তার নিষ্পাপ চোখের ছায়ায় বিস্ময়ের ছোপ ফেলে কাঁসার হাঁড়িটা নিজে থেকেই রান্নাঘরের তাক গড়িয়ে মাটিতে পড়তে শুরু করে, তারপর স্কুলঘন্টির মতন বিকট একটা ঠন্ করে উঠে। ভোরবেলার ধুলায় পাকা মেঝেতে কাতরাতে কাতরাতে পাত্রটা অনেকক্ষণ ধরে একটা কিচকিচকিচকিচ শব্দ করতে থাকে, যেমনটায় দাঁতে শিরশির ধরে যায়, তারপর থামে। কিন্তু এসব তখন তার খেয়াল করার সময় ছিল না, খেয়াল করলেও অবশ্য ক্ষতি কিছু হতো না। তড়িঘড়ি করে পালাতে গিয়ে পা পিছলে তার সব আয়োজন সাঙ্গ হয়; পদধ্বনিগুলো এগিয়ে আসে, ধরা পড়া নিশ্চিত জেনে সে হাল ছেড়ে দিয়ে শেষে আছাড় খাওয়া জায়গাটাতেই বসে অপেক্ষা করতে থাকে।
বাড়ির অন্য প্রান্ত থেকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসতে থাকা জাহানারা স্বাভাবিকভাবেই ভাবে, ঘরে চোর ঢুকেছে। ভয়ে তার প্রায় নাভিশ্বাস উঠে যায়, কারণ বাড়িতে কোন পুরুষমানুষ নাই – গত রাতেও তার স্বামী দোকান থেকে ফেরেননি। এমনিতে শালুকপুরে চোর-ডাকাত সেরকম উপদ্রব না করলেও কিছুদিন ধরে শোনা যাচ্ছে সর্বহারা পার্টির আনাগোনার কথা। খালি বাড়িতে ডাকাত পড়লে আর টের পাওয়ার উপায় থাকত না, আর গ্রাম-বাংলার চিরন্তন রীতি অনুযায়ী ডাকাতির মৌসুমে চোররাও আয়-রোজগারের জন্য উতলা হয়, অতএব অগ্রহায়ণ মাসের এই সকালে আচমকা আওয়াজে জায়নামাজে বসে জাহানারার গলা শুকিয়ে যায়, বুকের মধ্যে ঢিবঢিব করতে থাকে। সম্বিত ফিরে পেয়ে ফজরের নামাজের আত্তাহিয়াতু ঠোঁটে নিয়েই সে রান্নাঘরের দিকে দৌড় দেয়, যেতে যেতে ভাবে, মনে হয় বিড়াল হাঁড়িতে মুখ দিছিল।
কিন্তু জাহানারা নিজেও জানে পাকঘরের ভারি কাঁসার হাঁড়িটা ঠেলে ফেলা কোন বিড়ালের কাজ না। তাই কোন ফাঁকে যেন আত্তাহিয়াতুটা আয়তুল কুরসি হয়ে যায়, উঠানের মাঝামাঝি এসে তার হাত-পা কাঁপতে শুরু করে। অবশেষে সে উঠান পেরিয়ে দু-দিক খোলা রান্নাঘরটায় পা দেয়, এবং...
পা দিতেই তার ফর্সা মুখটা রাগে লাল হয়ে যায়।
ঝিনাইদহ প্রপার থেকে তারা এই প্রায়-জঙ্গল এলাকায় এসেছে মাত্র বছরখানেক হয়। প্রথম প্রথম জাহানারার একটুও ভালো লাগত না, পরেও লাগবে না। আশেপাশে স্কুল-কলেজ তো দূরের কথা, ঠিকমতো একটা মুদির দোকান পর্যন্ত নাই। ছেলেপুলেকে দুই গাঁ পার করে পড়তে যেতে হয়। বুধবারে ছোটখাট একটা হাট বসে বলে জিনিসপত্র তাও কিছু পাওয়া যায়, কিন্তু সপ্তার বাকি দিন সামান্য কিছু কিনতে হলেও মোক্তারপাড়া লোক পাঠানো লাগে। রাতে খুব মশা হয়, সারারাত শিয়াল ডাকে; গাছপালার জন্যই হয়তো শীত আশার অনেক আগেই শীত পড়ে যায়। ফরিদপুরের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় লোকজনও খুব কম। যারা আছে, বাইরের পৃথিবী নিয়ে তাদের কৌতূহল সীমিত।
রাস্তাঘাটের অবস্থা খারাপ হওয়াতে সেই বাইরের পৃথিবী থেকে শালুকপুরকে আরোই দূরদূরান্ত বলে মনে হয়। আব্দুস সোবহান তাই যখন এখনে একটা আ্যসবেস্টসের দোকান দিতে চান তখন আত্মীয়স্বজন অনেক করে বুঝিয়েছিল। (‘ম্যালেরিয়া হয়ে মরবে নে,’ জাহানারা ফোড়ন কেটে বলতে শুনেছিল তার ননদকে।) সে নিজেও অনেক অনুনয়-বিনয় করেছিল। কারও কথাতেই কাজ হয়নি। আব্দুস সোবহান দমে যাওয়ার লোক নন, সাত সন্তানের পিতাকে এত সহজে দমে গেলে চলে না। সবার নিষেধ উপেক্ষা করে তিনি শালুকপুরে এসে দোকান দেন; আশা, বৃহত্তর ফরিদপুরের প্রথম আ্যসবেস্টসের দোকান নিশ্চয়ই ভালো চলবে, শহর থেকে খানিকটা ভেতরে হলে খরচও পড়বে কম।
দোকানটা চলেনি। মাসখানেকের মধ্যেই সদরে নতুন করে দোকান দিতে হয়, বেশ কিছু ধার-দেনাও করা লাগে। কী কষ্টই না গেছে তখন! দিনের পর দিন জাহানারা গোপনে খেয়ে না-খেয়ে থেকেছে, স্বামী-সন্তানকেও কখনো বুঝতে দেয়নি। কিন্তু থাক সেসব কথা। সুখের বিষয়, সেই দোকানে এখন অল্প অল্প করে বেশ ভালোই বিক্রি হচ্ছে। আগের সেই টানাটানি আর নাই, উনিও আর আগের মতন বিমর্ষ থাকেন না। আস্তে আস্তে তাদের অবস্থা ফিরতে শুরু করেছে। এইতো কিছুদিন হয় দোকানের লাভ আর তার ভাসুরের পাঠানো টাকায় সস্তায় একটা হিন্দু বাড়ি কেনা হয়েছে। জাহানারার সামান্য যা কিছু গয়না ছিল, তাও অবশ্য বাড়িটা কিনতে চলে গেছে – তাতে তার কোন ক্ষোভ নাই, শাড়ি, গয়না, এসবের প্রতি কখনই তার খুব একটা দূর্বলতা ছিল না। আর সবাই খুশি থাকলেই সে খুশি।
তাছাড়া বাড়িটা সুন্দর। পুরানো দিনের অবস্থাপন্ন লোকের বাড়ি। বোঝাই যায় অনেক শখ করে বানানো – বাহির দিকটায় সূক্ষ কারুকাজ করা, অনেকগুলা ঘর; বাড়ির পেছনে বাঁধানো বড় একটা কুয়া। সেই কুয়ার পানিতে তাকালে বুকটা কেমন জানি করে। ঘরগুলাও বেশ বড়, আর সব পাকা। একটা ঘরের – এখন যেটায় তারা স্বামী-স্ত্রী ঘুমায় – এক কোণায় ছোট একটা ঠাকুরঘর ছিল বোঝা যায়। প্রথম যেদিন জাহানারা এখানে আসে, সেদিন রান্নাঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে সে অবাক হয়ে দেখে, পরিত্যক্ত পূজার থালায় তখনো একটা নীল অপরাজিতা ফুল পড়ে আছে।
সেই রান্নাঘরেই স্বপনের সাথে আমাদের প্রথম পরিচয়। কাঁসার হাঁড়িটা তখন সবে মুখ বুঁজেছে। উঠান পেরিয়ে হুড়মুড় করে এসে জাহানারা দেখে, এক পুকুর ঝোলাগুড়ে হাত-পা ছড়িয়ে পড়ে আছে তার তৃতীয় সন্তান।
সঙ্গত কারণেই তার আর মাথার ঠিক থাকে না। ‘আমার জানটা জ্বালায়ে খাবি!’ চেঁচায় সে। ‘অ্যারে, আমারে তোরা একটু শান্তি দিবি নে?’ তারপর পড়ে থাকা বাসনপত্রের ভিড় ঠেলতে ঠেলতে (বা আরো নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, মেঝে সয়লাব করা গতকাল রাতের পুঁটি মাছের তরকারির দিকে একবার রাগী চোখে তাকিয়ে, টুকরা টুকরা হয়ে যাওয়া পুরানো মালশাটা সাবধানে ডিঙিয়ে, তার বাবার দেয়া পেতলের গেলাসটা উঠিয়ে রাখতে গিয়েও না রেখে এবং পরিশেষে নিজেও প্রায় ঝোলাগুড়ে পা পিছলে) জাহানারা স্বপনের পিঠে কয়েক ঘা বসিয়ে দেয়। বলে, ‘অ্যারে, বলিস নে ক্যান?’
