হুজুরদের গল্প

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ১৫/০২/২০১১ - ৫:০০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

হুজুর হুজুর, চানাচুর
হুজুরের পোলায় পড়া-চুর
হুজুর গেলে ফতুল্লায়
হুজুরের বউ ঢোল বাজায়

আমাদের এলাকায়, আঞ্চলিক উপভাষায় শ্লোকটা সামান্য ভিন্নধাঁচের হলেও ভাবটা এরকমই। বলাই অত্যুক্তি, ছোটবেলায় এই শ্লোক আমাদের শিশু-কিশোর মহলে প্রবল জনপ্রিয় ছিল। হুজুর ভক্তি নয়, হুজুর বিদ্বেষও বোধকরি না, এই ধরণের শ্লোকের ব্যুতপত্তিগত কার্যকারণ যে কী- সেটা আমার কাছে এক দুর্ভেদ্য রহস্য। হুজুরের সন্তানকে পড়াচোর আর স্বামীসঙ্গ বিবর্জিতা হুজুরপত্নীকে বাদ্য-বাজন বিভূষিতা হিসেবে রুপায়িত করে এখানে নিশ্চিতভাবেই হুজুরদের প্রতি শ্লেষাত্মক ভাব জ্ঞাপিত হয়েছে। তবে আমাদের এখানকার হুজুর সম্প্রদায়ের চাল-চরিত্র মোটা দাগে পড়ে নিলেই আঁচ করা যায়, কালস্রোতে এমন শ্লোক গড়ে ওঠা বিচিত্র কিছু নয়ও। হুজুর সম্বন্ধীয় ননডিসকার্সিভ ন্যারেটিভ হল; হুজুর হলেন তারাই যাদের সুপারভিশনে গ্রামেগঞ্জে, মফস্বলে এমনকি কাউন্টার-ন্যারেটিভ সর্বস্ব শহরেও প্রাইমারি- অ্যারাবিক তথা ইসলামিক ডিসকোর্সগুলো শিশু মনে প্রোথিত ও বিকশিত হয়। অসম্পাদকীয় বচনে বললে- হুজুর তিনারাই, যাঁদের বেতের সযত্ন আদর-আপ্যায়ণেই আমাদের অধিকাংশের আরবি শিক্ষার হাতেখড়ি।

ছোটবেলায় বিভিন্ন মেয়াদে ভিন্ন ভিন্ন হুজুরের কাছে পড়েছি। সামাজিকীকরণের ধাপে, মুরুব্বিদের চাপে, এমনকি ফিরনী-হালুয়ার ভাপে প্রলুব্ধ হয়েও বহু মিলাদ-মাহফিলে গিয়েছি, ওয়াজ-খুতবায় শরীক হয়েছি। এলাকায় একটা মক্তব এবং একাধিক মসজিদ ছিল, সেগুলোতে লুঙ্গিপরিহিত, পাগড়ি-বিজড়িত, কিংবা জোব্বা-আচ্ছাদিত অদ্ভুদদর্শন হুজুরদিগের নিত্যদিন যাতায়ত ছিল। হুজুর সংক্রান্ত অভিজ্ঞতার ঝাঁপিও তাই আমার পরিপুষ্ট। গ্রামের মক্তবের বেত্রাঘাত-শিল্পী মোকাদ্দেস হুজুর (ছেলেরা বলত কলাবাদুড়), যিনি সালাম দিতে সামান্য ভেম হলে হেফজখানার পিচ্চিগুলোকে বেতিয়ে একসা করতেন; অপেক্ষাকৃত প্রবীণ, নাম ভুলে যাওয়া সেই পানমুখো, সুরমাচোখো, বেঁটেমত ‘চিকা’ হুজুর, যিনি প্রায়ই নিতম্ব চুলকোতে চুলকোতে গেঁয়ো গিন্নীদের ওপর কেমন একটা বদনজর বুলিয়ে পথ চলতেন; অতিসাম্প্রদায়িক ফোরকান হুজুর, যিনি উঠতে বসতে এলাকার বাবু-বড়ুয়াদের পিতা-প্রপিতামহকে টেনে গালাগাল দিতেন; এমনকি পাড়ার ইমাম সাহেব, আমরা ডাকতাম বড় হুজুর, যিনি দোকান থেকে আবুল বিড়ি কিনে দোকানিকে বলতেন, ‘গুল্লিফের প্যাকেটে ভইরা দেন’; হঠাত চিন্তা করতে বসলে শৈশবের সমস্ত হুজুরই যেনো স্মৃতির মন্তাজে একে অপরকে গুঁতিয়ে, খেদিয়ে ক্রমাগত ঢোকে আর বেরোয়।

