যতদিন মা’র ছেলে ছিলাম, সন্তানদের জন্মদিন পালন করতেন তিনি অতি নিয়মিত কিন্তু ঘরোয়া ভাবে। স্কুল থেকে ফিরেই বড় বড় শ্বাস নিতে থাকতাম ভ্যানিলা কেকের গন্ধে মৌ মৌ ঘরে। কেকের ভেতরটা কাঁচা রয়ে গেল কিনা কাঠি ঢুকিয়ে পরখ করতে করতে আদরভেজা কণ্ঠে আম্মা বলতেন, গোছল করে নতুন শার্টটা গায়ে দিয়ে আস শীগগির, কেক কাটবে যে! সেদিন
বকাবকি একদম বন্ধ। দুষ্টামির একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেলে বলতেন, আজ জন্মদিন, মা’দের বকতে হয়না।
তারপর স্ত্রীর চক্রে জড়ালাম নিজেকে। কেমন করে জন্মদিন পালনের দায়িত্বটা কাঁধে তুলে নিলেন তিনি। কাজে যাবার সময় সে’দিনটিতে সকালে বলেন, কেক বানাচ্ছি, তাড়াতাড়ি ফিরবে। দু’য়েকবার পার্টির আকারেও উদযাপন করলাম জন্মদিন।
সৌদী আরবে গিয়ে বার্থডে পার্টি না করে মিলাদ মহফিল পালন করা শুরু করলাম। বয়স চল্লিশে পৌঁছালে অনেককে আমন্ত্রণ করলাম প্রাণভরে। চ্যাংড়া বয়সে ভাবতাম, বয়েস চল্লিশ-টল্লিশ হ’লে সাধ-আহলাদ বুঝি সবশেষ। নিজের চল্লিশে পৌঁছে, নিজস্ব মস্তিষ্কপ্রসূত থিউরি থেকে দেয়ালে বড় বড় করে লিখলাম, ‘মানুষ সম্পূর্ণ হয় চল্লিশে, ‘A man in his forties is an experienced young man’, ইত্যাদি। বন্ধুরা জোরেসোরে পিঠ চাপড়ে দিল। একজন অভ্যাগত বললেন, এত বড় সত্য কথা, মনীষির নামটা বলবেন ভাই।
দুই দশক সৌদী আরবে উটের জীবন কাটিয়ে কানাডায় চলে এলাম বাক্স-প্যাটরা গুটিয়ে, বৌ-বাচ্চাদের বগলদাবা করে। মিলাদ মহফিলের অভ্যাসটা জারী রইল।
পঞ্চাশতম বছর পূর্তিতে আবারও বড় আকারের মিলাদ মহফিলের দাওয়াত দিলাম। কিছু পুরনো বন্ধু, আত্মীয়। অনেকের সাথে নুতন পরিচয়, বন্ধুত্ব হবে হবে করছে। তাঁদেরই একজন দেশ থেকে সদ্য আমদানীকৃত নতুন পাঞ্জাবী গায়ে চড়িয়ে এলেন, ছেলেগুলোর পড়নেও পাঞ্জাবী। এসে মহল দেখে একটু ক্ষুদ্ধ হ’লেন যেন। খেতে খেতে জিজ্ঞেস করেই ফেললেন, বলেছিলেন না মিলাদ মহফিল, এত দেখছি বার্থডে পার্টি! সবিনয়ে বললাম, মিলাদ মহফিলইতো ভাই বার্থডে পার্টি। আরবীতে মিলাদ অর্থ জন্ম আর মহফিলের ইংরেজী পার্টি, মূল শব্দ ‘হাফলা’ থেকে যার উৎপত্তি। আরো বলতে হ’ল, বারোই রবিউল আউয়াল তারিখে আমাদের প্রিয় নবী মোহাম্মদ সাঃ এর জন্মদিন পালন থেকেই মূলতঃ মিলাদ মহফিল বাংলা ভাষায় এসেছে। আর সবার অজান্তে ব্যবহত হচ্ছে ব্যাপক অর্থে।
যাবার আগে নতুন বন্ধুটি দাওয়াত দিয়ে গেলেন। এবারও মিলাদ মহফিলের, তাঁর ছোট ছেলের, আসছে শনিবারে।
খন্দকার আলমগীর হোসেন
মন্তব্য
মজা লাগলো
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
আপনাকে অনেক শুভেচ্ছা।
মিলাদ মাহফিল = বার্থডে পার্টি .... ভাল একটা বিষয় শিখলাম।
জন্ম তারিখ আরবীতে বলা/লেখা হয়, 'তারিখ আল-মিলাদ'। তারিখ শব্দটি প্রাঞ্জল বাংলায় ব্যবহত, যার কোন বিকল্প নেই। অথচ শব্দটি আরবী থেকে নেয়া।
হেহেহে, মিলাদ বলতেই তো গোলাপজলের ছিটা, নাত, কিছু বয়ান আর সবশেষে তবারকের বাক্সের ছররা; ওটাও খারাপ না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
মিলাদ, দেশী স্টাইল কোনদিন ভুলবার নয়। ভাবতে গেলে আজও নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হই।
মজা পেলাম।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
মজা পেয়েছেন জেনে লেখার সার্থকতা খুঁজে পাচ্ছি।
খন্দকার আলমগীর হোসেন
বেশ মজাদার!
