দুষ্টের দমনঃ অটোরিক্সাচালক ও মিটার

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ১০/০২/২০১১ - ১০:৩৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সুমেল এর মেজাজটা হঠাত করেই খারাপ হয়ে গেল। সকাল বেলা উঠেই এমন খারাপ খবর পড়লে আর কিভাবে মন ভালো রাখা যায়। এই মাত্র কদিন হল সুমেল বিলেত থেকে মাস্টার্স শেষ করে এলো। এক মাসও হয়নি। এর মধ্যেই এমন বিরক্তি ধরে যাবে সে ভাতেই পারেনি। না কোনও খুন খারাবির খবর না, চুরি ছিনাতাই ও না। এসব খবর তো প্রতিদিনই পড়তেই হয়। বিলেত থাকতেও পড়েছে অনলাইনে। আজকের মন খারাপের কারন অন্য খবর। অটোরিক্সাচালকরা যাত্রীদের জিম্মি করে মিটার না মেনে চুক্তিতে বেবীট্যাক্সি চালাচ্ছে। মেজাজটা খারাপ আরো বেড়ে যখন ভাবে যে, সামান্য রিক্সাচালক, তাদের কাছেও মানুষের জিম্মি হতে হবে? কোনোভাবেই কি এদেরকে নিয়মের আওতায় আনা যাবে না?

লণ্ডন এর শেষ কয়েকটা দিন তেমন ভালো কাটেনি সুমেলের। অর্থনৈতিক মন্দা তে লন্ডন এর অবস্থা বেশ নাজুকই বলা যায়। সুপারভাইজারের সাথে কিছু গোলমালের রেশ ধরে তার পার্ট টাইম চাকুরীটাও চলে গেলে শেষের দিনগুলি একটু কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। শ্রীলঙ্কান সুপারভাইজার এর সাথে কখনো ভাল সম্পর্ক ছিলো না। অবশ্য এতে সুমেল এর দোষ সামান্যই। আর তা হলো সুপারভাইজারের অযৌক্তিক আবদারে সাড়া না দেওয়া, সুযোগের অসদ্ব্যবহারের প্রতিবাদ করা। আর তাই স্টোর থেকে কর্মী ছাটাই এর সময় তালিকার শুরুতেই সুমেল এর নাম দিতে সুপারভাইজেরের এক মুহুর্তও দেরী করতে হয়নি।

চাকরীটা যাওয়াতে অনেকগুলো প্ল্যান পুরো ঊল্টাপাল্টা হয়ে গেল। পড়াশুনার সময় তেমন ঘুরতে পারেনি, পড়া আর চাকুরীর চাপে। তাই ভেবেছিল, কিছু টাকা জমলে পরীক্ষার পর দশ পনের দিনের জন্য স্কটল্যান্ড আর আয়ারল্যান্ড ঘুরতে যাবে। কিন্তু চাকুরি খুইয়ে সেই প্ল্যান শুধুমাত্র ৩ দিনের গ্লাসগো ঘুরাতেই সীমিত করতে হয়েছে। এবারডিন, এডিনবারা, ফোর্ট উইলিয়াম এসব এখন শুধু স্বপ্নই রয়ে গেল।আবার কবে ইউকে আসা হয় তার কি কোনও ঠিক আছে? শুধু ভ্রমন না, সংক্ষিপ্ত করতে হয়েছে তার শপিং এর লিস্টও। আর তাই পরীক্ষা শেষ করে দুইমাস থাকার প্ল্যান বাদ দিয়ে চলে আসতে হলো বাংলাদেশে। প্রফেশনাল জব এর জন্য চেষ্টা করেছে কিছুদিন, কিন্তু অল্প কয়দিনেই বুঝে গিয়েছে যে সময় এখন অনুকুল নয়। মন্দাটাও শালার আর টাইম পেল না। তার চেয়ে দেশে গেলে ভালো চাকরি হবে, অন্তত টেসকো তে আর পার্টটাইম কামলা খাটতে হবে না। এটাও একটা বড় শান্তির কথা।