--------

আমার আরবি শিক্ষার হাতেখড়ি হয় আমার কাকু পঞ্চমজনের কাছে, ডাকতাম ‘বাপজি’। বাপজি’র মধ্যে পেশাদারিত্বের অভাব, এহেন অভিযোগ তুলে কিছুদিনের মধ্যেই সন্তানের আরবি শিক্ষার গতিবৃদ্ধির নিমিত্ত আব্বাজান একজন এলেমদার হুজুর নিয়োগ দিলেন। অসমর্থিত শ্রুতিমতে হুজুরেয়ালা তখন নিকটস্থ এক মাদ্রাসায় ‘ফাজিল’ হবার তালিম নিচ্ছিলেন। বিলক্ষণ মনে পড়ে, হুজুর যখন প্রথম দিন এসেছিলেন আমি অনেকক্ষণ ধরে কেঁদেছিলাম,“এই দাঁইড়ার কাছে পড়বনা, ও দেখতে গুণ্ডাদের মত; আমি বাপজি’র কাছে পড়তে চাই।” কেঁদে ঘর শুদ্ধ মাচাঙে তোলার মূল কারণ, প্রথমদর্শনে লোকটাকে বদখৎ লেগেছিল। থুতনির দুপাশে দাঁড়িগুলো ছিল মোচড়ানো, মাঝখানের দিকে অনেকটা চোখা- কলার মোচার মত। চোখে ভাসে, উনার মোচ ছিল ভীষন সরু, ঠোটের দুপাশে সেটা আবার ঈদের চাঁদের বাঁক নিয়েছে, বাঁদিকটায় সে বাঁকের উপর একটা গোলগাল মাষ; বক্র এবং চক্র মিলে মুখের পাড়াকে পাকনিশান সিতারা-ও-হিলালের মত বানিয়ে রেখেছে। তার কিছুদিন পূর্বেই বাংলাছবির খলচরিত্রের তদানীন্তন প্রবাদপুরুষ আহমেদ শরীফকে ওরকম মেকাপে একটা সিনেমায় দেখেছিলাম বিটিভিতে, সেই দর্শনানুভূতিও ভয় জোরদার করার অন্যতম নিয়ামক ছিল। হুজুরের দাঁড়ির ভিতরেও মাঝারিমত সরু তিল ছিল একটা, যেটা দেখে আমি প্রথমে ভেবেছিলাম উকুন। হুজুর সবসময় পরে আসতেন একটা সাদা পাঞ্জাবী, মাথায় জালিঅলা প্লাস্টিকের টুপি। সাথে, সবুজ রঙের ফুলঅলা একটা লুঙ্গিও দীর্ঘদিন তার পরিধেয় ছিল। কোন এক বর্ষার দিনে উঠোনে পা পিছলে পড়ে, লুঙ্গিটা ফেঁড়েফুঁড়ে উনার লোমশ বাদামরঙা ‘পাকিস্তান’ উম্মোচিত হয়ে যাবার আগ পর্যন্ত ওটা বদলাতে দেখিনি কখনো।

ভদ্রলোকের সম্পর্কে আমার পয়লা দিনের ধারণা ছিল অব্যর্থ। প্রতিদিন বাসায় আসার আগে, ঘরের সামনে থেকে একটা করে পেয়ারাগাছের ডাল ভেঙে নিয়ে আসতেন, অবরে-সবরে আমার পিঠে খঞ্জনির সুর তোলার জন্য। ‘গ্বাইন’ এ ভারি গলায় ‘গ্বো’ না বললে, ‘ক্বাফ’ বলার কালে কোপিয়ে সুর না ভাজলে, হরফের উপর ‘বড়-মাদ’ থাকলে দম আটকে আসার আগ পর্যন্ত স্বর না টানলে- কোন কথাবার্তা নেই- সরাসরি ‘শপাং’। আমার পিঠ যেন ছিল তার ফেন্সিং-প্যাড। হুজুরকে খানিকটা নেতিয়ে রাখার মোক্ষম অস্ত্র আমার কাছেও ছিল, সেটা আমার ইংরেজী ওয়ার্ডবুক পড়া জ্ঞান। সুযোগ পেলেই জিজ্ঞেস করে বসতাম “হুজুর বলেন দেখি, মোরগা ইংলিশ কী? জানেন না! হেহে- ‘কক’,...‘কক’।” অথবা “ট্রান্সলেশন করেন দেখি ‘কুকুর ঘেউ ঘেউ ডাকে’...কী পারবেন নাতো? আমি বলে দেই- ‘দি ডগ ইজ কলিং বার্ক বার্ক’।” আমার তালিজোড়া ইংরেজী জ্ঞানকে ছাপিয়ে তারচেধিক ইংরেজী দুর্বলতা হুজুরের ইগোকে সাঁড়াশিতে আটকানো পুটিমাছের মত টান দিত, তাই উত্তর করতে না পেরে তিনি সলজ্জ ভঙিতে কিছুক্ষন চুপ মেরে থাকতেন। তবে পরে একবার রুদ্রমূর্তি নিলে তার উপর ইংরেজী ফলানো জনিত কারদানির মাশুল অব্দি উসুল করে নিতেন সুদেমূলে।

একদিনকার কথা। খুব ভোর করে আসলেন তিনি। টাটকা শীতের ভোরে কাঁথামোড়া পরমানন্দ ঘু্মের শ্রাদ্ধ করে আড়মোড়া ভাঙাটা অনেকটা মেঘনাথ-বধেরই নামান্তর, তার ওপর শৈত্যপ্রবাহ আর হিমশীতল নলকূপের জলের যৌথনট্যম, উত্তরকৈশোরের নষ্টছবিগুলো থেকেও অত্যধিক সুড়সুড়িদায়ক। এতকিছুকে ছাপিয়ে ওজু সেরে, ছিপারা বগলদাবা করে, হুজুরকে দর্শন দিলেও, ঘুমকে পুরোপুরি সোমতীর্থে পাঠিয়ে দেওয়া তখনও হয়ে ওঠেনি।

হুজুর বলেন, “পড়্, আলিফ লাম জবর ‘আল’।”... আমি পড়ি

হুজুর বলেন, “বা লাম জবর, ‘বাল’।”...আমি পড়ি

হুজুর খেঁকিয়ে ওঠেন, “ওই, ধরে পড়, আংগুল দিয়ে হকখানে ধরে ধরে পড়”

আমি ঢুলু ঢুলু চোখে আঙুল ওঠাই, তারপর পৃষ্ঠার উপর হরফ বরাবর আঙুল রাখি, বলি “বা লাম জবর...”
সাথে সাথেই শুনি...‘শপাং’। আমার পিঠের চামড়া যেন বেত্রাঘাতে খসিয়ে নেওয়া হয়েছে। ঘুম সব ছেড়েছুড়ে চলে যায় চোখ থেকে। আমি তাকিয়ে দেখি হুজুর কটমট করে তাকিয়ে আছেন। “ওই, কোথায় আঙ্গুল দিছস তুই?”, রেগে বলেন তিনি।

