তুই একটা সোনালি গাধা !

মন মাঝি এর ছবি
লিখেছেন মন মাঝি [অতিথি] (তারিখ: বিষ্যুদ, ৩০/১২/২০১০ - ৭:৩৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


টেম্প্‌ল অফ আইসিস, ফিলে, ইজিপ্ট। মনমাঝি।


লুসিয়াস এ্যাপুলেইয়াসের ‘মেটামর্ফসিস’ -- যা ‘দ্য গোল্ডেন এ্যাস’  নামেই  বিখ্যাত, খৃষ্টীয় ২য় শতাব্দীতে রচিত এবং বর্তমানকাল পর্যন্ত পূর্ণাবয়বে-বিদ্যমান প্রাচীণতম ল্যাটিন উপন্যাস। কোন কোন বিশেষজ্ঞের মতে এটা বিশ্বসাহিত্যেও প্রাচীণতম পূর্ণাবয়বে-সংরক্ষিত উপন্যাস বটে। তবে একে ঠিক ‘উপন্যাস’-ঘরানাভুক্ত করা যায় কিনা, তা নিয়ে অবশ্য সামান্য বিতর্ক আছে বিশেষজ্ঞ-মহলের একটা ক্ষুদ্র অংশে। কারো কারো মতে এটা ঠিক আধুনিক অর্থে ‘উপন্যাস’ নয়, বরং অন্তর্নিবিষ্ট প্রশাখাবিস্তৃত ‘পিকারেস্ক’ উপন্যাসঅথবা ‘গদ্যরোমান্স’(প্রেমকাহিণি অর্থে নয়)। তবে, আমরা যদি উপন্যাস বলতে সরল অর্থে, গদ্যে রচিত একটা মূল প্রধান গল্পের সূচনা হয়ে তারপর মধ্যখানে নানাবিধ শাখাপ্রশাখার বিস্তারসহ শেষ পর্যন্ত মূল গল্পের পরিসমাপ্তি বুঝে নেই, তাহলে এই আলোচনায় উপন্যাস বলতে আমাদের জন্য সেটুকুই যথেষ্ট।

এক-দুই লাইনে খুবই সরল করে বললে,‘দ্য গোল্ডেন এ্যাস’-এর মূল কাহিণি এর নায়কের যাদুটোনার প্রতি উদগ্র আগ্রহ আর আকর্ষনকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। তন্ত্রমন্ত্রের মাধ্যমে পাখিতে পরিণত হওয়ার এমনি এক প্রচেষ্টাকালে নায়কবাবাজি দুর্ঘটনাক্রমে একটা গাধায় পরিণত হন। সোনালি গাধা। নাঃ মনুষ্যকুলে যেমন মাঝে মাঝে কিছু মনুষ্যরূপী গাধা দেখতে পাওয়া যায় সেই প্রজাতির নয়, বরং গাধারূপী মনুষ্য বলা যেতে পারে হয়তো – তবে দস্তুরমতো চতুস্পদী গাধা বটে। তো গাধায় পরিণত হওয়ার পর নায়কের ভাগ্যে অনেক দুর্বিপাক নেমে আসে – শুরু হয় এক সুদীর্ঘ অভিযাত্রার। আক্ষরিক এবং রূপক – দুই অর্থেই। আসলে এই কাহিণিটাকে দুই অর্থেই নেয়া যায় – একাধারে অথবা মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ অর্থেও। লেখকও বোধহয় সেটাই চেয়েছেন। সবার জন্যই খোরাক রেখেছেন -- যে যতটুকু নিতে পারে আরকি, এবং তাতে যেন কোথাও ঘাটতি না পড়ে। অনেক দুর্ধর্ষ সব শাখা-কাহিণি পেরিয়ে উপন্যাসের শেষ হয় দেবী আইসিসের হস্তক্ষেপে সোনালি গাধা তথা নায়কের মুক্তি ও মোক্ষ লাভে। গল্পটা এত সংক্ষেপে ও সরল করে বললাম যে এর কিছুই বোঝা গেল না হয়তো – তবে এর চেয়ে বেশি জানতে হলে বইটা পড়াই ভালো।

