এয়ারপোর্ট, এয়ারলাইন্স ও ট্রানজিট হাব-১

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ৩০/১২/২০১০ - ৯:২৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বিমান বাংলাদেশ ওয়েব সাইট
---------------------------------
(বাংলাদেশ বিমান, দেশে নতুন এয়ারপোর্ট তৈরীর (অ)যৌক্তিকতা, ট্রাঞ্জিট বিকাশ ইত্যাদি নিয়ে কয়েক পর্বে লিখার ইচ্ছা, আর এর প্রথম প্রয়াশ-বিমানের ওয়েব সাইট)
----------------------------------
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রতি ছোট্টবেলা থেকেই আমার দারুন দুর্বলতা। একেতো নিজের দেশের এয়ারলাইন্স বলে কথা, তদুপরি বিমানের লাইভেরী ও লোগো আমার ভীষণ প্রিয়।হতে পারে দেশ দরিদ্র, কংবা এয়ারলাইন্স নিতান্তই ছোট, কিন্তু দারুন আরটিস্টিক এর ডিজাইন। অনেক নামী দামী এয়ারলাইন্সের চেয়েও আমার দেশের ওই বলাকাগুলো দেখতে অনেক সুন্দর। দেখে বুকের ভেতর পুলক জেগে উঠে, একটা শিহরণ শিরদাড়া দিয়ে নিচে নেমে যায়। সব সময় স্বপ্ন দেখি, একদিন কে,এল,এম এর মত আমার বিমানও ছোট্ট দেশের অনেক বড় এয়ারলাইন্সে পরিণত হবে।অনেক বিদেশীকেও দেখেছি তারা বিমানের নাম জানে। কখনও ভ্রমন করেনি, কিন্তু ছোট্ট একটা সুন্দর নামের কারনেই হয়তো এতো পরিচিতি। আর নয়নমুগ্ধকর লোগো ও ডিজাইন তো আছেই। যাই হোক, আমি নিজে বিমানে চড়েছি সর্বেসাকুল্যে মাত্র একবার। কিন্তু প্রায় সময়েই ইউটিউবে ঢুকে বিমানের ছবি দেখি, প্লেন দেখি। আর বিমানের ওয়েবেও ঢু মারি। কবে সাইট টা অন্য সব এয়ারলাইন্সের মত প্রফেশঅনাল একটা লুক পাবে। কবে বিমানের বহর বাড়বে আর কবে আরো বেশি ডেস্টিনেশান এ যাবে। ইউরোপের অনেক বড় বড় শহরে আসবে, হয়তো একদিন আমার এই শহরেও আসবে, সেদিন আমি বিদেশি বন্ধুদের দেখিয়ে গর্ব করতে পারব, দেখো, ঐ সুন্দর পাখিটা আমার দেশের।
মাস দুয়েক আগের কথা, হঠাত্‌ একদিন বিমানের ওয়েব সাইটে ঢুকে দেখি পুরান সেই ওয়েব সাইট আর নেই।সে জায়গায় নতুন এক সাইট।বিমানের এই নতুন ওয়েব সাইট টা এখানে দেখুন। আগেকার সেই ঐতিহাসিক ও বস্তাপচা ওয়েব সাইটের বদলে যখন এই সাইট টি নাযিল হল, তখন বেশ ভালই লেগেছিল। আরও ভাল লাগলো অনলাইনে টিকেট বুকিং সিস্টেম দেখে। এক্কেবারে সেইরকম ভাল এমন কিছু না, তবে আগেরটার চেয়ে অনেক ভালো। অনেকগুলো পেইজ তখনো পুরোপুরি রেডি হয়নি, তবে নিশ্চয় খুব শীগঘিরই ঠিক হয়ে যাবে।কয়েকদিন পর আবার ঢুকি, না ঠিক হয়নি। আরও দিন যায়, আবার ঢুকি, সেই একই অবস্থা।এই আজকে আবার ঢুকলাম, নাহ মনটাই খারাপ হয়ে গেল। দুই মাস হতে চল্লো... কিন্তু কোনো পরিবর্তন নেই। শ্রীলংকান এয়ারলাইন্স ও নতুন ওয়েব সাইট চালু করেছে এই সেদিন, ১লা ডিসেম্বর ২০১০। চালুর পরদিন থেকেই ওটা পরিপুর্ণ। আর বিমানের সাইটটাতে এক্টুখানি ঘুরাঘুরি করে দেখুন। http://biman-airlines.com/transit-info/ এই পেইজটা এখনও আন্ডার কন্সট্রাকশন। আরেক্টু ঘুরাঘুরি করেন, দেখবেন এরকম পেইজ আরও অনেক আছে। http://biman-airlines.com/bangladesh-customs-rules/ এই পেইজটাও আন্ডার কন্সট্রাকশন। বাংলাদেশ কাস্টমস রুলস তো নতুন কোন জিনিস নয় যে সেটা এই ওয়েব সাইট আপলোড করার ২ মাস পরেও আন্ডার কন্সট্রাকশন থাকবে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বাংলাদেশ কাস্টমস রুলস নতুন করে ঢালাও করে লিখিত হচ্ছে, তাই এই বিলম্ব।সেক্ষেত্রে এই পেইজটা পরে সংযোজন করাই কি ভালো না শুধু শুধু এই ধরনের আন্ডার কন্সট্রাকশন নোটিশ না ঝুলিয়ে?সার্ভিস এন্ড প্রোডাক্ট মেনুতে special services, transit info, cargo services সবগুলো পেইজই আন্ডার কন্সট্রাকশন, যথারীতি ২ মাস ধরে। terms and conditions এর পাতাটিও শুণ্য। এটা শুধু বিমানের খামখেয়লিপনা আর অযত্ন অবহেলারই পরিচয় দেয়।