আমি কারণ অনুসন্ধান করে জানতে পারি, তাঁর ক্রোধের হেতু অযথার্থও নয়। সেই সময় মেকশিফট টেবিলক্লদ হিসেবে বিছানো ছিল কিছু পুরোনো খবরের কাগজ। ঘুমাতুর নয়নে, ছিপারার পাতাকে অল্পের জন্য ফাঁকি দিয়ে আমার আঙুল চলে যায় কাগজের উপর। সেখানটায় ছিল... সম্ভবত খালেদা জিয়ার ছবি। যাই হোক বেগানা জেনানার তসবিরে মাদৃশ নাবালেগের আঙ্গুলিটিপ্পনের ব্যাপারটা হুজুরের শরীয়তসিদ্ধ দিলে হয়তো খোঁচা দিয়ে উঠেছিল, তাই যত ঝঞ্জা গেল আমার পিঠের উপর।

আমার হয়ে প্রতিশোধ নিল আমার ছোট চাচাত ভাই ‘দিহান’, আমারচে বছরদুই ছোট। ‘জাউরার হাফেজ’ বলে একধরণের আঞ্চলিক বিশেষনমূলক গুচ্ছশব্দ প্রচলিত আছে, তাকে ওটা দিয়ে বিশেষায়িত করলে কিছুমাত্র অতিশায়ন করা হয়না। হুজুরকে যেসব ছোলা-চানাচুর খেতে দেয়া হত, মাঝে মাঝে সে সেগুলো খামচে খামচে কয়েকরত্তি নিয়ে যেত। হুজুর ব্যাপারটা পছন্দ করতেন না। সেদিন সে এল, তো হুজুর উনার হাতের বেতটা বাতাসে দুলিয়ে তাকে কিঞ্চিত হালাকু খানের ডর দেখালেন, কাজ হলো না। এবার টেবিল চাপড়ে উঠে দিলেন হালকা এক ঘাঁ। এতে করে সে দৌড়ে, কিছুটা নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে চটেমটে বলল,

“ব্যাটা, হুজুরের বাচ্চা হুজুর। হুজুর হুজুর চানাচুর....তোর বউয়ে খেজুর চোর।”

কবিতার ছত্রে সে কিছুটা ভুল করলেও সেটা হুজুরকে ষোলআনা তাঁতিয়ে দিতে যথেষ্ট ছিল। কিন্তু হুজুর বেচারা নিরুপায়। যাই হোক, বিব্রত বদনে তিনি আমার দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, “পড়্,পড়,ফা লাম যবর ‘ফাল’”...

এই মুলিসাপের কাছ থেকে নিস্তার পাওয়ার উপলক্ষটা একটু আকস্মিক এবং পুরোদস্তুর রাজনৈতিক বটে। এলাকায় লীগ আয়োজিত দোয়া মাহফিলে তদারকদারী এবং সেখানে কেরাত ও মুনাজাত পড়িয়েছিল বলে, দল এর উঠতি পাণ্ডা, আমার ছোট কাকা, তাকে দূর দূর করে একদিন ঘর থেকে তাড়িয়ে দেয়। ব্যাপারটা অমানবিক হলেও, তার প্রস্থান আমি বেশ উপভোগ করেছিলাম।

(চলনসই হলে চলবে...)

ধৈবত


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

হা হা হা...দৌড়াক...

হুজুর হুজুর চানাচুর....তোর বউয়ে খেজুর চোর

আপনার চাচাত ভাইয়ের কাব্য প্রতিভার তারীফ না করে পারছি না! এমন সুপ্ত প্রতিভা আমার থাকলে পশ্চাদ্দ্যেশে জ্বাজ্জল্যমান কালা দাগটা পরত না।
ক্লাশ থ্রিতে উঠার পরে আর বাসায় হুজুরের আনাগোনার মুহুর্ত থেকে জীবন হুজুরের অত্যাচারে জর্জরিত। আমার সকল কর্মকান্ডই তাদের কাছে হিন্দু-হিন্দু লাগত। এই ধারনার সপক্ষে সবচেয়ে শক্তিশালী যুক্তি আমার নাম, এইটা নাকি পুরাই 'হেদু' নাম। শেষে পাড়ার বড় হুজুর আমার নাম বদলে দিলেন সাফিউল্লাহ বাহার, বগলের কায়দায় খুব কায়দা করে আরবিতে লিখেও দিলেন। এত পাক-সাফ নাম আমি আবার সহ্য করতে পারিনি, একটু ট্যাটনা হতেই হুজুরসমেত নাম উপরে দিছি। তবে উপাধী উগরাইনি। তাবলীগ বাহিনী হামলা করলে শৈশবে ফিরে যাই এখনও, সোজা বলে দেই, 'ভাই আমি হিন্দু'। ঝামেলা খতম।

ভাষা প্রয়োগ চমৎকার লেগেছে, চালিয়ে যান। হাসি
- দিগন্ত বাহার

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

আমার বন্ধু সজল সামনে পড়লে ওদের বলে, আদাব ভাই, আমার নাম পরিতোষ।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

কৌস্তুভ এর ছবি

চলবে বই কি। আপনার বেত্রজর্জরিত পৃষ্ঠের জন্য সমবেদনা রইল।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

চলুক

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাইয়েরা মাফ চাই, আপনাদের হুজুর কেন্দ্রিক গল্পগুলা সিরিজটা শেষ হলে করবেন। কারণ আপনাদের অনেকের সাথে আমার অভিজ্ঞতা কমন পড়ে যাচ্ছে , যেগুলো আমি সিরিজের পরবর্তী অংশে যোগ করতে যাচ্ছি (ইতোমধ্যে যোগ করা হয়েছেও)। তাই এখন এগুলো আপনারা বলতে থাকলে পরের গল্পগুলোকেই মাটি করে দেবেন।

ধৈবত

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

সরি, বুঝতে পারিনি ভাই।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

মজার লেখা। সব হুজুর অবশ্য একরকম না। আলাদা একটা পোস্ট না দিয়ে এখানেই একটু শেয়ার করি-

