শেষ পর্যন্ত আরব মুল্লুকের ‘বানাত’ অর্থাত কন্যাদের বোরখাবিহীন চেহারা দেখার সুযোগ হয়ে যায় যুবকের। কিন্তু রূপচ্ছটায় ভস্ম হওয়া থেকে রক্ষা মিলে। হয়ত মায়ের দোয়ায়। হয়ত পাহারারত সেই মহিলার ঈগল দৃষ্টি তাকে রক্ষা করে।
জেদ্দাস্থ ‘কুল্লিয়াতুল বানাত’ অর্থাত বালিকাদের কলেজ থেকে একটা বড়সড় অর্ডার পেল যুবকের কোম্পানী বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি সরবরাহের। চল্লিশ ফুট লম্বা কন্টেইনার ট্রাক ভর্তি মাল এল ইংল্যান্ড থেকে সড়কপথে, ফেরীতে কৃষ্ণসাগর পার হয়ে, তুরস্ক এবং জর্ডানের উপর দিয়ে, সৌদী আরবে ঢুকল তাবুক বর্ডার দিয়ে।
‘বানাত’দের তো আর দেখা যাবে না! যুবক ওগুলো লিস্ট ধরে গোছাতে গিয়ে আদরের হাত বুলিয়ে দেয় এটার ওটার উপর আর থেকে থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। দেশে হলে দু’একটার ভিতর ঠিক ফোন নাম্বার দিয়ে দিত। এখানে ওসব করে দেশে গলাকাটা লাশ হয়ে না যেতে হয়! সারা পরিবার যুবকের দিকে তাকিয়ে। এছাড়া, আরেকজনের জন্যে অবশ্যই বাঁচতে হবে।
আরবরাই ডেলিভারি দিতে যায়। কেননা আরবিতে কথা বলতে হয়, কাগজপত্রও আরবিতে লেখা। ‘বানাত’দের যন্ত্রপাতি পাঠানো নিয়েই সন্তষ্ট থাকতে হত যুবকের, যদি না কোম্পানীর মালিক সেদিন তার রুমে ডেকে না পাঠাতো।
pH Meter ইনস্টল করতে বালিকাদের কলেজে যাবে তুমি কাল, ঢুকতেই বলল সে। মিশরীয় ইঞ্জিনিয়ারটা ফেল করেছে। মনে হয় সার্টিফিকেট কিনে পাশ করেছে। আরবিতে একটা জঘন্য গালি দিয়ে ফেলল সে।
যুবকের তখন কন্যাদের বোরখাবিহীন চেহারা দেখার কল্পনায় ‘মশগুল’। পাড়বে না পাড়বে না ভেবে, বলে বসল ‘লা মুশকিলা’। কোম্পানীর মালিক পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলল, তুমি ‘শাতের’ লোক, আমি জানি তুমি পরবে।আরবি ‘শাতের’ মানে করিতকর্মা।
এখানে বলে রাখা ভালো, যুবক পেশায় ফার্মাসিস্ট, যন্ত্রপাতি কোনদিন ইনস্টল করেনি, শুধু বোরখামুক্ত ‘বানাত’ দেখার আগ্রহ তাকে এই চ্যালেজ্ঞ গ্রহণ করতে উদ্ভুদ্ধ করে।
সারারাত জেগে ম্যানুয়াল পড়ে যুবক নিজেকে তৈ্রী করে, গুণ গুণ করে গান গায় একধরণের উত্তেজনায়। সকালে বালিকাদের কলেজের গেটে উপস্থিত সে pH Meter সহ। সঙ্গে ইয়েমেনি ড্রাইভার, কথা বলার জন্যে। গেট একদম বন্ধ, কলেজ চলছে। দোতলা কলেজ, এমনভাবে তৈরি, বাইরে থেকে কাউকে দেখার উপায় নেই। অনেক বেল বাজানোর পর ‘জল্লাদ’এর মত এক মহিলা, সম্ভবত দারোয়ান, একটা ঘুলঘুলির মত জায়গা দিয়ে ভয় দেখানোর মত গলায় বলল, ‘বানাত’রা ভিতরে এখন, ‘মামনু’ অর্থাত নিষিদ্ধ ‘রিজ্জাল’ মানে পুরুষের প্রবেশ। প্রফেসরদের সাথে কথা বলার পর, সে অবশেষে রাজী হল শুধু ‘মোহান্দেস’কে, অর্থাত ইঞ্জিনিয়ার কে ঢুকতে দিতে। আধখোলা দরজাটা দিয়ে চেড়ে চিপটে অনায়াসে ঢুকে গেল হাল্কা পাতলা বাঙালি যুবক। ‘জল্লাদ’ মহিলা বলল, আমার পিছনে থাক, আর জোরে জোরে হাততালি দিতে দিতে বলতে লাগল, ‘রিজ্জাল’, ‘রিজ্জাল্। ডানে বাঁয়ে আড়চোখে দেখতে থাকে যুবক, বেশীরভাগ বোরখাছাড়া ‘বানাত’রা আগুনের মত রূপ নিয়ে এদিক ওদিক পালাচ্ছে, নিজেদের আড়াল করছে। কয়েকজন ঠাটে বসে রইল, একজন ঠোঁট উল্টিয়ে বলল, ‘রিজ্জাল’ কই, এতো ‘ওয়ালাদ’।
অফিসে এসে প্রথমে অনেক বাহবা পেল যুবক, প্রফেসর ততক্ষণে ফোনে জানিয়ে দিয়েছে, তোমাদের এবারের ‘মোহান্দেস’টা ‘মজবুত’ ছিল, কোথাকার সে?