একটা দেশের জাতীয় পতাকা বহনকারী একটা এয়ারলাইন্সের ওয়েব সাইট এ ধরনের অবহেলা প্রদর্শন জাতীর জন্য একটি বড় লজ্জা। যে সফটওয়ার কোম্পানী এই সাইট টি ডেভেলপ করেছেন তার নাম esoftarena. তাদের পেশাদারিত্ব নিয়েও এখানে প্রশ্ন আসে। সাইট্ টি ঘুরে দেখা যায় যে এর কন্টেন্ট অনেক পেইজ এ রেডি না কিংবা অনেক ক্ষেত্রে আসম্পুর্ণ। যেমন অতিরিক্ত ব্যাগেজ নিলে কি পরিমান চার্জ প্রদান করতে হবে তা উল্লেখ করা নাই। তাছাড়া কয়টি লাগেজ ও কত কেজি ওজন এর মধ্যে কোন সম্পর্ক দেখানো হয় নাই। তথ্যগুলো পরিষ্কার নয় আর তাই কনফিউশন হওয়া খুবই স্বাভাবিক। http://biman-airlines.com/2010/09/welcome/ পেইজটি দেখুন, এর কিছু অংশ এখানে তুলে ধরা হল।
“Discover the lovely grace of the bewitching beauty and enjoy the glorious traditional hospitality, to take back fondest memories ……………………………………. a warm welcome awaits you in Bangladesh.”
“737 – 800NG”
এরকম অসংখ্য টাইপিং বা/এবং ফন্ট এরর এই সাইটে দেখতে পাবেন। এটা কোন আন্তর্জাতিক কোম্পানির ওয়েব নয়, যেন কোন স্টুডেন্ট এর করা প্রথম ওয়েব ডেভেলপিং এর কাজ, পরীক্ষামুলক ভাবে আপলোড করা। প্রশ্ন হল বিমান এই ওয়েব সাইট করতে কত টাকা বাজেট করেছিল?নিতান্ত কম বাজেটে কোন ২ দিনে গজিয়ে উঠা অপেশাদার কোম্পানিকে দিয়ে করানো হয়েছে কাজ? নাকি এক্ষেত্রে কোন মামা চাচা সম্পর্ক বা ঘুষের লেনদেন হয়েছে, সচরাচর বিমান এর সব কাজে যা হয়ে থাকে বলে সকলের অভিযোগ। আর যদি এর কোন কিছুই না হয়ে থাকে, তবে ইসফটএরেনা কোম্পানীটি কি বাংলাদেশের সফটওয়ার ফার্মগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে? যদি তাই করে, সেটা যেই মুহুর্তে দেশ গার্টনার এর রিপোর্ট অনুসারে টপ আউটসোর্সিং দেশের তালিকায় পা দিয়েছে, তখন এটা দেশের সফটওয়ার শিল্পের জন্য একটা বিরাট লজ্জা। এরকম কাচা কাজ নেটে এভাবে মাসের পর মাস প্রদর্শন করে রাখা অপমানজনক। আশা করি বিমান (অথবা ইসফটএরেনা) কর্তৃপক্ষ শীঘ্রই ওয়েব সাইট টি সম্পুর্ণ করবে এবং এতে বিদ্যমান ভুলভ্রান্তি দূর করবে। তবে এ ধরনের ওয়েব সাইট তৈরীর ক্ষেত্রে বিমান বাংলাদেশ কে যথেষ্ট পারদর্শী ও প্রফেশনাল সফটওয়ার নির্মাতা কোম্পানীর সেবা নিতে হবে। আর ওয়েবের কন্টেন্টও কোনও বিশেষজ্ঞ দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে। তাছাড়া ওয়েবের স্ট্রাকচার, কন্টেন্ট, লুক এন্ড ফীল, ব্যবহার উপযোগীতা, যথাযথ শব্দচয়ন, আবশ্যকীয় তথ্য ইত্যাদি কোনও ইউজাবিলিটি এক্সপার্ট দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে সংযোজিত ও উন্নত করা দরকার। এয়ারলাইন্সের ওয়েবসাইট শুধুই একটি ওয়েবসাইট নয়, এটা একদিকে যেমন বিমান সংস্থা ও দেশের একটি শৈল্পিক উপস্থাপনা, অন্যদিকে তেমনি যাত্রীদের জন্য প্রয়োজনীয় সকল তথ্যের সমারোহ, তদুপরি সাধারনের জন্য এটা হতে হবে ব্যবহা্‌র বান্ধব। বিশেষ যত্ন নেওয়া তাই অত্যাবশ্যক। এ ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এর সজাগ দৃষ্টি আমাদের সবার কাম্য।

