(লেখাটা আমার অন্য আরেকটি ব্লগ(লিঙ্ক) থেকে নেয়া লেখা।
হারু যখন বিড়ি খাওয়া শুরু করে তখন তার বয়স দশের বেশি হবে বলে মনে হয় না । তার বাবা যখন আধখাওয়া বিড়িটা রেখে তার মা-কে নৃশংসভাবে পেটাতে শুরু করে, তখন সে বিড়িটা নিয়ে পাশের ঘরের কালুর সাথে বসে টান দেয়া শুরু করে। সেদিনের প্রচন্ড কাশির কথা ভুলতে পারেনি হারু। আজো কাশে,তবে এখনকার কাশি আর তখনকার কাশির মধ্যে অনেক তফাৎ।
সে অবশ্য এগুলো বুঝতে পারে না। তার কাছে পৃথিবীর অনেক কিছুই অনেক তুচ্ছ লাগে। যেমন কমিশনার সেলিমের ব্যাপারটা। ব্যাটা মরবার আগে বারবার খালি পানি খেতে চাচ্ছিলো। আরে, মরে যাবি এখনি, পানি খেয়ে করবিটা কি তুই? শালা হারামি ! রাগের চোটে সেদিন পাঁচটা গুলি বেশি খরচ হয়ে গিয়েছিলো ।আজকাল গুলির যা দাম !
আরেকটা বিড়ি ধরালো সে। ঘড়িটা দেখলো । আটটা বাজে,তার মানে সময় হয়ে গেছে। এই ঘড়িটা তার স্ত্রীর দেয়া। একদিন এফডিসি থেকে আসার পর হারুর হাতে পড়িয়ে দেয় আসমা। " ঘড়িডা ভালা না ?"
"হু ,ভালা। পাইছস কই?"
" আমাগো নায়কের মেক-আপ বক্সের মইদ্যে ছিলো। লইয়া আইছি।"
" অ। টাকা আনছস? "
"টাকা? কিয়ের টাকা?"
"ক্যা, তোরে যাওয়ার আগে কইয়া দিলাম না টাকা আনতে?"
"আজকে টাকা কই পামু ? গত হপ্তায় না তুমারে এক হাজার দিলাম !"
হাতটা ঘুরিয়ে থাপ্পড় মারে হারু। স্থাণুর মতো দাঁড়িয়ে থাকা আসমাকে ধাক্কা মেরে ঘর থেকে বের হবার সময় দরজায় লেগে ঘড়িটার কাঁচ ভেঙ্গে যায়।তারপর ঘড়িটা আর ঠিক করায়নি হারু। ভাঙ্গা কাঁচের ফাঁকেই ঘড়ি দেখে সে । কই, কোন সমস্যা হয়নি কখনো...!
আস্তে আস্তে হারু আড়মোড়া ভাঙ্গে। মুখের উপর ঘুরঘুর করা মাছিটাকে তাড়ানোর চেষ্টা করে। মনে মনে গুনতে থাকে সে। আজকেরটা হলে মোটমাট আঠারোটা হবে। আঠারোটার এক নাম্বারটা ছিলো হারুর বাবা। একদিন কাগজ কুড়িয়ে মহাজনের কাছে দিয়ে আসার পর দেখে তার মা বেহুশ হয়ে পড়ে আছে। আর সামলাতে পারে নি।ঘরের বেড়ার সাথে রাখা দা টা নিয়ে হাজির হয় বস্তির মদের আখড়ায়। শরীরের সবশক্তি দিয়ে ওর বাবার শরীর ফালাফালা করে ফেলে। মাতাল বাপ আর কিছুই করতে পারে নাই।
হারুর দুই নাম্বার খুনটা করে কিশোর সংশোধন কেন্দ্র থেকে বের হয়ে। কালু বলেছিলো ছি্নতাই করবার রিভলভারটা খালি ধরে রাখতে। ধরেই রেখেছিল, কিন্তু যাবার সময় লোকটা যখন একটা গালি দিলো,তখন কাছে গিয়ে গুলিটা করে হারু। প্রথম গুলি, তার নিজের পারদর্শিতার কথা মনে পড়লে আজো তার কেমন যেন ভালো লাগে,আনন্দ পায় সে।
অবশ্য এই মানুষগুলোর মধ্যে তার কিছু প্রিয় মানুষও ছিল। কালুকে সে একদমই মারতে চায়নি। কিন্তু কেউ যদি তার সাথে গাদ্দারী করে তাহলে কি আর চলে? বেশি কষ্ট পায়নি কালু , মাথায় লাগার সাথে সাথেই মারা গিয়েছিলো।
