝি না!
রাগে আমার গা জ্বলে যাচ্ছে। মানুষ এত অমানবিক আচরণ কিভাবে করে, তাও একটা বাচ্চার সাথে!
আপনার মেয়েকে আদর ও শুভকামনা।
ফাহিম হাসান
ভাই আপনার উচিত ছিল সেই মহিলাকে খুঁজে বের করা এবং তাকে কিছু কটু কথা বলা (আপনিতো তাকে আর মারতে পারবেন না, মারতে পারলে বলতাম ধরে মার লাগাতে), সেসবের কোনটাই না করে ব্লগ লিখলেন।
আমাদের দেশে স্কুলে-কলেজে যে কবে টীচাররা ছাত্রছাত্রীদেরকে মানুষ মনে করে বোঝার চেষ্টা করবে কে জানে?
_________________________________________________
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।
------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।
আসলে মেয়ের কথা আমি তাৎক্ষণিক বিশ্বাসই করতে পারিনি। বাসায় এসে সব বুঝলাম। তাছাড়া ওখানে ওসময় শত শত অভিভাবক ছিলেন। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কী হতো- সেটাও ভেবেছি।
আমি এখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ জানাব এবং জায়গায় জায়গায় কপি দেব। এছাড়া আমার আর কী করার আছে? ব্লগে লিখে একটু তো সান্ত্বনা পেলাম।
অঙ্কুর সোসাইটি কিন্ডারগার্টেনে আমার ভাগ্নে পড়ত। প্রায়দিনই তুচ্ছ বিষয়ে মার খেয়ে বাসায় ফিরে মাকে কমপ্লেইন করত। আমার একটা পিটিএম এ পারটিসিপেইট করার সুযোগ হয়েছিল। শালীনতা বজায় রেখে কিছু টিচারকে সাইজ করতে পেরেছিলাম। কিন্তু দেখেন যেই লাউ সেই কদু। এইসব মাদারফাকার/ফাদারফাকড টিচারদেরকে টানা লাগানোর উপর রাখতে হবে। ঢিল দিলেই বাচ্চাদেরকে টর্চার শুরু করে !
কষ্ট পেলাম। আমিও নিজেও একজন শিক্ষিকা। সব সময় যে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারি তা নয়। শাস্তি আমিও দিই, আসলে দিতে হয়।আগে ভাবতাম, যখন শিক্ষক হব, কক্ষনো ছাত্রদের পিটাবো না। কিন্তু বাস্তবে পারিনি সেটা করতে। নিজেকে মাঝে মাঝে তাই জঘন্য শিক্ষক মনে হয়। তবে সব সময় চেষ্টা করি শারীরিক শাস্তি না দেবার। বিশেষ করে ছোট ক্লাসের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কিছু ব্যাথাবিহীন শাস্তি দিয়ে থাকি আমি। যেমন, ময়লা বেঞ্চে বসিয়ে রাখা, ১০০ বার কোন অংক করতে দেওয়া। অথবা, পায়ে শব্দ না করে ১০ বার ক্লাসের এই মাথা থেকে ঐ মাথায় হেঁটে যাওয়া, (শব্দ হলে আরো ২০ বার হাঁটতে হবে), দেয়ালের দিকে ১০ মিনিট তাকিয়ে থাকা। এইরকম।