তবে, অনেক বিশেষজ্ঞের মতে‘দ্য গোল্ডেন এ্যাস’  একটা রূপকধর্মী উপন্যাস যার গল্পের গূঢ়ার্থ হচ্ছে নানান উত্থান-পতন-প্রতিকূলতা আর ব্যক্তির অভ্যন্তরে অন্তর্দ্বন্দ্ব বা অন্তর্সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গিয়ে ব্যক্তির আধ্যাত্নিক রূপান্তর ও  মোক্ষ (σωτηρια) লাভ। তবে এই বহুদেববাদী মুক্তি বা মোক্ষ পারলৌকিক নয়, বরং ইহলৌকিক – যার মূলে রয়েছে পৃথিবী, জীবন ও মৃত্যু সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। গাধাকে প্রাচীণ রোমান জগতে সবচেয়ে হীন প্রাণী হিসেবে দেখা হতো – দেখা হতো রিপুর এক অন্ধ দাস হিসেবে। কাহিণির শেষে নায়কের রূপান্তরকে বাসনা ও রিপুর সেই শৃংখল থেকে তার মুক্তি লাভের রূপক হিসেবে দেখা যেতে পারে। তবে এই শৃঙ্খল-মুক্তি বা মোক্ষ জীবন থেকে আনন্দকে নির্বাসন দিয়ে নয় অবশ্যই – যেমনটা অন্যান্য অনেক ধর্মে দেখা যায়।

 

 By permission of Benjamin Slade

 

‘দ্য গোল্ডেন এ্যাস’ এখন থেকে প্রায় দুই হাজার বছর আগে রচিত বা প্লট আপাতঃদৃষ্টিতে আজগুবি মনে হলে কি হবে, এর স্পিরিট প্রায় পিলে চমকে দেয়ার মত আধুনিক ! এই বইটা শুরু করার আগে পর্যন্ত আমার ব্যক্তিগত ধারণা ছিল যে হাজার হাজার বছর আগেকার প্রাচীণ কালের মানুষ ভুত-প্রেত-দত্যি-দানো-দেব-দেবী-রাক্ষস-খোক্কসসহ নানারকম ভয়ভীতি, অজ্ঞানতা, রক্ষনশীলতা আর গভীর কুসংস্কারে নিমজ্জিত একদল সর্বদা ভীত-ত্রস্ত, ফ্যানাটিক, কুপমণ্ডু্‌ক, বোরিং, রসকষহীণ রামগরুড়ের ছানা ছিল। প্রাচীণ ক্লাসিক্স বা পুরাণগুলি যতটুকু পড়েছি, তাতেও কেন যেন আমার এই ধারণাটাই পরিপুষ্টি লাভ করেছিল। ‘দ্য গোল্ডেন এ্যাস’  কিন্তু এক অনবদ্য উপায়ে আমার এই ধারণা ভেঙে একদম খান্‌ খান্‌ করে দিল। আমি জীবনে আর কোন বই পড়ে একই সাথে এত মজা পাইনি, এত হাসিনি, এত রোমাঞ্চিত হইনি, এত শিহরিত হইনি, এত মুগ্ধ হইনি, বা এত.... হইনি। আর এটা শুধু আমারই ব্যক্তিগত মতামত নয়, আরো বহু আধুনিক আমপাঠকেরও প্রায় একই রকম অনুভূতি হয়েছে।

 

উম্মাদ অট্টহাসি আর চনমনে দুষ্টু আদিরসে টসটসে, উদ্ভট উদ্দাম উম্মাতাল  এ্যাডভেঞ্চার আর সাসপেন্স, কিম্ভুত বেয়াদব প্রহসন আর চমকপ্রদ অতিপ্রাকৃতিক রহস্য, নিখাদ জাগতিক ফুর্তি-হুল্লোড় আর গভীর অতিজাগতিক গূঢ়তত্ত্ব, নির্দোষ রঙ্গ আর তীব্র ব্যঙ্গ – সব মিলিয়ে  ‘দ্য গোল্ডেন এ্যাস’  বোধহয় সাহিত্য দুনিয়ায় সব tour de force-এর আদি tour de force!

 

 By permission of Benjamin Slade

 