ইলেকশনের সময় মঞ্জুকে মারতেও খারাপ লেগেছিলো হারুর।ভালোই লোক ছিলো , তার হয়ে মিছিল করেছে কতবার ! কিন্তু তখন হারুর টাকা খুব দরকার ছিলো।আর ইলেকশনের মৌসুমে দু'একজন মারা পড়বে, এটা তো জানা কথা ।
আজকেও একটা নেতাই হবে। বয়স খুব বেশি না চব্বিশ-পচিশ হবে। ইদানীং বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় বড় ভাষণ দেয় সে।পার্টির বড় নেতাদের খুব লেগেছে। আজ সকাল বেলাই ফোন এসেছিলো। এগারোটায় ছবি নিয়ে হলের সামনে গিয়ে লোকটাকে চিনে আসে হারু। ছেলেটা স্মার্ট খুব...হাসিটা একেবারে নায়কের মতো।
রিকশার আওয়াজ পায় হারু। চট করে শিহরণ খেলে যায় হারুর শরীরে। আগেও এইরকম হয়েছে হারুর, খুন করার আগে এইরকম হয়, শরীর যেন রক্তের গন্ধ পেয়ে জেগে উঠে। মাঝে মাঝে মনে হয়, তার শরীর বোধহয় রক্ত ভালোবাসে। আসলেই, ভালোবাসা না থাকলে কি আর কোন কাজ হয়?
রিকশাটা দাঁড় করায় হারু। ছেলেটা বোধহয় ক্লান্ত, মিটিং -এ ছিলো বোধহয়। মাঝরাস্তায় রিকশা থেমে যাওয়ায় একটু অবাকই হয় সে।
"আপনে হৃদয়? "
" হ্যা । আপনি কে ? "
"আমি হারু। হারু দফাদার।চোখ খান বন্ধ করেন।"
"কেন?"
"মউতের সময় চোখ খোলা রাখতে হয় না।"
কিছু বোঝার আগেই গুলি করলো হারু । আজকাল পাবলিকের যে কি হয়েছে...সব কিছু বুঝতে চায়!
মেঘদুত
মন্তব্য
.........................."মউতের সময় চোখ খোলা রাখতে হয় না।"কিছু বোঝার আগেই গুলি করলো হারু । আজকাল পাবলিকের যে কি হয়েছে...সব কিছু বুঝতে চায় !
গল্পে
... আপনাকে অনেক ।
___________________________
মেঘদুত
Quote করতে যেয়ে ভুল অপশন চেপে ফেলেছি ।
সমস্যা নাই ভাই...
----------------------
Sad Stories
গল্পের প্লটটা পুরোনো লেগেছে, কিন্তু আপনার লেখনী চমৎকার।
আরো লিখুন
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
পুরনকে মাঝে মাঝে স্মরণ করলে ক্ষতি নেই...
অনেক ধন্যবাদ।
মন্তব্য দুবার চলে এসেছে। একটি মুছে দিলাম।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
আপনার লেখা বেশ সাবলীল লেগেছে।
কিন্তু আপনার নিক মেঘদুতটা আবার কী? মেঘদূত লিখতে চেয়েছিলেন?
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
ধন্যবাদ।
ঊ-কার দেই নাই ভুলক্রমে। ঠিক করা গেলে করবো।
আপনাকে ধন্যবাদ...
____________________________
মেঘদুত।
ভাল লিখেছেন। -রু
আপনার লেখার হাত আসলেই খুব ভালো, সাবলীল। গল্পের চরিত্রটাও কৌতুহলউদ্দীপক। কিন্তু গল্পটা মনে হল হঠাৎ-ই শেষ হয়ে গেলো। তারপরও পড়তে দারুন লাগলো।
---------------------------------
মৌন কথক
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ...
সাবলীল লেখা মন ছুঁয়ে গেল!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
...অনেক ধন্যবাদ।
নতুন মন্তব্য করুন