কিন্তু দেশে এসে যে শান্তির আশা করেছিল সেটা ধীরে ধীরে উবে যাচ্ছে, কারনে অকারনে মেজাজ খারাপ হওয়ার প্রকোপে। সবচেয়ে খারাপ লাগে তার ট্রাফিক জ্যাম। জ্যাম এ বসে থেকে কতগুলো এপয়েন্টমেন্ট যে মিস করেছে, তা হিসেব করতে পারছে না আর। তার চেয়ে বড় কথা কখন কোন রাস্তা ফ্রি আর কখন কোথায় জ্যাম থাকে এটা আয়ত্ব করতে তার বিশেষ বেগ পোহাতে হচ্ছে। প্রতিবারই সে নতুন করে শিখে, নাকি মনে রাখতে পারে না –ঘুরেফিরে সেই জ্যামেই ধরা। আজকে তার ঢাকা ইউনিভার্সিটি যাওয়ার কথা। সব বন্ধুবান্ধব একত্র হবে কারজন হলে। গতকালকের দিন বাদ দিলে আগের কয়েকদিন বেশ আরামেই ঘুরেছে বলা যায়। অটোরিক্সা পেতে তেমন সমস্যা হয় নি। ভ্রাম্যমান আদালতের ভয়ে অটোরিক্সাচালকরা মিটারে যেতে রাজী হয়েছে। বেশ ভালো লেগেছে তার, যাক একটু সিস্টেমে পড়েছে তাও যাতায়াতের ব্যাবস্থা। শালার জ্যাম তো দূরে, জ্যামে পড়াও যেন সৌভাগ্য। যদি অটোরিক্সাই নাই পাওয়া যায়, তবে জ্যামে পড়বেন কি করে? কেঊ যেতে চায় না, ভাড়া চায় দ্বিগুন। মেজাজ খারাপ না হয়ে কি আর পারে? গত ৩/৪ দিন ভাল যাওয়ার পর গতকাল আবার সেই পুরানো সমস্যা হাজির হয়েছে। মিরপুর যেতে গিয়ে সে পুরা ১ ঘন্টা দাড়িয়েছিল, কোনও শালাই যেতে চায় না, আর কেউ রাজী হলে দ্বিগুন দামে, মিটার ছাড়া। শেষে একটা পেলো, মিটারের চেয়ে ৩০ টাকা বাড়িয়ে শেষ পর্যন্ত মিরপুর যাওয়ার ঠেলা চুকলো। আর আজকে সকালে ঘুম থেকে উঠেই প্রথম আলোতে এই খবর –কোন নিয়মই মানছেন না অটোরিক্সাচালকরা । আর তাই সুমেলের মেজাজ খারাপ। নিয়ম না মানাই কি আমাদের দেশের নিয়ম হয়ে দাড়িয়েছে? এসবের কি কোনই প্রতিকার নেই?

সুমেল ভাবতে থাকে। মেজাজ খারাপের ভেতরেও তার মাথাটা কেমন যেন কাজ করছে, একটা দুষ্ট বুদ্ধি খেলে যায় তার মাথার ভেতর। সুমেল আজকে আর ১ ঘন্টা অপেক্ষা করবে না। সুবোধ বালকের মতো রাজী হয়ে যাবে এক্কেবারে প্রথম অটোরিক্সাচালক এর দামেই, তবে একটা শর্তে, মিটার ও চালিয়ে যেতে হবে, যদিও সে ভাড়া দিবে চুক্তি অনুযায়ী। আর তারপর গন্তব্যে পৌছানোর পর সুবোধ বালকের বেশ ত্যাগ করে বখাটের বেশ নিবে, আর গুনে গুনে মিটারে যত আসে ঠিক তত টাকা দিবে, তার চেয়ে এক পয়সাও বেশী নয়। চালক বেশী বাড়াবাড়ি করলে শালাকে আচ্ছামত গালিগালাজ করবে, দরকার হলে একটা গলাধাক্কা বা চড়ও বরাদ্দ করে ফেলবে ইন্সটান্ট। আর নিতান্তই তা না পারলে, দু চারটা লোক ডেকে ঝাড়ি মেরে দিবে। আর নয়তো কোনও ট্রাফিক পুলিশের কাছাকাছি গিয়ে রিক্সা থেকে নেমে যাবে। আর পুলিশকে সাক্ষী রেখে মিটার অনুযায়ী ভাড়া দিবে। নাহ! প্ল্যানটা খুব একটা খারাপ হয় না। আচ্ছা, এটা কি চালক ব্যাটার সাথে বাটপারী করা হয়ে গেল? একটা ভাড়া ঠিক করে, শেষে কথা না রাখা? আরে ধুর! যেখানে অটোরিক্সা চালক আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করে দিব্যি বুক ফুলিয়ে অপকর্ম করে যাচ্ছে, সেখানে একটা বাটপারীর আশ্রয় নিয়ে তার অনিয়ম প্রতিরোধ করা হলে সেটা কি খুব বেশী অনিয়ম হয়ে যাবে?