১ম হুজুরঃ আমাদের ছোটোবেলায় বাসায় আসতেন এক ফরিদপুরের হুজুর। তার নাম সাইদুর রহমান হলেও সবাই তাকে ডাকতো চেরাগআলী হুজুর বলে। হতদরিদ্র মানুষ, শতছিন্ন পাঞ্জাবী আর লুঙ্গি, চোখে দেখতেন না ভালো। তার কাজ ছিলো আমাদের কেস্তা (বা কিসসা) শোনানো। হোমো এরশাদের কারনে আমাদের তখন চরম দুরাবস্থা কিন্তু তার পরও আমরা তাকে বাদ দিতে পারিনি। মনে হয় এই হুজুরের কথা জীবনেও ভুলতে পারবোনা।

২য় হুজুরঃ জাতীয় পদকপ্রাপ্ত ক্বারী রকিব হুজুর আমাদের ছোটবেলায় কিছুকাল পড়িয়েছিলেন। তিনি আমাদের শিখালেন যে ক্যাঞ্চিন মানে নুনু। ক্যাঞ্চিন একটা ইংরেজি শব্দ। পরে বড়ো হয়ে জানলাম যে পেনিস মানে নুনু কিন্তু রকিব হুজুরকে পাই কই যে ধরবো! বহুবছর পরে যখন ইন্দোনেশিয়ায় চাকরি করতে গেলাম, তখন শিখলাম যে ইন্দোনেশিয়ান ভাষায় পেনিস মানে নুনু কিন্তু আয়ের ক্যাঞ্চিন (air kancin) মানে পিসু। ওদের ভাষায় আয়ের মানে পানি। তাহলে দাঁড়াচ্ছে ক্যাঞ্চিন মানেও নুনু। তবে রকিবের চাপাবাজী ছিলো এটাকে ইংরেজি শব্দ বলে চালিয়ে দেওয়া। আমার ধারনা রকিব এটা কোনও তাব্লিগ পার্টির কাছ থেকে শিখেছিলেন।

৩য় হুজুরঃ এনার নাম মনে নেই। আমার ছোট্টো ভাইটাকে সিপারা পড়ানোর সময় তিনি সহবাসের দোওয়া শিখাচ্ছিলেন। ভাই যখন জানতে চাইলো যে হুজুভ সহবাস কি জিনিস, হুজুর বললেন যে ওটা বড়ো হলে শিখে যাবে। সেদিন হুজুরকে একটা ঝাড়ি দিয়ে থামিয়েছিলাম।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

পছন্দ বাটনটা মিস করছি

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

হঠাৎ করেই সেদিন মারীতে বসে চা খেতে খেতে পাভেল আপনার কথা বলছিলো।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

অপছন্দনীয় এর ছবি

জোব্বার দুর্গন্ধ, চেহারার জংলীপনা আর স্বভাবের খচ্চরপনা মিলে হুজুরদের এমনিতেই সহ্য করতে পারি না, সেই ছোটবেলা থেকেই। তবে এক ভদ্রলোক আমাকে আরবী পড়াতেন, ওনার মত আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গী আমি খুব কমই দেখেছি - স্বভাবেও সেই রকমই ছিলেন। পড়াতে এসে আমাকে স্পাইডারম্যান বা এই জাতীয় কিছু দেখতে দেখলে নিজেও বসে দেখতেন, আমাকে বিড়ালের সাথে কথা বলতে দেখলে নিজেও মাঝে মাঝে বিড়ালকে জিজ্ঞেস করতেন কি খবর। আরবী বস্তুটা একটা উৎপাতবিশেষ মনে হওয়ায় খুব বেশিদিন পড়িনি ওনার কাছে, কিন্তু অল্প কয়দিনেই ভালো ছাপ রেখে গিয়েছিলেন - বিশেষ করে উনি শুধু আরবী মুখস্থ করাতেন না, বরং বাংলা করে অর্থ বুঝিয়ে দিতেন, যেগুলোর অনেক রকম অর্থ হয় সেগুলোও বলতে ভুলতেন না। হুজুরবিষয়ক অভিজ্ঞতায় আপনার সাথে আমার খুব একটা পার্থক্য নেই, এই একজন অতি ব্যতিক্রম।

স্কুলে গোটাকয় ছিলো, ব্যাটাদের চেহারা দেখলে মেজাজ বিগড়ে যেতো - এই ছাগলগুলো একেবারে টিপিক্যাল, সাম্প্রদায়িক, মুখস্থবিদ, ভব্যতাবিহীন এক শ্রেনীর জানোয়ারবিশেষ।

এদেরকে এত কিছু থাকতে 'হুজুর' বলা হয় কেন কেউ কি জানেন?

আপনার লেখার ধরণ খুবই ভালো লাগলো :)।

ফাহিম হাসান এর ছবি

হুজুরে বিড়ি খায় ?? চিন্তিত

অতিথি লেখক এর ছবি

অবশ্যই। হুজুরের কাছে আমি নিজে দোকানে বইসা বিড়ি বেচছি।

ধৈবত

অতিথি লেখক এর ছবি

হো হো হো হো হো হো হো হো হো
--------------------
Sad Stories
Sad Songs

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

আরো আসুক।

অদ্রোহ এর ছবি

আমার হুজুর ছিল শালপ্রাংশু গড়নের আপাদমস্তক নিপাট ভদ্দরলোক। তারপরও ক্যান জানি হুজুরের কাছে পড়ার কথা শুনলেই গায়ে জ্বর চইলা আসত। হুজুর পড়াতে আসত সেই ভোরবেলায়, তখন আমাকে ঘুম থেকে টেনে তোলার কাজটাও অনেক সময় তাকে করতে হত। তবে একদিনের কথা আমার স্পষ্ট মনে হত। তখন কোরবানি আসন্ন, গরু কেনা উপলক্ষে আমাদের আনন্দের শেষ নাই। হুজুরকে বললাম, আপনাদের গরুর দাম কত? হুজুর উত্তর দিল, আমরা তো কোরবানি দিইনা। সেই অপারগতার কারন ক্লাস টুতে পড়া আমি বুঝতে পারিনাই। তবে হুজুরের চেরা দীর্ঘশ্বাসের শব্দ এখনো আমার কানে বাজে...