কিছুদিন আগে আমাদের স্কুলেও ভর্তি পরীক্ষা হয়ে গেল। এই প্রথম আমি এত ছোটদের পরীক্ষা নিলাম। সারাক্ষণ ম্যাডাম, স্যার বলে মাথাটা খারাপ করে দিচ্ছিল। বোর্ড পরীক্ষার ডিউটিতেও এত কষ্ট হয়নি। :'( আসলে ওরা অনেক ছোট। তাই ধৈর্য ধরে বুঝিয়ে দিতে হচ্ছিল। আবার এটাও খেয়াল রাখতে হচ্ছিল, যেন কারো উপর অবহেলা না করা হয়। তবে সেই শিক্ষিকার উচিত ছিল আরো ধৈর্য ধারণ করা। আসলে আমরা শিক্ষক হলেও শেষ পর্যন্ত মানুষ। সবাই আমাদের কাছ থেকে অনেক কিছু প্রত্যাশ করে, আমরা সব সময় সেগুলো পূরণ করতে পারি না। তবে একজন শিক্ষকের সব সময় চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে নিজের মধ্যে শিক্ষকের গুণাবলী বিকাশ করার। কারণ শিক্ষক হয়ে কেউ জন্মায় না, ধীরে ধীরে একজন মানুষ শিক্ষক হয়ে উঠে।তাকে শিক্ষক হয়ে উঠার পরিবেশ দিতে হবে।
আমি জানি না, সেই শিক্ষিকাটি কে ছিলেন। আমি তাঁর পক্ষ থেকে সবার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
--------------------------------------------------------------------------------
রাজকন্যা।
রাজকন্যা, আপনার মন্তব্যের জবাবে শুধু বলি- আমিও একজন শিক্ষক। সুতরাং তার হয়ে সবার কাছে আপনার ক্ষমা চাওয়ার কিছু নেই।
দেয়ালের দিকে ১০ মিনিট তাকাতে বাধ্য করা যে শিশু-দৃষ্টির জন্য কতটা ক্ষতিকর- তা কি আপনি জানেন?
সঙ্গত কারণেই আপনার সব কথার সঙ্গে আমি একমত নই। বাচ্চাদের স্কুলের টিচার হয়ে আপনি শাস্তি দেওয়ার মানসিকতা পুষতে পারেন না।
শিক্ষক হিসেবে এবং মানুষ হিসেবে আমি মেনে চলি- রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন।
আপনাকে ধন্যবাদ।
-মা এ সিরাজী
ভাই সিরাজী, আমি জানিনা, আপনি বি,এড বা কোন ট্রেইনিং করেছেন কিনা। ১০ মি দেয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকার শাস্তির কথা মাই জানতে পেরেছি ঢাকা টিটি কলেজের একজন শিক্ষকের কাছ থেকে, সিপিডি ট্রেইনিং করতে গিয়ে। এই শাস্তি আসলে কতটুকু ভয়ঙ্গক্ত তা অবশ্য আমি জানি না। যদি সত্যিই ক্ষতিকর হয়ে থাকে তবে আমি অনুরোধ জানাবো এ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য দেবার। উপক্ক্রিত হতাম।
সব কথায় একমত হবেন না সেটাই স্বভাবিক।
শিক্ষা মনোবিজ্ঞান স্বীকৃত কিছু শাস্তি আচেহ যেগুলোর কথা শুনলে মনে হবে, কী ভয়ংকর। যেমন-isolation. শিক্ষার্থী আলাদা বেঞ্চে বসবে, রাএ সাথে কেউ মিশবে না। এমন শাস্তি আমি আমার এক কলিগকে প্রয়োগ করতে দেখে আমিও বিরোধিতা করেছিলাম। কিন্তু পরে শিক্ষামনোবিজ্ঞানের বইতেই এই শাস্তির কথা জানতে পারি।
আসলে একজন শিক্ষকই জানেন তাঁর ক্লাসের কোন শিক্ষার্থীটি কেমন। তাই তার উপরি ছেড়ে দেওয়া হোক কোন পরিস্তিতিতে তিনি কী সিদ্ধান্ত নেবেন।