লুসিয়াস এ্যাপুলেইয়াস - প্লেটোপন্থী দার্শনিক, রেটোরিশিয়ান, আইনজীবী, পরিব্রাজক, গল্প-কথক এবং লেখক, বর্তমান আলজিরিয়ায় অবস্থিত উত্তর-আফ্রিকাস্থ প্রাচীণ রোমান উপনিবেশ নুমিডিয়ার শহর মাডুরাতে (Madaurus)রোম-সম্রাট হেড্রিয়ানের রাজত্ব কালে আনুমানিক ১২৫ খৃষ্টাব্দে জন্মগ্রহন করেন। তিনি উত্তর-আফ্রিকার বার্বার বংশোদ্ভূত ছিলেন (এই হিসাবে হিপো’র সেন্ট অগাস্টিন, প্ররিব্রাজক ইবনে বতুতা, আর ফুটবলার জিনেদিন জিদানের স্বজাতীয় পূর্বসুরী বোধহয়) – তবে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ভাবে সম্পূর্ণরূপে রোমানাইজড ও হেলেনাইজড।তাঁর সমৃদ্ধ শিক্ষাজীবন কাটে প্রথমে মাডুরাতে, পরে তৎকালীন রোমান কার্থেজ-এ(বর্তমান তিউনিশিয়ায়), পরে এথেন্স ও রোমে। ধনী পিতার সন্তান এ্যাপুলেইয়াস তাঁর উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদের বেশির ভাগই খরচ করে ফেলেন তাঁর দুই ধ্যান-জ্ঞান – ভ্রমণ আর পড়াশোনার পেছনে। তবে সাহিত্য, ব্যাকরন, রেটরিক আর দর্শনের মত সমকালীণ গতানুগতিক পণ্ডিতি বিষয়ের পাশাপাশি আরেকটি বিষয়ে ছিল তার সুতীব্র আগ্রহ ও আকর্ষন। সেটা হলো তাঁর সময়কার উত্তর-পূর্ব আফ্রিকা, ইজিপ্ট, এশিয়া মাইনর সহ পূর্ব-ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত

 

 

বিভিন্ন রহস্যময় গুপ্ত-ধর্মবিশ্বাস, কাল্ট ও সেসবের আচার-অনুষ্ঠান, রীতিনীতি ও দর্শন, যাদুটোনা, তন্ত্রমন্ত্র, ইত্যাদি। স্মরণীয় যে, এটা খৃষ্ট-উত্তর যুগ হলেও খৃষ্টধর্ম তখনো গ্রেকো-রোমান জগতে প্রাধান্য লাভ তো করেইনি – বরং একটা প্রান্তিক ধর্মগোষ্ঠী হিসেবে হাঁপাতে-হাঁপাতে আরো দশটা ধর্মগোষ্ঠীর সাথে প্রান্তিক-প্রতিযোগিতায় কোনঠাসা – যা আরো ২-৩শ’ বছর পরে সম্রাট কন্সটান্টাইনের আগমনের পরে রাজশক্তিকে বশীভূত করার আগ পর্যন্ত বদলাবে না। এসময় রোমান সাম্রাজ্যে ও আশেপাশে প্রাচীণ গ্রেকো-রোমান দেব-দেবীর পূজার পাশাপাশি বেশ অনেকগুলি নতুন ধর্মমতেরপ্রচলন ও জনপ্রিয়তা লাভ ঘটে (বা আগে থেকেই ছিল)। তার মধ্যে আছে ইজিপশীয় দেবী আইসিস-এর পূজাভিত্তিক রহস্যময় ‘কাল্ট অফ আইসিস’, ডায়োনিসিয়ান কাল্ট, মিথ্রাইজম, আটারগাটিসের পূজা, সাইবেলের পূজাসহ আরো নানারকম ধর্মমততন্ত্রমন্ত্রবাদ।এইসব ধর্মবিশ্বাস ও রহস্যবাদের প্রতি তার আকর্ষন এতই প্রবল ছিল যে, অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন এ্যাপুলেইয়াস ‘কাল্ট অফ আইসিস’ ও ‘ডায়োনিসিয়ান কাল্ট’ সহ দু’য়েকটি কাল্ট বা তন্ত্রমন্ত্রবাদে শেষমেশ দীক্ষা-ই নিয়েছিলেন, এবং এমনকি নিজেও আইসিস পূজার একজন পুরোহিত হয়েছিলেন এক সময়। তাঁর এ্যাপোলোজিয়াতে এ সম্পর্কে সামান্য ইঙ্গিত আছে, আর গোল্ডেন এ্যাস-এও নায়কের নাম লুসিয়াস অফ মাডুরা (মাডুরা লেখক লুসিয়াসের জন্মস্থান), যে কিনা শেষ পর্যন্ত দেবী আইসিসের পুজারি হয়ে যায়। (আইসিস-ধর্মের প্রধান মন্দির, অর্থাৎ এ্যাপুলেইয়াসদের মক্কা রহস্যময় ‘টেম্পল অফ আইসিস’  দক্ষিন মিশরের গহীনে নীল নদের  ‘Philae Island’-এ অবস্থিত, যেখানে ভ্রমণসূত্রে আমার ব্যক্তিগতভাবে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। দুর্ভাগ্য, এ্যাপুলেইয়াসের সাথে দেখা হয়নি !)।