শামীম আরমান


মন্তব্য

অপছন্দনীয় এর ছবি

শুধু বিমান নয়। সরকারী সব ক্ষেত্রগুলোতেও একই অবস্থা। দয়া করে একটা ওয়েবসাইট তৈরী করে আমাদের বাধিত করেন ওনারা, সাথে আমাদের ট্যাক্সের পয়সার যে সদ্ব্যবহার(!) হচ্ছে সেটাও আমাদেরকে দেখান।

সত্যি বলতে কি, আমার মনে হয় আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে আমরা কাজ করি ঠিকই, কিন্তু সেটা ঠিকমত করা বা নিখুঁতভাবে করা নিয়ে আমাদের কোন মাথাব্যথা নেই।

বাংলাদেশ হাই কমিশনের ওয়েবসাইট নিয়ে লিখেছিলাম কিছুদিন আগে - দেখতে চাইলে এখানে পাবেন

অতিথি লেখক এর ছবি

সত্যি বলতে কি, আমার মনে হয় আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে আমরা কাজ করি ঠিকই, কিন্তু সেটা ঠিকমত করা বা নিখুঁতভাবে করা নিয়ে আমাদের কোন মাথাব্যথা নেই।

এটা আমদের জাতীয় ব্যাধি হয়ে গেছে।আর আমরা যাই করি না কেন, প্রেসেন্টেশন টা থাকে খুবই দূর্বল। আমার এক শিক্ষক বলতেন,
"it is not important to see what you know, it is important to see how well you present what you know"

আপনার লেখাটাও পড়লাম, এত্তো অযত্নে এসব বানানো হয়! তাতেই বুঝা যায় এরা কতোটা সিরিয়াস কাজে কর্মে!