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

হুজুর উত্তর দিল, আমরা তো কোরবানি দিইনা। সেই অপারগতার কারন ক্লাস টুতে পড়া আমি বুঝতে পারিনাই। তবে হুজুরের চেরা দীর্ঘশ্বাসের শব্দ এখনো আমার কানে বাজে...

বাস্তব একটা কথা কিন্তু মনটা খারাপ করে দেয়। অধিকাংশ হুজুরেরই কিন্তু এরকম অবস্থা। দুবেলা ভাতের জোগাড় করতে হিমশিম অবস্থা। আসলে এর জন্যে কাকে দোষ দেবেন? একদিকে হুজুরদের নিজেদের রক্ষণশীলতা আর অন্যদিকে পেশাগত সমাজে স্বল্প অভিগম্যতা।

আমাদের পরিবারে একটা রেওয়াজ আছে, আমরা বাসায় মিলাদ মাহফিল করি না। মিলাদ মাহফিলের জন্যে আনুমানিক যে খরচ হতো, সেট টাকা দিয়ে মাদ্রাসার এতিমখানায় শিশুদের একবেলা ভাল খাবার ব্যবস্থা করি। মাঝে একবার রাফিনের জন্মদিনে একটা এতিমখানায় কয়েকটা ফ্যান কিনে দিয়েছি। এর কারন হলো আমরা দেখেছি যে মাদ্রাসায় বা এতিমখানায় সবথেকে গরীব মানুষদের বাচ্চাগুলো পড়ে।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

guest writer rajkonya এর ছবি

আমি ক্লাস ফাইভে থাকতে একজন হুজুরের কাছে পড়তাম। তিনি পড়াতেন ভাল। পড়াতে পড়াতে অনেক কথা বলতেন। কারণ তিনি দেখলেন যে আমি দ্রুতই সব আয়ত্ব করে ফেলছি। আমার পড়া শেষ হয়ে গেলে আয়ের একটা দিক বন্ধ হয়ে যাবে। এদিক দিয়ে তাঁকে দোষ দেওয়া যায় না। আমার একজন ইংরেজি স্যারও এই কায়দায় পড়াতেন। তাই পড়ানোর সময় অনেক গল্প গুজব করতেন। একদিন সেই হুজুর আমাকে বলছিলেন গালিগালাজ সম্পর্কে। মা তার ছেলেকে নাকি বলেছে হারামজাদা। আমার কাছে জানতে চাইলেন হারামজাদা মানে আমি জানি নাকি? আমি জানতাম না। মাথা নেড়ে সেটা জানাতে গিয়েই কিভাবে যেন নিজেই কিছুটা আঁচ করে ফেলেছিলাম। তবুও তিনিই অর্থটা বলে দিলেন। অনেক দিন পরে বেগম রোকেয়ার ''অবরোধ বাসিনী''তে এ সংক্রান্ত একটি লেখা পড়লাম। সেটা দেবার লোভ সামলাতে পারছি না।

৩৪)

শুনিয়াছি বংগদেশের কোন শরীফ খান্দানের বাড়ীর নিয়ম এই যে বিবাহের সময় কন্যাকে ‘’হু’’ বলিয়া এজেন দিতে হয় না। মেয়ের কণ্ঠ স্বরের ঐ ‘’হু’’টুকুই বা পরপুরুষে শুনিবে কেন? সেই জন্য বিবাহ সভায় মোটা পর্দ্দার একদিকে পাত্রীর উকিল, সাক্ষী, আত্নীয়-স্বজন এবং বর পক্ষের লোকেরা থেকে, অপর পার্শ্বে কন্যাকে লইয়া স্ত্রীলোকেরা বসে। পর্দ্দার নীচে একটা কাঁসার থালা থাকে,--থালার অর্দ্ধেক পর্দ্দার এপারে অপর অর্দ্ধাংশ ওপারে থাকে।

বিবাহের কালিমা পড়ার পর কন্যার কোন সংগিনী বা চাকরানী একটা সরোতা (যাঁতী) সেই থালার উপর ঝনাৎ করিয়া ফেলিয়া দেয়--যাঁতীটা সশব্দে পুরুষদের দিকে গিয়া পড়িলে বিবাহ ক্রিয়া সমাপ্ত হয়।

এই প্রসংগে আমার আর একটি কথা মনে পড়িল। লক্ষ্ণৌ এর এক বিবির সহিত আমার আলাপ আছে। একদিন তাঁহার বাড়ী বেড়াইতে গিয়াছি; কিছুক্ষণ পরে তাঁহার সপ্তম বর্ষীয় পুত্র দুষ্টামী করায় তিনি তাহাকে ‘’হারামী--‘’ বলিয়া গালি দিয়া মারিতে উদ্যত হইলেন। ছেলে পলাইয়া গেলে পর আমি তাঁহাকে বিনা সংকোচে জিজ্ঞাসা করিলাম, এ গালি তিনি কাহাকে দিলেন,--ছেলেকে, না ছেলের মাতাকে? তিনি তদুত্তরে সহাস্যে বলিলেন যে বিবাহের সময় যদিও তিনি বয়োপ্রাপ্তা ছিলেন তথাপি কেহ তাঁহার মতামত জিজ্ঞাসা করে নাই। বিবাহ মজলিসে তিনি ‘’হু’’, ‘’হা’’ কিছুই বলেন নাই; জবরদস্তী তাঁহার শাদী দেওয়া হইয়াছে। সুতরাং তাঁহার ‘’সব বাচ্চে হারামজাদে!’’

এ ছাড়াও তিনি মনে করতেন মেয়েদের এত পড়ালেখা করার দকারটাই বা কী? ওরা চিঠি পড়ার আর লেখার মত কিছু বাংলা ইংরেজী জানলেই তো যথেষ্ঠ। আমি একদনি আমি জানতে চেয়েছিলাম, ''কিন্তু আল্লাহই বলেছেন, আমি সকল নর-নারীর জন্য জ্ঞান অর্জন ফরজ করেছি।'' এর ব্যাখ্যা তিনি আমাকে দিলেন এটা যে, এই জ্ঞান অর্জন হল, মাদ্রাসা লাইনের পড়ালেখা। আমার এটা মানতে কষ্ট হচ্ছিল, আল্লাহর জ্ঞান এত সীমাবদ্ধ!!!