শিক্ষা মনোবিজ্ঞান জিনিসটা দেখি মহা পারভার্ট, পোলাপানরে শাস্তি দেয়ার কায়দা-কানুন শেখায়
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
একজনের কাজের জন্য আরেকজনকে ক্ষমা চাইতে দেখা খুব বিরক্তিকর। পোস্টটাতে সব শিক্ষককে ঢালাওভাবে দোষী বলা হয়নি যে আপনাকে ক্ষমা চাইতে হবে।
আর সত্যি বলতে কি, ওই ক্ষমা বস্তুটা করলে যিনি করেন তাঁর নিজের মৃত্যুর পরে স্বর্গের লিস্টে নাম থাকা নিশ্চিত হয় কিনা জানিনা, কিন্তু তাঁর পরে যাদের পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হয় তাদের জন্য একটা অপরাধের পুনরাবৃত্তি নিশ্চিত করা হয় নিঃসন্দেহে।
দেখুন ভাই, অপছন্দনীয়, এখানে, যেই কাজটা করে থাকুক না কেন, আমিও নিজেকে দায়বদ্ধ মনে করছি। এমনিতেই আমাদের শিক্ষকদের নিয়ে অনেক অসন্তুষ্টি মানুষের মনে।
আপনার এই কথা মানতে পারলাম না। একজন তা সে যেই হোক, এটা সব শিক্ষকের উপর এসেই পড়ে। যদি এই শিক্ষিকা এই রকম হীন আচরণ না করে খুব ভাল কিছু করতেন, তখন কিন্তু আমরাই তার গৌরবের ভাগটা নিতাম। এসব ইডিভিজুয়্যালি নেয়া টা কি শিক্ষক সুলভ হল? মনে রাখতে হবে, আমরা এক পরিবার ভুক্ত। পরিবারের একজনের ভুল মানে সবার ভুল। একজনের সাফল্য মানে সবার সাফল্য।
যদি কথাটা বলার সুযোগ দেন তো বলি, আপনার উচিত ছিলো ওই শিক্ষিকার মত লোকজনের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, তাঁদের পক্ষ থেকে ক্ষমা ভিক্ষা নয়।
দুঃখিত, বাংলাদেশের কিছু পুলিশের একটা স্বভাব আছে জানি, কেউ অপরাধ করলে তার বাপ ভাই সব শুদ্ধ ধরে নিয়ে যাওয়া - এই ধরণের মনোভাব পুলিশের কিছু অশিক্ষিত কনস্টেবলের কাছ থেকেও কাম্য নয়, কোন শিক্ষকের কাছ থেকে তো প্রশ্নই ওঠে না।
বাংলাদেশের সমাজে বাপের কর্মের জন্য ছেলেকে দায়ী করার একটা প্রথা প্রচলিত আছে বলে জানি - আপনিও কি সেই প্রথার সমর্থক?
ইন্ডিভিজুয়্যালি নেয়াটাই মনে হয় উচিত। কেউ অপরাধ করলে সেটার দায় তার, তার পেশার অন্যদের নয়। একইভাবে কেউ ভালো কোন কাজ করলেও সেটার গৌরব তার, আপনার বা আমার নয়। সবার দোষ ঘাড় পেতে নেয়াটা যদি শিক্ষক সুলভ হয়ে থাকে, তাহলে তো বলতে হবে 'সব' শিক্ষক ক্লাসে না পড়িয়ে বাসায় পড়ান, প্র্যাকটিক্যালের নামে টাকা নেন ইত্যাদি - সবার সব কর্জমের জন্য ক্ষমা চাইতে গেলে তো আপনার আসলে ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আর কিছু লেখার সময়ই হওয়া উচিত না। আসলে যে সব শিক্ষক এই ধরণের হীন কাজ করেন না সেটা আমার চেয়ে আপনার আরো ভালো জানার কথা। শিক্ষকতা পেশার যদি কোন দোষ থেকে থাকে, শিক্ষক হিসেবে সেটা আপনার দোষ হতে পারে হয়তো - কিন্তু আচরণ জিনিসটা মানুষের ব্যক্তিগত, যে শিক্ষিকা ওই কাজটা করেছেন তাঁর ব্যক্তিগত বাজে আচরণের জন্য আপনি বা অন্য কেউই দায়ী নন।