স্বপন চুপ করে থাকে। (এসব পরিস্থিতিতে আসলে ঠিক কী বলতে হয়? সত্যি বলে পার পাওয়া গেলে কি আর কেউ ভোরবেলায় লুকিয়ে রান্নাঘরে ঢোকে?)
জাহানারার তাতে আরো রাগ হয়, ছেলের ঘাঁড় ঝাঁকিয়ে সে আবার শুধায়, ‘কি রে, বলিস নে ক্যান? রান্নাঘরে কী করতে ঢুকছিলি?’ এক-দুইটা কানমলা খেয়ে প্রভাতের কয়েদি অস্ফুটভাবে পুকুরবিষয়ক কি যেন একটা বলতে যায়। ‘পড়ালেখার নামগন্ধ নাই, এসব করা হচ্ছে!’ জাহানারা ফুঁসতে ফুঁসতে বলে। ‘আসুক তোর বাপ আজকে! সব জায়গা থেকে নালিশ আসে তোর নামে! একটু দুষ্টামি কম করলি কী হয়? এই যে সব জিনিসপত্র লণ্ডভণ্ড করলি, এখন তার কী হবি? এক মাসের গুড় ফালায়ে দিলি, সকালে কী দিয়ে নাস্তা হবি, শুনি?’
অভিমানে স্বপনের চোখ ভিজে আসে, কিন্তু সে কান্না বুকের ভেতর চেপে রাখে। আবেগের কাছে আত্মসম্মান বিসর্জন দেয়া তার ধাতে নেই, কষ্টে মরে গেলেও, চোখে পানি চলে আসলেও সে কখনো টু শব্দ করে না, সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করে যায় কেউ যেন তার কান্না দেখতে না পারে। কী ঘোরতর অন্যায়! মানা গেল সকালে রা্ন্নাঘরে গুড় চুরি করতে আসাটা ঠিক হয়নি, তবে সেটা কি তার একার দোষ? সাত-সকালে যে কেউ একা একা মাছ ধরতে যায় না সে তো যে-কেউই বোঝে। মারটা স্বপনকে খেতে হলো, তার একমাত্র কারণ সে ধরা পড়েছে – তার অন্য ভাইদের কেউ নয়। অথচ চৌধুরীপুকুরে যাওয়ার পরিকল্পনার কোন পর্যায়েই স্বপনের গুড় জোগাড় করার কোন কথা ছিল না।
সপ্তাখানেক আগে পাশের বাড়ির আন্দু তাদের খবর দেয়, চৌধুরীপুকুর যেমন বড়, তেমন মাছ উঠে। এ অঞ্চলে মাছ ধরার এত জায়গা আছে যে স্বপনদের কখনো দূরে যাওয়ার দরকার পড়েনি। কিন্তু মানুষমাত্রই বৈচিত্রপিয়াসী, তার উপর স্কুল পালানোর বয়স হলে তো কথাই নাই। হৈ হৈ করে দিনক্ষণ ঠিক হয়ে যায়; ঠিক হয়, যাওয়ার আগের দিন তারা রাতের খাওয়া থেকে রুটি সরিয়ে রাখবে, আন্দু আনবে চিড়া আর মুড়ি। (এত সাবধানতার কারণ সামনে বার্ষিক পরীক্ষা আসছে, তাদের মা শুনলে কিছুতেই যেতে দেবে না।) ঝোলাগুড়ের প্রশ্নে সবাই একটু আলসেমি ভাব দেখায়, কারণ গুড়ের হাঁড়িটা তো রান্নাঘরেই থাকে, এক ফাঁকে একটু নিয়ে নিলেই হবে।
সেই আলসেমির জন্যই শেষ পর্যন্ত স্বপন ধরা খায়। কাকভোর পর্যন্ত উত্তেজনায় তাদের কারো ঘুম হয় না, কিন্তু তার পরপরই প্রায় সবাই নিদ্রাদেবীর বড়শিতে গাঁথা পড়ে। স্বপন আর তার পিঠাপিঠি ভাই সরফরাজই কেবল রণে ভঙ্গ দেয় না, শ’খানেক হাই তোলার পরও তারা হেডস্যারের ছেলে তাজুল কত বড় শয়তান, আগামিকাল অনেক মাছ নিয়ে বাড়ি ফেরার পর তাদের মা ঠিকই কত খুশি হবে, কলেজপাড়ার হোমিওপ্যাথ ডাক্তারের মেয়ে শবনমকে তাদের বড় ভাই শেখরের খুব মনে ধরেছে, একটা নতুন ফুটবল হলে কত ভালো হতো, – ইত্যাদি দার্শনিক আলাপ করে আধমরার মতো জেগে থাকে।
ভোর হয়, তারপর সকাল হতে চায়, তবু কারো ঘুম ভা্ঙে না। শেষের দিকে সফাও একটু ঝিমাতে শুরু করে। ধাক্কাধাক্কির পর তাও যা লোকবল বাড়ে, শেখর (গতকাল যে সোৎসাহে ঝোলাগুড় থেকে ঝাঁকিজাল পর্যন্ত অনেককিছুই জোগাড় করার দায়িত্ব নিয়েছিল) যাবে না বলে সাফ জানায়। উপরন্তু কাঁথায় মুখ গুঁজে একটা কড়া ধমক দিয়ে সে ভাইদের মনোবলের বারোটা বাজিয়ে ছাড়ে; ছোট দুই ভাইকে মর্মাহত দেখে সঞ্জীব নিজের ঢুলুঢুলু চোখ উপেক্ষা করে উৎসাহ দেখায় বলেই পরিকল্পনাটা শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যায় না। এ পর্যায়ে তাদের খেয়াল হয়, গুড় জোগাড় হয়নি। বালিশের নিচ থেকে শুকনো রুটিগুলো শাহীনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে স্বপন নিজেই তখন যায় কাঁসার হাঁড়িটার কাছে। এর পরের ইতিহাস আমাদের জানা।
মায়ের বকুনি খেয়ে স্বপন তাই ভীষণ কষ্ট পায়। একে তো সারারাত জেগে থাকার কষ্ট, তার উপর সব ভাইদের নালিশের দায় তার একার উপর বর্তানো – এ পর্যন্তও না হয় সওয়া যেত। কিন্তু তাই বলে অপ্রাসাঙ্গিকভাবে পড়াশোনার ব্যাপারটা টেনে আনা কি তার মায়ের ঠিক হয়েছে? হ্যা, তার শালুকপুরে এসে আর পড়তে ইচ্ছে করছে না, কিন্তু আগের স্কুলেও সে ক্লাসে তৃতীয় হয়েছিল। তখন তার বাবা খুশি হয়ে নিজে থেকেই তাকে একটা দূরবীণ কিনে দেবে বলেও শেষ পর্যন্ত দেয়নি, কই তখন তো সে মন খারাপ করেনি? একবার পরীক্ষায় একটু খারাপ হয়েছে বলেই তার সাথে এরকম করা হবে?