আমি মাত্র তিন মাসেই আমপারা থেকে কোরান খতম দিই। তারপর আর উনার সাথে যোগাযোগ হত না। আমি কলেজে উঠার পর প্রায়ই আসতেন আমাদের বাসায়। কখন আসতেন? যখন বাসায় কেউ থাকত না, শুধু আমি আর আমার মা। আমার মা সাধারণ অল্প বুদ্ধির মহিলা। হুজুরকে তিনি অতি সম্মান করতেন। যাই হোক হুজুর আমাদের বাসায় এসে অনেক আলতু ফালতু কথা বলতেন। আমার ভাল লাগত না। আমার মা চুপ করে শুনে যেত।

যেমন, পেপারে তিনি দেখেছেন এক মেয়ে এক ছেলেকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে করেছে। কেন সে সেটা করতে যাবে? মেয়েটা ছেলেটার কাছে মাফ চাইতে পারত। তাকে বাপ-ভাই বলে নিবৃত্ত করতে পারত। (!!!!!!!!!!)

আসলে হুজুরের বউ ছিল দেশে। তাই তিনি আমাদের বাসায় চলে আসতেন সময় পেলেই।

কিছুদিন পরে হুজুর তার বউকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। এক রউমের এক বাসায় থাকেন হুজুর, তার বউ, মা, ছোট দুটি বাচ্চা। হুজুরদের আয় কিন্তু খুব বেশি না। যদিও তিনি মুয়াজ্জিন থেকে ঈমামতি করেন এখন, তবুও। কিছুদিন পরে শুনি হুজুরের বউ আবার গর্ভবতী। সেটা মিসক্যারেজও হয়ে যায়। আমার মা বউকে জন্ম নিয়ন্তনের কথা বলল। সে কথা শুনে হুজুরের বউ বলল, ''উনি এগুলো কিনতে লজ্জা পায়।''
( যে লোক ছোট একটা মেয়ের কাছে হারামজাদা শব্দের অর্থ বুঝিয়ে দিতে লজ্জা পান না!!!)

এর কিছু দিন পরে, বউ বাচ্চা সবাইকে হুজুর আবার গ্রামে পা্ঠিয়ে দেন। হয়ত খরচ সামলাতে পারছেন না। তিনি প্রায়ই আসতেন আমাদের বাসায়। একদিন রাস্তায় দেখলাম সাধরণ মহিলারা তরকারি কিনছে। তাদের খুব কাছাকাহি দাঁড়িয়ে এবং তাদের সাথে হেসে হেসে কথা বলছিলেন। আমাকে দেখে কেমন চমকে গেলেন। ব্যাপারটা মার কাছে তখুনি অস্বাভাবিক লাগল।

একদিন সন্ধ্যায়, বাসায় কেউ নেই। দরজায় এসে নক করলেন হুজুর। এমন ক্ষেত্রে আমি সাধারণত। দরজা খুলি না। আমার মা মানা করে দিয়েছিলেন। যত পরিচিতই হোক না কেন, বলে দেবে বাসায় কেউ নেই। দরজা খোলার দরকার নেই। কিন্তু সেদিন আমি দ্বিধান্বিত। কী করব? আমি দরজা খুলে খুবই বিরক্তির সাথে জানালাম বাসায় কেউ নেই। ভদ্রলোক হলে তিনি তখনই চলে যেতেন। আমাকে ভাল মানুষের মত জিজ্ঞেস করলেন, ''আমি কি আসব না বলে যাব?'' আমি এমন ভাবে বললাম আসেন, যেটার মানে হল চলে যান। কিন্তু তিনি সেটা বুঝলেন না, বা বুঝেও না বোঝার ভান করলেন। তিনি এলেন, বসলেন। আমি খুবই বিরক্ত হচ্চিলাম। সেটা প্রকাশও করছিলাম। তিনি জানতে চাইছিলেন, বাসার সবাই কে কোথায়? কখন আসবে। কখন যে আসবে আমি জানি না। কিন্তু আমি বলেছিলাম, এখনই চলে আসবে। কিন্তু সেদিন কেউই বাসায় ফিরে আসছিল না। ঘরের সব দরজা জানালা খোলা দেখে তিনি জানতে চাইলেন, একা একা ভয় লাগে না? দরজা জানলা কেন খোলা রেখেছ? আমি জানিয়ে দেই আমার ভয় লাগে না। এরপরে তিনি আমাকে করে বসেন এক আজব এক আবদার! তিনি যে সোফাতে বসেছেন, সেই সোফাতে তার সাথে আমাকে বসতে। আমাকে তিনি আদর করবেন!!! আমি অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়া মেয়ে তখন। আমি বুঝতে পারি, তিনি হয়ত আমার মাকে বাইরে যেতে দেখেছেন। বারবার উনি ঐ কথাগুলুই বলতে থাকেন। আর আমি তার কাছে যাই না বলে আমাকে শক্ত মনের বললেন। অগত্যা তিনি বড় সোফায় বসলেন, যেখানে আমি বসা ছিলাম। ৪ জন অনায়াসে বসা যায় সেখানে। জায়গার অভাব ছিল না। তিনি সেখানে বসে আমাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলেন। আমি চুলায় ভাত পুড়ে যাচ্ছে বলে উঠে গেলাম। আসলে এসব ক্ষেত্রে যে ঠাস করে চড় লাগিয়ে দিতে হয়, এমন শিক্ষা আমি পাইনি। মুখ বুজে সব কিছু সয়ে যাবার শিক্ষাই পেয়ে এসেছি কি না! আমাকে হুজুরটা তখন বল্ল,''হুজুর আজকে খুব খারাপ হয়ে গেল না?''