একজন মিসরীয় একাউন্টেন্টকে পাশে ডেকে যুবক শুধায়, ‘ওয়ালাদ’ মানে কি ভাই? সে বলে, কেন, ‘ওয়ালাদ’ মানে বালক। থ’ হয়ে যায় চব্বিশ বছরের যুবক, এত বড় অপমান! পরে উপলব্ধি করে এর কারণ। সৌদী পুরুষরা প্রায় সবাই গোঁফ রাখে। আর সে ছিল গোঁফ বিহীন। তাই তার এই অবমূল্যায়ন।
পরদিন থেকেই যুবক গোঁফ রাখতে শুরু করে।
মন্তব্য
...
খুব মজা পাইলাম।
নামধাম কই ভাই...?
_______________________
মেঘদুত
'গোঁফ দেখে যায় চেনা' লিখলাম:
খন্দকার আলমগীর হোসেন
থুক্কু, আপনারে দিতে মিছ কইরা ফালাইছি।
খন্দকার আলমগীর হোসেন
মধুস্রোতা স্বচ্ছতোয়া লেখনী। চালিয়ে যান।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
আপনার সুন্দর মন্তব্য যে কাউকে অনুপ্রাণিত করবে। ভাল থাকুন।
খন্দকার আলমগীর হোসেন
ভালো! ভালো!
[বানান: ধরণ > ধরন]
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
ভালো লেগেছে জেনে স্বস্তি পেলাম। শুভেচ্ছা।
খন্দকার আলমগীর হোসেন
আপনাকে শুভেচ্ছা।
খন্দকার আলমগীর হোসেন
ইমোটাতে বৈচিত্র আছে। কই পাইলেন?
খন্দকার আলমগীর হোসেন
সংগৃহীত
মজার গল্প।
আমাদের পুরো জীবনটাই গল্পের সমাহার। আপনাকে ধন্যবাদ।
খন্দকার আলমগীর হোসেন
হুমম, এতশত না জেনেও আমি গোঁপ রাখি।
আপনার আগের লেখায় একটা অনুরোধ করেছিলাম। দেখবেন।
তবে কপাল খুলতে আর দেরী নাই হে
হে হে... তবে কপাল যদি খুলবেই তবে ধাঁই কিরি কিরি খোলে না কেন?
আপনার অনুরোধ পড়েছিলাম যত্নের সংগে। ইচ্ছে করেই ও ব্যাপারটা ওখানেই ক্ষান্ত করে দিয়েছি। ভুলেই গিয়েছিলাম প্রায়। ভাল থাকুন।
খন্দকার আলমগীর হোসেন
নাইস।
পাড়বে না পাড়বে না পড়লে মনে হয় ডিম পাড়বে না পাড়বে না.. হা হা হা ... বানানটা ঠিক করেন।
আপনাকে ধন্যবাদ। কি করব ভাই। অন্যান্য ব্লগে লিখে সম্পাদনা করতে থাকি অনবরত, শব্দ পাল্টাই, বাক্য বিন্যাস পরিবর্তন করি, বানান শুধরাই। এখানে এখনও তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক, সে সুযোগতো নেই। নইলে তিনটা বানান বিভ্রাট রয়েছে এই লেখায়, এ নিয়ে মনস্তাপ আমার চেয়ে বেশী কার?
খন্দকার আলমগীর হোসেন
হা হা হা হা........
দারুণ মজা পেলাম পড়ে।
অফটপিক: ইসলামে নারী-পুরুষের সম অধিকারের আয়রনিটা কোনদিন বুঝতে পারলাম না।
আপনার মজা পাওয়ার মধ্যে লেখার সার্থকতা খূঁজে পেলাম।
খন্দকার আলমগীর হোসেন
--------------------------------
Sad Stories|Sad Songs
খন্দকার আলমগীর হোসেন
চালিয়ে যান
আমাদের এরশাদ চাচার গোফ কৈ
শতদল
আপনাকে শুভেচ্ছা জানাই।
খন্দকার আলমগীর হোসেন
আগে বুঝি নাই, আরবের 'বানাত'রা কি গোঁফ দিয়া বালক-পুরুষ প্রভেদ করে নাকি?
-অতীত
সচরাচর সৌদিরা গোঁফ ফেলে না, ওদিকে যুবক ছিল হ্যাংলা পাতলা। বাগে পেয়ে adam-teasing করছিল কিনা কে জানে!
খন্দকার আলমগীর হোসেন
আপনার সাবলীল লেখনি আমার ভালো লাগে, টপিক নির্বাচনও বেশ। আরবদেশ সম্পর্কে অনেক কৌতুহল। আরো লিখবেন।
আমার কিন্তু একগোছা ফরাসী দাড়িও আছে। এটা কি ভ্যালু এ্যাডেড?
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনাদের ভাল লাগলে লিখতে থাকব। বিশ বছর ধরে দেশটাকে দেখেছি। চেষ্টা করব মজার বিষয়গুলো সামনে আনতে।
ওখানে অর্ধেকের বেশী পুরুষ দাড়ি রক্ষা করে। শিক্ষিতদের কেউ কেউ ফরাসী দাড়িও রেখে থাক। দাড়িটা ওখানে ভ্যালু এ্যাডেড। দেশের মত অবমূল্যায়ন নয়।
খন্দকার আলমগীর হোসেন
মজা পেলাম
নতুন মন্তব্য করুন