গুড়লেপা রান্নাঘরের মেঝে থেকে এক লাফে সে দাঁড়িয়ে পড়ে; মাকে উদ্দেশ্য করে চেঁচিয়ে বলে, ‘লাগবে না তোমার গুড়! নিজেই নাস্তা খাও, যাও!’ তারপর বের হয়ে যায়।
সকালে অনেকক্ষণ পর্যন্ত জাহানারা মনে মনে তিরিক্ষি হয়ে থাকে। রান্নাঘর গুছিয়ে আবার নামাজ পড়তে বসে বারবার সে প্রথম রাকাতে সূরা ইখলাস গুলিয়ে ফেলে, দানে দানে তিনবারে শেষ পর্যন্ত ফজরের নামাজ পড়া হয়। ঠিক তার পরপরই তার তের মাস বয়েসী মেয়ে ননী কাঁদতে শুরু করে। এমনিতে সে দিনরাত ঘুমায়, আজ তার কী হয়েছে আল্লাই জানে। ছোট মেয়েকে সামলাতে তাকে বড় মেয়ের দ্বারস্থ হতে হয়, মণিকে ঘুম থেকে জাগিয়ে সে দেখে, শেখর দরজায় দাঁড়িয়ে, নাস্তা করে সে বাইরে যাবে।
‘কনে যাবি?’
‘কলেজপাড়া, শফিকের সাথে পড়তে বসব,’ শেখর কেশে বলে।
‘ইশকুল যাবি নে?’
‘ওখান থেকে যাব।’
জাহানারা নাস্তার যোগাড় করতে বসে। মুরগির খোপে দুইটা ডিম খুঁজে পাওয়া গেছে, তাই আপাতত ভাজি করতে হবে। দল ধরে ছেলেপুলে যখন বের হয়েছে সহসা ফিরবে না। রুটির একটা ব্যবস্থা করতে হবে। বাসি ভাত থাকলেও চলতো, কিন্তু নেই।
উনি কখন আসেন আজকে... তিনটা-চারটার আগে মনে হয় না। তারপর আবার যাবেন, হয়তো ফিরবেন।
আটা বেলা শেষ করে জাহানারা ডিম ভাজি করতে বসে।
ভালো করছি বৈকে, ভাবে সে। এত্ত জিদ হইছে ছাওয়ালডার।
নাস্তা বানানো হয়ে যায়। শেখর রওনা হওয়ার একটু পর মণিও স্কুলে চলে যায়। এক ফাঁকে জাহানারা নিজের মুখে এক টুকরা রুটি পুরে চিনি দিয়ে চিবোতে থাকে। আজকের মতো এই তার নাস্তা, আর খেতে ইচ্ছা করছে না।
খানিক পরে স্বপন ইচ্ছা করেই ঘুরাপথে এসে ছিপযাত্রায় শামিল হয়। হাত খালি দেখে সঞ্জীব জিজ্ঞেস করে, ‘কিরে, গুড় আনলি না?’ গজগজ করতে করতে সে আগায়।
পেছন থেকে এসে সরফরাজ বলে, ‘ধরা খাইছ, না?’
তারা হাঁটতে থাকে।
এমন সময় স্বপনের খেয়াল হয়, আন্দু আসেনি। ‘আন্দু কই?’
‘আর আন্দুর খবর নাই, মনে হয় ঘুমাইতেছে,’ পাশ থেকে শাহীন বলে।
‘ও থাকলি জাল পাওয়া যাইত।’
সঞ্জীব জিজ্ঞেস করে, ‘আন্দুর কি জাল আনার কথা ছিল?’
‘না,’ স্বপন বলে, ‘কিন্তু বড়দার রফিকের কাছ থিকে জাল আনার কথা ছিল। আন্দু রফিকদের বাসা চেনে।’
এক কথা, দুই কথা করে আস্তে আস্তে পৃথিবীটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। একটু পর ভাইদের হাসি-ঠাট্টার শব্দে পথের ধারের একটা ঝোপ থেকে ভয়ে অনেকগুলি শালিক উড়ে যায়।
জগৎ-সংসারের নিয়ম অনুযায়ী যে দিনগুলো ছন্দপতন দিয়ে শুরু হয়, সেসব দিনে সবকিছুই একটু খাপছাড়া থাকে। হাসুনির মা যখন এলো, তখন বেলা প্রায় দ্বিপ্রহর।
‘চাচি, একটু দেরি হয়ে গেল,’ লাকড়ি নিয়ে ঢুকতে ঢুকতে বলে সে। ‘বাতের ব্যথায় এক্কেরে কাহিল হয়ে পড়ছিলাম, তারপর হাসুনি একটু সর্ষার তেল মাখায়ে দিল, তো এখন একটু ভালো লাগতিছে।’ জাহানারা তাকে যা একটু কড়া কথা বলবে বলে ঠিক করে রেখেছিল, এই শুনে তাও ভুলে যায়।
‘আহারে, এখন কেমন লাগতিছে তোর?’
‘এখন ভালো, কিন্তু কখন না কখন আবার শুরু হয়।’
‘বেশি করে লেবুর রস চিপে সরবত বানায়ে খাইস, ভালো লাগবে নে।’ আজ যেন সে তাড়াতাড়ি বাড়ি গিয়ে বিশ্রাম করে, জাহানারা সেটাও বলে তাকে।
হাসুনির মাকে চাল বাছতে দিয়ে সে ননীকে সামলাতে যায়, আবার সে কাঁদতে শুরু করেছে। মেয়েকে শান্ত করে, তারপর হাসুনির মায়ের কাছে রেখে জাহানারা কুয়া থেকে পানি তুলতে গিয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।
গোছল সেরে সে ভাত রাঁধতে বসে। শিং মাছ কুটতে কুটতে হাসুনির মা হঠাৎ জিজ্ঞেস করে, ‘চাচির কি মনটা একটু খারাপ?’
জাহানারা বিস্মিত হয়, ‘কই না তো!’ তারপর সকালের ঘটনা খুলে বলে।
সব শুনে হাসুনির মা বলে, ‘আপনের ভয় করে নাই?’