// শামীম আরমান


মন্তব্য

কৌস্তুভ এর ছবি

সচলে স্বাগত। লিখতে থাকুন, আরো ধারালো হবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ কৌস্তুভ ভাই!

অতিথি লেখক এর ছবি

থ্যাঙ্কু কৌস্তুভ ভাই

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

কারজন>কার্জন।

......... জিম্মি করে দিব্যি বুক ফুলিয়ে অপকর্ম করে যাচ্ছে, সেখানে একটা বাটপারীর আশ্রয় নিয়ে তার অনিয়ম প্রতিরোধ করা হলে সেটা কি খুব বেশী অনিয়ম হয়ে যাবে?

ভালো বলেছেন।

নিবিড় এর ছবি

সচলে স্বাগতম। আর আপনার জিম্মি করার বুদ্ধিটা কাজে লাগাবো কীনা ভাবছি চিন্তিত

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই প্লিজ কাজে লাগান! খুব ভাল হবে, এছাড়া আর কোনো উপায়ে তাদের কে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করা যাবে না। আর তাদের দৌরাত্মও কমবে না।

শুধুই পাঠক এর ছবি

এইটা কি লিখছেন?

অতিথি লেখক এর ছবি

বুঝিনি আপনার প্রশ্নটা। মানে, এটা আপনার পছন্দ হয়নি নাকি গল্পটা বানানো না সত্য এমন কিছু জানতে চাচ্ছেন?
শামীম আরমান

অতিথি লেখক এর ছবি

সমস্যার গোড়া সিএনজি চালক নয়, বরং সিএনজির মালিক বা মহাজন। অনেকক্ষেত্রেই তাদের দৈনিক ভাড়ার পরিমাণ এত বেশি হয় যে, চালক মিটারে যেয়ে তা কুলিয়ে উঠতে পারেনা। ফলে অনেকে মিটারে যেতে চায়না। অবশ্য এটার পরিমাণ মনে হয় ফিফটি-ফিফটি। মানুষের বিপদকে কাজে লাগিয়ে সবাই সুযোগের সদব্যবহার করে এখন। আমরা সবাই আসলে অন্তকরণে খারাপ হয়ে গেছি

-অতীত

অতিথি লেখক এর ছবি

অতীত ভাই, আপনার সাথে একমত হতে পারলাম না। মালিক চাইলেই এত বেশী দৈনিক ভাড়া দাবি করতে পারে কি করে? সেটা তো দিনে কতটা আয় সম্ভব তার সাথে সংগতিপুর্ণ হতে হবে। আর ভাড়া বৃদ্ধি করা হলো কিছুদিন আগে, তারপরও কেন তাদের কম হচ্ছে? বাসের ক্ষেত্রেই ধরুন, কত কি,মি, পরে আপনার স্টপ তা জানেন, কিন্তু সেই অনুযায়ী অনেক বেশী ভাড়া দিচ্ছেন। অথচ বাসে কত লোক (আসন), কি পরিমান তেল খরচ সব পরিষ্কার। আর তাই লাভ ক্ষতির হিসাব ও পরিষ্কার।তারপরও বাসের কন্ডাক্টারদের সাথে প্রতিনিয়ত যাত্রীদের ভাড়া নিয়ে লাগে কেন? আপনি যদি কন্ডাক্টার/ অটোরিক্সাচালক দে না দেন, মালিক কি জোর করে তাদের দিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া তুলতে পারবে?

শামীম আরমান

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক
-------------
Sad Songs

সারাহ ক্যারিগ্যান এর ছবি

সি এন জি নিয়ে কবি বলেছেন, ......মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

অতিথি লেখক এর ছবি

কবি কি ভালোবাসা দিবসের আগমনে সি এন জি নিয়েও এমন রোমান্টিক হয়ে গেছেন?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।