নাম শুনে প্রবাসী কেউ কেউ হয়ত ধারণা করে ফেলছেন, এই পোস্টে আমেরিকার "সুপারবৌল" নামক একটা বাৎসরিক ফুটবল ম্যাচের কথা বলছি। ফুটবলটা বুঝিনা, তবে এর ফাঁকে ফাঁকে প্রচারিত বিজ্ঞাপনগুলো নিয়ে এই পোস্ট। সুপারবৌল এর বাংলা হিসেবে "মহাগামলা"টা আমার বেশ মনে ধরেছে তবে এটার অনুবাদ মনে হয় আসলে তেমন দরকার নাই, কারণ এটার বাংলা ব্যবহারের সম্ভাবনা কম। যাই হোক।
আমেরিকায় এক মহা-জনপ্রিয় খেলা হল আমেরিকান ফুটবল, জাফর ইকবালের ভাষায় "লাউ আকৃতির একটি বল নিয়ে নৃশংস মারামারি সংক্রান্ত একটি ব্যাপার"। আর দশটা দেশে ফুটবল যে কারণে প্রিয়, আমেরিকায় আমেরিকান ফুটবলও সেই কারণেই প্রিয় (অর্থাৎ কোন একটা রিজিয়নাল/ন্যাশনাল টিমকে নিজের জান দিয়ে ভালবাসা আর অপরপক্ষকে গালি দিয়ে পিন্ডি চটকানো)। এখানকার রিজিয়নাল টীমগুলা তো বটেই, এমনকি ভার্সিটির ফুটবল দলগুলোরও কড়া সাপোর্টার আর ভক্তের সংখ্যা প্রচুর। বিপক্ষ দলের সাথে খেলা মানে এক মহা সমারোহ ব্যাপার স্যাপার, আর "আর্চ-এনিমি" টাইপ কোন টিমের সাথে হইলে তো কথাই নাই! আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের "আর্চ-এনিমি"র প্রতীক হইল ভেড়া, সেই রাগে আর্চ এনিমির সাথে খেলার আগের দিন পোলাপাইন ঘটা কইরা আস্ত ভেড়ার রোস্টের আয়োজন করে!
যাই হোক, সুপারবৌল ম্যাচটাকে বলা যায় আমেরিকান ফুটবলের সবচেয়ে বড় লীগের চ্যাম্পিয়নশীপ ম্যাচ হিসাবে। এইটা আমেরিকায় বেশ বড় একটা ব্যাপার, মিডিয়ার হইচই, মানুষজনের উৎসাহ সব মিলিয়ে দেখার মত একটা ব্যাপার। এই বছরের সুপারবৌল টিভিতে দেখেছে প্রায় ১০ কোটি দর্শক! সেইসাথে আরেকটা মজার ব্যাপার হল, সুপারবোলের ফাঁকে ফাঁকে এডগুলা।
এই এডগুলার স্লট অত্যন্ত চড়া দামে বিক্রী হয়, যেহেতু ১০ কোটির মত দর্শক একসাথে দেখছে। গত বছর একটা ৩০ সেকেন্ডের স্লটের দাম ছিল ২৬ লক্ষ ডলারের মত।
তবে কথা সেটা না---এত দামের স্লট বা এত দর্শকের কাছে পৌছাবার ক্ষমতা, যে কোন কারণেই হোক, বিজ্ঞাপন নির্মাতারা তাদের সেরা এডগুলো ই এখানে দেয়ার চেস্টা করেন, তাই অনেকগুলো এডের সৃষ্টিশীলতা থাকে চোখে পড়ার মত। আজকে তারই ২/৩ টা এখানে দেব।
১। ভক্সওয়াগেন:
ভক্সওয়াগেন সবসময়ই তাদের বিজ্ঞাপনগুলোর জন্য বিখ্যাত, অন্তত আমেরিকায়। এবারেরটিও চমৎকার, অনেকের মতে এটাই এবছরের সেরা মহাগামলা বিজ্ঞাপন।
স্টার ওয়ারসের ভিলেন "ডার্থ ভেডার"কে চেনেননা এমন লোক কমই আছেন। বিজ্ঞাপনে দেখা যায়, এক শিশু ডার্থ ভেডারের মত পোষাক পড়ে অতিমানবীয় ক্ষমতা অর্জন করতে চায়, কিন্তু পারেনা। তাকে নিয়েই এই ছোট্ট কাহিনী। স্টার ওয়ারস, আর অতিমানবীয় ক্ষমতার প্রতি শিশুদের চিরকালীন আকর্ষণ, সব মিলিয়ে দারুণ! আবহ সঙ্গীতটাকেও অনেকেই চিনবেন---স্টার ওয়ারসে ডার্থ ভেডারের আবির্ভাব সঙ্গীত।
