তবু ভালোবাসি তোমায়
জানিনা এ লেখা তুমি পড়বে কিনা? কিন্তু বুকের ভেতর জমে থাকা কষ্টগুলো আর চেপে রাখতে পারলাম না। তাই এই খোলা চিঠি তোমাকে দিলাম। কেমন আছ তুমি? জানি এর কোন উত্তর তুমি দেবে না। অনেকদিন হয়ে গেছে তোমাকে দেখিনা। তোমাকে দেখার তৃষ্ণায় যখন ছটফট করতে থাকি, তখন আর কিছু না পেয়ে ইন্টারনেটের পাতায় খুঁজে বেড়াই তোমাকে। সেখানে তোমাকে খুঁজে পেলেও তোমার মুখটা আমার কাছে অদৃশ্যই থেকে যায়।
তোমার মনে পড়ে, প্রথম যেদিন আমি আর তুমি বাসে করে ফিরছিলাম, তোমার মুখের দিকে বারবার তাকাতে গিয়েও সেদিন আমি তাকাতে পারিনি। কি এক অসম্ভব লজ্জা আমাকে আঁকড়ে ধরেছিল। যতবারই তোমার কাছে গিয়েছি ততবারই এমন হয়েছে। ছেলেদের এত লজ্জা থাকে বল! কিন্তু তোমাকে রেখে যখন চলে আসতাম তখন ঠিকই তোমার মুখটা দেখার জন্য ছটফট করতাম, আর মনে মনে নিজেকে ভীষণ বকে দিতাম লজ্জা ভেঙ্গে তোমার মুখটা ভালো করে না দেখার জন্যে। এখন তোমাকে দেখার জন্য যখন তোমার কাছে ছুটে যেতে ইচ্ছা করে তখন কি এক অদৃশ্য শৃংখলে বাঁধা পড়ে আমার পা। সাহস পাই না তোমার কাছে ছুটে যেতে, যদি তুমি রাগ করো!
মনে মনে কতবার ভেবেছি কোন এক আষাঢ় শ্রাবণে তোমার কাছে যাবো। আমার জন্যে মেঘ কালো করে বৃষ্টি নামবে। রিকশার হুড তুলে আমি আর তুমি ঘুরে বেড়াব। চেহারায় খুব বিরক্তি ফুটিয়ে মুখে বলতে থাকবো ” বৃষ্টিতে ভিজে গেলাম একদম, এখন এই ভেজা কাপড়ে ফিরব কি করে, কিন্তু মনে মনে বলতাম. ইশশ্ কখন যে হুডটা তুলে দিয়ে দুজনে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে দ’ুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকব।” কিন্তু কখনই যাওয়া হয়নি, হয়নি তোমার আমার বৃষ্টিতে ভেজা। তাইতো আজ যখন চলার পথে বৃষ্টি নামে তখন আর নিজেকে আড়াল করে দাঁড়াই না। কল্পনায় তোমাকে পাশে নিয়ে হাটতে থাকি তোমার হাত ধরে।
তোমাকে নিয়ে বাস্তবে হয়তো আর কখনই বৃষ্টিতে ভেজা হবে না, হয়তো আর কখনই তোমার হাত ধরে হাটতে পারবো না, মুঠোফোনে আমার এলোমেলো কথা শুনে হয়তো আর কখনই তুমি বলবে না ” তোমার মন খারাপ কেন”? তবু কেন যেনো মানতে পারি না। বুকের ভেতর কোথায় যেন একটা ক্ষীণ আশা উঁকি দেয়, হয়তো শেষ বারের মত হলেও একটা বার তোমার মুখের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকতে পারবো, ঘুরতে পারবো তোমার হাত ধরে।
অনেকটা সময় পার করে ফেলেছি, তবু কিছুতেই তোমাকে ভুলতে পারছিনা। যতবারই ভুলতে চেষ্টা করেছি ততবারই তোমার স্মৃতিরা যেন আমাকে শাস্তি দিয়েছে আরও বেশী মনে করিয়ে দিয়ে।