যাই হোক, এর ১০-১৫ মিনিট পরে আমার মা আসলেন। (কেন একটু আগে আসলে না, মা তুমি?:'(( তোমার মেয়ে এখনো কত ছোট আর কত অসহায় তুমি ছাড়া, তুমি জান না?) আম্মা বাসায় এসে পথের ক্লান্তি নিয়েই হুজুরকে দেখে একটু অবাক হলেন। আমি খুব স্বাভাবিক থাকতে চেষ্টা করছিলাম। হয়ত খুব স্বাভাবিকই ছিলাম তাই মাকে কোন কিছু সন্দেহ করতে দেখলাম না। আম্মা ভেতরের ঘরে চলে গেলে হুজুরও চলে যাবার জন্য উঠলেন। আর বলে গেলেন, ''থাকতে আসিনি''। হুহ!

এরপরেও তিনি আমাদের বাসায় দু/একবার এসেছিলেন। আমি কিছুতেই সামনে যাইনি। মায়ের সাথে ঘাউরামি করে পিসি নিয়ে বসে থেকেছি। জোরে গান ছেড়ে দিয়ে। আম্মা হয়ত কিছু আঁচ করতে পেরছিলেন। তাই আমাকে বল্লেন,''শিক্ষক যত খারাপি হোক তার সাথে বেয়াদবি করতে হয় না।'' আমি এমনটা মায়ের মুখ থেকে শুনব ভাবতেই পারিনি। আমি ভেবে ছিলাম আমার আচরণ দেখে আম্মা বুঝতে পারবে। আর ঐ হুজুরটাকে বাসায় আসতে দেবে না। মাকেও ঘেন্না হয় আমার।

ঐ ঘটনাটা আমাকে অনেক বিষন্নতায় ভুগিয়েছে। আমি অনেক ভেবেছি ব্যাপারটা নিয়ে। কেন তিনি এমন আচরণ করতে গেলেন আমার সাথে? বউকে কাছে পান নি তাই? হুম, হুজুর হলেও উনিও তো মানুষ! তারও কাম আছে। হা হা হা হা হা হা। আর বাসায় তো আমার অনুমতি নিয়েই ঢুকেছিলেন! আমারই তো দোশ। আমি যদি চিল্লা চিল্লি করতাম, তবে আমিই ফেঁসে যেতাম। আমিই তো খারাপ। তাই তো বাসায় কেউ নেই জেনেও কেন উনাকে ঘরে আসতে বলেছিলাম? শত হলেও তিনি মসজিদের ইমাম!!! তার কোন দোষ থাকতে পারে না। বরং তাকে চরিত্রহীন বানানোর জন্য আমাকেই দোররা মারার ফতোয়া দেয়া হত। হয়ত সেই হুজুরই দিতেন!

অপছন্দনীয় এর ছবি

শুনে খুব খারাপ লাগলো। এদের বিরুদ্ধে কিছু করা যায় না বলেই এইসব পারভার্ট দিব্যি বেঁচেবর্তে থাকে। বুঝতে পারি আপনি কেন ব্যাটাকে কষে চড় মারতে পারেননি - যেটা তার ন্যায্য প্রাপ্য ছিলো।

guest writer rajkonya এর ছবি

হাসি, আমার জীবনে যা ঘটেছে এটা কিছুই না। আমার এক বান্ধবীর ছোট বোন যখন ক্লাস ১ এর ছাত্রী ছিল তখন সে মসজিদে পড়তে যেত। আর সেই হুজুর তার প্যান্টের ভেতরে হাত দিয়ে... (দীর্ঘশ্বাস)। কিছু বোঝার আগেই আগে ওকে এমন বাজে অভিজ্ঞতার মাঝ দিয়ে যেতে হল। বড় হবার পরে ব্যাপারটা ওকেও কম বিষন্নতায় ভোগায়নি।
যতগুলো ঘটে তার কয়টা আমরা জানতে পারি?
সত্যি কথা বলতে কী ধরনের ঘটনাগুলো যে কোন মেয়েকেই তার জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে ফেস করতে হয়। হুজুর না হোক, তার বন্ধু, কাছের আত্নীয়, শিক্ষক, সহকর্মী, বস, কে নেই এই তালিকায়? কখনো কখনো আপন ভাই বা বাবাও থাকে।

আমি বাংলাদেশের সবচেয়ে দুবিধা ভোগকারী একজন মানুষ। অনেক পুরুষও আমার মত এত আরাম আয়েস করার সুযোগ পায় না। সেই আমি দেখেছি আমার চারপাশের পুরুষদের। বন্ধুদের... একজনকে খুব ভাল লাগত। সেও তো ঐ হুজুরটার চেয়ে খুব একটা উন্নত জাতের না।

অপছন্দনীয় এর ছবি

হুজুর না হোক, তার বন্ধু, কাছের আত্নীয়, শিক্ষক, সহকর্মী, বস, কে নেই এই তালিকায়? কখনো কখনো আপন ভাই বা বাবাও থাকে

অস্বীকার করতে পারছি না। কে বলতে পারে, আমার পরিচিতর মধ্যেই হয়তো এই ধরনের প্রাণী আছে (এগুলোকে মানুষ বলতে রাজি নই)। অনেক উচ্চশিক্ষার সার্টিফিকেটযুক্ত লোকজনকেও মেয়েদের প্রতি এমনসব ধারণাসূচক মন্তব্য করতে দেখেছি যেগুলো যাদের ধারণা তাদের এই ধরনের কোন কাজ করতেই আটকানোর কথা নয়। সামাজিক কিছু দৃষ্টিভঙ্গী, ধর্মীয় চেতনার কিছু অংশ, কয়েকশ' বছরের পুরোনো কয়েকটা মূল্যবোধ সবই তো মেয়েদেরকে স্রেফ ইনফিরিয়র স্পেশিজ ভাবতেই শেখায়। ওই হুজুরের মত দুই চারটা জানোয়ারকে দুই চারদিন রাস্তার মোড়ে দাঁড় করিয়ে গালে জুতা দিয়ে বাড়ি মারলে বাকিগুলো এমনি গর্তে সেঁধোবে।