‘তা তো করিইছে। তার উপর শেখরের বাপ তখন বাড়িতে নাই,’ চুল থেকে ভেজা গামছা খুলে চিপতে চিপতে বলে সে।
‘আপনি আগে থেকে কিছু টের পান নাই?’
‘না, তার কি আর জো আছে। যেই দুষ্টু হইছে ছাওয়ালপাওয়াল।’
যার যার কাজে খানিকটা সময় চলে যায়।
একটু পর হাসুনির মা হেসে ফেলে। জাহানারা অবাক হয়ে তাকে হাসির কারণ জিজ্ঞেস করে।
‘চাচি, কন দেখি আপনি টের পান নাই ক্যান?’
জাহানারা উত্তর দিতে পারে না।
‘চাচি, আমাদের স্বপনরে আপনি কী ডাকেন?’
এবার সেও হেসে ফেলে।
‘ম্যাও।’
হাঁটতে হাঁটতে সূর্যটা একসময় মাঝ আকাশে চলে আসে, তারাও পৌঁছে যায় চৌধুরীপুকুর। আন্দু ভুল বলেনি, পুকুরটা এত বড় যে এক মাথায় দাঁড়িয়ে আরেক মাথা দেখা যায় না। ঘন সবুজ পানি দেখে ছেলেরা আনন্দে চিৎকার করে উঠে বড়শিতে টোপ গাঁথতে বসে।
বেলা গড়িয়ে যায়, তবু সবাইকে তাজ্জব করে একটা মাছও ধরা পড়ে না। একটু পরপর হাই তুলতে থাকা শাহীন এক সময় ছিপ ফেলে নিজেই পানিতে লাফিয়ে পড়ে।
‘কী করতেছিস?’ তার বাকি ভাইরা সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠে। ‘দিলি তো মাছগুলোরে ভাগায়ে, ঘন্টার পর ঘন্টা এত কষ্ট করে বইসে আছি, এখনি টোপ গিলতো,’ সরফরাজ বলে।
‘ঘন্টা গিলতো নে,’ শাহীন পানিতে হাত-পা ছড়ায়, ‘এতক্ষণে গিলে নাই, আর গিলিছে... তাই ভাবলাম... একটা সাঁতার অন্তত দিয়ে যাই...’
অন্যরা চুপ হয়ে যায়। শাহীনের কথায় যুক্তি আছে, এতই যদি মাছ থাকে তাহলে এতক্ষণে তারা একটাও মাছ ধরতে পারেনি কেন?
সঞ্জীব জিজ্ঞেস করে, ‘টোপ বানাইছে কে কে?’
‘আমি আর সেজদা,’ সরফরাজ বলে।
‘আমিও ছিলাম,’ পুকুর থেকে হাত উঁচিয়ে শাহীন বলে।
ঠিক তখনি সঞ্জীবের বড়শিতে টান পড়ে। সবাই উৎসাহ নিয়ে সেদিকে তাকায়, সত্যি সত্যি তার জন্য অন্যদের মাছ ধরা ব্যাহত হচ্ছে ভেবে শাহীন আস্তে আস্তে পানি থেকে উঠতে থাকে। কিন্তু যে মাছটা উঠে সেটা বড়জোর এক বিঘত লম্বা একটা খরশোলা।
‘টোপের দোষ নাই, সব শালা কপালের দোষ,’ সরফরাজ পিচ করে থুথু ফেলে অন্যদিকে তাকায়।
‘ঐ আন্দু শালা এক নম্বরের চিটার, ওর কথা শোনাই ভুল হইছে,’ শাহীন বলে।
একে একে সবাই ক্লান্তভাবে ছিপ তুলে নেয়।
স্বপন চুপ করে থাকে। তার মনটা ভালো নেই।
‘চল খায়ে নেই,’ অবশেষে সঞ্জীব তার কাঁধে হাত রেখে বলে। ‘মার সাথে ঝগড়া করছিস, না?’
কাছেই একটা কাঠঠোকরা ঠকঠক, ঠকঠক করতে থাকে। স্বপন কিছু বলে না।
এত সকালে এ রকম হট্টগোল শুনে যে কেউই এমন করতো।
একটা ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে সে উঠে দাঁড়ায়, তারপর কাছের একটা অশ্বথ্থ গাছের নিচে হেলান দিয়ে বসে।
‘রুটি খাব কি দিয়ে? গুড় তো আনা হয় নাই,’ শাহীন বলে।
‘শুদাই খাই,’ সঞ্জীব বলে। ‘এখন তো আর কিছু করার নাই, যা হওয়ার হয়ে গেছে।’
‘হ, আর কাজ নাই,’ সরফরাজ বলে। ‘খটখটা রুটি এখন শুদা খাই। আমারে গুড় আনতে দিলিই হতো।’
‘তা গেলি না ক্যান?’ স্বপন পাল্টা ঝাঁঝায়।
পাশ থেকে শাহীন বলে, ‘আমারে বললিও হতো।’
‘এক থাপ্পড় খাবি।’
সঞ্জীব ভাইদের মাঝখানে এসে দাঁড়ায়। বোঝে সে, খিদার চেয়ে বেশি এত দূর হেটে আসার পর মাছ ধরতে না পারার হতাশাটাই চাড়া দিয়ে উঠছে; বলে, ‘আচ্ছা হইছে। এখন প্যাঁচাল পাড়লে কি গুড় আসবে?’
তারা শুকনা মুখে খেতে বসে।
সত্যি তো, ছেলেটারে এত মারা ঠিক হয় নাই, জাহানারা ভাবে। খুব অভিমানী হয়েছে তার এই ছেলেটি, বাপের উদাস ভাবটাও পেয়েছে। কীভাবে তার রাগ ভাঙানো যায়?
আজকের রান্নার আয়োজন কুমড়ার বড়ি দিয়ে শিং মাছ আর আলুর চচ্চরি। ছেলের সাথে আপোস করতে সে লাল শাকে একমুঠ কুঁচো চিংড়িও ছেড়ে দেয়। কয়েকদিন ধরে টানা সকালের নাস্তা ঝোলাগুড় দিয়ে হচ্ছে।
পড়াশোনাটা যদি একটু ঠিকমতন করতো...
হাসুনির মাকে দিয়ে কাপড় কাচাতে হবে আজ-কালকে কোন এক সময়, অনেক কাপড় জমে গেছে।
মাশাল্লাহ, তার ছেলেমেয়েদের সবারই মাথা ভালো। একটু পড়লেই হয়।
মণি স্কুল থেকে ফেরে। হাসুনির মা একটু তার বাসা থেকে ঘুরে আসার নাম করে উধাও হয়ে যায়, তারপর একটা পান চিবোতে চিবোতে ঢোকে। মায়ের পেছন পেছন আন্দুও উঠানে প্রবেশ করে। জাহানারার খেয়াল হয়, আন্দু হয়তো জানবে ছেলেরা কোথায় গেছে।
‘চৌধুরীপুকুর গেছে দাদি,’ ছেলেটা বলে। ‘আমি ঘুমাইতেছিলাম তাই আর যাই নাই।’
সে আবার কোথায়?
যে দিক নির্দেশনা পাওয়া গেল, তা থেকে মনে হয় অনেক দূর। পোলাপান ইশকুল পালায়ে এত দূর গেছে মাছ ধরতে?
জাহানারা আবার তরকারির হাঁড়িতে মন দেয়, একটু পর যায় নামাজ পড়তে। সালাম ফিরিয়ে দেখে, আব্দুস সোবহান দাঁড়িয়ে।
‘আপনি, এত সকাল-সকাল?’ জাহানারা খুশি হয়ে বলে।
‘হ্যা, বিকালে ভাইজান আসতেছেন, খবর পালাম।’
‘এত তাড়াতাড়ি কেমনে খবর পালেন?’