সারাদিনের পরিশ্রম শেষে প্রচন্ড ক্লান্তি নিয়ে যখন বিছানায় যাই তখন কোথা থেকে যেন তোমান স্বপ্নেরা এসে আমাকে ব্যস্ত করে তোলে। মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে যায়। পাগলের মত ছটফটকরতে করতে কখন যে আবার ঘুমিয়ে যাই বুঝতে পারি না।সকালে যখন ঘুম ভেঙ্গে যায় তখনও স্বপ্নের সুর বাজতে থাকে বুকের ভেতর। ভালো মন্দের এক মিশ্র অনুভূতি নিয়ে শুরু করি দিনের কাজ।কাজ করতে করতে হঠাৎ খেয়াল হয় আমি তো আসলে কাজ করছি না, তোমার কথা ভাবছি। তোমাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি কল্পনার রাজ্যে অসম্ভব কে সম্ভব করার অভিপ্রায়ে।
এখন আর বিকেলে ক্যাম্পাসে আড্ডা দিতে গেলে তোমাকে বলে যেতে হয় না কিংবা আড্ডার মাঝখানে তোমার ফোন পেয়ে আৎকে উঠতে হয় না বকা খাওয়ার ভয়ে। সকালে ঘুম থেকে জাগিয়ে দিতে আমার পাশে এখন বিনিদ্র রাত কাটায় দু’দুটো মুঠোফোন। নিঃসংগতার মাঝে সিগারেটগুলো যখন একের পর এক পুড়ে ছাই হতে থাকে তখন হাতের মধ্যে মুঠোফোন নিয়েও তোমাকে ফোন করা হয়ে উঠে না।
সময়ের প্রবাহমানতায় দূরত্বের টানা ব্রিজটা ক্রমশই লম্বা হয়ে যাচ্ছে, নিজেকে প্রকাশের সব ভাষা হারিয়ে আজ আমি মনের কোণে নিঃসঙ্গ সময় কাটাই। অলস দুপুরগুলোয় যখন নিঃসঙ্গতার যন্ত্রনা আমাকে নীল করে দেয় তখন হয়তো খুলে বসি তোমার লেখা চিঠিগুলো। পড়তে পড়তে হয়তো কখনও হয়তো মুখের কোণে ফুটে উঠে এক চিলতে হাসি, কখনওবা চোখদুটো ভিজে উঠে নিজের অজান্তেই। ভীষণ ইচ্ছে ছিলো তোমাকে একবার দেখবো আকাশী নীল শাড়িতে। কপালে নীল টিপ, কানে সোনার ঝুমকো দুল পড়ে তুমি সামনে এসে দাঁড়িয়ে জানতে চাইবে “তোমাকে কেমন লাগছে দেখতে”।
ইচ্ছেগুলোকে বুকের ভেতর চেপে রেখে অব্যক্ত যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে আজ আমি ছুটে বেড়াই সময় থেকে সময়ে। যখন তোমার সাথে ভীষণ গল্প করতে ইচ্ছে করে তখন কল্পণায় তোমাকে সামনে বসিয়ে অনর্গল বকতে থাকি, তবুও একটিবার দূরত্বের ব্যবধান ভেঙ্গে তোমাকে ডকতে পারি না।আমার এই সকল অনুভূতিগুলোকে আমি হাসিমুখে মেনে নিতে পারি শুধু তোমার মঙ্গল কামনায়। দিনশেষে তাই আমার শুধু একটাই চাওয়া ”তুমি ভালো থাকবে। ভালো থেকো।।
অর্ক রায় চৌধুরী
মন্তব্য
ভালই লাগলো।
----------------------------------
Sad Stories
ধন্যবাদ
যাহার জন্যে চক্ষু বুজে বহিয়ে দিলেম অশ্রুসাগর,
তাহারে বাদ দিয়েও দেখি বিশ্বভূবন মস্ত ডাগর।
এরচেয়ে বেশী আর কি প্রত্যাশা করা যায়
এগিয়ে যাওয়াটা মানুষের ধর্ম
তাইতো আজ যখন চলার পথে বৃষ্টি নামে তখন আর নিজেকে আড়াল করে দাঁড়াই না। কল্পনায় তোমাকে পাশে নিয়ে হাটতে থাকি তোমার হাত ধরে
-- ভালো লাগলো
--- নুশান
সবার জীবনেই একবার হলেও ভালবাসা উচিত . তাই বলে কি যবন থেমে যাবে?
যেবন কি আর থেমে থাকে রে ভাই!!! খুড়িয়ে খুড়িযে হলেও চলতে থাকে ।
নতুন মন্তব্য করুন