২। ডরিটো:
স্থুল হাস্যরসের, তবে খারাপ না। ডরিটো চিপসের যাদুকরী ক্ষমতা নিয়ে।
৩। ক্রাইসলার:
৩য়টা আমার সবচেয়ে প্রিয়। এটা দেখানোর আগে কয়েকটা কথা বলে নেওয়া দরকার। আমেরিকার অর্থনীতির ধ্বসের কথা এখন সবাই জানে। অনেক লোক চাকরী হারিয়েছে, শেয়ার মার্কেটে ফতুর হয়েছে অনেক, বাড়িঘর হারিয়ে পথে বসেছে অনেক পরিবার। এর সবচেয়ে বড় একটা ধাক্কা গিয়ে লেগেছে আমেরিকার মোটর ইন্ডাস্ট্রিতে। প্রবল প্রতাপের আর প্রবল গর্বের মোটর ইন্ডাস্ট্রি এখন ধুঁকে ধুঁকে চলছে, অনেক কোম্পানীর শেষ নিশ্বাস উঠছে। আর এরই সাথে ক্ষয়ে যাচ্ছে আমেরিকার সাধের "মো-টাউন" ডেট্রয়েট।
৫০ এর দশকে এই ডেট্রয়েটই ছিল "আমেরিকান ড্রীম" বাস্তব করার সবচেয়ে সম্ভাবনাময় নগরী, এর নাগরিকরা ছিল আমেরিকায় সবচেয়ে ধনী, বাড়িঘরের মালিকানা ছিল আমেরিকার মধ্যে সবচেয়ে বেশী। তবে পচন শুরু হয়েছিল ৬০ এর দশকেই, এশিয়ান/জার্মান গাড়ির সাথে পাল্লায় ক্রমেই পিছিয়ে পড়া, '৬৭ এর রায়ট, বাড়তি লোকসানের সাথে সাথে জব লস, সব মিলিয়ে এমনতেই ধুঁকতে থাকা ডেট্রয়েটকে আরেকটা বড় ধাক্কা দেয় ২০০৭ এর রিসেশন। এই ফটো কম্পাইলেশন আর এইটা দেখুন, কিছুটা আন্দাজ পাবেন। চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা মুশকিল এমন অকল্পনীয় পতন। এক লেখকের ভাষায় "পোস্ট-এপোকেলিপ্টিক"।
সেই ডেট্রয়েট এখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। ২০০৭ এ শুরু হওয়া রিসেশনে মরতে বসা গাড়ি কোম্পানীগুলোকে আমেরিকান সরকার বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার "রিকভারী মানি" দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে। তখন অনেকেই এর সমালোচনা করেছেন, যদিও এখন এই কোম্পানীগুলো ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, লাভের মুখ দেখছে আবার, সরকারের টাকাও ফেরত দিচ্ছে। এই বিজ্ঞাপনটা সেরকমই একটা কোম্পানী---ক্রাইসলার এর তৈরী করা।
সেই চিরচেনা কাহিনী---ঘুরে দাঁড়ানো। কঠোর পরিশ্রম, কঠোর অধ্যবসায়। সেজন্যই হয়ত ভালো লেগেছে বেশী
কেমন লাগলো জানাবেন। বিজ্ঞাপনে র্যাপার এমিনেমকে আর তার গানটাকে অনেকেই হয়ত চিনবেন। প্রসঙ্গত, এমিনেম ওরফে মার্শাল ম্যাথারস-এর বেড়ে ওঠা ডেট্রয়েটেই।
আর আমেরিকার গাড়ি কোম্পানীগুলো কি আসলেই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? দেখা যাক। রিসেশনের ধাক্কায় এরা অনেক বেশী "ডায়নামিক" হয়ে উঠেছে, স্বীকার করতে হবে। নতুন টেকনোলজীর ব্যবহারও বেড়েছে দেখার মত। ওবামা সরকার "বেইলআউট মানি"র একটা বিরাট অংশ খরচ করেছে ক্লীন আর গ্রীন এনার্জির পেছনে। মোটর ইন্ডাস্ট্রিগুলো ইলেক্ট্রিক কারকেই ভবিষ্যত মেনে নিয়ে জোরে শোরে এর পেছনে লেগেছে। ফলাফল কী হবে, তা সময়ই বলে দেবে।