আর একটা কথা, আপনার লেখা থেকে তো দেখলাম আপনি ওনাকে চেনেন না। কাজেই উনি আপনাকে ওনার পক্ষ ক্ষমা চাইতে বলেছেন বলে তো মনে হচ্ছে না। আবারও বলছি, আগ বাড়িয়ে এই জাতীয় কথা বলতে দেখা খুব বিরক্তিকর।
হুদাই ত্যানা প্যাঁচান হইতেছে
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
এই লাইনটা পড়ে একটা প্রশ্ন আসল মাথায়, শাস্তির দেওয়া হচ্ছে কেন? যদি ধরে নেই উন্নতির জন্য তাইলে এক অংক বারবার করতে দিলে সেই ছাত্র বা ছাত্রীর উন্নতি হবে না আলাদা আলাদা অনেকগুলো অংক করতে দিলে হবে? কিছু মনে করবেন না, আমার মনে হয় স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকারা যদি একটু বুদ্ধি খাটিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের সংশোধন করার চেষ্টা করেন তাহলে আখরে তা বেশি লাভ দিবে। ভাল থাকবেন।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
আসলে এখানে ১০০ বার অংক করতে দেওয়াটা একটা উদাহরণ হিসেবে দিলাম। এটা হাতের লেখাও হতে পারে। আবার কয়েকটা ভিন্ন ভিন্ন অংকও হতে পারে। এটা শিক্ষার্থীর উন্নতির জন্যও হতে পারে, ক্লাসের শৃংখলা রক্ষার জন্য হতে পারে।ক্লাসের সবচেয়ে দুষ্টু বাচ্চাটিকে কোন কাজ দিয়ে ব্যস্ত রাখার জন্যও হতে পারে। ক্লাসে সব শিক্ষার্থী এক রকম না। পরিস্থিতি অনুযায়ি শিক্ষক সিদ্ধান্ত নেবেন, তিনি আসলে কী করবেন? মুখে ১০০ বার করতে বলেও ১০ বার করার পরেই ছেড়ে দিবেন নাকি আরো ৫০ বার করাবেন? স্কুল ছুটি হয়ে যাবার পরেও তাকে যেতে না দেওয়া; পড়া শেষ না করা পর্যন্ত, এটা এক ধরনের শাস্তি। আবার সব পড়া দিয়ে দিলে, বা ক্লাসে ভাল কাজ করার জন্য, লক্ষী হয়ে থাকার জন্য তাকে একটু আগেই টিফিন খেতে দেওয়া বা ছুটি দেওয়া পুরষ্কার।
আমরা শিক্ষকেরা শুধু শাস্তিই দিই এটা ভাবার কোন কারণ নেই।
অনেক সময় আমাকে বাচ্চাদের ডায়রীতে অভিভাবকের উদ্দেশ্যে লিখে দিতে হয়, বাচ্চাকে মারধোর করবেন না।
-----------------------------------------------------------------------------------
রাজকন্যা
উদ্ধৃতিঃ-
"বিরক্ত হয়ে সে এবার নিজের গালে কষে থাপড় বসিয়ে বলল, ঠিক এভাবে মেরেছে। আমরা নির্বাক! কী বলব? কী করব?"