 

এথেন্সে পড়াশোনা শেষে এ্যাপুলেইয়াস এক সময় ভ্রমণের টানে এবং খানিকটা এইসব তন্ত্রমন্ত্রবাদ আর রহস্যবাদের আকর্ষনেই এশিয়া মাইনর (তুরস্ক/আনাতোলিয়া) আর পূর্ব-ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে এক সুদীর্ঘ ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন। এই সময় উপরোক্ত ধর্মমত আর  তন্ত্রমন্ত্রবাদগুলির সাথে তার আরো নিবিঢ় ভাবে পরিচয় হয় – এবং হয়তো এই পর্যায়েই তিনি আইসিস-ধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেন।

 

ভ্রমণ থেকে ফেরার পর, কিছুকাল রোমে আইনপেশাতে নিযুক্ত ছিলেন তিনি।কিন্তু আবারো তাঁকে ভ্রমণের পোকা খোঁচাতে শুরু করলে তিনি এবার মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ার উদ্দেশ্যে এক নতুন অভিযানে বেরিয়ে পড়েন। কিন্তু পথিমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়লে এ্যাপুলেইয়াস ‘ঈআ’শহরে (বর্তমান ত্রিপোলি বা এর কাছে) তাঁর এথেন্সে ছাত্রজীবনের এক পুরনো সহপাঠী সিসিনিয়াস পন্টিয়ানাসের বাড়িতে উষ্ণ আশ্রয় লাভ করেন। এইখানে থাকা অবস্থাতেই, সিসিনিয়াসের সনির্বন্ধ প্রয়াসে এ্যাপুলেইয়াস তার অত্যন্ত ধণী বিধবা মা পুডেন্টিলার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।কিন্তু বন্ধু পন্টিয়ানাসের আকস্মিক অকাল মৃত্যুর পর পুডেন্টিলার সমস্ত আত্নীয়-স্বজন সম্পত্তি দখলের লক্ষ্যে সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে এ্যাপুলেইয়াসের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগে যায় এবং তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করে বসে এই অভিযোগে যে, তিনি পুডেন্টিলার বিশাল সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে কুক্ষিগত করার অসদুদ্দেশ্যেই অবৈধ যাদুটোনা প্রয়োগের মাধ্যমে তাঁর প্রতি পুডেন্টিলার আকর্ষন জাগরূক করে প্ররোচিত করেন তাঁকে বিয়ে করতে।

এ্যাপুলেইয়াসের বিরুদ্ধে রুজুকৃত মামলাটার শুনানি হয় ১৫৬-১৫৮ খৃষ্টাব্দে ত্রিপোলির কাছে সাব্রাথা শহরে, তৎকালীণ রোমান আফ্রিকার প্রোকন্সাল (প্রাদেশিক গভর্নর) ক্লডিয়াস ম্যাক্সিমাসের আদালতে। এ্যাপুলেইয়াস একই সাথে অত্যন্ত ওজস্বী এবং উপভোগ্য বাগ্মিতার মাধ্যমে এক সুদীর্ঘ আত্নপক্ষ-সমর্থনমূলক জবানবন্দী দিয়ে সহজেই নিজের নির্দোষতা প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর এই দীর্ঘ সারগর্ভ ও রসগর্ভ জবানবন্দী ইতিহাসে এ্যাপোলোজিয়া বা ডি ম্যাজিয়া নামে তাঁর অন্যতম প্রধান রচনা হিসেবে টিকে আছে।

এ্যাপুলেইয়াস সম্পর্কে অনলাইন ‘ক্লাসিক এনসাইক্লোপিডিয়ার’ একটা চমৎকার উদ্ধৃতি দিয়ে প্রসঙ্গটা শেষ করতে চাই –

 

"The character of Apuleius, as delineated by himself, is attractive; he appears vehement and passionate, but devoid of rancour; enterprising, munificent, genial and an enthusiast  for the beautiful and good. His vanity and love of display are conspicuous, but are extenuated by a genuine thirst for knowledge and a surprising versatility of attainments.  He prided himself on his proficiency in both Greek and Latin. He is the only extant example in Latin literature of an accomplished sophist in the good sense of the term. The loss of other ancient romances has secured him a peculiar influence on modern fiction; while his chronological position in a transitional period renders him at once the evening star of the Platonic, and the morning star of the Neo-Platonic philosophy."