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
লেখাটা পড়ে মজা পেয়েছেন জেনে খুব ভাল লাগল। আপনাকে ধন্যবাদ।
খন্দকার আলমগীর হোসেন
এভাবে তো কখনও ভাবিনি! অনেক ধন্যবাদ লেখাটার জন্যে। একটা নতুন বিষয় জানতে পারলাম।
======================================
অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো, সেইতো তোমার আলো।
সকল দ্বন্ধ বিরোধ মাঝে জাগ্রত যে ভালো, সেইতো তোমার ভালো।।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ জানাই। আপনাদের উৎসাহ পেলে আমাদের ভাষায় আরবীর গভীর উপস্হিতি নিয়ে আরো কিছু লেখার ইচ্ছা থাকল সামনের দিনগুলোতে।
খন্দকার আলমগীর হোসেন
লেখা ভালো লাগলো। অনেক দিন সুর করে 'ইয়া নবী ছালার মধ্যে কী' পড়া হইনি।
আপনাকে আমার লেখায় স্বাগতম।
নাইস। ভালো লেগেছে।
...............................
নিসর্গ
পাঠকের ভাল লাগলেই না লেখা সার্থক। অনেক ভাল থাকুন।
মজা পেয়েছি।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
খন্দকার আলমগীর হোসেন
হে হে হে...এটাতো আমিও জানতামনা।
লেখালেখি জারি থাকুক।
জানেন এই 'জারী' শব্দটিও কিন্তু ১০০% আরবী। আপনাকে ধন্যবাদ।
মজার তো!
বাংলা ভাষায় আরবীর আধিক্য দেখলে অবাক হতে হয়। এ নিয়ে হয়ত একদিন লিখব। আপনাকে অনেক শুভেচ্ছা।
আমি ঠিক করে রেখেছি নিজের পঞ্চাশতম জন্মদিনে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জার্সি পরে, হাতে ব্যাট নিয়ে সারা শহরময় ঘুরে বেড়াবো। জনগণ দেখলেই ব্যাটটা একটু উঁচিয়ে ধরবো, মানে ফিফটি মারলাম আরকি! বিবির অনবরত ফাস্ট বোলিং আর পিচ কন্ডিশনও বোলিং অনুকূল। একটা হেলমেট রাখতে হবে মাথায়। এই অবস্থায় ফিফটি মারা কি চাট্রিখানি কথা!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
দোয়া করি, শুধু ফিফটি নয়, সেঞ্চুরী করুন আপনি।
আপনার এখনো পঞ্চাশ হয় নাই?!
ধুগোনিদিদির ফাস্ট বোলিং-এর জন্যে ওয়েট করার টাইম আছে তাইলে এখনো...
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
মজার!
আপনাকে অনেক শুভেচ্ছা।
খন্দকার আলমগীর হোসেন
বোঝ! মজা পেলাম পড়ে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
আপনাকে ধন্যবাদ জানাই।
খন্দকার আলমগীর হোসেন
নতুন মন্তব্য করুন