‘পোস্টঅপিস থেকে হারান আসছিল। পথেই টেলিগ্রাম করছে।’
আশ্চর্য তো। আগে তো কখনো টেলিগ্রাম করে আসেনি।
‘বাজারঘাট তো তালি কিছু করা লাগে।’
‘আমি রুই মাছ আনছি একটা। ঘরে মোরগ আছে না?’
আছে, জাহানারা তার স্বামীকে জানায়। প্রথমে পুরো সৃষ্টিজগতের জন্য, তারপর জীবিত-মরহুম সব আত্মীয়স্বজনের জন্য, তারপর স্বামী-সন্তানের মঙ্গল কামনা করে সে মোনাজাত সেরে উঠে পড়ে। অনেক কাজ হাতে।
এখনো জানে না সে, যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন প্রাণপণ ভাবতে চেষ্টা করবে এই দিনটা ঘটেনি, সব মিথ্যা, তার জীবন আগের মতোই আছে, কিন্তু পারবে না।
রুটি চিবানো বন্ধ করে শাহীন হঠাৎ বলে, ‘আরি! ঐটা কী?’
‘কোনটা?’ স্বপন বলে। পুকুরের পুব পাড়ে কি-যেন একটা দেখা যায়। অনেকক্ষণ খেয়াল করার পর সবার হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে আসে।
অবশেষে সরফরাজ বলে, ‘মেজদা, একটা লাশ না?’
সঞ্জীবের অস্বীকার করার উপায় নেই – দেখে আসলেও মনে হচ্ছে একটা লাশ পড়ে আছে, আর একটা পাখী সেটা ঠুকরে খাচ্ছে। ‘চল গিয়ে দেখি,’ সে শুধু বলে।
ভয়ে ভয়ে তারা আগায়। কাছে গিয়ে দেখে, নোংরা কাপড় পরা জটাধারী একটা লোক উপুড় হয়ে ঘাসের উপর পড়ে আছে। তার ডান পায়ে ভাঙা একটা বেড়ি, সেখান থেকে রক্ত পড়ছে। পাশে বাঁধা একটা নিশিবক নিজের পায়ের দড়িটা ঠুকরে খোলার চেষ্টা করছে। সেটা দেখেই দূর থেকে মনে হচ্ছিল পাখিটা লাশ খাচ্ছে।
ছেলেরা নিরাপদ দূরত্বে খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। লোকটা বেঁচে আছে, শুধু অজ্ঞানের মতো ঘুমাচ্ছে। সরফরাজ স্বপনকে বলে, ‘সেজদা, লোকটা কি খুনী নাকি?’
কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর তাদের কারোরই জানা নেই, এখন তাদের কী করণীয়, সেটাও পরিষ্কার নয়। সঞ্জীব শেষে প্রস্তাব দেয়, লোকটাকে জাগানোর চেষ্টা করা উচিত, কারণ সে আহত, হয়তো তার সাহায্যের প্রয়োজন। তাছাড়া, সে তো নির্দোষও হতে পারে। সবাই রাজি হয়; সঞ্জীবই সবার আগে আগে গিয়ে লোকটার গায়ে হাত রাখতেই –
তিড়িং করে লোকটা দাঁড়িয়ে পড়ে; তার টকটকে লাল চোখ, তার চেয়ে বেশি তার দৃষ্টির বন্যতা দেখে চার ভাই এবার সত্যি সত্যি ভয় পেয়ে যায়। মুহূর্তকাল অনন্তকাল লাগে, তারপর একসময় সে ক্লান্ত ভঙ্গিতে ধপ করে মাটিতে বসে পড়ে, তার দাঁড়ি তার উরু ছোয়।
‘এখানে তোমরা কি একা আসছ?’ সে জিজ্ঞেস করে।
তারা হ্যা-সূচক উত্তর দেয়।
আর কেউ তাকে দেখে নাই তো?
না, তারা মাথা নাড়ে, আর কেউ তাকে দেখেনি।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর-পর্বে সন্তুষ্ট হয়ে লোকটা একটা পাথর দিয়ে ভাঙা বেড়িটায় বাড়ি দিতে থাকে। রক্তের ছিটায় স্বপন একটু কুঁকড়ে যায়, শব্দে বকটা অস্থির হয়ে লাফিয়ে ডাকাডাকি করতে থাকে। তারপর সে আবার তাকায় তাদের দিকে।
‘কেন আসছ এইখানে?’
‘মাছ মারতে আসছি,’ সঞ্জীব বলে।
‘কিন্তু এই পুকুরে তো মাছ নাই।’
তাদের বিস্মিত চেহারা দেখে সে হেসে ফেলে।
‘এই যে পানি এমন দেখো না, শ্যাওলা অনেক বেশি। পানির রং দেইখে বুঝ নাই?’
না, তারা বোঝেনি। লোকটা আবার হাসে, সরল দিলখোলা ধরনের হাসি, তার হাসিটা খুনীদের হাসির মতো না, বা হয়তো খুনীরা আর সবার মতোই হাসে।
আবার সে বেড়িটা ভাঙার চেষ্টায় মন দেয়।
খানিকক্ষণ কেটে যাওয়ার পর সঞ্জীব বলে, ‘এই পাথর দিয়ে তো এটা ভাঙতে পারবেন না।’ তার কথা উপেক্ষা করে জোরে জোরে শ্বাস টেনে লোকটা বাড়ি দিতে থাকে, স্বপনের মনে হয়, পাখিটাও তার মতো রক্তের গন্ধ সহ্য করতে পারে না...
অবশেষে ‘আহ’ একটা শব্দ করে সে হাল ছেড়ে দিয়ে চুপচাপ বসে থাকে।
‘আপনার কড়াত লাগবে,’ সঞ্জীব বলে।
‘আপনার নাম কী?’ শাহীন জিজ্ঞেস করে। বাকি ভাইরা তার দিকে চট করে তাকায়, জানে লোকটা এই প্রশ্নের উত্তর দেবে না।
‘নাম দিয়ে কাম কী?’ সে হাসিমুখে বলে। ‘আমার নাম দিয়েও তোমাদের কাম নাই, তোমাদের নাম দিয়েও আমার কাম নাই। আমারে তোমরা দেখ নাই, আমিও তোমাদের দেখি নাই। ঠিক আছে?’
ঠিক আছে, মাথা নেড়ে জানায় তারা।
‘বাড়ি কই তোমাদের?’
‘শালুকপুর,’ স্বপন বলে।
‘তাইলে তো দূর আছে কিছু। এত দূরে এই চৌধুরীপুকুরে আসছ কেন? এইখানে আর আসবা না।’
‘ক্যান?’
‘ক্যান?’ এবার লোকটার হাসিতে কেমন যেন একটা রহস্য ভর করে। ময়লা দাঁতগুলো বের করে বড় বড় রক্তছটা-মাখা চোখ দিয়ে সে তার দিকে তাকায়; বলে, ‘এই চৌধুরীপুকুরে আর আসবা না বাবারা, এই চৌধুরীপুকুরে অনেক গল্প আছে...’
স্বপনের শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা একটা স্রোত বয়ে যায়।
দূরে কাঠঠোকরাটা ঠকঠক, ঠকঠক করতে থাকে। অনেকক্ষণ পর শাহীন বলে, ‘এই বকটা কি জন্যি রাখছেন?’