 

অনুবাদ প্রসঙ্গ

আমার জানা মতে ‘দ্য গোল্ডেন এ্যাস’-এর একটাই বাংলা অনুবাদ হয়েছে বাংলাদেশে বহু আগে – ‘স্বর্নগর্দভ’ শিরোনামে। অনুবাদক (যদ্দুর মনে পড়ে) মোবারক হোসেন খান। তবে অনুবাদটা যাচ্ছেতাই। তবে এটাও ঠিক যে, এই বইয়ের উদ্ভুতুড়ে উইট, হিউমার, বার্ব আর হুল্লোড়ে গতির ভাষা অনুবাদ করা দুরুহ ব্যাপার হতে বাধ্য। আসলে, ‘দ্য গোল্ডেন এ্যাস’-এর এমনকি প্রথম সারির সব ইংরেজি অনুবাদকদের বেলাতেও অভিযোগ রয়েছে যে তাঁরা এর মূল ল্যাটিন গদ্যের অভিনব কারুকার্য আর খেলাগুলি, এর ক্যালাইডোস্কোপিক বর্নিলতা আর ব্যঞ্জনার খুব সামান্যই তাঁদের ইংরেজি অনুবাদে ধরতে পেরেছেন। অনেকে (বিশেষ করে পুরোনোরা) নাকি এর আদিরসাত্নক ও খৃষ্টীয়-মূল্যবোধবিরোধী/ইর্‌রেভারেন্ট/বেয়াদব/ঝাঁঝালো দিকগুলি ইচ্ছাকৃত ভাবে চেপে গেছেন, অথবা  টোন-ডাউন বা ডাইল্যুট করে দিয়েছেন। আমার কাছে ব্যক্তিগত ভাবে অবশ্য রবার্ট গ্রেভসের অনুবাদটা ভালোই লেগেছে। আমি এটাই পড়েছি। তবে, ইনিও মনে হয় অনেকখানি কম্প্রোমাইজ করেছেন।  এছাড়া রয়েছে ই.জে. কেনি’র পেঙ্গুইন প্রকাশিত অনুবাদ। কারো কারো মতে জোয়েল সি. রেলিহ্যানের (Joel C. Relihan)অনুবাদটাই একাধারে সবচেয়ে মূলানুগ এবং সুপাঠ্য সেরা অনুবাদ। এ প্রসঙ্গে এখানে একটা চমৎকার রিভিউ পাওয়া যাবে। অনুবাদ বিষয়ে বা করতে আগ্রহী এমন যে কারো জন্য এই রিভিউ সহায়ক হবে।

এছাড়া ‘দ্য গোল্ডেন এ্যাস’-এর উপর একটা চমৎকার স্কলারলি বই আছে এখানে

 

পরিশিষ্ট

নীচে ‘দ্য গোল্ডেন এ্যাস’ সংক্রান্ত অনলাইনে প্রাপ্য কিছু রিসোর্সের সন্ধান দিলাম। এর মধ্যে রয়েছেঃ

১। এ্যাপুলেইয়াসের ‘এ্যাপোলজিয়া’-র ইংরাজি অনুবাদঃ ১ম খণ্ড,  ২য় খণ্ড,  ৩য় খণ্ড,  ৪র্থ খণ্ড

 

২। ‘দ্য গোল্ডেন এ্যাস’-এর  একটা অডিও-নাট্যরূপ। তবে যারা মুল বইটা পড়তে চাইবেন, এটা তাদের জন্য নয়! আগে শুনলে এটা বই পড়ার আনন্দ নষ্ট করে দিবে অনেকখানি। তাছাড়া তুলনায় গেলে, মূল উপন্যাসের এটা অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত, সাধারন এবং খানিকটা ভাঁড়ামি-মার্কা অনুকরন মাত্র। তবে বই পড়ার ইচ্ছা না থাকলে, নিজস্ব মেরিটে এটা শুনতে একেবারে খারাপ লাগবেনা হয়তো। এখানে ৩টা  লিঙ্ক দিলাম ইন্টারনেট থেকে (কোনটা আসল এবং কার্যকরী জানি না) ::,  ,  

৩। ‘দ্য গোল্ডেন এ্যাস’-এ লুসিয়াসের দেবী আইসিসের স্বপ্নদর্শন সংক্রান্ত একটা অনুচ্ছেদের অলিভিয়া রবার্টসনকৃত সংক্ষিপ্ত ভিডিও-পঠন। এমবেড:

 

 

৪। জোয়েল সি. রেলিহ্যান-কৃত ‘দ্য গোল্ডেন এ্যাস’-এর অনুবাদের গুগ্‌ল-প্রদত্ত ‘বুক রেজাল্টের’ এমবেড:

 

 

৫। মাডুরা-তে এ্যাপুলেইয়াসের পৈত্রিক বাড়ির (২য় শতাব্দী) ধ্বংসাবশেষের একটা ভিডিও এমবেড:

 

 

 

----------------------------------

তথ্যসূত্রঃ ‘দ্য গোল্ডেন এ্যাস’-এর রবার্ট গ্রেভ্‌সকৃত অনুবাদ, উইকিপিডিয়াসহ বিভিন্ন অনলাইন এনসাইক্লোপিডিয়া, নিজের অনুভূতি ও মতামত, ইত্যাদি।




মন্তব্য

কৌস্তুভ এর ছবি

সবই তো বুঝলাম, যে দুষ্টু নভেল পড়ে আপনার খুব আনন্দ হয়েছে, কিন্তু উপরে হায়ারোগ্লিফিক্সে পাঠকদের দুষ্টু কিছু বললেন কি না বুঝব কি করে? চোখ টিপি

মনমাঝি [অতিথি] এর ছবি

কৌস্তভ ভাই যখন মোদ্দা কথাটা বুঝেই গেছেন (বলে কিনা - Wise men think alike চোখ টিপি ) - তখন হায়রোগ্লিফিক্সের দুষ্টুত্ব নিয়ে চিন্তিত কেন ? না, নিশ্চিন্ত থাকুন, এটা স্রেফ আমার সিগনেচার - হায়রোগ্লিফিক্সে 'মনমাঝি'।

পড়ার জন্য ধণ্যবাদ।

ফাহিম হাসান এর ছবি

হাসতে হাসতে শেষ। আপ্নে ভাই পারেনও। আমার এক দস্যি বন্ধু গ্রিক ভাষার দুষ্টু বই দেখিয়েছিল। মোক্ষম জায়গাগুলো ইকুয়েশানের মত লাগল।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আগ্রহ জাগানীয়া! অডিও রূপটি শুনে ফেলব শিঘ্রী। অনেক অনেক ধন্যবাদ লেখাটির জন্য।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

মনমাঝি [অতিথি] এর ছবি

আপনাকেও অনেক ধণ্যবাদ পড়র জন্য।
পরিশিষ্টে আমার নাম্বারিং-এ ভুল আছে। '১'-নম্বর ২ বার দেয়া হয়ে গেছে - ১, ১, ২, ৩.... এভাবে। দুঃখিত।

মনমাঝি [অতিথি] এর ছবি

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

বৎসর শেষের ছুটিতে বেশীরভাগ মডু বাইরে।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

বইখাতা এর ছবি

দারুণ! খুব ভাল লাগলো পড়তে। বইটা পড়ার আগ্রহ জাগলো। তবে বাংলাদেশে বোধহয় পাওয়া যাবে না এই বই।

মনমাঝি [অতিথি] এর ছবি

পাওয়া যাবে না কেন। আজিজ মার্কেটে পাবেন নিশ্চয়ই। তাছাড়া বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের লাইব্রেরীতেও পেতে পারেন। আসলে আমি বি.সা.কে.-র লাইব্রেরী থেকে নিয়েই প্রথম এই বইটা পড়েছিলাম (রবার্ট গ্রেভ্‌সের অনুবাদটা)। ওদের ইংরেজি বইয়ের শেলফগুলি ভালো করে ঘাটলে আশা করি পাবেন।

রিভিউটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

বইখাতা এর ছবি

আচ্ছা! ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

সুন্দর পোস্ট। শিরোনাম একটু বিচিন্তিত করসিল, চোখ টিপি কিন্তু লেখা পইড়া ভুল ভাঙল। চলুক

কুটুমবাড়ি

মনমাঝি [অতিথি] এর ছবি

ধণ্যবাদ।

আমিও বিচিন্তিত হয়েই দিসি। চোখ টিপি
তবে আপনি সুচিন্তিত অথবা বিচিন্তিত - যেভাবে আপনার ভালো লাগে নিতে পারেন। দু'টাই ঠিক। দেঁতো হাসি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

বইটা পড়ার আগ্রহ রইলো
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।