আপনার চারপাশের পুরুষদের সবাই নিশ্চয়ই ওই হুজুরের মত নয়। একটা দুইটা মানুষ আছে বলেই পৃথিবীটা টিকে আছে এখনো।

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

আম্মা হয়ত কিছু আঁচ করতে পেরেছিলেন। তাই আমাকে বল্লেন, "শিক্ষক যত খারাপি হোক তার সাথে বেয়াদবি করতে হয় না।"

আপনার মায়ের কথা শুনে অবাক হলাম।

এসব হুজুরদের আসলে জুতাপেটা করা দরকার। বড়াহনন্দন।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

কিছু সেলিব্রিটি হুজুর আছে বদের বদ-

মাওঃ দেহোসাইদী একদা বাগেরহাট জিলার বারুইপাড়া গ্রামে মাওঃ মুজিবর রহমানের আশ্রয়ে বসবাস করিতেন। অতঃপর একদা তিনি মাওঃ মুজিবরের ভগ্নীকে জেনার মাধ্যমে গর্ভবতী করিয়া উক্ত গ্রাম হইতে পলায়ন ফরমাইয়াছিলেন। শোনা যায় যে পায়ুষ্কামেও তাহার বিশেষ অনুরাগ ছিলো। শয়তানী হাসি

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার comment ইদানিং খুব অশালীন হয়, কেন ?

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

সরি, সাবধান হবো।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

অতিথি লেখক এর ছবি

রাতঃ ভাই, আমার পোস্টে জামাতিদের মুক্তমনে সমানে গাইলাইতে পারেন। সমস্যা নাই।

ধৈবত

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

আরেকটা মন্তব্য করেছিলাম, সেটা আসেনি।

যাক আবার মন্তব্য করলাম।

আজকাল হুজুররা কেমন যেন হয়ে গেছে।
সবগুলো কেমন যেন ডিস্কো শয়তান=>

অতিথি লেখক এর ছবি

হুজুর বলেন, “বা লাম জবর, ‘বাল’।”...আমি পড়ি

হুজুর খেঁকিয়ে ওঠেন, “ওই, ধরে পড়, আংগুল দিয়ে হকখানে ধরে ধরে পড়”

আমি ঢুলু ঢুলু চোখে আঙুল ওঠাই, তারপর পৃষ্ঠার উপর হরফ বরাবর আঙুল রাখি, বলি “বা লাম জবর...”
সাথে সাথেই শুনি...‘শপাং’। আমার পিঠের চামড়া যেন বেত্রাঘাতে খসিয়ে নেওয়া হয়েছে। ঘুম সব ছেড়েছুড়ে চলে যায় চোখ থেকে। আমি তাকিয়ে দেখি হুজুর কটমট করে তাকিয়ে আছেন। “ওই, কোথায় আঙ্গুল দিছস তুই?”, রেগে বলেন তিনি।

আমি কারণ অনুসন্ধান করে জানতে পারি, তাঁর ক্রোধের হেতু অযথার্থও নয়। সেই সময় মেকশিফট টেবিলক্লদ হিসেবে বিছানো ছিল কিছু পুরোনো খবরের কাগজ। ঘুমাতুর নয়নে, ছিপারার পাতাকে অল্পের জন্য ফাঁকি দিয়ে আমার আঙুল চলে যায় কাগজের উপর। সেখানটায় ছিল... সম্ভবত খালেদা জিয়ার ছবি। যাই হোক বেগানা জেনানার তসবিরে মাদৃশ নাবালেগের আঙ্গুলিটিপ্পনের ব্যাপারটা হুজুরের শরীয়তসিদ্ধ দিলে হয়তো খোঁচা দিয়ে উঠেছিল, তাই যত ঝঞ্জা গেল আমার পিঠের উপর।

গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি

গুরু, আপনি আসলেই একখান হুজুরে কেবলা দেঁতো হাসি

-অতীত

খন্ডত 'ত' এর ছবি

“বা লাম জবর...”

হে হে হে...... শয়তানী হাসি

পাগলা আঁতেল এর ছবি

এই লেখাটা পড়ে যত না ভাল লেগেছিল, তার চেয়ে বেশি বাজে লেগেছে মন্তব্যগুলো। আমাদের দেশের হুজুরদের প্রতি শ্রদ্ধা থাকুক বা ঘৃণাই থাকুক না কেন, তাদেরকে তো আমরা আমাদের সমাজ থেকে বাদ দিতে পারি না। যেমন পারি না দেশের দূর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ এবং আমলাদের বাদ দিতে। একটা অনুরোধ করবো সকল লেখককে, অন্যের পার্ভার্টিসম নিয়ে মন্তব্য করার আগে নিজেদের সমালোচনাটা করা উচিৎ।

অতিথি লেখক এর ছবি

সকল পাঠক এবং মন্তব্যকারীদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ।

ধৈবত

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার হুজুর আছিল বে-শপিং মার্কেটের সিঁড়ির নিচের ইবাদত খানার ইমামসাব। তিনি আমারে রকমারি দুয়া শিখাইতেন। তার মধ্যে এখনো যেটা মনে আছে সেইটা হইল - বৃষ্টি বন্ধ করনের দুয়া। ছুটোবেলা থেকে এখনো আমি বৃষ্টি নামলে থামাইয়া দেওয়ার কিছুটা চেষ্টা-তদবির করি এই দুয়া পইড়া।

তুর হুজুরের মত এই হুজুর খুব একটা খারাপ লোক ছিলেন বলে আমার মনে হয় না। তার দোয়াপইড়া ফুঁ দেওয়া কলমে পরীক্ষা দিয়া আমি মেট্রিক-ইন্টারে ২টা জিপিএ-৫ হাঁকাইছি।

হয়ত বৃষ্টিও থামাইয়া দিমু কুনো একদিন।। চোখ টিপি

চলুক

দৃপ্র

বেরঙ এর ছবি

ভাই, এইটা কি লেখছেন। পইড়া তো হাসতে হাসতে দম বন্ধ হয়ে যাইতেছে। চ্রম চ্রম চ্রম।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।