--দিফিও
furiousfive.f5 -at- gmail.com
মন্তব্য
সুপারবৌলের অ্যাড নিয়ে লেখা দেখেই মনে হলো আপনার লেখা। আমার বেশি ভালো লেগেছে প্রথমটা।
লেখায়
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
ধন্যবাদ সজল প্রথমটা আসলেই দারুণ।
আর ডেট্রয়েটেরটা বাস্তব জীবনের এক সংগ্রাম নিয়ে, ঘুরে দাঁড়ানোর কাহিনী নিয়ে, তাই হয়ত ভাল লেগেছে বেশী।
বিরিয়ানি খেতে খেতে খেলা দেখব
মহাগামলা না কিন্তু, ওটা নিয়ে আসলেই আমার কোনো আগ্রহ নেই। বিশ্বকাপ দেখব।
আপনের "বিবি"র সাফল্য কামনা করি (বিরিয়ানি উইথ বিশ্বকাপ)
--দিফিও
আমার বেশি ভালো লেগেছে প্রথমটা।
-----------------------------------------------------
Lover of Sadness
প্রথমটা আসলেই চমৎকার।
--দিফিও
১মটা আসলেও চমৎকার। ইউটিউবে দেখছি এই কদিনেই ১ লাখের উপর "লাইক" পড়েছে!
--দিফিও
ভালো লাগলো ।
ধন্যবাদ! মহাগামলার দিনে বিয়ারের বিক্রী নাকি আমেরিকায় ২০ ভাগ বেড়ে যায়, সে হিসেবে আপনার ইমো-টা পার্ফেক্ট হয়েছে!
---দিফিও
এইসব বিজ্ঞাপন দেখি আর ভাবি কবে যে আমাদের নির্মাতারা এমন সব ক্রিয়েটিভ কাজ করবেন! আমাদের বিজ্ঞাপন এখনো রয়ে গেছে সুকৌশলে নারি মডেলদের উত্তেজক মাংসপিন্ডের আভাস দেখানো, কিছু বুড়ো মডেলদের ভাঁড়ামীপূর্ণ সংলাপ, আর বাচ্চাদের মুখে পাকা পাকা কথা বলানোর মধ্যে।
ওইটুকু বাচ্চা মেয়ে রসের মেলার কি বোঝে! একসময়ের জনপ্রিয় নায়িকা দোয়েলের বাচ্চা মডেল মেয়েটার আদুরে-হাস্কি কন্ঠের সংলাপ শুনলে মায়াই লাগে যে বিজ্ঞাপনের নির্মাতা বাচ্চাটাকে কি পাঁকা পাঁকিয়েছেন।
মাসকয়েক আগে, নাইরোবির বিখ্যাত ট্রাফিক জ্যামে একটা ক্রাইসলারের সাথে অনেক্ষণ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছিলাম। জোস একটা গাড়ি। একদিন চালানোর খুব ইচ্ছে।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আমেরিকাতেও কিন্তু গাঁজাখুরি বিজ্ঞাপন দেখি অনেক, এমনকি এই মহাগামলার কিছু বিজ্ঞাপনও যথেষ্টই নিম্নমানের ছিল। সবগুলি একসাথে দেখতে পারেন এখানে
youtube.com/adblitz
আর ক্রাইসলারের ৩০০সি মডেলটা আমারো দারুণ প্রিয়
বাহ!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
ধন্যবাদ
--দিফিও
ভোক্সওয়াগনের বিজ্ঞাপনটা আমার অতি প্রিয়। যতবার দেখি ততবারই মুগ্ধ হই।
কলেজ ফুটবলে আমার প্রাক্তন স্কুল আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন।
হে হে আমার ইস্কুল গেল বছর টানা ৭টা খেলায় হেরে সরকারীভাবে সবচেয়ে বাজে দল হয়েছিল, শেষে ১-২ ম্যাচ জিতে আমরা এখন শেষ থেকে চার
এইটা কুন্দল?