‘খাব, বড় ভুক করছে। তিনদিন ধরে কিছু খাই না।’
একটা নোংরা হাত বাড়িয়ে সে পাখিটাকে আদর করতে থাকে। অস্থির হয়ে নিশিবকটা ডাকাডাকি করতে থাকে, যেন এতক্ষণ লোকটার কথা সে সবই বুঝেছে।
তখন সবাইকে অবাক করে লোকটা হঠাৎ কেমন করে যেন তাদের দিকে তাকায়, বলতে শুরু করে তার বাড়ি সোনাইপুর, তার ভাইরা শত্রুতা করে তার জমি দখল করে তাকে হাজতে পাঠিয়েছিল, কিন্তু বড় ভুল করেছে তারা, কয়েদখানা তাকে আটকে রাখতে পারেনি, পৃথিবীর কোন কয়েদখানাই শামছুদ্দিনকে আটকে রাখতে পারবে না, এবার সে শোধ নেবে...
দিনের সাথে সাথে আমাদের গল্পও সংক্ষিপ্ত হয়ে এসেছে। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বিকেল এলো; আব্দুস সামাদ যখন এলেন, তখন মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে। বাড়ির সবাই ছাতা মাথায় নিয়ে তাকে কদমবুছি করতে গিয়ে বিস্ময় ও আনন্দ নিয়ে দেখে, আখতারি বেগম পালকি থেকে নামছেন। এই প্রথম জাহানারার শ্বাশুড়ির শালুকপুর আসা।
‘মা আসছ?’ বৃষ্টির মধ্যেই কদমবুসি সেরে আব্দুস সোবহান তাকে জড়িয়ে ধরেন।
‘হ বাজান,’ আখতারি বেগম হাসতে হাসতে বললেন। ‘শুকায়ে গেছিস দেখি।’
এতদিন পর দেখা, তবু কেন যেন জাহানারার মনে হয় কথাটা তাকে উদ্দেশ্য করে বলা। ‘আর কয়েন না মা,’ সালাম করতে করতে তাড়াতাড়ি বলে সে, ‘উনি খালি দোকান নিয়েই পড়ে থাকেন, নিজের শরীর-স্বাস্থ্যেরও কোন খেয়াল নেন না। আমি এত করে বলি....’
‘মা তুমি ভালো আছ?’ আখতারি বেগম তাকে জিজ্ঞেস করেন।
ঘোমটার নিচ থেকে সে তাকায়। ‘হ্যা মা, আমি ভাল আছি।’
বাড়িতে ঢোকার পর জাহানারা নাস্তা সাজাতে ব্যস্ত হয়। অল্প সময়ে খুব একটা আয়োজন করা যায়নি। আব্দুস সোবহানের খেয়াল হয়, আব্দুস সামাদ এখন পর্যন্ত একটা কথাও বলেননি।
‘ভাইজানের কি শরীরটা খারাপ?’
‘না, শরীর খারাপ না। তোরা সব ভালো আছিস?’
কী হয়েছে তার? এমনিতে তাদের কত কথা হয়। একমাত্র ভাই তার, ছেলেবেলা থেকে তার সাথে রাজনীতি থেকে শুরু করে মাছ ধরা পর্যন্ত কোন বিষয় নিয়েই আড্ডা জুড়ে বসতে সময় লাগে না।
নাস্তাপর্বের পুরোটা সময় ধরেই আব্দুস সামাদ মাথা নিচু করে বসে থাকেন, আখতারি বেগমকেও অস্বাভাবিক গম্ভীর মনে হয়। কথোপকথন কুশলাদি বিনিময়ের বেশি আগায় না। আব্দুস সোবহান আর জাহানারার বুঝতে বাকি থাকে না, কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। অবশেষে আখতারি বেগম ছোটদের ভেতরে যেতে বলে তার ছেলেবৌয়ের পাশে এসে বসেন।
‘আমি অনেক অল্প বয়েসে বিধবা হইছি,’ বৃদ্ধা বলতে শুরু করেন। ‘এগারো বৎসর বয়েসে আমার বিয়ে হয়। আমি ছিলাম বাপের একমাত্র বেটি। আমার কোন সাধ-আহ্লাদই আমার আব্বা অপূর্ণ রাখেন নাই, শুধু একটা ছাড়া।
‘এত অল্প বয়সে আমার বিয়ে করার কোন ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু বাপজান শুনলেন না। তার একটাই কথা, ভালো ঘরের মেয়েদের বারো বছরের আগে বিয়ে দিতে হয়। আমার বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পর, আমি তোমারে মিথ্যে বলবো না মা, শ্বশুরবাড়িতে আমি সেরকম আদর-যত্ন পাই নাই। কিন্তু মা, মেয়েদের জীবনটাই তো এমন...’
ঝড়ের গতিতে আব্দুস সামাদ ঘর থেকে বের হয়ে যান। বিস্মিত হয়ে আব্দুস সোবহান তার পিছু নিতে গেলে আখতারি বেগম তাকে ইশারায় বসতে বলেন। জাহানারার ভয় হয়, প্রসঙ্গটা কোন দিকে যাচ্ছে সে বুঝতে পারে না। সে কি কোন ভুল করে ফেলেছে?
‘বিয়ের চার বছরের মাথায় তোমার শ্বশুর মারা যান। হঠাৎ কী অসুখ করলো, এক সপ্তা বিছানায় থাকলেন, তারপর সব শেষ। আমার বয়স তখন মোটে পনের বছর। সামাদ তখন অনেক ছোট, সাবু তখনো কোলে। আমার আব্বা আমারে অনেক করে কলেন বাড়ি ফিরে আসার জন্যি। আমি গেলাম না, মরতে যখন হবে তখন স্বামীর ভিটাতেই মরবো।
‘কিন্তু বিধবা হওয়ার পর দেখলাম আমার দেবর-ভাসুররা উনার ভাগের বিশ বিঘা জমিতে যে ফসল হয় তার দুই আনাও আমারে দেন না। মুখ বুঁজে সব সহ্য করিছি মা, প্রতিদিন ভোরবেলা থেকে শুরু করে রান্নাঘরের মধ্যিই থাকতাম, আর ননদরা রাণীর হালে খবরদারি করে বেড়াতো। তার মধ্যিই সামাদরে, সাবুরে পড়াইছি, তাদের যেন কখনো কষ্ট করতি না হয়, কেউ যেন তাদের দিকে আঙুল তুলে কথা না কবার পারে...’
অনেকদিন পর একদম অপ্রাসাঙ্গিকভাবে জাহানারার মনে পড়ে যায়, আব্দুস সোবহান আখতারি বেগমের পালিত সন্তান। অবাক হয়ে সে তার শ্বাশুড়ির দিকে তাকায়।
‘মা, আল্লাপাক বলেছেন, আমি সবসময় ধৈর্যশীলদের সাথে আছি,’ আখতারি বেগম বলতে থাকেন। ‘আমি তো দেখলাম মা, এইটা কত বড় সত্য। সময়ের সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যায়। সামাদ এখন ভালো চাকরি করে, অপিস থেকে তারে গত সপ্তায় বিলেত বদলি করছে। সাবুও আল্লায় দিলে ব্যবসায় আরো উন্নতি করবে।
‘কিন্তু মা, মা যদি তার সন্তানদের ভালো না তাইলে চলে না। আমার ইচ্ছা আমার ছাওয়ালরা ভালো থাকুক, নাতিপুতিদের যেন সবচে ভালোটা হয়, পোতাপুতির মুখ দেখে যেন সুখে-শান্তিতে মরতে পারি। বলো মা, এইটা তুমি চাও না?’