শামীম আরমান

মাহ্ফুজ খান এর ছবি

একদম ঠিক কথা, সরকারি ওয়েবসাইটগুলো দেখলে বমি আসে।

অতিথি লেখক এর ছবি

বিমানের নাম বদলিয়ে মুজিব কিংবা বঙ্গবন্ধু বিমান সার্ভিস করা যাবে না তো। তাই কি দরকার এতো কষ্ট করে এগুলা ঠিকঠাক করার! এর চেয়ে যেটার নাম মুজিব কিংবা বঙ্গবন্ধু করা যাবে সেটার পিছনে সময় ব্যয় করা উচিত। বোকা বাঙ্গালিরা এখনো জাতির জনককে সম্মান দিয়ে শিখল না। দেশ যাবে যাক, জাতির জনকের নামখানা সবার উপরে থাকা চাই।

"যায় যদি যাক প্রান,
হিরকের রাজা ভগবান"

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার মনে হয় শাহজালাল না রেখে যদি জিয়া বিমানবন্দরের নাম বংগবন্ধু রাখা হতো তবে মুন্সীগঞ্জ বা ত্রিশাল এ আর নতুন বিমানবন্দর লাগতো না।

মুস্তাফিজ এর ছবি

এখানে বংগবন্ধুকে টেনে আনা কেন?

দুইটা মন্তব্যেই আপত্তি জানাইলাম।

...........................
Every Picture Tells a Story

শামীম এর ছবি

সরকারী সাইট ... হাহ্
http://www.forms.gov.bd এই সাইটতো বাংলায় পড়া যায় না, ইংরেজি ভার্সন থাকাতে রক্ষা। ফর্মগুলোতেও বাংলা লেখার বদলে আজগুবী সব ক্যারেক্টার। ওগুলা পড়তে হইলে বিশেষ এক লোককে পয়সা দিয়ে তার বস্তাপচা সফটওয়্যার কেনা লাগবে। এই লোককে সরকারের কেউ কেউ বিশেষজ্ঞও ভাবে (LMAO) ....

দুইদিন আগে পাসপোর্টের ফর্ম নামালাম। একটা জায়গা না বুঝাতে মূল ফর্ম নিতে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দেখি সম্পুর্ন নতুন ফর্ম লাগে এখন যার কোনো চিহ্ন/তথ্য ওয়েবসাইটে নাই। দেখলাম দুই একজন আবার সেই পুরানা ফর্ম পূরণ করে নিয়ে এসে ধরা খাইছেন ... ...
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

অতিথি লেখক এর ছবি

হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন, সরকারী ওয়েবসাইট তাও শুধু দেশের লোকেরা ব্যবহার করেন, বিমানের টা তো ইন্টারন্যাশনাল। এটার সাথে পুরা দেশে মান সম্মান রুচিবোধ জড়িত। যখন আমরা নিজেদের আই,টি, তে দক্ষ হিসেবে প্রমান করতে চাই তখন এসব ফেস বা আইকন জাতীয় পরিবেশনাগুলো যথার্থভাবে মানসম্মতভাবে হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
আর এটাই কি সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের পরিচয়?

ধুসর গোধূলি এর ছবি

ঐ সাইটের জন্য বংশী আল্পনা ফন্ট লাগবে শামীম ভাই (প্রথম আলো আগে যে ফন্ট'টা ব্যবহার করতো)।

তবে ফরম গুলোর অবস্থা ভয়াবহ। সেদিন একটা ফরম ডাউনলোড করে সেটার ভাষা যে কী, এইটা বের করতেই আমার অবস্থা ব্যাপক কাহিল হয়ে গেছিলো।



বিএসএফ—
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ

ইফতেখার [অতিথি] এর ছবি

খোদ বাংলা একাডেমীর সাইট টা দেখুন...আজগুবী সব ক্যারেক্টার। ওগুলা পড়তে হইলে বিশেষ এক লোককে পয়সা দিয়ে তার বস্তাপচা সফটওয়্যার কেনা লাগবে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।