--দিফিও
খাইছে!
আমাদের বেশ ক'বছর পর এবার একটা গামলায় ঢুকেছে, হেরেছে যদিও।
--দিফিও
সুপারবৌলের দিন, মানে আমাদের রাতে আমার এক বন্ধু, যে কিনা আবার এই জিনিসের বিরাট ফ্যান, স্থানীয় এক দলের হয়ে খেলে (এবং কোচগিরিও করে)- 'আমাকে বলে চলো খেলা দেখি।' তার এই অফার শুনেই ফোরটিন জেনারেশন তুলে গালাগালি করলাম কতোক্ষণ। কারণটা এই না যে আমি এই খেলা বুঝি না বলে, কারণটা এই না যে আমি সেদিন ভয়ানক টায়ার্ড ছিলাম বলে। বরং কারণটা হলো, এই ব্যাটা একদিন আমারে ধরে নিয়ে গেছিলো ওর দলের খেলা দেখার জন্য। শনিবার বিকেলের পুরোটা সময় জুড়ে ওর বকরবকর কমেন্ট্রিসহ আমার অর্জিত জ্ঞান তার সাথে ডাকওয়ার্থ-লুইস মেথড সম্পর্কে আমাদের গ্রামের আক্রমুদ্দী প্রধানের জ্ঞানের সাথে তুলনা চলে।
শালা আবার ঘুম বাদ দিয়ে আমারে এই জিনিস দেখার অফার দেয়।
আর এ্যাডগুলো দারুণ। এক নম্বরটা য়্যুটুবে দেখে বুঝি নাই, এইটা সুপারবৌলের। ডেট্রয়েট নিয়ে আমার একটা ফ্যাসিনেশন আছে। সেইটা পরে কোথাও বলবো কখনো।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আমেরিকান ফুটবলটা আসলে বেশ জটিল, ফুটবলের মত এট সহজ নয় মোটেও। ২/১ জন বুঝিয়েছিল, আবার সব বেমালুম ভুলে গেছি।
ডেট্রয়েট ফ্যাসিনেশন সম্বন্ধে জানতে চাই!! আমি শহরটায় ২ বার গিয়েছি, তার উপর ইদানিং এটার অর্থনীতির কথা পেপারে এত দেখছি, যে আমারো একটা আগ্রহ হয়ে গেছে। কিঞ্চিত অফ টপিক, ডেট্রয়েট অঞ্চলের এক কংগ্রেসম্যান (নিম্ন কক্ষের সংসদ সদস্য) বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত, এটা দেখেছেন?
ভক্সয়াগনেরটা আমারও খুব প্রিয়। এই খেলাটার প্রতি আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। তাছাড়া আমেরিকান ফুটবল বলতে কি বুঝাচ্ছেন, ঠিক বুঝলাম না।
-রু
নতুন মন্তব্য করুন