‘জি মা, অবশ্যই চাই,’ জাহানারা বলে।
‘আচ্ছা মা, খুব খুশি হলাম শুনে,’ তার শ্বাশুড়ি বলেন। ‘তাইলে মা, তোমার কাছে আমি একটা জিনিস চাই, সবার ভালোর জন্যি। কও মা, দিবা না?’
‘ছি ছি মা,’ সে বিব্রত হয়, ‘এ আপনি কী কন! আপনি যা চান তাই দেব, তা আবার এমনি করে কওয়া লাগে?’
কী-ই বা চাইতে পারেন তিনি?
আখতারি বেগম জাহানারার হাত চেপে ধরেন।
‘মা, তোমার স্বপনরে আমি ভিক্ষা চাই।’
দূর থেকে কাঠঠোকরাটা ঠকঠক, ঠকঠক করতে থাকে, এমন সময় বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। ছেলেদের ভয়ার্ত রূপ দেখে সোনাইপুরের শামছুদ্দিন নিজেই চমকে যায়, তারপর থামে। আবারও তার চোখে হিংস্রতা নিভে গিয়ে সেই মুষড়ে পড়া শ্রান্তিটা ভর করে।
তার মনে পড়ে যায়, অনেক ক্লান্ত সে।
বৃষ্টির বেগ বাড়ে। একটু পর পাখিটার গিঁট শক্ত করে সে কড়াতের সন্ধানে চলে যায়।
চার ভাই অনেকক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।
শেষে সঞ্জীব বলে, ‘চল বাড়ি যাই।’
‘আর যদি জীবনে মেঝদার কথা শুনিছি!’ শাহীন বলে। ‘লোকটা পারলে আমাদের খায়েই ফালায়!’
‘হ্যা কাজটা ঠিক হয় নাই,’ সরফরাজ সুর মেলায়। ‘আমি নিশ্চিত লোকটা খুন করেই জেলখানা থেকে বের হইছে, তারপর একটা গল্প ফাঁদলো...’
সঞ্জীব খুব একটা প্রতিবাদ করে না।
‘আর আসল দোষ তো সব আন্দুর,’ বলতে থাকে শাহীন। ‘আজ খুন হয়ে যাইতে পারতাম শালার জন্যি। আর যদি শালারে মাছ মারতে নিছি!’
ভাগ্যিস আন্দু আজ আসেনি তাদের সাথে, স্বপন ভাবে। তখন তার পাখিটার কথা মনে পড়ে যায়।
সবার অলক্ষ্যে সে টোপ আনার নাম করে পাখিটাকে ছেড়ে দিয়ে আসে। কী আশ্চর্য, দড়িটা খোলার সময় পাখিটা কেমন আত্মবিশ্বাস নিয়ে তাকিয়ে ছিল তার দিকে – যেন সে সবসময়ই জানতো, স্বপন তার জন্য ফিরে আসবে।
একসময় বৃষ্টি ধরে এসে আকাশ আলো করে শুক্লপক্ষের চাঁদ উঠে। ছেলেরা ঠিক করে, তারা অন্য পথে বাড়ি যাবে।
জাহানারার মনে হয়, তার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। তার গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বের হয় না।
‘মা,’ আখতারি বেগম সস্নেহে বলেন। ‘তুমি কিছু বললে না?’
ফ্যালফ্যাল করে সে তাকিয়ে থাকে।
‘মা, তুমি কথা দিয়ে কথা ফিরায়ে নিও না। আমার অনেক কষ্ট, মা। আমার সামুর অনেক কষ্ট…’
তখনো সে কিছু বলতে পারে না।
আখতারি বেগম কাঁদতে শুরু করেন। ‘মা তুমি তো জানো মাতৃস্নেহ কী জিনিস। আমার বৌটার মুখের দিকে চায়ে আমি…’
ভোরবেলায় রান্নাঘরের ঘটনাটা তার মনে পড়ে যায়।
আখতারি বেগম অনেক করে বোঝান, স্বপনকে তার ছেলে আর ছেলেবৌয়ের অনেক আগে থেকেই কত পছন্দ, স্বপনের মতো ছেলেই হয় না, স্বপন দুইদিনে তার অতীত সব ভুলে যাবে, স্বপন বিলেতে কতো ভালো থাকবে...
কিন্তু সে যে স্বপনকে ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না?
হঠাৎ আব্দুস সোবহানের কন্ঠ ভেসে আসে।
‘মা, তুমি যা চাও, তাই হবে।’
‘এ আপনি কী কইতেছেন?’ জাহানারা চিৎকার করে কাঁদতে আরম্ভ করে। স্বামীর পা জড়িয়ে ধরে সে আকুল হয়ে মিনতি করতে থাকে, তিনি যেন তার কথা ফিরিয়ে নেন। কিন্তু আব্দুস সোবহান তখন যেন অনেক দূরদেশের কেউ, সব শুনে কেবল মূর্তি মতো বসে থাকেন।
একসময় তার স্বামী উঠানে গিয়ে ভাইয়ের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। আব্দুস সামাদ হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে ছোটভাইকে জড়িয়ে ধরেন।
এরপর জাহানারা একটা ঘোরের মধ্যে চলে যায়।
সন্ধ্যা নামে। একসময় শিস বাজাতে বাজাতে আন্দু এসে কুয়ার সামনে দাঁড়ায়। পকেট থেকে কয়েকটা নুড়িপাথর বের করে খানিকক্ষণ মনে মনে সে কী-যেন হিসাব করে, তারপর আবার সেগুলো পকেটে ভরে রাখে। তারপর পানি খাওয়ার জন্য বালতিটা থপাস করে কুয়ার মধ্যে ছেড়ে দেয়, দিয়ে আস্তে আস্তে পানি উঠাতে থাকে। এমন সময় কে যেন তার কাঁধে হাত রাখে।
চমকে গিয়ে সে হাত থেকে বালতিটা ছেড়ে দিয়ে দেখে, যক্ষের মতো চোখ নিয়ে পিছনে জাহানারা দাঁড়িয়ে।
‘দাদি, আপনে?’ বুকে থুথু দিতে দিতে বলে সে। ‘আমারে তো ডরায়ে দিছিলেন।’
‘বাজান,’ জাহানারা বলে। ‘আমার জন্যে একটা কাজ করতে পারবি?’
‘পারব দাদি, কন কী কাজ?’
‘যেভাবেই হোক স্বপনরে তোর খুইজে বাইর করতে হবি। সঞ্জীবরে কবি, স্বপনরে নিয়ে সে যেন তাদের মামার বাসায় যায়, কাউরে যেন কিছু না বলে। আর আমি খবর পাঠানোর আগে যেন ফিরে না আসে।’
‘আর দাদি মেঝদারে যদি না পাই?’
‘তাইলে স্বপনরে বলবি এদিক-ঐদিক কারো বাসায় যেন থাইকে যায়, আজ রাতে যেন বাসায় না আসে।’
‘আর দাদি স্বপনদারে যদি না পাই?’