কি বলব? আর; তবে আপনার কিছু একটা করা উচিত ছিল, এমনি এমনি চলে আসা ঠিক হয় নাই; এখন মনে হয় শুধুমাত্র ওই কাল্প্রিটের কারণে স্কুলের বিশেষ করে সব শিক্ষকের সম্পর্কেই তার একটা ভুল ধারণার জন্ম হয়ে গেছে; উদ্ধৃতিঃ-"মেয়ে যখন বলে, বাবা স্কুল আমার ভালো লাগেনি-"
অতীত
লেখাটা পড়ার সময় সচল নজমুল আলবাবের একটি লেখার কথা মাথায় এসে গেলো।
বাচ্চাদের স্কুলে পড়াতে তাঁদেরই আসা উচিৎ যাঁরা বাচ্চাদের প্রতি সম্মানবোধ (স্নেহ, মমতা এইসব পরের কথা) করবেন। যদি ন্যুনতম এই সম্মানবোধ না থাকে, তাহলে তাঁরা বাচ্চাদেরকে কী শিক্ষা দিবেন? বাচ্চারা অন্যদের তরে সম্মানবোধ শিখবে কোথা থেকে যদি শিক্ষক/শিক্ষিকাদেরই সেটা না থাকে!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
অপুর লেখাটা পড়লাম। ধন্যবাদ ধুসর গোধূলি
-মা এ সিরাজী
চাবকে পিঠের খাল তুলে ফেলা উচিত এইসব মানুষদের।
কাকস্য পরিবেদনা
কী আর বলব। কুশিয়ারা মামনির জন্য খারাপ লাগছে। বেচারি কত আগ্রহ নিয়ে স্কুলে গেল- আর ফিরল একরাশ দুঃখ হতাশা নিয়ে
শিক্ষকতা করেছি ১৩ বছর । আর শিক্ষকদের শিক্ষক হবার পরামর্শ দিয়েছি ২৩ বছর ধরে । পরামর্শ পুরোটাই অরণ্যে রোদন । শিক্ষকদের বলেছি এ পেশায় যেমনটি হওয়া উচিৎ তেমন যদি না হতে পারেন তা হলে এ পেশা ছেড়ে যেতে। পুরোপুরি শিক্ষক হতে পারিনি বলেই তো আমি বিদায় নিয়েছি, আপনারাও বিদায় হয়ে যান । কেউ যায়নি, তাদের যাবার যোগ্যতাও নাই ।
কীভাবে পারে!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
আহারে বেচারী..কী আগ্রহ নিয়েই না আনুষ্ঠানিক পড়াশুনা শুরু করতে চেয়েছিল... এখন যতদিন এই ঘটনা তার মনে থাকবে তত দিন হয়তো একটা অভিমান থাকবে, যা তার সিদ্ধান্ত গ্রহনকে প্রভাবিত করবে। মারামারির বিনিময়ে মারামরিই চলছে.. হয় শারিরীক না হয় মানসিক..শিশুদের জন্য আনন্দময় পাঠোদ্দ্যান দরকার... কার কাছে প্রার্থনা করব আমি, কে আমার প্রার্থনা শুনবে?
এই সব সামাজিক বৈকল্য আমাদের কেন যে শুধুই বেদনাহত করে, ঘুরে দাঁড়াবার মন্ত্রপ্রদানে বলী করে না তা ভেবে ভেবে আমিও অসহায় ক্লীবের মতো বেদনাহত হই!
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
তিতাস কান্তি পণ্ডিত
বাচ্চারা দুষ্টামি করবে, শিক্ষকদের বিরক্ত করবে এটাই তো সাভাবিক। তাই বলে কোন মানুষ (শিক্ষক) কিভাবে যে এই এঞ্জেলদের শরীরে হাত তুলে তা ভেবে পাই না।
আশা করি ঈশ্বর এসব শিক্ষকদের সুমতি দিবেন।
প্রিয় মাইনুল এইচ সিরাজী, আপনার এ লেখাটি আজ একটি দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। সচলায়তনের নীতিমালা অনুযায়ী সচলায়তনে কোনো লেখা প্রকাশিত হবার পর ৭২ ঘন্টার মধ্যে এটি অন্য কোনো কমিউনিটি ব্লগ বা মুদ্রিত মাধ্যমে প্রকাশ করা হলে তা প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।
সচলায়তনের নীতিমালাটি অনুসরণ করে লেখার আমন্ত্রণ রইলো। ধন্যবাদ।