‘অমন কথা কইস না, বাজান।’
দীর্ঘ পথ পর বাড়ির কাছাকাছি এসে তারা দেখে, তাদের বাবা রাস্তার ধারে পায়চারি করছেন। স্বপনকে দেখে তিনি একদৃ্ষ্টিতে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকেন, তারপর কোলে তুলে নেন।
গত বছর পরীক্ষায় ভালো করার জন্য তার চাচা তাকে বিলেত ঘুরতে নিয়ে যাচ্ছে শুনে স্বপন বিশ্ববিজয়ীর হাসি নিয়ে ভাইদের দিকে তাকায়, আর তাই দেখে অন্যরা হিংসায় মরে যায়। এটা কত বড় অন্যায় হচ্ছে, এটা বলতে গিয়ে সরফরাজ বাপের হাতে প্রায় একটা চড় খায়।
বিদায়ের অন্তিম মুহূর্তটা পর্যন্ত ছেলের সাথে জাহানারার কথা হয় না। মায়ের স্তব্ধ রূপ আর দীর্ঘ আলিঙ্গনে স্বপনের কেমন যেন ভয় হয়, অসহায়ের মতো সে জিজ্ঞেস করে, ‘মা, মা, তুমি কী আমারে রাগ করে তাড়ায়ে দিতেছ?’
জাহানারা শূণ্য চোখে তাকিয়ে থাকে।
‘মা, গুড় চুড়ি করতে গেছি দেখে রাগ করছো?’
আঙিনাময় তখন বুকভাঙা জোছনা। তার দৃ্ষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে।
‘হ বাপ, রাগ করছি,’ কাঁদতে কাঁদতে বলে সে।
- স্বপ্নসতী, ক্যানাডা থেকে
(ম্যালাকাল আগে লিখা, তারিখ খিয়াল নাই )
মন্তব্য
অদ্ভূত সুন্দর গল্প।
বছরের শেষ দিনটায় গল্পটা পড়লাম, মনে থাকবে অনেকদিন।
সচলে আগে আপনার লেখা পড়েছি বলে মনে পড়ছেনা।
সচলে স্বাগতম।
আপনার আরো আরো লেখা পড়ার প্রত্যাশায় রইলাম।
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
অনেক অনেক ধন্যবাদ। সচলায়তনের সন্ধান প্রথম পাই প্রবাসিনীর কাছে, তারপর থেকে দৈনিক এক-দশবার সবার পোস্ট পড়ি। আজ নিজের পোস্ট প্রকাশিত দেখে বড়ই খুশি। আপাতত সচল হওয়ার আশায় আছি।
ভাল। খুবই ভাল লাগলো।
চরম!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
-অতীত
থ্যান্কু থ্যান্কু
গল্পটা অনেক পাঠকের মনোযোগ দাবি করে।
পরের বার ফরম্যাটিং এ সামান্য যত্ন নেবেন। পড়তে গিয়ে খেই হারাচ্ছিলাম মাঝে মাঝে। তবে সেটা বড় কোন সমস্যা নয়। গল্পটির সমাপ্তি চমৎকার লেগেছে।
_________________________________________
সেরিওজা
ধন্যবাদ, প্রশংসায় আপনি দিলদরিয়া লোক। ফরম্যাটিং ঠিকই ছিল, কিন্তু পোস্ট করার পর কেন জানি এলোমেলো হয়ে গেলো। পোস্ট করার পর এডিট করার চেষ্টা করে পারিনি, সচলে কি পোস্ট-উত্তর ফরম্যাটিং হারাম তাইলে?
ধন্যবাদ, প্রশংসায় আপনি দিলদরিয়া লোক। ফরম্যাটিং ঠিকই ছিল, কিন্তু পোস্ট করার পর কেন জানি এলোমেলো হয়ে গেলো। পোস্ট করার পর এডিট করার চেষ্টা করে পারিনি, সচলে কি পোস্ট-উত্তর ফরম্যাটিং হারাম তাইলে?
না, পোস্ট উত্তর ফরম্যাটিং হারাম হতে যাবে কেনো। তবে পূর্ণ সচলেরা ছাড়া এই সুবিধা অতিথি আর হাচলেরা পান না।
পোস্ট জমা দেবার আগে প্রিভিউতে একটু দেখে নিলে ফরম্যাটিংএর টুকটাক ভুলগুলো এড়াতে পারবেন। শুভ কামনা রইলো।
_________________________________________
সেরিওজা
থ্যান্কু আবারো, পরের বার আরো কেয়ারফুল হবো। কিন্তু সব লেভেলের সদস্যদেরই নিজেদের পোস্ট এডিট করতে দেওয়া উচিৎ বলে মনে করি..
পারবেন, হা-চল (হাফ-সচল) হয়ে গেলেই এডিট করতে পারার কথা। যদিও এই নিয়মগুলো বিভিন্ন সময়ে ট্রায়াল এন্ড এরর করেই করা হয়েছে বলে জেনেছি। তবে হাচলদের লেখা এডিট করলে তা আবার মডারেশন ঘুরে আসে, তাই অপেক্ষা করতে হয় একটু। প্রিভিউটাই কাজের আসলে।
আপনি লিখতে থাকুন। এমন চমৎকার লিখলে তো এমনিতেই কদিনের মাঝে হা-চল হয়ে যাবেন। লেখাটা টেনে ধরে রেখেছিল শুরু থেকে। চমৎকার বর্ণনা, প্লট আর বলবার ধরণ দিয়ে অন্যরকম লাগলো পড়তে।
আচ্ছা, গল্পের নাম 'আড়াই' কেন? নাকি আমিই মিস করলাম পড়বার সময় কিছু?
সচলায়তনে স্বাগতম।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
ধন্যবাদ! গল্পের নাম আড়াই কারণ প্রধান চরিত্র দুটোর পরিণতি। এক আর একে দুই থাকে না, অতীতের অদম্য ভারে হয়ে যায় আড়াই। কষ্ট যদি জীবনকে বোঝা-ই বানিয়ে ছাড়ে, তাহলে জীবনের ভারও কি বাড়ে না?
আরেকটা কারণ অবশ্য আছে এই নাম দেয়ার, সেটা ব্যক্তিগত।
ব্লগের মানদন্ডে কলেবরটা একটু বেশি হওয়াতেই কি গল্পটা অনেক পাঠকের নজর এড়িয়ে গেল?
তবে...
থ্যান্কু, বিগলিত করি ফালাইলেন... স্বীকার করতেছি, গল্পটা ব্লগের জন্য একটু বড় হয়ে গেছে। ব্র্যাকেটের ব্যাপারটা ইচ্ছাকৃত, তবু আবার ভেবে দেখবো।
লেখাটার আয়তন ব্লগীয় দৃষ্টিকোণ থেকে একটু লম্বাই বলতে হবে। কিন্তু লেখাটার ভেতরের আবহমানতার আবেদন আর গ্রামীন প্রেক্ষাপট শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বজায় থেকে গল্পটাকে আকর্ষনীয় করে তুলেছে।
গল্পের শেষটা অসাধারণ ছিলো। সচলে স্বাগতম। আরো লিখুন।
---- মনজুর এলাহী ----
অনেক অনেক ধন্যবাদ! লিখব।
চমতকার গল্প, আরও অনেক অনেক লিখুন
থ্যান্কু
প্রসঙ্গত, গল্পটা এখন আমার ব্লগেও - http://tashfeen.posterous.com/43696587
চমৎকার!
এই গল্প আগে চোখে পড়েনি, আপনাকেও আর চোখে পড়েনি। দুঃখজনক!
নিয়মিত লিখলেই পারতেন...
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
চমৎকার গল্প। পড়ে মনটা কেমন খারাপ হয়ে গেল।
- সো।
নতুন মন্তব্য করুন